রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক নিয়ে ইসলাম বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগের জবাব!


প্রশ্নঃ আমরা জানি রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক/বক্ষ বিদারণ করা হয়েছে। তারপর সেখানে ভালো জিনিস দেয়া হয়েছে এবং খারাপ (শয়তান) সরানো হয়েছে। এটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? আর রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক করে তাকে নিষ্পাপ ও শয়তান থেকে দূরে মুক্ত করা হয়েছে, তাই তিনি নিষ্পাপ ও পাপ থেকে মুক্ত, তাহলে আল্লাহ কেন আমাদেরকে শয়তান থেকে মুক্ত করলেন না? যেভাবে রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক করা হয়েছে। এটা কি আমাদের সাথে অন্যায় হয়ে গেলো না? ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেলো না? আমাদের হৃদয় থেকে কেন শয়তানের অংশ বের করা হলোনা? বক্ষ বিদারণ কি সৃষ্টি বিকৃতি, সৃষ্টিবিধান পরিবর্তন নয়? এটি কি জ্ঞান ও যুক্তি বিরোধী নয়? ছোটবেলার ঘটনা কিভাবে হাদিসে বর্ণনা করা হলো? যেখানে তিনি ছিলেন ছোট শিশু! আর জমাটরক্ত ফেলে দেয়া হয়েছে তাহলে সূরা আলাকের "আলাকাহ" আর এই আলাকাহ তো সমান বুঝা গেলো। এর মানে ভ্রুণবিদ্যায় আলাকাহ মানে শুধু রক্তপিণ্ড বুঝানো হয়ছে (জোঁকের মত, ভ্রুণ, আটকে থাকা সব ভুয়া) !? আর আলাকাহ দিয়ে যদি জমাটবাধা রক্ত পিণ্ড বুঝায় তাহলে এটা হার্টে থাকার তো কথা না। এটার জন্য তো মৃত্যুও হতে পারতো। blood clot তো এই সেই বিষয় না যা গর্ভেও ছিল, হৃদয়েও ছিল!
✒𝐀𝐧𝐬𝐰𝐞𝐫 𝐛𝐲: 𝐀𝐦𝐢𝐧𝐮𝐫 𝐑𝐚𝐬𝐡𝐢𝐝 


জবাবঃ আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। সালাম ও দুরূদ প্রিয় নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর। 

বক্ষ বিদারণ নিয়ে নাস্তিক, সংশয়বাদী, শিয়া, হাদিস অস্বীকারকারীদের ৮ টি দাবীর খণ্ডন করবো ইংশাআল্লাহ। 
____

সহীহ বুখারীর হাদিসে বিষয়টি উল্লেখ আছে। আর এটি খুবই পরিচিত হাদিস। যেখানে রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাকের (شق الصدر) তথা বক্ষ বিদারণের ঘটনাটি পাওয়া যায়। 
‎ 
وَقَالَ عَبْدَانُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا يُونُسُ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فُرِجَ سَقْفِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَم فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهَا فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ الدُّنْيَا افْتَحْ قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ  


আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ


তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি মক্কায় অবস্থানকালে ঘরের ছাদ ফাঁক করা হল এবং জিবরাঈল (‘আঃ) অবতরণ করলেন। এরপর তিনি আমার  বক্ষ   বিদারণ  করলেন এবং তা যমযমের পানি দ্বারা ধুলেন, এরপর ঈমান ও হিক্‌মতে পরিপূর্ণ একটি সোনার পেয়ালা নিয়ে এলেন এবং তা আমার বুকে ঢেলে দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে গেলেন এবং জিবরাঈল (‘আঃ) এই আসমানের তত্ত্বাবধানকারী ফেরেশ্‌তাকে বললেন, (দরজা) খোল। তিনি বললেন কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। [1]

সিরাত গ্রন্থগুলিতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়,, 


"দ্বিতীয় দফায় হালীমার নিকটে আসার পর জন্মের চতুর্থ কিংবা পঞ্চম বছরে শিশু মুহাম্মাদের সীনা চাক বা বক্ষ বিদারণের বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। ব্যাপারটি ছিল এই যে, মুহাম্মাদ তার সাথীদের সাথে খেলছিলেন। এমন সময় জিবরাঈল ফেরেশতা এসে তাকে কিছু দূরে নিয়ে বুক চিরে ফেলেন। অতঃপর কলীজা বের করে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে কিছু জমাট রক্ত ফেলে দেন এবং বলেন,هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ ‘এটি তোমার মধ্যেকার শয়তানের অংশ’। অতঃপর বুক পূর্বের ন্যায় জোড়া লাগিয়ে দিয়ে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। পুরা ব্যাপারটি খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাথী বাচ্চারা ছুটে গিয়ে হালীমাকে খবর দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে। তিনি ছুটে এসে দেখেন যে, মুহাম্মাদ মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে’।[2] হালীমা তাকে বুকে তুলে বাড়ীতে এনে সেবা-যত্ন করতে থাকেন। এই অলৌকিক ঘটনায় হালীমা ভীত হয়ে পড়েন এবং একদিন তাঁকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যান। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। তাঁর দ্বিতীয়বার বক্ষবিদারণ হয় মি‘রাজে গমনের পূর্বে মক্কায়।"[3]

কুরআনের তাফসীরেও এর বর্ণনা দেয়া যায়,, 

[৯৪:১] আল ইনশিরাহ

أَلَم نَشرَح لَكَ صَدرَكَ

আমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রশস্ত করিনি?

তাফসীরঃ 

[১] পূর্বের সূরায় (মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি) তিনটি নিয়ামত বা অনুগ্রহের কথা আলোচনা হয়েছে। এ সূরাতেও মহান আল্লাহ আরো তিনটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন। তার মধ্যে তাঁর 'বক্ষ প্রশস্ত' করে দেওয়া হল প্রথম অনুগ্রহ। এর অর্থ হল, বক্ষ আলোকিত এবং উদার হওয়া; যাতে সত্য স্পষ্ট হয়ে যায় এবং তার জন্য হৃদয় সংকুলান হয়। একই অর্থে কুরআন কারীমের এই আয়াতওঃ {فَمَن يُرِدِ اللهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ} অর্থাৎ, "আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন।" (সূরা আনআম ৬:১২৫ আয়াত) অর্থাৎ, সে ইসলামকে সত্য দ্বীন বলে জেনে নেয় এবং তা গ্রহণ করে নেয়। এই 'বক্ষ প্রশস্ত'-এর অর্থে সেই 'বক্ষ বিদীর্ণ' (সিনাচাক)ও এসে যায়; যা বিশুদ্ধ হাদীসানুযায়ী নবী (সাঃ)-এর দু'-দু' বার ঘটেছিলঃ একবার বাল্যকালে যখন তাঁর বয়স ৪ বছর। একদা জিবরীল (আঃ) এলেন এবং নবী (সাঃ)-এর বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তাঁর হৃদয়ের ভিতর থেকে শয়তানী রক্তপিন্ডকে বের করে দিয়েছিলেন যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বিদ্যমান থাকে এবং হৃদয় ধৌত করে পুনরায় তা ভরে দিয়ে বক্ষ বন্ধ করে দিলেন। (সহীহ মুসলিম ঈমান অধ্যায়, ইসরা পরিচ্ছেদ) আর একবার তা মি'রাজের সময় ঘটেছিল; জিবরীল (আঃ) তাঁর মুবারক বুকটাকে চিরে তাঁর অন্তরটাকে বের করে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে পুনরায় স্বস্থানে রেখে দিলেন এবং তা ঈমান ও হিকমত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিলেন। (সহীহাইন মি'রাজ পরিচ্ছেদ এবং নামায অধ্যায়)

এই হলো মূলত বক্ষ বিদারণের কিছু বর্ণনা। প্রশ্নের জবাবে আসার পূর্বে একটা বিষয়ে বলে নেই। 

হাদিস-সমূহ থেকে এটা বলা অনুচিত যে রাসুল (ﷺ) এর হৃদয় থেকে "শয়তানের অংশ" ফেলে দেয় হয়েছে। এ কথার উদ্দেশ্য বুঝতে হবে!


বর্ণানায় বলা আলাকা ফেলে দেয়া হয়েছে এটি শয়তানের অংশ না বরং এটি হচ্ছে সেই অংশ যেখানে শয়তান ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দেয়। অর্থাৎ রাসুল (ﷺ) এর হৃদয় থেকে সেই অংশটা ফেলে দেয়া হয়েছে যেখানে শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে,ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। শয়তানের অংশ ফেলে দিয়েছেন এমন বলার সুযোগ নেই। তাই প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে এমন বলতে হবে যে 

"রাসুল (ﷺ) এর হৃদয় থেকে সে স্থান ফেলে দেয়া হয়েছে যে স্থানে শয়তান কুমন্ত্রণা/ওয়াসওয়াসা দেয় কিন্তু আমাদেরকে কেন এভাবে শয়তান থেকে মুক্ত করা হলো না অর্থাৎ শয়তানের কুমন্ত্রণার স্থান কেন ফেলে দেয়া হলো না?"

আরেকটি বিষয় হলো এই সীনা চাক নিয়ে শিয়া ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও নানান অভিযোগ ছিল। যেমন,,, 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বক্ষবিদারণ সম্পর্কে শী‘আগণ ও অন্যান্য আপত্তিকারীগণ মূলতঃ তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। (১) বক্ষবিদারণের ঘটনাটি মানব প্রকৃতির বিরোধী (২) এটি জ্ঞান ও যুক্তি বিরোধী (৩) এটি আল্লাহর সৃষ্টিবিধান পরিবর্তনের শামিল।
এর জবাবে বলা যায় : (১) শৈশবে বক্ষবিদারণের বিষয়টি ভবিষ্যত নবুঅতের আগাম নিদর্শন। (২) শৈশবে ও মি‘রাজ গমনের পূর্বে বক্ষবিদারণের ঘটনা অন্ততঃ ২৫ জন ছাহাবী কর্তৃক অবিরত ধারায় বর্ণিত ছহীহ হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত (ইবনু কাছীর, তাফসীর ইসরা ১ আয়াত)। অতএব এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। (৩) যাবতীয় মানবীয় কলুষ থেকে পরিচ্ছন্ন করা। যাকে ‘শয়তানের অংশ’ বলা হয়েছে। এটা তাঁর জন্য খাছ এবং পৃথক একটি বৈশিষ্ট্য। (৪) প্রত্যেক নবীরই কিছু মু‘জেযা থাকে। সে হিসাবে এটি শেষনবী (ছাঃ)-এর বিশেষ মু‘জেযা সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে মানবীয় জ্ঞানের কোন প্রবেশাধিকার নেই। (৫) শেষনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ও বিশেষ ব্যবস্থাধীনে পরিচালিত ছিলেন। অতএব বক্ষবিদারণের ঘটনা সাধারণ মানবীয় রীতির বিরোধী হ’লেও তা আল্লাহর অনন্য সৃষ্টি কৌশলের অধীন। যেমন শিশুকালে মূসা (আঃ) সাগরে ভেসে গিয়ে ফেরাঊনের গৃহে লালিত-পালিত হন’ (ত্বোয়াহা ২০/৩৮-৩৯)। ঈসা (আঃ) মাতৃক্রোড়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বাক্যালাপ করেন’ (মারিয়াম ১৯/৩০-৩৩) ইত্যাদি। (নবীদের কাহিনী - আসাদুল্লাহ গালিব)

শী‘আগণ ও অন্যান্য আপত্তিকারীগণ মূলতঃ তিনটি দাবী উত্থাপন করে থাকেন। 

দাবী ১: বক্ষবিদারণের ঘটনাটি মানব প্রকৃতির বিরোধী! 

জবাবঃ এটা মানব প্রকৃতির বিরোধী হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। সীনা চাকের মধ্যে আছে হিকমাহ, এটি একটি মুজিজা এবং এটির মাধ্যমে আমরা ক্লিয়ার হই রাসুল (ﷺ) এতটাই পবিত্র যে উনার হৃদয়ের সেই স্থানকেও ফেলে দেয়া হয়েছে যেখানে শয়তান প্রভাব,ওয়াসওয়াসা, কুমন্ত্রণা দেয়। শুরতেই শয়তান থেকে মুক্ত! স্যাটানিক ভার্স বলে ফ্যানা তুলা অযৌক্তিক। কারণ শুরুতেই শয়তানের সাথে বিভেদ ঘটেছে। আর এটি মুজিজা হওয়ায় এটি অলৌকিক ঘটনার আওতায় পরে। আর মুজিজা, অলৌকিক বিষয়গুলির সঙ্গাই হলো তা লৌকিকতা ও প্রাকৃতিক নিয়মের বিপরীত। যেমন ইব্রাহিম (আঃ) এর আগুন ঠাণ্ডা, মূসা (আঃ) এর লাঠি থেকে সাপ, সাগরে রাস্তা। সবই প্রকৃতির নিয়মের বিপরীত কারণ এসব অলৌকিক ঘটনা যা আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে নিদর্শন হিসেবে ঘটানো হয়। তাই এটিকে প্রকৃতি বিরোধী বলার পূর্বে জেনে নিয়া উচিত অলৌকিক এর সঙ্গা কি।(বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেল পড়ুন) 

দাবী ২: এটি জ্ঞান ও যুক্তি বিরোধী! 

জবাবঃ জ্ঞান বিরোধী না! আজ আমরা হার্ট সার্জারির সাথে পরিচিত। যা প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব, তাহলে আল্লাহ চাইলে কেন এটা সম্ভব হবে না? আল্লাহর কাছে এটি ঘটানো সহজ থেকে সহজতর। আর এটি যুক্তি বিরোধীও না, কারণ এটি থেকে পরিষ্কার হয় যে রাসুল (ﷺ) নবুয়তপ্রাপ্ত হবেন, নবুয়তের আগাম বার্তা বলা যায়। তিনি পবিত্র ব্যাক্তি, সকল কুলষ থেকে মুক্ত এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাব থেকেও প্রটেক্টেড। এছাড়াও প্রমাণিত হয় রাসুল (ﷺ) জন্ম থেকে মৃত্যু, শৈশব থেকে বৃদ্ধ পুরো সময়ই আল্লাহর তত্বাবধানে ছিলেন। সুবহানআল্লাহ 

আর এটা যৌক্তিক, শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তির বিষয়টা। এইযে বর্তমানেও নাস্তিকরা শয়তানের প্রভাবে বাণী, শয়তানের কুমন্ত্রণায় বাণী, স্যাটানিক ভার্সেস নামক অপপ্রচার চালায়। যা সীনা চাকের ঘটনার কারণে বাতিল প্রমাণিত হয়। আর সকল নবীই পবিত্র ও নিষ্পাপ সীনা চাকের কারণেই যে রাসুল (ﷺ) পবিত্র তা নয়। সীনা চাকের অনান্য হিকমাহ আছে আর আমভাবে সকল নবীই পবিত্র। (বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেল পড়ুন)

দাবী ৩: এটি আল্লাহর সৃষ্টিবিধান পরিবর্তনের শামিল!

জবাবঃ সব কিছুকে সৃষ্টিবিধান পরিবর্তনের শামিল বলা বোকামি। আমি জানি না প্রশ্নটি "সৃষ্টির পরিবর্তন" বিষয়টি নিয়ে বলা নাকি এভাবে পবিত্র করা নিয়ে বলা। 

দুভাবেই বলি, সীনা চাক রাসুলের মুজিজার একটি এবং এটি আসলেই জরুরি ছিলো। আজকের নাস্তিকদের প্রশ্ন দেখলেও বুঝবেন যৌক্তিক ছিলো। আর রাসুল (ﷺ) হলেন সর্বশেষ্ঠ ব্যাক্তি। উনি যদি পবিত্র, কুলষ মুক্ত না হন তাহলে কি করে হয়। আর সীনা চাক যখন ছোটবেলায় করা হয় তখন অনেকেই এই ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছে। যা ইঙ্গিত দেয় যে এই ছোট বালকটি মুহাম্মদ (ﷺ) কোন সাধারণ বালক নয় বরং নবুয়ত প্রাপ্ত হবেন এমন, বিশেষ একজন, নবুয়তের আগাম বার্তা। শুধু পবিত্র করাটাই মূখ্য না কারণ সকল নবীই নিষ্পাপ। এটি মুজিজা ও নবুয়তের আগাম বার্তা এবং পুরো জীবন আল্লাহর তত্বাবধানে ছিলেন তার প্রমাণ। 

আর সৃষ্টিগত পরিবর্তনের কথা বললে বলবো,, 

সকল কিছুকে নিজের মনগড়া ভাবে মাপলে হবে না। সবকিছু সৃষ্টির বিকৃতি বা পরিবর্তনের কাতারে পড়ে না। আপনি চুল কাটলে, নখ কাটলে সৃষ্টির পরিবর্তন হয় না। কারণ যেসব বিষয় সৃষ্টি পরিবর্তনের আওতায় পড়ে শুধু সেসবকেই সৃষ্টি পরিবর্তন বলা যাবে। যেমন প্লাস্টিক সার্জারি চেহারা পরিবর্তন, নারী হয়ে পুরুষ সাজা, পুরুষ হয়ে নারী সাজা, সার্জারি করে নারী আক্তার পুরুষ, পুরুষ আক্তার নারী সাজা (ট্রান্সজেন্ডার), ভ্রু প্লাগ ইত্যাদি হলো সৃষ্টির বিকৃতি সাধন। কিন্তু চুল, নখ কাটা বিকৃতির আওতায় পড়ে না। 

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার লা'নত করেছেন সে সমস্ত মহিলাদের উপর যারা শরীর কেটে উল্কি আঁকে এবং যারা এ অংকনের কাজ করে, আরো লা'নত করেছেন যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভ্রু কাটে এবং যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কাটে। আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। [বুখারীঃ ৪৮৮৬]

এ সবই হল শয়তানী কার্যকলাপ, তা থেকে বিরত থাকা জরুরী। তবে পশু দ্বারা অধিক উপকৃত হওয়ার জন্য, তার ভালো গোশত লাভের জন্য অথবা এই ধরনের আরো কোন বৈধ উদ্দেশ্যে যদি তার খাসি করানো হয়, তবে তা বৈধ হবে। এর সমর্থন এ থেকেও হয় যে, নবী করীম (সাঃ) খাসি ছাগল কুরবানীতে জবাই করেছেন। যদি পশুর খাসি করানো বৈধ না হত, তাহলে তিনি (সাঃ) তার কুরবানী করতেন না। (বা খাসি হওয়া একটি ত্রুটি বলে গণ্য করতেন।) [ সূরা নিসা, আয়াত ১১৯/ তাফসীর আহসানুল বয়ান ]

সুতরাং বিধান আল্লাহর তিনি জানেন কোনটা সৃষ্টির পরিবর্তন আর কোনটি প্রাকৃতিক আর কোনটি মুজিজা/অলৌকিক গত বিষয় কারণ তিনিই সবকিছুর মালিক, তিনিই সবকিছুর খালিক। (রাব্বিল আ'লামিন) 

খৎনা যেমন সুন্নত, সৃষ্টি পরিবর্তনের কথা এখানে খাঁটবে না। ঠিক একই ভাবে সীনা চাকের মাধ্যমে কুলষ মুক্ত করা মুজিজার আওতাভুক্ত তাই এটিকেও সৃষ্টির বিকৃতি সাধন বা পরিবর্তন বলা অজ্ঞতার বহিপ্রকাশ। 

আলৌকিক বিষয়সমূহ প্রকৃতিক নিয়ম, প্রাকৃতিক সৃষ্টিগত বিধান ভাঙবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ অলৌকিক মানেই প্রকৃতিক ও লৌকিকতার বিপরীত। মূসা (আঃ) এর লাঠি সাপে পরিণত হয়েছে এটিকে যুক্তি আর সৃষ্টিরবিধান পরিবর্তন বললে হবে না কারণ এটি অলৌকিক নিদর্শন। আবার চাঁদ দিখন্ডিত হওয়াও অলৌকিক নিদর্শন মুজিজা। আশা করি বুঝা গেছে। (বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেল পড়ুন)

মুজিজা ব্যাখ্যাঃ

বক্ষ বিদারণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চাওয়া বা এধরনের বিভিন্ন অলৌকিক বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চাওয়ার আগে আমাদের বুঝতে হবে অলৌকিকতা (معجزة) কি এবং লৌকিকতা কি। 


অলৌকিক ঘটনা এমন এক বিষয় যা লৌকিক জ্ঞানের উর্ধ্বে। লৌকিক জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারা তা পরিমাপ করা সম্ভব না। কিছু উদাহরণ হয়তো মিলতে পারে তবে হুবহু মিলবে না। কারণ অলৌকিকের অর্থই হলো যা লৌকিকতা ও সাধারণ ভাবনা চিন্তা ও কর্মের বিপরীত। প্রাকৃতিক নিয়মের বিপরীত। 


তাই কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেখার আগে দেখতে হবে এটি মুজিজা, অলৌকিক বিষয় নাকি লৌকিক/প্রকৃতিক, সাধারণ বিষয়। 


কুরআন একটা মুজিজা, যার লৌকিক বিষয়গুলি আমাদের জ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে আমরা জানতে পেরেছি। কুরআন বলছে সূর্য, চন্দ্র গতিশীল এটি অলৌকিক নয় বরং সাধারণ, লৌকিক বিষয় যা জ্ঞান-বিজ্ঞান দিয়ে পরিমাপযোগ্য। 


কুরআন বলছে মানুষ পানি দ্বারা তৈরি। বিজ্ঞানও জানাচ্ছে আমাদের দেহের ৬০/৭০% ই পানি। সুতরাং কুরআনের এই ধরনের বিষয়গুলিতে ভুল ধরার ব্যার্থ চেষ্টা করা যৌক্তিক! কিন্তু অলৌকিক যেসব আল্লাহ তায়ালা অলৌকিক ভাবে ঘটিয়েছেন তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চাওয়া অজ্ঞতা। 


বিজ্ঞান লৌকিক বিষয়েই এখনো অজ্ঞ। বিজ্ঞান এখনো মহাবিশ্বের বিষয়গুলিও ভালোভাবে জানতে পারে নি পরিপূর্ণ জানতে পারে নি। সেখানে মুজিজা ও অলৌকিক বিষয় প্রমাণ করা বহু দূর কি বাত। 


কুরআনের অলৌকিকতা এখনও চলমান। জান্নাত, জাহান্নাম, কিয়ামত, হাশর, মিযান সব বাকি রয়েছে যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেবার এবিলিটি বিজ্ঞানের নেই। দুনিয়া নিয়েই বিজ্ঞান এখনো অজ্ঞ। আর আখিরাত তো বহু দূরের বিষয়। 


সুতরাং কুরআন-হাদিসের সেই সমস্ত বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চাইতে হবে যা আলৌকিক বিষয়ের আন্ডারে পড়ে না। যেমন পিতা-মাতা থেকে সন্তান জন্ম হয় যা আল্লাহ তায়ালা কুরআনেই বলছেন কিন্তু নবী ঈসা (আঃ) অলৌকিকভাবে জন্ম নিয়েছেন পিতা ব্যাতীত। যার উদাহরণ অন্য ভাবে দেয়া যায়। তাই কুরআন-হাদিসের অলৌকিক বিষয়গুলিকে নিয়ে ভুল বলা মানেই অজ্ঞতা ও ভাওতাবাজি। যেমন অনেকে কুরআনকে ভুল প্রমাণে ব্যার্থ হলে অলৌকিক বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাই অলৌকিক বিষয় তথা পিতা ছাড়া জন্ম, চাঁদ দিখন্ডিত করা, মিরাজ, মূসা (আঃ) এর সাগরে রাস্তা, লাঠি সাপে পরিণত সবই অলৌকিক ঘটনা। 


যেমন নবী ইব্রাহিম (আঃ) কে, আগুন পুড়াতে পারে নি। আগুনের ধর্মই পুড়ানো কিন্তু আল্লাহ চাইলে সেই আগুনকেই ঠাণ্ডা করে দিতে পারেন। সুবহানআল্লাহ


আগুন পুড়াতে পারে, জাহান্নামেও থাকবে ভয়ানক আগুন যা আমাদের পুড়াবে। কিন্তু অলৌকিক হলো নবী ইব্রাহিম (আঃ) কে আগুন কিছুই করতে পারে নি আল্লাহর ইচ্ছায়। 


তাই কেউ যদি বলে "ভাই আগুন যে পুড়াতে পারলো না, আমাকেও দেখান দেখি!"........ 


এতক্ষণ আলোচনা করলাম এ জন্যই যাতে কেউ অলৌকিক বিষয়গুলি নিয়ে অজ্ঞদের মত বিজ্ঞান- বিজ্ঞান না করে। যেমন কিছু ইসলাম বিদ্বেষীরা করে থাকে।


এবার আসি বক্ষ বিদারণের বিষয়ে,, 



বক্ষ বিদারণ যা ১৪০০+ বছর আগে করা হয়েছে যা আজ প্রযুক্তি দিয়ে হচ্ছে। হার্ট সার্জারি এখানে উত্তম উদাহরণ। সীনা চাকের সাথে হার্ট সার্জারির তূলনা দেয়া যায় অনেকটাই। আলহামদুলিল্লাহ


আজ প্রযুক্তি দিয়েই হার্ট সার্জারি করা যায় আর রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক তো সহজ বিষয়। অলৌকিকতা মানেই যা প্রাকৃতিক নিয়মের বিপরীত বা প্রাকৃতিক নিয়ম ভাঙে। 


হার্ট সার্জারি নামক কিছু না থাকলেও এটা সম্ভব কারণ আল্লাহ তায়ালা তা ঘটিয়েছেন। মুজিজার ব্যাখ্যা লাগে না যদি দুনিয়াতে কোন ব্যাখ্যা নাও থাকতো তবুও তা সত্য যিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা তার কাছে এসব ঘটানো কোন বিষয়ই না। 
তাই অলৌকিক এর সঙ্গা যেহেতু জেনেছেন সেহেতু ভুলেও আর অলৌকিক ঘটনা নিয়ে ভুল ধরতে আসবেন না। 

শয়তান অপসারণ

অনেকে বলে থাকেন যে সীনা চাকের সময় শয়তানের খণ্ড ফেলে দেয়া হয়েছে। এ দাবিটি সমস্যাযুক্ত। 

শয়তানের খণ্ড বলে কোন কিছু ছিলো না। সীনা চাকের সময় শুধু সেই অংশকে ফেলে দেয়া হয়েছে যে অংশে "শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়"। এটি শয়তানে খণ্ড নয় বরং সেই অংশ যেখানে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়, অর্থাৎ দুইটি ভিন্ন কথা। 

দাবী ৪: রাসুল (ﷺ) সীনা চাক করে শয়তান মুক্ত করা হলো। আমাদেরটা কেন শয়তান মুক্ত করা হলো না। ডাবল স্টান্ডার্ড নয় কি? 

জবাবঃ এবার প্রশ্ন হলো রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক করে শয়তান থেকে পবিত্র করা হয়েছে তাই তিনি কোন গুনাহ করেন নাই, ওয়াসওয়াসায় পড়েন নাই। তাহলে আল্লাহ তায়ালা কেনো আমাদেরকে শয়তান থেকে মুক্ত করলেন না! যেভাবে রাসুল (ﷺ) কে শয়তান হতে মুক্ত করা হয়েছে? 

এর জবাবে বলব,, 

প্রথমত নাস্তিকরাই অনেক সময় দাবি করে যে কুরআন শয়তানের বাণী, নবীর কাছে শয়তান বাণী পাঠিয়েছে যা রাসুল (ﷺ) ধরতে পারেন নাই। (নাঊজুবিল্লাহ মিন যালিক) 

যেখানে ওয়াসওয়াসার জায়গাটাই ফেলে দেয়া হয়েছে সেখানে শয়তানের বাণীর দাবীটাই ফালতু। 


এই সীনা চাকের ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে রাসুল (ﷺ) যা বলতেন তা আল্লাহর দেয়া ওহীর জ্ঞান। কুরআন আল্লাহর বাণী যা রাসুল (ﷺ) এর উপর নাজিল করা হয়েছে। কুরআনকে স্যাটানিক বলা পুরোই মিথ্যা দাবী। যার আরেকটি প্রমাণ সীনা চাকের ঘটনা থেকেও পাওয়া গেলো। আলহামদুলিল্লাহ


আর এখন নাস্তিকরাই আবার বলছে "কেন শয়তান মুক্ত করা হলো" এক কথায় যেদিকেই যাবেন সেদিকেই তাদের চুলকানি। (ডাবল স্টান্ডার্ড) 


শয়তান মুক্ত না করলে "শয়তানের বাণী" শয়তান মুক্ত করলে "কেন করলেন"! 


যাগ্গে, মূল কথায় ফিরি। যারা বলেন রাসুল (ﷺ) সীনা চাক করা হলো তাই তিনি নির্দোষ। আমাদেরকে কেন সীনা চাক করা হলো না! ডাবল স্টান্ডার্ড! 


তাদের বলবো, শুনেন "সকল নবীই নির্দোষ ও নিস্পাপ ছিলেন" সকল নবীই পবিত্র ছিলেন। এটি বাইবেল না এটি কুরআন। বাইবেলের নবীদের ঘটনা পড়ে কুরআনের সাথে মিলাতে আসবেন না। 


সকল নবীই নিস্পাপ ছিলেন। তাদের যা মানবীয় ভুল ছিলো তা ভুল নয় বরং উম্মতকে শিখানোর জন্য। যেমন সাহু সিজদা... 


তাহলে এবার বলুন! অনান্য নবীদের তো সীনা চাক হয়নি! সাহাবীদের তো সীনা চাক হয় নি! তারা কি আল্লাহর প্রিয় বান্দা, উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হননি? যেসকল সাহাবীরা জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়েছেন, কই! তাদেরও তো সীনা চাক হয়নি, উল্টো অমুসলিম থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন একেকজন।


তাহলে আপনি কিসের অজুহাত খোঁজছেন? কিসের ডাবল স্টান্ডার্ড খোঁজছেন? আল্লাহ তায়ালা তো পথ বাতলে দিয়েছেন। তিনি তো বলেছেন শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারণ না করতে। তবুও কি আপনি অজুহাত খোঁজে বেড়াবেন? 


আর রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাকের মাধ্যে বড় হিকমাহ আছে। আজ যারা বলে,, 

"শয়তান এসে কুরআনের নামে ভুলভাল বুঝিয়েছে রাসুল (ﷺ) কে" "শয়তানের বাণীকে রাসুল (ﷺ) ধরতে পারে নি" 

তারা বুঝুক যে শয়তানের কুমন্ত্রণার স্থানটাই বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে ওহীতে শয়তানের প্রভাব দাবী করাও অযৌক্তিক ও অজ্ঞতার বহিপ্রকাশ।  


সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম,,, 



১) আজ প্রযুক্তি হার্ট সার্জারি দেখিয়েছে। যা আল্লাহর কাছে কুন ফা ইয়া কুন। হও বললে হয়ে যাও। 


২) রাসুল (ﷺ) অনান্য নবীর মতই পবিত্র, নিষ্পাপ ছিলেন এবং তিনি সর্বশেষ্ঠ ছিলেন। সীনা চাকের সময় যে জমাটরক্ত ফেলে দেয়া হয়েছে সেটা "শয়তানের খণ্ড না" বরং সে স্থান যেখানে মূলত শয়তান কুমন্ত্রণা/ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। 


৩) কুরআন যেমন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী। তার বার্তাবাহক ও সর্বশ্রেষ্ঠ একজন। রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাক প্রমাণ করে যে তিনি কতটা পবিত্র। 


৪) যারা দাবী করে "রাসুল (ﷺ) শয়তানের প্রভাবে, প্ররোচনায়, কুমন্ত্রণায় ভুল আয়াত। স্যাটানিক ভার্স যুক্ত করেছেন কুরআনে। শয়তানের বাণী আর আল্লাহর বাণীতে পার্থক্য করতে পারেন নি"(নাঊজুবিল্লাহ) 


তারাও বুঝুক যে সীনা চাকের মাধ্যমে শয়তানের প্রভাব বিস্তারকে সেদিনও দূর করা হয়েছে। 


৫) রাসুল (ﷺ) একজন বার্তাবাহক, নবী। সর্বশেষ্ঠ বাণী যার উপর নাজিল হয়েছে। তাই সীনা চাক একটা হিকমত পূর্ণ বিষয় এবং আল্লাহই ভালো জানেন।  


৬) আমরা,সাহাবীরা রাসুল নই। আমাদের সীনা চাকের প্রশ্নই উঠে না। মুহাম্মদ (ﷺ) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কারণ তিনি কুরআনের বার্তাবাহক। আর এটি শুধুমাত্র পবিত্র বা পাপ থেকে মুক্তির জন্যই যে তা নয় আরও অনেক বিষয় যুক্ত আছে, যা আল্লাহই ভালো জানেন। সাধারণত সকল নবীই পবিত্র ও নিষ্পাপ। 


৭) এই প্রশ্ন করা ভুল হবে যে কেন আমাদের হৃদয় থেকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা/কুমন্ত্রণার অংশ ফেলে দেয়া হলো না। নাহলে আমরাও পাপ থেকে মুক্ত থাকতাম। ডাবল স্টান্ডার্ড! 


সকল নবী, রাসুলের সীনা চাকের বর্ণনা নেই তারপরেও তারা ছিলেন নিষ্পাপ। সাহাবীদেরও সীনা চাক হয়নি কিন্তু তারাও ছিলেন মহান ব্যাক্তিত্বের মানুষ। যাদের মধ্যে অনেকেই জান্নতের সার্টিফিকেট তথা জান্নাতী তা জেনেছেন দুনিয়াতেই। সুবহানআল্লাহ


আমাদের সবাইকেই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের সবাইকেই বলে দেয়া হয়েছে সঠিক পথ ও ভুল পথের কথা। যেখানে নাবী-রাসুল, আদম-হাওয়া (আঃ), সাহাবী, উম্মাহ সবাই ইনক্লুড আছি। 


রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা থেকে ডাবল স্টান্ডার্ড বলা বোকামি। কারণ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে জিব্রাইল (আঃ) এসেছেন। আমাদের কাছে আসে নাই। উনার কাছে ওহী প্রেরণ করা হয়েছে আমাদের কাছে করা হয় নাই। তেমনই সীনা চাকও একটি পার্থক্য। যা আল্লাহ তায়ালা ঘটিয়েছেন তার নির্বাচিত রাসুলের উপর। 

এর মানে এই না যে সীনা চাকের জন্যই তিনি নিষ্পাপ, পবিত্র। সকল নবী সীনা চাক ছাড়াও নিষ্পাপ ও পবিত্র ছিলেন। এটা রাসুলের মুজিজা ছিলো। এখানে আমাদের সাথে অবিচারের কিছু নেই। 

শয়তান পরীক্ষা সরূপ, যে শয়তান আদম (আঃ) কে কুমন্ত্রণা দিয়েছে। আর শয়তানকে আল্লাহ অবকাশ দিয়েছেন। তাই শয়তান আমাদের ওয়াসওয়াসা দিবে এটাই স্বাভাবিক সে আমাদের শত্রু।
আমাদের কাজ আল্লাহর পথ অনুসরণ করা। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করা।

তাই, সীনা চাকের কোন অজুহাত না দিয়ে আমল করতে থাকুন। আল্লাহর দেয়া সঠিক পথ অনুসরণ করুন। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারণ করা বন্ধ করুন। 


[২:২০৮] আল বাকারা


يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا ادخُلوا فِي السِّلمِ كافَّةً وَلا تَتَّبِعوا خُطُواتِ الشَّيطانِ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌ


হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।

[২:১৬৮] আল বাকারা


يا أَيُّهَا النّاسُ كُلوا مِمّا فِي الأَرضِ حَلالًا طَيِّبًا وَلا تَتَّبِعوا خُطُواتِ الشَّيطانِ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌ


হে মানুষ, যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।


[১:৬] আল ফাতিহা


اهدِنَا الصِّراطَ المُستَقيمَ


আমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন।


[১:৭] আল ফাতিহা


صِراطَ الَّذينَ أَنعَمتَ عَلَيهِم غَيرِ المَغضوبِ عَلَيهِم وَلَا الضّالّينَ


তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।
 

দাবী ৫: রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাকের ঘটনা ঘটেছে শিশুকালে। এটির বর্ণনা হাদিসে কিভাবে আসলো? যেখানে শিশু মুহাম্মদ (ﷺ) ছিলেন একদম ছোট্ট। এতে কি প্রমাণ হয় না হাদিসের বর্ণনা মিথ্যা!?


জবাবঃ সংশয়বাদী, নাস্তিক অথবা শী'আ ও হাদিস অস্বীকারকারী সব সময় ওত পেতে থাকে কখন কিভাবে হাদিসকে ভুল বা বাতিল প্রমাণ করা যায়। কারণ হাদিস বাতিল করতে পারলে কুরআন বাতিল করার চেষ্টা আরও মজবুত হবে। 


যাইহোক,, সীনা চাকের সময় রাসুল (ﷺ) শিশু ছিলেন তাই হাদিসে কিভাবে বর্ণিত হলো ঘটনাটি, এটাই মূলত প্রশ্ন। 


প্রথমত আমরা যদি সীনা চাকের বর্ণনা গুলি দেখি সেখানে স্পষ্ট বলা যাচ্ছে যে রাসুল (ﷺ) এর শিশুকালের সীনা চাকের ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই অবগত হয়েছিলেন।  


"সীনা চাকের ঘটনার পর: সাথী বাচ্চারা ছুটে গিয়ে হালীমাকে খবর দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে। তিনি ছুটে এসে দেখেন যে, মুহাম্মাদ মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে"


এখানে দেখা যাচ্ছে যে আশে পাশের মানুষজন এটি জানতে পেরেছে। 


"অলৌকিক ঘটনায় হালীমা ভীত হয়ে পড়েন এবং একদিন তাঁকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যান। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর।"


এ ঘটনায় নবী (ﷺ) এর দুধমাতা পর্যন্ত ভীত হয়ে গিয়েছিলে যার কারণে নবীজির আম্মা আমেনার কাছে  ফেরত দিয়েছেন। 


অনেক ইসলামিক স্কলার দের মতে সীনা চাকের চিন্থ, চিড়ার চিন্থ, দাগ শরীরে স্পষ্ট ছিলো যা দেখা যেতো। 


এখন হয়তো বলবেন, সাথীরা/হালীমা জানলোই ভালো কিন্তু শিশু মুহাম্মদ (ﷺ) কিভাবে বললেন! 


শিশু অবস্থায় বলার তো প্রশ্নই উঠে না। আমরা তো বলছি না যে শিশু অবস্থায় হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। হাদিস বর্ণিত হয়েছে পরবর্তীতে। আর সীনা চাকের ঘটনা যে পূর্বের ঘটেছে তার প্রমাণ পরেও পাওয়া গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সীনা চাক হয় মির'আজের পূর্বে। সুতরাং তখন বিষয়টা ক্লিয়ার হয় যে সীনা চাক শিশুকালে হয়েছে। এরইসাথে তা হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে। 


এমন নয় যে শুধুমাত্র শিশুকালেই সীনা চাক ঘটেছে!  সীনা চাক পরবর্তীতেও হয়েছে। যার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন রাসুল (ﷺ) নিজেই যার সাক্ষী। শিশুকালেই যে বর্ণনা করতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এমনটাও নাও যে শুধুমাত্র শিশুকালেই সীনা চাক হয়েছে।  

তাই শিশুকালে কিছু বুঝতেন না হাদিস কিভাবে বর্ণিত হলো এমন অবান্তর প্রশ্ন করে অজ্ঞতার পরিচয় দিবেন না। আর হাদিস অস্বীকার করার তো প্রশ্নই উঠে না। 


দাবী ৬: আলাকাহ বা রক্তপিণ্ড blood clot হৃদয়ে থাকা কি এই সেই বিষয়? একটা শিশুর হৃদয়ে blood clot থাকলে তার blood flow বন্ধ হতে পারে, অর্গান গুলিতে Damage হতে পারে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে! 


জবাবঃ এই প্রশ্নটি দেখলেই বুঝা যায় রতনে রতন চিনে! প্রশ্নকর্তা হাদিসে উল্লেখ করা আলাকাকে অস্বাভাবিক রোগ রক্তপিণ্ডের সাথে যা পুরোপুরি একটা হাস্যকর বিষয়। 


হাদিসের রক্তপিণ্ডের সাথে পিণ্ড, টিউমার, coronary thrombosis এর তুলনা করার কোন মানে হয় না। 


রাসুল (ﷺ) এর কোন রোগ ছিলো না এমন না যে সেটা অপসারণ করা হয়েছে। রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে যেহেতু সীনা চাক হয়নি সেহতু এহেন প্রশ্নের আগাগোড়াই ফেলনা। 


সীনা চাকের মাধ্যমে ভালো জিনিস দেয়া হয়েছে এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসার অংশ ফেলে দেয়া হয়েছে। আর সেই অংশকে "আলাকা" বলা হয়েছে যার অনুবাদ জমাটরক্ত ধরা হয়েছে। 


একটা বিষয় আমি আবারও রিপিট করি, মুজিজা গত বিষয়ের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা আমাদের দেয়ার সাধ্য নেই। অসম্ভব! যতটুক বলা হয়েছে ততটুকুই আমরা এর বেশি কিছুই জানি না। আল্লাহই ভালো জানেন। 


হাদিসে আলাকা বলতে যে কোন অংশকে বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহই ভালো জানেন। মুজিজা, অলৌকিক ঘটনার সব কিছু বুঝা সম্ভব না।


ঠিক তেমনই হাদিসে আলাকা বলতে আসলে কোন স্থানের আলাকা বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহই জানেন। তবে এখানে রক্তপিণ্ড অর্থ ধরা হয়েছে। কারণ সাধারণত আলাকা শব্দের অনেক অর্থ আছে কিন্তু প্রাচীনআরবরা বা প্রাচীন মুসলিমরা এটির অর্থ রক্তপিণ্ড, জমাটরক্ত বলতেন কারণ সেই যুগে এটির অন্যান্য অর্থ বুঝা কঠিন যা আধুনিক যুগে আমরা বুঝতে পারছি। 


এ হাদিসে আলাকার অনুবাদ জমাটরক্তই যে হতে হবে তা নয়। ইসলামিক স্কলার বলেন বা ডিকশনারি আলাকাহ শুধু blood clot এই থেমে নেই। এর অর্থ আরও আছে। আর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেভাবেই অর্থ সিলেক্ট করতে হবে। rice অর্থ যেমন ভাত, চাল, ধান। 


আমি যদি বলি আজকে rice খেলাম। এর মানে কি আমি ধান খেয়েছি? অবশ্যই না! প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আমি ভাত খেয়েছি। তাই উদ্দেশ্যে অনুযায়ী অর্থ বসে। 


তবে এই আলাকা কোন রোগ নয়। এটি আসলে কোন অংশকে বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি বুঝা কঠিন। 


এই অংশটা কোন রোগ নয় এমনকি এটা আমাদের ও আছে কারণ এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসার স্থান। 


"শয়তান ওয়াসওয়াসার রক্তপিন্ডকে বের করে দিয়েছিলেন যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বিদ্যমান থাকে এবং হৃদয় ধৌত করে পুনরায় তা ভরে দিয়ে বক্ষ বন্ধ করে দিলেন।" (আহসানুল বয়ান) 


সুতরাং এখান থেকে বুঝা গেলো এই অংশ আমাদের হৃদয়েও আছে যেখানে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়। এটা না কোন রোগ না কোন মেডিকেল ইস্যু। 


আলাকা ফেলে দেয়া হয়েছে। যেখানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয় আর এটি আমাদের হৃদয়ে আছে। 


এখন আমরাও জানি না এটা আসলে কোন অংশকে টার্গেট করে বলা হয়েছে যে অংশ শয়তানের কুমন্ত্রণার অংশ তাই এটি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। 


আর সাধারণ অনুবাদে এখানে জমাটরক্ত অনুবাদ কিন্তু এর আরও অর্থ আছে প্রসঙ্গিক ও যুক্তিযুক্ত। 


যেমন আলাকার অনেক অর্থ হলো "মতো" অর্থাৎ আলাকার অর্থ, জোঁকের মত কিছু, ঝুলে থাকা বস্তু। অনেকে কুরআনের আলাকার অর্থ জোঁক বলে তারা ভাবে কুরআন বলছে ভ্রুণ জোঁক! নাহ এমন না জোঁকের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে হুবহু জোঁক নয়। এ ব্যপারে পরবর্তী দাবীতে বিস্তারিত বলবো। 


সুতরাং, আলাকার অনেক অর্থ রয়েছে। আর আলাকা বলতে যে শুধু জমাটবাঁধা রক্তই বুঝাবে এমন নয়। জমাট ছাড়া রক্তকেও আলাকা (علقة) বলা হয়ে থাকে। আবার রক্ত বা রক্তের মত লাল অংশ, লাল দেখায় এমন কিছুকেও বুঝিয়ে থাকে। সাধারণ রক্ত, গাঢ় রক্তও এর অর্থ। 


জমাটবাঁধা রক্তই যে হতে হবে তা না। আর এই হাদিসে (علقة) বলতে জমাটরক্ত, জোঁক নয় বরং এখানে পারফেক্ট অর্থ বসবে: রক্ত, গাঢ় রক্ত। 



আলাক অর্থ জমাটবাঁধা, রক্তপিণ্ড এখানে নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। একটা শব্দের অনেক অর্থ আছে ভুল অর্থ নেয়ার কোন মানে হয় না। এখানে যেমন আলাকা হলো রক্ত, কুরআনের ভ্রুণবিদ্যায় সেটার অর্থ জোঁকের মত ঝুলন্ত ইত্যাদি। 


যাইহোক এটা ভিন্ন বিষয়, আমরা ফলাফালে চলে এসেছি। 


তাই আলাক অর্থ এখানে "রক্ত, লাল অংশ, গাঢ় রক্ত" এই অর্থ গুলিই মানানসই। এখানে যদি কেউ বলে জোঁকের মত কিছু তাহলে হবে না, তাহলে সেটা অপব্যাখ্যা হবে। 


তাই, আলাকা শব্দ পেয়েই সেটাকে clot দাবী করে coronary thrombosis বলা চরম অজ্ঞতা। এটা হচ্ছে এমন এক লাল অংশ যা আমাদের সবার আছে। রাসুল  (ﷺ) এর ক্ষেত্রে যেটা বের করা হয়েছে। এই আলাকা অর্থ রক্ত, গাঢ় রক্ত। [arabiclexicon]



আশা করি বিষয়টা ক্লিয়ার। 


দাবী ৭: কুরআনের "আলাকা" আর এই হাদিসের "আলাকা" কি এক নয়? অর্থাৎ রক্তপিণ্ড!?


জবাবঃ জ্বী নাহ, i eat rice অর্থ আমি ভাত খাই। কিন্তু আপনি যদি বলে rice অর্থ তো ধান। তাহলে? 


প্রেক্ষাপট, স্থান, ঘটনা, উদ্দেশ্য এখানে প্রভাব বিস্তার করে। খাওয়ার সময়, rice ধান নয় বরং ভাত। 


বক্ষ বিদারণের ঘটনায় যে (علقة) ফেলে দেয়া হয়েছে সেটা বক্ষের লাল অংশ, রক্তের অংশ, গাঢ় রক্ত ইত্যাদি। 


আবার যখন ভ্রুণবিদ্যার প্রেক্ষাপটে কুরআনে আলাকাহ বলা হয়েছে তখন সেটা হবে সেই অর্থ যেসব অর্থ এখানে যুক্তিযুক্ত এবং বসার যোগ্য। 


যেমন কুরআনে আলাকা বলতে বোঝায়,, 


ভ্রুণটি মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত শোষন করে ফলে ধীরে ধীরে রক্তের ন্যায় লাল আকার ধারণ করার কারণে সেটিকে কুরানে আলাক বলা হয়েছে। আবার এটাও বলা যেতে পারে ভ্রুণটি মাতৃ গর্ভ থেকে রক্ত শোষন করার কারণে সেটি আলাক যার ব্যাখ্যা আমরা উইলিয়াম লেক্সিকন ডিকশনারী থেকে পাই যেখানে বলা হচ্ছে, 


The child sucks his finger 


অর্থঃ শিশুটি তার আঙুল শোষন করছে বা চুষে নিচ্ছে 


অমুসলিম সোর্স The Blood Covenant 

By H. Clay Trumbull বই থেকে জানা যায় যে, আলাকা হল Leeches or blood suckers [Page Book]


জোক বা রক্ত চোষক। এককথায় আমরা সমগ্র কিছু একত্র করে যা পাই তা হল ভ্রুণের এমন অবস্থা যা নুতফা থেকে ঝুলন্ত অবস্থা পরিণত হয় এবং মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত শোষন করে এবং চল্লিশ দিনের মাঝামাঝি সময়ে রক্ত পিন্ড বা রক্তের মত আকার ধারণ করে এবং ৪০ - ৪৫ দিন পর মাংস্পিন্ডে পরিণত হয়। আশা করি এই পর্যন্ত কোন অসামঞ্জস্যতা নেই। 


এই ব্যাপারে আল্লাহই সর্বজ্ঞ।


[ কুরআনের আলাকা ও বিজ্ঞান নিয়ে মূল লেখা পড়ুন:  কুরআনে আলাকা পর্যায়ে কোন ভুল আছে কি? ]


আরও পড়ুন: islamqa answer


কুরআন-হাদিসে শব্দ একটাই (علقة) 


কুরআনেঃ


এই অর্থ যখন মায়ের গর্ভে তখন "রক্ত শোষক"

ধীরে ধীরে পরিণত হয় "লাল আকারে"

রক্ত শোষণ করার কারণে "علقة"


৪০ দিনের হাদিসেঃ


৪০ দিনের মাঝামাঝি সময়ে "রক্ত পিণ্ড" বা "রক্তের আকার ধারণ" "লালা বর্ণ/অংশে" পরিণত হয়। 


বক্ষ বিদারণের হাদিসেঃ


এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসা দেয়ার সেই অংশ যা হলো "علقة" যা মূলত "রক্ত পিণ্ডের মত" "লাল অংশ" "রক্তের আকার" "রক্ত" "গাঢ় রক্ত"। 


অর্থাৎ, রাসুল (ﷺ) এর হৃদয় যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করা হয় এবং সেখানের কিছু লাল অংশ, গাঢ় রক্ত, রক্ত ধুয়ে যায় বা ফেলে দেয়া হয়। 


অতএব বক্ষ বিদারণের علقة শব্দের অর্থ আর ভ্রুণবিদ্যা علقة অর্থ যদি সেইম সেইম নেন। তাহলে আজ থেকে বলবেন I eat rice মানে আমি ধান খাই। 


দাবী ৮: কুরআনে সূরা আলাকা ও এই হাদিসের আলাকার অর্থ সালাফরা এবং সে সময়কার আরবেরা রক্তপিণ্ড বলতো। তার মানে বুঝা যাচ্ছে কুরআনের আলাকা হলো রক্তপিণ্ড যা এরিস্টটল এর মতবাদের মত। যা প্রমাণ করে কুরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে। সবাই তথা সালাফ, মুফাসসির আলাকা বলতে রক্তপিণ্ডই বুঝতেন।


জবাবঃ কোন সালাফরা, আরবরা বলে নি যে علقة অর্থ শুধুমাত্র রক্তপিণ্ডই নিতে হবে। আর ইসলামের ভ্রুণবিদ্যায় আমরা যেমন রক্তপিণ্ড অর্থ নিয়েছি ঠিক তেমনি অনান্য অর্থও নিয়েছি। প্রাচীন আরবা সঠিক অর্থ নেওয়ার কথা না কারণ সেই সময় embryology এতো উন্নত হয়নি। তাই তারা তাদের বুঝ মত অর্থ নিয়েছেন। মানুষের অনুবাদে ভুল হতে পারে কিন্তু মূল টেক্সট "علقة" তে ভুল নেই। 


আজ আমরা বুঝতে পেরেছি যে আসলে "علقة" শব্দের কোন অর্থ কোন জায়গায় বসা পারফেক্ট হবে। সুবাহানআল্লাহ


আর আলহামদুলিল্লাহ এজন্যই যে "علقة" শব্দের ৩-৪ টা অর্থ দিয়েই ভ্রুণবিদ্যার তথ্য প্রকাশিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা এমন এক শব্দ এখানে দিয়েছেন যা আজ আমাদের হকচকিয়ে দিচ্ছে। কুরআন ১৪০০ বছর আগে যে বিজ্ঞান বলেছে তা আজ embryology আমাদের জানাচ্ছে। এটিই কুরআনের মুজিজা!


আরেকটা বিষয়, মুফাসসিররা রক্তপিণ্ড অর্থ নিয়েছেন বললেও সমস্যা নেই কারণ পানিতে থাকা প্রাণিকেও আলাকা বলা যায় কারণ তা লাল বর্ণের। [ক্লিক]


তাই,, 


১) সালাফ, মুফাসসির কেউ বলে নি যে "علقة" শব্দের একমাত্র অর্থ রক্তপিণ্ড ধরতে হবে। তাই এখানে দোষের কিছুই নেই। 


২) প্রাচীনকালের সবাই আলাকা শব্দের প্রকৃত অর্থ ধরতে পারবেনা না। পারার কথাও না কারণ তখন মেডিকেল সাইন্স, embryology এত উন্নত ছিলনা তাই তারা তাদের কাছে যা প্রাসঙ্গিক সেই অনুবাদ নিয়েছেন। কিন্তু আজ আমরা বুঝতে পেরেছি যার ফলস্বরূপ "علقة" শব্দের অর্থে রক্ত পিণ্ডও নেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অর্থও নেয়া হয়েছে। যা প্রেক্ষাপট, অবস্থা, উদ্দেশ্য, বর্ণনা অনুযায়ী যুক্তিযুক্ত।


৩) অনুবাদে ভুল হতেই পারে কারণ অনুবাদ মানুষের তৈরি। কিন্তু মূল text এ কোন ভুল আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এমনও তো হতে পারতো যে কুরআন হাদিসে এমন শব্দ ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ দিয়ে কখনো ভ্রুণবিদ্যা ব্যাখ্যাই সম্ভব হতো না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! তাই মূল টেক্সট আগে, পরে অনুবাদ। অনুবাদই সব কিছু না এটি মনে রাখতে হবে। 


আর শেষে এরিস্টটল এর কথা! শুনুন এরিস্টটল এমন অনেক ভুয়া কথা বলেছে যা কুরআনে নেই। আর কুরআনের এমন অনেক বৈজ্ঞানিক বিষয় আছে যা এরিস্টটল জানতো না, ভুল জানতো। 


আর নারীর ঋতুস্রাব ও পুরুষের বীর্য দিয়ে সন্তান জন্মের যে মতবাদ তা কুরানিক বিজ্ঞানে নেই। বৈদিক বিজ্ঞানে দেখতে পারেন। 


পড়ুনঃ কুরআন নয় বৈদিক ভ্রণবিদ্যা-ই সত্য!?

 

তূলনামূলক ধর্মতত্ত্ব


এ অংশটি তাদের জন্য যারা ইসলাম বিদ্বেষী - অমুসলিম। 


অনেক "হিন্দু এন্টি ইসলাম" পিপলরা কুরআনে অলৌকিক বিষয় নিয়ে বৈজ্ঞানিক ভুল ধরতে আসে। কিন্তু তাদের গ্রন্থে দেখা যায় মানুষের মাথার জায়গায় হাতির মাথা। হার্ট সার্জারির নজির মিল্লেও হাতির মাথা দিয়ে মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের নজির আজও মিলে নি। মানুষের মাথা কেঁটে হাতির মাথা লাগিয়ে জীবিতকরণ প্রক্রিয়ার নজির আজও মিলে নি আর দয়াকরে এটাকে প্লাস্টিক সার্জারি সাথে তুলনা করবেন না। প্লাস্টিক সার্জারি করতে মাথা উড়িয়ে দিতে হয় না। 


এছাড়াও বেদে বলা আছে ঈশ্বরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে বর্ণ সৃষ্টি যেমন শূদ্ররা পা থেকে সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েন! হনুমানের সূর্য খাওয়া, সাত ঘোড়া দিয়ে সূর্যের চারপাশে দৌড়াদৌড়ির কথা নাহয় বাদই দিলাম। 


আর আশা করি কোন খ্রিষ্টান যারা ইসলাম বিদ্বেষী তারা অলৌকিকতা নিয়ে হিন্দুইজমের পাব্লিকদের মত বৈজ্ঞানিক ভুল বলবেন না। কারণ বাইবেলও অনেক অলৌকিক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। 


তাই আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব তিনি হও বললে হয়ে যায়। অলৌকিক ঘটনা তাকেই বলে যা প্রকৃতির নিয়মের বিপরীত। যা বিজ্ঞান তার সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে বের করতে পারবে না। আগে মহবিশ্বের বিষয়গুলি জেনে শেষ করুক, এত বড় দায়িত্ব বিজ্ঞানের মাথায় না দেই কারণ তা তার সাধ্যের বাইরে।  


(الله أعلم) 


[1] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৬৩৬, সহীহ ihadis


[2] মুসলিম হা/১৬২, আনাস (রাঃ) হ’তে; মিশকাত হা/৫৮৫২ ‘নবুঅতের নিদর্শন সমূহ’ অনুচ্ছেদ।


[3] বুখারী হা/৩৮৮৭, ৩৪৯; মুসলিম হা/১৬৪, ১৬৩; মিশকাত হা/৫৮৬২, ৫৮৬৪, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ।

Post a Comment

0 Comments