وَقَالَ عَبْدَانُ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ أَخْبَرَنَا يُونُسُ عَنْ الزُّهْرِيِّ قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فُرِجَ سَقْفِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَم فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهَا فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ الدُّنْيَا افْتَحْ قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُআবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি মক্কায় অবস্থানকালে ঘরের ছাদ ফাঁক করা হল এবং জিবরাঈল (‘আঃ) অবতরণ করলেন। এরপর তিনি আমার বক্ষ বিদারণ করলেন এবং তা যমযমের পানি দ্বারা ধুলেন, এরপর ঈমান ও হিক্মতে পরিপূর্ণ একটি সোনার পেয়ালা নিয়ে এলেন এবং তা আমার বুকে ঢেলে দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে গেলেন এবং জিবরাঈল (‘আঃ) এই আসমানের তত্ত্বাবধানকারী ফেরেশ্তাকে বললেন, (দরজা) খোল। তিনি বললেন কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। [1]
"দ্বিতীয় দফায় হালীমার নিকটে আসার পর জন্মের চতুর্থ কিংবা পঞ্চম বছরে শিশু মুহাম্মাদের সীনা চাক বা বক্ষ বিদারণের বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। ব্যাপারটি ছিল এই যে, মুহাম্মাদ তার সাথীদের সাথে খেলছিলেন। এমন সময় জিবরাঈল ফেরেশতা এসে তাকে কিছু দূরে নিয়ে বুক চিরে ফেলেন। অতঃপর কলীজা বের করে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে কিছু জমাট রক্ত ফেলে দেন এবং বলেন,هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ ‘এটি তোমার মধ্যেকার শয়তানের অংশ’। অতঃপর বুক পূর্বের ন্যায় জোড়া লাগিয়ে দিয়ে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। পুরা ব্যাপারটি খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাথী বাচ্চারা ছুটে গিয়ে হালীমাকে খবর দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে। তিনি ছুটে এসে দেখেন যে, মুহাম্মাদ মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে’।[2] হালীমা তাকে বুকে তুলে বাড়ীতে এনে সেবা-যত্ন করতে থাকেন। এই অলৌকিক ঘটনায় হালীমা ভীত হয়ে পড়েন এবং একদিন তাঁকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যান। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। তাঁর দ্বিতীয়বার বক্ষবিদারণ হয় মি‘রাজে গমনের পূর্বে মক্কায়।"[3]
[৯৪:১] আল ইনশিরাহأَلَم نَشرَح لَكَ صَدرَكَআমি কি তোমার জন্য তোমার বক্ষ প্রশস্ত করিনি?
[১] পূর্বের সূরায় (মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি) তিনটি নিয়ামত বা অনুগ্রহের কথা আলোচনা হয়েছে। এ সূরাতেও মহান আল্লাহ আরো তিনটি অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন। তার মধ্যে তাঁর 'বক্ষ প্রশস্ত' করে দেওয়া হল প্রথম অনুগ্রহ। এর অর্থ হল, বক্ষ আলোকিত এবং উদার হওয়া; যাতে সত্য স্পষ্ট হয়ে যায় এবং তার জন্য হৃদয় সংকুলান হয়। একই অর্থে কুরআন কারীমের এই আয়াতওঃ {فَمَن يُرِدِ اللهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإِسْلاَمِ} অর্থাৎ, "আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন।" (সূরা আনআম ৬:১২৫ আয়াত) অর্থাৎ, সে ইসলামকে সত্য দ্বীন বলে জেনে নেয় এবং তা গ্রহণ করে নেয়। এই 'বক্ষ প্রশস্ত'-এর অর্থে সেই 'বক্ষ বিদীর্ণ' (সিনাচাক)ও এসে যায়; যা বিশুদ্ধ হাদীসানুযায়ী নবী (সাঃ)-এর দু'-দু' বার ঘটেছিলঃ একবার বাল্যকালে যখন তাঁর বয়স ৪ বছর। একদা জিবরীল (আঃ) এলেন এবং নবী (সাঃ)-এর বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তাঁর হৃদয়ের ভিতর থেকে শয়তানী রক্তপিন্ডকে বের করে দিয়েছিলেন যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বিদ্যমান থাকে এবং হৃদয় ধৌত করে পুনরায় তা ভরে দিয়ে বক্ষ বন্ধ করে দিলেন। (সহীহ মুসলিম ঈমান অধ্যায়, ইসরা পরিচ্ছেদ) আর একবার তা মি'রাজের সময় ঘটেছিল; জিবরীল (আঃ) তাঁর মুবারক বুকটাকে চিরে তাঁর অন্তরটাকে বের করে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে পুনরায় স্বস্থানে রেখে দিলেন এবং তা ঈমান ও হিকমত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিলেন। (সহীহাইন মি'রাজ পরিচ্ছেদ এবং নামায অধ্যায়)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বক্ষবিদারণ সম্পর্কে শী‘আগণ ও অন্যান্য আপত্তিকারীগণ মূলতঃ তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। (১) বক্ষবিদারণের ঘটনাটি মানব প্রকৃতির বিরোধী (২) এটি জ্ঞান ও যুক্তি বিরোধী (৩) এটি আল্লাহর সৃষ্টিবিধান পরিবর্তনের শামিল।এর জবাবে বলা যায় : (১) শৈশবে বক্ষবিদারণের বিষয়টি ভবিষ্যত নবুঅতের আগাম নিদর্শন। (২) শৈশবে ও মি‘রাজ গমনের পূর্বে বক্ষবিদারণের ঘটনা অন্ততঃ ২৫ জন ছাহাবী কর্তৃক অবিরত ধারায় বর্ণিত ছহীহ হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত (ইবনু কাছীর, তাফসীর ইসরা ১ আয়াত)। অতএব এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। (৩) যাবতীয় মানবীয় কলুষ থেকে পরিচ্ছন্ন করা। যাকে ‘শয়তানের অংশ’ বলা হয়েছে। এটা তাঁর জন্য খাছ এবং পৃথক একটি বৈশিষ্ট্য। (৪) প্রত্যেক নবীরই কিছু মু‘জেযা থাকে। সে হিসাবে এটি শেষনবী (ছাঃ)-এর বিশেষ মু‘জেযা সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে মানবীয় জ্ঞানের কোন প্রবেশাধিকার নেই। (৫) শেষনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ও বিশেষ ব্যবস্থাধীনে পরিচালিত ছিলেন। অতএব বক্ষবিদারণের ঘটনা সাধারণ মানবীয় রীতির বিরোধী হ’লেও তা আল্লাহর অনন্য সৃষ্টি কৌশলের অধীন। যেমন শিশুকালে মূসা (আঃ) সাগরে ভেসে গিয়ে ফেরাঊনের গৃহে লালিত-পালিত হন’ (ত্বোয়াহা ২০/৩৮-৩৯)। ঈসা (আঃ) মাতৃক্রোড়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বাক্যালাপ করেন’ (মারিয়াম ১৯/৩০-৩৩) ইত্যাদি। (নবীদের কাহিনী - আসাদুল্লাহ গালিব)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার লা'নত করেছেন সে সমস্ত মহিলাদের উপর যারা শরীর কেটে উল্কি আঁকে এবং যারা এ অংকনের কাজ করে, আরো লা'নত করেছেন যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভ্রু কাটে এবং যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কাটে। আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। [বুখারীঃ ৪৮৮৬]
এ সবই হল শয়তানী কার্যকলাপ, তা থেকে বিরত থাকা জরুরী। তবে পশু দ্বারা অধিক উপকৃত হওয়ার জন্য, তার ভালো গোশত লাভের জন্য অথবা এই ধরনের আরো কোন বৈধ উদ্দেশ্যে যদি তার খাসি করানো হয়, তবে তা বৈধ হবে। এর সমর্থন এ থেকেও হয় যে, নবী করীম (সাঃ) খাসি ছাগল কুরবানীতে জবাই করেছেন। যদি পশুর খাসি করানো বৈধ না হত, তাহলে তিনি (সাঃ) তার কুরবানী করতেন না। (বা খাসি হওয়া একটি ত্রুটি বলে গণ্য করতেন।) [ সূরা নিসা, আয়াত ১১৯/ তাফসীর আহসানুল বয়ান ]
এবার আসি বক্ষ বিদারণের বিষয়ে,,
শয়তান অপসারণ
সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম,,,
[২:২০৮] আল বাকারাيا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا ادخُلوا فِي السِّلمِ كافَّةً وَلا تَتَّبِعوا خُطُواتِ الشَّيطانِ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌহে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।
[২:১৬৮] আল বাকারাيا أَيُّهَا النّاسُ كُلوا مِمّا فِي الأَرضِ حَلالًا طَيِّبًا وَلا تَتَّبِعوا خُطُواتِ الشَّيطانِ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌহে মানুষ, যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।
[১:৬] আল ফাতিহাاهدِنَا الصِّراطَ المُستَقيمَআমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন।
[১:৭] আল ফাতিহাصِراطَ الَّذينَ أَنعَمتَ عَلَيهِم غَيرِ المَغضوبِ عَلَيهِم وَلَا الضّالّينَতাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন।যাদের উপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।
দাবী ৫: রাসুল (ﷺ) এর সীনা চাকের ঘটনা ঘটেছে শিশুকালে। এটির বর্ণনা হাদিসে কিভাবে আসলো? যেখানে শিশু মুহাম্মদ (ﷺ) ছিলেন একদম ছোট্ট। এতে কি প্রমাণ হয় না হাদিসের বর্ণনা মিথ্যা!?
জবাবঃ সংশয়বাদী, নাস্তিক অথবা শী'আ ও হাদিস অস্বীকারকারী সব সময় ওত পেতে থাকে কখন কিভাবে হাদিসকে ভুল বা বাতিল প্রমাণ করা যায়। কারণ হাদিস বাতিল করতে পারলে কুরআন বাতিল করার চেষ্টা আরও মজবুত হবে।
যাইহোক,, সীনা চাকের সময় রাসুল (ﷺ) শিশু ছিলেন তাই হাদিসে কিভাবে বর্ণিত হলো ঘটনাটি, এটাই মূলত প্রশ্ন।
প্রথমত আমরা যদি সীনা চাকের বর্ণনা গুলি দেখি সেখানে স্পষ্ট বলা যাচ্ছে যে রাসুল (ﷺ) এর শিশুকালের সীনা চাকের ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই অবগত হয়েছিলেন।
"সীনা চাকের ঘটনার পর: সাথী বাচ্চারা ছুটে গিয়ে হালীমাকে খবর দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে। তিনি ছুটে এসে দেখেন যে, মুহাম্মাদ মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে"
এখানে দেখা যাচ্ছে যে আশে পাশের মানুষজন এটি জানতে পেরেছে।
"অলৌকিক ঘটনায় হালীমা ভীত হয়ে পড়েন এবং একদিন তাঁকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যান। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর।"
এ ঘটনায় নবী (ﷺ) এর দুধমাতা পর্যন্ত ভীত হয়ে গিয়েছিলে যার কারণে নবীজির আম্মা আমেনার কাছে ফেরত দিয়েছেন।
অনেক ইসলামিক স্কলার দের মতে সীনা চাকের চিন্থ, চিড়ার চিন্থ, দাগ শরীরে স্পষ্ট ছিলো যা দেখা যেতো।
এখন হয়তো বলবেন, সাথীরা/হালীমা জানলোই ভালো কিন্তু শিশু মুহাম্মদ (ﷺ) কিভাবে বললেন!
শিশু অবস্থায় বলার তো প্রশ্নই উঠে না। আমরা তো বলছি না যে শিশু অবস্থায় হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। হাদিস বর্ণিত হয়েছে পরবর্তীতে। আর সীনা চাকের ঘটনা যে পূর্বের ঘটেছে তার প্রমাণ পরেও পাওয়া গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সীনা চাক হয় মির'আজের পূর্বে। সুতরাং তখন বিষয়টা ক্লিয়ার হয় যে সীনা চাক শিশুকালে হয়েছে। এরইসাথে তা হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে।
এমন নয় যে শুধুমাত্র শিশুকালেই সীনা চাক ঘটেছে! সীনা চাক পরবর্তীতেও হয়েছে। যার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। আর আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন রাসুল (ﷺ) নিজেই যার সাক্ষী। শিশুকালেই যে বর্ণনা করতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এমনটাও নাও যে শুধুমাত্র শিশুকালেই সীনা চাক হয়েছে।
তাই শিশুকালে কিছু বুঝতেন না হাদিস কিভাবে বর্ণিত হলো এমন অবান্তর প্রশ্ন করে অজ্ঞতার পরিচয় দিবেন না। আর হাদিস অস্বীকার করার তো প্রশ্নই উঠে না।
দাবী ৬: আলাকাহ বা রক্তপিণ্ড blood clot হৃদয়ে থাকা কি এই সেই বিষয়? একটা শিশুর হৃদয়ে blood clot থাকলে তার blood flow বন্ধ হতে পারে, অর্গান গুলিতে Damage হতে পারে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!
জবাবঃ এই প্রশ্নটি দেখলেই বুঝা যায় রতনে রতন চিনে! প্রশ্নকর্তা হাদিসে উল্লেখ করা আলাকাকে অস্বাভাবিক রোগ রক্তপিণ্ডের সাথে যা পুরোপুরি একটা হাস্যকর বিষয়।
হাদিসের রক্তপিণ্ডের সাথে পিণ্ড, টিউমার, coronary thrombosis এর তুলনা করার কোন মানে হয় না।
রাসুল (ﷺ) এর কোন রোগ ছিলো না এমন না যে সেটা অপসারণ করা হয়েছে। রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে যেহেতু সীনা চাক হয়নি সেহতু এহেন প্রশ্নের আগাগোড়াই ফেলনা।
সীনা চাকের মাধ্যমে ভালো জিনিস দেয়া হয়েছে এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসার অংশ ফেলে দেয়া হয়েছে। আর সেই অংশকে "আলাকা" বলা হয়েছে যার অনুবাদ জমাটরক্ত ধরা হয়েছে।
একটা বিষয় আমি আবারও রিপিট করি, মুজিজা গত বিষয়ের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা আমাদের দেয়ার সাধ্য নেই। অসম্ভব! যতটুক বলা হয়েছে ততটুকুই আমরা এর বেশি কিছুই জানি না। আল্লাহই ভালো জানেন।
হাদিসে আলাকা বলতে যে কোন অংশকে বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহই ভালো জানেন। মুজিজা, অলৌকিক ঘটনার সব কিছু বুঝা সম্ভব না।
ঠিক তেমনই হাদিসে আলাকা বলতে আসলে কোন স্থানের আলাকা বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহই জানেন। তবে এখানে রক্তপিণ্ড অর্থ ধরা হয়েছে। কারণ সাধারণত আলাকা শব্দের অনেক অর্থ আছে কিন্তু প্রাচীনআরবরা বা প্রাচীন মুসলিমরা এটির অর্থ রক্তপিণ্ড, জমাটরক্ত বলতেন কারণ সেই যুগে এটির অন্যান্য অর্থ বুঝা কঠিন যা আধুনিক যুগে আমরা বুঝতে পারছি।
এ হাদিসে আলাকার অনুবাদ জমাটরক্তই যে হতে হবে তা নয়। ইসলামিক স্কলার বলেন বা ডিকশনারি আলাকাহ শুধু blood clot এই থেমে নেই। এর অর্থ আরও আছে। আর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেভাবেই অর্থ সিলেক্ট করতে হবে। rice অর্থ যেমন ভাত, চাল, ধান।
আমি যদি বলি আজকে rice খেলাম। এর মানে কি আমি ধান খেয়েছি? অবশ্যই না! প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আমি ভাত খেয়েছি। তাই উদ্দেশ্যে অনুযায়ী অর্থ বসে।
তবে এই আলাকা কোন রোগ নয়। এটি আসলে কোন অংশকে বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি বুঝা কঠিন।
এই অংশটা কোন রোগ নয় এমনকি এটা আমাদের ও আছে কারণ এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসার স্থান।
"শয়তান ওয়াসওয়াসার রক্তপিন্ডকে বের করে দিয়েছিলেন যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে বিদ্যমান থাকে এবং হৃদয় ধৌত করে পুনরায় তা ভরে দিয়ে বক্ষ বন্ধ করে দিলেন।" (আহসানুল বয়ান)
সুতরাং এখান থেকে বুঝা গেলো এই অংশ আমাদের হৃদয়েও আছে যেখানে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয়। এটা না কোন রোগ না কোন মেডিকেল ইস্যু।
আলাকা ফেলে দেয়া হয়েছে। যেখানে শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয় আর এটি আমাদের হৃদয়ে আছে।
এখন আমরাও জানি না এটা আসলে কোন অংশকে টার্গেট করে বলা হয়েছে যে অংশ শয়তানের কুমন্ত্রণার অংশ তাই এটি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
আর সাধারণ অনুবাদে এখানে জমাটরক্ত অনুবাদ কিন্তু এর আরও অর্থ আছে প্রসঙ্গিক ও যুক্তিযুক্ত।
যেমন আলাকার অনেক অর্থ হলো "মতো" অর্থাৎ আলাকার অর্থ, জোঁকের মত কিছু, ঝুলে থাকা বস্তু। অনেকে কুরআনের আলাকার অর্থ জোঁক বলে তারা ভাবে কুরআন বলছে ভ্রুণ জোঁক! নাহ এমন না জোঁকের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে হুবহু জোঁক নয়। এ ব্যপারে পরবর্তী দাবীতে বিস্তারিত বলবো।
সুতরাং, আলাকার অনেক অর্থ রয়েছে। আর আলাকা বলতে যে শুধু জমাটবাঁধা রক্তই বুঝাবে এমন নয়। জমাট ছাড়া রক্তকেও আলাকা (علقة) বলা হয়ে থাকে। আবার রক্ত বা রক্তের মত লাল অংশ, লাল দেখায় এমন কিছুকেও বুঝিয়ে থাকে। সাধারণ রক্ত, গাঢ় রক্তও এর অর্থ।
জমাটবাঁধা রক্তই যে হতে হবে তা না। আর এই হাদিসে (علقة) বলতে জমাটরক্ত, জোঁক নয় বরং এখানে পারফেক্ট অর্থ বসবে: রক্ত, গাঢ় রক্ত।
আলাক অর্থ জমাটবাঁধা, রক্তপিণ্ড এখানে নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। একটা শব্দের অনেক অর্থ আছে ভুল অর্থ নেয়ার কোন মানে হয় না। এখানে যেমন আলাকা হলো রক্ত, কুরআনের ভ্রুণবিদ্যায় সেটার অর্থ জোঁকের মত ঝুলন্ত ইত্যাদি।
যাইহোক এটা ভিন্ন বিষয়, আমরা ফলাফালে চলে এসেছি।
তাই আলাক অর্থ এখানে "রক্ত, লাল অংশ, গাঢ় রক্ত" এই অর্থ গুলিই মানানসই। এখানে যদি কেউ বলে জোঁকের মত কিছু তাহলে হবে না, তাহলে সেটা অপব্যাখ্যা হবে।
তাই, আলাকা শব্দ পেয়েই সেটাকে clot দাবী করে coronary thrombosis বলা চরম অজ্ঞতা। এটা হচ্ছে এমন এক লাল অংশ যা আমাদের সবার আছে। রাসুল (ﷺ) এর ক্ষেত্রে যেটা বের করা হয়েছে। এই আলাকা অর্থ রক্ত, গাঢ় রক্ত। [arabiclexicon]
আশা করি বিষয়টা ক্লিয়ার।
দাবী ৭: কুরআনের "আলাকা" আর এই হাদিসের "আলাকা" কি এক নয়? অর্থাৎ রক্তপিণ্ড!?
জবাবঃ জ্বী নাহ, i eat rice অর্থ আমি ভাত খাই। কিন্তু আপনি যদি বলে rice অর্থ তো ধান। তাহলে?
প্রেক্ষাপট, স্থান, ঘটনা, উদ্দেশ্য এখানে প্রভাব বিস্তার করে। খাওয়ার সময়, rice ধান নয় বরং ভাত।
বক্ষ বিদারণের ঘটনায় যে (علقة) ফেলে দেয়া হয়েছে সেটা বক্ষের লাল অংশ, রক্তের অংশ, গাঢ় রক্ত ইত্যাদি।
আবার যখন ভ্রুণবিদ্যার প্রেক্ষাপটে কুরআনে আলাকাহ বলা হয়েছে তখন সেটা হবে সেই অর্থ যেসব অর্থ এখানে যুক্তিযুক্ত এবং বসার যোগ্য।
যেমন কুরআনে আলাকা বলতে বোঝায়,,
ভ্রুণটি মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত শোষন করে ফলে ধীরে ধীরে রক্তের ন্যায় লাল আকার ধারণ করার কারণে সেটিকে কুরানে আলাক বলা হয়েছে। আবার এটাও বলা যেতে পারে ভ্রুণটি মাতৃ গর্ভ থেকে রক্ত শোষন করার কারণে সেটি আলাক যার ব্যাখ্যা আমরা উইলিয়াম লেক্সিকন ডিকশনারী থেকে পাই যেখানে বলা হচ্ছে,
The child sucks his finger
অর্থঃ শিশুটি তার আঙুল শোষন করছে বা চুষে নিচ্ছে
অমুসলিম সোর্স The Blood Covenant
By H. Clay Trumbull বই থেকে জানা যায় যে, আলাকা হল Leeches or blood suckers [Page Book]
জোক বা রক্ত চোষক। এককথায় আমরা সমগ্র কিছু একত্র করে যা পাই তা হল ভ্রুণের এমন অবস্থা যা নুতফা থেকে ঝুলন্ত অবস্থা পরিণত হয় এবং মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত শোষন করে এবং চল্লিশ দিনের মাঝামাঝি সময়ে রক্ত পিন্ড বা রক্তের মত আকার ধারণ করে এবং ৪০ - ৪৫ দিন পর মাংস্পিন্ডে পরিণত হয়। আশা করি এই পর্যন্ত কোন অসামঞ্জস্যতা নেই।
এই ব্যাপারে আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
[ কুরআনের আলাকা ও বিজ্ঞান নিয়ে মূল লেখা পড়ুন: কুরআনে আলাকা পর্যায়ে কোন ভুল আছে কি? ]
আরও পড়ুন: islamqa answer
কুরআন-হাদিসে শব্দ একটাই (علقة)
কুরআনেঃ
এই অর্থ যখন মায়ের গর্ভে তখন "রক্ত শোষক"
ধীরে ধীরে পরিণত হয় "লাল আকারে"
রক্ত শোষণ করার কারণে "علقة"
৪০ দিনের হাদিসেঃ
৪০ দিনের মাঝামাঝি সময়ে "রক্ত পিণ্ড" বা "রক্তের আকার ধারণ" "লালা বর্ণ/অংশে" পরিণত হয়।
বক্ষ বিদারণের হাদিসেঃ
এটি শয়তানের ওয়াসওয়াসা দেয়ার সেই অংশ যা হলো "علقة" যা মূলত "রক্ত পিণ্ডের মত" "লাল অংশ" "রক্তের আকার" "রক্ত" "গাঢ় রক্ত"।
অর্থাৎ, রাসুল (ﷺ) এর হৃদয় যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করা হয় এবং সেখানের কিছু লাল অংশ, গাঢ় রক্ত, রক্ত ধুয়ে যায় বা ফেলে দেয়া হয়।
অতএব বক্ষ বিদারণের علقة শব্দের অর্থ আর ভ্রুণবিদ্যা علقة অর্থ যদি সেইম সেইম নেন। তাহলে আজ থেকে বলবেন I eat rice মানে আমি ধান খাই।
দাবী ৮: কুরআনে সূরা আলাকা ও এই হাদিসের আলাকার অর্থ সালাফরা এবং সে সময়কার আরবেরা রক্তপিণ্ড বলতো। তার মানে বুঝা যাচ্ছে কুরআনের আলাকা হলো রক্তপিণ্ড যা এরিস্টটল এর মতবাদের মত। যা প্রমাণ করে কুরআনে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে। সবাই তথা সালাফ, মুফাসসির আলাকা বলতে রক্তপিণ্ডই বুঝতেন।
জবাবঃ কোন সালাফরা, আরবরা বলে নি যে علقة অর্থ শুধুমাত্র রক্তপিণ্ডই নিতে হবে। আর ইসলামের ভ্রুণবিদ্যায় আমরা যেমন রক্তপিণ্ড অর্থ নিয়েছি ঠিক তেমনি অনান্য অর্থও নিয়েছি। প্রাচীন আরবা সঠিক অর্থ নেওয়ার কথা না কারণ সেই সময় embryology এতো উন্নত হয়নি। তাই তারা তাদের বুঝ মত অর্থ নিয়েছেন। মানুষের অনুবাদে ভুল হতে পারে কিন্তু মূল টেক্সট "علقة" তে ভুল নেই।
আজ আমরা বুঝতে পেরেছি যে আসলে "علقة" শব্দের কোন অর্থ কোন জায়গায় বসা পারফেক্ট হবে। সুবাহানআল্লাহ
আর আলহামদুলিল্লাহ এজন্যই যে "علقة" শব্দের ৩-৪ টা অর্থ দিয়েই ভ্রুণবিদ্যার তথ্য প্রকাশিত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা এমন এক শব্দ এখানে দিয়েছেন যা আজ আমাদের হকচকিয়ে দিচ্ছে। কুরআন ১৪০০ বছর আগে যে বিজ্ঞান বলেছে তা আজ embryology আমাদের জানাচ্ছে। এটিই কুরআনের মুজিজা!
আরেকটা বিষয়, মুফাসসিররা রক্তপিণ্ড অর্থ নিয়েছেন বললেও সমস্যা নেই কারণ পানিতে থাকা প্রাণিকেও আলাকা বলা যায় কারণ তা লাল বর্ণের। [ক্লিক]
তাই,,
১) সালাফ, মুফাসসির কেউ বলে নি যে "علقة" শব্দের একমাত্র অর্থ রক্তপিণ্ড ধরতে হবে। তাই এখানে দোষের কিছুই নেই।
২) প্রাচীনকালের সবাই আলাকা শব্দের প্রকৃত অর্থ ধরতে পারবেনা না। পারার কথাও না কারণ তখন মেডিকেল সাইন্স, embryology এত উন্নত ছিলনা তাই তারা তাদের কাছে যা প্রাসঙ্গিক সেই অনুবাদ নিয়েছেন। কিন্তু আজ আমরা বুঝতে পেরেছি যার ফলস্বরূপ "علقة" শব্দের অর্থে রক্ত পিণ্ডও নেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অর্থও নেয়া হয়েছে। যা প্রেক্ষাপট, অবস্থা, উদ্দেশ্য, বর্ণনা অনুযায়ী যুক্তিযুক্ত।
৩) অনুবাদে ভুল হতেই পারে কারণ অনুবাদ মানুষের তৈরি। কিন্তু মূল text এ কোন ভুল আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এমনও তো হতে পারতো যে কুরআন হাদিসে এমন শব্দ ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ দিয়ে কখনো ভ্রুণবিদ্যা ব্যাখ্যাই সম্ভব হতো না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! তাই মূল টেক্সট আগে, পরে অনুবাদ। অনুবাদই সব কিছু না এটি মনে রাখতে হবে।
আর শেষে এরিস্টটল এর কথা! শুনুন এরিস্টটল এমন অনেক ভুয়া কথা বলেছে যা কুরআনে নেই। আর কুরআনের এমন অনেক বৈজ্ঞানিক বিষয় আছে যা এরিস্টটল জানতো না, ভুল জানতো।
আর নারীর ঋতুস্রাব ও পুরুষের বীর্য দিয়ে সন্তান জন্মের যে মতবাদ তা কুরানিক বিজ্ঞানে নেই। বৈদিক বিজ্ঞানে দেখতে পারেন।
পড়ুনঃ কুরআন নয় বৈদিক ভ্রণবিদ্যা-ই সত্য!?
0 Comments