কুরআনের কিছু বৈজ্ঞানিক আয়াত ও তা নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব!


🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________
.
.
  • মূলপাতা
  • ◾ভূমিকা
  • ◾কুরআন অনুযায়ী চাঁদের আলো কি নিজেস্ব? 
  • ◾সূর্য চন্দ্র কক্ষপথে গমন নিয়ে কুরআন কিছু বলে!? ইয়াসবাহুন অর্থ কি? 
  • ◾কুরআনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিষয়ে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় কি??
  • ◾কুরআনে বিগব্যাং বিষয়ে সঠিক নাকি ভুল তথ্য প্রদান করছে!? 
  • ◾পনিচক্র সম্পর্কে কুরআন কি কিছুই বলে না? 
  • ◾কুরআনে পিঁপড়া সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়? 
  • ◾কুরআন অনুসারে আগে শ্রবণশক্তি পরে দৃষ্টিশক্তি!? 
  • ◾লিঙ্গ নির্ধারণে পুরুষের ভূমিকা সম্পর্কে কুরআন কি বলে!?
  • ◾শেষকথা

.
.
.
ভূমিকা

আসসালামু আলাইকুম,
আলহামদুলিল্লাহ সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের রব। যিনি আমাদের দিয়েছে পবিত্র কুরআন। কুরআন কখনোই কোন বিজ্ঞানের বই নয় কুরআন আমাদের সিরাতুল মুস্তাকিমের পথিক বানাতে এসেছে। অনেক মুসলিম কুরআনকে বিজ্ঞান বুঝাতে গিয়ে ভুল করে আবার অনেকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেরাই বিপদে পরে যায়।
.
◾তবে আমি যদি বলি তাহলে বলব কুরআন হচ্ছে সর্ব শ্রেষ্ঠ কিতাব যার মধ্যে সকল বিষয়েই আলোচনা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক-বৈজ্ঞানিক-অর্থনৈতিক সব বিষয়েই একটু আকটু আলোচনা করা হয়েছে টেলিগ্রাফিক বার্তা আমাদের দেওয়া হয়েছে যা সকল বিষয়েই আলোচনার গ্রন্থ আলহামদুলিল্লাহ।
.
.
সুতরাং, কুরআনে অনেক বৈজ্ঞানিক বিষয়ে আলোচনা রয়েছে তবে সেই বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলিকে আজকাল ইসলাম বিরোধীরা রিজেক্ট করতে চাইছে। শুধু রিজেক্ট করলেই মানা যেতো তবে তারা রিজেক্ট তো করেছেন সাথে বৈজ্ঞানিক আয়াতকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করতে চাচ্ছে। আসুন এমন কয়েকটি দাবী দেখে নেই। এবং তা কি আদৌ সত্য না মিথ্যা তাও যাচাই করে নেই।
.
.
📎 ১ নং দাবী!
পবিত্র কুরআনে চাঁদের আলো কখনো প্রতিফলিত নয়। বরং নিজেস্ব!

.
দাবীটি নিম্নরূপ...
.
Anaxagoras (500 BCE–428 BCE) নামক একজন গ্রিক ফিলসফার ছিলেন যিনি প্রথমে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই সেটা প্রস্তাব করেন।
.
এবং নিন্মোক্ত ৩ টি আয়াতের ব্যাখ্যা সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তাফসীর “তাফসীরে ইবনে কাসির” থেকে দেখলেই বুঝবেন কুরআন স্পষ্টভাবেই বলছে চাঁদ ও সূর্যের আলো পৃথক পৃথক, এর ফলেই দিন রাত্রির সৃষ্টি হয়।
আয়াত ৩ টি হচ্ছেঃ
.
25:61
ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﭐﻟَّﺬِﻯ ﺟَﻌَﻞَ ﻓِﻰ ﭐﻟﺴَّﻤَﺎٓﺀِ ﺑُﺮُﻭﺟً۬ﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﻓِﻴﮩَﺎ ﺳِﺮَٲﺟً۬ﺎ ﻭَﻗَﻤَﺮً۬ﺍ ﻣُّﻨِﻴﺮً۬ﺍ
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।
.
71:16
 وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا
 এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।
.
10:05
  هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاء وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُواْ عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللّهُ ذَلِكَ إِلاَّ بِالْحَقِّ يُفَصِّلُ الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
-তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।
.
25:61 এর কয়েকটি বিখ্যাত ইংরেজি অনুবাদঃ
Abdullah Yusuf Ali- Blessed is He Who made constellations in the skies,and placed therein a Lamp and a Moon giving light;
Habib Shakir- Blessed is He Who made the constellations in the heavens and made therein a lamp and a shining moon.
Pickthal- Blessed be He Who hath placed in the heaven mansions of the stars, and hath placed therein a great lamp and a moon giving light!
Saheeh international- Blessed is He who has placed in the sky great stars and placed therein a [burning] lamp and luminous moon.
.
71:16 এর কয়েকটি বিখ্যাত ইংরেজি অনুবাদঃ
Yousuf Ali- And made the moon a light in their midst, and made the sun as a (Glorious) Lamp?
Habib Shakir- And made the moon therein a light, and made the sun a lamp?
Pickthal- And hath made the moon a light therein, and made the sun a lamp?
.
10:05 এর কয়েকটি ইংরেজি অনুবাদঃ
Yousuf Ali- It is He Who made the sun to be a shining glory(1391) and the moon to be a light (of beauty), and measured out stages for her; that ye might know the number of years and the count (of time). Nowise did Allah create this but in truth and righteousness.(1392) (Thus) doth He explain His Signs in detail, for those who understand.(1393)
Habib Shakir- He it is Who made the sun a shining brightness and the moon a light, and ordained for it mansions that you might know the computation of years and the reckoning. Allah did not create it but with truth;He makes the signs manifest for a people who
Pickthal- He it is who appointed the sun a splendour and the moon a light, and measured for her stages, that ye might know the number of the years, and the reckoning. Allah created not (all) that save in truth. He detaileth the revelations for people who have knowledge.
.
এগুলা প্রমাণ করে কুরআন স্পষ্ট ভাবেই বলছে চাঁদের নিজস্ব আলো রয়েছে। নূর মানে কখনোই প্রতিফলিত আলো নয়। ফেরেশতারা কি “প্রতিফলিত আলো” দিয়ে তৈরি? সূরা আন নূর মানে কি “প্রতিফলিত আলোর শ্লোক”? অবশ্যই না।
.
.
◾জবাব:- ইসলাম বিরোধী লেখক প্রথমেই দেখালেন যে ১৪০০ বছর আগে Anaxagoras চাঁদের আলো প্রতিফলিত তা যানতো। মেনে নিলাম জানতো শুধু Anaxagoras কেনো!? অ্যারিস্টটলও জানতো যে চাঁদের আলো তার প্রতিফলিত আলো।
.
তাহলে ইসলাম বিরোধীদের কাছে আমার প্রশ্ন!
"কুরআন যদি আল্লাহর প্রেরিত না হতো তাহলে কিভাবে মুহাম্মদ (সঃ) জানলো!? আর সঠিক গুলি কেনো নিলো!? তারা তো ভাবতো সূর্য স্থির তাহলে মুহাম্মদ (সঃ) কেনো তা নিলেন না। তিনি কি বিজ্ঞানী যে সঠিক গুলি নিবেন!?"
.
.
এবার দেখি চাঁদের আলো কি নিজেস্ব নাকি কুরআন অনুযায়ী।
.
প্রথমে আমরা শাব্দিক বিশ্লেষণ করব,,,
.
◾Arabic (سِرَاجًا) = A Lamp
◾Arabic (نُورًا) = Light/A Reflected light
.
আমরা দেখতে পাচ্ছি শাব্দিক ভাবে দুটি শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে। আল্লাহ তায়ালা যদি আলো গুলিকে নিজস্ব মনে করতেন কখনোই "দুটি" শব্দ ব্যাবহার করতেন না। সূর্য আর চাঁদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র "সিরাজ" ব্যাবহার করতেন। যদি কেউ বলে আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে নূর তাহলে কি আল্লাহ প্রতিফলিত আলো!?
আসলে ইসলাম বিরোধী জানে না যে আল্লাহর নূর আর চাঁদের নূর আর ফেরেস্তার নূর কোনটাই এক নয়। এই দাবীটা ঠিক এমন যে "টর্চ লাইটের আলো, মোবাইল ফোনের আলো, সূর্যের আলো" এক!? আসলে তিনটাই কিন্তু আলো তবে তা এক নয়। আর ইসলাম বিরোধীরা তা প্রমাণ করতে পারবে না।
.
.
আল্লাহ বলেই দিয়েছেন,,,
.

এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।
(Quran 112:4)
.
তার আল্লাহর নূর আর চাঁদের নূর যে এক তা ইসলাম বিরোধীদের মিথ্যা তো বটেই সাথে Logical Fallacy বলা যায়।
.
তার পর ইসলাম বিদ্বেষী বলেছেন যে ইবনে কাসীরের তাফসীর অনুযায়ী চাঁদেরো আলো আছে তবে তা আলাদা।
.
হুম এটা মিথ্যা নয়। চাঁদের আলো আছে তবে সেই আলোটা চাঁদের নিজেস্ব নয় বরং সূর্য থেকে প্রতিফলিত আলো। যাকে আমরা জোৎস্না বলে থাকি। সূর্যের নিজের আলো আছে তবে চাঁদের আলোটি হচ্ছে ধার করা। এই পার্থক্যটা ইবনে কাসীরো সূরা ইউনুসের ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন।
.
আরেকটি বিষয় বলেছেন ইসলাম বিদ্বেষী তিনি কয়েকটি অনুবাদ দিয়ে দাবী করছেন কোন অনুবাদে নাই যে চাঁদের আলো প্রতিফলিত। আসলে এরা যে কত বড় অজ্ঞ এবং Logical Fallacy তে মাস্টার তার প্রমাণ এটাই। অনুবাদে যে দেওয়াই লাগবে তা নয় তবে মূল টেক্সট থেকে প্রমাণিত হয়ে চাঁদের আলো প্রতিফলিত। শুধু তাই নয় অনেক অনুবাদ ও তাফসীরের এটি বলা হয়েছে।
.
১) সহীহ ইন্টারন্যাশনাল — ইংরেজি অনুবাদে সূরা ইউনুসের ৫ নং আয়াতে চাঁদের আলোকে "derived light" বলা হয়েছে।

SAHIH INTERNATIONAL
It is He who made the sun a shining light and the moon a derived light and determined for it phases - that you may know the number of years and account [of time]. Allah has not created this except in truth. He details the signs for a people who know

আর সূরা নূ্হের ১৬ নং আয়াতে চাঁদের আলোকে "reflected light" বলা হয়েছে।

SAHIH INTERNATIONAL
And made the moon therein a [reflected] light and made the sun a burning lamp?

তাহলে এই অনুবাদ কি ভুল!? কোন প্রমাণ দিতে পারবে এই নাস্তিকরা!? কোন ইসলামীক স্কলার কি এই অনুবাদকে ভুল বলেছে!?
.
.
২) তাফসীর যিলালিল কোরআন — এ সূরা নূহের ১৬ নং আয়াতের অনুবাদে চাঁদকে "আলো গ্রহণকারী" আর সূর্যকে "আলো দানকারী" বলা হয়েছে। এই অনুবাদ কি ভুল!? কোন প্রমাণ আছে ইসলাম বিদ্বেষীদের কাছে!?
.
৩) তাফসীরে মাযহারী — তে সূরা ফুরকানের ৬১ নং আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে সূর্যের আলো নিজেস্ব আর চাঁদের আলো প্রতিফলিত। এটাও কি ভুল!? কোন প্রমাণ আছে এটি ভুল!?
.
৪) তাফসীরে আহসানুল বয়ান — সূরা ফুরকান ৬১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে আহসানুল বয়ানে বলেছে,,,
.
"সূরা ইউনুসের ১০:৫ নং আয়াতের মত এ আয়াতেও প্রমাণ হয় যে, চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সুতরাং বিজ্ঞানের এ কথা বহু পূর্বেই কুরআনে প্রমাণিত হয়েছে।"
.
এই তাফসীরো কি মিথ্যা নাকি!? নাস্তিক সমাজ কি বলে!? নাকি এটা মিথ্যা তা প্রমাণিত!? প্রমাণ ছাড়া কি এই কথাকে ফেলে দিবে ইসলাম বিদ্বেষীরা!?
.
৫) ফাতহুল মাজীদ — এ সূরা ইউনুসের ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় শব্দ বিশ্লেষণ সহ বলেছেন,,,
.
"৫-৬ নং আয়াতের তাফসীর: উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমতার পূর্ণতা ও সাম্রাজ্যের প্রমাণস্বরূপ বহু নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন সে সংবাদ দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা মহান স্রষ্টা তার প্রমাণ বহন করে এমন অনেক নিদর্শন তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল চন্দ্র ও সূর্য। আল্লাহ তা‘আলা সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চন্দ্রকে করেছেন আলোকময়। কুরআনে সূর্যকে বুঝাতে الشَّمْسَ (শামস) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার السراج (সিরাজ) শব্দটি দ্বারাও সূর্যকে বুঝানো হয়ে থাকে, যার অর্থ বাতি বা মশাল। অন্যত্র সূর্যকে الشَّمْسَ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো প্রজ্জ্বলিত বাতি। এখানে একই অর্থ বুঝানোর জন্য ضِيَا۬ءً শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে উজ্জ্বল জ্যোতি। তিনটি বর্ণনার সবই সূর্যের জন্য উপযোগী। কারণ, সূর্য নিজ দহনক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচণ্ড তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। আর চাঁদকে বলা হয়েছে الْقَمَرَ (কামার), একে منير (মুনির) ও বলা হয়েছে। যার অর্থ স্নিগ্ধ আলো দানকারী। তাছাড়া চাঁদ হচ্ছে একটি নিষ্ক্রিয় জিনিস, যা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে, চাঁদের এ বৈশিষ্ট্যের সাথে কুরআনের বর্ণনা হুবহু মিলে যায়। কুরআনে একবারের জন্যও চাঁদকে السراج (সিরাজ) وهاج (ওয়াহহাজ) বা ضِيَا۬ءً (জিয়া) হিসেবে এবং সূর্যকে نُوْرً (নূর) منير (মুনীর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরআন সূর্যের আলো এবং চন্দ্রের আলোর পার্থক্যকে স্বীকার করে। এরূপ আয়াত সূরা ফুরকানের ৬১ নং এবং সূরা নূহের ১৬ নং এ উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো, যা বর্তমান বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে অথচ কুরআন তা ১৪০০ বছর পূর্বে প্রমাণ করেছে।"
.
এটাও কি ভুল এটাও কি ফেলে দিব!? নাস্তিক ইসলাম বিদ্বেষীদের কাছে কি এমন কোন প্রমাণ আছে যা থেকে এটা ভুল প্রমাণিত হয়!?
.
প্রিয় পাঠক আপনারা দেখলেন যে ইসলাম বিদ্বেষীরা কোন ভাবেই কোন সোর্স থেকে দেখাতে পারে নি যেখানে বলা হয়েছে চাঁদের আলো তার নিজেস্ব আলো। ইবনে কাসীরের বিষয়ে উপরেই বলা হয়েছে। ইবনে কাসীরও বলে নি যে চাঁদের আলো নিজেস্ব। বরং আমি বহু সোর্স দিলাম যেখানে সুস্পষ্ট ভাবে বলা চাঁদের আলো আসলে তার নিজেস্ব আলো নয় বরং প্রতিফলিত আলো। শুধু তাই নয় সাথে শাব্দিক বিশ্লেষণ সহ অনুবাদ সহ প্রমাণিত।
.
উপরের আলোচনা থেকে আমরা যা পেলাম তা হলো,,,
.
১) ইবনে কাসীর বলেছে,, চাঁদের আলো আর সূর্যের আলো এক নয় পৃথক।
বিজ্ঞান বলেছে চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আর সূর্যের আলো নিজেস্ব অর্থাৎ দুটি আলো পৃথক। একটি নিজেস্ব আরেকটি ধার করা।
.
২) সহীহ ইন্টারন্যাশনাল অনুবাদে, চাঁদের আলো যে প্রতিফলিত তা সুস্পষ্ট।
বিজ্ঞানও তাই বলে।
.
৩) তাফসীরে যিলাযিল কোরআন থেকে আমরা পাই চাঁদের আলো প্রতিফলিত।
.
৪) তাফসীরে মাযহারী থেকে পাই কুরআনে চাঁদের আলো প্রতিফলিত।
.
৫) তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ থেকে শাব্দিক ভাবেও প্রমাণিত চাঁদের আলো প্রতিফলিত।
.
৬) কোন বিখ্যাত তাফসীরে বলা হয় নি চাঁদের আলো নিজেস্ব।
.
.
আশা করি সকলে বুঝতে পেরেছেন।চাঁদের আলো নিয়ে ইসলাম বিরোধীদের অভিযোগের জবাব এই আর্টিকেল পড়া যেতে পারে "কুরআনে চাঁদের আলো কি নিজেস্ব"।
এবার আমি ইসলাম বিরোধীদের কাছে প্রশ্ন করব।
.
প্রশ্ন:- যদি কুরআন মুহাম্মদ (সঃ) এর কথা হতো তাহলে কিভাবে মুহাম্মদ (সঃ) জানলেন চাঁদের আলো প্রতিফলিত। অ্যারিস্টটল কি তখন মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে ছিলো নাকি? আর মুহাম্মদ (সঃ) সঠিক গুলিই বা কেনো গ্রহণ করলেন কেনো সূর্য স্থির বললেন না!?
.
.
.
📎 ২ নং দাবী!
কুরআনে সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে সূর্য চন্দ্র কক্ষপথে বিচরণ করে সেটা সঠিক নয়!

.
দাবীটি নিম্নরূপ,,,
.
"চাঁদ যে পৃথিবীর চারপাশ ঘোরে সেটা মানুষ আগেই জানত। তাই রেফারেন্স দেবার প্রয়োজন বোধ করছি না। আর সূর্যের ব্যাপারটা হয়ত বিজ্ঞান পরেই প্রমাণ দিতে পেরেছে। কুরআন যখন রচিত হয়েছিল তখন Heliocentric সৌরজগতের ধারণা এত জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত ছিল না। তাই এখানে সূর্যের অর্বিট যে পৃথিবীর চারপাশে বোঝানো হয়নি সেটা না ভাবা অযৌক্তিক।
এখানে আরবি শব্দ “ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ”  দিয়ে “সাঁতার কাটে” বলা হয়েছে, কৌশলে এটাকে “কক্ষপথ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।"
.
.
◾জবাব:- আমি একই প্রশ্ন আবারো করছি। চাঁদ গতিশীল তা জানতো কুরআনের আগেও অনেক মানুষ। তাহলে ভুলগুলি কেনো কুরআনে নেই সূর্য স্থির কেনো বলা হয় নি!? সঠিক মতবাদটাই কিভাবে গ্রহণ করলো মুহাম্মদ (সঃ) এতেই প্রমাণ হয় কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী।
.
তার পরে ইসলাম বিদ্বেষী বলেছেন,,
"আর সূর্যের ব্যাপারটা হয়ত বিজ্ঞান পরেই প্রমাণ দিতে পেরেছে।"
.
অর্থাৎ,, কুরআনের পরে বুঝতে পেরেছে। আলহামদুলিল্লাহ স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ।
.
কিন্তু স্বীকার করেও কিছু না পেরে ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক বলেছেন সূর্যের অর্বিট যে পৃথিবীর চারপাশে বুঝানো হয় নি সেটা ভাবা অযৌক্তিক।
.
এটাকেই বলে Logical Fallacy কোন প্রমাণ ছাড়া নিজের মতন ভেবে নিয়ে মনগড়া কথাবার্তা। কেউ যদি বলে চাঁদ সূর্য গতিশীল তাহলে কি প্রমাণ হয় চাঁদের চারপাশে সূর্য ঘুরে!? আসলে এমন logical Fallacy নাস্তিকদের থেকেই আশা করা যায়।
.
সবশেষে উনি বললেন
"আরবি শব্দ “ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ”  দিয়ে “সাঁতার কাটে” বলা হয়েছে, কৌশলে এটাকে “কক্ষপথ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।"
.
এই কথা শুনেই আমি বুঝেছি ইসলাম বিরোধীদের "যুক্তি" আর "প্রমাণ" এবং "knowledge" এর দৌড় কত দূর!
.
বেচারা জানেন না যে আমরা মুসলিমরা এককথায় যারা আরবী সম্পর্কে সামান্য জানে তারা কখনোই "ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ" কে কক্ষপথ বলে নি বরং বলেছে "বিচরণ করে" কিংবা "সাঁতার কাঁটে" কিন্তু কক্ষপথ বলা হয় নি "ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ" শব্দের অর্থে।
.
আসলে কপিপেস্ট করলে যা হয় পড়ালেখা না করে আরবী সম্পর্কে কিছু না জেনেই ইসলাম বিরোধীতা যাকে বলে। আসলে কক্ষপথ বলা হয়েছে সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতের (فلك) 
অর্থ হচ্ছে কক্ষপথ/অক্ষ/Orbit কিন্তু অজ্ঞ ইসলাম বিরোধী যে আরবী জানে না তাই দাবী "ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ" শব্দকে নাকি কৌশলে আর্বিট বলা হয়েছে। আসলেই আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন এরা কতো নিচু মানের। যাদের এই সামান্য জ্ঞান নেই তারা "ইসলাম" এর সমলোচনা করার যোগ্যতা রাখে না।
.
.
আহসানুল বয়ানের তাফসীর দেখুন এবং সকল ডিকশনারি থেকে দেখুন "ইয়াসবাহুন" কে কক্ষপথ নয় বরং "ফালাক" কে কক্ষপথ বলা হয়। আরবী সম্পর্কে অজ্ঞতা তো কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই ইসলাম বিরোধী বলেছেন যে ইয়াসবাহুনকে নাকি কৌশলে "কক্ষপথ" বানানো হয়েছে। আসলে নাস্তিক লোকটি জানে না যে আরবী "ইয়াসবাহুন" অর্থ বিচরণ করা বা সাঁতার কাঁটা আর আরবী "ফালাক" অর্থা orbit এটি তাফসীর ও ডিকশনারি থেকে প্রমাণিত।
.
১) Dictionary তে বলা
.
২) তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়া — তে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,,
.
“সবাই এক একটি ফালাকে (কক্ষপথে) সাঁতরে বেড়াচ্ছে”—এ থেকে দু'টি কথা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। এক, প্রত্যেকের ফালাক বা কক্ষপথ আলাদা।"
.
তাই ইয়াসবাহুন অর্থ "কক্ষপথ" কেউ বলে নি। নাস্তিকটি হয়তো জানতো না। বা কপি পেস্ট করেছে। বরং ফালাককে কক্ষপথ বলা হয়। আর সকলেই একমত ইয়াসবাহুন অর্থ সাঁতার কাঁটা বিচরণ করা। কেউ বলে নি ইয়াসবাহুন অর্থ কক্ষপথ। তাহলে ইসলাম বিরোধী নাস্তিকের দাবী এখানেই অসারতা প্রমাণ করে।
.
আলহামদুলিল্লাহ,, যতই গোঁজামিল দিক না কেনো কুরআনের আলৌকিকতা কখনোই কেউ কমাতে পারবে না।
.
.
.
📎 ৩ নং দাবী!
কুরআনে সুরা কিয়ামাহ এর ৪ নং আয়াতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিষয়ে কিছুই বলে না। কোন ইঙ্গিতও বহন করে না।

.
দাবীটি নিম্নরূপ,,,
.
"এখানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের কথা কোথায়?
এখানে যদি আল্লাহ বলতেন যে আমি তার মাথা পর্যন্ত সঠিকভাবে বানিয়ে দিতে সক্ষম, তার মানে কি এটা বুঝাতো যে প্রত্যেক মানুষের মাথার ছাপ আলাদা? হাস্যকর।
মোরাল: Eisegesis করে অনেক কিছু পাওয়া যায়।"
.
◾জবাব:- এই আয়াতে যে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয় নি সে সম্পর্কে আমরাও অবগত রয়েছি। অনেক ইসলামিক স্কলাররা এই আয়াতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ইঙ্গিত পেয়েছেন। তবে আমি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছি যেসবকে অবৈজ্ঞানিক

দাবী করা হয়েছে। উপরের আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় কারণটি হলো আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে বুঝতে পারবেন। শরীরের এতো অঙ্গ থাকতে আল্লাহ কেনো আঙুলের অগ্রভাগের কথা বলেছেন এটাই ভাবনার বিষয়। কারণ শরীরের এতো অঙ্গ থাকতে আঙুলের অগ্রভাগ যেহেতু বলা হয়েছে তাহলে এখানে ভাবনার বিষয় হচ্ছে "আঙুলের অগ্রভাগ" কি এমন অঙ্গ যেটাকে আল্লাহ জোড় গলায় বলছেন তিনি
আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনঃ বিন্যস্ত করতে সক্ষম। অর্থাৎ যে বিষয়টা আমাদের জন্য অসম্ভব কারণ সকলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আলাদা তাই "সুবিন্যস্ত" করা অসম্ভব কিন্তু আল্লাহ যে পারবেন তা জোড় গলায় বলছেন।
.
এখানে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। নাস্তিকরা তো সব সময় তাফসীর দিয়ে থাকে যেমন উপরের অভিযোগ গুলিতেও দিয়েছে। তাহলে এই আয়াতের তাফসীর দেখি আসুন।
.
ফাতহুল মাজীদে বলা হয়েছে,,,."এখানে ইনসান বা মানুষ বলতে কাফির ও নাস্তিকদেরকে বুঝোনো হয়েছে যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে থাকে। যারা বলে, আমরা মারা গেলে পচে গলে যাব, কোন অস্তিত্ব থাকবে না। আবার কি আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একত্রিত করা সম্ভব? জবাবে আল্লাহ বলছেন : بلي হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা এতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, বরং আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত যথাযথভাবে সুবিন্যস্ত করতে সক্ষম। এখানে বিশেষ করে আঙ্গুলের অগ্রভাগের কথা উল্লেখ করার কারণ হল : একজন মানুষের আঙ্গুলের অগ্রভাগের ছাপের সাথে অন্য মানুষের আঙ্গুলের ছাপের মিল নেই। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের এ সূক্ষ্ম পার্থক্যটুকুসহ নিয়ে আসতে সক্ষম। এ আয়াতকে কেন্দ্র করে আবিস্কার করা হল (ফিঙ্গার প্রিন্ট) যা ব্যক্তিগত কাজে অপরাধীকে সনাক্তকরণে ব্যবহার করা হয়।"
.
.
কুরআনের ইঙ্গিতটি তাফসীরকারকরাও বলেছেন। যদিও স্পষ্ট ভাবে বলা হয় নাই শুধু ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে নাস্তিকরা এটাকে না মানলে কোন সমস্যা নেই। আমাদের কিছুই যায় আসে না ইসলামেরও কিছু যায় আসে না। তবে ইসলাম বিরোধীরা এই আয়াতকে অবৈজ্ঞানিক বলতে পারবে না। আর ইঙ্গিত যে রয়েছে তা কমনসেন্স থাকলেই বুঝা যায়। তাফসীরেও উল্লেখ করা হয়েছে তাই। বাকিটা নাস্তিকরা না মানলেও সমস্যা নেই। কারণ কুরআনে বহু বৈজ্ঞানিক কথা আছে সুস্পষ্ট ভাবে যা উপরের দুটি দাবীতেই দেখা গিয়েছে।
.
.
.
📎 ৪ নং দাবী!
কুরআনে সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩০ এ বিগব্যাং এর কোন ইঙ্গিত নেই বরং ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।

.
দাবীটি নিম্নরূপ,,,
.
"এই কথাটা অনেক শুনি। কথা হলো বিগ ব্যাং এর ৯.৩ বিলিয়ন বছর পরে এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। তো, এই আয়াতে কিভাবে বিগ ব্যাং খুঁজে পেলেন মুমিন ভাইয়েরা? বিজ্ঞান বলে বিগ ব্যাং এর সময় পৃথিবী ছিলো না, কিন্তু আল্লাহ পৃথিবী আর আকাশ আলাদা করলেন! এইটা কি ভাই বিগ ব্যাং এর সহিহ ইসলামী ভার্শন?? লুল…
এই আয়াতে বিগ ব্যাং তো নেই ই, বরং তৎকালীন সময়ের একটা প্রচলিত ভুল ধারনা ফুটে উঠেছে এখানে। সেই সময় সবাই ভাবতেন যে, আকাশ হল ছাদের মত, আর পৃথিবী বিছানা… এই ছাদ আর বিছানা অর্থাৎ আকাশ আর পৃথিবী একসময় জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। পরে তা আলাদা হয়ে গেছে। এই কথার সত্যতা উক্ত আয়াতেই লুকিয়ে আছে।
আয়াতটির শুরুতেই বলা হয়েছে, “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে…” এর উত্তরে কি আসে? উত্তরটা আসে এমন, “হ্যা, কাফেররা ভেবে দেখে…” কি ঠিক বললাম? অর্থাৎ, ব্যাপারটা আগেই কাফেররা জানতো। আমরা দৈনন্দিন অনেক ব্যাপারেই এরকম উক্তি ব্যবহার করি। যেমন, আপনি গুরুত্বপুর্ন কোন কাজে ব্যস্ত, আপনার বন্ধু এসে আজাইরা প্যাচাল শুরু করলো। তখন আপনি কি বলবেন? বলবেন, “তুমি কি দেখছো না আমি কাজ করছি?” উত্তর আসবে, “হ্যা, আমি দেখছি”… ঠিক, এমন করেই কুরানে আরবের তৎকালীন জানা একটি বিষয় তুলে ধরতেই আল্লাহ বলেছেন, “কাফেররা কি ভেবে দেখে না?”"
.
.
◾জবাব:- এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পড়তে পারেন "মহাবিশ্বের উৎপত্তি বিষয়ে সকল অভিযোগের জবাব"
.
সংক্ষেপে বলি, বিগব্যাং এর আগে কোন "ম্যাটার বা পদার্থ" ছিলো না।কিন্তু বিজ্ঞনীরা বলেন "সকল পদার্থ একসাথে ঘণবস্তুতে বিন্দুরূপে ছিলো" দেখুন বিজ্ঞানীরা নিজেরাই বলছে বিগব্যাং এর আগে ম্যাটার ছিলো না কিন্তু আবার বলছে "মহাবিশ্বের সকল পদার্থ একত্রিত ছিলো ঘণঅবস্থায় বিন্দুতে" (আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী)[ উইকিপিডিয়া- বিগব্যাং/বিগব্যাং থেকে হোম সেপিয়েন্স- জাফর ইকবাল ]
.
কেনো বিজ্ঞান বলছে "সকল পদার্থ" বিগব্যাং এর আগে একত্রিত ছিলো !? যেখানে বিগব্যাং এর আগে কোন "ম্যাটার" ছিলো না ! আসলে বিজ্ঞান এটা বলে যেনো আমরা সহজ ভাবে বুঝতে পারি আসলে "বিগব্যাং এর সময় ম্যাটার" ছিলো না তার পরেও সকল পদার্থ একত্রিত ছিলো বলে এর মানে এই নয় যে বিগব্যাং এর আগে "সকল পদার্থ" ছিলো! বিজ্ঞান শুধু সহজপ্রাচ্য ভাবে (আপেক্ষিক তত্ত্ব) বুঝানোর জন্য বলে যে বিগব্যাং এর আগে "মহাবিশ্বের সকল পদার্থ একত্রিত ছিলো বিন্দুতে" আদৌ কিন বিন্দু বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিলো নাকি ছিলো না তা নিয়ে রয়েছে অনেক মতভেদ। পদার্থবিজ্ঞানীরা একমত হতে পারে নি।
.
উইকিপিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী,,
.
.
"মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থানকে সাধারণ আপেক্ষিকতার আলোচনায় বিবেচনা করা হয় যেখানে কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে আপাতভাবে ঘনত্বঅসীম হয়ে যায়।জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ও মহাবিশ্বতত্ত্বের আলোচনায় মহাবিষ্ফোরণেরসময়কার সর্বপ্রথম দশা হিসেবে মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থানকে বিবেচনা করা হয়। এরকম অদ্বৈত অবস্থানকে গণনা করে পাওয়া যায় বলেই যে এর অস্তিত্ব আসলেই আছে বা ছিল (যেমন মহাবিষ্ফোরণের শুরুতে) তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীগণ একমত হতে পারেন নি। এরকম চরম ঘনত্বে কী হবে তা ব্যাখ্যা করার জন্য বর্তমান জ্ঞান যথেষ্ট নয় এটাও অনেকে বলে থাকেন।" [উইকিপিডিয়া]
.
▪ যদি কেউ মেনে নেয় সুবিধার জন্য বিন্দুর কথা বলা হয়েছে তাহলে, কুরআনো ঠিক এক কথা বলে কুরআনে ব্যাবহার করা হয়েছে দুটি শব্দ একটি হলো "ٱلسَّمَآءَ" যার অর্থ:- মহাকাশ,মহাবিশ্ব,স্বর্গ,বায়ুমন্ডল ইত্যাদি। আর এই "ٱلسَّمَآءَ" দিয়েই পুরা মহাশূন্য বুঝায়।
.
২য় শব্দটি হলো "وَالْأَرْضَ" যার অর্থ পৃথিবী।
‌.
অতএব সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াত অনুযায়ী বিগব্যাং এর আগে (আসসামা + আরদ) = মহাবিশ্ব এক সাথে মিলিত ছিলো যুক্ত ছিলো।তার পরে তা পৃথক পৃথক করা হয় বা সৃষ্টি করা হয় সৌরজগতের বস্তু সমগ্র ইত্যাদি।
.
◾আসলে এটা নিয়ে বিজ্ঞান মহলেই অনেক মতভেদ রয়েছে। এই বিষয়ে উপরের দেওয়া আর্টিকেল পড়া যেতে পারে।
.
.
📎 ৫ নং দাবী!
কুরআনে পানিচক্রের কথা বলা হয় নি। যা বলা হয়েছে তা ছোট বাচ্চাই জানে।

.
◾জবাব:- পবিত্র কুরআনে পানিচক্র বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সূরা যুমারের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,,,
.
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَكَهُۥ يَنٰبِيعَ فِى الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِۦ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوٰنُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرٰىهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُۥ حُطٰمًا ۚ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِأُولِى الْأَلْبٰبِ
তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন; অতঃপর ভূমিতে নির্ঝর রূপে প্রবাহিত করেন এবং তদ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায় এবং তোমরা ওটা পীত বর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তিনি ওটা খড়কুটায় পরিণত করেন? এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।
.
শুধু তাই নয় পানি যে বাষ্প হয়ে আকাশে যায় এবং সেখানে মেঘ হয়ে বৃষ্টি হয় সেটাও কুরআনে বলা হয়েছে।
.
আহসানুল বয়ান...
وَ السَّمَآءِ  ذَاتِ الرَّجۡعِ ﴿ۙ۱۱﴾শপথ বারবার বর্ষণশীল আকাশের। [১] [১] رجع এর আভিধানিক অর্থ হল ফিরে আসা। বৃষ্টিও বারবার এবং ফিরে ফিরে আসে বলে তার জন্য رجع শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। কোন কোন উলামাগণ বলেন যে, মেঘ (সূর্যের তাপে) সমুদ্রের পানি থেকে সৃষ্টি হয় অতঃপর পুনরায় সেই পানি (সমুদ্র ও) পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই জন্য বৃষ্টিকে رجع বলা হয়েছে। আরবরা পুনর্বার বৃষ্টির আশায় আশাবাদী হয়ে বৃষ্টিকে رجع বলত; যাতে বারবার বর্ষণ হতে থাকে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
.
.
এখন এই বাষ্প হওয়া এবং সম্পূর্ণ পানিচক্র কি সাধারণ মানুষই জানতো!? ওহো আসলেই বিজ্ঞানীরা অযথা কষ্ট করেছেন। একটি ছোট বাচ্চার কাছে জিজ্ঞাসা করলেই হয়তো পানিচক্র আবিস্কার হয়ে যেতো। নাস্তিক মানেই বিনোদন আরো একবার প্রমাণিত।
.
.
.
📎 ৬ নং দাবী
কুরআনে পিঁপড়ার দাফন বিষয় তো খালি চোখে দেখা যায়। আর পিঁপড়া কিভাবে কথা বলে!?
.

দাবীটি নিম্নরূপ,,,
.
"27:17
وَحُشِرَ لِسُلَيْمٰنَ جُنُودُهُۥ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ
সুলাইমানের সামনে সমবেত করা হল তার বাহিনীকে, জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে এবং তাদেরকে বিন্যস্ত করা হল বিভিন্ন বুহ্যে।
27:18
حَتّٰىٓ إِذَآ أَتَوْا عَلٰى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يٰٓأَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسٰكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمٰنُ وَجُنُودُهُۥ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপীলিকা বললঃ হে পিপীলিকা বাহিনী! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর, যেন সুলাইমান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পদতলে পিষে না ফেলে।
(সূরা নামল আয়াত ১৭-১৮)
এখানে আমরা এইসব দাবির প্রমাণ পেলাম না খালি চোখে যা দেখা যায় তা ভিন্ন। তবে হ্যাঁ একটি মজার ব্যাপার পেলাম যে পিঁপড়া কথা বলে।"
.
◾জবাব:- এ বিষয়ে একটি লেখা পড়েছিলাম। ওমর আল যাবিরের বুধহয়।
সেই আর্টিকেলে তিনি পিঁপড়া সম্পর্কে রেফারেন্স সহ যা বলেছেন তাই উল্লেখ করছি,,,
.
"এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে পিঁপড়াদের সম্পর্কে কতগুলো তথ্য দিয়েছেনঃ
“একটি পিঁপড়া(স্ত্রী) বলেছিল” — পিঁপড়া এখানে স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ লিঙ্গ নয়। বাসার বাইরে স্ত্রী পিঁপড়া থাকে, পুরুষ পিঁপড়া নয়। আমরা এখন জানি স্ত্রী পিঁপড়ারা কর্মী পিঁপড়া, পুরুষরা শুধুই প্রজনন কাজের জন্য বেঁচে থাকে।
“হে পিঁপড়ারা” — বহুবচন, যার অর্থ একটি স্ত্রী পিঁপড়া এক সাথে অন্য একাধিক পিঁপড়াদেরকে নির্দেশ দিতে পারে। পিঁপড়া ফেরোমোন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সংবেদনশীল এবং এর দ্বারা তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে। এছাড়াও কিছু প্রজাতির পিঁপড়ারা নিয়ার-ফিল্ড শব্দ তৈরি করে আশেপাশের পিঁপড়াদের সাথে যোগাযোগ করে। এভাবে একটি পিঁপড়া একই সাথে একাধিক পিঁপড়াকে সংকেত দিতে পারে। এই আয়াতে আল্লাহ “বলেছিল” ব্যবহার করেছেন, যা মানুষের কথা বলার বেলায়ও ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ মানুষ যেমন শব্দ দিয়ে কথা বলে, সে রকম হয়তো পিঁপড়াও শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে। কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন পিঁপড়া কোনো শব্দ করতে পারেন না এবং তাদের শব্দ শোনার ক্ষমতা নেই। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে যে, কিছু প্রজাতির পিঁপড়া খুব অল্প ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ব্যবহার করে আশেপাশের পিঁপড়াদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
.
আমি মনে করি না আর কিছু বলা প্রয়োজন।
.
.
📎 ৭ নং দাবী!
কুরআনে কোথাও ক্রম বলা হয় নি যে আগে শ্রবণ পরে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে ভ্রুণের!

.
দাবীটি নিম্নরূপ,,,
.
আবারও Eisegesis. শুধুমাত্র শব্দগুলো আগে লেখা হয়েছে বলে মিলে গেল?? দুইটাই ডেভেলপ হয় 16 week এ।
.
জবাব:- আসুন আমরা আয়াত গুলি এক সাথে সাজিয়ে পড়ি,,,
.
"যিনি তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম রূপে এবং কাদা মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।
অতঃপর তার বংশ উৎপন্ন করেছেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে।
পরে তিনি ওকে করেছেন সুষম এবং ওতে ফুঁকে দিয়েছেন রুহ্ তাঁর নিকট হতে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ; তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।"
(সূরা সাজদাহ আয়াত ৭-৯)
.
দেখুন উপরের একের পর এক আয়াত প্রমাণ করছে যে এখানে আরবী (ثُمَّ) "ছুম্মা" দ্বারা পর পর ক্রম বুঝানো হচ্ছে।
.
১) প্রথমে আদমের সূচনা কাদামাটি দিয়ে।
২) পরে তার বংশধর সকল মানুষ এসেছে শুক্রাণু + ডিম্বাণু থেকে।
৩) পরে সেই ভ্রুণে দিয়েছেন প্রাণ।
৪) পরে দিয়ে কর্ণ
৫) তার পরে চক্ষু
৬) এবং অন্তঃকরণ (মন, যা দিয়ে চিন্তা-চেতনা করে /হৃদপিণ্ড নয়) যার পরে Develop হয়।
.
.
অর্থাৎ সময়ে সময়ে ক্রম বুঝিয়েছে। সাথে সাথে বুঝায় নি। আর এখান থেকে স্পষ্ট যে এখানে ক্রম বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ শ্রবণশক্তির পরে দৃষ্টিশক্তি।
.
.
.
📎 ৮ নং দাবী!
কুরআনে সন্তান লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য পুরুষ দায়ী তা সূরা নজমের ৪৫, ৪৬ নং আয়াত ও সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭- ৩৯ নং আয়াতে বলা হয় নি।

.
দাবীটি নিম্নরূপ,,,
.
এই রেফারেন্স গুলোতে শুধুমাত্র সন্তান ছেলে বা মেয়ে হবে সেটা বলা হয়েছে।
এটা জানতেও “বিজ্ঞান” লাগে? লাগে কমন সেন্স। তাছাড়া আল্লাহ তৃতীয় লিঙ্গের কথা বা উভলিঙ্গের কথা ভুলে গেলেন বেমালুম?
.
◾জবাব:- সূরা নাজমের আয়াতে কি বলা হয়েছে আসুন দেখি,,,
.
"এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।
একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।"
.
দেখুন এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে পুরুষের শূককীট দায়ী সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে। নারীর ভূমিকা থাকলেও পুরুষের ভূমিকা বেশি। আর হিজড়া সম্পর্কে বহু হাদিস আছে এখানে নারী পুরুষ লিঙ্গ সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই "বেমালুম" বলা আসলেই হাস্যকর দাবী।
এ বিষয়ে আলোচনা পেতে ক্লিক করুন:- "জবাব"।
.
.
.
শেষকথাঃ আপনারা নিশ্চিত বুঝতে পারছেন এটা কোন জার্মান নাস্তিকের প্রপাগান্ডার একটি লেখা। সেই লেখার কিছু বিষয়ে কোন খন্ডন করা হয় নি তাই সেসবের জবাবও দেই নি যেহেতু খন্ডন করতে অক্ষম সেই নাস্তিক। আর বিস্তারিত পড়তে নিচের লিঙ্ক ও উপরে দেওয়া লিঙ্ক গুলির আর্টিকেল গুলি পড়া অবশ্য পাঠ্য।
.
আরো পড়ুন


যেসকল তাফসীর থেকে রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে তা চেক করুন:- "তাফসীর সহ কুরআন"

Post a Comment

0 Comments