❏ কুরআনের আলাকা পর্যায়ে কোন ভুল আছে?

❏  কুরআনের আলাকা পর্যায়ে কোন ভুল আছে?  
লেখকঃ আফিফ আলী

------------------------------------------------------------ 











মূলত নাস্তিক - মুক্তমনাদের মাঝে নতুন প্রশ্নের উদ্ভব ঘটেছে যে, কুরানে নাকি যে আলাকা র কথা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে ভুল।  বরং আসল ব্যাখ্যাটা অন্য কিছু। প্রাচীন ডিকশনারী এবং তাফসীর থেকে এটাই জানা যায়। 

আসুন তাদের অভিযোগগুলোকে বেশ কিছু পয়েন্টে ভাগ কিরা যাক। 

১. ঝুলন্ত বস্তু / জোকের মত বস্তু / রক্তপিন্ড আলাকা বলতে আসলে বোঝায় কি? 

২. পৃথিবীর সকল জিনিসই কোন না কোন ভাবে ঝুলন্ত। গাছে ফল ঝুলে, আপনার গায়ের জামাটিও আপনার সাথে ঝুলছে তাই আলাকা ভ্রুণের একেবারে সর্বশেষ পর্যায় হবে। তাই কুরানের দাবি ভুল যে আলাকা মানব গঠনের তৃতীয় ধাপ। 

৩. হাদিসে বলা হচ্ছে বীর্য চল্লিশ দিন, আলাক চল্লিশ দিন, রক্তপিন্ড চল্লিশ দিন এবং মাংসপিন্ড চল্লিশদিন থাকে। যা সম্পুর্ন ভুল তথ্য। 

মুলত আলাকা শব্দের অর্থ হল ঝুলন্ত / জোক / রক্তপিন্ড। এর যেহেতু এতগুলো অর্থ তাহলে কুরানে কিসের কথা বলা হচ্ছে? এছাড়া আলাকা বলতে যদি ঝুলন্ত বোঝায় তাহলে তো সেটা ভ্রুণের সর্বশেষ পর্যায় বোঝাবে এরকম উপস্থাপন দেখে আসলেই যে কেউই বিভ্রান্ত হবে মূলত হাদিসে বলা হচ্ছে, 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র বিন্দুরূপে জমা থাক। তারপর ঐরুপ চল্লিশ দিন রক্তপিণ্ড এবং এরপর ঐরুপ চল্লিশ দিন গোশত পিন্ডাকারে থাকে। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরন করেন এবং তাকে বিযিক, মউত, দূর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য-এ চারটি ব্যাপার লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি জাহান্নামীদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে তখন কেবলমাত্র একহাত বা এক গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় তাকদীর তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যাক্তি বেহেশতীদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে কেবলমাত্র এক গজ বা দু-গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় তাকদীর তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন যে, আদম তার বর্ননায় শুধুমাত্র ذِرَاعٌ‏ (এক গজ) বলেছেন [১]।

এই হাদিসের মূল অর্থ হল যে, এখানে কোথাও বলা হচ্ছেনা যে, প্রতিটা ধাপ/Stage ৪০ দিন করে বিরাজ করে মূলত এখানে ৪০ শব্দটি বা [أَرْبَعِينَ] শব্দটি একবারই এসেছে। 

Islamweb Fatwaa 225601 তে বলা আছে, 

interpretation: that the stages of a sperm drop, a clinging clot, and a lump of flesh are all in the first forty days of pregnancy, and that the formation of the fetus as a human being is in the second forty days of pregnancy. 

অর্থঃ বীর্যের ফোটা, ঝুলন্ত আলাক, এবং গোশতের টুকরো প্রথম চল্লিশ দিনেই হয় এবং পরবর্তী চল্লিশ দিনে সেটি ধীরে ধীরে মানব দেহের আকৃতিতে পরিণত হতে থাকে[২]। 

অর্থাৎ এখানে সুস্পষ্টভাবেই আলেমরা বলে দিয়েছেন যে, প্রতিটি স্টেজ ৪০ দিন নয় বরং বীর্যের ফোটা থেকে গোশতপিন্ড প্রথম চল্লিশ দিনেই হয়। 

এটির দলিল হিসেবে তারা এই হাদিস পেশ করেছেন যেখানে বলা হচ্ছে, 

আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যখন (মাতৃগর্ভে) শুক্ৰকীটের উপর বিয়াল্লিশ দিন চলে যায় তখন আল্লাহ তা’আলা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে (শুক্রকে) একটি রূপ দান করে, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশত ও হাড় সৃষ্টি করে দেয়। তারপর ফেরেশতা বলে, হে আমার রব! সেটা কি পুরুষ, না মহিলা হবে? তখন তোমার প্রভু যা চান সিদ্ধান্ত দেন এবং ফেরেশতা আদেশ অনুসারে তা লিখে ফেলেন। তারপর সে বলতে থাকে, হে আমার রব! তার মৃত্যুক্ষণ কত হবে? তখন তোমার রব যা চান তাই বলেন এবং সে অনুযায়ী ফেরেশতা লিখেন। তারপর সে বলতে থাকে, হে আমার রব। তার জীবিকা কি হবে? তখন তোমার রব তার মর্জি অনুযায়ী ফায়সালা করেন এবং ফেরেশতা তা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর ফেরেশতা তার হাতে একটি লিপিবদ্ধ কিতাব নিয়ে বের হন। সে এটাকে বৃদ্ধিও করে না এবং ঘাটতিও করে না [৩]।

কোন কোন রেওয়াতে ৪৫ [৪]।  আবার ৪২ দিন উল্লেখ করা আছে [৫]।  এককথায় আমরা বলতে পারি ৪০-৪৫ দিন এর মাঝে মাংসপিন্ড টি ধীরে ধীরে মানব আকৃতি লাভ করতে শুরু করে। নিচের চিত্রটি দেখুন ৪২ দিনে ভ্রুণটি মানব আকৃতি ধারণ করা শুরু করেছে এবং আরও জানা যায় যে, 

এই পর্যায়ে অর্থাৎ ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিনের মাঝেই  প্রতিটি অংগ Forming / আকৃতি লাভ পেতে শুরু করে এবং এর পর থেকে এগুলো আরও উন্নত গাঠন পেতে থাকে। এইসময়ে হাত, পা, চোখ,হাড়, নিউরাল টিউব, নাক, মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার, পিটিউটারি গ্রন্থি সহ আরও অনেক [৬]। 

যা উপোরোক্ত হাদিসের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। আশা করি তৃতীয় পয়েন্ট বা সেই ৪০ দিনের হাদিস সম্পর্কে সংশয় দূর হয়েছে। এবার আসা যাক আরেকটি পয়েন্ট আর তা হল আলাকা বলতে বোঝায় ঝুলন্ত। তাহলে আমরা বলতেই পারি যে, গাছে ফল ঝুলে সেটাও আলাক আবার আপনার গায়ে যে, জামাটি রয়েছে সেটাও আলাক আবার যে হাত দিয়ে আপনি বইটি পড়েন সেটিও আলাক। তাই না?  

পৃথিবীর কোন না কোন জিনিসই কোন না কোনভাবে ঝুলন্ত আছে। তাহলে আলাক কুরানের একটি বিশেষ পর্যায় তা নেহায়েত একটা ভুল ধারণা। তা হলে আলাক ভ্রুণের বেশিরভাগ স্তরকেই ব্যাখ্যা করে। 

এই দাবিটি কিছুটা সত্য হলেও আবার কিছুটা মিথ্যাও রয়েছে আলাকা শব্দের বেশ কিছু প্রেক্ষাপট বিদ্যমান। অর্থাৎ এক বাক্যর মাঝে একাধিকবার আলাকা দিয়ে একাধিক শব্দ বা প্রেক্ষাপট বোঝানো সম্ভব। 

এইক্ষেত্রে আমরা বলতেই পারি যে, মানব ভ্রুণের প্রতিটি ধাপেই ভ্রুণটি ঝুলন্ত থাকে। আল্লাহ কুরানে বলে দিয়েছেন, 

ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَۃَ عَلَقَۃً  فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً

পরে আমরা শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাকা-তে, অতঃপর ‘আলাকা-কে পরিণত করি গোশতপিণ্ডে [৭]

এখানে স্পষ্ট ই বলে।দেয়া হচ্ছ যে, [ فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً ] ফাখলাক্কনাল আলাক্কতা মুদগাহ। যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ঝুলন্ত বস্তুকে গোশত পিন্ডে পরিণত করেছেন। 

এখানে কোথাও কোন ভুল বা অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছেনা এখানে বিশেষ করে আলাকা বলার একটিই কারণ আর তা হল আল্লাহ নুতফা বা বীর্যের ফোটা কে ঝুলন্ত ভ্রুণে পরিণত করেছেন সেই ঝুলন্ত ভ্রুণকে আবার মাংসপিন্ডে পরিণত করেছেন। এখানে মাংসপিন্ডে পরিণত করা মানে এই নয় যে, সেটি আর ঝুলন্ত অবস্থায় নেই। এখন অনেকে এই দাবি করতে পারে যে,  আলাকা যেহেতু ঝুলন্ত বস্তু বোঝায় তাহলে তো সেটা ভ্রুণের সকল স্টেজ কেই বোঝায় তাই না? তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহ অযথা মুদগাহ এরপর এর উপর হাড় সৃষ্টি এগুলোর কথা কেন বললেন? 

না আলাকা বলতে ঝুলন্ত বোঝালেও ভ্রুণের সকল স্তর আলাকা দিয়ে বোঝানো সম্ভব না। ভ্রুণের ব্যাখ্যা বা Human Embryonic Development বলতে বুঝি কি? যে একটি শুক্রবিন্দু সময় অনুযায়ী কি কি অবস্থায় উপনীত হয় তাই না? সেক্ষেত্রে আল্লাহ কি এরকম টা বলতেন? 

আমি নুতফা কে বানিয়েছি ঝুলন্ত বস্তু অতঃপর ঝুলন্ত বস্তু কে ঝুলন্ত ই রেখেছি এরকম টা অধিক পরিমাণে গ্রহণযোগ্য নাকি এটি, 

আমি নুতফাকে ঝুলন্ত বস্তুতে পরিণত করেছি এরপর ঝুলন্ত বস্তুকে গোশতে পরিণত করেছি এরপর সেই গোশতের উপর হাড় দিয়েছি। 
অবশ্যই দ্বিতীয়টি তাই নয়? প্রথমটি যদিও।একাধিক স্তরকে প্রকাশ করলেও অর্থবোধক নয় এবং সেটি কখনো Human Embryonic Development এর আওতায় পরেনা উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে Human Embryology হলঃ

Human embryonic development, or human embryogenesis, refers to the development and formation of the human embryo.[৮]

মানুষের  ভ্রুণতত্ত্ব মানব ভ্রুণের ক্রমবিকাশ এবং মানিব দেহের গঠন প্রণালী কে বোঝায়। 

তাই এরকম টা যদি বলা।হত যে আমি।ঝুলন্ত কে।ঝুলন্ত ই রেখেছি তাহলে সেটি।কখনো Human embryology এর আওতায় পরতো না 
তাই এরকম ভিত্তিহীন দাবি করা আসলেই হাস্যকর।

❏ জোকের মত বস্তু নাকি জোক,রক্তের মত লাল নাকি রক্তের পিন্ড ? 


নাস্তিকদের আরেকটি দাবি হচ্ছে কুরানে বলা হচ্ছে আলাকা মানে জোক এবং রক্তপিন্ড।  নাস্তিকদের উদ্দেশ্য হল যেহেতু জোক বলা হয়েছে তারমানে কুরানে আল্লাহ ভ্রুণটিকে হুবহু জোক বলেছেন। অর্থাৎ জোকের যা যা আছে ভ্রুণটিরও তা তাই আছে। এই হচ্ছে তাদের দাবি। যদিও দাবিটি ভিন্ডামি আশ্রিত। 

রক্তপিন্ডের ব্যাপারে যাবার আগে আমাদের জানা উচিত জোকের বিষয়টি আসলেই প্রাচীন ডিকশনারী কি হুবহু জোক বলে নাকি অন্য কিছুও ইংগিত দেয়। 

লেক্সিকন ডিকশনারী তে এর বেশ কিছু উদাহরণ দেয়া হয়েছে আর তা হল।  

I became attached to her accidentally  .

অর্থঃ আমি তার সাথে দুর্ঘটনাবসত সংযুক্ত হয়ে গেছিলাম. 

They reached and took with their mouths 

অর্থঃ তারা পৌছালো এবং তাদের দাত দিয়ে কামড়ে ধরলো। 

The child sucks his finger 

অর্থঃ শিশুটি তার আঙ্গুল শোষন করছে বা চুষে নিচ্ছে [৯]। 

অর্থাৎ আলাকা বলতে শুধু জোক কে বোঝায় না বরং জোক দিয়ে বলা হচ্ছে জোক যেমন রক্ত শোষন করে ঠিক আলাকা বা ভ্রুণটিও মাতৃ গর্ভ থেকে রক্ত শোষন করে। আর মেডিকেল সাইন্স বলছে যে, ভ্রুণের তৃতীয়।সপ্তাহের আগে অর্থাৎ দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে মানব ভ্রূন অনেকটা জোকের আকার ধারণ করে এবং মাতৃগর্ভ থেকে রক্ত শোষন করে বৃদ্ধি পেতে থাকে নিচের ছবিটি দেখুন। 

আর উপরের অভিধান থেকে আমরা যেসব উদাহরণ দেখতে পাই তার মাঝে একটি হল 

The child sucks his finger 

অর্থঃ শিশুটি তার আঙ্গুল শোষন করছে বা চুষে নিচ্ছে। 

যা আজকের বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া এই পর্যায়ে শুধু ভ্রুণটি জোকের ন্যায় মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত চুষে অনেকটা জোক যেভাবে দাত দিয়ে রক্ত চুষে নেয়। অন্য কোন পর্যায় ভ্রুণ এরকম রক্তশোষন করেনা। এছাড়া সেইখানে আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে যে,

I became attached to her accidentally  .

অর্থঃ আমি তার সাথে দুর্ঘটনাবসত সংযুক্ত হয়ে গেছিলাম. 

They reached and took with their mouths 

অর্থঃ তারা পৌছালো এবং তাদের দাত দিয়ে কামড়ে ধরলো। 

এরকম কখন হতে পারে? অবশ্যই এরকম পরিস্থিতি তখনই হওয়া সম্ভব যখন কোন একটি জিনিস অন্য কোন একটি জিনিসের সাথে একেবারে ওতোপ্রোতোভাভে সংযুক্ত বা ঝুলন্ত কিংবা স্থগিত অবস্থায় থাকবে তাই না? একমাত্র ভ্রুণ যখন জোকের ন্যায় আকার ধারণ করে তখনই মাতৃ গর্ভের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে সংযুক্ত থেকে রক্ত শোষন করে। অর্থাৎ এখানে জোক বললেও এর উদ্দেশ্য ভিন্ন। কেননা আলাকা বলতে জোক বোঝায় এর রক্তের মত লাল হওয়া বৈশিষট্যর কারণে। যেমনটা লিসান আল আরাবে বলা হচ্ছে, 

তারপর আমরা নুতফাকে আলাকাহতে পরিনত করি” (আয়াত ২৩:১৪) এবং এথেকে এটি বলা হয় যে পানিতে বসবাস করা প্রাণীটি হচ্ছে আলাকাহ কারণ এটি দেখতে রক্তের মতো লাল, এবং সকল জমাট রক্ত হচ্ছে আলাক। এবং আল-আলাক: পানিতে কালো ক্রিমি [১০]।

অর্থাৎ পানিতে সেই প্রাণিটি রক্তের মত লাল হবার কারণে সেটি আলাক। এখানে আলাক হবার কারণ হচ্ছে প্রাণিটি রক্তেরর মত লাল। সেক্ষেত্রে মাতৃ গর্ভে ভ্রুণটি যদি লাল বর্ণের হয় রক্ত চোষার কারণে তাহলে অবশ্যই নিঃসন্দেহে ভ্রুণটিও আলাক। 

আবার অনেকে এই দাবি করতে পারে যে,  যা জোঁকের মতো দেখতে তাই “আলাকাহ” নয়, বরং যা রক্তের মতো দেখতে তাই “আলাকাহ”।

হুম এই দাবিটি সত্য তবে কুরানে আলাকা বলতে হুবহু জোক বোঝায় এটা কোন এপোলজিস্ট দাবি করেনি বস্তুত এই দাবিটি এসেছিল পশ্চিমা খ্রিষ্টান দের হাত ধরে এছাড়া দুই একটা উদাহরণ কিংবা অভিধান দিয়ে কোন অর্থের ভাবার্থ চট করে প্রকাশ করা যায় না। বরং লেক্সিকন ডিকশনারীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী আমরা এও দাবি করতে পারি যে, আলাকা বলতে জোকের ন্যায় ভ্রুণকে বোঝায় যা মাতৃ গর্ভ থেকে রক্ত শোষন করে। 

তাই আলাকা বলতে বোঝায় ভ্রুণটি মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত শোষন করে ফলে ধীরে ধীরে রক্তের ন্যায় লাল আকার ধারণ করার কারণে সেটিকে কুরানে আলাক বলা হয়েছে। আবার এটাও বলা যেতে পারে ভ্রুণটি মাতৃ গর্ভ থেকে রক্ত শোষন করার কারণে সেটি আলাক যার ব্যাখ্যা আমরা উইলিয়াম লেক্সিকন ডিকশনারী থেকে পাই যেখানে বলা হচ্ছে, 

The child sucks his finger 

অর্থঃ শিশুটি তার আংুল শোষন করছে বা চুষে নিচ্ছে 

অমুসলিম সোর্স The Blood Covenant 
By H. Clay Trumbull বই থেকে জানা যায় যে, আলাকা হল Leeches or blood suckers [১১]

জোক বা রক্ত চোষক। এককথায় আমরা সমগ্র কিছু একত্র করে যা পাই তা হল ভ্রুণের এমন অবস্থা যা নুতফা থেকে ঝুলন্ত অবস্থা পরিণত হয় এবং মাতৃ গর্ভ হতে রক্ত শোষন করে এবং চল্লিশ দিনের মাঝামাঝি সময়ে রক্ত পিন্ড বা রক্তের মত আকার ধারণ করে এবং ৪০ - ৪৫ দিন পর মাংস্পিন্ডে পরিণত হয়। আশা করি এই পর্যন্ত কোন অসামঞ্জস্যতা নেই। 

এই ব্যাপারে আল্লাহই সর্বজ্ঞ। তারা মূলত একটি - দুটি অভিধান ব্যাখ্যা হাতে নিয়ে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় নিজেদের যুক্তি টিকিয়ে রাখতে চায় অথচ একই শব্দ একাধিক জায়গায় একাধিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা যায় যেমন এক হাদিসে বলা হচ্ছে, 

জীবরাইল আঃ রাসুল সাঃ এর বক্ষ বিদারণ করে সেখান থেকে আলাক বের করে নেন। অতঃপর সেটিকে ধৌত করেন [১২]। এরমানে কি বোঝায়? এরমানে কি বোঝায় অবশ্যই প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সেটি হবে বক্ষের কোন এক লাল অংশ যাকে আলাক বলা হয়েছে? নাকি এটা বোঝানো হবে যে সেই অংশটি Heart এর রক্ত চুষে?  অবশ্যই প্রথমটি তাই নয়? এখন কেউ যদি ইসলাম কে ভুল প্রমাণ করার জন্য উইলিয়াম লেক্সিকন এর ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করে তাহলে সেটা অবশ্যই একটি ছল চাতুরী হবে।  এই ধরণের কর্মকান্ড কে Special pleading লজিক্যাল ফ্যালাসি বলে [১৩]। 

এবার আসা যাক রক্তপিন্ডের ব্যপারে নাস্তিকদের দাবি হল কুরানে যে আলাকার অর্থ একাধিক মুফাসসির রা রক্তপিন্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে কিন্তু বাস্তবে ভ্রুণ কখনো রক্তপিন্ড বা রক্তের পিন্ড হয় না। রক্তের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে কিংবা রক্ত চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সেটিকে কখনো রক্তপিন্ড বলা যায় না। সে হিসেবে মৃত মানুষকেও তাহলে রক্তপিন্ড বলা যায়। 

তাদের এই দাবি খুব সহজেই খন্ডন করা সম্ভব। লিসান আল আরাবে স্পষ্ট বলে দেয়া হয়েছে, 

তারপর আমরা নুতফাকে আলাকাহতে পরিনত করি” (আয়াত ২৩:১৪) এবং এথেকে এটি বলা হয় যে পানিতে বসবাস করা প্রাণীটি হচ্ছে আলাকাহ কারণ এটি দেখতে রক্তের মতো লাল, এবং সকল জমাট রক্ত হচ্ছে আলাক। এবং আল-আলাক: পানিতে কালো ক্রিমি [১৪]. 

এখানে একটু লক্ষ করুন লিসান আল আরাবে কিন্তু বলে দেয়া হচ্ছে যে, "যে পানিতে বসবাস করা প্রাণীটি হচ্ছে আলাকাহ কারণ এটি দেখতে রক্তের মতো লাল" অর্থাৎ বস্তুটি আলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এর রক্তের মত লাল হবার গুণাবলির জন্য তাই নয়? আর এই কারণেই কুরানে আলাকা শব্দটি এসেছে অর্থাৎ এই পর্যায়ে ভ্রুণটি রক্তের মত লাল অবস্থায় থাকে নিচের ছবিটি দেখুন আশা করি উত্তর পেয়েছেন।

সত্য এসেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল - বানী ইসরাইল


তথ্যসূত্রঃ


1. সহীহ বুখারী ৬১৪২

2. [Length of the stages of the fetus in Hadeeth and Science Fatwa No: 225601]

3. সহীহ মুসলিম ৬৬১৯

4. সহিহ মুসলিম ৬৬১৮

5. সহীহ মুসলিম ৬৬১৯

6. [ Medical News Today, Your pregnancy at 6 weeks

7. সুরা মুমিনুন আয়াত ১৪

8. Sherk, Stephanie Dionne. "http://www.healthline.com/galecontent/prenatal-development". Gale Encyclopedia of Children's Health, 2006. Gale. Archived from the original on 1 December 2013. Retrieved 6 October 2013. (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া) 



11. The Blood Covenant by H. Clay Trumbull - 

12. সহীহ মুসলিম ৩০২


14. রেফারেন্স ১০ দেখুন। 


ছবি সূত্র 

1. Drawings illustrating the similarities in appearance between a leech and a human embryo at the alaqah stage. (Leech drawing from Human Development as Described in the Quran and Sunnah, Moore and others, p. 37, modified from Integrated Principles of Zoology, Hickman and others.  Embryo drawing from The Developing Human, Moore and Persaud, 5th ed., p. 73.

2. The Developing Human, Moore, 5th ed., p. 65.)

Post a Comment

0 Comments