কাঁচা শূকরের মাংস!

মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২৫
বিষয়: কাঁচা শূকরের মাংস!
🖋Author:- Aminur Rashid

____________________________________________________________________________________






"ধর্ম যার যার উৎসব সবার"

কথাটি কথার কথা হিসেবেই মানায়। আসলে ধর্ম যার যার উৎসব রীতি নীতি সবই তার তার। 

বুঝলি সুরুজ? – মিনার বলল'

সুরুজ:- আমি যাচ্ছি পূজায়। 

মিনার:- তোকে তো জুম্মার দিনেও কখনো মসজিদের আশে পাশে দেখলাম না। এদিকে পূজার দিন উল্লাসে মেতে উঠিস। 

[ সুরুজের সাথে, অজয় ছিলো। অজয় বলতে লাগলো ]

অজয়:- তোরাই ভাই এসব বলিস। উৎসব তো সবার! 

মিনার:- তাহলে ভাই কোরবানির সময় তোমাদের পাওয়া যায় না কেনো? বা তোমরাও আমাদের সাথে গরুর মাংস খাও না কেনো? 

অজয়:- এটা আমাদের রীতির বিরুদ্ধে। 

মিনার:- এমনি মূর্তিপূজা হচ্ছে আমার রীতির বিরুদ্ধে। তোমরা কর বাঁধা নেই তবে সেটা আমরা কখনোই দেখতে পারি না। এটাই আরকি, তো যাই এবার আমি কাজ আছে। 

অজয়:- আচ্ছা যাও। তোমাদের যত রঙ তামাসা হা হা হা। তোমরা গোমাতা হত্যা কর এটা দেখে কি করবো। যাও যাও

মিনার:- আচ্ছা তোমরা গরুর মাংস না খেলেও গরুর চামড়ার জুতা পরিধান করো কিভাবে? যেহেতু তা তোমাদের গোমাতা, গরু মাতার চামড়া। [ বেদে / হিন্দুদের সব গ্রন্থরই গরুকে গোমাতা বলা হয় যা সবারই জানা আছে ]

অজয়:- এসব উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলছিস কেন? শূকরের মাংস তো হারাম তাহলে তোদের নিত্যদিনের ব্যবহারেও তো শূকরের অনেক কিছু দেখা যায় যেমন শূকরের চর্বির ব্যবহার হয় (কসমেটিক,সবান) ইত্যাদি তোরা ব্যবহার করিস। 

মিনার:- যদি নির্দিষ্ট ভাবে পাওয়া যায় যে ব্যবহার হয় তবে পরিত্যাগ করাই উত্তম। না থাকলে তা ব্যবহার হারাম না। কারণ তা আমরা খাচ্ছি না। 

অজয়:- এইতো এসেছো লাইনে, তোমরা যেভাবে খাও না তবে কিছু জায়গায় তোমাদের অজান্তেই ব্যবহার হয়। ঠিক একই ভাবে আমরাও গরু খাই না তবে তার চামড়া আমাদের জুতার জন্য ব্যবহৃত হয়। বুঝতে পেরেছো খোকা? 

[ তখনই পিছন থেকে চলে আসলো মুহাম্মদ আলী, সে সবই শুনেতে পেয়েছে তারা যা বলছে। ]

মুহাম্মদ আলী:- ওহো। 

অজয়:- হুম তুই বল তাহলে। 

মুহাম্মদ আলী:- শুনো অজয়, শূকর ইসলামে নিষিদ্ধ তবে শূকরের সাথে আমাদের কোন লেনাদেনা নেই। তবে তোমাদের গরু হচ্ছে তোমাদের গোমাতা যার কারণে তোমরা গরু ভক্ষণ করো না। এখন যেহেতু তোমরা গো কে গোমাতা মানো তাহলে মাতার চামড়া দিয়ে জুতা ব্যবহার করা কখনো তোমাদের কাম্য নয়। আর শূকরকে আমরা কোন শ্রেষ্ঠ ভাবি না সুতরাং শূকরের চামড়া দিয়ে জুতা পড়লেও কিছু যায় আসে না। শূকরের সাথে আমাদের কোন লেনাদেনা নেই কোন শ্রদ্ধা ভক্তির সম্পর্ক নেই। এটা শুধু হারাম যেমনটা মদ, মাদকতা ইত্যাদি। 

সুরুজ:- শূকরের মাংস তে আর কি সমস্যা।

মুহাম্মদ আলী:- এটা ইসলামে হারাম এবং তা শরীরের জন্য খারাপ। 

সুরুজ:- হুম দেখেছিলাম মনে হয় জাকির নায়েকের লেকচারে। 

মুহাম্মদ আলী:- হুম, শূকরের মাংসে নানান ক্ষতিকর বিষয় আছে, Sutoxin প্রোটিন যা এলার্জি সৃষ্টি করে। যেমন, হাঁপানি,একজিমা ইত্যাদি। Muco polysaccharides যা শরীর গিটে ব্যাথার কারণ। 

আর Trichina Parasite তো আছেই। 

আর এটি যেমন ইসলামে তেমন খ্রিষ্টানধর্মেরও নিষিদ্ধ,, 

তোমরা অবশ্যই শূকর খাবে না। তাদের পায়ের খুড়গুলো বিভক্ত, কিন্তু তারা জাবর কাটে না। সুতরাং খাদ্য হিসেবে শূকরও তোমাদের গ্রহণয়োগ্য নয়। শূকরের কোনো মাংস খাবে না। এমনকি শূকরের মৃত শরীর স্পর্শ করবে না। [Deuteronomy 14:8]

কুরআনে বলা হয়েছে, 

তিনি (আল্লাহ) তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয় তার জন্যে কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (বাকারা আয়াতঃ ১৭৩) 

আশা করি বুঝেছো। 

মিনার:- কথা কোথা থেকে কোথায় মোড় নিলো। 

মুহাম্মদ আলী:- সেটাই। 

সুরুজ:- আচ্ছা হিন্দুধর্মে শূকর সম্পর্কে কি বলেছে?

অজয়:- (বিরক্ত ভাবে) হুম নিষিদ্ধ, মনুসংহিতায় পড়েছিলাম মনে হয়। 

মুহাম্মদ আলী:- আমি বলছি
হিন্দুধর্মে বন্য শূকর খাওয়া জায়েজ (মনুস্মৃতি ৫/১৪) 
তবে গ্রাম্য শূকর নিষিদ্ধ (মনুস্মৃতি ৫/১৯) 

সুরুজ:- অহ। 

মুহাম্মদ আলী:- গোমাংস খায় না কারণ তাকে তারা মাতা হিসাবে মানে আবার তারই চামড়ার জুতো পরিধান করে। এটা তাদের ব্যাপার, তবে শূকর যা ক্ষতিকর একটি খাদ্য তা মনুস্মৃতিতে হালাল। 

অজয়:- আমি যাচ্ছি যত্যসব, তোরা থাক গুতম আমার জন্য অপেক্ষা করছে সে আবার কালকে চলে যাবে। 

সুরুজ:- গুতম!? গুতমটা আবার কে? 

অজয়:- আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। 

সুরুজ:- কোথা থেকে এসেছে? 

অজয়:- চট্টগ্রাম, বৌদ্ধ ধর্মের। 

সুরুজ:- অহ,,, 

[ সুরুজ মুহাম্মদ আলীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো ]

সুরুজ:- আচ্ছা বৌদ্ধ ধর্ম শূকর ব্যাপারে কি বলে। 

মুহাম্মদ আলী:- ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। তোমাদেরকে আরও কিছু জ্ঞান দেই হা হা। 

[ এক গ্লাস পানি খেয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- শূকরের মাংস যতটা ক্ষতিকর ঠিক তার মতনই তার কাঁচা মাংসটাও ক্ষতিকর। 

মিনার:- হুম, শূকর তো এমনিয়েই ক্যান্সার ডেকে আনে। আর যদি তা রান্না না করা হয় তাহলে তো ভয়ানক। কাঁচা সব মাংসই ক্ষতিকর। শূকর আরও বেশি ক্ষতিকর। 

মুহাম্মদ আলী:- হ্যাঁ, কাঁচা মাংসের Heterocyclic Amines যা ক্যান্সার উপাদান। তারপর নির্দিষ্ট করে শূকরের মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে, Trichina Parasite, 
Tapeworm, cysticercosis রোগ হতে পারে। তার পরে এতে আছে toxoplasma gondii এর জন্য toxoplasmosis হতে পারে। Trichinella spiralis এরও ঝুঁকি থাকে। আমেরিকার 16% পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল 1984 সালের রিপোর্ট অনুযায়ী। 

রান্নার ক্ষেত্রে অতীতে 160°F (71°C)- তাপমাত্রা আর পরবর্তীতে 145 ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় রান্না করার কথা বলা হয়েছে। 

এমন অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয় শূকর খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার জন্য। 

[ মুহাম্মদ আলী আবারও এক গ্লাস পানি খেয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- যেখানে কিনা শূকরের মাংস রান্নার তাপমাত্রায় এদিক সেদিক হলে তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সেখানে যদি বলা হয় একদম কাঁচা শূকরের মাংস ভক্ষণ আর তার টাটকা রক্ত পান করতে তা কেমন দেখায়। 

সুরুজ:- কে বলল? 

মুহাম্মদ আলী:- ভুতকে পাওয়া রোগ আইমিন ভুতে বস maybe এর ট্রিটমেন্ট হল শূকরের কাঁচা মাংস ও তার টাটকা রক্ত ভক্ষণ। 

[ সবাই চুপচাপ শুনছে। অজয় হঠাৎ বলতে লাগলো ]

অজয়:- ভুতের জন্য এমন কথা কোথায় বলা বাইবেলে নাকি? ভুতে পাওয়া রোগ আবার কেমন রোগ। 

মুহাম্মদ আলী:- না এটা বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকের বিনয়পিটকের মহাবর্গে বলা হয়েছে। 

সুরুজ:- তাই নাকি। 

মুহাম্মদ আলী:- বলা হয়েছে,, 

সেই সময় জনৈক ভিক্ষুর অমনুষ্য (ভূতে পাওয়া) রোগ ছিল। আচার্য উপাধ্যায়গণ পরিচর্যা করিয়াও তাহাকে রোগমুক্ত করিতে পারিলেন না। তিনি শূকরহত্যা করিবার স্থানে যাইয়া কাঁচামাংস ভক্ষণ করিলেন এবং টাট্‌কারক্ত পান করিলেন। ইহাতে তাহার অমনুষ্য ব্যাধির উপশম হইল। ভিক্ষুগণ ভগবানকে এই বিষয় জানাইলেন। (ভগবান কহিলেন) 

“হে ভিক্ষুগণ, আমি অনুজ্ঞা করিতেছি : অমনুষ্য ব্যাধিতে কাঁচা মাংস এবং টাটকা রক্ত পান করিবে।”
[ বিনয়পিট, মহাবর্গ, ৬. ভৈষজ্য-স্কন্ধ
ভৈষজ্য এবং তাহার প্রস্তুতপ্রণালি, ১০. সদ্য মাংস ও রক্তের ভৈষজ্য / প্রজ্ঞানানন্দ স্থবির অনূদিত ]

এমনকি শূকরের চর্বি খেতেও বলা হয়েছে এই চাপ্টারে।

সুরুজ:- বুঝলাম। 

অজয়:- আমি যাচ্ছি পরে আসবো। 

[ আজয়ের প্রস্থান ]

মুহাম্মদ আলী:- আমরাও তাহলে যাই?? 

সুরুজ:- নাহ তোর সাথে এবার কিছু কথা আছে। 

মুহাম্মদ আলী:- কি? 

সুরুজ:- অনেক তো পক পক করলি। শূকর খাওয়া নিয়ে। কাঁচা খেলে যা হয় তা ঠিক। তবে রান্না করে খেলে কোন সমস্যা নেই। 

মুহাম্মদ আলী:- আমি একটা কথা বলি শুন। আমরা শূকর খাই না কারণ আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এখনে ক্ষতিকর হোক আর উপকারী হোক। 

সুরুজ:- এইযে গরু। গরু থেকে শূকর খাওয়া ভালো কারণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট শুকরের মাংসের তুলনায় গরুর মাংসে বেশি থাকে। 

মুহাম্মদ আলী:- হা হা হা। ফ্যাট তো সব মাংসেই থাকে শূকরে আলাদা যেসব পরজীবী, কৃমি, জীবাণু তা? ক্যান্সার এর মত জীবাণু। 

সুরুজ:- লাখ লাখ মানুষ খায় আমিরকাতে। 

মুহাম্মদ আলী:- ওইতো মত রান্না করে করতে করতে তাপমাত্রা দিতে দিতে পরজীবী মারে। 

সুরুজ:- আসলে অতিরিক্ত সব মাংসই খারাপ। গরুর মাংসের প্রতি যদি কোন রিসার্স করা হয় তেহলে দেখবি এমন অনেক বাজে দিক উঠে এসেছে। তাছাড়া শুকর যদি নোংরা স্থানে থাকে এবং নোংরা খাবার খায় তাহলে এর মাংস থেকে রোগ হতেই পারে, যেমন কৃমির অসুখ বা ক্ষতিকর ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সেম গরু থেকেও হতে পারে। আমেরিকাতে যে বা পাশ্চাত্যে যে শুকর চাষ হয় বা খাওয়া হয় তা নিঃসন্দেহে দারুন হাইজিন মেন্টেন করে চাষ হয় আর তাই এই মাংস খেলে ক্ষতিও কিছু নেই। 

মুহাম্মদ আলী: সেই একই কথা শূকরের বেলায় খুবি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আর কত লাখ খায় তা দিয়ে কি হবে? বাইবেলে নিষিদ্ধ। আর বিদেশে শূকরের মাংস অন্য মাংস থেকে সস্তাও দেখা যায়। 

তবে শূকরের যেসব ক্ষতি দেখি তা অন্য ক্ষেত্রে তেমন না। ফ্যাট প্রবলেম ছাড়াও নানান সমস্যা আছে। যদিও তা কেউ কেউ রান্না করে তাপমাত্রা দিয়ে কমানোর চেষ্টা করে থাকেন। পরজীবী, রান্না সতর্কতা, সেলসিয়াস, জীবানু কৃমি taenia solium , কোলন ইত্যাদি ইত্যাদি কত কি। 

সুরুজ:- তো তোর শেষ কথা কি? 

মুহাম্মদ আলী:- শেষ কথা হচ্ছে শূকর হারাম মদ হারাম, এতে যদি ক্ষতির কিছু না থাকে তাও হারাম, উপকারীতা থাকলেও হারাম। আমরা মুসলিম আল্লাহর বান্দা। আশা করি বুঝেছো,,,,, 

[ সকলের প্রস্থান ]

Post a Comment

0 Comments