কুরআন অনুযায়ী আকাশ কি কঠিন পদার্থ? ১৪ টি অভিযোগের জবাব!




ইবুক pdf version:- DOWNLOAD

কুরআন অনুযায়ী আকাশ কি কঠিন পদার্থ?
কুরআনে আকাশ সংক্রান্ত সকল অভিযোগের জবাব

লেখক:- এস কে সাকিব
সহযোগিতায়:- সামিঈ হাসান তবিব আল ইনফিরাদি

প্রথম প্রকাশ
৪, অক্টোবর, ২০২৩


ইবুক, প্রচ্ছদ যাবতীয় সকল কাজ
আমিনুর রশীদ


সার্বিক সহযোগিতায়
ইবুক নির্মাণ, প্রচ্ছদ এবং পরিবেশনায়
TRUTH UNCOVERED
[https://uncovertrue.blogspot.com]
____________________________

কিছুকথা


আলহামদুলিল্লাহ সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। সালাম ও দুরূদ প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর। 

কুরআনে আকাশ সংক্রান্ত যেসব আয়াত রয়েছে সেসব নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীদের নানান অভিযোগের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। 

ইসলামিক দলিল, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও প্রসিদ্ধ মুফাসসিরদের মতামতের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এই ইবুকটি। 

বইটি আকারে ছোট তবে মোট ১৪ টি অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

যেসকল ইসলামবিদ্বেষীরা কুরআনিক আকাশ নিয়ে অভিযোগ করে থাকে তাদের জবাবের উদ্দেশ্যেই ইবুকটি লেখা হয়েছে। 

আল্লাহ ভাইদের কাজকে কবুল করুন এবং কোন ভুলত্রুটি থাকলে তা ক্ষমা করুন। 
আর আপনাদের চোখেও কোন ভুলত্রুটি দেখা গেলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে নিবেন এবং আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমরা সংশোধন করার চেষ্টা করব ইংশাআল্লাহ। 

আমিনুর রশীদ 

বিষয়সমূহ


আকাশ বলতে কি বুঝি? 

অভিযোগ ১: সুরা শুরা ৪২:৫ , সুরা সাবা ৩৪:৯, সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৯২, সুরা হজ ২২:৬৫ পড়লে পরিস্কার বোঝা যায় আকাশ কঠিন পদার্থ

অভিযোগ ২: সূরা মূলক ৬৭:৩ , সূরা কাফ ৫০:৬ আয়াত অনুযায়ী আকাশ কঠিন পদার্থ। কারণ এখানে ফাটল, ছিদ্রের কথা বলা হচ্ছে।

অভিযোগ ৩: সূরা হিজরের ১৪, ১৫, সূরা কামার ১১  আয়াতে আকাশের দরজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।

অভিযোগ ৪: আকাশে কোন স্তম্ভ নাই।_(Quran 13:2) এর থেকে বোঝা যায় আকাশ শক্ত পদার্থ! 

অভিযোগ ৫: সুরা বাকারা ২:২২ এবং সুরা আম্বিয়া ২১:৩২ এ বলা আছে আকাশ হলো পৃথিবীর ছাদ। এর থেকে প্রমাণ হয় আকাশ শক্ত কোনো কিছু। 

অভিযোগ ৬: বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে নিকটবর্তী আকাশ ও জমিনের মধ্যকার দুরত্ব পাচশত বছরের পথ। এগুলো অবৈজ্ঞানিক।

অভিযোগ ৭: কোরআন অনুযায়ী নিকটবর্তি আসমানে নক্ষত্র আছে, অর্থাৎ বায়ুমন্ডলে নক্ষত্র আছে।যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক, এবং প্রমাণ বিরুদ্ধ।

অভিযোগ ৮: সূরা আম্বিয়া অনুযায়ী আল্লাহ আকাশকে ভাজ করে নিবেন। যা কখনো সম্ভব নয়।

অভিযোগ ৯: সূরা রহমান অনুযায়ী আকাশ গোলাপের ন্যায় হয়ে যাবে৷ যা সম্পূর্ণ ভুল।

অভিযোগ ১০: সূরা তাকভীর অনুযায়ী আকাশের আবরণ অপসারিত হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আকাশে কোনো আবরণ ই নেই।

অভিযোগ ১১: সূরা ফুরকানে বলা হয়েছে মেঘমালা বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদের নামিয়ে দেওয়া হবে। যা মারাত্মক ভুল।

অভিযোগ ১২: কোরআনের সূরা মায়ারিজ অনুযায়ী আকাশ গলে যাবে। যা বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। 

অভিযোগ ১৩: সূরা ফাতির অনুযায়ী আল্লাহ আকাশকে স্থির করে রেখেছেন যেন তা স্থানচ্যুত না হয়। অথচ আমরা জানি আকাশ চলনশীল। 

অভিযোগ ১৪: ইবনে আব্বাসের একটি হাদিস থেকে পাওয়া যায় আকাশের আগে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। যা সম্পুর্ণ বৈজ্ঞানিক ভুল।

আকাশ বলতে কি বুঝি? 


কোরআন এবং হাদিসে আকাশ বলতে মূলত দু ধরনের বিষয় বোঝানো হয়েছে। 
 
আকাশ' শব্দটির আরবি রুপ 'سماء' (সামা) প্রসঙ্গে –
 
আরবি ভাষায় আকাশ অর্থাৎ 'সামা' এবং বাংলা ভাষায় 'আকাশ' , এ দুটি আকাশ শব্দের মাঝে সংজ্ঞাগত পার্থক্য রয়েছে। 
বাংলা ভাষায় 'আকাশ' শব্দটির প্রাথমিক সংজ্ঞা হলো এরুপ : "আকাশ বি. পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপরাংশে (বিশেষত ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন দেখায়; আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে দিনের বেলা আকাশকে নীল দেখায়)"
 
 
Wikipedia তে আকাশের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া আছে। 
 
The sky is an unobstructed view upward from the surface of the Earth.

অপরদিকে আরবি ভাষায় 'سماء' (সামা)শব্দটির প্রাথমিক সংজ্ঞা হলো : "কোনো জিনিসের উপরে অবস্থিত এক বা একাধিক যেকোনোকিছু বা সকলকিছু সেই জিনিসটির জন্য বা সেই জিনিসটির সাপেক্ষে সামা বা আকাশ " 
(জামিউল বায়ান''''১/৩৮৮) 
 
সামা শব্দটির এই সংজ্ঞাটি অসংখ্যা আরবি সাহিত্যিক,  ভাষাবিদ ও বিভিন্ন ইসলামিশাস্ত্রের আলেমদের দ্বারা সমর্থিত। 
 
যেমনঃ ১। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিঃ),  মাজমু'আ ফাতওয়া- ১২/২৪৮) 
২। ইমাম ইবনু-আব্দিল-বার  (রাহিঃ), আত-তামহীদ (৫/১৫)

অভিযোগ ১: সুরা শুরা ৪২:৫ , সুরা সাবা ৩৪:৯, সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৯২, সুরা হজ ২২:৬৫ পড়লে পরিস্কার বোঝা যায় আকাশ কঠিন পদার্থ।
 
জবাবঃ প্রথমে আমরা মূল আয়াতগুলো দেখে নিই।

تَكَادُ ٱلسَّمَٰوَٰتُ يَتَفَطَّرْنَ مِن فَوْقِهِنَّۚ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَن فِى ٱلْأَرْضِۗ أَلَآ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
 
বাংলা অনুবাদঃ আকাশমন্ডলী ঊর্ধ্বদেশ হতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয় এবং ফিরিশতা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং পৃথিবীর বাসিন্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা শুরা-৪২:৫)
 
أَفَلَمْ يَرَوْا۟ إِلَىٰ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِۚ إِن نَّشَأْ نَخْسِفْ بِهِمُ ٱلْأَرْضَ أَوْ نُسْقِطْ عَلَيْهِمْ كِسَفًا 
مِّنَ ٱلسَّمَآءِۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةً لِّكُلِّ عَبْدٍ مُّنِيبٍ
 
ওরা কি ওদের সম্মুখে ও পশ্চাতে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে, তার প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে ওদেরকে সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা ওদের ওপর আকাশ হতে (আযাবের) কোন অংশ পতিত করব। আল্লাহ-অভিমুখী প্রতিটি দাসের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
(সুরা সাবা- ৩৪:৯)
 
ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًا كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا۟ فِيهَاۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًا كَانُوا۟ هُمُ ٱلْخَٰسِرِينَ
 
অথবা তুমি যেমন বলে থাকো, সেই অনুযায়ী আকাশকে খন্ড-বিখন্ড করে আমাদের উপর ফেলবে অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে।
(সূরা বনী ইসরাইল- ৭: ৯২)

أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِى ٱلْأَرْضِ وَٱلْفُلْكَ تَجْرِى فِى ٱلْبَحْرِ بِأَمْرِهِۦ وَيُمْسِكُ
 ٱلسَّمَآءَ أَن تَقَعَ عَلَى ٱلْأَرْضِ إِلَّا
بِإِذْنِهِۦٓۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ
 
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সমস্তকে এবং তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে। তিনিই আকাশকে ধরে রাখেন, যাতে ওটা পৃথিবীর উপর তাঁর অনুমতি ছাড়া পতিত না হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি বড় দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
(সূরা হজ ২২:৬৫)
 
উক্ত আয়াতে আকাশের জন্য যে শব্দটি ব্যাবহৃত হয়েছে তা হলো السَّمَاء। এখন উক্ত শব্দের অর্থ কি? আরবি ডিকশনারিতে উক্ত শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে। যেমন আকাশ, মহাকাশীয় বিভিন্ন বস্তু ইত্যাদি।
 
উক্ত স্থানে তাহলে কি বোঝানো হয়েছে। এ বিষয়  বিংশ শতাব্দীর একজন বড়মাপের মুফাসসির 'মুহাম্মদ আত-তাহির ইবনু আশুর ' সহ সাম্প্রতিক কালের অন্যান্য বিভিন্ন মুফাসসির যেমন : আহমদ হাতিবাহ, মুস্তফা আল-মারাগ্বী, ওহবাহ আয-যুহাইলী, মাহমুদ হিজাযি,  আল-আযহারের মাজমায়ুল বুহুসের উলামাগণ আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত السَّمَاء এর  ব্যাখ্যা করেছেন 'বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তু'।
 
(তাফসিরু ইবনে আশুর -১৭/৩২২) ;  (আত-তাফসিরুও ওয়াসিত ৬/১২৫২) ; (আত-তাফসিরুল মুনির ১৭/২৬৪)  (আত-তাফসিরুও ওয়াদ্বিহ ২/৬০৩)

এছাড়া আমরা যদি এখানে আকাশ শব্দ ধরেও নিই,তাতেও উক্ত আয়াতগুলোতে কিছুই ভুল হয়না।

আমরা অনেক সময় ক্রিকেট খেলার আলোচনায় বলে থাকি , সাকিব আল হাসান আজ এমন ভাবে ক্রিকেট খেলেছে যে সে একাই পুরা ভারত টিমকে ধসিয়ে দিয়েছে।
 
অথবা অনেক সময় খেলায় কোনো দল ম্যাচ হেরে
গেলে বলি The team is destroy.
 
এর মানে কি এই যে ভারত দল কোনো কঠিন বস্তু দিয়ে তৈরি!! না। বস্তুত এখানে উপমা ব্যাবহৃত হয়েছে। জনগণ উপমা বোঝালে দোষের নয়, আর আল্লাহ তায়ালা যদি তার কোরআনে উপমা ব্যাবহার করেন, তাতের অসুবিধা!!
 
একিসাথে আমরা যদি সহী ইনটারন্যাশনাল এর অনুবাদ দেখি, তো দেখতে পাব, কথাটি আরো স্পষ্ট, এখানে বলা আছে,
Let fall upon them fragments from the sky
অর্থাৎ আকাশের টুকরো নয় বরং আকাশ থেকে টুকরো ফেলা হবে , যেটা স্পষ্টভাবে গ্রহানু বা  Asteroid কে নির্দেশ করে। 

অভিযোগ ২: সূরা মূলক ৬৭:৩ , সূরা কাফ ৫০:৬ আয়াত অনুযায়ী আকাশ কঠিন পদার্থ। কারণ এখানে ফাটল, ছিদ্রের কথা বলা হচ্ছে।
 
জবাবঃ প্রথমে উক্ত আয়াতগুলো দেখে নেওয়া যাক।
 
ٱلَّذِى خَلَقَ سَبْعَ سَمَٰوَٰتٍ طِبَاقًاۖ مَّا تَرَىٰ فِى خَلْقِ ٱلرَّحْمَٰنِ مِن تَفَٰوُتٍۖ فَٱرْجِعِ ٱلْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِن فُطُورٍ
 
তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না;আবার তাকিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাচ্ছ কি?
(সূরা মূলক ৬৭:৩)
 
أَفَلَمْ يَنظُرُوٓا۟ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَٰهَا وَزَيَّنَّٰهَا وَمَا لَهَا مِن فُرُوجٍ
 
তারা কি তাদের উপরিস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না যে, আমি কিভাবে ওটা নির্মাণ করেছি ও তাকে সুশোভিত করেছি এবং ওতে কোন ফাটলও নেই?
(সূরা কাফ ৫০:৬)
 
জি। বাংলা অনুবাদে فطر শব্দের অর্থ ফাটল, ছিদ্র বলা হয়েছে। তবে আরবিতে উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত فطور শব্দটি হচ্ছে فطر এর বহুবচন, আর আরবিতে فطر শব্দ দ্বারা 'উন্মুক্ততা' বোঝানো হয়। (ইবনু ফারিস- মাকাইসুল লুগাহ ৪/৫১০)

আরো পরিষ্কারভাবে বললে উক্ত শব্দের দ্বারা কোনো ব্যবধানের মধ্যে কিংবা কোনো জিনিসের মধ্যে  উন্মুক্ততা বোঝানো হয়ে থাকে। আর যেহেতু ফাটল ও ছিদ্র এসব শব্দ বিভিন্ন জিনিসের মধ্যকার 'উন্মুক্ততা' বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, সেহেতু فطر এর অনুবাদ 'ছিদ্র' বা 'ফাটল' করা হয়। বাংলায় 'ফাটল ' বা 'ছিদ্র' এই শব্দগুলো সাধারনত শুধুমাত্র কঠিন পদার্থের জন্য ব্যবহৃত হলেও আরবি فطر এর ক্ষেত্রে এমন কোনো শর্ত নেই যে সেটাকে শক্ত কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে ব্যবহার হতে হবে।

এই আয়াতে বলা হয়েছে আমাদের উপরের নীল আকাশে কোনো ফাতর বা ফুতুর নেই, তথা নীল আকাশে কোনো উন্মুক্ততা নেই, আর এটা একটা বাস্তবসম্মত কথা, কারণ নীল আকাশে আসলেই কোনো উন্মুক্ততা নেই, আল্লাহ তায়ালা বায়ুমন্ডল আকাশে কোনো উন্মুক্ততা রাখেনি। যদি উন্মোক্ততা থাকতো, তাহলে তা পৃথিবীর জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলত।

আর উন্মুক্ততার ক্ষেত্রে কোনো পদার্থ কঠিন হলো না বায়বীয় হলো, সেটা কোনো গুরত্ব বহন করেনা, উন্মুক্ততা থাকা বা না থাকার প্রশ্ন বায়বীয় আবরণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে, এর জন্য আবরণটিকে শক্ত কিছু হয়ার দরকার নেই। কাজেই আকাশে উন্মুক্ততা নেই, এমনটা বলার দ্বারা মোটেও প্রমাণিত হয়না বা ইংগিত পাওয়া যায়না যে নীল আকাশ শক্ত কোনোকিছু।
মুহাদ্দিস গণের পরিভাষায় রহমানের সৃষ্টিতে' বলতে সকল সৃষ্টিই উদ্দেশ্য।
(তাফসিরুত তাবারী -২৩/১১৯) ;
(ইবনুয-যুবাইর, আল-বোরহান (পৃ- ৩৪৩-৩৪৪) ; (আল-বাক্বাঈ, নিযমুদ দুরার -২০/২৮৮) ; (ইবনুল কাইইম, শিফাউল আলিল -১/২১৯) ; (তাফসিরু ইবনে আতিয়াহ- ৫/৩৩৮)

এছাড়া এই আয়াতটিতে في خلق الرحمان (রহমানের সৃষ্টিতে) বলতে মূলনীতি অনুসারে  'সকল সৃষ্টির' উদ্দেশ্য ব্যাবহৃত হয়েছে।
(আল-হারবী- কাওয়াইদুত তারজিহ ইনদাল মুফাসসিরিন পৃ/৫২৭) 
 
ইমাম আত-তাবারী فارجع البصر هل تری من فطور এর ব্যাখ্যায় হুবুহু এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন, তিনিও আল্লাহর সকল সৃষ্টি উদ্দেশ্য হয়ার মতটিকে সঠিক ধরেছেন এবং ফুতুরের ব্যাখ্যায় প্রচলিত উভয় মতকে একত্রে একইসাথে গ্রহন করেছেন।
(তাফসিরুত তাবারী (২৩/১২০)
 
অর্থাৎ উক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে যে আমাদের মাথার উপরের আকাশে কোনো উন্মুক্ততা নেই । আর এটা বাস্তব সম্মত একটা কথা

অভিযোগ ৩: সূরা হিজরের ১৪, ১৫, সূরা কামার ১১  আয়াতে আকাশের দরজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।
 
জবাবঃ আয়াত টি দেখে নেওয়া যাক।

وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ فَظَلُّوا۟ فِيهِ يَعْرُجُونَ لَقَالُوٓا۟ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَٰرُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ
যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণ ও করতে থাকে। তবুও ওরা একথাই বলবে যে, আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে না বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি । (সূরা হিজর, ১৫- ১৪,১৫)

আমাদের জেনে নেওয়া উচিত আকাশের দরজা বলতে কোরআন এবং হাদিসে কি বোঝানো হয়!

ইসলামে আকাশের বাব বা দরজা বলতে বোঝানো হয় 'এমন একটা মাধ্যম বা পথ যা আকাশের এক
 
অঞ্চলকে আরেক অঞ্চলের সহিত যুক্ত করে '  আর এটাই 'আকাশের দরজা' কথাটির ভাষাগত সংজ্ঞা  স্পষ্টতই, "আকাশের দরজা " এর ভাষাগত সংজ্ঞা আর সাধারন দরজার ভাষাগত সংজ্ঞার মাঝে পার্থক্য আছে, কাজেই আকাশের দরজাকে আমাদের চেনাপরিচিত দরজার সহিত তুলনা দেয়া ভিত্তিহীন।আকাশের দরজার কৈফিয়ত ও ধরন-প্রকৃতি কেমন তা ইলমুল-গায়েবের অন্তর্ভুক্ত বিষয়, এব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেওই কোনোকিছু জানেনা।
(আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৬৭),
আল-জামিউস সহিহ (১/১৭০),
আল-আদাবুল মুফরাদ (হা/৭৬৬),
আল-জামিউস সহিহ (১/১৬৯) 
(দিওয়ানুল আদাব (৩/৫০) ,
আল-আইন (৬/১৪)
 
১ম আয়াতে দরজা বলতে কোনো বাস্তব দরজার কথা বলা বলা হয়নি। মূলত এটি একটি উপমা হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে। এ বিষয় তাফসির কি বলে তা দেখে নেওয়া যাক।
তাদের (ইসলাম বিদ্বেষীদের) কুফুরী ও বিরুদ্ধাচরন এমন এক পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে ফেরেশতা অবতীর্ণ হওয়া তো দূরের কথা । যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং তারা সেই দরজা দিয়ে আকাশে যাওয়া আসা শুরু করে তবুও তাদের চক্ষুতে বিশ্বাস হবে না এবং রাসুলগণকে সত্যিবাদী বলে মেনে নিবে না । বরং তারা বলবে আমাদের চোখে বা আমাদের উপর যাদু করা হয়েছে , যার কারনে আমাদেরকে এরকম মনে হচ্ছে যে আমরা আকাশে আসা যাওয়া করছি , অথচ এমনটি নয় !
( তাফসীরে আহসানুল বয়ান , পৃষ্ঠা ৪৫৭)
 
আকাশের আরোহণ উদাহরণ পেশ করাটাকে তাদের হঠকারিতা বুঝানোর জন্যে ফেরেশতা নাযিলের উদাহরণ থেকে আরও বেশি জোরদার উপমা হিসেবে হাযির করা হয়েছে । কিন্তু হলে কি হবে , ওরা (ইসলাম বিদ্বেষীরা) তো সেই চরম জেদী ও হঠকারী জাতি, যারা সত্যকে দেখেও দেখে না এবং নিজেদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে বলে কোন যুক্তিই মানতে চায় না । এভাবে সত্যবিরোধী মনোভাব দেখাতে গিয়ে তারা এতটুকু লজ্জা অনুভব করে না , কোন যুক্তি প্রমান বা কোন দলীলের পরোয়াই তারা করে না আর এজন্যই দিনের আলোর মত সুস্পষ্ট সত্যের বিরোধিতা করতে তারা কুণ্ঠিত হয় না। (তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন, ১২/২৯ )
 
তাফসির থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে  উক্ত আয়াতে দরজা শুধুই একটি উপমা ছাড়া আর কিছুই না। সুতরাং উপমাকে।বৈজ্ঞানিক ভুল বলে আখ্যা দেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
 

২য় আয়াতটি হলো—
"এবং আমি (আল্লাহ) আকাশসমুহের দরজা প্রবল বৃষ্টি দ্বারা খুলে দিলাম।" ( সূরা কামার- ১১)
 
জবাবস্বরুপ ও উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরুপ জুমহুর মুফাসসিরগণ বলেছেন যে ;
 
"এখানে প্রবল বৃষ্টিপাতের দ্বারা আকাশের দরজাসমুহ খোলা সক্রান্ত বাক্যটি রুপকার্থে উপমা-অর্থে এসেছে। শাব্দিক অর্থে নয়।প্রবল বৃষ্টি পড়তে দেখলে মনে হয় যেন কেও আকাশ থেকে দরজা খুলে প্রবল বৃষ্টি পতিত করছে। আর এথেকেই উক্ত আয়াতে উপমা বা রুপক হিসেবে বলা হয়েছে যে তিনি (আল্লাহ) প্রবল বৃষ্টিপাতের দ্বারা আকাশের দরজাসমুহ খুলেছেন। এখানে শাব্দিকভাবে বাস্তবিকঅর্থে এটা বুঝানো হয়নি যে বৃষ্টিপাতের জন্য আকাশে দরজা আছে বা আকাশের দরজা দিয়ে বৃষ্টিপাত  হয়। "
 
(আল-বাহরুল মুহিত ১০/৩৮);
(আজ-জাওয়াহিরুল হিসান ৫/৩৩৮) ;
( তাফসিরু ইবনে আতিয়াহ ৫/২১৮) ;
(তাফসিরু ইবনে আশুর ২৭/১৮২) ;
(তাফসিরু আবিস সউদ ৮/১৬৯) ;
(মাজমায়ুল বুহুস, আত-তাফসিরুও ওয়াসিত  ৯/১১৭৬) ; (তাফসিরুল বাইদ্বাওই  ৫/১৬৫) ;
(আত-তাফসিরুল মুনির ২৭/১৬৫) ;
 
সুতরাং উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটা পরিস্কার যে আয়াতগুলো তে দরজা বলতে কোনো বাহ্যিক দরজা বোঝায় নি।

অভিযোগ ৪: আকাশে কোন স্তম্ভ নাই।_(Quran 13:2) এর থেকে বোঝা যায় আকাশ শক্ত পদার্থ!
 
জবাবঃ প্রথমে আয়াত টি দেখে নেওয়া যাক।
 
ٱللَّهُ ٱلَّذِى رَفَعَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَاۖ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَۖ كُلٌّ يَجْرِى لِأَجَلٍ مُّسَمًّىۚ يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَ يُفَصِّلُ ٱلْءَايَٰتِ لَعَلَّكُم بِلِقَآءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ
 
"আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।" ( সূরা আর রা'দ- আয়াত ২)
 
কোরআন, হাদিসে আকাশ সম্পর্কে অমুসলিমদের সবথেকে অজ্ঞতাপূর্ণ প্রশ্ন এটি৷ যারা সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী, তারাও বিষয়টি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে৷
 
এখানে পরিস্কার বলা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা আকাশকে স্তম্ভ ব্যাতীত স্থাপন করেছেন। এর মানে কি এই যে আকাশ কঠিন কিছু? কখনোই না।
 
ধরুন, ধরুন আপনার কাছে একটি ব্যাগ আছে। তো এখন আমি যদি বলি যে ব্যাগটি কথা বলতে পারে না,খেতেও পারে না। আমার কথা কি ভুল?
এখন আপনি যদি বলেন ব্যাগ কথা বলবে কিভাবে কারণ ব্যাগের তো জীবনই নেই। তাহলে আপনার এই প্রশ্ন দ্বারা কি আমার বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয়? কখনোই না।
এছাড়া কোরআন নাজিলের সময় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করতো আকাশ স্তম্ভের উপর রয়েছে। কোরআন এ বিষয় শুধু খন্ডন করেছে। আর কিছুই না। এখানে বৈজ্ঞানিক ভুল কিভাবে আসে তাই বোধগম্য নয়।

অভিযোগ ৫: সুরা বাকারা ২:২২ এবং সুরা আম্বিয়া ২১:৩২ এ বলা আছে আকাশ হলো পৃথিবীর ছাদ। এর থেকে প্রমাণ হয় আকাশ শক্ত কোনো কিছু। 

জবাবঃ না। এর থেকে প্রমাণ হয় অভিযোগ কারী একজন বোকা। 
প্রথমে আয়াত ২টি লক্ষ্য করুন। 

ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلْأَرْضَ فِرَٰشًا وَٱلسَّمَآءَ بِنَآءً وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَأَخْرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزْقًا لَّكُمْۖ فَلَا تَجْعَلُوا۟ لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ

যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ সরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না। (সূরা বাকারা ২:২২)

وَجَعَلْنَا ٱلسَّمَآءَ سَقْفًا مَّحْفُوظًاۖ وَهُمْ عَنْ ءَايَٰتِهَا مُعْرِضُونَ 

এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ স্বরূপ। কিন্তু তারা আকাশস্থ নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
(সূরা আম্বিয়া ২১:৩২)

শুধু এই দুই আয়াতেই নয় কোরানের আরও বিভিন্ন আয়াতে আকাশকে ছাদ বলার জন্য بناء শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

কিন্ত এর একটি আয়াতেও আকাশকে بناء বলার দ্বারা  বোঝানো হয়নি যে আকাশ হুবুহ আমাদের বাড়ি ঘরের ছাদের মতো।  বরং সেসব আয়াতে উপমা স্বরুপ বলা হয়েছে। 
(আল-জামি লি'আহকামিল কোরান ল ১/২২৯) ; 
(আহকামুল কোরান ১/৪০)

এখন আমি যদি বলি ফাহিমকে দেখতে সিংহের মতো শক্তিশালী। এর মানে কি এই যে ফাহিম সিংহের মতো চার পায়ে হাটে, কাচা মাংস খায়, ফাহিম একজন হিংস্র ব্যাক্তি?? কখনোই নয়। এখানে আমি ফাহিমের সাথে সিংহের শুধুমাত্র শক্তির একটি দিয়েছি। অন্য কিছুর উপমা দেইনি। 

তাই অন্য কোনোদিক থেকে ফাহিম আর সিংহের তুলনা করা বোকামি।

একইভাবে কোরআনে আকাশকে ছাদ স্বরুপ বলা হয়েছে৷ তাহলে কেনো এই উপমা? আমরা জানি আমাদের বাড়ি ঘরের ছাদ আমাদের সূর্যের তাপ, ঝড়, বৃষ্টি থেকে কিভাবে রক্ষা করে। 
একইভাবে আকাশ মহাকাশের বিভিন্ন পাথর, ধুলিকনা, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করেই চলেছে। এদিক থেকে আকাশ কি পৃথিবীর ছাদ স্বরুপ কাজ করছে না?

কোরানে আকাশকে ছাদ বলার জন্য بناء ছারাও আরেকটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে কিছু কিছু স্থানে, আর সেটা হচ্ছে 'سقف' শব্দটি  سقف এর সংজ্ঞা হলো 'এমন যেকোনোকিছু যা উপমা অবস্থান করে তার নিচের উপাদানগুলোর যত্ন নিচ্ছে বা তত্ত্বাবধান করছে '
(সুরা আত-তুর, আয়াত ৫) (সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৩২) (মাকাইসুল লুগাহ ৩/৮৭)
সুতরাং উক্ত আয়াতে বৈজ্ঞানিক ভুল আছে এই দাবিটাই সম্পূর্ণ ভুল। 

অভিযোগ ৬: বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে নিকটবর্তী আকাশ ও জমিনের মধ্যকার দুরত্ব পাচশত বছরের পথ। এগুলো অবৈজ্ঞানিক। 

জবাবঃ এ বিষয় কয়েকটি ভিন্ন সনদে হাদিস রয়েছে। হাদিসগুলো একে একে পর্যালোচনা করা যাক।

১ম হাদিসঃ আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব (রা) থেকে বর্ণিত যে, একদিন তিনি একদল লোকের সাথে বাহতা নামক স্থানে বসা ছিলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ -ও  তাদের মাঝে উপকিষ্ট ছিলেন এমন সময় তাদের উপর দিয়ে একটা মেঘ উড়ে গেল। তাঁরা সে দিকে তাকান। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তোমরা কি জান এর নাম কি? তারা বলল হ্যাঁ এটি হল সাহাব (মেঘ)।তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ মুযন (জালদ)-ও। তারা বললঃ মুযনও। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ আনান (নীরদ)-ও। তরা বললঃ আনানও। এর পর রাসুলুল্লাহ ﷺ তাদের বললেনঃ আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে কতটুক দুরত্ব কি তা কি তোমরা জান? তারা বললেনঃ আল্লাহর কসম, 

আমরা তা জানি না। তিনি বললেনঃ এতদুভয়ের মাঝে দুরত্ব হল একাত্তর বা বাহাত্তর বা তিহাত্তর বছরের পথ। এর উপর আসমানের দুরত্বও অনুরূপ। এভাবে তিনি সাত আসমানের উল্লেখ করেন। পরে বললেনঃ সপ্তম আকাশের উপর আছে সাগর। এর উপর ও নিচের দুরত্ব হল আসমান ও যমীনের দুরুত্বের অনুরূপ। এর উপর হল আটটি মেষ (আকৃতির ফিরিশতা) এগুলোর খুর থেকে নিয়ে হাটু পর্যন্ত হল এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের দুরত্বের সমান। এগুলোর পিঠের উপর হল আরশ। এর নিচ থেকে উপরের ব্যবধান হল দুই আকাশের মাঝের ব্যাবধানের অনুরূপ। এরও উর্ধ্বে হলেন আল্লাহর রাব্বুল ইযযত।
(আল-মুসনাদ (৩/২৯২), আবু-দাউদ- (৪৭২৩), এবং আত-তিরমিযি- (৩৩২০)

উক্ত হাদিসের সনদটি "আব্দুল্লাহ বিন উমাইরাহ" এর কারণে যইফ। তাকে ইবন আবি-হাতেম "আল-জারহু ওয়াত তা'দিল" (৫/১২৪) ও আল-বুখারি "আত-তারিখুল কাবির"(৫/১৫৯) এ উল্লেখ্য করেছেন।
[i] ইব্রাহিম আল-হারবী বলেছেন : আমি আব্দুল্লাহ বিন উমাইরাহ কে চিনিনা। (ইকমালু তাহযিবিল কামাল- ৮/১০২)  
[ii] ইমাম আয-যাহাবী বলেছেন : "সে অপরিচিত "। (আল-মুগনী"-১/৩৫০)
[iii] ইবন হাজার বলেছেন "সে মাজহুল"। ("তা'জিলুল মুনফা'আহ- ২/২৭৪)।
এই হাদিসটি সম্পর্কে ইবনুল জাওযি বলেছেন "হাদিসটি সহিহ নয়"। (আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ"- (১/৯)। 
আল-বাওসুরী বলেছেন "যইফ মুনকাতিঈ", (ইত্তিহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ- (৬/১৬৫) 

২য় হাদিসঃ কাতাদাহর সুত্রে আল-হাসান আল-বসরী হতে বর্নিত যে আবু-হুরাইরাহ (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেনঃ একদা নবী ﷺ এবং তার সাহাবীরা এক স্থানে বসা ছিলেন। এমন সময় একটি মেঘ উড়ে এল। নবী ﷺ বললেন, তোমরাকি জান এটি কি? তাঁরা বললেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ হল এক খন্ড মেঘ পৃথিবীর জন্য পানিবাহক। আল্লাহ তায়ালা এটি এমন কাওমের দিকেও হাঁকিয়ে নিয়ে যান যারা তার প্রতি কৃতজ্ঞ নয়। যারা তাকে ডাকে না।এরপর বললেনঃ তোমরাকি জান তোমাদের উপর কি আছে? সাহাবীরা বললেনঃ আল্লাহ ও তারা রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন এ হল ’রাকী’ পৃথিবীর আকাশ। সুরক্ষিত ছাদ ও রুদ্ধ ঊর্মীমালা। তোমরা কি জানো তোমাদের এবং এর মাঝে দুরত্ব কত?সাহাবীরা বললেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন এর মাঝে আর তোমাদের মাঝে দুরত্ব হল পাঁচশ বছরের। এর উপর কি আছে তা কি তোমরা জান? সাহাবীরা বললেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।তারপর নবীজী বললেনঃ এর উপর রয়েছে আরো দুই অসমান। এতদুভয়ের মাঝেও রয়েছে পাঁচশ বছর সফরের ব্যবধান। এভাবে সাত আসমানের 

কথা তিনি উল্লেখ করলেন। প্রতি দুই আসমানের মাঝে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর মাঝের মত দুরত্ব।তারপর নবীজী বললেনঃ এরও ঊর্ধ্বে কি আছে তা কি তোমরা জান? সাহাবীরা বললেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন এর ঊর্ধ্বে হল আরশ। এর এবং আকাশের মাঝে দুরত্ব হল দুই আসমানের দুরত্বের সমান। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের নিচে কি আছে তা কি তোমরা জান?সাহাবীরা বললেন আল্লাহ এবং তার রাষূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন নিচে হল যমীন। এর পর কি আছে তাকি তোমরা জান। সাহাবীরা বললেন আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন এর নিছে আরো এশটি পৃথিবী আছে। এতদুভয়ের মাঝে পাঁচশ বছর সফরের দুরত্ব।তার পর তিনি বললেনঃ সেই সত্তার কসম যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তোমরা যদি একটি দড়ি সর্বনিম্ন পৃথিবীর দিকে লটকে ধর তবে তা আল্লাহর জ্ঞানানুসারে কোন স্থানে যেয়ে পৌছবে (যা আমাদের জানা নেই)।
এর পর তিনি পাঠ করলেনঃ (هو الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ) – তিনি আদি, তিনি অন্ত, তিনি ব্যক্তি, তিনি গুপ্ত এবং তিনিই সব বিষয় সম্যক অবহিত। (সূরা হাদীদ ৫৭:৩)।
(আল-মুসনাদ – ১৪/৪২২),
(আত-তিরমিযী "আস-সুনান" -৩২৯৮)

তাহকীকঃ উক্ত হাদিসের সনদে কাতাদাহ নামক একজন রাবী রয়েছেন। তিনি মুদাল্লিস, এবং তিনি আল-হাসান আল-বসরী থেকে নিজ শ্রবন স্পষ্ট করেন নি, এবং আল-হাসান আবু-হুরাইরাহ থেকে হাদিস শ্রবন করেন নি।

[i] আইয়ুব আস-সাজাস্তানী বলেছেন : "আল-হাসান আল-বসরী আবু-হুরাইরাহ থেকে শ্রবন করেন নি " 
(ইবন আবি-হাতেম,আল-মারাসিল-১০৬) 
[ii] ইবনুল যাওযি বলেছেন হাদিসখানা "সহিহ নয়"  (আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ- ১/২৭) 
[iii] ইবন হাজার বলেছেন : "এর সনদ সহিহ নয়" (তুহফাতুন নুবালা -৬৩) 
[iv] আয-যাহাবী বলেছেন : "মুনকার"  (আল-উলুউ- ৭৪)

৩য় হাদিসঃ ইবন লাহিয়াহর সুত্রে, তিনি বলেন : আমাদের দারিজ বর্ননা করেছেন আবুল-হাইসাম হতে, তিনি আবু-সাইদ আল-খুদরী হতে বর্নিত যে রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহ্ তা’আলার বাণী “সুউচ্চ বিছানা থাকবে” (সূরাঃ ওয়াকিয়া- ৩৪) প্রসঙ্গে বলেন, এর উচ্চতা হবে আসমান-যমিনের উচ্চতার সমান আর তা হবে পাঁচ শত বছরের দূরত্বের সমান।
(আল-মুসনাদ-১৮/২৪৭), আত-তিরমিযি আস-সুনান- ২৫৪০)

ইবন লাহিয়াহ ও দারিজ আবিস-সামাহ (বিশেষ করে আবুল-হাইসাম হতে তার বর্ণনা করার কারনে) এর কারনে এই সনদের দুর্বলতা খুবই সুস্পষ্ট। 
(তাহযিবুত তাহযিব- ৩/২০৯)

৪র্থ হাদিসঃ আবু-নাসরের হাদিস, আবু-যার (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন : রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন : পৃথিবীর বিস্তৃতি হলো পাচশত বছরের পথ, এবং পৃথিবীর উপরিভাগ ও নিকটবর্তি আসমানের মধ্যকার দুরুত্ব ৫০০ বছরের পথ …… (তারপর পুর্বে উল্লেখিত হাদিসগুলোর মত) 

ইমাম বাযযার (আল-বাহরুয যাখার- ৯/৪৬০) এ বর্ননা করেছেন। এবং বলেছেন ; "এই হাদিসটি আবু-যার হতে এই সনদ ছাড়া অন্য কোনো সনদে বর্নিত হয়েছে বলে আমরা জানিনা, এবং আবু-নাসর, আমি তাকে হুমাইদ বিন হিলাল মনে করি, এবং তিনি (হুমাইদ) আবু-যার হতে হাদিস শ্রবন করেন নি "।

আজ-জাওরাকানী বলেন : "হাদিসটি মুনকার" (আল-আবাতিল- ১/২০০) 

ইবনুল যাওযি বলেন হাদিসটি মুনকার। (আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ- ১/১২)  
এবং ইবন কাসির  বলেন : "এর সনদে সমস্যা আছে ও এর মদনে নাকারাত ও গারাবাত (অসংগতি ও ক্রুটি) আছে। "
(তাফসির ইবনে কাসির- ৪/৩০৩)
দেখা যাচ্ছে আসমান ও জমিনের মধ্যে ৫০০ বছরের দূরত্বের বিষয় হাদিসশাস্ত্রে যে কয়টি হাদিস রয়েছে তার প্রত্যেকটি জয়িফ। 

এ বিষয় "শায়খ মুহাম্মাদ আল-হাওত" রহিমাহুল্লাহ বলেন :

"সে ব্যাপারে কোনোকিছুই সহিহ নয়, প্রত্যেক আসমানের মধ্যবর্তি দুরুত্বের পরিমান সহিহ নয় , আসমান ও যমিনের মধ্যবর্তি দুরুত্বের ক্ষেত্রেও নয়। এবং সেই দুরুত্ব ৫০০ বা ৮০ বছরের পথ হয়ার ব্যাপারটাও সহিহ নয় " (উসনাল মাতালিব- পৃ/১৬৪)
এক আসমান থেকে অপর আসমানের দূরত্বের বিষয়টি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। এটি অদৃশ্যের বিষয়। যার উপর ঈমান আনা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। 
 (ফাতাওয়া আশ-শাবকাতুল ইসলামিয়া ৩/১১৪৯)।
জয়িফ হাদিস মুসলিম উম্মাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। তাই জয়িফ হাদিসের উপর ভিত্তি করে হাদিসে আকাশ বিষয় যা বলা রয়েছে তার উপর অভিযোগ করাই বোকামি।

অভিযোগ ৭: কোরআন অনুযায়ী নিকটবর্তি আসমানে নক্ষত্র আছে, অর্থাৎ বায়ুমন্ডলে নক্ষত্র আছে।যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক, এবং প্রমাণ বিরুদ্ধ। 

জবাবঃ এ বিষয় আরও আয়াত রয়েছে। আয়াতগুলো দেখে নেওয়া যাক। 

وَلَقَدْ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَٰبِيحَ وَجَعَلْنَٰهَا رُجُومًا لِّلشَّيَٰطِينِۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ ٱلسَّعِيرِ
আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং ওগুলোকে করেছি শয়তানদের প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র স্বরূপ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি।
( সূরা মুলক, আয়াত-৫)

إِنَّا زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِزِينَةٍ ٱلْكَوَاكِبِ 
আমি তোমাদের নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি। 
( সূরা ছাফফাত, আয়াত-৬)

উপরোক্ত আয়াতে আকাশ বলতে শুধু বায়ুমন্ডল বোঝানো হয়েছে এমন নয়। আয়াতগুলোতে আমাদের নিকটবর্তী মহাকাশের একটা বিশাল বড় অঞ্চল ও বোঝানো হয়ে থাকতে পারে। (তা'ওইলাতু আহলিস-সুন্নাহ ৮/৫৪৬)
এছাড়া এখানে যে মহাকাশের যে বিশান অংশ বোঝানো হয়েছে, তা মুহাদ্দিসদের বক্তব্য থেকে সহযেই বোঝা যায়। 
উক্ত আয়াতগুলোতে নিকটবর্তী আসমানের সুসজ্জিত বিষয় বলা হয়েছে। নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করার অর্থ হলো নিকটবর্তি আসমানকে নক্ষত্রের "সৌন্দর্য " ও "আলো" এর মাধ্যমে সজ্জিত করা। 
(তাফসিরুস সাম'আনী- ৪/৩৯২) (যাদুল মাসির -পৃ/১১৮২)

সবথেকে বড় বিষয় হলো নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্র দ্বারা সজ্জিত করার জন্য নক্ষত্রগুলোকে স্বশরীরে নিকটবর্তী আসমানে থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
 নক্ষত্রগুলোকে নিকটবর্তি আসমান থেকে অকল্পনীয় দুরত্বের মধ্যে রেখেও সেই নক্ষত্রগুলো দ্বারা নিকটবর্তি আসমানকে সজ্জিত করা যায়।
এ বক্তব্যের সাথে ইতিহাসের বিখ্যাত মুফাসসির রা একমত হয়েছেন। 
(ইমাম শাওকানী- ফাতহুল ক্বাদির পৃ/১৫১১) (ইবনু আদিল, আল-লুবাব ১৬/২৭৭) 

সুতরাং যেখানে দাবিটাই সম্পূর্ণ ভুল, সেখানে উত্তর দেওয়ার বিষয়টাই বৃথা। 

অভিযোগ ৮: সূরা আম্বিয়া অনুযায়ী আল্লাহ আকাশকে ভাজ করে নিবেন। যা কখনো সম্ভব নয়।

জবাবঃ প্রথমে আয়াতটি দেখে নেওয়া যাক।

يَوْمَ نَطْوِى ٱلسَّمَآءَ كَطَىِّ ٱلسِّجِلِّ لِلْكُتُبِۚ كَمَا بَدَأْنَآ أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُۥۚ وَعْدًا عَلَيْنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ

সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দপ্তর; যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য; আমি এটা পালন করবই।
(সূরা আম্বিয়া- আয়াত ১০৪)

وَمَا قَدَرُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِۦ وَٱلْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُۥ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطْوِيَّٰتٌۢ 
بِيَمِينِهِۦۚ سُبْحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ 

ওরা আল্লাহর যথোচিত কদর করেনি।কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয় থাকবে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে গুটানো। পবিত্র ও মহান তিনি, ওরা যাকে অংশী করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে।
( সূরা আয্ যুমার- আয়াত ৬৭)

উক্ত আয়াতে  ব্যবহৃত ক্রিয়া نطوی এসেছে 'طي' বা 'طوي' ধাতু থেকে, طي বা طوي মানে হলো 'প্রসারণের বিপরীত ক্রিয়া' বা সরল ভাষায় বললে 'আয়তন কমানো। 
(আল-মুহকাম ৯/২৫৩) ; (লিসানুল আরব ১৫/১৮)

যেহেতু ভাজ করলে ভাজকৃত বস্তুর সহিত প্রসারণের বিপরীত ক্রিয়া সংঘটিত হয় ও মনে হয় যেন সেটার আয়তন একটু কমে গেছে, সেহেতু ত্বওই এর অর্থ করা হয় 'ভাজ করা '। 

আর কাগজের সাথে যে তূলনা দেওয়া হয়েছে তা আপাদত দৃষ্টিতে ভুল কিছু নয়। 

কারণ নাসা নিজেরাও আকাশকে কাগজের সাথে তুলনা করেছে। 
নাসার অফিশিয়াল সাইট থেকে। সেখানে বলা আছে,
The geometry of the universe is flat like a sheet of paper
সমগ্র ইউনিভার্স এর ক্ষেত্রমিতি হচ্ছে অনেকটা সমতল কাগজের শিট এর মত।

তাহলে সেটা কি গুটিয়ে নেওয়া সম্ভব ?

এর উত্তরও নাসার ওয়েবসাইট ই দিচ্ছে সেখানে বলা হচ্ছে

The density of the universe also determines its geometry. If the density of the universe exceeds the critical density, then the geometry of space is closed and positively curved like the surface of a sphere.

অর্থঃ ইউনভার্স এর ঘনত্ব এর ক্ষেত্রমিতি নির্ধারন করতে সক্ষম। যদি ইউনিভার্স এর ঘনত্ব চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলে তাহলে এই ইউনিভার্স এর ক্ষেত্রমিতি Closed এবং সুনিশ্চিতভাবে বাকা হয়ে যাবে বা গুটিয়ে যাবে গোলকের পৃষ্ঠের  মত।

উক্ত দুটো আয়াতে কোনো ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়না। 

অভিযোগ ৯: সূরা রহমান অনুযায়ী আকাশ গোলাপের ন্যায় হয়ে যাবে৷ যা সম্পূর্ণ ভুল।

জবাবঃ প্রথমে আয়াতটি দেখে নেওয়া যাক।


فَإِذَا ٱنشَقَّتِ ٱلسَّمَآءُ فَكَانَتْ وَرْدَةً كَٱلدِّهَانِ 

যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে, সেদিন ওটা (লাল চামড়া বা) তেলের মত লাল (গোলাপের) রূপ ধারণ করবে।
(সূরা আর রহমান- আয়াত ৩৭)

উক্ত আয়াতে আকাশকে গোলাপের রংয়ের সাথে তুলনা দেওয়া হয়েছে। 
(তাফসিরুত তাবারী ২২/২২৬)

আকাশ গোলাপের আকার হয়ে যাবে এমন কিছু ভুলেও বলা হয়নি। অর্থ্যাৎ এখানে দাবিটাই সম্পুর্ণ ভুল।

অভিযোগ ১০: সূরা তাকভীর অনুযায়ী আকাশের আবরণ অপসারিত হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আকাশে কোনো আবরণ ই নেই।

জবাবঃ প্রথমে আয়াতখানা দেখে নেওয়া যাক।

وَإِذَا ٱلسَّمَآءُ كُشِطَتْ
"এবং যখন আকাশকে কাশত করা হবে "

উক্ত আয়াতের বাংলা অনুবাদে কিছু স্থানে বলা হয়েছে 'যখন আকাশের আবরণ অপসারিত করা হবে ', এইটা সম্পুর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন।

এ আয়াতের আকাশকে 'কাশত' করা এর ব্যাখ্যা নিয়ে মুফাসসিরদের মাঝে তিনটি মত রয়েছে। 
১. আকাশকে সড়িয়ে নেয়া হবে।
২. আকাশকে অন্ধকার আলোহীন করে দেয়া হবে।
৩.  আকাশকে অবিস্তৃত অপ্রসারিত করে তার আয়তন কমিয়ে আনা হবে।
(আল-মাওরিদী, আন-নুকতু ওয়াল উয়ুন ৬/২১৫)
উক্ত তিন বিষয়ের প্রতিটি ই বৈজ্ঞানিক এবং যৌক্তিক। তাই উক্ত আয়াতে কোনো প্রকার ভুল ধরার সুযোগ নেই।

অভিযোগ ১১: সূরা ফুরকানে বলা হয়েছে মেঘমালা বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদের নামিয়ে দেওয়া হবে। যা মারাত্মক ভুল।

জবাবঃ আয়াতটি দেখে নেওয়া যাক।


وَيَوْمَ تَشَقَّقُ ٱلسَّمَآءُ بِٱلْغَمَٰمِ وَنُزِّلَ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ تَنزِيلًا 

সেদিন আকাশ মেঘমালাসহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে নামিয়ে দেওয়া হবে। 
(সূরা ফুরকান- আয়াত ২৫)

উক্ত আয়াতে উল্লেখ্য, "গামাম" শব্দটির অর্থ হলো 'মেঘ' বা 'ধোয়া '। অপরদিকে এই আয়াতের কিছু কিছু অনুবাদে বলা হয়েছে 'গামামসহ' বা 'গামামের সহিত', তবে এখানে প্রকৃত শাব্দিক অর্থটা হবে 'গামামের দ্বারা'।

এই আয়াতটিতে কেয়ামতের দ্বিতীয় পর্বের একটি ঘটনা উল্লেখ্য করা হয়েছে, কেয়ামতের প্রথম পর্বের ঘটনাসমুহের অন্তর্ভুক্ত কোনোকিছু এখানে উল্লেখ্য করা হয়নি। 

কারণ গামাম বিষয় রাসুল সাঃ থেকে একটি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি কিয়ামতের দ্বিতীয় পর্বের বিষয় বর্ণিত। 

হাদিসটি নিম্নরূপ :
عن النبي ﷺ قال يجمع الله الأولين والآخرين لميقات يوم معلوم قياماً أربعين سنة، شاخصة أبصارهم إلى السماء ينتظرون فصل القضاء، قال: وينزل الله -عز وجل- في ظلل من الغمام من العرش إلى الكرسي، ثم ينادي مناد: أيها الناس ألم ترضوا من ربكم
নবি (সা) বলেন : কেয়ামতের সময় আল্লাহ পুর্ববর্তি ও পরবর্তিদের একত্র করে ৪০ বছর দাড় করিয়ে রাখবেন। তাদের দৃষ্টি আকাশের দিকে থাকবে, আল্লাহ আরশ হতে কুরসি পর্যন্ত বিস্তৃত ধোয়ার (আয়াতে বর্নিত গামাম) সহিত আসবেন এবং ডেকে বলবেন : হে মানুষজন, তোমরাকি তোমাদের রবের প্রতি সন্তুষ্ট? 
(আল-মুস্তাদরাক ২/৩৭৬-৩৭৭), (আত-তাওহিদ- ২/৫৮৪) (আস-সালাহ- পৃ/২৭৮)

সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে দাবিকারীর দাবিটাই সম্পূর্ণ ভুল। 

অভিযোগ ১২: কোরআনের সূরা মায়ারিজ অনুযায়ী আকাশ গলে যাবে। যা বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। 

জবাবঃ আয়াতটি দেখে নেওয়া যাক।


يَوْمَ تَكُونُ ٱلسَّمَآءُ كَٱلْمُهْلِ 

সেদিন আকাশ হবে গলিত ধাতুর মত।
(সূরা মাআরিজ- আয়াত ৮)

এই আয়াতে আকাশের مهل এর মত হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ্য করার ক্ষেত্রে  مهل ও কোনোভাবেই আকাশ গলে যাবে এমন কিছুই বোঝানো হয়নি।বরং আকাশের রংয়ের সাথে সাদৃশ্যতা উক্ত আয়াতে বোঝানো হয়েছে।  
( মুজামুন ওয়া তাফসিরুন লুগওইয়ুন লিকালিমাতিল কোরান ৪/২৮১)

আর এই আয়াতের ব্যাপারে কাতাদাহ বিন দায়ামাহ ও এরুপ ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।
(তাফসিরুত তাবারী ২৩/২৫৬)

সুতরাং এখানে ভুলের কিছুই নেই।

অভিযোগ ১৩: সূরা ফাতির অনুযায়ী আল্লাহ আকাশকে স্থির করে রেখেছেন যেন তা স্থানচ্যুত না হয়। অথচ আমরা জানি আকাশ চলনশীল। 

জবাবঃ আয়াতটি দেখে নেওয়া যাক। 


إِنَّ ٱللَّهَ يُمْسِكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ أَن تَزُولَاۚ وَلَئِن زَالَتَآ إِنْ أَمْسَكَهُمَا مِنْ أَحَدٍ مِّنۢ بَعْدِهِۦٓۚ إِنَّهُۥ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا

আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে (ধরে) স্থির রাখেন, যাতে ওরা কক্ষচ্যুত না হয়।  ওরা কক্ষচ্যুত হলে তিনি ব্যতীত কেউ ওগুলিকে স্থির রাখতে পারে না।  তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।
(সূরা ফাতির- আয়াত ৪১)

উক্ত আয়াতে  السَّمَاوَاتِ শব্দ এসেছে।  এক্ষেত্রে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপুর্ণ  অর্থটি হবে 'সাত আসমানের সাতটি স্তর '। অর্থাৎ সাত আসমানের সাতটি স্তরকে আল্লাহ তায়ালা ধরে স্থীর রাখেন।

আর সাত আসমান কি, কোথায় আছে, কিভাবে আছে তা বিজ্ঞান দ্বারা যাচাই করা সম্ভব না। সুতরাং এ বিষয় মন্তব্য করাই অজ্ঞতা। 

অভিযোগ ১৪: ইবনে আব্বাসের একটি হাদিস থেকে পাওয়া যায় আকাশের আগে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। যা সম্পুর্ণ বৈজ্ঞানিক ভুল।

জবাবঃ উক্ত হাদিস মূলত কোরআনের কয়েকটি আয়াতের তাফসিরের জন্য এসেছে। আয়াতগুলো হলোঃ 

قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَرْضَ فِى يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُۥٓ أَندَادًاۚ ذَٰلِكَ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَٰسِىَ مِن فَوْقِهَا وَبَٰرَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَآ أَقْوَٰتَهَا فِىٓ أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَآءً لِّلسَّآئِلِينَ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ وَهِىَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ٱئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَآ أَتَيْنَا طَآئِعِينَ فَقَضَىٰهُنَّ سَبْعَ سَمَٰوَاتٍ فِى يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِى كُلِّ سَمَآءٍ أَمْرَهَاۚ وَزَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَٰبِيحَ وَحِفْظًاۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ 

বল, তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবেই যিনি দু’দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাবে? তিনি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক। 
তিনি তাতে (পৃথিবীতে) অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং স্থাপন করেছেন কল্যাণ এবং চার দিনের মধ্যে তাতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন, সমানভাবে সকল অনুসন্ধানীদের জন্য। 
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জবিশেষ। অতঃপর তিনি ওকে (আকাশকে) ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এস।’ ওরা বলল, ‘আমরা তো অনুগত হয়ে আসলাম।’
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশের নিকট তার কর্তব্য ব্যক্ত করলেন। আর আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং তাকে করলাম সুরক্ষিত। এ সব পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।
(সূরা ফুসসিলাত- আয়াত ৯-১২)


هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ لَكُم مَّا فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ ٱسْتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ فَسَوَّى
তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন,  তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তাকে (আকাশকে) সপ্তাকাশে  বিন্যস্ত করেন, তিনি সকল বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
(সূরা বাকারা- আয়াত ২৯)

উক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে ইবনে আব্বাস থেকে যে হাদিস পেশ করা হয় তা নিম্নরূপঃ


 السماء فسواهن في يومين آخرين، ثم دحا الأرض، ودحوها: أن أخرج منها الماء والمرعى، وخلق الجبال والجمال والآكام وما بينهما في يومين آخرين، فذلك قوله: {دحاها}. وقوله: {خلق الأرض في يومين}. فجعلت الأرض وما فيها من شيء في أربعة أيام، وخلقت السماوات في يومين (الرواية الأولی)

তিনি পৃথিবীকে দুই ইয়মে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আকাশ সৃষ্টি করেছেন, তারপর আকাশের দিকে মনোনিবেশ করে তাকে বিন্যাস্ত করেছেন অপর দুই ইয়াওমে, তারপর পৃথিবীকে বিস্তৃত ও প্রস্তত করেছেন, এবং তাকে বিস্তৃত ও প্রস্তুত করার অর্থ হলো তিনি তার মধ্য থেকে পানি ও তৃন নির্গত করেছেন, এবং তিনি পাহাড়, সৌন্দর্য ও উচু স্থান সহ তাদের মাঝে যা আছে সৃষ্টি করেছেন অপর দুই ইয়াওমে। এবং এপ্রসংগে আল্লাহ বলেছেন "দাহাহা" এবং বলেছেন "খালাক্বাল আর্দা ফি ইয়াওমাইন"। সুতরাং পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সৃষ্টি হয়েছে মোট চার ইয়াওমে ও আকাশমন্ডলী সৃষ্টি হয়েছে ২ ইয়াওমে। 


তিনি আরো বলেছেন :


حيث ذَكر خَلْق الأرض قبل السماء، ثم ذَكر السماء قبل الأرض، وذلك أنّ الله خَلَق الأرض بأقواتها من غير أن يَدْحُوها قبل السماء، ثم استوى إلى السماء فسوّاهنّ سبع سموات، ثم دحا الأرض بعد ذلك، فذلك قوله: {والأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحاها} (الرواية الثانية)

আল্লাহ একস্থানে পৃথিবীর সৃষ্টিকে আকাশের আগে উল্লেখ্য করেছেন, তারপর আকাশের কথা পৃথিবীর আগে উল্লেখ্য করেছেন, এবং তার কারন হলো এই যে আল্লাহ আকাশের পুর্বে প্রস্তুত ও বিস্তৃত করা ব্যাতিত পৃথিবীকে তার খাদ্যসহ সৃষ্টি করেছেন, তারপর আকাশের দিকে মনোনিবেশ করে তাকে সাত আসমানে বিন্যাস্ত করেছেন। তারপর পৃথিবীকে বিস্তৃত ও প্রস্তুত করেছেন। এবং প্রসংগেই বলা হয়েছে "ওয়াল আর্দা বা'দা যালিকা দাহাহা" উক্ত রেওয়ায়েতগুলো থেকে কয়েকটি দাবি রয়েছে।

১। পৃথিবীর বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি হওয়ার সময়ে কি আকাশের বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্র ও মহাকাশীয় বস্তু সৃষ্টি হচ্ছিলো? "

প্রথমতঃ এখানে এক কথায় উত্তর হলো না। এই বর্ণনাটিতে 'আকাশ ও ভুপৃষ্ঠের মাঝে যা আছে ' বলতে আকাশ ও ভুপৃষ্ঠের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হয়া 'ভুপৃষ্ঠ যা কিছু আছে ' কে নির্দিষ্টভাবে খাসভাবে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এই একই বর্ণনার অন্যান্য কিছু সংস্করনে এখানের وما بينهما এর বদলে ও বিকল্প হিসেবে ما فيها (যা কিছু ভুপৃষ্ঠে আছে) কথাটি বর্ণিত হয়েছে। 
(আল-ফাতাওয়াল কুবরা"৬/৩৯০) (আত-তাস'ইনিয়াহ "১/৩২৭)।

২। পৃথিবীকে প্রস্তুত বিন্যাস্ত করার আগেই কি তাতে খাদ্য ছিলো?"
আবু-জাফর মুহাম্মদ ইবনু জারির আত-তাবারী' এখানের এই بأقواتها (খাদ্যসহ) কথাটির ব্যাখ্যা করেছেন 'খাদ্য নির্ধারন করা সহ '
(জামিউল বায়ান-২৪/৯৪)

অর্থাৎ পৃথিবীর আদিরুপ সৃষ্টি করা হয়েছিল তাতে  কি কি খাদ্য আর্বিভুত হবে সেগুলোর অস্তিত্বে আসার সুত্রসমুহ নির্ধারন করে দেয়া সহ, পৃথিবীতে খাদ্যের পুর্বপরিকল্পনা নির্ধারন করা সহ । এরমানে এইনা যে পৃথিবীর আদিরুপ সৃষ্টির সময়েই তাতে খাদ্য উপস্থিত ছিলো।
৩। ইবনু আব্বাসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এক্ষেত্রে আকাশ দ্বারা উদ্দেশ্য কী? "
এখানে আকাশ বলতে ইবনে আব্বাস (রা) মহাশুন্যের সীমানা নির্দেশক স্তরকে বুঝিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হলো যদি এখানে আকাশ বলতে এটাই উদ্দেশ্য করা হয়ে থাকে, তাহলে এখানে 'আকাশকে বিন্যাস্ত ' করার মানে কি?  এর উত্তর খুবই সোজা , এখানে আকাশকে বিন্যাস্ত করার মানে হলো সেই সীমানা নির্দেশক স্তর থেকে ৭ টা স্তর তথা সাত আসমান তৈরি করা, ভিন্নভাবে বললে সীমানা নির্দেশক স্তরটিকে সাত আসমানে বিন্যাস্ত করা। আর এই উত্তরটা কোনো ভিত্তিহীন নব্য আবিষ্কৃত বিষয় নয়!  বরং মধ্যযুগের সময় থেকেই মুফাসসিরদের মাঝে এমর্মে একটা মত প্রচলিত আছে যে সাত আসমানের সাতটি স্তর একটিমাত্র মুল স্তর থেকে বিন্যাসকৃত ও সৃষ্ট। (আন-নুকত ওয়াল উয়ুন- ৩/৪৪৪)

সর্বশেষ কথাঃ 


কোরআন এবং হাদিসে আকাশ বিষয় অমুসলিমরা যতগুলো দলিল দিয়ে কোরআনের ভ্রান্ততা প্রকাশ করে তার সবগুলো এখানে খন্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। 
উক্ত লেখনীতে বিজ্ঞান, প্রসিদ্ধ মুফাসসিরদের বক্তব্য নকল হয়েছে। যা উক্ত লেখনীর মান অন্যান্য লেখনী থেকে আরও বেশি উন্নত এবং সমৃদ্ধ করেছে৷ 
এর মাধ্যমে বারংবার প্রমাণ হয় যে কোরআনে কোনো প্রকার ভুল নেই।
এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেছেন,


ذَٰلِكَ ٱلْكِتَٰبُ لَا رَيْبَۛ فِيهِۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ 

This is the Book about which there is no doubt, a guidance for those conscious of Allah .

এ গ্রন্থ; (কুরআন) এতে কোন সন্দেহ নেই,  সাবধানীদের জন্য এ (গ্রন্থ) পথ-নির্দেশক।

Post a Comment

0 Comments