পূর্ববর্তী কিতাব বিকৃত নাকি অবিকৃত!?



তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল : বিকৃত নাকি অবিকৃত?লেখক:- নাবিল খান নেবুদা
____________________________________________________________________________________

১ম ভাগ:- কুরআন দিয়ে বাইবেলের বিশুদ্ধতা দাবি

কুরআনে বাইবেল নামটি কোথাও নেই।আছে তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল ইত্যাদি নাম।বাইবেল নাম দিয়ে সরাসরি ধর্মপ্রচার করলে মুসলিমরা সহজে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে চাইবে না বা করবে না।তাই মিশনারিগণ ইদানীং বাইবেলকে বাইবেল না বলে কিতাবুল মোকাদ্দস,তাওরাত শরীফ,জাবুর শরীফ,ইঞ্জিল শরীফ ইত্যাদি নাম দিয়ে ধর্মপ্রচার আরম্ভ করেছেন,যাতে মুসলিমরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়।খৃস্টান ধর্মগুরুগণ উপরের তথ্যগুলি গোপন করে মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিতে কুরআনের আয়াতের আংশিক বিকৃত অর্থ দিয়ে দাবি করেন যে, প্রচলিত তাওরাত-ইঞ্জিল সঠিক এবং আজ অবধি বিকৃত হয়নি।এরূপ তিনটি বিষয় উল্লেখ করছি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:-

أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

“জেনে রাখো! আল্লাহ্‌র বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না; যারা ঈমান আনে ও তাক্ওয়া অবলম্বন করে। তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ। আল্লাহ্‌র কথার কোনো হের-ফের হয়না। ওটাই মহাসাফল্য। (সূরা ১০-ইউনূস: ৬২-৬৪)।"

এখানে আল্লাহ বলেছেন যে, আল্লাহর বন্ধুদের সুসংবাদ ও সাফল্যের বিষয়ে আল্লাহর কথা কেউ রদ বা পরিবর্তন করতে বা আল্লাহর বন্ধুদের ব্যর্থ করতে পারবে না। খৃস্টান প্রচারকগণ সকল কথা বাদ দিয়ে (লা তাবদীলা লিকালিমাতিল্লাহ) ‘আল্লাহর কথার কোনো হের-ফের হয়না’ কথাটি দিয়ে দাবি করেন যে, তাওরাত, ইঞ্জিল ইত্যাদি আল্লাহর কালাম, সেহেতু কেউ তা পরিবর্তন করতে পারবে না!

পাঠকগণ,খেয়াল করে দেখুন তারা কতটা জালিয়াত ও জ্ঞানপাপী।একে তো তারা পুরো আয়াতের মূল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে মাঝখান থেকে ছোট্ট একটা আয়াতংশ কেটে নিয়ে তা তাওরাত,ইঞ্জিল,যাবুরের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে!অপরদিকে এই আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হলো "কালেমা"। "কালাম" নয়।কালাম আর কালেমার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।কালাম হলো অনেকগুলো বাণীর সমষ্টি।ধর্মগ্রন্থ অনেকগুলো বাণীর সমষ্টি।তাই একে আল্লাহর কালাম বলা হয়।
আর কালেমা দ্বারা বোঝানো হয় ১টি কথা/১টি বাক্য বা ১ লাইনের বাক্য বা বাক্যাংশ।যেমন:- হযরত ঈসা(আ)এর একটি উপাধি হলো "কালেমাতুল্লাহ"। অর্থাৎ আল্লাহর কালেমা।মহান আল্লাহ হযরত ঈসা(আ)কে তাঁর ১টি বাক্য (কালেমা) "হয়ে যাও(كُن/কুন)" বলার দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন।এজন্যই তাঁকে আল্লাহর কালেমা বলা হয়।কিন্তু কস্মিনকালেও মুসলিমদের মুখে শুনবেন না যে,ঈসা(আ) আল্লাহর কালাম।এছাড়াও আমরা যে কালেমা তৈয়্যবা,কালেমা শাহাদাত ইত্যাদি পাঠ করি,এগুলোও কিন্তু ১ লাইনের বাক্য।

কালেমা দ্বারা মূলত ১ লাইনের ছোট কোনো "বাণী/কথা/ওয়াদা/প্রতিশ্রুতি/অঙ্গীকার/স্বাক্ষ্য/হুকুম/চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত" ইত্যাদি বোঝানো হয়ে থাকে।

>ওয়াদা অর্থে "কালেমা(কথা)" শব্দের ব্যবহারঃ-

="আমার কথার কোনো নড়চড় হবেনা"।অর্থাৎ আমি যে ওয়াদা করেছি সেটার কোনো নড়চড় হবেনা।

>হুকুম অর্থে "কালেমা(কথা)" শব্দের ব্যবহারঃ-
 
="অমুক থানার দারোগা সাহেবের কথায় লোকে উঠে আর বসে।

>স্বাক্ষ্য অর্থে "কালেমা(কথা)" শব্দের ব্যবহারঃ-

=শেষ পর্যন্ত আমার কথা আদালতে গ্রহণযোগ্য হলো।

>চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অর্থে "কালেমা(কথা)" শব্দের ব্যবহারঃ-

="আমার কথাই শেষ কথা।এর কোনো পরিবর্তন নেই"।

সুতরাং,এখানে যে তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলসহ পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবকে বোঝানো হয়নি,তা একদম স্পষ্ট।বরং "কালেমা" দ্বারা বোঝানো হয়েছে ওয়াদা।আল্লাহর বন্ধুদের সুসংবাদ ও সাফল্যের বিষয়ে আল্লাহর ওয়াদাসমূহ কেউ রদ বা পরিবর্তন করতে পারবে না।ইহুদি-খ্রিস্টানগণ আল্লাহর কালেমাকে পরিবর্তন করতে পারেনি,কিন্তু আল্লাহর কালাম ও কালামের লিখিত রূপ কিতাবকে বিকৃত বা পরিবর্তন করেছে।
সাহাবিগণেরও এটাই অভিমত যে,এখানে "কালেমা" দ্বারা ওয়াদাকে বোঝানো হয়েছে।আমরা কি সাহাবিদের কথা বাদ দিয়ে খ্রিস্টান মিশনারিদের অপব্যাখা গ্রহণ করতে যাবো?খ্রিস্টান প্রচারকগণ জেনেশুনেই এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন:-

সূরা আন'আম,আয়াত ১১৪-১১৫ঃ-

أَفَغَيْرَ اللّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنَزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلاً وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُونَ أَنَّهُ مُنَزَّلٌ مِّن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ فَلاَ تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ 
114
"তবে কি আপনি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করবেন?অথচ তিনিই আপনার প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন।আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি,তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।"

وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلاً لاَّ مُبَدِّلِ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ 

115
"আপনার প্রতিপালকের কথা পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর কথার কোন পরিবর্তনকারী নেই।তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।"

এখানেও একই জালিয়াতি।পুরো প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে মাঝখান থেকে ১ টা আয়াত কেটে নিয়ে তা তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে খ্রিস্টান মিশনারিগণ!

বস্তুত ১১৪ নাম্বার আয়াতের ২য় অংশে বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মাদ(স)এর উপর বিস্তারিত কিতাব অবতীর্ণ করেছেন অর্থাৎ কুরআন।আর প্রকৃত ইহুদি নাসারাগণ জানেন যে,কুরআন হযরত মুহাম্মাদ(স)এর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যসহ অবতীর্ণ হয়েছে।তা সত্ত্বেও গোপন করেন,আবার অনেকে প্রকাশ করেন।আল্লাহও স্বাক্ষ্য দিয়েছেন যে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যসহ অবতীর্ণ।(কুরআন ৫:৪৮)

আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মাদ(স)কে সম্বোধনের মাধ্যমে মূলত গোটা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন সম্বন্ধে সংশয় বা সন্দেহ করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
কারণ কুরআন যে সত্যসহ অবতীর্ণ,এটাই আল্লাহর শেষ কথা।আল্লাহর এই কথাটাকে কেউ পরিবর্তন করতে পারবেনা।কুরআন যে সত্যেসহ অবতীর্ণ,এটা সবাই জানে।এমনকি প্রকৃত ইহুদি-নাসারাগণও জানেন।

এই আয়াতেও "কালেমা" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।তাই শুরুতেই তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।কারণ তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল আল্লাহর কিতাব ও কালাম ছিলো।কিন্তু কালেমা নয়।উক্ত আয়াতে "কালেমা" দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই ১টি কথা বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে বোঝানো হয়েছে।কুরআন সত্যসহ অবতীর্ণ। এটাই আল্লাহর শেষ কথা বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।তোমরা সন্দেহ করো আর নাই করো,তাতে বাস্তবতা পাল্টাবে না।আল্লাহ একবার বলে দিয়েছেন কুরআন সত্যসহ অবতীর্ণ,সুতরাং, অবশ্যই কুরআন সত্যসহ অবতীর্ণ।এই কথার কোনো পরিবর্তন বা নড়চড় নেই।কেউ আল্লাহর এই কথার (কালেমার) পরিবর্তন করতে পারবে না।তাই কুরআন সম্বন্ধে সংশয়কারী না হওয়াই শ্রেয়।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন:

সূরা মায়িদা,আয়াত ৬৮:-

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّىَ تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَانًا وَكُفْرًا فَلاَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ 
68
"বলে দিনঃ হে আহলে কিতাবগণ, তোমরা কোন পথেই নও, যে পর্যন্ত না তোমরা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যে গ্রন্থ তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে(কুরআন) তাও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা কর।(হে নবি!) আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে আপনার প্রতি যা অবর্তীণ হয়েছে, তার কারণে তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফর বৃদ্ধি পাবে। অতএব, এ কাফের সম্প্রদায়ের জন্যে দুঃখ করবেন না।"

উক্ত আয়াত দেখিয়ে খ্রিস্টান মিশনারিগণ প্রমাণ করতে চান যে তাওরাত,ইঞ্জিল অবিকৃত এবং তা সবাইকেই পালন করতে হবে।পাঠকগণ,আমরা দেখব যে,খ্রিস্টানগণ নিজেরাই বাইবেলের ১ টা বিধানও মানেন না অথবা বাস্তবায়ন করেন না।শুধু মুখে বাইবেলকে বিশ্বাসের দাবি করেন।তারাই আবার মুসলিমদেরকে বাইবেল পালন করাতে চান!

একটু খেয়াল করে আয়াতটা পড়লেই তাদের জালিয়াতি ধরা পড়ে যাবে।এই আয়াতের শুরুতেই বলা হয়েছে "হে আহলে কিতাব"। আর আমরা সকলেই জানি আহলে কিতাব কারা।আহলে কিতাব হলো একত্ববাদী ইহুদি ও খ্রিস্টানরা।ট্রিনিটিতে বিশ্বাসী মুশরিক খ্রিস্টানরা আহলে কিতাব নয়।কারণ তারা কিতাবের মূল বিষয়ই ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।তা হলো একত্ববাদ।

সুতরাং,এই আয়াতটা হলো আহলে কিতাবদের উদ্দেশ্য করে বলা।আমাদেরকে নয়।অর্থাৎ আহলে কিতাবগণ তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলসহ যতগুলো কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে সেগুলো যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কোনো পথেই নয়।খ্রিস্টানগণ যদি বলে যে,বাইবেল প্রতিষ্ঠা করার দ্বারাই কেবল সকল আসমানি কিতাব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।কারণ বাইবেলে সকল নবিগণের কিতাব সংরক্ষিত রয়েছে।আপনি তাকে বলুন,

বাইবেল থেকে যে পুস্তকগুলো হারিয়ে গেছে :-

(১)‘সদাপ্রভুর যুদ্ধপুস্তক’ (গণনা 
পুস্তক ২১/১৪), (২) ‘যাশের পুস্তক (যিহোশূয় ১০/১৩), (৩) শলোমন রচিত ‘এক হাজার পাঁচটি গীত’, (৪) শলোমন রচিত ‘প্রাণী জগতের ইতিবৃত্ত’, (৫) শলোমন রচিত ‘তিন হাজার প্রবাদ বাক্য’ (১ রাজাবলি ৪/৩২-৩৩), (৬) শমূয়েল ভাববাদীর রাজনীতির পুস্তক (১ শময়েল ১০/২৫), (৭) শমূয়েল দর্শকের পুস্তক, (৮) নাথন ভাববাদীর পুস্তক, (৯) গাদ দর্শকের পুস্তক (১বংশাবলি ২৯/২৯), (১০) শময়িয় ভাববাদীর পুস্তক, (১১) ইদ্দো দর্শকের পুস্তক (২ বংশাবলি ১২/১৫), (১২) অহীয় ভাববাদীর ভাববানী, (১৩) ইদ্দো দর্শকের দর্শন (২ বংশাবলি ৯/২৯), (১৪) হনানির পুত্র যেহুর পুস্তক (২ বংশাবলি ২০/৩৪), (১৫) যিশাইয় ভাববাদী রচিত উষিয় রাজার আদ্যোপান্ত ইতিহাস (২ বংশাবলি ২৬/২২), (১৬) যিশাইয় ভাববাদীর দর্শন-পুস্তক হিষ্কিয় রাজার ইতিহাস সম্বলিত (২ বংশাবলি ৩২/৩২), (১৭) যিরমিয় ভাববাদী রচিত যোশিয় রাজার বিলাপগীত (২ বংশাবলি ৩৫/ ২৫), (১৮) বংশাবলি পুস্তক (নহিমিয় ১২/২৩), (১৯) মোশির ‘নিয়মপুস্তক’ (যাত্রাপুস্তক ২৪/৭) এবং (২০) শলোমনের বৃত্তান্ত-পুস্তক (১ রাজাবলি ১১/৭)।

খ্রিস্টান মিশনারিরা এবার দাবি করবে কুরআনের রজমের আয়াত হারিয়ে গেছে।কাজেই কুরআন বিকৃত।নাউজুবিল্লাহ।
দাদা,কুরআনের তিলাওয়াত রহিত হওয়া সেই রজমের আয়াতটি মোটেও হারিয়ে যায়নি। আয়াতটি আলাদাভাবে সংরক্ষিত।

রজমের আয়াতটি হলো :- "الشيخ والشيخة إذا زنيا فارجموهما البتة"
(ইবনে মাজাহ/২৫৫৩,মুস্তাদরাকে হাকিম/৮১৮৪)

এছাড়া আরো বলুন,আপনাদের কাছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নেই।সুহুফে ইব্রাহিম অর্থাৎ ইব্রাহিম(আ)এর উপর নাজিল হওয়া কিতাবও আপনাদের গোটা বাইবেলে নেই।আল্লাহ ইব্রাহিম(আ)এর উপরও কিতাব নাজিল করেছিলেন।(কুরআন ৮৭:১৯)
সুতরাং,এই দুটোও যতক্ষণ না আহলে কিতাবগণ প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন,ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোনো ভিত্তি নেই।
তাহলে প্রশ্ন:-সকল আসমানি কিতাব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কিভাবে?কারণ এক যুগের শরিয়ত অন্য যুগের শরিয়তের সাথে ভিন্নতা দেখায় এবং অনেক কিতাব কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।

এর উত্তরটা একেবারেই সোজা।কুরআন পালন বা প্রতিষ্ঠা করা মানেই তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলসহ পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব প্রতিষ্ঠা করা।কারণ কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাবকে সত্যায়ন করে এবং পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের বিষয়বস্তু আল্লাহ কুরআনে সংরক্ষণ করেছেন।(সূরা মায়িদা,আয়াত ৪৮)।সুতরাং কুরআন প্রতিষ্ঠা করা মানেই তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলসহ পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব প্রতিষ্ঠা করা।

যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট উভয়কেই একসাথে মান্য করা যায়না।বরং পরোক্ষভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট উভয়কেই একসাথে মানার একমাত্র উপায় হলো পরবর্তীকে মেনে নেয়া অর্থাৎ বর্তমান প্রেসিডেন্টকে মেনে নেয়া।

এরপরেও যদি খ্রিস্টান মিশনারিগণ আপনার যুক্তি মানতে না চান,তাহলে তার ধর্মগ্রন্থ দিয়েই তাকে ঘায়েল করুন।
আপনি তাকে বলুন,"তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল তো প্রতিষ্ঠা করতে চাই,কিন্তু তাওরাত প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা তো আপনাদের সাধু পল।সাধু পল তাওরাত তথা পুরাতন নিয়মকে দুর্বল ও অকেজো বলে বাতিল ঘোষণা করে দিয়েছেন।(ইব্রীয় ৭/১৮,৮/৭,১৩,১০/৯)।সাধু পলের নেতৃত্বে খ্রিস্টানগণ দলে দলে তাওরাত তথা পুরাতন আইনকে রহিত ঘোষণা করেন।আবার তাওরাতে রয়েছে বিশ্রামবারের কথা,অর্থাৎ শনিবার কোনোরূপ কাজকর্ম করলে সোজা মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।কিন্তু ইঞ্জিলে যীশু নিজেই বারবার বিশ্রামবারের আইন ভঙ্গ করেন (মার্ক ২:২৭-১৮,যোহন ৫:১৬)।বর্তমান খ্রিস্টানগণও বিশ্রামবার পালন করেন না।
এছাড়াও তাওরাতে আছে নানাপ্রকার যজ্ঞের কথা,আছে শুয়োর খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা,আছে খাৎনা করার কথা,আছে মূর্তি,ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার কথা।কাজেই চার্চগুলোতে যীশু ও মেরির মূর্তি সবার আগে ভাঙ্গা উচিত। সব মিলিয়ে নিউ টেস্টামেন্টে সবসময় তাওরাতের উল্টোটা বলা হয়েছে।বর্তমান খ্রিস্টানগণ তাওরাতের ১ টা বিধানও মানেন না।তাওরাতে যে কোনো কারণে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া বৈধ ছিল এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করাও অন্য পুরুষের জন্য বৈধ ছিল (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪/১-২)। কিন্তু ইঞ্জিলে একমাত্র ব্যভিচারের অপরাধ ছাড়া কোনো স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে না এবং অন্য কোনো ব্যক্তি সে পরিত্যাক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারবে না। এইরূপ বিবাহ ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে। (মথি ৫/৩১-৩২ ও ১৯/৩-৯)

সুতরাং,দেখা যাচ্ছে প্রচলিত তাওরাত পালন করতে গেলে ইঞ্জিল পালন করা যাচ্ছে না।আবার ইঞ্জিল পালন করতে গেলে তাওরাত পালন করা যাচ্ছে না।তাই প্রকৃত তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলসহ পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব প্রতিষ্ঠা করা কেবল কুরআন প্রতিষ্ঠা করার দ্বারাই সম্ভব সূরা মায়িদা,আয়াত ৪৮ অনুযায়ী।

পরবর্তী বিধান বা কিতাবের কারণে পূর্ববর্তী বিধান পরিবর্তিত, রহিত বা বাতিল হওয়ার বিষয়ে খৃস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাধু পল লিখেছেন:“যখন ইমামের পদ বদলানো হয় তখন শরীয়তও বদলাবার দরকার হয় (ইব্রীয়/ইবরানী ৭/১২)।এভাবে বারংবার সাধু পল লিখেছেন যে, নতুন কিতাব ও নতুন ইমাম যখন আগমন করেন তখন পুরাতন শরীয়ত লুপ্ত ও রহিত হয়। (ইব্রীয়/ইবরানী ৭/১৮, ৮/৭, ১৩, ১০/৯)।

খ্রিস্টান মিশনারিগণ কুরআন দিয়ে তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করতে চায়।কিন্তু কুরআন মানলে আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মানতে হবে:-

(১) প্রচলিত তাওরাত-ইঞ্জিলের মধ্যে অগণিত জালিয়াতি বিদ্যমান।ইহুদি-খ্রিস্টানরা কিতাবের অনেক হরফকে স্থানচ্যুত করেছে,অনেক অংশ গোপন করেছে,কিতাবের অনেক অংশ ভুলে গেছে,জাল বই লিখে আল্লাহর নামে চালিয়েছে ইত্যাদি।
(বাকারা ৭৫,৭৯,১৫৯,১৭৪,আল-ইমরান ৭৮,১৮৭,মায়িদা: ১৩, ১৪ ও ৪১,আন'আম ৯১,আরাফ ১৬২)।

(২) খৃস্টধর্মের বিশ্বাসগুলি প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে নেই; বরং তা কতিপয় ধর্মগুরুর উদ্ভাবিত বিদ‘আত ও শির্ক (মায়িদা: ৭৭)।

(৩) তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল অবিকৃত থাকলে তো কুরআনের সাথে এগুলোর মূলনীতিতে বিরোধ থাকার কথা নয়।কারণ সবগুলোই আসমানি কিতাব।কিন্তু কুরআনের সাথে শত শত বিরোধ দেখা যায় বাইবেলে।যেমন:- কুরআন বলছে ঈসা আল্লাহর পুত্র নন,তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দেননি,যারা ট্রিনিটিতে বিশ্বাস করে তারা কাফের।যারা ঈসা মসীহকে খোদা বলে বিশ্বাস করে তারা কাফের।আদিপাপ বলে কিছু নেই ইত্যাদি।
(মায়িদা ১৭,৭২,৭৩,আন'আম ১৬৪,বনি ইস্রাইল ১৫, ফাতির ১৮,যুমার ৭,নাজম ৩৮)

অপরদিকে বাইবেল ও সাধু পলের ধর্মে এর উল্টোটা বলা।

সুতরাং,খ্রিস্টান মিশনারিগণ যে গ্রন্থ থেকে তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলকে অবিকৃত দেখানোর চেষ্টা করেন,সেই গ্রন্থই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে যে তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল বিকৃত।

২য় ভাগ:-যে গ্রন্থের শুরুটাই হয় ভুল দিয়ে,সেই গ্রন্থ কতটা নির্ভরযোগ্য হতে পারে?

মিশনারি দাদা,ওল্ড টেস্টামেন্ট শুরুই হয়েছে ভুল দিয়ে।
নিউ টেস্টামেন্ট শুরুই হয়েছে ভুল দিয়ে। 

ওল্ড টেস্টামেন্টের শুরুতেই ভুল:-

সূর্যের আগে পৃথিবী,মাটি,গাছপালা সৃষ্টি।(আদিপুস্তক ১:১-১৯)

যা বৈজ্ঞানিকভাবে সম্পূর্ণ ভুল বলে প্রমাণিত ।বিজ্ঞানমতে সূর্য সৃষ্টির আগে পৃথিবী,মাটি এগুলো কিছুই সৃষ্টি হয়নি।তাহলে গাছপালা জন্মালোটা কোথায়?

নিউ টেস্টামেন্টের শুরুতেই ভুল :-

(i) আব্রাহাম থেকে যীশু পর্যন্ত বংশধারার মোট পুরুষ ৪২ জন (মথি ১:১৭)।
কিন্তু তালিকা গণনা করলে জানা যায় বংশধারার মোট পুরুষ ৪১ জন!(মথি ১:১-১৬)।

(ii)দাউদের পুত্র শলোমন থেকে যিকনিয় পর্যন্ত বংশধারার মোট পুরুষ ১৪ জন (মথি ১:৭-১১)।দাউদের পুত্র শলোমন থেকে যিকনিয় পর্যন্ত বংশধারার মোট পুরুষ ১৮ জন!(২ বংশাবলি ৩:১০-১৬)!

৩য় ভাগ:-নিজেদের মাঝেই মতানৈক্য 

ক্যাথলিকদের বাইবেলে বইয়ের সংখ্যা ৭৩; কিন্তু প্রটেস্ট্যান্টদের বাইবেলে বইয়ের সংখ্যা ৬৬। ৭টি বই-ই বেশি কম। উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান বইগুলির মধ্যেও আয়াত ও অধ্যায়ে অনেক বৈপরীত্য। আবার প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের কিং জেমস ভার্শন ও রিভাইযড স্টান্ডার্ড ভার্শনের মধ্যে শতশত আয়াত ও হাজার হাজার শব্দের পার্থক্য। একটি সঠিক হলে অন্যটি জাল।অথবা সবগুলিই জাল।

৪র্থ ভাগ:-বাইবেল কিছুতেই আল্লাহর কালাম হতে পারেনা।কারণ:-

১.খ্রিস্টানধর্মে ধর্ষণ হালাল।(দ্বি.বি ২২:২৮-২৯)
২.ব্যাভিচার হালাল।(২স্যামুয়েল১১:২-৫)
৩.যৌনদাসী হালাল।(১রাজাবলি১১:৩)
৪.দাসপ্রথা হালাল।(১পিটার২:১৮ -১৯,ইফিষীয়৬:৫,১তিমথি৬:১-২,যাত্রা২১:২১,লেবীয়২৫:৪৪-৪৬)
৫.পিতা-পুত্রীর মৈথুন হালাল।(আদি১৯ঃ৩০-৩৮)
৬.শিশুকাম হালাল,শিশুবিবাহ হালাল।(আদি২২-২৬)
৭.তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা ব্যাভিচারের শামিল।(মথি৫:৩২)
৮.মুণ্ডুপাত হালাল।(গণনা৩১:৯-১৮)
৯.নিজ কন্যাকে দাসী বানিয়ে বিক্রি হালাল। (যাত্রা২১:৭-৮)
১০.স্ত্রী প্রহার হালাল। (দ্বি.বি২৫:১১-১২)
১১.চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই হালাল।(দ্বি.বি২০:১৪)
১২.সৎ মাকে ধর্ষণ হালাল। (আদি৩৫:২২,২স্যামুয়েল১৬:২২)
১৩.দেবরের সাথে মৈথুন হালাল।(আদি৩৮:৮-১৯)
১৪.যতখুশি বহুবিবাহ হালাল।(১রাজাবলি১১:৩)
১৫.দাসদাসীদের প্রহার করা হালাল।(যাত্রা২১:২১,লূক১২:৪৭-৪৮)
১৬.অস্থায়ী/মুতা বিবাহ হালাল।(দ্বি.বি২৪:১-২)
১৭.নির্দোষ মানুষকে অভিশাপ দেয়া হালাল। (মথি২৩:৩৬)
১৮.পুত্রবধুর সাথে যৌনমিলন হালাল।(আদি ৩৮)
১৯.সৎবোনকে বিয়ে হালাল।(আদি২০:১২)
২০.সৎবোনকে ধর্ষণ হালাল।(২স্যামুয়েল১৩:১১-১৪)
২১.জাতিগত নিধন/গণহত্যা চালানো হালাল। (দ্বি.বি২০:১৩-১৬,হোশেয় ১৩:১৬,ইব্রীয় ১১:৩২-৩৪)
২২.উঁচু-নিচু বৈষম্য সৃষ্টি হালাল।(মথি১৫ঃ২৩-২৬)
২৩.উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করা হালাল।(যীশাইয়২০:২-৮)
২৪.বিধর্মী লোকদের কুকুর,গাধা,শুয়োর ইত্যাদি বলে গালাগালি করা হালাল।
(মথি১৫:২৬,৭:৬;আদি১৬:১২)
২৫.সরলপ্রাণ বিধর্মীদের খানাপিনার নামে ডেকে নিয়ে কৌশলে হত্যা করা হালাল।(১রাজাবলি১৮:৪০,২রাজাবলি ১০:১৮-২৮)
২৬.পিতার দোষে পুত্রকে শাস্তি দেয়া হালাল।
(যীশাইয় ১৪:২১,যাত্রা২০:৫)
২৭.বিদেশিদের এলাকায় গিয়ে তাদেরই মন্দির,মূর্তি,বেদী ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে আসা
হালাল।(যাত্রা৩৪ঃ১৩)
২৮.নিরস্ত্র বন্দীদের জবাই করা,পুড়িয়ে মারা হালাল।
(২ স্যামুয়েল ১২:২৯-৩১)
২৯.অহেতুক গাছপালা,অবুঝ পশুপাখিকে হত্যা করা হালাল।(মথি২১:১৯,মার্ক১১:১৩-১৪,৫:১০-১৩,১ স্যামুয়েল ১৫:১-৩)
৩০.কন্যাসন্তানকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হালাল।(গণনা২৭:৮)
৩১.মদ্যপান হালাল।(যোহন২:১-১০)
৩২.যীশুকে বিশ্বাস না করলেই হত্যা করা হালাল।(লূক১৯:২৭)
৩৩.বিধর্মীদেরকে আগাছার মতো উপড়ে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হালাল।(মথি ১৫:১৩-১৪)
৩৪.কন্যা সন্তানকে শিক্ষার অধিকার/স্কুলে পাঠানো থেকে বঞ্চিত করা হালাল।
(১করিন্থীয়১৪:৩৫)
৩৫.গালিগালাজ করা হালাল।(মথি ১৬:২৩,২৩:১৩-৩৩)
৩৬.পূর্ববর্তী নবি-রাসুলদের চোর-ডাকাত বলে গালি দেওয়া হালাল।(যোহন ১০:৭-৮)
৩৭.নাস্তিকহত্যা হালাল।(২বংশাবলি১৫:১৩,লেবীয়২৪:১৬)
৩৮.প্রতারণা করা হালাল।(আদি ২৭,মালাখি ১:২-৩)
৩৯.বিধবা ভাবীর গর্ভে দেবর,ভাসুর,শ্বশুড় দ্বারা সন্তান উৎপাদন/নিয়োগ প্রথা হালাল।
(আদি৩৮:৮-৩০)
৪০.চটি গল্প/অশ্লীল কবিতা লেখা হালাল।
(পরমগীত১:১-৭,৭:৭-৯পরমগীত ৪:৫,যিহিষ্কেল ২৩:৩)

এরপরেও কি পাঠকগণের কাছে মনে হয় তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল অবিকৃত আছে?

৫ম ভাগ:-পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহ সংরক্ষণ না করাটা কি আল্লাহর ব্যর্থতা?(নাউজুবিল্লাহ)

সংক্ষিপ্ত উত্তর:- মুসলিমগণ বলেন পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ বিকৃত।এর প্রতিউত্তরে খ্রিস্টান মিশনারিগণ বলে থাকেন আল্লাহ কেনো পূর্ববর্তী কিতাব সংরক্ষণ করতে পারলেন না?তারমানে কি আল্লাহ ব্যর্থ?
আমাদের উত্তর হবে,
১মত,আল্লাহ সংরক্ষণ করতে পারেননি বলাটা উচিত নয়।বরং বলা উচিত,আল্লাহ সংরক্ষণ করেননি।কারণ সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়েনি।যেমন কোনো ভার্সিটির স্টুডেন্টের কি ক্লাস 1-2 এর বই সংরক্ষণের কোনো প্রয়োজন আছে?নেই।কেউ পিএইচডি করতে গেলে কি তাঁর প্রাইমারির বই সংরক্ষণের কোনো দরকার আছে?নিশ্চয়ই নেই।কারণ সে শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে।তদ্রুপ কুরআন হলো আসমানি জ্ঞান ও নীতি নৈতিকতার জ্ঞান শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের বই।আর আমরা সেই যুগে বা স্তরে বসবাস করছি।তাই আমাদের জন্য পূর্বের কিতাবগুলো সংরক্ষণের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।কুরআন হযরত মুহাম্মাদ(স) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার সকল মানুষকে পথ প্রদর্শন করে।আগের কিতাবগুলো ছিলো নির্দিষ্ট সময় ও জাতিভিত্তিক।কিন্তু কুরআন হলো কালজয়ী গ্রন্থ।তাই কুরআনের পর আমাদের আর অন্যকিছুর দরকার নেই।

২য়ত,কুরআন হলো মানবজাতির জন্য সর্বশেষ সুযোগ।তাওরাতের পর যাবুর ছিলো,ইঞ্জিল ছিলো।কিন্তু কুরআনের পর আর কোনো গ্রন্থ আল্লাহ পাঠাবেন না।কুরআনকেই আল্লাহ ফাইনাল সিলেবাস ও পথ প্রদর্শনকারী গ্রন্থ হিসেবে পাঠিয়েছেন আমাদের জন্য।কুরআনের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।কুরআন যেহেতু মানবজাতির জন্য সর্বশেষ সুযোগ,তাই আল্লাহ কুরআনকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।পূর্ববর্তী কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নেননি।বরং আল্লাহ কুরআনে বারংবার বলেছেন যে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তিনি সেই সমাজের আলেম-উলামাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন,কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে (আলে ইমরান ১৮৭,মায়িদা ৪৪)। আল্লাহর আয়াত বিক্রি করে খেয়েছে।নিজেদের সুবিধার্তে অনেক আয়াত কাটছাট করেছে বা গোপন করেছে।আল্লাহ মানবজাতির জন্য সর্বশেষ সুযোগ কুরআনকেই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন (ফুসসিলাত ৪২,হিজর ৯,ক্বিয়ামাহ ১৬-১৭)।একারণেই কুরআন আজ অবধি অবিকৃত।

সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহরই জন্য।আল্লাহ সবাইকে সঠিক ও সত্য বোঝার তাওফীক দান করুন।আমীন

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments