ক্যানিবালিজম - Cannibalism

মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২৬

বিষয়:- ক্যানিবালিজম
✒️Author:- Aminur Rashid

☰ ☱ ☲ ☳☰ ☱ ☲ ☳☰ ☱ ☲ ☳☰ ☱ ☲ ☳☰ ☱ ☲ ☳☰ ☰ ☱ ☲ ☳



সবসময়কার মত আজও জুম্মা বারের শান্ত বিকেল। হাতে কফি আর সেই পরিচিত কফি হাউজে বসে আছি আমরা। অপেক্ষা শুধু বাকিদের আগমনের,, 


মিনার:- মুহাম্মদ আলী কখন আসবে কে জানে। অপেক্ষা করি কিছুক্ষণ। 

আসিফ:- ও আসলে কি আর না আসলে কি। কিছু যায় আসে না। 

সুরুজ:- হুম ভাই। ওর মত পাগল অনেক কম দেখেছি। হা হা হা

আসিফ:- ওর আজগুবি কথাবার্তার কারণে সেই কবেই ওই হতচ্ছারার সাথে কথা বলি না। 

[ মুহাম্মদ আলী চলে আসলো, বসে আছে আর হাতে নিয়ে কফি, বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- কিরে ভাইরা। কার নামে দুর্নাম চলতেছে। 

মিনার:- তর নামেই। 

মুহাম্মদ আলী:- ওহ, অতি উত্তম। যাইহোক কি খবর? 

মিনার:- ভালো। আলহামদুলিল্লাহ তর?

মুহাম্মদ আলী:- আলহামদুলিল্লাহ। 

[ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলতে লাগল ]

মুহাম্মদ আলী:- আজ ক্যানিবালিজম নিয়ে কিছু বলি। 

মিনার:- হঠাৎ এমন টপিক? 

মুহাম্মদ আলী:- এমনিই,, 

মিনার:- বল, শুনি। আজকাল সব জায়গায় কেন যেনো এর প্রচার চলছে। নানান জায়গায় দেখলাম এসব নিয়ে পোষ্ট। 

সুরুজ:- হুম মুভি, সিরিজ আজকাল ক্যানিবালিজম নিয়েই দেখছি। যেখানে মানুষের মাংসকে খুবি সুস্বাদু প্রচার করা হয়। ছি ছি

[ মিনার, বলতে লাগলো ]

মিনার: আচ্ছা তুই কি জানি বলবি বলতে থাক। শুনি... 

মুহাম্মদ আলী:- হুম, ক্যানিবালিজম তো নরমাংস ভোজনকে বুঝানো হয়। মানুষ যেখানে মানুষকে ভক্ষণ করে। এ কাজটা নানান ভাবে ঘটেছিলো। দূর্ভিক্ষ, শাস্তি আরও নানান কারণে। ড্রেঞ্জেল ভারগাস নামে এক ব্যাক্তি ১০ জন মানুষকে খেয়ে ফেলে হত্যা করে। তারপরে তাকে আটক করা হয় ১৯৯৯ সালে। উইকিপিডিয়াতে হালকা পাতলা এসব বলা। আর সম্প্রতি জেমস ডেভিড! 

[ সবাই কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর মুহাম্মদ আলীর কথা শুনছে ]

মিনার:- আচ্ছা বৈজ্ঞানিক ভাবে নরভোজন বিষয়টা কেমন? 

মুহাম্মদ আলী:- এখানে জিনগত ব্যাপার আছে। মানুষের সাথে মানুষের জিনগত মিল আছে। মূলত মানুষের সাথে যে খাবার এর DNA বেশি মিলবে সেই খাবার মানুষের জন্য ততটাই ক্ষতিকর। আর মানুষের মাংস এর DNA তো মিলবেই কমন ব্যাপার। 

মিনার:- হুম।

মুহাম্মদ আলী:- আমরাও আজকাল অনেকেই মানুষ খাদক হয়ে গেছি। (নাঊজুবিল্লাহ) 

মিনার:- মানেহ?

মুহাম্মদ আলী:- বলছি তোর সব প্রশ্ন জমা রাখ আমার কথা শেষে তার উত্তর দিবো, তার আগে একটা ঘটনা বলি। 

মিনার:- বল। 

[ সুরুজ, মিনার, আসিফ সবাই নিরবে শুনতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- এক রাজা মাংস ছাড়া ভাত খেতো না। সে তার পাচককে যখন খাবার আনতে বলল তখন সেই পাচক গিয়ে দেখলো রাজার খাবার কুকুররা খেয়ে ফেলেছে। এখন সেই পাচক তাড়াহুড়া করে কিনতে গেলো মাংস। কিন্তু কোথাও সে মাংস পেলো না। 

সুরুজ:- তার পর? 

মুহাম্মদ আলী:- তখন ওই পাচক ভাবলো যে রাজার সামনে যদি মাংস ছাড়া ভাত নিয়ে যায় তাহলে তার প্রাণরক্ষা পাবে না। বিরাট সমস্যা! 

এই কারণে সে শ্মশানে গেলো। 

সুরুজ:- মানেহহ? 

মুহাম্মদ আলী:- শ্মশানে গিয়ে মৃত ব্যক্তির ঊরুর মাংস নিয়ে তা রান্না করে রাজার কাছে নিয়ে গেলো।

সুরুজ:- কি!? 

মুহাম্মদ আলী:- এর পর রাজা যখন তা খেলো তখন তার মধ্যে কেমন অতীতের স্বাদ জেগে উঠলো। আসলে সে অতীতে মানুষের মাংস খেয়েছিলো। যার কারণে পাচকের রান্না করা মাংস যে মানুষের তা সে খুব সহজেই ধরতে পারলো। সে খুবি সুস্বাদু ভাবে তা খেলো। তবে পাচককে তা কোন ভাবেই বুঝতে দিলো বা রাজা। 

মিনার:- কেন? 

মুহাম্মদ আলী:- শুন, রাজা তারপর সেই পাচক কে ডাকলো আর মিথ্যা বলল, যে রান্না ভালো হয় নি কি রান্না করেছে। আর পাচককে বলল যে এই মাংস কোথা থেকে এনেছে। 

পাচক তো বিরাট বিপদে পড়ে গেলো। কিন্তু রাজার ভয়ে সব কিছু সে স্বীকার করলো। 

সুরুজ:- তখন নিশ্চিত রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে? 

মুহাম্মদ আলী:- নাহ বরং রাজা পাচককে উপদেশ দিলো যে তার জন্য নিয়মিত মানুষের মাংস আনতে হবে। 

[ মুহাম্মদ আলী কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- পাচক বলল যে কিভাবে মানুষের মাংস দিবে? তখন রাজা বলল কারাগারে যারা বন্দি তাদেরকে মেরে মেরে তাদের মাংস রান্না করে দিতে। আর পাচক তাই শুনলো। এরপর আস্তে আস্তে কারাগারের সবাই শেষ। এই কারণে রাজা বলল যে রাস্তায় ব্যাগ বা এই জাতীয় কিছু ফেলে রাখো। যেই ধরবে তাকেই কারাগারে ঢুকিয়ে হত্যা করবে। 

এভাবে চলতে চলতে একদিন কেউ পর ব্যাগে হাত দিতো না। তার পর রাজা নানান ভাবে মানুষ হত্যা করতে শুরু করলো। 

সকল মানুষ বুঝতে পারলো রাজ্য এখন নরখাদকের কবলে। তবে জনগণ জানতো না যে এই কাজ রাজার। 

একদিন পাচক লুকিয়ে একজনকে হত্যা করে তাকে যখন টুকরো টকরো করতে লাগলো। তখনই সেনাপতি তাকে দেখে ফেললো। 

মিনার:- তার পর? 

মুহাম্মদ আলী:- তারপর আর কি? পাচক গণ ধুলাই খেলো। পরে সেনাপতি যেনে গেলো যে কাজটা রাজার। সেনাপতি যখন বলল এসব ছেড়ে দিতে রাজা বললো এসব সে ছাড়তে পারবে না। এটা তার নেশা। শেষমেষ রাজা জঙ্গলে চলে গেলো। মানুষ ধরে ধরে খেতে খেতে এক সময় সে তার পাচক কেও রান্না করে খেয়ে ফেলল। 

এভাবে চলতে চলতে একসময় সেই রাজার কাছে একজন এসে তাকে সংশোধন করিয়ে তার রাজ্য আবার ফিরিয়ে দিলো। 

মিনার:- আজগুবি গল্পটা কোথা থেকে শুনলি? 

সুরুজ:- রূপকথার গল্প নাকি? 

মুহাম্মদ আলী:- নাহ, এটা Buddhism এর একটি কাহিনী। 
[ খুদ্দকনিকায়ে জাতক/পঞ্চম খণ্ড/অশীতি নিপাত/৫৩৭. মহাসুতসোম-জাতক ]

মিনার:- what! 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। আজকাল চারদিকে যেমন "মানুষের মাংস সুস্বাদু" এমন নিকৃষ্ট বিষয় প্রচার হচ্ছে তা Buddhism এই ছিলো। 

মিনার:- আচ্ছা

মুহাম্মদ আলী:- কেউ কেউ বলেন যে এই ঘটনা আবার অন্য ঘটনা থেকে Buddhism এ এসেছে? 

মিনার:- কোনটা? 

মুহাম্মদ আলী:- মহাভারতের আদিপর্ব্বে ১৭৬ম অধ্যায়ে কল্পাষপাদ নামক এক নরমাংসাশী রাজার কথা আছে। 

ইক্ষাকুবংশীয় এক রাজা। বশিষ্ঠের পুত্র শক্তৃর শাপে উনি নরমাংসভোজী রাক্ষস হয়ে যান। বিশ্বামিত্রের প্ররোচনায় উনি বশিষ্ঠের একশত পুত্রকে উদরস্ত করেন। পরে বশিষ্ঠ ওঁকে শাপমুক্ত করলে, উনি বশিষ্ঠের আজ্ঞাধীন হয়ে দ্বিজগণকে পুজো করার সংকল্প নেন। কল্মাষপাদ যখন রাক্ষস হয়ে বিচরণ করছিলেন, তখন তিনি এক ব্রাহ্মণকে তাঁর পত্নীর সামনেই ভক্ষণ করেন। ব্রাহ্মণপত্নী তাঁকে অভিশাপ দেন যে, স্ত্রীসংগম করলেই তাঁর মৃত্যু হবে। আর যে বশিষ্ঠকে তিনি পুত্রহীন করেছেন সেই বশিষ্ঠই তাঁকে ক্ষেত্রজ পুত্র দেবেন। কল্মাষপদের অনুরোধে বশিষ্ঠ তাঁর পত্নীর গর্ভে যে পুত্র উৎপাদন করেন, তাঁর নাম অশ্মক। ইনি পরে পৌদন্য রাজ্য স্থাপন করেছিলেন।

সুরুজ:- রাক্ষস নরখাদক হয়ে গেছে অভিশাপে? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। মহাভারত (Hinduism) এরই কথা। 

সুরুজ:- ছি কি বিদঘুটে ব্যাপার-স্যাপার। শুনেই বমি আসছে। 

মুহাম্মদ আলী:- শিবপুরানেও এমন একটা ঘটনা আছে এক নরখেকো রাক্ষস এক মহিলার স্বামী কে ভক্ষণ করে। তার পর সতীদাহ হন। 
[ Siva puranam/Kotirudra samhita/10/20-24 ]

মিনার:- হুম। 

মুহাম্মদ আলী:- আবার বাইবেলেও ক্যানিবালিজম নিয়ে অনেক কথাই আছে। 

মিনার:- কি? 

মুহাম্মদ আলী:- শুন বলি, আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর কে তো চিনিস। 

মিনার:- হুম। উনার মত বক্তা দরকার ভাই। আল্লাহ উনাকে জান্নাত দিক। আমীন

মুহাম্মদ আলী:- আমীন, উনার বইয়ে এ ব্যাপারে একটা লেখা আছে ওয়েট। 

[ এই বলে, মুহাম্মদ আলী তার ফোনটা বের করলো। একটা বই ওপেন করে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- শুন, পড়ে শুনাই,,, 

নরবলি দেওয়ার পাশাপাশি নরমাংস ভক্ষণও বাইবেলের একটা পরিচিত কর্ম। এমনকি নিজের সন্তান হত্যা করে রান্না করে খাওয়াও বাইবেল স্বীকৃত কর্ম: ‘‘ইসরাইলের বাদশাহ একদিন যখন শহরের দেয়ালের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে তাঁকে বলল, হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন। ... এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বলেছিল, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও, কাল আমরা আমার ছেলেকে খাব।’ কাজেই আমরা আমার ছেলেকে রান্না করে খেয়েছি। পরের দিন আমি তাকে বললাম, ‘এবার তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও।’ কিন্তু সে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।’’ (২ বাদশাহনামা ৬/২৬-২৯)

পাঠক, কল্পনা করতে পারেন! নিজের সন্তানকে হত্যা করে আবার উপাদেয় করে রান্না করে খাওয়া হচ্ছে! ঈশ্বরের প্রিয় পবিত্র সন্তানদের এই কর্ম!

বাইবেল বার বার বলছে যে, অবাধ্যদের শাস্তি হিসেবে ঈশ্বর নরমাংস ভক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যেমন: 

‘‘তোমার উপর যারা জুলুম করে আমি তাদের গোশত তাদেরই খাওয়াব।’’ (যিশাইয়/ ইশাইয়া ৪৯/২৬)

‘‘আর তোমরা নিজ নিজ পুত্রদের মাংস ভোজন করবে ও নিজ নিজ কন্যাদের মাংস ভোজন করবে’’ (লেবীয় ২৬/২৯, মো.-১৩)

‘‘তখন আমি তাহাদিগকে তাহাদের পুত্রদের মাংস এবং তাহাদের কন্যাদের মাংস ভোজন করাইব, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন বন্ধুর মাংস খাইবে’’ (যিরমিয় ১৯/৯)
 
‘‘পিতারা সন্তানদেরকে ভোজন করবে, ও সন্তানেরা নিজ নিজ পিতাকে ভোজন করবে’’ (যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল ৫/১০, মো.-১৩)

‘‘কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের মাবুদ আল্লাহর কথায় কান না দাও এবং আজকের দেওয়া আমার এই সব হুকুম ও নিয়ম যত্নের সংগে পালন না কর, তবে ... সেগুলো ঘেরাও করে রাখবার সময় শত্রুরা তোমাদের এমন কষ্টে ফেলবে যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সন্তানদেরকেই খাবে, অর্থাৎ তোমাদের মাবুদ আল্লাহর দেওয়া ছেলেমেয়েদের গোশত খাবে।.... তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক কোমল স্বভাবের এবং এমন ভাল অবস্থায় মানুষ হয়েছে যে, তাকে কোন দিন মাটিতে পা ফেলতে হয় নি, তারও তার প্রিয় স্বামী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি কোন দয়ামায়া থাকবে না। সন্তান জন্মের পর সেই সন্তান এবং তার পরে শরীর থেকে বের হয়ে আসা ফুল, এর কোনটাই সে তাদের খেতে দেবে না। ... সে নিজেই সেই ফুল ও সন্তান চুপিচুপি খাবে।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮/১৫ ও ৫৩-৫৭)

গ্যারি ডেভানি লেখেছেন:

“If you don't obey the Biblical God, He will make you secretly eat your child? Could you acquit your God for doing this to you and your infant? Can you visualize the monster of monsters within the pages of the Bible?”

‘‘আপনি যদি বাইবেলের ঈশ্বরের আনুগত্য না করেন তবে তিনি আপনার জন্য ব্যবস্থা করবেন যে, আপনি নিজেই গোপনে আপনার সন্তানকে ভক্ষণ করবেন। আপনার ও আপনার শিশুর প্রতি এরূপ কর্ম করার কারণে আপনি কি আপনার ঈশ্বরকে নির্দোষ বলে গণ্য করতে পারেন? আপনি কি বাইবেলের পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যে দানবকুলের মহাদানবকে দেখতে পান?’’[i]

বাইবেল অন্যত্র বলছে: 

‘‘সেখানে তোমরা গোশত ও রক্ত খাবে। তোমরা শক্তিবলছেলী লোকদের গোশত খাবে এবং দুনিয়ার শাসনকর্তাদের রক্ত খাবে; এই লোকেরা যেন বাশন দেশের মোটাসোটা পুরুষ ভেড়া, বাচ্চা-ভেড়া, ছাগল ও ষাঁড়। যে কোরবানীর ব্যবস্থা আমি তোমাদের জন্য করব তাতে তোমরা পেট না ভরা পর্যন্ত চর্বি খাবে এবং মাতাল না হওয়া পর্যন্ত রক্ত খাবে।’’ (ইহিস্কেল ৩৯/১৭-১৯)

[ মূলঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ]

মিনার:- কি আর বলবো। পিতা সন্তানকে আর সন্তান পিতাকে! শক্তিশালী লোকদের গোশত!! এত নিকৃষ্ট কর্ম বাইবেলে! 

মুহাম্মদ আলী:- ইসলামের ইতিহাসে, এই টাইপের একটা কাজ করেছিলো এক কাফির। আসলে এরাই এসবে পারদর্শী। পরে মুসলিম হয়েছিলো, আসলে নরখাদক না বরং সে কলিজাকে চিবিয়েছিলো। (নাঊজুবিল্লাহ) 

উনি অর্থাৎ হযরত হামজা (রঃ) যার জানাজায় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) উচ্চস্বরে ক্রন্দন করেছিলেন। যেদিন তিনি শহীদ হয়েছেন সেদিন সুফিয়ান ইবনে হারবের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবাহ এই জঘন্য কাজ করেছিলো। 

মিনার:- বুঝলাম। 

[ মুহাম্মদ আলী তার হাত ঘড়ির দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- এবার শুন, বর্তমানে নরমাংস ভক্ষণ বা ক্যানিবালিজম অনেক প্রচার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় সাথে সব জায়াগায় "মানুষের মাংস সুস্বাদু" এমন কথা প্রচার করা হচ্ছে। সাইকোলজি অনুযায়ী এসব কিন্তু অনেকের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। আমি অনেক পোষ্ট কমেন্ট দেখছি। যেখানে মানুষ এসব নিয়ে আকর্ষণ দেখাচ্ছে তা মজার ছলেই হক। 

যে মানুষ এসব শুনলেই বলতো "বমি আসছে" সেই মানুষই আজ এসব বিনোদনের মত করে দেখছে নানান মুভি, সিরিজে। এর মাধ্যমে মানুষের সামনে মানুষের মাংস ভক্ষণ কে একটা স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরছে। 

আর এমন মাইন্ডসেট তৈরি করছে যে "মানুষের মাংস সুস্বাদু"

পুরই শয়তানী চক্র আর কিছুই নয়।

[ সকলে চুপচাপ শ্রবণ করছে ]

মুহাম্মদ আলী:- আর আরও দুঃখজনক হলো এই ফিতনা টা আরও আগে নানান ধর্মগ্রন্থ প্রমোট করেছে। এবং তারাও সুস্বাদু বলে প্রমোট করেছে নানান গল্প-টল্পের মাধ্যমে। 

সুরুজ:- এখানে শয়তান পূজারি কোথা থেকে আসলো? 

মুহাম্মদ আলী:- তুই হয়তো জানিস না। ১৯৮১ সালের কথা। একটা নারীকে পাওয়া যায়, যাকে বিকৃত করা হয়েছে এবং তার মাংস তারা কেটে নিয়েছে। পরের বছরে নিজের অফিসের সামনে থেকেই সেদিন অপহরণ করা হয়েছিলো লোরেইন বোরোস্কিকে। প্রায় পাঁচ মাস পর ভিলা পার্কেরই এক কবরস্থানে সন্ধান পাওয়া যায় লোরেইনের নিথর দেহের, একইরকম বিকৃতাবস্থায়। এভাবে আরও অনেক নারীর লাশ পেয়েছিলেন পুলিশরা। 

সুরুজ:- অহ, কি নিকৃষ্ট। তার পর কি ওরা ধরা খায় নি? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম, মোড় ঘুরেছিলো এ কাজের সাথে জড়িত তিনজনকে পাকড়াও করা হয়েছিলো। যখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো তখন অন্য কিছু বেড়িয়ে এলো। 

সুরুজ:- কি? 

মুহাম্মদ আলী:- শয়তানের পূজারী গুপ্ত সংঘটনের। যারা নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণ ও তাদের মাংস ভক্ষণ সহ আরও অশ্লীল কর্মকাণ্ড করতো। [ii]

মিনার:- তাহলে ওরা শয়তান পূজারী ছিলো! 

সুরুজ:- সেটাই তো! 

মুহাম্মদ আলী:- যদিও এসব আমি দেখিনি তবে এসব মুভি-সিরিজ নিয়ে অনেকের কথাই সামনে আসে। সুতরাং এসব ফিতনা থেকে সাবধান থাকা এবং এসব পরিহার করা আমাদের মুসলিমদের কর্তব্য। 

মিনার:- হ্যাঁ। 

মুহাম্মদ আলী:- ক্যানিবালিজম ছিলো অসভ্য আর শয়তান পূজারিদের কর্ম। যা আজ সভ্য মানুষের মধ্যে প্রমোট করা হচ্ছে। যে কাজ শুনলেই মানুষ ঘৃণা করতো সেই কাজকেই স্বাভাবিক ভাবে তুলে ধরছে। 

মিনার:- সেটাই। 

মুহাম্মদ আলী:- এই যে সমকামিতা এটা যেমন করে নাস্তিকরা এর স্বাধীনতা চায়। তারা বলে এসব ন্যাচারাল ইত্যাদি। এমন ভাবে যদি ফিতনা চলে তাহলে পরবর্তীতে দেখবি ক্যানিবালিজম এর জন্যও এসব যুক্তি বের করবে যে অমুক অমুক প্রাণী, তমুক শ্রেণীর মধ্যে ক্যানিবালিজম আছে। 

নাস্তিকদের এসব নিচু মানের কু-যুক্তির তো আর অভাব নেই। 

মিনার:- হুম। এসব করেই তো ওরা সমকামিতা নিয়ে লাফায়। যেমন অভিজিৎ রায় তার গ্রন্থে বলেছিলো।

মুহাম্মদ আলী:- এরা তো বলে মানুষ হতে হবে। কিন্তু এদের সব কিছুই পশুদের মতন, 

হুমায়ুন আজাদ তার বইয়ে বলেছেন,,,

"ধর্মের অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষকে হয়ে উঠতে হবে মানুষ" [আমার অবিশ্বাস – হুমায়ুন আজাদ, পৃষ্ঠা:- ১০২]

কিন্তু বাস্তব ভিন্ন। 

[ মুহাম্মদ আলী কফিতে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- হে হে মনে পড়েছে, 

২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা প্রাণি ১৫০০'রও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার সন্ধান পেয়েছেন" [সমকামিতা – অভিজিৎ রায়, পৃষ্ঠাঃ- ৭০]

এরপর উনি বলেছেন

"আমরা 'সৃষ্টি সেরা জীব' বলে কথিত গর্বিত মানুষেরাও কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই প্রকৃতিরই অংশ আরো ভালোভাবে বললে প্রাইমেটদের অংশ। ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবিন ডানবার এ প্রসঙ্গে বলেন – 
সব কথার শেষ কথা হলো, অন্যান্য প্রাইমেটদের মধ্যে বিশেষতঃ এপদের মধ্যে কোন কিছু ঘটলে, এর একটা বিবর্তনীয় ধারাবাহিকতা হয়ত মানুষের মধ্যেও থাকবে বলে ভেবে নিলে হয়ত সেটা অযৌক্তিক হবে না। আমরা বনোবো শিম্পাঞ্জির কিংবা জাপানি ম্যাকাকুয়ি প্রজাতিতে সমকামিতার প্রকাশ দেখেছি। বিবর্তনের চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করলে মানুষের অবস্থানও কিন্তু হবে এদের খুব কাছে পিঠেই।" [সমকামিতা – অভিজিৎ রায়, পৃষ্ঠাঃ- ৭১-৭২]

অর্থাৎ বুঝতে পেরেছিস? 

মিনার:- হ্যাঁ। সেটার এরা প্রণিজগতের বিষয় টেনে নিজেকে পশু বানিয়ে এসব কু-যুক্তি দিয়ে গেছে। 

মুহাম্মদ আলী:- তাদের কথা হলো, সমকামীতায় কারো ক্ষতি হচ্ছে না। 

"সমকামি হয়েও সাস্থ্যকর এবং সুখী জীবন যাপন করা যায়" [সমকামিতা – অভিজিৎ রায়, পৃষ্ঠাঃ- ১২০]

অর্থাৎ,, যার মধ্যে সুখ রয়েছে যার মধ্যে কারো ক্ষতি নেই সেটাই করা যাবে। অর্থাৎ নিজের মাতা-কন্যার সাথেও করা যাবে। (নাঊজুবিল্লাহ)

সুখ যেখানে রয়েছে সেটাই করা যাবে যদি "ধর্ষণের" মধ্যে পুরুষ সুখ পায় তাহলে সেটাও।(নাঊজুবিল্লাহ)

এই কারণেই হুমায়ুন আজাদ বলেছেন,,,

"যদি কোন পুরুষ একাধিক নারীর সাথে বিবাহিত বা অবিবাহিত জীবন যাপন করতে চায়, তাতে সবাই যদি তাতে সুখী হয়, তাতে কারো আপত্তি থাকা উচিত নয় এবং কোন নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহিত বা অবিবাহিত জীবন যাপন করতে চায়, তাতেও সবাই যদি তাতে সুখী হয়, তাতে কারো আপত্তি থাকা উচিত নয়। তাদের ওই জীবন যাপন অন্য কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। সুখী করে তাদের তা তাই অনৈতিক নয়।" [আমার অবিশ্বাস – হুমায়ুন আজাদ, পৃষ্ঠা:- ১৪২]

তারা এভাবেই ক্যানিবালিজম, ধর্ষন, বেশ্যাবৃত্তি, হারাম রিলেশন, সমকামিতা, বিবাহ বহির্ভূত মিলন সব কিছুকেই হালাল করছে ঠিক একই যুক্তিতে। 

এবং এই একই যুক্তিতে ক্যানিবালিজম ও হালাল। 

মিনার:- হ্যাঁ, ভাই এই নাস্তিক সমাজের মস্তিষ্ক আসলেই যে কতটা বিকারগ্রস্ত তা তাদের লেখনি থেকেই প্রমাণ পায়। 

মুহাম্মদ আলী:- সেটাই। এই ধর, black widow spider, এরা স্ত্রী মিলনের পর পুরুষ সঙ্গীটিকে মেরে ফেলে। তার পর তাকে খেয়ে ফেলে! 

তাহলে যদি প্রাণিদের আচার আচরণ এর সাথে মানুষেরও আচার আচরণ মিক্স করতে হয় তাহলে সমকামীতার মত ক্যানিবালিজমও সেইম ভাবে সঠিক। 

মিনার:- হুম। 

[ সুরুজ একটু এসব শুনে বিরক্ত হলো নিজের দলদের বিরুদ্ধে। তাও কি একটা ভেবে অন্য কথা বলতে লাগলো ]

সুরুজ:- আচ্ছা, একটা প্রশ্ন ছিলো। যেটা মিনার করেছিলো। প্রশ্নটা হলো তুই যে বললি আমরাও অনেক সময় নরখাদকের থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে যাই এর মানে কি? 

মুহাম্মদ আলী:- এই দেখ। আমরা নরখাদক এর কথা ভেবেই বুঝতে পারছি যে তা কত নিকৃষ্ট ও কতটাই নিচুমানের ঠিক? 

সুরুজ:- হুম। 

মুহাম্মদ আলী:- এমন নিকৃষ্ট কাজের থেকেও নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে গীবত করা। আল্লাহ বলেন,,, 

[৪৯:১২] আল হুজরাত

يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنُوا اجتَنِبوا كَثيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعضَ الظَّنِّ إِثمٌ وَلا تَجَسَّسوا وَلا يَغتَب بَعضُكُم بَعضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُم أَن يَأكُلَ لَحمَ أَخيهِ مَيتًا فَكَرِهتُموهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوّابٌ رَحيمٌ

হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তাওবা কবূলকারী, অসীম দয়ালু।

সুতরাং আল্লাহ আমাদের সকলকে এসব থেকে রক্ষা করুক। আল্লাহ এসব হারাম ফিতনা থেকে এবং গিবত থেকে আমাদের সকলকেই হিফাজত করুক। আমীন

মিনার:- আজকের আলোচনাটা যদিও অন্য রকম ছিলো। তবুও ভালো লাগলো, একসাথে বিজ্ঞান, ইতিহাস, ফিতনা, আর সতর্কতা পেলাম। আগামীর দিনগুলো এবং অপশক্তি গুলো কিভাবে বাজে কাজ গুলো প্রমোট করে যাচ্ছে। আমাদেরকে সচেতন হওয়া দরকার,সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালানো উচিত ওদের নোংরা অপসংস্কৃতি রুখে নতুন উদ্যমে ইসলাম কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা এবার চল। মাগরিবের সময় চলে এসেছে। সালাত পড়ে আবার বাসায় যেতে হবে কাজ আছে। 

[ সকলের প্রস্তান ]

কফির চাচা:- (মনে মনে) এই পোলাপানগুলা সেই কখন থেইকে কিসব পকরপকর করতাছে। কইত্তে যে আসে এসব ফাবলিক। ফাবলিক মহল মারাত্মক! পরিবেশটা অনেক সুন্দর, কোন হইচই নাই। যাগ্গে বাঁচা গেলো............




Footnote

[i]


Post a Comment

0 Comments