দাহ বনাম কবর তর্কের অবসান!

মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২৩

✒️Author:- Aminur Rashid
বিষয়:- দাহ বনাম কবর তর্কের অবসান! 





__________________________________________________________________________________________

বহুদিন যাবৎ

ঢাকায় থাকলো বড় মাকে দেখতে মুহাম্মদ আলী, জানুয়ারি থেকে মার্চ চলে এলো। অবশেষে বড় মাকে দেখা শেষ হওয়ার পর আবারো রয়না দিলো সবাই নিজ গন্তব্যে,,,,

অবশেষে,, চায়ের দোকানে সবাই মুহাম্মদ আলী, অজয়, সুরুজ ও মিনার।

মিনার বলতে লাগলো,,

মিনার:- যাক তোর বড় মা সুস্থই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ

মুহাম্মদ আলী:- হুম আলহামদুলিল্লাহ। সাথে বেড়ানোও হলো সাবাইকে দেখেয় আসলাম।

অতঃপর চা শেষ করে সবাই একসাথে হাঁটতে লাগলো।

হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটা কবরস্থান ছিলো। সেই কবরস্থান থেকে আরো হাঁটতে হাঁটতে একটা কফির দোকান,,

হঠাৎ অজয় বলতে লাগলো,,

অজয়:- এই একটা কথা বলি, আসো কফির দোকানটায় একটু বসি।

মুহাম্মদ আলী:- কেনো? একটু আগেই তো চা খেয়ে এলাম।

অজয়:- না এখন কিছু খাবো না। কিছু কথা আছে তাই বলছিলাম।

মুহাম্মদ আলী:- ও আচ্ছা। তাহলে চল যাই।

[ কফির দোকানে সবাই বসলো মুহাম্মদ আলী বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- হুম বলো কি বলতে চাও অজয়।

অজয়:- এই যে আমরা হেঁটে আসলাম। তোমার চোখে সেই বড় কবরস্থান এর কথা মনে আছে। যেটা পার হয়ে আসলাম।

মুহাম্মদ আলী:- হুম। তো?

অজয়:- এই কবর নিয়েই কিছু কথা বলতাম।

[ সুরুজ, মিনার আর মুহাম্মদ আলী বুঝতে পেরেছে অজয় কি বলবে। ]

মুহাম্মদ আলী:- হুম বলতে থাকো।

অজয়:- আমার নিজ গবেষণার কথাই বলি? আমার নিজ গবেষণা ও চিন্তাভাবনা অনুসারে কবর থেকে দাহ কেই উত্তম ও যৌক্তিক মনে হয়।

[ সুরুজ, মিনার বুঝতেই পারলো বিরাট তর্ক শুরু হতে যাচ্ছে। তারা চুপচাপ শ্রবণ করছে ]

মুহাম্মদ আলী:- তোমার চিন্তাভাবনা বলো।

অজয়:- এই যে তোমরা তোমাদের লাশ নিয়ে এতো আবেগ দেখাও ও দাহ এর বিরোধিতা করো ভুল। দাহ এ যেমন অগ্নিদগ্ধ হয় লাশ ঠিক একইভাবে কবরে পোকামাকড়ে পচে গলে যায় লাশ। তাহলে লাশের প্রতি আবেগ আর দাহের বিরোধীতা ভুল নয়?

মুহাম্মদ আলী:- সত্য কথা বলতে আমিও একমত যে লাশের প্রতি এতো আবেগ না থাকাই দরকার। আমরা সবাই জানি লাশের কোন মূল্যই নেই। তবে একটা কথা। আমরা যেহেতু মানুষ তাই আমাদের উপর আবেগ বিষয়টা কাজ করে আর সেটা মরা লাশের উপরেও।

আবেগ নিয়েই মানুষ। তাই লাশের প্রতিও আবেগ কাজ করে কিন্তু লাশের কোনই মুল্য নেই।

এখন একটা জিনিস তুমি খেয়াল করো। সেই সময় আমরা সবাই প্রচুর আবেগি হয়ে যাই। তখন দাহ কিন্তু আমাদের আবেগ কে আঘাত করে।

তখন আমাদের আবেগ প্রচুর থাকে আর সেই সময় যখন দেখা যায় তাদের প্রিয়জনকে কেউ আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে তখন তার কাছে সেটা কষ্টকর ও নিষ্ঠুরতা মনে হয়।

সে দেখছে তার চোখের সামনেই তার প্রিয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

অজয়:- কবরেও তা পচে গলে যায়।

মুহাম্মদ আলী:- আমার কথা শেষ করতে দেও। এই যে আমাদের কেউ মারা যায়। তখন সেই মূহুর্তে আমাদের আবেগ প্রচুর থাকে এবং আমরা খুব শোক হত থাকি Right?

অজয়:- হুম।

মুহাম্মদ আলী:- কিন্তু কিছুদিন পর আস্তে আস্তে আবেগ চলে যায় Right?

অজয়:- হুম।

মুহাম্মদ আলী:- এখন এটাই মূল কথা দাহের সময় আমরা তখন আবেগময় থাকি আর চোখের সামনে সেটা পুড়ানো হয় যা অনেকে মানতে পারে না।

অন্যদিকে কবরের পোকামাকড় এসব কিন্তু সেই সময় থাকে না। কবর দেওয়ার পর পচে গলে যায়। কিন্তু কবর দেওয়ার মূহুর্তে কিন্তু আমরা আমাদের লাশের উপর কোন ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ্য করি না।

তার পর যখন ফিরে আসি তখন কবরে পচে গলে গেলেও সেটা আমাদের সচক্ষে না হওয়ায় আমরা আবেগটা কমিয়ে আনতে পারি। অন্যদিকে দাহের সময় সচক্ষে আমরা আমাদের প্রিয়জনকে পুড়তে দেখি যা সেই সময় অনেকেরই নিষ্ঠুর এনে হয়। কারণ সেটা সচক্ষে হয়ে থাকে তাই কষ্টটাও ও আবেগটাও বেশি।

অন্যদিকে কবরের বেলায় কেউ সচক্ষে বিষয়টা না দেখায় তারা নিজেদের আবেগকে সেই তুলনায় আঁটকে রাখতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ যদি তোমার বাবার লাশের উপর কেউ চাকু দিয়ে আঘাত করে তখন তোমার কেমন লাগাবে!? আমরা জানি যে লাশের কোন মূল্য নেই তার পরেও আবেগটা কাজ করবে এটাই সাভাবিক। মানুষ হলে আবেগ থাকবেই।

তাই সচক্ষে লাশ পুড়ানোর থেকে কবর দেয়াতে আবেগটা অনেকটাই রক্ষা পায়।

কিন্তু আমি আবারো বলছি লাশের কোন মূল্য নেই। লাশ এর ক্ষয় হবেই সেটা দাহের মাধ্যমে হোক বা কবরের মাধ্যমে। শুধু একটাই পার্থক্য দাহের তুলনায় কবর আবেগকে রক্ষা করে কারণ। দাহের সময় লাশ সরাসরি ক্ষত হয় যা সেই মূহুর্তে খুবি বেদনাদায়ক দেখা যায় কিন্তু কবরের সময় সেখান থেকে চলে আসা হয়। কোন ক্ষত পরিলক্ষিত না করেই। আশা করি এতটুকু বুঝতে পেরেছো।

অজয়:- হুম এতটুকু বুঝলাম। আবেগ তো গেলোই এবার বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে আসি?

মুহাম্মদ আলী:- হুম অবশ্যই।

অজয়:- এই যে দাহ এই দাহ সংক্রামিত লাশের ক্ষেত্রে উত্তম।

মুহাম্মদ আলী:- সংক্রামণ রোগ না হলে কি তাহলে কবর দেওয়াই উত্তম মেনে নিলে? নাহলে সাধারণ মৃত্যুর লাশকে দাহ করার উপর কোন উপকারীতা বা উত্তম কিছু তুলে না ধরলেও সমস্যার ব্যপারে দাহকে উত্তম দাবী করা আসলেই অযৌক্তিক!

মোটকথা হলো, তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নেই কারো সংক্রমণ রোগ হলে দাহ উত্তম সেটা হবে কারণবশত সাধারণ মৃত্যুর জন্য নয়। আর কারণবশত ইসলামে এমন বিষয় জায়েজ রয়েছে। যেমন কোন ব্যক্তি যদি বিস্ফোরণে মারা যায় এবং তার শুধু কংকাল থেকে যায় তাহলে গোসল না করিয়ে কবর দেওয়া যায়। আবার অনেক বন্যার কারণে কবর দেওয়া অসম্ভব হয়ে গেলে জলে ভাসিয়ে দেওয়া যায়।

এসব হচ্ছে কারণবশত ও সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার জন্য। নাহলে স্বাভাবিক কোন সমস্যা না থাকলে কবরই উত্তম। এমন কি সংক্রামণ রোগ হলেও কবর দেওয়া যাবে। [ https://www.jugantor.com/covid-19/294497/ ]

[ সুরুজ আর মিনার গভির মগ্ন হয়ে শ্রবণ করছে তাদের কথাগুলো ]

অজয়:- ইয়ে মান,, প্রাকৃতিক ও যৌক্তিক দিক দিয়েই দেখো। কবরের কারণে কত বিঘা বিঘা জমিন অপচয় হচ্ছে। দাহের সময় সেটা হচ্ছে না। এতো জমি অপচয় হচ্ছে যা খুবি মারাত্মক ক্ষতি। তাহলে তুমি বলো কবর কিভাবে উত্তম দাহের তুলনায়!?

[ মুহাম্মদ আলী একগ্লাস পানি পান করে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- তোমার যুক্তি টা ভালোই লাগলো। তুমি বলতে চাচ্ছ যে কবরে জমি অপচয় হয়। তাই দাহ উত্তম ঠিক না?

অজয়:- হুম।

মুহাম্মদ আলী:- শুনো তাহলে অজয়। আমরা যে পাবলিক কবরস্থান গুলো দেখি। এসব কবরস্থান এ যখন লাশ দাফন হয় ঠিক একই কবরে ১-২ বা ৫-১০ বছর পর নতুন লাশ দাফন করা হয়। যদি কবর খনন করে পুরনো লাশের কিছু হাড়গোড় পাওয়া যায় তা সরিয়ে সেখানেই নতুন লাশ দেওয়া জায়েজ।

তাহলে এবার দেখো। একই কবর কিন্তু লাশের জন্য বার বার ব্যবহৃত হয়। একই কবরে কয়েক বছর পর নতুন লাশ দেওয়া হয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে জমি অপচয় হচ্ছে না কারণ একই কবর সারাজীবন ব্যবহার হতে থাকবে নতুন লাশ দাফন করা হবে।

এ থেকে আমরা বুঝলাম। কবরের একই জমি লাশের জন্য বার বার ব্যবহৃত হয়। Right?

অজয়:- ইয়ে মানে হুম।

মুহাম্মদ আলী:- অন্যদিকে দাহের সময় প্রচুর হুম, প্রচুর পরিমাণে গাছপালা অর্থাৎ কাঠের প্রয়োজন হয়। একটি লাশ পুড়াতে অনেক কাঠে প্রয়োজন হয় যা যাকে গাছপালা অপচয় বলে যা প্রকৃতির জন্য খুবই খারাপ। এভাবে গাছপালা অপচয় হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়তে থাকবে। শুধু তাই নয় দাহের মধ্যমে বায়ু দূষণ এবং দাহের স্থান এ মাটি দূষণ সহ গাছপালার ক্ষতি হয়। কাঠ অপচয় হয়।

ঠিক না?

অজয়:- (নিশ্চুপ)

মুহাম্মদ আলী:- এবার একটা বিষয় খেয়াল করো। একটা লাশকে দাহ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঠ প্রয়োজন হয়। সেই কাঠ গুলি শুধু একজন লাশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তার পর কাঠগুলো ছাই হয়ে যায় লাশের সাথে। সেই কাঠ পুনরায় ব্যবহার হয় না। প্রতিটা লাশের পিছনে প্রচুর কাঠ যায়।

অন্যদিকে কবরের বেলায় কোন কবরই একবার ব্যাবহারের জন্য থাকে না কয়েক বছর পর সেখান অন্য লাশ দাফন করা হয়। কিন্তু দাহের সময় কাঠ গুলি পুড়ানো হয় যার কারণে অন্য লাশের ক্ষেত্রে আবার নতুন করে গাছপালার অপচয় হয়। একটি লাশের পিছনে যে প্রচুর কাঠ যায় তা আর অন্য লাশের ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা যায় না কারণ সেই কাঠ পুড়ে ছাই।

কিন্তু কবর ঠিকই ব্যাবহার হচ্ছে।

সুতরাং একই কবর বার বার ব্যাবহার হচ্ছে। দাহের মতন প্রতি লাশের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে কাঠ অপচয় হচ্ছে।

তাহলে কবরই এখানে উত্তম। দাহের একই কাঠ বার বার বার ব্যাবহার করা যায় না কিন্তু একই কবর বার বার ব্যাবহার করা যায়। আর এভাবেই চলতে থাকে।

অজয়:- (নিশ্চুপ)

[ হঠাৎ বিপ্লব আমাদের সামনে হাজির। বিপ্লব সবই শুনেছে। অতএব আজয়ের বদলে বিপ্লব দা তর্ক শুরু করল ]

বিপ্লব:- এসব যুক্তি কাজে দিবে না মুহাম্মদ আলী। তোমাদের কবরেও তো বাঁশ ব্যাবহার হয়।

মুহাম্মদ আলী:- হুম হয় তা খুবই অল্প। পর বাঁশ গুলি ছোট সাইজের থাকে। দাহের ক্ষেত্রে প্রচুর কাঠ ব্যবহার হয়।

বিপ্লব:- কবরের কারণে মাটি দূষণ হয়।

মুহাম্মদ আলী:- মেনে নিলাম মাটি দূষণ হয়। তবে একই সাথে কবর উদ্ভিদের সার হিসেবে উদ্ভিদের উপকার করে। আর কবরে মাটির কথাই বলা যায় তবে দাহে মাটি-বায়ু উভয় দূষিত!

কবরে কিছু ক্ষতি হলেও উপকার আছে। অন্যদিকে দাহের ক্ষেত্রে বায়ু দূষণ ও দাহের স্থান মাটি দূষণ হয় তবে কোন প্রকার উপকারী নেই দাহের ক্ষেত্রে।

তাই দাহকে উত্তম বলে ঝামেলা করা অযৌক্তিক।

বিপ্লব:- আরে মিয়া তোমরা তো লাশের যে দামি কাপড় পড়াও এতে তো দাফন করারই খরচ বেশি।

মুহাম্মদ আলী:- দাহ হোক আর কবর খরচ আছেই। আর আরেকটা কথা আল্লাহর রাসুল কখনো বলে নো যে দামি কাফনের কাপড় দিতে বরং কমদামিই ও ঝাকঝমকহীন কাপড় দিতেই বলেছেন।

আরও একটা কথা। এই যে তোমরা বার বার জমি নিয়ে কথা বলছো। জমি কিন্তু শুধু কবরেই নয় দাহেও ব্যাবহার হয়।

এই যে শ্বশান যেখানে লাশ দাহ করা হয়। সেখানে তো কেউ ঘরবাড়ি বানাবে না যেমনটা কবরে বানাবে না। তো জমি ব্যাবহার উভয়েই হয়। দাহ যায় প্রচুর কাঠ। দাহে নেই কোন উপকার শুধু অপকারই বিদ্যমান কিন্তু কবরে উপকারো আছে। কবর দিলে মৃতদেহ এক সময় সার হয়ে যায়। এতে জমিন আরও উর্বর হয়। সেখানে আরও গাছ জন্মায়। এটা পরিবেশের জন্য ভালো।

এবার তুমি বলো কবর কি দাহের থেকে নিচু তম??

[ বিপ্লব ও অজয় চুপচাপ ]

হঠাৎ সুরুজ বলল:- আচ্ছা একটা কথা যদি কবরে যদি আযাব হয় তাহলে পানিতে আর অগ্নিতে পুড়ালে কি কোন আযাব হবে না।

মুহাম্মদ আলী:- কবর মানেই মাটির নিচে বুঝায় না। যে যেখানেই মরবে সেটাই তার কবর।
একটি হাদিসে উল্লেখ আছে,,

حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ كَانَ رَجُلٌ يُسْرِفُ عَلَى نَفْسِهِ، فَلَمَّا حَضَرَهُ الْمَوْتُ قَالَ لِبَنِيهِ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِي ثُمَّ اطْحَنُونِي ثُمَّ ذَرُّونِي فِي الرِّيحِ، فَوَاللَّهِ لَئِنْ قَدَرَ عَلَىَّ رَبِّي لَيُعَذِّبَنِّي عَذَابًا مَا عَذَّبَهُ أَحَدًا‏.‏ فَلَمَّا مَاتَ فُعِلَ بِهِ ذَلِكَ، فَأَمَرَ اللَّهُ الأَرْضَ، فَقَالَ اجْمَعِي مَا فِيكِ مِنْهُ‏.‏ فَفَعَلَتْ فَإِذَا هُوَ قَائِمٌ، فَقَالَ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ قَالَ يَا رَبِّ، خَشْيَتُكَ‏.‏ فَغَفَرَ لَهُ ‏"‏‏.‏ وَقَالَ غَيْرُهُ ‏"‏ مَخَافَتُكَ يَا رَبِّ ‏"‏‏.‏

আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, পূর্বযুগে এক লোক তার নিজের উপর অনেক যুল্‌ম করেছিল। যখন তার মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এলো, সে তার পুত্রদেরকে বলল, মৃত্যুর পর আমার দেহ হাড় মাংসসহ পুড়িয়ে ছাই করে নিও এবং প্রবল বাতাসে উড়িয়ে দিও। আল্লাহ্‌র কসম! যদি আল্লাহ্‌ আমাকে ধরে ফেলেন, তবে তিনি আমাকে এমন কঠিনতম শাস্তি দিবেন যা অন্য কাউকেও দেননি। যখন তার মওত হল, তার সঙ্গে সে ভাবেই করা হল। অতঃপর আল্লাহ্‌ যমীনকে আদেশ করলেন, তোমার মাঝে ঐ ব্যক্তির যা আছে জমা করে দাও। যমীন তা করে দিল। এ ব্যাক্তি তখনই দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ্‌ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে তোমাকে এই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করলো? সে বলল, হে, প্রতিপালক তোমার ভয়। অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হল। অন্য রাবী -------- স্থলে --------- বলেছেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৮১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD

এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে যেখানেই কিংবা যে অবস্থাতেই মরেননা কেনো সেটাই তার কবর।

তবে ইসলামিক পদ্ধতি হলো মাটিতে কবর দেওয়া।

[ বিপ্লব মোবাইল থেকে একটা লেখা পড়তে লাগলো ও শুনাতে লাগলো মুহাম্মদ আলী কে ]

বিপ্লব:- National Botanical Research institute of India জানিয়েছে যে মৃতদেহ অগ্নিতে আহুতি দেয়ার সময় যে হবন সামগ্রী ব্যবহৃত হয় তা দিয়ে মৃতদেহ পোড়ালে উৎপন্ন মারকারির পরিমান নূন্যতম হয় ফলে পরিবেশের প্রায় কোন ক্ষতিই হয়না বরং এতে অধিকাংশ ইনফেকশাস ব্যক্টেরিয়া মারা যায়!বর্তমানে অনেকক্ষেত্রেই মৃতদেহ দাহ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে Crematorium যার ফলে বায়ুতে  কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান শুন্য।

মুহাম্মদ আলী:- হা হা হা বিপ্লব,, তোমার কথা মেনে নিলাম। যে দূষণ কম হবে। তবে এটা তো তোমার ধর্মের নিয়ম না তুমি তো বৈজ্ঞানিক জিনিস ব্যাবহার করে দাহ করছো। এটা তো আর তোমার ধর্মশাস্ত্রে ছিলো না যে এসব ব্যাবহার করে দাহ করতে।

হা হা হা ধর্মের শাস্ত্রকে বৈজ্ঞানিক দ্রব্য ব্যাবহার করে পাল্টে দেওয়া। যেখানে কিনা প্রাচীন থেকেই এসব ব্যাবহার ছাড়াই দাহ ছিলো। এবং এটাই তোমাদের শাস্ত্র।

এখন বৈজ্ঞানিক দ্রব্য ব্যাবহার করে দূষণ কমাতে পারো। তবে সেটা তো শাস্ত্র নিয়ম হলো না কারণ শাস্ত্র তো আর বলে নি এসব দ্রব্য ব্যাবহার করতে।

তাহলে তো বলব তোমরা ধর্মের নিয়মকে বিকৃত করে সহজ যৌক্তিক বানাচ্ছো।

বিপ্লব:- ধুর পাগল। তুই কি জানিস ইদানিং পোড়ানোতে এসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লী। ফলে গাছ তো কাটতে হচ্ছেই না, উল্টো খোলা অবস্থায় পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধের হাত থেকেও মিলেছে মুক্তি; যা দাহ ব্যবস্থাকে করে তুলেছে আরো গ্রহনযোগ্য।"

মুহাম্মদ আলী:- শরিয়তের নিয়ম বা ধর্মের নিয়মকে বাদ দিয়ে অন্য নিয়মে দাহকে উত্তম বানানো আসলেই শিশুসুলভ ব্যাপার! হিন্দু ধর্মের বিধানই হলো নির্দিষ্ট জায়গা অর্থাৎ শ্বশানে কাঠ দিয়ে অগ্নিদাহ করা। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে কি ধর্মীয় বিধানকে বিকৃত করা তো খুবি নিম্নমানের বিষয়।

হিন্দু ধর্মে দাহ এর নিয়ম ও প্রাচীন থেকে যেটা চলে আসছে সেটাকে উত্তম প্রমাণ না করে বৈদ্যুতিক ভাবে কাঠ-ধোঁয়া ছাড়া দাহকে উত্তম বলা হচ্ছে।

আরে দাদা বৈদ্যুতিক ভাবে কাঠ-ধোঁয়া ছাড়া পুড়ানো তো ধর্মের কথা নয়! ধর্মের বিধান নয়। ধর্মের কথা তো সেটাই যেটা চলে এসেছে এবং তুমিও যার পক্ষে। সুতরাং আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে নিজ ধর্মের বিধানকে পাল্টে সেটাকে আবার উত্তম উত্তম বলে চেঁচামেচি করা আসলেই হাস্যকর।

তাহলে মুসলিমরাও লাশকে প্রযুক্তি-বিজ্ঞান দ্রব্য ব্যাবহার করে দাফন করবে!

সেটা কি শরিয়ত হবে ধর্মের বিধান হবে!?

কখনোই নয়! বরং যে ধর্ম আমাদের বলেছে সেটাই করতে হবে অন্য উপায়ে করা যাবে না।

যেমন বড়ই পাতার গরম জলে গোসল না করিয়ে আম পাতা দিয়ে করলে সেটা আর শরিয়ত মুতাবেক হয় না। সুতরাং এমন বিষয় logical fallacy যে ধর্মের বিধানকে ত্যাগ করে বিজ্ঞানের ধার ধেরে নিজ মতো দাহ করে উত্তম উত্তম বলে চেঁচামেচি করা।

দাহকে যদি উত্তম বলতেই হয় তাহলে যেমন নিয়ম হিন্দুধর্মে সেই নিয়মকেই উত্তম প্রমাণ করতে হবে। বিকৃত নিয়ম বা মনগড়া নিয়মকে নয়!

আর বৈদ্যুতিক চুল্লি তো চুল্লিই! দেহ যখন দাহ হবে তখন তো ঠিকই ধোঁয়া বের হবে। সেটা মানুষের কাছে না আসলেও বায়ু দূষণ তো ঠিকই করবে। তাই না!?

আর তর্কের খাতিরে মানতে হলে এটাও মানতে হবে বৈদ্যুতিক চুল্লি আবিস্কারের আগে দাহ নিয়ম উত্তম ছিলো না বরং খারাপ ছিলো। আইমিন ঈশ্বরের নিয়মকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে উত্তম বানানোর ধান্ধা আরকি! খুবি হাস্যকর।

[ সবাই নিরব কিছুক্ষণ পর বিপ্লব বলে উঠলো ]

বিপ্লব:- হিন্দু শাস্ত্র মতে, আগুন হলো দেবতা এবং আগুনের স্পর্শেই সবকিছু পুড়ে খাঁটি হয়। এজন্য রবি ঠাকুর বলেছেন, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে। বাস্তবেও সকল শুভ কাজের শুরু হয় আগুন দিয়ে; একারণেই ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেই আগুন দিয়ে ধূপকাঠি বা আগরবাতি জ্বালিয়ে দিন শুরু করে; এখানে হিন্দু মুসলমানের আচরণে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা যত খাবার খাই, তার প্রায় ৯৫% আগুনের সাহায্যে তৈরি। এজন্য খুব সহজেই এটা ধরে নেওয়া যায় যে, আগুনের সাহায্যেই আমরা বেঁচে আছি। ধর্মকে সরিয়ে রাখলেও, বিজ্ঞান মতে, সূর্য থেকেই পৃথিবীর সৃষ্টি আর সূর্যের আলোর জন্যই পৃথিবীর উপরে বসবাসরত সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের সৃষ্টি। এই সূর্য হিন্দুদের একটি দেবতা এবং তা একটি অগ্নিপিণ্ড। সুতরাং সৃষ্টির শুরু যেমন আগুন দিয়ে, তেমনি মানুষের নশ্বর দেহের সমাপ্তিও ঘটছে সেই চিতার আগুনে। আবার মাটির দেহ, পোড়ানোর ফলে তা ছাইয়ে পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই মিশে যাচ্ছে, যা শক্তির নিত্যতার সূত্রের মধ্যে পড়ে; ফলে মৃতদেহ পোড়ানোয়- মাঝখানে আপনাকে - পোকামাকড়ের খাদ্য হতে হচ্ছে না বা কিছু পোকা-মাকড় সৃষ্টির কারণ হয়ে প্রকৃতিরও ক্ষতি করতে হচ্ছে না।

মুহাম্মদ আলী:- অযৌক্তিক কথাবার্তার লিস্ট যাকে বলা আরকি! এসব দলিল অযৌক্তিক তো বটেই সাথে হাস্যকর বৈ কিছু নয়!

এখন পর্যন্ত দাহ যে কবরের থেকে উত্তম তার কোন প্রমাণ তো পেলামই না বরং কিছু কু-যুক্তিই পেলাম!

উপরের আলোচনায় সেটাই স্পষ্ট!

আরে দাদা, আগুন আমাদের অনেক কাজে ব্যাবহার হয়, আমরা যত খাবার খাই, তার প্রায় ৯৫% আগুনের সাহায্যে তৈরি করে, এসব যাই বলেন না কেনো এসব থেকে কখনোই প্রমাণ হয় না যে লাশ দাহ করা উত্তম।

যেমন উদাহরণ দেওয়া যায়,,

"পানি আমাদের অনেক কাজে। এ কারণেই পানিকে জীবনের আরেক নাম বলা হয়। পানি ছাড়া জীব বাঁচে না। মানুষের দেহে ৬০-৭০ ভাগই পানি!

এই কারণে মৃত লাশকে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়াই উত্তম"

কি কেমন লাগছে আমার উদাহরণটি? নিশ্চয়ই খুবি অযৌক্তিক তাই না? ঠিক একই অযৌক্তিক দাবী হলো আগুনের ক্ষেত্রে।

পানি আমাদের কাজে লাগে বলে যেমন প্রমাণ হয় না পানিতে লাশ ভাসিয়ে দিলে উত্তম।

ঠিক একই ভাবে আগুন আমাদের কাজে ব্যাবহার হলে প্রমাণ হয় না যে আগুনে দাহ করাই উত্তম।

আসলে ব্যাপারটা খুবি অযৌক্তিক ও হাস্যকর!

আর রবি ঠাকুরের বক্তব্য থেকেই তো আর প্রমাণ হয় না কবর থেকে অগ্নিদাহ উত্তম,,

"রবি ঠাকুর বলেছেন, আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে"

"সারা দুনিয়া বলেছে, পানির অপর নাম জীবন"

তাহলে কি পানিতে ভাসানোই উত্তম!?

আসলেই পুরোপুরি নিম্নমানের যুক্তি!

[ কথাবার্তা আর হচ্ছে না তর পরেও অজয় কথা বলতে লাগলো ]

অজয়:- একটি কথা এই যে আমরা দাহ করি এটি মানবিক দিক দিয়ে উত্তম। কবরের বেলায় লাশকে অনেকে ধর্ষণ করতে পারে। এমন কি কবর খোড়ে  লাশ ধর্ষণ করতে পারে।

মুহাম্মদ আলী:- তুমি আর কোন যুক্তি পেলে না। শুনোই ভাই কেউ কেউ ধর্ষণ করে লাশকে সেটা তো ইসলামের দোষ না। আর দাহের পূর্বেও তো লাশকে ধর্ষণ করা যায়। এসব সেই নরখাদক অমানুষদের পক্ষেই সম্ভব। ইসলাম তো ধর্ষণ কেই নিষিদ্ধ করে। হিন্দু ধর্মে ধর্ষণ সম্পর্কে কিছুই বলে নি তাহলে তো হিন্দু ধর্মের লাশ ধর্ষণ হলাল বলা যায়!???? আর হিন্দুদের একপ্রকার সাধুরা লাশ ধর্ষণ করে দাহের নিয়ম মেনেই। [ https://www.bbc.com/bengali/news-46849926 ]

[ অজয় নিশ্চুপ ]

মুহাম্মদ আলী:- আরেকটা কথা দাহ করার নিয়ম মানলেও যে লাশ ধর্ষণ হয় না তা ভুল বৌদ্ধ ধর্মের ত্রিপিটকে ভিক্ষুদের লাশ ধর্ষণের অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। [ https://uncovertrue.blogspot.com/2020/04/blog-post_84.html?m=1 ]

অনেক কথা হলো। এবার সবাই যার যার বাসায় যাই।

[ অবশেষে তর্কের অবসান ]

Post a Comment

0 Comments