অভিযোগঃ কুরআনের সম্ভবত,
হয়তো, আশা করা যায় কেন বলা হলো? যেখানে আল্লাহ আলিমুল গায়েব, অতিত বর্তমান ভবিষ্যতের সব কিছুই জানেন!
✒Answer by: Aminur Rashid
প্রশ্নঃ ভাই একটা প্রশ্নের উত্তর লাগবে আমার । একজন ব্যক্তি মুসলিম সেজে এই প্রশ্নটা করছে সবাইকে । ভাই সে একটা পোষ্ট করেছে আমি কপি করে দিচ্ছি
আসসালামু আলাইকুম।
কিছু প্রশ্ন করছি যারা বুঝেন একটু বুঝাবেন।
আল্লাহ হচ্ছেন আলিমুল গায়েব। তিনি গায়েবের সকল কিছু জানেন। তিনি জানেন অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। তিনি জানেন মানুষের অন্তর যা চিন্তা করে তাও।
এখন কোরআনে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে যা অনিশ্চয়তা বা সঠিক জানে না, এরকম শব্দ সংবলিত আয়াত আছে। যা আল্লাহর বৈশিষ্ট্য, কর্ম, সিফাতের সাথে যায় না।
তাহলে এই কথা গুলো কার? মানে কোরআনের এই বাক্য বা কথা গুলো কে বলতেছেন? আল্লাহ নাকি অন্য কেউ? কারণ আল্লাহ তো সকল কিছুই জানেন। সকল ঘটনার অতীত, বর্তমান ও ভবিষত সবই তিনি অবগত। তাহলে কোরআনে উক্ত বাক্য গুলো কার? বাক্য গুলোর কোনটাতেই আল্লাহ সরাসরি উক্তি করতেছে এমন টা আমার কাছে মনে হচ্ছে না, তাহলে কে এই কথা গুলো বলেছে?
যেমনঃ
يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنِ السَّاعَةِ ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ ۚ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا◆
লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই। (33:63)
★ উক্ত আয়াতে আল্লাহ শব্দটি এসেছে নাম পুরুষ বা থার্ড পার্সন হিসেবে। আয়াতে দেখতে পারছি বলা হচ্ছে কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছে আছে। বলা হয়নি “কেয়ামতের জ্ঞান আমার কাছে আছে”
২য় তো বলা হচ্ছে “সম্ভবত কেয়ামত নিকটে।” অর্থাৎ অনিশ্চিত শব্দ। সম্ভবত নিকটে, হতেও পারে আবার নাও পারে।
আল্লাহ হলে তো বলতেন “কেয়ামতের জ্ঞান আমার কাছে, কেয়ামত খুবই নিকটে।”
"সম্ভবত কেয়ামত নিকটে" এটা যিনি বলছেন তিনি কে? এইটা নিশ্চিত যে সে আল্লাহ নন। কারণ আয়াতের শুরুতেই বলা হচ্ছে কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছে। বক্তা দাবি করে নি এই জ্ঞান তার কাছে, সে জন্য তিনি সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আয়াত টি ভাল করে লক্ষ্য করুন, উক্তিটি কার? উক্তিটি যার সে নিজেও জানে না কেয়ামত কখন হবে। তাই সে ঐভাবেই বলেছে “ এবং এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে। কেয়ামত সম্ভবত নিকটে।”
অনুরুপ আরেকটি আয়াত,
اللَّهُ الَّذِي أَنزَلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَالْمِيزَانَ ۗ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ قَرِيبٌ◆
আল্লাহই সত্যসহ কিতাব ও ইনসাফের মানদন্ড নাযিল করেছেন। আপনি কি জানেন, সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটবর্তী। (42:17)
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ◆
ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। (47:22)
★ যিনি সব জানেন, তিনি কি জানেন না ক্ষমতা পেলে মানুষ কি করবে? এখানে বক্তা যে সে নিশ্চিত নয় তাই তিনি সম্ভবত শব্দ ব্যবহার করেছেন। সম্ভবত বা হতে পারে এরকম অনিশ্চয়তা শব্দ আল্লাহ বলতে পারেন না। আল্লাহ বললে তো এরুপ হত যে , “ক্ষমতা লাভ করলে নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।”
فَقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۚ لَا تُکَلَّفُ اِلَّا نَفۡسَکَ وَ حَرِّضِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ عَسَی اللّٰہُ اَنۡ یَّکُفَّ بَاۡسَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ؕ وَ اللّٰہُ اَشَدُّ بَاۡسًا وَّ اَشَدُّ تَنۡکِیۡلًا ◆
অতএব তুমি আল্লাহর রাস্তায় লড়াই কর। তুমি শুধু তোমার নিজের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর। আশা করা যায় আল্লাহ অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং শাস্তিদানে কঠোরতর। (4:84)
★ আশা করা যায় আল্লাহ কাফেরদের শক্তি প্রতিহত করবেন। এখানেও অনিশ্চিত শব্দ আশা করা যায়। তাহলে আল্লাহ কি নিশ্চিত নন? আল্লাহ কি নিজেই নিজের আশায় থাকেন? কেমন হয়ে গেল না?
আয়াত টি ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে আল্লাহ শব্দটি নাম পুরুষ হিসেবে এসেছে। বক্তা উত্তম পুরুষ। বক্তা নিশ্চিত নয় তাই বক্তা বলছে “আশা করা যায় আল্লাহ অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন”
আর আয়াতটা আল্লাহ বললে, আয়াতে আল্লাহ নিজে নিজেকে নাম পুরুষ বা থার্ট পার্সন রেখে উক্তি করতেন না, তিনি বলতেন নিশ্চয় “আমি শক্তিতে প্রবল” “আমি অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করব।”
عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یَّرۡحَمَکُمۡ ۚ وَ اِنۡ عُدۡتُّمۡ عُدۡنَا ۘ وَ جَعَلۡنَا جَہَنَّمَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ حَصِیۡرًا ◆
আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের উপর রহম করবেন। কিন্তু তোমরা যদি পুনরায় কর, তাহলে আমিও পুনরায় করব। আর আমি জাহান্নামকে করেছি কাফিরদের জন্য কয়েদখানা। (17:8)
★ এখানেও তিনি রহম করবেন কিনা নিশ্চিত নন। করতেও পারেন, নাও পারেন। এখানেও বক্তা নিশ্চিত নয়। আর এরুপ কথা তো আল্লাহর হতে পারে না। আল্লাহর হলে এরকম হত যে “আমি তোমাদের রব, আমি তোমাদের উপর রহম করব।”
فَأَمَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسَىٰ أَن يَكُونَ مِنَ الْمُفْلِحِينَ ◆
তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে। (28:67)
★ এখানেও অনিশিচত শব্দ, আশা করা যায়। অর্থাৎ বক্তা নিশ্চিত নয়। .
فَأُولَٰئِكَ عَسَى اللَّهُ أَن يَعْفُوَ عَنْهُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَفُوًّا غَفُورًا ◆
অতএব, আশা করা যায়, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (4:99)
★ এখানেও আশা করা যায়। অর্থাৎ ক্ষমা হতেও পারে নাও পারে এরকম বুঝাচ্ছে। অর্থাৎ বক্তা নিশ্চিত নয় যে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবে কিনা। কিন্তু যদি আল্লাহ হয়, আল্লাহ তো সব জানেন তিনি কেন নিজেই নিজের সমন্ধে অনিশ্চিত কথা বলবেন? তাছাড়া উক্ত আয়াতেও আল্লাহ শব্দ নাম পুরুষ বা থার্ড পারসন হিসেবে এসেছে। বরং আল্লাহর হলে এরুপ হত যে “আমি তাদেরকে ক্ষমা করব। আমি মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।”
عَسَى اللَّهُ أَن يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عَادَيْتُم مِّنْهُم مَّوَدَّةً ۚ وَاللَّهُ قَدِيرٌ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ◆
যারা তোমাদের শত্রু আল্লাহ তাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সম্ভবতঃ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সবই করতে পারেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। (60:7)
জবাবঃ প্রশ্নগুলোর ধরণ দেখে এটা পরিষ্কার যে প্রশ্নকর্তা আয়াত গুলি পড়েছে ঠিকিই কিন্তু বুঝতে পারে নি বা বুঝার চেষ্টাও করেননি। প্রশ্নকর্তা দৃষ্টি শুধু "সম্ভবত" নামক শব্দেই আবদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এর মাকসাদ কি তা তিনি আদৌ টের পাননি। তিনি আদৌ ভাষা, বচনভঙ্গি ও লেখার মাধুর্যতা ও হিউম্যান সাইকোলজি সম্পর্কে জানেন কিনা সন্দেহ আছে। যিনি উপরের সকল প্রশ্ন করেছেন তিনি যে কুরআনের বিরোধীতা করার জন্যই প্রশ্ন করেছেন তা অনেকটাই পরিষ্কার।
যাইহোক সেটা বিষয় না। এর জবাব গুলি ধাপে ধাপে দেয়া যাক।
ভূমিকা কাটসাটঃ প্রথম ভূমিকায় উনি বলেছেন আল্লাহ তায়ালা আ'লিমুর গাইব। তিনি জানেন অতিত, বর্তমান, ভবিষ্যত। জ্বী তিনি জানেন, তিনি জানেন মানুষের অন্তরের খবর এবং যা সে মুখে উচ্চারণ করে। সকল কিছুই তার জ্ঞানের আওতাভুক্ত।
[৪৩:৮৫] আয্-যুখরুফوَتَبارَكَ الَّذي لَهُ مُلكُ السَّماواتِ وَالأَرضِ وَما بَينَهُما وَعِندَهُ عِلمُ السّاعَةِ وَإِلَيهِ تُرجَعونَআর তিনি বরকতময়, যার কর্তৃত্বে রয়েছে আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সবকিছু; আর কিয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই আছে এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
এটা খুবই পুরনো টপিক, এটা কুরআনের ভাষাশৈলী। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বহু জায়াগায় দ্বিতীয় ব্যাক্তি, তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে কথা বলেছেন। মূল কথা আমাদের জন্য অর্থাৎ মানবজাতির জন্য সুন্দর বচনভঙ্গি ও কুরআনের ভাষাগত মধুরতাই এটি প্রমাণ করে। এরই সাথে থাকে শিক্ষা, উদ্দেশ্য সহ আরও নানান গুরত্বপূর্ণ ও হিকমাহ পূর্ণ বিষয়। তিনি এভাবে আমাদেরকে শিখান আমাদেরকে বুঝান আর তার ভাষাশৈলীও হয় অমায়িক।
যেমন সূরা ফাতিহা আমাদের শিক্ষার প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে। সূরা ফাতিহায় আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে তার কাছে চাইতে হয়, তিনি কেমন ইত্যাদি সহ আরও বহু কিছু। কুরআন একটি উচ্চমার্গীয় কিতাব। এটি মানবজাতির জন্য নাজিল হয়ছে এবং বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন কারণে। যেমন সূরা ফাতিহা একটি।
যেখানে আমরা বলি "সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার"
এখন কেউ যদি বলে আল্লাহ আবার কার কথা বলছেন! এটিই মূলত কুরআনের ভাষাগত মধুরতা। কুরআন আমাদেরকে নানান ভাবে শিখায়। সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহ সম্পর্কে জানা, বিচারদিবস সম্পর্কে জানা, সরল পথের প্রার্থনা করা। এটি আমরা প্রত্যেক নামাজে পাঠ করি।সূরা নাস, ফালাক দেখেন সেখানেও আমাদেরকে শিখানো হয়েছে কিভাবে পানাহ চাইতে হয়। আল্লাহ এভাবেই নানা বচনভঙ্গিতে আমাদের জন্য আয়াত দিয়েছেন। যা আমাদের শিখায় মুক্তির পথ কোনটি, শিখায় কিভাবে স্রষ্টাকে ডাকতে হয়, শিখায় আশাবাদী হতে, যোগায় সাহসীকতা, দেয় হিদায়াত, বাতলে দেয় সঠিক পথ।
এবার দাবীগুলোতে নজর দেয়া যাক,,,
দাবী ১ঃ লোকেরা আপনাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আপনি কি করে জানবেন যে সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটেই। (33:63)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ শব্দটি এসেছে নাম পুরুষ বা থার্ড পার্সন হিসেবে। আয়াতে দেখতে পারছি বলা হচ্ছে কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছে আছে। বলা হয়নি “কেয়ামতের জ্ঞান আমার কাছে আছে”
২য় তো বলা হচ্ছে “সম্ভবত কেয়ামত নিকটে।” অর্থাৎ অনিশ্চিত শব্দ। সম্ভবত নিকটে, হতেও পারে আবার নাও পারে।
.
আল্লাহ হলে তো বলতেন “কেয়ামতের জ্ঞান আমার কাছে, কেয়ামত খুবই নিকটে।”
.
"সম্ভবত কেয়ামত নিকটে" এটা যিনি বলছেন তিনি কে? এইটা নিশ্চিত যে সে আল্লাহ নন। কারণ আয়াতের শুরুতেই বলা হচ্ছে কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছে। বক্তা দাবি করে নি এই জ্ঞান তার কাছে, সে জন্য তিনি সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আয়াত টি ভাল করে লক্ষ্য করুন, উক্তিটি কার? উক্তিটি যার সে নিজেও জানে না কেয়ামত কখন হবে। তাই সে ঐভাবেই বলেছে “ এবং এর জ্ঞান আল্লাহর কাছেই আছে। কেয়ামত সম্ভবত নিকটে।”
আল্লাহই সত্যসহ কিতাব ও ইনসাফের মানদন্ড নাযিল করেছেন। আপনি কি জানেন, সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটবর্তী। (42:17)
জবাবঃ প্রথমত আয়াতেই বলা আছে যে কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর নিকটই। কথা হলো সম্ভবত নিকটে কেন বললেন। এ সম্ভবত শব্দকে হাইলাইট করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিষয়টি বুঝতে হবে আগে, আল্লাহ তায়ালার কাছে কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তবে রাসুল (ﷺ) এর কাছে কিয়ামতের পরিপূর্ণ জ্ঞান নেই। সুতরাং রাসুল (ﷺ) মানুষদের বলবেন সম্ভবত, হয়তো কেয়ামত নিকটেই। অর্থাৎ কেয়ামত নিকটে তোমরা সঠিক পথে এসো।
[৩৩:৬৩] আল আহ্যাবيَسأَلُكَ النّاسُ عَنِ السّاعَةِ قُل إِنَّما عِلمُها عِندَ اللَّهِ وَما يُدريكَ لَعَلَّ السّاعَةَ تَكونُ قَريبًاলোকেরা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, আর তোমার কি জানা আছে, কিয়ামত হয়ত খুব নিকটে!
এটাই কুরআনের উচ্চমার্গীয় ভাষাশৈলী। এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (ﷺ) কে শিখিয়ে দিচ্ছেন লোকদের বলতে যে "কিয়ামত হয়তো নিকটেই"
এ আয়াত থেকে ৩ টা বিষয় ক্লিয়ার হয়।
১) আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের প্রকৃত জ্ঞান রয়েছে।
২) রাসুল (ﷺ) এর কাছে কিয়ামতের প্রকৃত জ্ঞান নেই।
৩) রাসুল (ﷺ) কে দিয়ে আল্লাহ কাফিদের শুনিয়েছেন "হয়তো কিয়ামত খুবই নিকটে" যা থেকে বুঝা যায় একমাত্র আল্লাহই জানেন রাসুল (ﷺ) কিয়ামত সম্পর্কে জানেন না। আর সম্ভবত শব্দটি দ্বারা মজবুত হয় যে রাসুল (ﷺ) কিয়ামতের গায়েব সম্পর্কে অবগত নন। পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে গেলো আরকি। এজন্যই এখানে সম্ভবত শব্দ, কারণ রাসুল (ﷺ) কে বলা হয়েছে কাফিরদের কাছে বলতে যে "হয়তো কিয়ামত খুব নিকটে"
আর এখানে হয়তো, সম্ভবত শব্দের মাধ্যে আল্লাহর প্রতিশ্রুতিরও ইঙ্গিত রয়েছে। এমনকি এটি কাফির মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাকে জাগরণে কাজ করবে।
তো আয়াতের প্রথমঅংশ থেকে আমরা জানি যে আল্লাহই কেয়ামতের জ্ঞান রাখেন।
আর দ্বিতীয় অংশ থেকে আমরা বুঝলাম রাসুল (ﷺ) ও আমাদেরকে বলা হয়েছে "হয়তো খুব নিকটেই" বা "নিকটেই" এটি বলার মূল কারণই আমাদের অন্তর জাগরণ করা। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝাচ্ছেন! আমরাদেরকে তো কোন ডেইট বলে দেয়া হয়নি! এমনও তো হতে পারে যে যে কেয়ামত খুব নিকটে! আর এটিও প্রমাণ হয় যে কিয়ামতের জ্ঞান রাসুল (ﷺ) এর কাছেও নেই।
এটি বুঝতে হলে বুঝতে হবে যে কুরআন আল্লাহ মানবজাতির জন্য পাঠিয়েছেন। আর এটি সেভাবেই নাজিল হয়েছে। মানুষ জানে না কেয়ামত কবে তারা হয়তো কেয়মতকে ভুলে থাকবে। কেয়ামতের জ্ঞান না থাকায় তারা হয়তো ভুল পথে থাকবে। তাই আল্লাহ তাদের অন্তরকে নাড়িয়ে বলছেন "হতে পারে কেয়ামত নিকটে" আর এ ধরনের কথা মানুষের মনে ধরে। আর কুরআন তো নাজিলই করা হয়েছে মানুষকে হিদায়াতের পথ বাতলে দেবার জন্য।
আর এই সহজ বিষয়টাকে নাস্তিকসমাজ কিভাবে রিপ্রেজেন্ট করে! তাল কে তিল বানিয়ে দেবার মত ব্যাপার আরকি।
সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম কেয়ামত নিকটে তার জ্ঞান আল্লাহর কাছে। আমরা জানি না কেয়ামত কবে! আল্লাহ তার জ্ঞান আমাদের দেন নি। এর মানে কি আমরা নিশ্চিন্তে পাপে লিপ্ত থাকবো? উত্তর না! কেন? করণ সম্ভবত কেয়ামত খুব নিকটে। আর এই সম্ভবত শব্দগুলো যখন আল্লাহ ব্যবহার করেন তখন তা প্রতিশ্রুতি মূলক যা আল্লাহ পূরণ করবেন বুঝায়। যেমন আমরা আল্লাহর কসম বলি কিন্তু আল্লাহ নানান বিষয়ের কসম করেছেন। এতে বুঝতে হবে আল্লাহ যেসব বিষয়ের কসম করেছেন তা খুব গুরুত্ব রাখে। যেমন সময়ের কসম (সূরা আসর)। তাই সবকিছু বুঝতে হবে তার মাকসাদ অনুসারে। একতরফা চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
যখন দিন তারিখ জানানো হয় নি তখন আমরা নিশ্চিন্ত কিন্তু রাসুল (ﷺ) যখন বলবেন কেয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর কাছে, সম্ভবত তা নিকটে। এটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জাগরণ গড়ে তুলবে স্বাভাবিক। রাসুল (ﷺ) যে কিয়ামতের গাইব সম্পর্কে জানেন না সেটাও প্রমাণ হয়।
তাই আয়াতের সারকথা এটাই যে আল্লাহই একমাত্র জানেন কিয়ামত কবে হবে। আর আমাদেরকে তিনি তারিখ বলেন নি, নিশ্চিন্তে পাপে লিপ্ত হওয়ার আশাও দেন নি বরং আমাদেরকে সতর্ক করেছেন রাসুল (ﷺ)
এর মাধ্যমে যে "সম্ভবত, হয়তো কেয়ামত নিকটে" এটিকে ভুলে থাকার কারণ নেই।
উদাহরণস্বরূপ ধরেন আমি এক রাজা, আরেকটি জালিম রাজাকে চিঠি পাঠালাম আমার বার্তাবাহকের মাধ্যমে। আমি জানি যে আমি কবে রাজ্য দখল করবো আমি জানি ঠিক কত তারিখে রাজ্যে প্রবেশ করবো। কিন্তু আমি আমার বার্তাবাহককে যে চিঠি দিয়েছি সেখানে তারিখ উল্লেখ করি নি দিনক্ষণ সেখানে দেই নি। বরং বলেছি,, "হে জালিম রাজা, তুমি সাবধান হয়ে যাও তোমার পতন সম্ভবত খুবই নিকটে। তাই এখনি নিজেকে পরিবর্তন করো"
এখন এই চিঠি পড়ে জালিম রাজা খুবই চিন্তিত। সে আগে থেকেই সব প্রস্তুত করে রাখলো।
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি! আমি রাজার সাইকোলজি কাজে লাগিয়েছি। আমি জানি যে অমুক তারিখে হামলা করবো কিন্তু তা প্রকাশ করি নি বরং "সম্ভবত নিকটেই" বলেছি। এর মানে কি এই যে আমি জানিই না?
আশা করি বিষয়টি ক্লিয়ার।
কুরআন এমন কিতাব যেখানে আল্লাহ আমাদের কে শিখিয়েছেন, রাসুলকে দিয়ে শিখিয়েছেন, দ্বিতীয় পার্সন, ফাস্ট পার্সনও দেখা যায়। বদাশাহী বুঝাতে মর্যাদাপূর্ণ বহুবচন যেমন "আমরা" ব্যবহার করেছেন। তাই কুরআনকে মানবরচিত গ্রন্থের মত নয়। এর ভাষাশৈলী যেমন উচুমানের তেমনই এর ধরনও অমায়িক, যার ফলস্রুতিতে মক্কার কবিরাও কুরআন শুনে হকচকিয়ে যেতেন। মক্কার কাফিররা কুরআন শুনে মুগ্ধ ও অবাক হয়ে যেতেন যেখানে কিনা কুরআন আরবি ভাষায়। তারা এতটাই অবাক হতেন যে কুরআনকে
তারা বলতো যাদু! তারা বলতো "তোমরা মুহাম্মদ (ﷺ) এর কাছে যেওনা নাহলে তোমরাও তার যাদুতে যাদুগ্রস্থ হয়ে পড়বে"।
টপিকে ফিরি,,
প্রশ্নকর্তা বলছেন "যদি আল্লাহ হতেন তাহলে বলতেন “কেয়ামতের জ্ঞান আমার কাছে, কেয়ামত খুবই নিকটে।” (নাঊজুবিল্লাহ মিন যালিক)
উপরের তো বিষয়টি ক্লিয়ার করলামই এবার দেখি আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন নাকি বালেননি।
আল্লাহ কুরআনে বলেই দিয়েছেন কিয়ামত নিকটবর্তী। সম্ভবত শব্দটা তো আমাদের জাগরণের জন্য। রাসুল (ﷺ) এর মাধ্যমে শিখানোর জন্য। প্রতিশ্রুতির জন্য।
কিয়ামত যে নিকটবর্তী তা আল্লাহ বলেই দিয়েছেন,,
[৫৩:৫৭] আন-নাজমأَزِفَتِ الآزِفَةُকিয়ামত নিকটবর্তী।
আর এই কিয়ামতের জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই। কিয়ামতের কিছু লক্ষণ রাসুল (ﷺ) জানেন যা তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ঠিক ততটুকুই। বিস্তারিত জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার কাছে।
[৭৯:৪২] আন নাযিয়াতيَسأَلونَكَ عَنِ السّاعَةِ أَيّانَ مُرساهاতারা তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, ‘তা কখন ঘটবে’?
[৭৯:৪৩] আন নাযিয়াতفيمَ أَنتَ مِن ذِكراهاতা উল্লেখ করার কি জ্ঞান তোমার আছে?
[৭৯:৪৪] আন নাযিয়াতإِلى رَبِّكَ مُنتَهاهاএর প্রকৃত জ্ঞান তোমার রবের কাছেই।
সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম কিয়ামতের সকল জ্ঞান আল্লাহর কাছেই। আর তিনিই বলেছেন কিয়ামত নিকটবর্তী। আবার তিনিই সেইসকল মানুষকে জবাব দিয়েছেন তার রাসুল (ﷺ) কে দিয়ে যে হয়তো এটি নিকটেই।
এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়! যা নাস্তিকরা অস্বাভাবিক ভাবে তুলে ধরে।
কাফিররা যখন রাসুল (ﷺ) কে প্রশ্ন করতো তখন তিনি একুরেট বলতে পারতেন না কিয়ামত কবে। কারণ এর জ্ঞান আল্লাহর কাছে। তবে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (ﷺ) কে বলে দিয়েছেন তাদেরকে বলে দিতে যে "হয়তো কিয়ামত নিকটেই" কারণ কাফিররা ভাবে কিয়ামত কবে হবে কবে হবে, রাসুল (ﷺ) কেন বলছেন না!
[৪৩:৬৬] আয্-যুখরুফهَل يَنظُرونَ إِلَّا السّاعَةَ أَن تَأتِيَهُم بَغتَةً وَهُم لا يَشعُرونَতারা তো তাদের অজ্ঞাতসারে অকস্মাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে।
তাই এই কিয়ামত নিয়ে আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল (ﷺ) নানানভবে নানান প্রেক্ষাপটে জবাব দিয়েছেন। যা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে মানুষকে জাগ্রত করে সতর্ক করে।
কুরআন-হাদিসে এর নানান বর্ণনা আছে। সেদিকে আর না গেলুম।
[৫৪:৪৬] আল ক্বামারبَلِ السّاعَةُ مَوعِدُهُم وَالسّاعَةُ أَدهى وَأَمَرُّবরং কিয়ামত তাদের প্রতিশ্রুত সময়। আর কিয়ামত অতি ভয়ঙ্কর ও তিক্ততর।
[৪০:৫৯] আল মু'মিনإِنَّ السّاعَةَ لَآتِيَةٌ لا رَيبَ فيها وَلكِنَّ أَكثَرَ النّاسِ لا يُؤمِنونَনিশ্চয় কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনে না।
[২১:৪৯] আল আম্বিয়াالَّذينَ يَخشَونَ رَبَّهُم بِالغَيبِ وَهُم مِنَ السّاعَةِ مُشفِقونَযারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত।
[২০:১৫] ত্বোয়াহإِنَّ السّاعَةَ آتِيَةٌ أَكادُ أُخفيها لِتُجزى كُلُّ نَفسٍ بِما تَسعى‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায়’।
তাই বুঝতেই পারছেন। কেন আল্লাহ কিয়ামতের দিনক্ষণ গোপন রেখেছেন। আর কেনই বা "কিয়ামত নিকটবর্তী" তাদের বলে দেও আল্লাহই কিয়ামত সম্পর্কে জানেন "হয়তো কিয়ামত নিকটবর্তী"।
আল্লাহ তায়ালা তার বাণীর মাধ্যমে কিয়ামত সম্পর্কে মুসলিম-কাফিরদের টনক নড়িয়েছেন। সবাই কিয়ামত নিয়েই উদ্গ্রীব ছিলেন। রাসুল (ﷺ) কে নানা প্রশ্ন করা হয়েছে আর তাদেরকে উত্তর দেয়া হয়েছে।
[১৬:৯২] আন নাহলআল্লাহ তো এর মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করেন এবং নিশ্চয় তিনি তোমাদের জন্য কিয়ামতের দিনে স্পষ্ট করে দেবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।
তাই কিয়ামত কবে হবে তার দিনক্ষণ বলা নেই, কিয়ামত নিকটবর্তী, হয়তো খুবই নিকটবর্তী। তাই কিয়ামত কবে তা নিয়ে চিন্তা না করে প্রস্তুতি নেবার কথা বলেছেন রাসুল (ﷺ),,আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কবে ঘটবে?’ তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ?’’ সে বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম শব্দগুলি মুসলিমের) [১]উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বেশি নামায-রোযা ও সাদকাহর মাধ্যমে প্রস্তুতি নিতে পরিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। (তিনি বললেন, তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে।)’’[১] সহীহুল বুখারী ৩৬৮৮, ৬১৬৭, ৬১৭১, ৭১৫৩, মুসলিম ২৬৩৯, তিরমিযী ২৩৮৫, ২৩৮৬, নাসায়ী ৫১২৭, আহমাদ ১১৬০২, ১১৬৬৫, ১২২১৪, ১২২৮১, ১২২৯২, ১২৩০৪রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৩৭৩হাদিসের মান: সহিহ হাদিস(ihadis)
এমনকি যে আয়াতে সম্ভবত বলা হয়েছে সেখানে আল্লাহ তায়ালা, রাসুল (ﷺ) কে বলেছেন লোকদের বলে দেও যে “সম্ভবত কিয়ামত খুব নিকটে” এ আয়াত থেকে প্রমাণ হয় কিয়ামতের জ্ঞান আল্লাহ কাছেই। রাসুল (ﷺ) কিয়ামতের পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে না। তাই এই আয়াতে সম্ভবত শব্দটা আছে। কিন্তু অন্যদিকে ডায়রেক্ট আল্লাহ বলেই দিয়েছেন কিয়ামত নিকটবর্তী। কিন্তু রাসুল (ﷺ) কে বলতে বলেছেন লোকদের বলো “হয়তো কিয়ামত খুব নিকটে” যা মানুষের টনকও নড়ায় এবং এটাও বুঝায় যে রাসুল (ﷺ) কিয়ামতের গাইবের জ্ঞান রাখেন না। একটা পার্থক্য সৃষ্টি হলো এ আয়াত থেকে।
হিউম্যান ব্রেইন যার সৃষ্টি, হিউম্যান সাইকোলজিও জানেন তিনি। তাই তিনি সেভাবেই বলেছেন! আর কিছু লোকেরা না বুঝে সম্ভবত শব্দে ঝুলে আছে। ঝুলে থাকুন , ঝুলতে ঝুলতে নিজের মগজকে সক্রিয় করুন। ভাবুন নতুন ভাবে! দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে দেখুন সব বদলে যাবে। (হাহাহা)
দাবী ২ঃ فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ◆
ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। (47:22)
★ যিনি সব জানেন, তিনি কি জানেন না ক্ষমতা পেলে মানুষ কি করবে? এখানে বক্তা যে সে নিশ্চিত নয় তাই তিনি সম্ভবত শব্দ ব্যবহার করেছেন। সম্ভবত বা হতে পারে এরকম অনিশ্চয়তা শব্দ আল্লাহ বলতে পারেন না। আল্লাহ বললে তো এরুপ হত যে , “ক্ষমতা লাভ করলে নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে অনর্থক সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।”
জবাবঃ গত জবাবে বলছিলাম কুরআনে আল্লাহ তায়ালা নানান ভাবে মানুষকে আদেশ দিয়েছেন। মানুষকে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে জাগ্রত করেছেন। কুরআন আমাদের জন্য নাজিল করা এবং আল্লাহ তায়ালা সেভাবেই নানান সময় নানান ভাবে আমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, অনেকসময় গোপন করে, অনেকসময় নবীদের শিক্ষনীয় ঘটনা থেকে, আশার বাণী দিয়ে, সাহসীকতার কথা বলে, ধৈর্যের উদাহরণ পেশ করে, বিধান অর্পণের মাধ্যমে, জ্ঞান বিজ্ঞানের মাধ্যমে, দোয়া শিখানোর মাধ্যমে। নানান ভাবে তিনি মানবজাতির জন্য উপদেশগ্রন্থ পাঠিয়েছেন, হিদায়াতের গ্রন্থ যা মানবজাতিকে নিয়ে যায় অন্ধকার থেকে আলোতে।
তাই যারা সত্যান্বেষী, সত্যের সন্ধানী। হিদায়াতের উদ্দেশ্যে কুরআন পড়ে তারা তা থেকে হিদায়াত লাভ করে আল্লাহর ইচ্ছায়। আর যাদের নিয়ত খারাপ শুধু কুরআনের বিরোধিতাই যাদের মূল উদ্দেশ্য তারা এসব প্রশ্ন করে সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করবে এটাই স্বাভাবিক।
তারা তাহলে বলবে আল্লাহ কেন নিজের জন্য "আমরা" শব্দটি ব্যবহার করলেন? কেন বললেন "কাফিরদের জাহান্নামের সুসংবাদ"!!
কিন্তু যে কুরআনের উচু উচ্চমার্গীয়, ভাষাশৈলী বুঝে তার কাছে এসব কুরআনের সৌন্দর্য হিসাবে ঠেকে। কুরআনে চ্যালেঞ্জ ও আছে পারলে কুরআনের মত বা এর ধারে কাছে আসে এমন গ্রন্থ বানিয়ে আনো! যদি সত্যবাদী হও..
আল্লাহ সবাইকেই হিদায়াত দান করুক।
যাগ্গে, আবার টপিকে ফিরে আসি। প্রশ্নকারী যে আয়াতটি দিলেন তিনি চাইলে অন্য অনুবাদও নিতে পারতেন যেখানে "সম্ভবত" বলা নেই। কিন্তু তিনি সেটা নেন নি!
[৪৭:২২] মুহাম্মাদفَهَل عَسَيتُم إِن تَوَلَّيتُم أَن تُفسِدوا فِي الأَرضِ وَتُقَطِّعوا أَرحامَكُمতবে কি তোমরা প্রত্যাশা করছ যে, যদি তোমরা শাসন কর্তৃত্ব পাও, তবে তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে?
বাট প্রশ্নকর্তা "সম্ভবত" অনুবাদ নিয়েছেন। এতে আমার সমস্যা নেই।
আল্লাহ তায়ালা জানেন যে কে কি করবে না করবে, তাও তিনি বলেছেন "সম্ভবত তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে" এটা মানুষকে বুঝানো। সম্ভবত শব্দের মাধ্যেমে ফলাফল গোপন করা হলো। যেমন আল্লাহ তায়ালা রাসুল (ﷺ) কে বলছেন দ্বীনের দাওয়াত দিতে সবাইকে সতর্ক করতে। কিন্তু কে হিদায়াত পাবে তা আল্লাহ জানেন।
এখন যদি বলেন আল্লাহ তো জানেন কারা হিদায়াত পাবে কেন বাকিদেরকে দাওয়াত দিতে বললেন! তাহলে হবে??
মনে রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নানান ভাবে উপদেশ, আদেশ ও বাণী দিয়েছেন। তিনি যা জানেন সেটাই যে সব বলবেন তা নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেননি কে জান্নাতী বা কে জাহান্নামী তিনি বলেছেন সৎকর্ম করতে। তিনি আমাদের সবারই ভবিষ্যৎ জানেন, এবং তিনিই জানেন আমাদের শেষ বাসস্থান কোনটি। কিন্তু তারপরেও তিনি কি আমাদেরকে ডায়রেক্ট জানিয়ে দিয়েছেন? কার অবস্থান কোথায় হবে! উত্তর না।
তিনি মানুষকে মানুষের ব্রেইন, সাইকোলজি অনুযায়ী মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন।
আয়াতের তাফসীর,,
[১] একে অপরকে হত্যা করে। অর্থাৎ এখতিয়ার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) تَوَلَّيْتُمْ এর অর্থ করেছেন, "তোমরা জিহাদ থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও"। অর্থাৎ, তোমরা পুনরায় সেই মূর্খতার যুগে ফিরে যাবে এবং পরস্পর খুনোখুনি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আয়াতে সাধারণভাবে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি এবং বিশেষভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। আর পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হল, মৌখিকভাবে, কর্মের মাধ্যমে এবং মাল-ধন ব্যয় করার মাধ্যমে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার কর। বহু হাদীসেও এ বিষয়ে বড়ই তাকীদ ও ফযীলতের কথা এসেছে। (ইবনে কাসীর)
আল্লাহ তায়ালা চাইলেই বলতে পারতেন যে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, বা করতে পারবে না। কিন্তু তিনি তা বলেননি বরং তিনি এমনভাবে বলেছেন যাতে মানুষ পূর্ব যুগের সেই কর্ম ত্যাগ করে এবং সতর্ক হয়ে যায় যাতে তারা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ না করে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। আর তারা যাতে এটাও বুঝে সবাই ক্ষমতা পেলে খারাপ করে না। অনেক নবীরাও ক্ষমতাশালী ছিলেন যেমন দাউদ (আঃ), সুলাইমান (আঃ) আবার অনেক ক্ষমতাশালীরা জুলুমও করেছে। আল্লাহ দুই দলকেই সতর্ক করলেন।
তিনি মানুষের বুঝ অনুযায়ী মানুষকে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন "সম্ভবত" কারণ তিনি নিজে সব জানেন কিন্তু আমাদেরকে বলেন নি।
যদি আল্লাহ তায়ালা বলেই দেন যে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। তাহলে তো আর তারা কিছুই করতো না। তারা বলতো আপনি তো বলেই দিয়েছেন আমাদের আর কাজ কি। তাই নিজের মনমত কুরআনকে মাপবেন না।
যেমন আদম (আঃ) যে নিষিদ্ধ গাছের কাছে যাবে সেটা আল্লাহ তায়ালা জানতেন। তারপরেও তাদেরকে পরীক্ষা করেছেন। তাদের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন, তাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঠিকই জানেন শেষ পরিণিতি তাও তিনি মানুষের নিজেস্ব কর্মকে বাতিল করেননি। তারা যাতে বুঝতে পারে তারাই এই ভুল করেছে। নয়তো বলবে! আমরা হয়তো ভালো কাজ করতাম! আপনি কেন আমাদেরকে পরীক্ষা করলেন না।
তাই আল্লাহ তায়ালা নানান ভাবে উপদেশ দেন, পরীক্ষা নেন। তিনি ফলাফল সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু মানুষের কাছে তার সব উন্মোচন করেননি। তিনি জানেন মানুষ ঠিক কোন সময় মারা যাবে। কিন্তু তিনি তা গোপন করেছেন। এটা আল্লাহর ইচ্ছা, এবং এসব বুঝার ক্ষমতা আমাদের না থাকলেও হিউম্যান ব্রেইন ও হিউম্যান সাইকোলজির স্রষ্টার জানা আছে।
আশাকরি বিষয়টা বুঝা গেছে, আর মূল কথা হলো যারা কুরআনের বিরোধীতার উদ্দেশ্যে কুরআন পড়ে, যারা সত্য জানার জন্য কুরআন পড়ে না। তারা নানান জায়গায় ভুল পাবে এটাই স্বাভাবিক। তখন সূরা ফাতিহাও ভুল মনে হবে, দাবী করবে "আল্লাহ আবার কোন আল্লাহর প্রশংসা করছেন?" (নাঊজুবিল্লাহ)
কিন্তু তারা বুঝে না আল্লাহ এভাবেই আমাদেরকে শিখিয়েছেন, নানান ভাবে নানান বচনভঙ্গিতে।
আর অজ্ঞদের মত ভুল ধরতে চাইলে সবই সম্ভব, তালকে তিল বানানোও সম্ভব।
যেমন প্রশ্নকর্তা "সম্ভবত" শব্দে আটকে গেছেন। উপরের আয়াতের পরের আয়াতগুলিতে যদি লক্ষ্য করেন।
[৪৭:২৪] মুহাম্মাদأَفَلا يَتَدَبَّرونَ القُرآنَ أَم عَلى قُلوبٍ أَقفالُهاতবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা- ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?
এই আয়াতটাকে কোনদিন ভুল মনে হয়েছে? উত্তর হচ্ছে না। কিন্তু যারা অজ্ঞদের মতন সম্ভবত শব্দ নিয়ে পড়ে থাকেন। তারা তো এটা নিয়েও দাবী তুলতে পারেন।
যেমন "কেন আল্লাহ প্রশ্নের সূরে বললেন "তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না"?" আল্লাহ কি জানেননা যে মানুষ কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে কি না!?
আবার বলা যায় "কেন আল্লাহ প্রশ্ন করলেন "নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ" আল্লাহ কি জানেন না যে তাদের অন্তর তালাবদ্ধ নাকি তালাবদ্ধ না??
কি বুঝলেন! তাই যারা ভাষা মাধুর্য, বচনভঙ্গি, ও মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জাগরণ উপদেশ সম্পর্কে জানেন তারা বুঝতেই পারছেন যে কেন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন প্রশ্ন করছেন।
আমি তো মনে করি এটা বুঝার জন্য কিছুই জানার দরকার নেই। এসব এত কঠিন বাক্য না যা বুঝতে রকেট সাইন্স জানা লাগে।
একজন সাধারণ মানুষও আয়াতটি বুঝতে পারবে কিন্তু নাস্তিকরা সেটাকে বুঝবে না কারণ তাদের অন্তরও তালাবদ্ধ।
কিয়ামতের পর যখন সব ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ প্রশ্ন করবেন! কোথায় বাদশারা, কোথায় ক্ষমতাশালীরা....
এমন আরও কিছু প্রশ্ন তিনি করবেন। এর মানে কি আল্লাহ জানেন না? ক্ষমতাশালীরা কোথায়!? (নাঊজুবিল্লাহ)
আল্লাহ পরে নিজেই উত্তর দিবেন।
তাই এসব আয়াতগুলি বুঝতে আইন্সটাইন বা নিউটন হতে হয় না। কলাবিজ্ঞানী হবারও প্রয়োজন নেই। শুধু সত্যান্বেষী হতে হবে তাহলেই চলবে। অন্যথায় চাঁদকেও সূর্য মনে হবে।
আমার মনে হয় না বাকি প্রশ্নগুলির উত্তর দেয়ার প্রয়োজন আছে। কারণ প্রত্যেকটা প্রশ্নই একই ক্যাটাগরির। যা জেনারেল নলেজ থাকলে বুঝা যায়। তবে কেউ যদি "সম্ভবত" নামক শব্দে আপনাকে এঁটে দেয় তাহলে এ থেকে বাহিরে নাও আসতে পারেন।
দাবী ৩ঃ
فَقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۚ لَا تُکَلَّفُ اِلَّا نَفۡسَکَ وَ حَرِّضِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ عَسَی اللّٰہُ اَنۡ یَّکُفَّ بَاۡسَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ؕ وَ اللّٰہُ اَشَدُّ بَاۡسًا وَّ اَشَدُّ تَنۡکِیۡلًا ◆
অতএব তুমি আল্লাহর রাস্তায় লড়াই কর। তুমি শুধু তোমার নিজের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর। আশা করা যায় আল্লাহ অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন। আর আল্লাহ শক্তিতে প্রবলতর এবং শাস্তিদানে কঠোরতর। (4:84)
★ আশা করা যায় আল্লাহ কাফেরদের শক্তি প্রতিহত করবেন। এখানেও অনিশ্চিত শব্দ আশা করা যায়। তাহলে আল্লাহ কি নিশ্চিত নন? আল্লাহ কি নিজেই নিজের আশায় থাকেন? কেমন হয়ে গেল না?
আয়াত টি ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এখানে আল্লাহ শব্দটি নাম পুরুষ হিসেবে এসেছে। বক্তা উত্তম পুরুষ। বক্তা নিশ্চিত নয় তাই বক্তা বলছে “আশা করা যায় আল্লাহ অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন”
আর আয়াতটা আল্লাহ বললে, আয়াতে আল্লাহ নিজে নিজেকে নাম পুরুষ বা থার্ট পার্সন রেখে উক্তি করতেন না, তিনি বলতেন নিশ্চয় “আমি শক্তিতে প্রবল” “আমি অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করব।”
জবাবঃ ওই আগে যা বললাম কুরআন আশার বাণী। আল্লাহ বলেছেন চেষ্টা করে যাও আল্লাহ জানেন ফলাফল কি হবে। কিন্তু তিনি বলছেন সম্ভবত তোমরাই বিজয়ী হবে। এটি যেমন আশার বাণী তেমনই সাহসিকতা জোগায়। “আশা করা যায় আল্লাহ অচিরেই কাফিরদের শক্তি প্রতিহত করবেন।” প্রতিশ্রুতি মূলক বাক্য আল্লাহ যখন হয়তো, আশা করা যায়, সম্ভবত শব্দ ব্যবহার করেছেন তখন সেটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। এছাড়াও রয়েছে নানান হিকমাহ।
মনে রাখবেন আল্লাহ জানেন ফলাফল কি, এবং তিনি জানেন আমাদেরকে কিভাবে উপদেশ দিতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলছেন। ফলাফল আল্লাহর কাছে যা তিনি মানুষের কাছে গোপন করেছেন। এটাই মূলত দুনিয়ার সুন্নাহ। আমরা যদি ফলাফল জেনে ফেলি তাহলে তো আমরাও ভবিষ্যৎ জেনে গেলাম। আল্লাহ আমাদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেছেন। তিনি আমাদের সাহস যুগিয়েছেন, মটিভেশন ও আশার কথা বলেছেন। তবে ফলাফল আল্লাহর কাছে এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞানী।
তাই আল্লাহ ফলাফল জানেন কিন্তু আমাদেরকে তা অবগত করে নি। আর বলাটাও যৌক্তিক না। আর এটি আলিমুল গায়েবর সাথে সাংঘর্ষিক না। আল্লাহ বলেন নাই, ফলাফল জানান নাই। এটার সাথে না সিফাতের সাংঘর্ষিকতা আছে না আলিমুল গায়েবের। এমন হলে সব জায়গায় সাংঘর্ষিকতা বলা যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সুসংবাদ দেও। এখন যদি কেউ বলে আল্লাহ এক জায়গায় বলেছেন জাহান্নামের দুঃসংবাদ আরেক জায়গায় বলেছেন সুসংবাদ। আবার জাহান্নাম তো সুসংবাদ না! আল্লাহর সিফাতে সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে গেলো না? আসলে এসব তাদের কাছেই সমস্যা মনে হবে যারা ভাষা, বচনভঙ্গি, কুরআনের উচ্চমার্গীয় কথা বুঝে না। তারা ভুলে যায় আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা তিনি আমাদের ব্রেইনের স্রষ্টা তিনি আমাদের সাইকোলজি সম্পর্কে জানেন। কোন কথা আমাদের জন্য সঠিক তা আল্লাহই একমাত্র জানেন। আমরা যেমন বলি আজকে রাজপথে খেলা হবে। এর মানে দাঙ্গা গ্যাঞ্জাম হবে, ফুটবল খেলা বুঝায় না। আবার আমি আমার বন্ধুকে বলতে পারি আজকে তোকে নাস্তা দিব। এখানে নাস্তা বলতে মারা বুঝানো হয়েছে। তোকে দেখে নিব, এটা শুধু তাকিয়ে দেখা বুঝায় নি। তোকে শিক্ষা দিব, এর মানে পড়ালেখার শিক্ষা না।
এমন অনেক ভাষাই আমাদের জানা আছে যা ভিন্ন অর্থ বহন করে।
সারকথা হলো আল্লাহ তায়ালা জানেন কে বিজয়ী হবে কিন্তু বান্দাকে তিনি সরাসরি বলেন নি। আল্লাহ জানেন কাফিররা প্রতিহত হবে কি হবেনা কিন্তু তিনি যাষ্ট বলেছেন হয়তো কাফিররা প্রতিহত হবে। আল্লাহ জানেন কিন্তু বান্দার ক্ষেত্রে সম্ভবত বলেছে। ফলাফল গোপন করেছেন। আল্লাহ জানেন ঠিকই কিন্তু বান্দার কাছে ফলাফল গোপন করেছেন সহজ বিষয়।
কারণ আল্লাহ তায়ালা যদি বলেই দেন তোমারই সফল হবে, অচিরেই কাফিররা প্রতিহত হবে। তাহলে মানুষের সাইকোলজি তাকে অলস বানিয়ে দিবে। তারা ভাববে আল্লাহ যেহেতু বলেই দিয়েছেন আমরা বিজয়ী হবো তাহলে চেষ্টা করার দরকার নেই। আল্লাহ যেহেতু বলেই দিয়েছেন নিশ্চিত কাফিররা প্রতিহত হবে তাহলে নো টেনসন। আল্লাহ যেহেতু গেরান্টি দিয়েছেন সেহেতু কোন প্যারা নেয়ার দরকার নেই। তেমন প্রস্তুতি নেবারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু আল্লাহ যখন ফলাফল বলে দেন নি “হয়তো কাফিররা প্রতিহত হবে” বলেছেন যার মাধ্যমে আশা ভরসাও পাওয়া গেলো। আত্মবিশ্বাস ও বৃদ্ধি পেলো আবার ভালো প্রস্তুতিও নেয়া হলো। কারণ ফলাফল নিশ্চিত ভাবে স্পষ্ট বলা হয়নি। সব দিক দিয়েই সুন্দর হলো বিষয়টি।
এমনিতেই সেসময় অনেকেই
জিহাদে অংশগ্রহণ করতো না, মুনাফিকী করতো। সেখানে যদি আল্লাহ বলতেন নিশ্চিত কাফিররা প্রতিহত হবে তাহলে তো অনেকে বলবে "১০০ জন যাবার কি দরকার ৫ জন জিহাদে যাও। আল্লাহ তো গেরান্টি দিয়েই দিয়েছেন কাফিররা নিশ্চিত প্রতিহত হবে"! একদম সোজা কনসেপ্ট।
ধরেন আমাকে অটোপাস দেয়া হবে। আমি জানি না, আমার শিক্ষক জানেন। কিন্তু আমার শিক্ষক আমাকে বলেছে।
"পড়ালেখা চালিয়ে যাও আশা করা যায় তুমি পাস করবে"
এটা বলার পর ছাত্র ঠিকমত পড়ালেখা করছে পরীক্ষার জন্য।
কিন্তু টিচার জানে ফলাফল পাস না ফেল। টিচার কেন বললেন না? টিচার যদি স্পষ্ট করে বলেই দিতেন যে তুমি অটোপাস।
তাহলে ছাত্র কি আর পড়তো?
হিউম্যান সাইকোলজি অনুযায়ী, নাহ সে পড়তো না। পড়লেও সেভাবে পড়তো না। যেভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পড়তো। সে বুঝে গেছে সে পাস সে পরবর্তী স্টেপ, পরবর্তী ক্লাস নিয়ে ভাবতো।
আপনি, আমি সামান্য টিচার হিউম্যান সাইকোলজি বুঝি। আর আল্লাহ যখন আমাদেরকে ওভাবে বলেন তখন আমরা সেখানে ব্যাকরণগত ভুল খোঁজি। আজব না বিষয়টা!?
আল্লাহ সকল কিছু যেমন জানেন তেমনই তার হাতেই ফলাফল। তিনি চাইলে হেরে যাওয়া দলকে জিতিয়ে দিতে পারেন। জিতে যাওয়া দলকে হারিয়ে দিতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ
কাফিরদের জাহান্নামের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে ভাষাগত ভাবে দুঃসংবাদ বসার কথা। কুরআনে দুঃসংবাদও বলা আছে কিন্তু সুসংবাদ বলা হয়েছে অন্য ভঙ্গিমায়। তাই সব কিছুকে এক পাল্লায় মাপলে সমস্যা। সব কথা এক ধরনের এক বচনের এক দৃষ্টিভঙ্গির নয়। একটা শব্দ অনেক কিছুই বুঝায় আপনি ভুল বুঝ নিয়ে বসে থাকলে হবে না। আয়াতের থিম বুঝতে হবে। যেটা সবচেয়ে কাছাকাছি এবং সঠিক সেটাই গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহই ভালো জানেন।
সুতরাং সম্ভবত বলা বান্দার ক্ষেত্রে, আল্লাহ ঠিকই জানেন ফলাফল কিন্তু সম্ভবত শব্দ বান্দার ক্ষেত্রে উত্তম। এর মাধ্যমে হিউম্যান সাইকোলজিও ঠিকমত কাজ করে। আল্লাহ যখন বললেন “হয়তো কাফিররা প্রতিহত হবে” এর মাধ্যমে আল্লাহ শুধু ফলাফল গোপন করেছেন। কিন্তু দিয়েছেন আত্মবিশ্বাস, যোগিয়েছেন সাহস, এবং পূর্ণ প্রস্তুতিতেও বাঁধা দেয়া হলো না। পারফেক্ট কম্বিনেশন যাকে বলে।
সিফাতের কি সমস্যা?
প্রশ্নঃ আল্লাহ কি জানেন না?
উত্তরঃ জানেন
প্রশ্নঃ এই আয়াতে আল্লাহ কি করলেন?
উত্তরঃ তিনি ফলাফল গোপন করেছেন। প্রতিশ্রুতি আশা দিলেন।
দাবী ৪ঃ
عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یَّرۡحَمَکُمۡ ۚ وَ اِنۡ عُدۡتُّمۡ عُدۡنَا ۘ وَ جَعَلۡنَا جَہَنَّمَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ حَصِیۡرًا ◆
আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের উপর রহম করবেন। কিন্তু তোমরা যদি পুনরায় কর, তাহলে আমিও পুনরায় করব। আর আমি জাহান্নামকে করেছি কাফিরদের জন্য কয়েদখানা। (17:8)
.
★ এখানেও তিনি রহম করবেন কিনা নিশ্চিত নন। করতেও পারেন, নাও পারেন। এখানেও বক্তা নিশ্চিত নয়। আর এরুপ কথা তো আল্লাহর হতে পারে না। আল্লাহর হলে এরকম হত যে “আমি তোমাদের রব, আমি তোমাদের উপর রহম করব।”
জবাবঃ ওইযে পূর্বের কথা আরকি। আল্লাহ জানেন তবে মানুষকে তার রাসুল (ﷺ) কে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন। আশা করা যায় আল্লাহ রহম করবেন।
অর্থাৎ এই আশা করা যায় বলার কারণে আপনি নিশ্চিন্তে পাপ করতে পারবেন না। কারণ আপনি ভাববেন যেহেতু আল্লাহ ডায়রেক্ট বলেন নাই বরং “আশা করা যায়” বলেছেন তার মানে রহম অনিশ্চিত তাই এখনিই আল্লাহর পথ অনুসরণ করতে হবে।
এটাই হিউম্যান সাইকোলজি সহজ হিসাব।
আবার আল্লাহ যেহেতু বলেছেন "আশা করা যায়" তখন সেটা প্রতিশ্রুতি/ওয়াদা মূলক কথা। তাই "সম্ভবত, আশা করা যায়" এসবকে শুধমাত্র শাব্দিকভাবে ব্যবহার করবেন না। এখানে শাব্দিক
বিষয়টি মূখ্য নয়। মাকসাদ/উদ্দেশ্যে ও ইতিবাচক প্রভাবই এখানে মূখ্য বিষয়।
আল্লাহ আবার বলেও দিয়েছেন জাহান্নাম ভয়নাক, কয়েদখানা।
আর তিনি কুরআনে বহু জায়গায় বলেছেন তিনি রহম করবেন, আবার এ আয়াতে সম্ভবত রহম করবেন। নানান প্রেক্ষাপটে নানান ভাবে। আল্লাহ জানেন যে তিনি রহম করবেন নাকি করবেন না। কিন্তু তিনি মানুষদের বলেছে যে “আশা করা যায় তিনি রহম করবেন”
কারণ মানুষ তো ধূর্ত! আল্লাহ যদি বলে দেন তিনি রহম করবেন তাহলে তো সে নিশ্চিন্তে থাকবে। আর ভাববে পাপ করলে রহম তো হবেই।
কিন্তু যখন “আশা করা যায়” শব্দ চলে আসে তখন বুঝা যায় রহমের প্রতিশ্রুতি - সুযোগ আছে। তবে আল্লাহর পথ অনুসরণ করা জরুরি। অন্যথায় আল্লাহ হয়তো ক্রদ্ধ হতে পারেন। আবার আশা করা যায় শুনে মানুষ আশার বাণী পেলো। তারা বুঝলো যে এখনও ফিরে আসার আশা আছে। আলহামদুলিল্লাহ
সহজ হিসাব, অযথাই না বুঝার ভান করে কি লাভ! আর অনেক আলেম বলেছেন এসব Royal style, বাদশাহী ভাব।
উদাহরণস্বরূপ, রাজ্যের রাজা তার প্রজাদের সাহায্য করবেন তা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু প্রজাদের বলছেন, “তোমরা যদি ন্যায় ভাবে চলো আশা করা যায় তোমাদের উপর সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া হবে।”
এর মানে কি রাজা জানে না যে সাহয্য করবে নাকি করবে না?? জানে তবে বলেছেন ভিন্নভাবে যাতে প্রজারা ন্যায় ভাবে চলে।
আল্লাহ তো রহম করবেই কিন্তু আমাদেরকেও সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে। এখানে অনিশ্চিত এর কিছু নেই আর অনিশ্চিতের বিষয় হলে সেটা বান্দার কাছে অনিশ্চিত রাখা হয়েছে। আল্লাহ জানেন যা নিশ্চিত যা সত্য।
আশা করি বুঝেছেন…
দাবী ৫ঃ فَأَمَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسَىٰ أَن يَكُونَ مِنَ الْمُفْلِحِينَ ◆
তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে। (28:67)
.
★ এখানেও অনিশিচত শব্দ, আশা করা যায়। অর্থাৎ বক্তা নিশ্চিত নয়। .
.
فَأُولَٰئِكَ عَسَى اللَّهُ أَن يَعْفُوَ عَنْهُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَفُوًّا غَفُورًا ◆
অতএব, আশা করা যায়, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (4:99)
★ এখানেও আশা করা যায়। অর্থাৎ ক্ষমা হতেও পারে নাও পারে এরকম বুঝাচ্ছে। অর্থাৎ বক্তা নিশ্চিত নয় যে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবে কিনা। কিন্তু যদি আল্লাহ হয়, আল্লাহ তো সব জানেন তিনি কেন নিজেই নিজের সমন্ধে অনিশ্চিত কথা বলবেন? তাছাড়া উক্ত আয়াতেও আল্লাহ শব্দ নাম পুরুষ বা থার্ড পারসন হিসেবে এসেছে। বরং আল্লাহর হলে এরুপ হত যে “আমি তাদেরকে ক্ষমা করব। আমি মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।”
জবাবঃ এখনেও হিউম্যান সাইকোলজি বুঝে কথা। মনে রাখবেন! আমি জানি বলে যে পুরটাই আপনাকে জানিয়ে দিতে হবে এমন না! আর আমি আপনাকে পুরোপুরি না বললে আমি যে পুরোপুরি জানি না এমনও না।
উপরের আয়াতগুলিও আশার বাণী। আল্লাহ বুঝাচ্ছে আমরা আমাদের জীবনে পাপ করেছি ঠিক আছে। তবে এতে হতাশ হবার কিছু নেই, তওবা, সৎকর্ম করলে আশা করা যায় আল্লাহ ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ জানেন ক্ষমা করবেন কি না কিন্তু তিনি আমাদের আশার বাণী দিচ্ছেন। হতাশা থেকে পাপ থেকে ফিরে আসার মটিভেশন দিচ্ছেন। বাদশাহী ভাবেরও উপরের, উচুমানের ভাষাশৈলী। আল্লাহ যে মাফ করবেন সেটা জানেন তার পরেও নিজেকে দিয়েই বুঝাচ্ছে আশা করা যায় তোমাদের মাফ করা হবে। এটাই সুন্দর ভাষাশৈলী এবং সুন্দর আশার বাণী ও প্রতিশ্রুতি।
জানলেই যে সব ডায়রেক্ট বলে দিতে হবে এমন তো শর্ত নেই।
আর কুরআনে নানান ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা আমরা সকলেই জানি। যারা কুরআন পড়েছেন তারাও জানে। শুধু তারা জানে না যারা শুধু নাস্তিকদের দেয়া আয়াতই পড়েছে কাটসাট আয়াত। পুরো কুরআন পড়ে নি।
আল্লাহ তায়ালা উপরের আয়াতে মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছেন যে হতাশ হয়ো না, আশা হারিয়ো না। আশা করা যায় তিনি ক্ষমা করবেন।
এর মানে কি তিনি ক্ষমার ব্যাপারে নিশ্চিত না! অবশ্যই নিশ্চিত। কিন্তু তিনি সেভাবেই বলছেন যেভাবে তার বান্দাকে বলা উচিত।
আর ডায়রেক্ট বলার কথা বললে বলবো, কুরআনে ডায়রেক্টও বলা আছে। অর্থাৎ পথে বাতলে দেয়া হয়েছে পথ অনুসরণ করো। পাপ
করেছো সমস্যা নেই তওবা করে ফিরে আসো। আবার পাপ করে হতাশ হয়েছো? ফিরে আসো আশা করা যায় তিনি ক্ষমা করবেন তবে হ্যাঁ সঠিক পথ অনুসরণ করতে থাকো।
মুমিনরাই সফলকাম (সূরা মু'মিনুন ১)[২:১৯৯] আল বাকারাثُمَّ أَفيضوا مِن حَيثُ أَفاضَ النّاسُ وَاستَغفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفورٌ رَحيمٌঅতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, যেখান থেকে মানুষেরা প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[১৬:১১৯] আন নাহলثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذينَ عَمِلُوا السّوءَ بِجَهالَةٍ ثُمَّ تابوا مِن بَعدِ ذلِكَ وَأَصلَحوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعدِها لَغَفورٌ رَحيمٌতারপর নিশ্চয় তোমার রব তাদের জন্য, যারা অজ্ঞাতসারে মন্দ কাজ করেছে, এরপর তারা তওবা করেছে এবং পরিশুদ্ধ হয়েছে। নিশ্চয় তোমার রব এসবের পর পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, তারা বাদে যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে, হক ও সবরের পথে ডাকে (সূরা আসর) ]
তাই মনে রাখবেন আল্লাহ ডায়রেক্টও জানিয়েছেন আবার আশার বাণীও দিয়েছেন, মটিভেশন দিয়েছেন, প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। আশা বাঁধাতে দিয়েছেন। তিনি আমাদের স্রষ্টা এবং তিনিও আমাদের চিন্তা চেতনা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত আছে।
তিনি জানেন আমাদের অন্তরের বিষয়। যা আমরা গোপন করি আর যা প্রকাশ করি।
দাবী ৬ঃ
عَسَى اللَّهُ أَن يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عَادَيْتُم مِّنْهُم مَّوَدَّةً ۚ وَاللَّهُ قَدِيرٌ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ◆
যারা তোমাদের শত্রু আল্লাহ তাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সম্ভবতঃ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সবই করতে পারেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। (60:7)
জবাবঃ এখানেও আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন তবে সম্ভবত শব্দ নিয়ে সমস্যা নেই। তিনি বলেছেন যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। তিনি জানেন করবেন কি করবেন না। কিন্তু আমাদেরকে তা সরাসরি বলেন নি। কারণ আল্লাহই ভালো জানেন কখন মানুষকে সিদ্ধান্ত পুরটা বলা উচিত, কতটুকু বলা উচিত আর কতটুকু গোপন করা উচিত।
এখানেও হিকমাহ রয়েছে যা আমরা বুঝবো না। আল্লাহ যদি বলতেন বন্ধুত্ব করেই দিবেন। “সম্ভবত” না বলতেন। তাহলে হয়তো আমরা আগ বাড়িয়ে বন্ধুত্ব করে ফেলতাম। কারণ আল্লাহ অনুমতি তো দিয়েই দিয়েছেন। কিন্তু সম্ভবত বলায় প্রতিশ্রুতিমূলক ইঙ্গিত। যেমন ইসলামের প্রথমিক যুগে শরাব খাওয়া হতো, পরে তা নিষিদ্ধ হয়। এমনভাবে ধারাবাহিকতা থাকে যা হিউম্যান সাইকোলজিকে কোপ মারে। কারণ মানুষ যেমন তাকে তেমনই বুঝাতে হবে।
আল্লাহ ভিন্নভাবে বলেছেন। যার মধ্যে প্রশ্নবোধক রয়েছে যা আমাদের জন্যই হয়তো শ্রেয়। আমরা তাহলে আগ বাড়িয়ে বন্ধুত্ব করবো না যতক্ষণ না সঠিক সময় আসে।
অবশেষে বলব, নাস্তিকরা যেসবে সমস্যা দেখে সেসব আরও কুরআনের সৌন্দর্য,মাধুর্য ফুটিয়ে তুলে। আলহামদুলিল্লাহ
“সম্ভবতঃ, আশা করা যায়” এ শব্দগুলি মানুষকে বুঝানোর জন্য। মানুষের সাইকোলজি অনুযায়ী কোপ। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক জাগরণে জন্য। এসব বান্দার সাথে জড়িত, আল্লাহর জানার সাথে নয়, আল্লাহ সবই জানেন। তবে বান্দাকে নানানভাবে উপদেশ দেন। যাতে তা হয় মনস্তাত্ত্বিক জাগরণ, সমাধান, মটিভেশন, আশার বার্তা, প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি।
[৩:৫৮] আল ইমরানذلِكَ نَتلوهُ عَلَيكَ مِنَ الآياتِ وَالذِّكرِ الحَكيمِএটি আমি তোমার উপর তিলাওয়াত করছি, আয়াতসমূহ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ থেকে।
কুরআন এক প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাব। সামগ্রিক জ্ঞানে ভরপুর যাতে আছে আশার বাণী, আছে শিক্ষণীয় বিষয়, কিভাবে প্রার্থনা করতে তাও আছে, আছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, মানবতার সমাধান সমস্ত কিছু। যার উচ্চমার্গীয় কথার সাথে কোন কিছুই টিকে না।
পরিশেষে বলব “সম্ভবত” বান্দার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,আল্লাহর জানার ক্ষেত্রে নয়। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞানী। কুরআনে আল্লাহ নিজেকে আমরা বলে উল্লেখ করেছেন এর মানে এখানে ভাষাগত ভুল আছে ভাবলে হবে না। মাকসাদ বুঝতে হবে যে আমরা বলতে একজনকেই বুঝানো হয়েছে এটি উচুমানের মর্যাদাপূর্ণ শব্দ। যেমন হিন্দিতে "মেয়েনে কিয়া" বলা হয় আবার "হামনে কিয়া" বলা হয় আর উভয়ই ব্যাক্তি একজন কিন্তু একবার একবচন ব্যবহার আরেকবার বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে, সাধারণ বিষয়।
সব কিছু একতরফা বিচার করা বোকামি।
তাই, সম্ভবত শব্দে না আটকে থেকে সব দিকেই চোখ ফেলুন। অন্যথায় শুনেও শুনবেন না, বুঝেও বুঝবেন না, দেখেও দেখবেন না।
[২:১৮] আল বাকারাصُمٌّ بُكمٌ عُميٌ فَهُم لا يَرجِعونَতারা বধির-মূক-অন্ধ। তাই তারা ফিরে আসবে না।
ওহ হ্যাঁ, আপনি যদি নাস্তিক হোন তাহলে তো আপনার জ্ঞান দিয়ে এই আয়াতেও সমস্যা বের করবেন বলবেন “কই আমি তো বধির না মূক না অন্ধও না” আমি তো সুস্থ মানুষ কানেও শুনি চোখেও দেখি। (হাহাহা)........
(الله أعلم)
10 Comments
আপনি প্রশ্নকারীর মূল মাকসাদ টাই ধরতে পারেননি । আপনার কি মনে হয়? যে প্রশ্নগুলো করেছে সে এ বিষয়ে জানতো না? আপনি যে উত্তরগুলো দিয়েছেন এগুলো এই জমিনে নতুন কিছু না বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরেই এই ভুল ব্যাখ্যা গুলো বয়ে বেড়াচ্ছে । মজার তথ্য হলো এই ভুল ব্যাখ্যা গুলোকেই সঠিক বলে মেনে নেওয়া হচ্ছে কারণ নিজের মন-মগজকে ঠান্ডা করার জন্য এর থেকে উপযুক্ত ব্যাখ্যা আপনার তৈরি করতে পারছেন না । এখানে প্রশ্নের মূল বিষয়টা ছিল কুরআনের বক্তা প্রসঙ্গে । কিন্তু আপনি সেই বিষয়টাই এড়িয়ে গেছেন । কারণ আপনি পুরোটা সময় ধরেই বিশ্বাসী কুরআনের বক্তা হলেন আল্লাহ তাআলা । এখানেই আপনার সাথে প্রশ্ন কারীর মূল পার্থক্যটা তৈরি হয়ে যায় ।
ReplyDeleteপ্রশ্নকারী এখানে বলতে চাচ্ছেন কুরআনের বক্তা আল্লাহ হলে তিনি তার ক্ষেত্রে এভাবে ভাষা চয়ন করতেন না । আবার একই সাথে কুরআনের বক্তা মুহাম্মদ ও না । আবার ফেরেশতা জিব্রাইল ও কুরআনের বক্তা না কারণ সবসময়ে যে কুরআন জিব্রাইলের মাধ্যমেই এসেছে তা কিন্তু নয় । মূল প্রশ্নটা এখানেই তাহলে কুরআনের বক্তা কে? যে আল্লাহও না আবার ফেরেশতাও না । তাহলে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ এবং ফেরেস্তার মাঝামাঝি কোনো সত্তা এখানে বক্তা হওয়ার সম্ভাবনা রাখে । তাহলে আমাদেরকে খুজতে হবে সেই সত্তা বা শক্তিটা মূলত কে বা কি? আর সেই সত্তা যে একজন শক্তিশালী সত্তা সেটা কুরআনেই উল্লেখ রয়েছে ।
একটি বিষয় ভালো করে মাথায় রাখা উচিত । কুরআন হাদীসে কোথাও বলা হয়নি কুরআন আল্লাহর বাণী বা "আল্লাহ তায়ালা বলেছেন" এরকম কোথাও বলা হয়নি । বরং যে সকল জায়গায় এ ধরনের বক্তব্য দেখবেন সেগুলো হয়তো অনুবাদে জালিয়াতি বা ব্যাখ্যায় ভুল অথবা ভাষা সীমাবদ্ধতার কারণে এভাবে অনেক সময় বলা হয়ে থাকে । উল্টো খেয়াল করলেই দেখা যায়, কুরআনকে বলা হয়েছে আল্লাহর কালাম এমনকি কুরআনকে রুহও বলা হয়েছে কুরআনেই এর দলীল আছে ।
কুরআন মাখলুক কিনা এই দ্বন্দ্বও পৃথিবীতে নতুন না । আপনি খেয়াল করলে আরও পাবেন অনেক পুরনো তাফসীর কিতাবে আপনি এভাবে লেখা দেখবেন,"কুরআনে ইরশাদ হয়েছে",বা "কুরআনে এসেছে" বা "বর্ণিত হয়েছে" এ ধরনের ভাষা চয়ন ব্যবহার করা হয় । সেটা তারা কেন করে? কখনও প্রশ্ন করেছেন? কোন কিছুই এ জগতে নতুন না । এ বিষয়গুলো পূর্বের বড় মাপের আলেমরাও ধরতে পেরেছিলেন কিন্তু কখনও প্রকাশ করেননি করলেও সেগুলো মানুষের সামনে সেভাবে হাইলাইট হয়নি । কারণ সাধারণ মানুষ এগুলো সম্পর্কে খুবই অজ্ঞ । এগুলো বাতিনি জ্ঞান হিসেবেই প্রচারিত হত । সেগুলোর ভেতরেও ভুল ব্যাখ্যা থাকতো । চিরদিন এগুলো গোপন থাকবে না , সব কিছুরই প্রকাশ হওয়ার সময় আছে ,এক সময় মানুষ এগুলো সম্পর্কেও জানবে ।
সব কথার মূল কথা কুরআন আল্লাহর কালাম তবে কওল না । আর এই কালাম মানে আপন বক্তব্যও না । সেটা কিভাবে কি? তা নিজেই গবেষণা করে বের করুন ।
কি ভাই আপনি নিজেই প্রশ্নকারী! আত্মগোপনের কি আছে! 😆
Deleteআমি যে বিষয়গুলি বলেছি খেয়াল করবেন। আপনাদের উদ্দেশ্যেই যখন ভুল খোঁজা তখন আল্লাহ নিজেকে "হাম" বললেও ভাষাগত সমস্যা মনে হবে। কারণ আপনারা কুরআনের ভাষাশৈলী সম্পর্কে অজ্ঞ। এটা মানুষের লেখা কোন এক টপিকের কিতাব না যে এটা এক বচনে চলতে থাকবে।
Deleteএটি সামগ্রীক জ্ঞানের কিতাব। আপনাদের চিন্তায় তা ধরবে না।
[১২:২] ইউসুফ
Deleteإِنّا أَنزَلناهُ قُرآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُم تَعقِلونَ
বায়ান ফাউন্ডেশন:
নিশ্চয় আমি একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।
বায়ান ফাউন্ডেশন:
নিশ্চয় আমি একে আরবী কুরআনরূপে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।
কিসের উত্তর দিলেন! এ দেখি হাসিনা স্টাইলে জবাব দিলেন! আমার বাবা এই সেই, এই দেশ আমার বাপ স্বাধীন করেছে। আমি সব কিছু করার অধিকার রাখি ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবতা বুঝতে হলে হাসিনার চেন্তাধারা থেকে বাহির হোন।
ReplyDelete|
উপরে একজন দেখলাম দারুন ভাবে ব্যাখ্যা করেছে যা উক্ত পোস্টেও উল্লেখ নেই। ব্যাপার টা ভাবার মত।
না মানতে চাইলে তো এমন মনে হবেই 😁😃 আপনি যেভাবে বলছেন যে এইরুপ বললে তো হতো!!
Deleteকিন্তু আমি প্রমাণ করে দিয়েছি যে এইরুপ বললে হতো না। যেমন "অচিরেই কফিররা প্রতিহত হবে" এইটা বললে জিহাদে মনোযোগী হতো না বরং ভাবতো গেরান্টি তো পেয়ে গেছি এখন ৩০০ জনের বদলে ৩ জন গেলেই চলবে। ভালোভাবে পড়েন উত্তর পেয়ে যাবেন।
আপনি দেখছি মানুষ চিনতে পারেন না। উপরে কমেন্ট আমি করিনি। অতএব আন্দাজে কথা বলে পাপ কামায়েন না। আপনার মত অদক্ষ লোকের সাথে কথা বলা আর সময় নষ্ট করা একই। যদি ইচ্ছা থাকে কথা বলার আপনার উস্তাদের ডেকে আনুন। আপনি মোটেও যোগ্য লোক নন এবং আলেমও নন এবং আমার মনেও হয় না আপনি আপনার উস্তাদের থেকে অনুমতি প্রাপ্ত বা আপনার আসলেই কি উস্তাদ আছে?, ধর্মীয় কিছু লিখতে হলে আলেমদের থেকে অনুমতি নিতে হয় এবং তাদের দ্বারা ভেরিফাই করে নিতে হয় যদি না নিজে আলেম হোন। যদি উস্তাদ থাকে, তাহলে সাথে কথা করে নিয়ে এসে কথা বলবেন। সেই দিনই রিপ্লাই পাবেন আমার তরফ থেকে।
ReplyDeleteকি ভাই আপনি ইনবক্সে রিপ্লাই না দিয়ে এখানে দিচ্ছেন! কাজ দেখে বুঝার বাকি নাই (anonymous) দিয়ে কমেন্ট করছেন, হাসিনা টাসিনা।
Deleteআমার কথা আলিমদের বিরুদ্ধে যাবে না। আলিমরাও বলেছেন "আল্লাহ যখন বলেন তা প্রতিশ্রুতি মূলক"
Deleteপারলে আপনার আলেম দিয়ে বলেন কোথায় সমস্যা। আপনি যে পয়েন্ট গুলি বলেছেন সে পয়েন্ট অনুযায়ী আয়াত নাজিল হলে ভুল হতো।
আল্লাহ তায়ালা যদি বলেই দেন তোমারই সফল হবে, অচিরেই কাফিররা প্রতিহত হবে। তাহলে মানুষের সাইকোলজি তাকে অলস বানিয়ে দিবে। তারা ভাববে আল্লাহ যেহেতু বলেই দিয়েছেন আমরা বিজয়ী হবো তাহলে চেষ্টা করার দরকার নেই। আল্লাহ যেহেতু বলেই দিয়েছেন নিশ্চিত কাফিররা প্রতিহত হবে তাহলে নো টেনসন। আল্লাহ যেহেতু গেরান্টি দিয়েছেন সেহেতু কোন প্যারা নেয়ার দরকার নেই। তেমন প্রস্তুতি নেবারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু আল্লাহ যখন ফলাফল বলে দেন নি “হয়তো কাফিররা প্রতিহত হবে” বলেছেন যার মাধ্যমে আশা ভরসাও পাওয়া গেলো। আত্মবিশ্বাস ও বৃদ্ধি পেলো আবার ভালো প্রস্তুতিও নেয়া হলো। কারণ ফলাফল নিশ্চিত ভাবে স্পষ্ট বলা হয়নি। সব দিক দিয়েই সুন্দর হলো বিষয়টি। এমনিতেই সেসময় অনেকেই
জিহাদে অংশগ্রহণ করতো না, মুনাফিকী করতো। সেখানে যদি আল্লাহ বলতেন নিশ্চিত কাফিররা প্রতিহত হবে তাহলে তো অনেকে বলবে "১০০ জন যাবার কি দরকার ৫ জন জিহাদে যাও। আল্লাহ তো গেরান্টি দিয়ে দিয়েছেন কাফিররা নিশ্চিত প্রতিহত হবে"! একদ সোজা কনসেপ্ট।
প্রশ্নকর্তা যখন কট খায় তখন anonymous দিয়ে আবল তাবল কমেন্ট করাই শেষ ভরসা। 😁
ReplyDelete