জীবনের উৎপত্তি - (বিবর্তনবাদ)



বিবর্তনবাদ - ১
বিষয়:- জীবনের উৎপত্তি
🖋Author:- Sabbir Ahmed
____________________________________________________________________________________

প্রাণ...

পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ কিভাবে উৎপত্তি লাভ করে? প্রশ্নটার উত্তর বা সমাধান আজ অবধি বিজ্ঞানের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেনি। বিজ্ঞান পাড়ায় এটা এক বিরাট রহস্য। প্রাণ বলতে কি বুঝায় সেটা নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মতবাদ। প্রাণ সৃষ্টি নিয়ে রয়েছে অনেক জল্পনাকল্পনা। কয়েক যুগ আগেও বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন প্রাণ সৃষ্টির রহস্য জানা হয়ে গেছে কিন্তু তা হয়নি, যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন রহস্যের গভীরে প্রবেশ করছে। বিজ্ঞানীরা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন তাদের জ্ঞান কত সীমিত।

কোরআনে আল্লাহ'তালা বলেন, "তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ; আমরা মরি ও বাঁচি মহাকালই আমাদেরকে ধ্বংস করে।তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে।"(সূরা জাসিয়া আয়াত ২৪) 

আল্লাহ'তালা অন্যত্র বলেন, (হে নবী) আপনি তাদেরকে বলু! রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত একটি বিষয়। এ বিষয়ে তোমাদেরকে খুব অল্প জ্ঞান দান করা হয়েছে।” (সুরা বনী-ইসরাঈল আয়াত ৮৫)
কোরআনের অনেক স্থানে মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, সৃষ্টিজগত সম্পর্কে তাদের অল্প জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।

এই ক্ষুদ্র প্রাণ যদি এত জটিল হয় তাহলে চিন্তা করুন সমস্ত সৃষ্টি কতটা জটিল হতে পারে। এখন দেখা যাক কয়েকটা মতবাদ সম্পর্কে যেখানে প্রাণ সৃষ্টি সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রাণ সৃষ্টি সম্পর্কে দুইটা মতবাদ ব্যাপকভাবে প্রচলিত। 

১। বহির্জাগতিক প্রাণ
২। অবায়োজেনেসিসের মাধ্যমে প্রাণ সৃষ্টি।

কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন বহির্জগত থেকে আসা কোনো জৈব পদার্থ থেকে প্রাণের সূচনা হয়েছিলো। ১৯৬৯ সালে উল্কাপিণ্ডের অ্যামিনো এসিড ও বিভিন্ন সময় জৈব পদার্থ আসা থেকে দাবী করেন যে, প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ উল্কাপিণ্ড বয়ে এনেছিলো। কিন্তু আমরা যখন একটা সেক সম্পর্কে জানবো তখন এটা স্পষ্টই বুঝতে পারবো এমনিভাবে প্রাণ সৃষ্টির চিন্তা কতটা র‍্যাশনাল? এর আগে ১৯০৮ সালে দার্শনিক অ্যানেনিয়াস যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন তার নাম ছিলো "প্যান্সপার্মিয়া তত্ত্ব"। এই তত্ত্ব মতে 'প্রাণের বীজ' মহাকাশে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে পৃথিবীর বুকে আশ্রয় নিয়েছিলো। ১৯৫০ সালে এসে বিজ্ঞানী ফ্রেড হয়েল একটি বিতর্কিত মতবাদ হাজির করেন। উনার দাবী ছিলো "ইন্টারস্টেলার ক্লাউড" থেকে জন্ম হয়েছিলো প্রাণের।

কিন্তু এইসব তত্ত্বের তেমন কোনো প্রমাণ নেই কারণ প্রাণকে যতটা সহজ মনে করা হয়েছিলো প্রাণ তারচেয়ে বহুগুণ বেশি জটিল। কোনো প্রমাণ না থাকায় এইসব জল্পনাকল্পনা হিসেবে বাতিল করে দেয়া হয়। এইভাবে চলতে থাকে প্রাণ নিয়ে গবেষণা। ১৯৫২ সালে মিলার একটি পরিক্ষার মাধ্যমে কিছু অজৈব পদার্থ-পানি, হাইড্রোজেন, মিথেন ও অ্যামোনিয়ার মিশ্রণ থেকে কিছু সাধারণ অ্যামাইনো এসিডের মতো প্রাণের ভিত্তি প্রস্তর গড়ে তুলেন। তবুও এটা ভুল প্রমাণিত হয় ও ধারণার পরিবর্তন হয়। কিন্তু কিছু নাস্তিক এটাকে কেন্দ্র করে প্রাণ সৃষ্টির প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

আমার লিখাগুলোতে নাস্তিকরা অনেক প্রমাণ দেখাতে চেষ্টা করবে। তাই ল্যাবরেটরি সম্পর্কে কিছু কথা বলে রাখা ভাল। ল্যাবরেটরির পরিবেশ হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ। যেমন, ২ টি রাসায়নিক দ্রবের মধ্যে বিক্রিয়া করতে তাদেরকে দ্রবীভূত করার প্রয়োজন পড়ে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বায়ুচাপ, তাপ, শব্দ কম্পন ও বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে তার নিয়ন্ত্রণকারীও রয়েছে।

প্রাণ সৃষ্টি সম্পর্কে গ্রাম ও স্মিথ বলেন, 'প্রাণের প্রথম ভিত্তি প্রস্তর নির্মিত হয় পানি ও মাটির মিশ্রণ বা কাদা সমৃদ্ধ কোনো স্থানে।' এমন আরো কিছু মতবাদ রয়েছে যা শুধু কল্পনা।

আবার ১৯৯৫ সালে মিশেল মেয়র যখন প্রথম ভিন্ন গ্রহের সন্ধান পেলেন তখন এই আবিষ্কার ভীষণভাবে নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে বিজ্ঞান মহলে সেই মানব সভ্যতার শাশ্বত কৌতূহল-- মহাবিশ্বে আমরা কি একা? প্রাণের বিকাশ কি পৃথিবীতেই হয়েছিলো? নাকি পৃথিবীর বাইরেও প্রাণ রয়েছে? ইত্যাদি। এরফলে বাইরে প্রাণ আসার প্রস্তাবনা জোড়ালো হয়েছে।

এখন আপনি যদি কোনো নাস্তিককে প্রশ্ন করেন, প্রাণ কিভাবে সৃষ্টি? বেশিরভাগ নাস্তিক বলবে অ্যাবায়োজেনেসিসের কথা। কেউ এড়িয়ে যাবে কেউ বলবে বহির্জাগতিক প্রাণের কথা। যদিও নাস্তিকরা বলে তারা প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করেনা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়।

বর্তমান বিজ্ঞান প্রাণ সম্পর্কে কি বলে দেখা যাক? বর্তমান বিজ্ঞান বলছে, "দ্যা কেমিক্যাল অরিজিন অফ লাইফ রিমেইনস এন আনসলভড মিসটারি।" এবং কেমিক্যাল ইভল্যুশনের সবগুলো থিওরি ম্যাজর সমস্যার সম্মুখীন।

বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী মাসসিমো বলেন, "সত্যি বলতে আমাদের কাছে কোনো ক্লু নেই, কিভাবে প্রথম প্রাণ উৎপত্তি লাভ করেছিলো। "

রাশিয়ান নাস্তিক বিজ্ঞানী কুনিন দৃঢ় বাক্যে বলেন, "অ্যাবায়োজেনেসিস এক গভীর রহস্য বা অস্পষ্টতা যা শুধু গবেষণাগারেই নয়, হাইপোথিটিক্যালিও।"

রসায়নবিদ জেমস টোউর বলেন, "অ্যাবায়োজেনেসিস একটি অমীমাংসিত বিষয়। শুধু তাইই নয় তিনি ডারউইনিজম সম্পর্কে হাইলি স্কেপ্টিক্যাল।

সবচেয়ে মজার তথ্য হলো নাস্তিকদের ভাব গুরু ডকিন্স বলেন, "প্রাণ সৃষ্টিতে একজন ইন্টেলিজেন্স ডিজাইনার রয়েছেন যিনি প্রথম প্রাণ সৃষ্টি করেছেন।" কিন্তু তিনি এলিয়েনকে সেই ডিজাইনার আখ্যায়িত করেছেন। করার-ই কথা নাস্তিকরা অন্ধভাবে সব মেনে নেয় যদি তা স্রষ্টার বিপক্ষে যায়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি এক বিরাট রহস্য। যা বিজ্ঞান মহলেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এই আলোচনা থেকে উঠে এসেছে বিজ্ঞান কখনোই স্রষ্টাকে স্বীকার করেনি। তারা বিভিন্ন মত ও কল্পনারস তৈরি করেছেন কিন্তু কোথাও স্রষ্টাকে স্বীকার করেননি। তারা পৃথিবীর বাইরে, এলিয়েন ও বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা বলেছেন কিন্তু স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকতে পারে তেমনটি স্বীকার করেননি। যার কারণ গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম। তাই নাস্তিকদের বলবো নিজের ব্রেইন ভাড়া না দিয়ে চিন্তা করুন। চিন্তা করুন কোনটা সঠিক? ইন্টেলিজেন্স ডিজাইন নাকি ডারউইন ইভল্যুশন?

Post a Comment

0 Comments