হুর নিয়ে বিবিধ আপত্তির জবাব!

Author:- Ahmed Ali (Ahmed Al-Ubaydullaah) 
__________________________________________________________________________________
.


আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পবিত্র হুরদের প্রসঙ্গে কোরআনে এক স্থানে বলেন,

فِيهِنَّ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ 
"সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না; যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।" (আল-কোরআন, ৫৫:৫৬)
.
ইসলামবিদ্বেষীদের তথাকথিত অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম অভিযোগ হল জান্নাতের হুর নিয়ে আপত্তি। আমরা এখানে কয়েকটি দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপারটির জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
.
👉 নাস্তিকীয় দৃষ্টিভঙ্গির জবাব:
যদি কোনো ব্যক্তি প্রকৃত নাস্তিক হয়, ভণ্ড-প্রতারক ছুপা বিধর্মী না হয়, তবে নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে আমরা বলতে পারি যে, কোনো কিছুর নৈতিকতাকে কেউ চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করতে পারে না। নৈতিকতার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত নৈতিক মানদণ্ড একজন নাস্তিক স্বীকার করে না। সুতরাং, সমাজে নির্ধারিত নৈতিক নিয়মসমূহও নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে চূড়ান্ত নয়; যেহেতু তা মানব সৃষ্ট বলে একজন নাস্তিকের নিকট প্রতীয়মান। এ কারণে কোন্-টা ভাল আর কোন্-টা মন্দ, এটা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণের অধিকার কারও নেই। আর তাই নাস্তিক্যবাদী মনোভাবে ব্যভিচারকে কেউ ভালও বলতে পারে, আবার খারাপও বলতে পারে; এটি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। এখানে চূড়ান্তভাবে কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারে না যে, ব্যভিচার ভাল না খারাপ।
একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করেও আমরা বলতে পারি যে, জান্নাত বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব যদি থিওরিটিকালি বা তাত্ত্বিকভাবে তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া হয় বা কল্পনা করা হয়, যেখানে জান্নাত হল অন্য কোনো উচ্চতর মাত্রা বা ডাইমেনশনের গ্রহ, সেক্ষেত্রেও হূর এর সাথে যৌনতাকে ভাল বা মন্দ বলার কোনো চূড়ান্ত মানদণ্ড নাস্তিকতায় নেই। ফলে একজন নাস্তিক ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে এটা বলতে পারে না যে, হূর এর সাহচর্য উত্তম নয়। কেননা নাস্তিক্যবাদকে যদি বিচারে আনা হয়, তবে আপনার নিকট হূর অপছন্দ হলেও কিছুই যায় আসে না। কারণ আপনার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যেমন নৈতিকতাকে বিচার করতে স্বাধীন, আমিও তেমনি একইভাবে নৈতিক বিষয় গ্রহণ বা বর্জন করতে স্বাধীন। আর তাই আপনি যদি মুক্ত চিন্তায় (!) হূর এর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ককে ঘৃণা, হিংসা প্রভৃতি করতে পারেন, আমিও তেমনি মুক্ত চিন্তায় এগুলোকে উত্তম বলে গ্রহণ করতেই পারি!
যদি আপনি কেবল আপনার চিন্তাকেই চূড়ান্ত বলে দাবি করে হূরকে ঘৃণা করেন, তবে আপনি এক্ষেত্রে মুক্তমনা নন, আপনি হলেন গোঁড়া। কারণ আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করছেন, যেখানে আমি আপনার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে হূরকে উত্তম বলে মেনে নিতে পুরোপুরি স্বাধীন।

একারণে নাস্তিকতার দৃষ্টিভঙ্গি বিচার করলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, মুক্তমনারা যদি প্রকৃতই তাদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সৎ হয়, তবে তাদের হূর নিয়ে সমালোচনা করে নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা পুরোই অর্থহীন!
.
.
👉 নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জবাব:
একজন নারীবাদী এক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, জান্নাতের হূর এর ক্ষেত্রে পুরুষই লাভবান হচ্ছে - কারণ নারীরা এখানে সমান অধিকার পাচ্ছে না - যেহেতু পুরুষ একাধিক নারীসঙ্গী পাচ্ছে, আর নারীকে কেবল একজনকে নিয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে।
নারীবাদীদের এরূপ সমতা এর দৃষ্টিভঙ্গির পিছনের মূল উদ্দেশ্য আসলে কী - আসুন সেটি বোঝার চেষ্টা করি।

কেবল একজন নারীবাদীই নয়, বরং যে কোনো মতবাদের অনুসারীর চূড়ান্ত লক্ষ্যই হল পরম সন্তুষ্টি অর্জন করা। যেমন - একজন আস্তিক ব্যক্তি ইবাদত, উপাসনা করছে এই কারণে যে, যেন সে পার্থিব যন্ত্রণা অতিক্রম করে পরম সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে; একজন নাস্তিক ব্যক্তি অবাধে ব্যভিচার, নেশায় আসক্তি ইত্যাদি এই চিন্তায় বেছে নিচ্ছে যে, সে যেন চরম আনন্দের মাধ্যমে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে!
একইভাবে একজন নারীবাদীও সমতা নিয়ে একারণেই প্রশ্ন তুলবে যে, তারা যেন সমান অধিকার পাওয়ার মাধ্যমে সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। অর্থাৎ মূল অভিযোগ জান্নাতের যৌনসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে নয়, বরং সন্তুষ্টি অর্জন নিয়ে। কেননা যদি জান্নাতে পুরুষের চেয়েও অধিক যৌনসঙ্গী একজন নারী লাভ করে, অথচ এতেও যদি সে নারী সন্তুষ্ট না হয়, তবে অগণিত সঙ্গী লাভ করার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে!

এক্ষেত্রে তাই মূল সমস্যার সমাধান তখনই হয়ে যায়, যদি জান্নাতে নারী এবং পুরুষ উভয়ই পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। এটি বোঝার জন্য একটি সহজ উদাহরণ লক্ষ্য করুন:
ধরুন, আপনি আর আপনার বন্ধু এক বিয়ে বাড়িতে গেলেন খাওয়ার নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য। এখন আপনি দুই প্লেট বিরিয়ানি খেলেন আর তাতেই আপনার পেট ভরে গেল। তখন আপনি দেখতে পেলেন যে, আপনার বন্ধু ইতিমধ্যে তিন প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে নিয়েছে আর তখন তার পেট ভরে নি। খেতে খেতে সে পাঁচ প্লেট বিরিয়ানি একাই শেষ করে দিল আর তারপর তার পেট ভরল।

আচ্ছা, এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় যে, আপনার তো দুই প্লেট বিরিয়ানি খেয়েই পুরো পেট ভরে গিয়েছিল; তো এবার যদি আপনাকে দুই প্লেট বিরিয়ানি খাওয়ার পরও জোর করে আরও অতিরিক্ত তিন প্লেট বিরিয়ানি খেতে বলা হয়, তবে আপনার কেমন লাগবে? খুব আনন্দ লাগবে? নাকি অস্বস্তি লাগবে?
উত্তর সোজা - অস্বস্তি লাগবে। কারণ আপনার চাহিদা হল দুই প্লেট বিরিয়ানি। বাকি তিন প্লেট আপনার জন্য তাই অস্বস্তির কারণ।

আরেকটা প্রশ্ন করি। আপনার বন্ধুর দুই প্লেট খেতে আদৌ পেটই ভরে নি। সেই সময় যদি আপনার বন্ধুকে আরও অতিরিক্ত তিন প্লেট বিরিয়ানি খেতে না দিয়েই তাকে উঠিয়ে আনা হয় খাওয়া থেকে, তবে কি আপনার বন্ধুর খাওয়ায় পরিতৃপ্তি হবে? এটার উত্তরও সোজা। উত্তদ হল - না। আপনার বন্ধু হয়ত তখন বাইরে এসে বলতে থাকবে, "দোস্ত! আজ ভেবেছিলাম একটু মন পুরে খাব! কিন্তু যা দেখলাম, তাতে আমার আর খাওয়াটাই যেন ঠিকমত হল না!"

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আপনি কেবল দুই প্লেট বিরিয়ানি খেয়েই সন্তুষ্ট। আপনাকে অতিরিক্ত তিন প্লেট খাওয়ানোটা ন্যায়সঙ্গত নয়; বরং দুই প্লেটই আপনার জন্য ন্যায়সঙ্গত।
আবার আপনার বন্ধুর জন্য পাঁচ প্লেট বিরিয়ানি ন্যায়সঙ্গত; দুই প্লেট বিরিয়ানি খাইয়ে তাকে অভুক্ত তার ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত নয়।

একইভাবে, জান্নাতে পুরুষগণের জন্য একাধিক স্ত্রী ন্যায়সঙ্গত; আর নারীর জন্য একজন স্বামীই ন্যায়সঙ্গত। মূলে রয়েছে এক্ষেত্রে সন্তুষ্টি। নারী কেবল একজন স্বামী পেয়েই সন্তুষ্টি হয়ে যাবে; আর পুরুষের সেই সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য একাধিক স্ত্রীর প্রয়োজন পড়বে। এখানে তাই সঙ্গীর সমতা সংখ্যার ওপর নয়, বরং সন্তুষ্টির ওপর বিবেচ্য। মহান আল্লাহ বলেন,

قَالَ اللّٰہُ ہٰذَا یَوۡمُ یَنۡفَعُ الصّٰدِقِیۡنَ صِدۡقُہُمۡ ؕ لَہُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ  تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ  خٰلِدِیۡنَ  فِیۡہَاۤ  اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۱۹﴾ 
"আল্লাহ বলবেন, আজকের দিনে সত্যপন্থীদের সত্যপন্থা উপকার দিবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তাতে তারা স্থায়ী হয়ে চিরকাল থাকবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই হল মহা সাফল্য।"
(আল-কুরআন, ৫:১১৯; অনুবাদ: তাইসীরুল কুরআন)
.
.
👉 যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর জবাব:
কোনো জিনিসের প্রতি মন যুক্ত হলে সেই জিনিসের প্রতি কামনা তৈরি হয়। এই কামনা বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা লোভে পরিণত হয়। লোভ বৃদ্ধি পেতে পেতে তা থেকে আসক্তি জন্মায় এবং কামনা না মেটার কারণে ব্যক্তি ক্রমাগত যন্ত্রণা লাভ করতে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি টাকার সাথে মন যুক্ত হয়, তবে টাকার প্রতি কামনা তৈরি হয়। যদি এই কামনা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তবে টাকার প্রতি লোভ সৃষ্টি হয়। এখন, এই লোভ বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করলে ব্যক্তি টাকার প্রতি আসক্ত হয়ে যায় এবং এমতাবস্থায় যদি কামনা নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে সন্তুষ্টি লাভ করতে না পারায় টাকার প্রতি ক্রমবর্ধমান কামনায় ব্যক্তি ক্রমাগত যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকে।
তাহলে, জান্নাতে কীভাবে সন্তুষ্টি সম্ভব? যখন জান্নাতের হূরের সাথে মন জুড়ে গেল; এবার তা থেকে হূরের প্রতি কামনা, কামনা থেকে লোভ, লোভ থেকে আসক্তি ও আসক্তির পরিণতিতে ক্রমাগত যন্ত্রণা প্রাপ্তি হতে থাকবে; তখন কীভাবে হূরের সাহচর্য উত্তম বলে বিবেচিত হতে পারে?

এটি বোঝার জন্য প্রাকৃতিক নিয়মের বৈচিত্র‍্যকে অনুধাবন করা প্রয়োজন।

একটি উদাহরণ দিয়ে চলুন বোঝার চেষ্টা করি।
ধরুন একজন ব্যক্তি এটা জানে না যে, জল-কে রাসায়নিক উপায়ে বিশ্লেষণ করে তা থেকে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন বের করা যায়। সে জলের রাসায়নিক পরিবর্তন সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ। সে কেবল এতটুকুই জানে যে, জলের সাথে কোনো কিছু মেশানো যায়, জলকে এক পাত্র থেকে আরেক পাত্রে নেওয়া যায় ইত্যাদি।
এখন যদি সে এবার বলে যে, জলের মধ্যে জলের বিন্দু ছাড়া আর কোনো কিছু থাকতেই পারে না - তবে এটা তার স্বল্প অভিজ্ঞতার কারণে গ্রহণ করা ত্রুটিযুক্ত সিদ্ধান্ত।
তার অভিজ্ঞতা যখন জলের বিন্দু অবধি সীমাবদ্ধ, তখন সে বুঝতে পারছে না যে, জলকণার আরও গভীরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের ব্যাপক সমাহার বিদ্যমান। অর্থাৎ যখন আপনার অভিজ্ঞতা সীমিত, তখন গৃহীত সিদ্ধান্ত ত্রুটিযুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
জান্নাতের ক্ষেত্রেও আমাদের অভিজ্ঞতা এরূপ সীমিত। পার্থিব জগতের নিয়ম এবং জান্নাতের নিয়ম একই রকম নয়। কোনো কিছুকে পার্থিব জগতে যেভাবে আমরা অনুভব করছি, জান্নাতেও ব্যক্তি সেভাবে অনুভব করবে - এরূপ সিদ্ধান্ত আমাদের ত্রুটিযুক্ত সীমিত অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। আপনি কোয়ান্টাম ফিজিক্সের দিকেই লক্ষ্য করুন না! পরমাণুর ক্ষুদ্র জগতে কখনও ভবিষ্যৎ অতীতের মত কাজ করছে; কখনও কোনোরূপ সংযোগ ছাড়াই পরস্পর বহু দূরের ব্যবধানযুক্ত দুটি কণা একই সঙ্গে স্পন্দিত হচ্ছে; নিউটনীয় ও আইন্সটাইনীয় সূত্রগুলো যেন অকেজ হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি আরও বহুবিধ বিস্ময়কর ঘটনা যা আজ বিজ্ঞানমহলে প্রমাণিত এবং যে সব ঘটনার সাথে আমাদের চারপাশের (ক্লাসিকাল) জগতের কোনো মিলই নেই! সেক্ষেত্রে আমাদের চারপাশের অভিজ্ঞতার থেকে ব্যতিক্রম নিয়মের কোনো কিছু থাকা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। যদি আমরা সেই ব্যতিক্রমকে অনুভব না করতে পারি, তবে এর অর্থ এই নয় যে, ব্যতিক্রম কোনো কিছু থাকতেই পারে না!
আর এমনই আরেকটি ব্যতিক্রম হল জান্নাতের বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়মাবলি, যেখানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক জান্নাতবাসীর মধ্য হতে সকল যন্ত্রণা, অসন্তষ্টি দূর করে দেবেন। ফলে পার্থিব জগতে উপভোগের মাধ্যমে যেরূপে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছিল, জান্নাতে উপভোগের তারা সেরূপে অসন্তুষ্ট হবে না! বরং প্রতিটি কর্মে, উপভোগে তারা পাবে পূর্ণ তৃপ্তি, পরম সন্তুষ্টি! আর যেহেতু হূর, জান্নাতের উপভোগের একটি অংশবিশেষ, তাই হূর এর সাহচর্যে পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে কোনোরূপ যন্ত্রণা, অতৃপ্তি, হিংসা, বিদ্বেষ তথা কোনোরূপ অসন্তুষ্টির অস্তিত্ব থাকবে না ইনশাআল্লাহ।

باب مَنْ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ لَا يَبْؤُسُ حَدَّثَنَا حَجَّاجُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ أَبِي رَافِعٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ دَخَلَ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ لَا يَبْؤُسُ لَا تَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ فِي الْجَنَّةِ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ 

"আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুলস্নাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে নিয়ামত ও সুখ ভোগ করবে, কষ্ট-যাতনা পাবে না। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ কখনও পুরাতন হবে না, আর জান্নাতে তাদের যৌবন কখনও শেষ হবে না। তার জন্য জান্নাতে যা রয়েছে, তা কোন চোখ কখনও দেখেনি, কোন কান কখনো শোনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরের কল্পনা তার ধারণাও করতে পারেনি।”"

[উৎস: সুনান আদ-দারেমী, অধ্যায়ঃ ২০. কোমলতা অধ্যায় (كتاب الرقاق), হাদিস নম্বরঃ ২৮৫৭; মুসনাদুল মাউসিলী নং ৬৪২৮;  সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৩৮৭; মাওয়ারিদুয যাম’আন ২৬২১; বাইহাকী, বায়াছ ওয়ান ‍নুশুর নং ২৯৪; আবী নুয়াইম, সিফাতুল জান্নাত ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ১০০, ১০১, ১০৯, ১২১; মুসলিম, জান্নাত ২৮৩৬; তিরমিযী, সিফাতুল জা্ন্নাত ২৫২৬; ইবনু মাজাহ, যুহদ ৪৩২৮;
.
প্রধান কয়েকটি আস্তিকীয় দৃষ্টিভঙ্গির জবাব:

একটু ভালভাবে খুঁজে দেখলে আমরা পাব যে, 'স্বর্গে কুমারী মেয়ে'-জাতীয় ধারণা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোতেও বিদ্যমান। কেউ যদি সেগুলোতে বিশ্বাস না করে, তবে সেটা একান্তাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এর জন্য কেবল ইসলামেরই সমালোচনা করা, পক্ষপাতদুষ্টতা ও সত্য গোপনের মাধ্যমে ঘৃণা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভগবতগীতায় বলা হয়েছে,

"হে কুন্তীপুত্র, এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গলাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্যসুখ ভোগ করবে। অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।"
(ভগবতগীতা, ২:৩৭)

এই স্বর্গলাভ করা যুদ্ধে নিহত ব্যক্তির পুরষ্কার সম্পর্কে মহাভারতে হাজার হাজার অপ্সরার কথা বলা হচ্ছে,

"যদি যুদ্ধে নিহত একজন ক্ষত্রিয় বীরের জন্য কেউ শোকগ্রস্ত না হন, তবে তিনি স্বর্গে গমন করবেন এবং স্বর্গের অধিবাসী হিসেবে মর্যাদা লাভ করবেন.........
শোন আমার কথা - এমনতর ব্যক্তির জন্য কী ধরণের সুখ প্রস্তুত রয়েছে তা আমি গণনা করেছি।

**শীর্ষস্থানীয় অপ্সরা - যাদের সংখ্যা হবে হাজার হাজার - দ্রুত বেগে ছুটে বেরিয়ে আসবে (যুদ্ধে নিহত ক্ষত্রিয় বীর আত্মাকে বরণ করতে) তাদের প্রভুর প্রতি ব্যাকুলভাবে লালায়িত হয়ে..."**

(মহাভারত/গ্রন্থ নং ১২: শান্তিপর্ব/খণ্ড ১/রাজধর্মানুশাসন পর্ব/অধ্যায় ৯৮;
অনুবাদ - কিশারি মোহন গাঙ্গুলি)

"A slain hero, if nobody grieves for him, goes to heaven and earns the respect of its denizens.........
Listen to me as I enumerate the felicity that is in store for such a person. Foremost of Apsaras, numbering by thousands, go out with great speed (for receiving the spirit of the slain hero) coveting him for their lord..."

(The Mahabharata/Book 12: Santi Parva/Part 1/Rajadharmanusasana Parva/SECTION XCVIII;
translated by Kisari Mohan Ganguli)
source

এমনকি দেবী ভাগবত গ্রন্থে আরও উল্লিখিত হয়েছে যে, তমগুণের অধিকারী পতিতা নারীদেরকে পরকালে অপ্সরা বানিয়ে দেওয়া হবে স্বর্গবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য।

"...যারা তমগুণসম্পন্ন, তারা সর্বনিকৃষ্ট হিসেবে স্বীকৃত এবং অজ্ঞাত পরিবারসমূহের অন্তর্গত। তারা অত্যন্ত অমার্জিত রুচিসম্পন্ন, প্রতারক, পরিবারের ধ্বংস সাধনকারী, স্বেচ্ছাচারী, কলহপ্রবণ এবং তাদের সমতুল্য দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিত্ব আর নাই।

**এহেন নারীগণ এই পার্থিব জগতে পতিতা হয়ে ওঠে এবং স্বর্গে তারা অপ্সরার ভূমিকা পালন করে..."**

(দেবী ভাগবত ৯:১:৯৬-১৪৩/মূল ইংরেজি অনুবাদ - Swami Vijñanananda) মূল ইংরেজি অনুবাদ)

"...those that are sprung from Tamo Guna are recognised as worst and belonging to the unknown families. They are very scurrilous, cheats, ruining their families, fond of their own free ways, quarrelsome and no seconds are found equal to them.

**Such women become prostitutes in this world and Apsarâs in the Heavens...."**

(The S'rîmad Devî Bhâgawatam, Translated by Swami Vijñanananda, 9:1:96-143) source - https://bit.ly/2vEelbB

ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা বৈষ্ণব গুরু স্বামী প্রভুপাদ এই অপ্সরা সম্পর্কিত উপভোগের ব্যাপারে বলছেন,

"নিয়ামাবদ্ধ আত্মার জন্য স্বর্গীয় সুখ হল যৌন আনন্দ এবং এই আনন্দের উপভোগ ঘটে জননেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। নারী হল এই যৌন আনন্দের ক্ষেত্রে ভোগ্যবস্তু এবং ইন্দ্রিয়ের উপলব্ধি ও নারী - এই দুই-ই প্রজাপতি (ব্রহ্মা) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, যিনি ভগবানের জননেন্দ্রিয় সমূহের নিয়ন্ত্রণাধীন..."

(ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক শ্রীমদ্ভাগবত ২:১০:২৬ এর সারমর্ম/ইংরেজি ভাষ্য হতে অনূদিত) source - http://vanisource.org/wiki/SB_2.10.26

"The heavenly pleasure for the conditioned soul is sexual pleasure, and this pleasure is tasted by the genitals. The woman is the object of sexual pleasure,** and both the sense perception of sexual pleasure and the woman are controlled by the Prajapati, who is under the control of the Lord’s genitals…”

(A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada on Srimad Bhagavatam 2.10.26) source - http://vanisource.org/wiki/SB_2.10.26 
.
.
এবার চলুন খ্রিস্টানদের বাইবেলের দিকে লক্ষ্য করি। বাইবেলের গসপেল অব ম্যাথিউ এর ১৯ অধ্যায়ের ২৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,

“যে কেউ আমার জন্য গৃহ, পিতামাতা, ভ্রাতাভগ্নী, স্ত্রী, পুত্রকন্যা এবং স্থাবর সম্পত্তি ত্যাগ করেছে সে তার বহুগুণ ফিরে পাবে এবং শাশ্বত জীবনের অধিকারী হবে।”

[বাংলা বাইবেল (Bengali C.L. Bible), মথি (Matthew), ১৯:২৯]

ইংরেজি কিংস জেমস ভার্সনের অনুবাদটি হল,
“And every one that hath forsaken houses, or brethren, or sisters, or father, or mother, or wife, or children, or lands, for my name’s sake, shall receive an hundredfold, and shall inherit everlasting life.” [The KJV Bible, Matthew, 19:29]

এখানে বলা হচ্ছে যে, পৃথিবীর জীবনে কেউ যা কিছু ত্যাগ করবে, পরকালে সে তার বহুগুণ পাবে। Bengali C.L. Bible এর অনুবাদে “বহুগুণ” অনুবাদ করা হয়েছে।
তবে কিংস জেমস ভার্সনে “hundredfold” অনুবাদ করা হয়েছে যার অর্থ হল “শতগুণবিশিষ্ট”।

এই রেফারেন্সে গৃহ, পিতামাতা ইত্যাদির সাথে সাথে স্ত্রীর কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাইবেল অনুযায়ী পৃথিবীতে যে কয়জন স্ত্রী থাকবে, স্বর্গে তার চেয়ে বহুগুণ বা শতগুণ পরিমাণ বেশি স্ত্রী থাকার কথা বলা হচ্ছে।

খ্রিস্টান মিশনারিরা এবার বলে উঠবে, ‘না! না! না! এখানে আসলে বোঝানো হচ্ছে যে, এই পৃথিবীর চেয়ে আরও বহুগুণ বা শতগুণবিশিষ্ট উত্তম জীবন পরকালে স্বর্গে পাওয়া যাবে! এখানে অর্থটি রূপকার্থে, আক্ষরিক নয়।’

সত্যিই কি তাই? চলুন দেখি তারা এখানে কোথায় তথ্য গোপন করেছে!

এখানে গ্রীক ἑκατονταπλασίονα (hekatontaplasiona) শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে “a hundredfold” [source - https://bit.ly/2WphA2o ] যার বাংলা অর্থ দাঁড়াবে “শতগুণবিশিষ্ট”।

খ্রিস্টানদেরই বাইবেল হাব (bible hub) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,

"hekatontaplasíōn (from 1540 /hekatón, "one hundred" and plasiōn, "-fold") – literally, a hundredfold ; also used symbolically in Scripture of totality..." source - https://biblehub.com/greek/1542.htm

এর বাংলা করলে দাঁড়ায়: "hekatontaplasíōn" (hekatón এর অর্থ "একশত" (one hundred) এবং plasiōn এর অর্থ "-fold") - আক্ষরিক অর্থে (literally) একশ-গুণ; এছাড়াও প্রতীকি অর্থে ধর্মগ্রন্থে সমগ্রতাকেও বুঝিয়েছে..."

অর্থাৎ গ্রীক ἑκατονταπλασίονα (hekatontaplasiona) শব্দের "একশ গুণ" অর্থটি আক্ষরিকভাবেও যেমন গ্রহণ করা যায়, তেমনি ভাবার্থে বা প্রতীকি অর্থেও গ্রহণ করা যায়।

"Christ's Words" ওয়েবসাইট যেখানে গ্রীক থেকে অনুবাদের সময় কী হারিয়ে গেছে (What Is Lost in Translation from Greek) - এই শিরোনামে সেখানে উল্লেখ করা হচ্ছে,

"hundredfold -- This Greek word means literally "hundred forms" but it works like our hundredfold..." source - https://christswords.com/content/mar-1030-he-shall-receive-hundredfold

অর্থাৎ গ্রীক ἑκατονταπλασίονα (hekatontaplasiona) শব্দের অনুবাদের ক্ষেত্রে যে hundredfold অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি গ্রীক শব্দের ক্ষেত্রে আক্ষরিকভাবে (literally) একশত সংখ্যক বিষয় (hundred forms)-কে প্রকাশ করে। 

এরপর লেখা হয়েছে "..but it works like our hundredfold..." যার থেকে বোঝা যায় যে, আক্ষরিক অর্থ প্রকাশ পাওয়া সত্ত্বেও একে খ্রিস্টান মিশনারি রূপক অর্থে ব্যবহার করে অর্থ গ্রহণ করেছে সত্য গোপন করার জন্য!!

অর্থাৎ, বাইবেলের উক্ত শ্লোক আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম। তাই যদি রূপক অর্থ প্রকাশের মাধ্যমে বলা হয় যে, পৃথিবীতে গৃহ, পিতামাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, স্ত্রী, পুত্রকন্যা এবং স্থাবর সম্পত্তি এর চেয়ে স্বর্গে আরও উন্নত গৃহ, পিতামাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, পুত্রকন্যা পাওয়া যাবে; তবে আক্ষরিক অর্থেও বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রত্যেকের মত আরও একশ জন করে একই রকম আপনজন, একশগুণ অধিক সম্পত্তি এবং ১০০টা বেশি স্ত্রী পাওয়া যাবে।

তাহলে স্বর্গে ১০০ জন অধিক স্ত্রী মানে বিবাহিত স্ত্রী। আর ইসলামেও হুরেরা জান্নাতবাসীদের সাথে বিবাহিত সম্পর্কেই থাকবেন।

Ephrem the Syrian নামে একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজক, স্তোত্র রচয়িতা এবং প্রাচীন খ্রিস্টান ধর্মগুরু তার রচিত "Hymns On Paradise" এর Strophy 7.18-তে বলছেন:

"The man who abstained,
with understanding, from wine,
will the vines of Paradise
rush out to meet, all the more joyfully,
as each one stretches out and proffers him
its clusters;
or if any has lived
a life of virginity,
him too they welcome into their bosom,
for the solitary such as he
has never lain in any bosom
nor upon any marriage bed."

[St. Ephrem The Syrian, “Hymns On Paradise”: Strophy 7.18] source - https://bit.ly/2lJkZeT

অর্থাৎ "Hymns On Paradise" এর Strophy 7.18-তে তিনি উল্লেখ করছেন যে, যারা এই দুনিয়ায় মদ পান করবে না, সন্ন্যাসের মত জীবন-যাপন করবে, তাদেরকে স্বর্গের মদ (vines of Paradise) প্রদান করা হবে; স্বর্গে তাদের সঙ্গীগণ তাদেরকে বুকে জড়িয়ে নেবে ("if any has lived/a life of virginity,/him too they welcome into their bosom")।

এছাড়াও Strophy 7.14-তে স্বর্গের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, সেখানে কোনো অভিসম্পাত বা কটুক্তি থাকবে না এবং সকলে আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে আনন্দ করবে, "At him who has uttered/no curse or abuse/does Paradise’s blessing/rejoice all the more...." [St. Ephrem The Syrian, “Hymns On Paradise”: Strophy 7.14] source - https://bit.ly/2lJkZeT

ঠিক এর পরের Strophy-তে (Strophy 7.15) স্বর্গের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হচ্ছে:

"The virgin who rejected
the marriage crown that fades
now has the radiant marriage chamber
that cherishes the children of light,
shining out because she rejected
the works of darkness-
To her who was alone
in a lonely house
the wedding feast now grants tranquility:
here angels rejoice,
prophets delight,
and apostles add splendor"

[St. Ephrem The Syrian, “Hymns On Paradise”: Strophy 7.15] source - https://bit.ly/2lJkZeT

এখানে বলা হচ্ছে যে, দুনিয়াতে যে কুমারী মেয়ে (virgin) বিবাহের মুকুট (marriage crown) ত্যাগ করেছিল, সে স্বর্গে দীপ্তিমান বিবাহের কক্ষ (radiant marriage chamber) লাভ করবে। সেখানে ফিরিশতারা উল্লাস করবে (angels rejoice), নবীরা আনন্দিত হবে (prophets delight), নবীদের সাহাবারা আড়ম্বর যোগ করবে 
(apostles add splendor)।

অর্থাৎ এগুলো থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বাইবেলেও “স্বর্গের হুর” জাতীয় কন্সেপ্ট বিদ্যমান! (প্রমাণিত)

প্রাচীন খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু, স্তোত্র-রচয়িতা এত কিছু লিখে গেলেন আর এই ভণ্ড খ্রিস্টান মিশনারিরা আজ বলছে যে, তাদের গ্রন্থে জান্নাতের হুর জাতীয় কোনো ধারণাই নাকি নেই!!

Post a Comment

0 Comments