বিষয়:- সূরা ফতিহাই প্রমাণ করে কুরআন আল্লাহর বাণী নয়!
____________________________________________________________________________
সকালবেলা চা খেতে লাগলো মুহাম্মদ আলী আর সকাল হতে না হতেই দরজায় কড়া দেওয়া আওয়াজ ভেসে আসলো!
মুহাম্মদ আলী দরজা খুলেই একটু হকচকিয়ে গেলো। তার পর একসাথে সোফায় বসলো অতঃপর,,,
মুহাম্মদ আলী:- আসসালামু আলাইকুম, আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
(সেই লোক):- আমি অজয়ের বন্ধু। তুমি নাকি কাল তাকে অপমান করেছো। তুমি কতটুকু বেদ জানো?
মুহাম্মদ আলী:- আপনার নামটা?
(সেই লোক):- আমার নাম মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী। ডাকনাম দয়ানন্দ!
মুহাম্মদ আলী:- ওও তাই! শুনুন অজয় দাদাকে আমি কোন ভাবেই অপমান করি নি। বরং অজয় দাদা নিজেই কুরআনকে বিকৃত দাবী করেছে এবং তার জবাব দিয়েছি আমি। আর এই সপ্তাহের শুক্রবারের আবারো আলোচনা করা হবে একই টপিকে। আমি সত্য বলতে আগ্রহী।
দয়ানন্দ:- হা হা! কুরআন বিকৃত তো বহুদূরের কথা! কুরআন তো আল্লাহর বাণী সেটা নিয়েই তো বড় সমস্যা!
মুহাম্মদ আলী:- তাই নাকি? কিভাবে জনাব?
দয়ানন্দ:- কুরআন তো খোদার বাণী না। সেটা কুরআনের ব্যাকারণ দেখলেই বোঝা যায়।বেদ হলো আমাদের সংবিধান। বেদ হলো ঐশ্বরিক গ্রন্থ। কুরআন হলো "মানব রচিত" "গুহায় খচিত"!
মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা তাহলে প্রুভ দিন। দেখি তো!
দয়ানন্দ:- এই যে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। শুরু করছি আল্লাহর নামে! কুরআন যদি আল্লাহর নিজের বাণী হতো তাহলে কেনো নিজেই নিজের নামে কুরআনে এভাবে বলবে? তুমি কি কখনো বলবে? "শুরু করছি মুহাম্মদ আলীর নামে"? ব্যাকারণগত ভুল নাহয় কুরআন আল্লাহর বাণী নয়!
[ মুহাম্মদ আলী চায়ে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]
মুহাম্মদ:- শুনুন জনাব আপনার প্রশ্নটা শুনে আমার দুটি অনুভব জাগ্রত হয়েছে।
১) হতাশা
২) আফসোস
আপনি এমন ফালতু অভিযোগ করে এমন দাবী করবেন তা কখনোই ভাবি নি তাই আমি হতাশ। আর আপনি কখনো বেদ পড়ছেন বলে মনে হয়না তাই বড়ই আফসোস!
দয়ানন্দ:- হা হা নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছ বুঝি?
মুহাম্মদ আলী:- না ব্রো! তুমি কি আদৌ জানো! যে কুরআন মানুষকে উপদেশ হিসেবে মানুষদের শিখানোর জন্য পাঠানো হয়ছে! যেমন সূরা আলাকের এক নং আয়াতেও বলা পড়ো তোমার রবের নামে! এভাবেই আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন! কুরআন এমন গ্রন্থ নয় যে বছরে একবার পড়লাম আর টেবিলে ছুড়ে ফেললাম! কুরআন সার্বজনীন বার্তা। আমরা মুসলিমরা প্রতিদিন কুরআন পাঠ করি। কুরআনে আল্লাহ আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন আবার উপমা দিয়েছেন উদাহরণ দিয়েছেন। আমাদের উপদেশ দিয়েছেন! নানান ভাবে শিক্ষা দিয়েছেন!
দয়ানন্দ:- তাই নাকি হা হা!
মুহাম্মদ আলী:- হুম তাই, যেমন ধরুন একজন বাবা তার ছেলেকে যখন শিক্ষা দেয় তখন বাবা বলে, "বলো, আমার বাবা একজন শিক্ষক" এবার এখানে "বাবা" নিজেই নিজেকে শিক্ষক বলছে আর সেটা তার ছেলেকে শিখাচ্ছে। এর মানে এই নয় যে "বলো, আমার বাবা একজন শিক্ষক" তা সেই ছেলেটির বাবার কথা নয়!
দয়ানন্দ:- হা হা, আল্লাহ তো আর কুরআনে বলেন নি যে "বলো, শুরু করছি আল্লাহর নামে" আল্লাহ তো শুধু বলেছেন "শুরু করছি আল্লাহর নামে"। তারপর সূরা ফতিহার প্রত্যেকটি আয়াত পড়লেই বুঝা যায় যে কুরআন অন্য কারো বাণী! কিসের সাথে কি পানতা ভাতে ঘী!
মুহাম্মদ আলী:- আল্লাহর বলার প্রয়োজন নেই। "বলো" শব্দটি বলার জন্য। আল্লাহর ইচ্ছা হলে বলবেন না হলে বলবেন না! আমরা সব মুসলিমই জানি কুরআন আমাদের শিক্ষা উপদেশ দেওয়ার জন্যই নাজিল হয়েছে। সুতরাং নতুন করে "বলো" ব্যাবহার করার কোন প্রয়োজন নেই!
অনেক আয়াতে আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে তাই বলো ব্যাবহার করেছেন। যেমন সূরা ইখলাসের ১ নং আয়াতে!
বার বার লাগাতার "বলো" শব্দ ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ কুরআন উপদেশ গ্রন্থ যা আমরা সকলেই জানি! আল্লাহ নিজেই বলেছেন,,,
[৭:২] আল আরাফ
كِتابٌ أُنزِلَ إِلَيكَ فَلا يَكُن في صَدرِكَ حَرَجٌ مِنهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكرى لِلمُؤمِنينَ
এটি কিতাব, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তার সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সংকীর্ণতা না থাকে। যাতে তুমি তার মাধ্যমে সতর্ক করতে পার এবং তা মুমিনদের জন্য উপদেশ।
তাই, বার বার লাগাতার "বলো" বলার নেই কোন প্রয়োজন! আশা করি বুঝেছেন!
[ দয়ানন্দের মূখটা খানিকটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। ]
দয়ানন্দ:- [হতাশ কণ্ঠে] ইয়ে মানে, আমার চা খাওয়া শেষ। আমি চলে যাই। পরে আবার কথা হবে!
মুহাম্মদ আলী:- কোন সমস্যা নেই দাদা। আপনি যাবেন তবে এতোক্ষণ আপনি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আমি একটু করি?
[ দয়ানন্দ হতভম্ব হয়ে গেলো ]
দয়ানন্দ:- [ ভয়ের সূরে ] আচ্ছা করো তোমার জিজ্ঞাসা!
মুহাম্মদ আলী:- আপনি বলতে চাইলেন কুরআনে ব্যাকারণগত ভুল আছে! সূরা ফতিহাই প্রমাণ করে যে কুরআন আল্লাহর বাণী নয়! আমি আপনার জবাব দিয়েছি!
এবার আমার কিছু উত্তর দিন!
১ নং
বেদে বলা হয়েছে,
"যে পরামাত্মা অগ্নিতে, জলে, ওষধীতে ও বনস্পতিতে ব্যাপক রহিয়াছেন, যিনি এই নিখিল ভূবনকে রচনা করিয়েছেন সেই সর্ব ব্যাপক পরমাত্মাকে নমস্কার।"
[ অথর্ববেদ ৭/৭৮/১ (দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রী) ]
আচ্ছা, বেদ যদি পরামাত্মার বাণী হয় তাহলে কেনো পরামাত্মা নিজেই নিজেকে নমস্কার জানাবে? আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি আল্লাহ আমাদের সূরা ফাতিহার মাধ্যমে তা শিখিয়ে দিয়েছেন। সেটাকে তুমি ভুল বলছো যার উত্তর আমি দিয়েছি। এবার তুমিই বলো পরামাত্মা নিজেই নিজেকে কেনো নমস্কার দিলো। আবার বলা "যে পরামাত্মা"! তাহলে কি বেদ অন্য কারো বাণী নয়? অন্যকেউ পরামাত্মাকে নমস্কার দিচ্ছে??
তাহলে তো বেদ নিজেই ব্যাকরণগত ভুলে হাবুডুবু খাচ্ছে!
[ দয়ানন্দের মাথায় আকাশ ভাঙার মতন অবস্থা! দয়ানন্দের মূখটা তখন দেখার মতন ছিলো ]
দয়ানন্দ:- (নিশ্চুপ)
মুহাম্মদ আলী:- এবার আরেকটি বলি, বেদে এমন বহু উদাহরণ আছে। যদি তুমি চাও আমি হাজার খানেক এমন মন্ত্র দেখাতে পারবো! কারণ আমি বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক এককথায় তূলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর একজন ছাত্র!
যেমন আরেকটি যদি বলি, বেদে বলা হয়েছে,,
"হে ঈশ্বর বিদ্বানদের মধ্যে অদ্ভুত ও শ্রেষ্ঠ"...
[ যজুর্বেদ ৭/৪২ ]
আচ্ছা সূরা ফাতিহায় সকল প্রশংসা আল্লাহর বললে যদি কুরআন বিকৃত প্রমাণ হয় তাহলে বেদের ঈশ্বর আবার কোন ঈশ্বরকে বলছে? " হে ঈশ্বর " আবার কোন ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলেছে "শ্রেষ্ঠ"???
এটা তো নমুনা আরো অনেক আছে যা পরবর্তীতে কোন এক সময় বলব।
দয়ানন্দ:- (নিশ্চুপ)
মুহাম্মদ আলী:- তাই মনে রাখবেন কুরআন কখনোই ত্রুটিযুক্ত নয়! যা একদম পরিস্কার।
দয়ানন্দ:- (খুব হতাশ কণ্ঠে) শুনো মুহাম্মদ আলী একটু কষ্ট করে আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো।
[ মুহাম্মদ আলী পানি আনতে গেলো। পানি নিয়ে এসেই দেখলো দরজা খোলা!! দয়ানন্দ নেই অর্থাৎ দয়ানন্দ চলে গেছে.... ]
0 Comments