কুরআনে মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে সকল অভিযোগের জবাব!

কুরআনে মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে সকল অভিযোগের জবাব!
🖋Author:- Aminur Rashid
===============================
.
আসসালামু আলাইকুম,,,
ইসলাম বিরোধীরা কুরআনের মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে কিছু অভিযোগ করে আসুন তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
.
১) অভিযোগ:- কুরআনে বিগ ব্যাং সম্পর্কে কোন কথাই নেই বিগ ব্যাং এর সময় পৃথিবীর অস্তিত্বই ছিলো না কিন্তু কুরআন বলা যে ছিলো কোন ম্যাটার ছিলো না। তাহলে এটা বৈজ্ঞানিক ভুল।

জবাব:- সর্বপ্রথমে আমি বলব কুরআন বিজ্ঞানের বই নয়।কুরআন পথনির্দশনের কিতাব।যদি কোন কথা কুরআনের বিপক্ষে যায় এমন কি "বিজ্ঞানো" তাহলে আমরা কুরআনকেই মানবো।কারণ বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল।আমরা বিজ্ঞানের এমন কিছু মানবো না যার প্রমাণ 100% নেই যাষ্ট থিউরী-ফিউরী তো মানবোই না কুরআনকে বাদ দিয়ে।যেমন আগে বিজ্ঞান বলতো সূর্য স্থির কিন্তু কুরআন বলে গতিশীল তার পরে অনেক বছর পরে প্রমাণ হলো আসলেই সূর্য গতিশীল।তাই আমরা মুসলিমদের কাছে কুরআন এবং বিজ্ঞানের অসংগতি থাকলে সব সময় আমরা কুরআনকেই মানবো একদিন বিজ্ঞান উন্নত হলে কুরআনের‌ কথাই মেনে নিবে।
.
আল্লাহ বলেন,,,
الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
বাস্তব সত্য সেটাই যা তোমার পালনকর্তা বলেন। কাজেই তুমি সন্দিহান হয়ো না।
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৪৭)
.
এবার আসি মূল কথায়:- আসলে বিগব্যাং থিউরী একদম 100% প্রমাণিত নয়।বিগব্যাং থিউরী কেউ সচক্ষে দেখে নি তাই বিগব্যাং যখন তখন ভুল প্রমাণিত হতে পারে।তাই কুরআন ভুল হবে না কুরআন আল্লাহর বানী 100% ফ্যাক্ট কোন থিউরী নয় যে তত্বের পর তত্বের কথায় ভরা থাকবে।যদি বিগব্যাং বিজ্ঞান প্রমাণিত করে 100% তাহলে আমাদের বুঝতে সন্দেহ থাকবে না যে সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াত বিগব্যাং সামর্থন করে আর যদি বিজ্ঞান তা বাতিল করে তাহলেই কুরআনের কথা ভুল হবে না কুরআন যা বলা হয়েছে তা থাকবে সত্য আর সেটা কি আল্লাহই ভালো জানেন হয়তো তা একদিন প্রমাণ হবে বা অপ্রমাণিত থাকবে।কারণ "বিজ্ঞান" মহাবিশ্বের সব কিছু কখনোই জানতে পারবে না।আর আল্লাহর বানীর গভীরতর বার্তা তো জানা অসম্ভব।সব কিছুর উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই।
.
এবার আসুন আমরা দেখে নেই যদি বিগব্যাং "100%" প্রমাণিত হয় তাহলে কিভাবে "সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াত তা সামর্থন করে বুঝা যাবে"।
.
বিগব্যাং এর আগে কোন "ম্যাটার বা পদার্থ" ছিলো না।কিন্তু বিজ্ঞনীরা বলেন "সকল পদার্থ একসাথে ঘণবস্তুতে বিন্দুরূপে ছিলো" দেখুন বিজ্ঞানীরা নিজেরাই বলছে বিগব্যাং এর আগে ম্যাটার ছিলো না কিন্তু আবার বলছে "মহাবিশ্বের সকল পদার্থ একত্রিত ছিলো ঘণঅবস্থায় বিন্দুতে" [ উইকিপিডিয়া- বিগব্যাং/বিগব্যাং থেকে হোম সেপিয়েন্স- জাফর ইকবাল ]
.
কেনো বিজ্ঞান বলছে "সকল পদার্থ" বিগব্যাং এর আগে একত্রিত ছিলো !? যেখানে বিগব্যাং এর আগে কোন "ম্যাটার" ছিলো না ! আসলে বিজ্ঞান এটা বলে যেনো আমরা সহজ ভাবে বুঝতে পারি আসলে "বিগব্যাং এর সময় ম্যাটার" ছিলো না তার পরেও সকল পদার্থ একত্রিত ছিলো বলে এর মানে এই নয় যে বিগব্যাং এর আগে "সকল পদার্থ" ছিলো! বিজ্ঞান শুধু সহজপ্রাচ্য ভাবে বুঝানোর জন্য বলে যে বিগব্যাং এর আগে "মহাবিশ্বের সকল পদার্থ একত্রিত ছিলো বিন্দুতে"আদৌ কি বিন্দু বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিলো নাকি ছিলো না তা নিয়ে রয়েছে অনেক মতভেদ। পদার্থবিজ্ঞানীরা একমত হতে পারে নি।
.
উইকিপিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী,,
.
"মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থানকে সাধারণ আপেক্ষিকতার আলোচনায় বিবেচনা করা হয় যেখানে কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে আপাতভাবে ঘনত্বঅসীম হয়ে যায়। জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা ও মহাবিশ্বতত্ত্বের আলোচনায় মহাবিষ্ফোরণেরসময়কার সর্বপ্রথম দশা হিসেবে মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থানকে বিবেচনা করা হয়। এরকম অদ্বৈত অবস্থানকে গণনা করে পাওয়া যায় বলেই যে এর অস্তিত্ব আসলেই আছে বা ছিল (যেমন মহাবিষ্ফোরণের শুরুতে) তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীগণ একমত হতে পারেন নি। এরকম চরম ঘনত্বে কী হবে তা ব্যাখ্যা করার জন্য বর্তমান জ্ঞান যথেষ্ট নয় এটাও অনেকে বলে থাকেন।" [উইকিপিডিয়া/Singularity]
.
▪ যদি কেউ মেনে নেয় সুবিধার জন্য বিন্দুর কথা বলা হয়েছে তাহলে, কুরআনো ঠিক এক কথা বলে কুরআনে ব্যাবহার করা হয়েছে দুটি শব্দ একটি হলো "ٱلسَّمَآءَ" যার অর্থ:- মহাকাশ,মহাবিশ্ব,স্বর্গ,বায়ুমন্ডল ইত্যাদি। আর এই "ٱلسَّمَآءَ" দিয়েই পুরা মহাশূন্য বুঝায়।
[ রেফারেন্স:- https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/ٱلسَّمَآءَ/ ]
২য় শব্দটি হলো "وَالْأَرْضَ" যার অর্থ পৃথিবী।
‌.
অতএব সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াত অনুযায়ী বিগব্যাং এর আগে (আসসামা + আরদ) = মহাবিশ্ব এক সাথে মিলিত ছিলো যুক্ত ছিলো।তার পরে তা পৃথক পৃথক করা হয় বা সৃষ্টি করা হয় সৌরজগতের বস্তু সমগ্র ইত্যাদি।
.
🔎 আর এই কথাই বলে বিগব্যাং থিউরী।কুরআন বলে মহাবিশ্ব ছিলো "একত্রিত" বিন্দুতে আর বিজ্ঞান বলে মহাবিশ্ব ছিলো "একত্রিত" বিন্দুতে।তাই কুরআন কখনোই বিগব্যাং এর তত্বের উল্টোটা বলে না।
[ রেফারেন্স:- Wikipedia/বিগব্যাং থেকে হোমো সেপিয়েন্স - মো: জাফর ইকবাল ]
.
২) অভিযোগ:- আকাশ মিলে ছিলো মানে? আকাশ বলতে কিছুর অস্তিত্ব বিজ্ঞান স্বীকার করে না।
.
জবাব:- আকাশ নিয়ে ইংরেজি অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা আছে,- 'The region of the atmosphere and outer space seen from the earth', অর্থাৎ, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমন্ডলের এবং তার বাইরে যা কিছু দেখা যায়, সেটাই আকাশ।
আবারঃ আকাশ নিয়ে উইকিপিডিয়া তে বলা আছে,- 'The sky (or celestial dome) is everything that lies above the surface of the Earth, including the atmosphere and outer space', অর্থাৎ, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্টের উপরে যা কিছু আছে, তার সবই আকাশের অন্তর্গত। এর মধ্যে বায়ুমন্ডল এবং তার বাইরের সবকিছুও আকাশের মধ্যে পড়ে'।
.
৩) অভিযোগ:- আবার আয়াতটার ধরণ ও পাগলামো! অবিশ্বাসীরা কি দেখে না? এ আয়াত যদি বিগ ব্যাং বুঝাতো,সেটা কিভাবে কেউ দেখবে? মানুষের উৎপত্তি হয়েছে বিগ ব্যাং এর কোটি কোটি বছর পরে!
.
জবাব:- আয়াতে বলা হয়েছে তারা কি ভেবে দেখে না? তারা কি জানেনা? এটা অনেক জায়গায় পাবেন অনুবাদেও পাবেন।শব্দিক বিশ্লেষণ যদি দেখেন সেটাও পাবেন। আল্লাহ বলেই দিয়েছেন সৃষ্টির সময় আমরা সাক্ষী ছিলাম না। (সূরা কাহাফ আয়াত ৫১)
[ জাদিদ লোগাতুল কুরআন - আল কাউসার প্রকাশনী সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩০ ]
.
৪) গ্যালাক্সি এবং তথাকথিত আকাশ তৈরির আগেই পৃথিবী তৈরি হওয়া খুব বৈজ্ঞানিক,তাই না?
.
জবাব:- আপনারাই বলেন আকাশের অস্তিত্ব নাই আবার বলেন আকাশ তৈরি। ডাবল স্টান্ডার্ডবাজী যাকে বলে আরকি।
আর মূলকথা হলো ইসলাম অনুযায়ী প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি এবং তার পরে আকাশ সৃষ্টি আর আকাশ সৃষ্টির পরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করা হয়েছে বসবাসের যোগ্য করা হয়েছে।এখন হয়তো বলবেন এটা অবৈজ্ঞানিক।আমি বলব,,,
.
"কোনটা আগে সৃষ্টি এটা কি বিজ্ঞানীরা চাক্ষুস দেখেছে !? তখন কি মানুষ ছিলো !? আর যদি ধরেই নেই মহাকাশ আগে সৃষ্টি তাহলেও ভুল হবে না আল্লাহ কি প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করে তার পরে আকাশ বানিয়ে পৃথিবীকে তার স্থানে স্থাপন করতে সক্ষম নন !? নিশ্চই সক্ষম।তাই কোন যুক্তিতে অপ্রমাণিত জিনিস দিয়ে সত্যকে অস্বিকার করছেন !? আপনি কি কখনো দেখেছেন চাক্ষুস নাকি বিজ্ঞানীরা সাক্ষী ছিলো !?"
.
আর যদি আরেকটি ব্যাখ্যা দেই সেটা হলো কুরআনে বলা হয় নি আকাশ সৃষ্টির পরেই পৃথিবী সৃষ্টি বরং আকাশ আগেই ছিলো। আকাশ যদি না থাকতো তাহলে আকাশের দিকে মনোসংযোগ কিভাবে করবেন!? যদি কোন কিছু নাই থাকে তার দিকে মনোসংযোগ কিভাবে করবেন!? সুতরাং দ্বিতীয় ব্যাখ্যা যদি বলি তাহলে আমদের বুঝতে হবে আকাশ আগেই ছিলো যার দিকে আল্লাহ মনোসংযোগ করেছেন এবং তাকে সাতটি ভাগে বিভক্ত করেছেন।
২ ভাবে উত্তর দেওয়া হলো।
.
‌.
"مَا أَشْهَدْتُهُمْ خَلْقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنْفُسِهِمْ وَمَا كُنْتُ مُتَّخِذَ الْمُضِلِّينَ عَضُدًا
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সৃজনকালে আমি তাদেরকে সাক্ষ্য রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃজনকালেও না। এবং আমি এমনও নই যে, বিভ্রান্ত কারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।
(সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ৫১)
.
আলহামদুলিল্লাহ,,,
.
৫) অভিযোগ:- "অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।"
আকাশ থেকে বৃষ্টি হয়,
"আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই।" সুরা:১৫ আয়াত:২২
অথচ নিকটবর্তী আকাশ প্রদীপমালা(তারা) দিয়ে সুশোভিত! সেখান থেকেই বৃষ্টি হয়! এটা কি অবৈজ্ঞানিক নয়?"
.
জবাব:- প্রথমে আয়াতটা দেখে নেই যেখানে বলা হয়েছে নিকটবর্তী আকাশ প্রদীপমালা দিয়ে সুশোভিত,,,,
.
فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।
(সূরাঃ হা-মীম সেজদাহ, আয়াতঃ ১২)
.
দেখুন এখানে আরবী শব্দ "ٱلسَّمَآءَ" যার অর্থ:- মহাকাশ,মহাবিশ্ব,স্বর্গ,বায়ুমন্ডল ইত্যাদি। আর এই "ٱلسَّمَآءَ" দিয়েই পুরা মহাশূন্য বুঝায়।অতএব প্রদীপমালা হলো সৌরজগতে।
[ রেফারেন্স:- https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/ٱلسَّمَآءَ/ ]
.
দ্বিতীয় আয়াত হলো অন্য সূরার যেখানে বলা হয়েছে,,,
.
وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنْتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই।
(সূরাঃ হিজর, আয়াতঃ ২২)
.
এখানে আরবী (সামা) ব্যাবহার হয়েছে যার অর্থ শুধু বায়ুমন্ডল।আর যদি (আসসামা) হতো তাহলেও ভুল হতো না কারণ আসসামার অর্থ বায়ুমন্ডল,মহাশূন ইত্যাদি তাই ভুল কখনোই হবে না।
আর আকাশ দিয়ে বায়ুমন্ডল‌ এবং মহাশূন্য দুইটাই বুঝায় অতএব সঠিক অর্থ আমরা নিব।
.
আশা করি উত্তর পেয়েছেন,,,,
.
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২)


Post a Comment

0 Comments