কুরআন কি ভ্রূনবিদ্যা সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয় ?

কুরআন কি ভ্রূনবিদ্যা সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয় ?
🖋Author:- Aminur Rashid
=================================
পবিত্র কুরআন কোন বিজ্ঞানের বই নয়।কুরআন হলো নিদর্শেন কিতাব।পবিত্র কুরআন শব্দবচনের দিক দিয়ে ঐতিহাসীক দিক দিয়ে বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে সকল দিক দিয়েই প্রসংশা ও আলৌকিতার দাবীদার।পবিত্র কুরআনের ভ্রূনবিদ্যা বিষয়ক কিছু আয়াত আছে যা নিয়ে অনেকেই কুরআন ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করে আসুন আজ তার ব্যবচ্ছেদ করা যাক।
📖 আল্লাহ ﷻ বলেন,,,
ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ
💕 অতঃপর আমি তাকে নুতফা রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। 💕
(সূরাঃ আল মু'মিনূন, আয়াতঃ ১৩)
🔎 এখানে যে নুতফা কে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করা হয়েছে যাকে আমরা বলি জরায়ু। এই নুতফাহ (نُطْفَةٌ) শব্দের অর্থ Drop of fluid of parents’[১] এবং ‘Sperma (seed) of man and of a woman’।[২] অর্থাৎ, ‘পানির ফোঁটা যা পিতা-মাতা থেকে নির্গত হয়’ এবং ‘পুরুষ অথবা নারীর বীজ’। বীজ এর বৈশিষ্ট্য গাছ উৎপাদন করা। তাই পুরুষ অথবা নারীর বীজ বলতে মানব দেহে এমন কিছুকে বোঝানো হয়েছে, যার বৈশিষ্ট্যও একই।অতএব নুতফা শব্দ দিয়ে শুধু পুরুষের শুক্রণু নয় বরং (শুক্রাণু + ডিম্বাণু ) বুঝানো হয়েছে।এখানে বীর্যের কথা বলা হয় নি কারণ বীর্যের আরবী হলো (مَنِي)।[৩] আর শুক্রাণু হলো বীর্যের এক অংশ যাকে বলে নুতফা।কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘সে কি স্খলিত বীর্যের একটি অংশ অর্থাৎ নুতফা ছিলো না?’[৪]
আল্লাহ সংমিশ্রিত নুতফা থেকে আমাদের সৃষ্টি করেছেন "আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি ‘নুতফাতিন আমশাজ(نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ)’ থেকে।"[৫] অর্থাৎ, মিশ্রিত শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে।
 সুতরাং, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলে যে জাইগোট তৈরি হয়, সেটাই জরায়ুতে স্থাপিত হয় নিরাপদে, এবং সংরক্ষিতভাবে।
📖 আল্লাহ ﷻ বলেন,,,
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
💕 এরপর আমি নুতফাকে আলাক্ব রূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আলাক্ব’কে মুদগাহ’তে পরিণত করেছি, এরপর সেই মুদগাহ থেকে ইজামাহ সৃষ্টি করেছি, অতঃপর ইজামাহ’কে লাহমা দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন বা অন্য এক সৃষ্টিরূপে বের করে এনেছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়! 💕
(সূরাঃ আল মু'মিনূন, আয়াতঃ ১৪)

◉ আলাক্ব ◉
"এরপর আমি নুতফাকে আলাক্ব রূপে সৃষ্টি করেছি"
🔎 আরবী আলাক (عَلَق) শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে।আলাক (عَلَق)-এর অর্থ আমরা বিখ্যাত অ্যারাবিক টু ইংলিশ ডিকশনারিতে প্রধানত তিনটি পাই। প্রথমটি হলো, ‘Leech like substance’ বা ‘জোঁকের মতো বস্তু’।[৬] তারপরের অর্থ হলো, ‘Hanging, suspended, clinging thing অর্থাৎ, ঝুলন্ত, কোনোকিছুর সাথে সংলগ্ন আছে এমন’।[৬] এবং সর্বশেষ অর্থ হলো, ‘Blood Clot অর্থাৎ, জমাট বাঁধা রক্ত’।[৬] আর এই আয়াতের অর্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থ নিবো। কারণ এই দু’টি অর্থই কন্টেক্সটের সাথে মেলে। আরব রাও আলাক দিয়ে তাই বুঝতো গুগল ট্রান্সলেটরে আরবিতে ‘عَلَق’ লিখে সার্চ দিলেই পাবেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।[৭]
অর্থাৎ, জোঁকের মতো বস্তু এবং ঝুলন্ত বা কোনোকিছুর সাথে সংলগ্ন আছে এমন। কারণ জোঁক যেমন যেখানে লেগে থাকে সেখান থেকে রক্ত চোষে, ভ্রূণও তেমন মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে পুষ্টি নেয় এবং ঝুলে থাকে।যা বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিযুক্ত।
 বিজ্ঞান আমাদের বলে, একটি ভ্রূণ মায়ের জরায়ুতে থাকাকালীন ১৫ থেকে ২৫ দিনে অর্থাৎ ২য় ও ৩য় সপ্তাহে জোঁকের মতো আকৃতিতে পরিণত হয়।[৮] এবং এটি তখন কানেক্টিং স্টকের সাহায্যে ঝুলে থাকে যা পরে আম্বিলিকাল কর্ডে পরিণত হয়।[৯] সুতরাং আমরা বলতে পারি, আল্লাহ তা’আলা ‘নুতফাতিন আমশাজ’ বা নারী এবং পুরুষের প্রজনন সংক্রান্ত মিশ্রিত পানিকে ‘আলাক’ অর্থাৎ জোঁকের মতো আকৃতিতে পরিণত করেছেন ১৫-২৫ দিনে।

◉ মুদগাহ ◉
"অতঃপর আলাক্ব’কে মুদগাহ’তে পরিণত করেছি"
🔎 মুদগাহ (مُضْغَةً) এর মূলত দুই ধরনের অর্থ পাওয়া যায়। সেগুলো হলো, ‘একটি মাংসের টুকরা’ এবং ‘চিবানো মাংসের মতো জিনিস’।[১০] আল্লাহ তা’আলা বলেন তিনি ‘আলাক্ব’কে অর্থাৎ জোঁকের মতো বস্তুটিকে দ্রুত ‘মুদগাহ’-তে, অর্থাৎ চিবানো মাংসের টুকরার আকৃতিতে পরিণত করেন। আমি ‘দ্রুত’ কথাটি ব্যবহার করলাম কারণ এই লাইনের শুরুতে ‘ফা’ (ف) আছে এবং আরবিতে ‘ফা’ যদি কোনো দুই বাক্যের মাঝখানে বসে, তাহলে এটি ওই দুই বাক্যের মধ্যে কাছের সম্পর্ক বুঝায়।
 ভ্রূণবিদ্যা বলে, একটি ভ্রূণ মায়ের জরায়ুতে থাকাকালীন ২৮ তম দিনে এতে সোমাইটগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। এই অবস্থায় এটি ৫ম সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত বা ৪০ দিন পর্যন্ত থাকে। তারপর এই সোমাইট থেকে পরে মেরুদণ্ডের হাড় ও মাথায় কিছু হাড় এবং পর্শুকা তৈরি হয়। তখন এটিকে দেখতে চর্বিত মাংসের টুকরার মতো লাগে।[১১]

◉ ইজামা ও লাহমা ◉
"এরপর সেই মুদগাহ থেকে ইজামাহ সৃষ্টি করেছি, অতঃপর ইজামাহ’কে লাহমা দ্বারা আবৃত করেছি"
🔎 এখানে ইজামা (عِظَامًا) এর অর্থ হচ্ছে হাড় এবং লাহমা (لَحْمًا) অর্থ মাংস বা সঠিকভাবে বোঝাতে মাংসপেশী ও পেশী সংশ্লিষ্ট জিনিস।[১২] অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলা ‘মুদ্গাহ’ বা ‘এক টুকরা মাংস’ থেকে ‘ইজামা’ বা ‘হাড়’ সৃষ্টি করেন এবং তার পরে হাড়কে লাহমা বা মাংসপেশী দিয়ে আবৃত করে দেন এবং এটাও দ্রুত হয়। কারণ, এই দুই লাইনও ‘ফা’ (ف) শব্দটি দিয়ে যুক্ত। আর সেটা হয় ৪২ দিন অতিক্রম হবার পর।[১৩]
 ভ্রূণবিদ্যা আমাদের বলে ৬ সপ্তাহ পরে অর্থাৎ ৪২-৪৫ দিনে ভ্রূণে হাড় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়।[১৪] হাড় তৈরি হয় মেসেনকাইম থেকে। এবং ৭ম সপ্তাহে মাংস তৈরি হবার প্রক্রিয়া অর্থাৎ, মায়োজেনেসিস হিসেবে শুধু ঘনীভূত মেসেনকাইম দেখা যায়।[১৫] তারপরে মায়োটোম বা মাংস যেটি থেকে তৈরি হবে, সেটি দেখা যায়। তারপর ৮ম সপ্তাহে সেই মায়োটোম থেকে ‘লিম্ব বাডে’ বা নির্দিষ্ট করে বললে, প্রথমে হাতে, তারপর পায়ে মাংস তৈরি শুরু হয়।[১৬] সুতরাং, আগের হাড় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়, তারপরে তার চারপাশে মাংস হওয়া শুরু হয়। কিছু বইয়ে অবশ্য ৭ম সপ্তাহে মাসেল বা মাংস তৈরি শুরু হয় বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু তাহলেও এক্ষেত্রে কুরআনের তথ্য ভুল নয়। কারণ সপ্তম সপ্তাহ শুরু হয় ৪২ দিনে এবং শেষ হয় ৪৯ দিনে। এর মধ্যে প্রথমে হাড়ের কাঠামো গঠন হয় এবং এরপরে হাড়ের চারিদিকে মাংস তৈরি হয়। এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখবো , মায়োটোমকে তখনই মাংসপেশী বলা যাবে যখন মায়োটোম মাংসপেশীর বৈশিষ্ট্য পূরণ করবে।
“বিখ্যাত এম্ব্রায়োলজিস্ট জন অ্যালেন এবং বেভারলেই তাঁদের The Fundamentals of Human Embryology বইয়ে মাংসপেশি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে লিখেছেন যে, হাড়ের কাঠামো গঠিত হবার পরেই দ্রুত মাংশপেশী তৈরি করার কোষগুলো অর্থাৎ মায়োব্লাস্টগুলো হাতের সামনে এবং পিছনে জমা হয়ে মাংসপেশীর পিণ্ড তৈরি করে।’[১৭] আগে হাড় তৈরি শুরু হয়, তারপর তার চারপাশ থেকে আস্তে আস্তে মায়োব্লাস্ট ডিফারেন্সিয়েশন হতে হতে মাংসপেশী তৈরি হয়।

◉ নতুন এক সৃষ্টিরূপে ◉
"অবশেষে তাকে নতুন বা অন্য এক সৃষ্টিরূপে বের করে এনেছি" মাইক্রোস্কোপ
🔎 নতুন সৃষ্টি বলার কারণ হলো, এই প্রক্রিয়াগুলো ঘটার আগ পর্যন্ত মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ভ্রূণ বাহ্যিকভাবে আলাদা করা যায় না। দেখো, কুরআন এই সূক্ষ্ম ব্যাপারেও আমাদের সঠিক তথ্য দিয়েছে। কত কল্যাণময় স্রষ্টা তিনি, সুবহানাল্লাহ!
 এমন তথ্য যা কখনোই ১৪০০ বছর আগে কেউ জানতো না।জানবেই বা কিভাবে সেই সময় তো মাইক্রোস্কোপ আবিস্কার হয় নি।যা থেকে তা দেখা যেতো।আর কোন ধর্মীয় গ্রন্থ এমন বৈজ্ঞানিক ব্যাপার বলে দেয় না।কুরআন প্রমাণ করে যে এটা কোন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয় এটা হলো আল্লহর বানী।আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।আমীন
 কৃতজ্ঞতা স্বিকার:- আশরাফুল আলম।আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।আমীন ❤ ]
তথ্যসূত্র
[১] A Word for Word Meaning of Quran By Mohar Ali; Volume: 02; Page: 371,924
[২] Arabic-English lexicon By Edward William Lane; Volume: 08; Page: 288
E-link: http://lexicon.quranic-research.net/data/25_n/167_nTf.html
Sperma Meaning: https://medical-dictionary.thefreedictionary.com/sperma-
[৩] সিমেন: https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/semen/
[৪] সূরা ইনসান (৭৬); আয়াত নং- ০২
[৫] সূরা কিয়ামাহ (৭৫); আয়াত: ৩৭
[৬] Arabic-English lexicon By Edward William Lane; Volume: 05; Page: 423-417
[৭] https://translate.google.com/#auto/en/%D8%B9%D9%84%D9%82%D8%A9
[৮] The Developing Human, Clinically Oriented Embryology By Dr. Keith L. Moore; 10th edition; Page : 78
[৯] http://www.embryology.ch/anglais/fplacenta/cordon01.html
[১০] Arabic-English lexicon By Edward William Lane; Volume: 08; Page: 275
[১১] The Developing Human, Clinically Oriented Embryology By Dr. Keith L. Moore; page: 619
[১২] A Word for Word Meaning of Quran By Mohar Ali; Volume: 02; Page: 1078
[১৩] সহীহ মুসলিম-তাকদীর অধ্যায়; হাদীস নং- ৬৪৮৫ (ইঃফাঃ)
[১৪] Langman’s medical embryology (9th Edition); Chapter: Skeletal System Development; Page no- 196-171
The Developing Human, Clinically Oriented Embryology By Dr. Keith L. Moore(8th edition); Chapter: The limbs; page : 441
[১৫] Langman’s medical embryology (9th Edition); Chapter: Muscular System Development; Page no- 203
[১৬] Langman’s medical embryology (9th Edition); Chapter: Muscular System Development; Page no- 208-199
[১৭] The Fundamentals of Human Embryology By John Allen and Beverley Kramer; 2nd Edition, Wits University Press(2010); Page no: 148

Post a Comment

0 Comments