মনুসংহিতা ও পুরান এবং আমার জিজ্ঞাসা - ১

মনুসংহিতা ও পুরান এবং আমার জিজ্ঞাসা  - ১
বিষয়:- অমানবিক, বর্ণভেদ, অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক কথাবার্তা ও তার বিশ্লেষণ!
🖋Author:- Irfan Hossain

____________________________________________________________________________


আপনার কাছে কি মনুসংহিতা আছে!?

যদি না থাকে কোন সমস্যা নেই। আমাদের ওয়েবসাইটে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে সকল বই ইবুক আকারে আছে।

ডাউনলোড করুন

মনুসংহিতা পড়ে কিছু প্রশ্ন সংকলন করা হয়েছে আশাকরি জ্ঞানীরা উত্তর দিবেন।

START

আমার জিজ্ঞাসা:- ব্রাহ্মণরা কি জন্মগত ভাবেই শ্রেষ্ঠ!? হিন্দু শাস্ত্রে চারটি বর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণ সবার শ্রেষ্ঠ ,বাকি সবাই নিম্নবর্ণের হিন্দু,,  এবং ক্ষত্রিয়রা ব্রাহ্মণের তুলনায় কম শ্রেষ্ঠ! অনেক হিন্দুরাই বলে থাকে, কর্মগুণে ব্রাহ্মণ যে কেউ হতে পারে!

এটা একটি মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয় দেখি মনুসংহিতা কি বলে,,

ব্রাহ্মণ জন্মগ্রহণ করা মাত্রই সকল লোকের উপরিবর্তী হন!অর্থাৎ সমস্ত লোকের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হন! কারণ: ব্রাহ্মণই সকলের ধর্মকোষ ধর্মসমূহ রক্ষার জন্য প্রভু সম্পন্ন হয়ে থাকেন

(মনুসংহিতা, ১ম অধ্যায়, শ্লোক নং ৯৯, পৃষ্ঠা নং ১৬, মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, কলকাতা)

আমার জিজ্ঞাসা:- শুদ্রের বেদ পাঠের অনুমতি আছে কি!?

প্রজাপতি শুদ্রকে অপর তিন বর্ণের দাসরূপে সৃষ্টি করেছেন,তিন বর্ণের সেবা করাই শুদ্রের ধর্ম! শুদ্র ধন সঞ্চয় করবেনা, কারণ নীচ লোকে ধন দিয়ে উচ্চ শ্রেনীর লোককে বশীভূত করে, ধার্মিক শুদ্র রাজার অনুমাতিতে ধন সঞ্চয় করতে পারে,

শুদ্রের বেদের অধিকার নেই, ব্রাহ্মণাদি তিন বর্ণের সেবা এবং তাদের অনুষ্ঠিত যজ্ঞই শুদ্রের যজ্ঞ

(মহাভারত, শান্তিপর্ব ৭, বর্ণাশ্রমধর্ম , পৃষ্টা নং ৪৯৬, রাজশেখর বসু)

আমার জিজ্ঞাসা:- শুদ্ররদের কেনো এতো অপমান!?

শুদ্রের দ্বারা ব্রাহ্মণ দাসত্বকর্ম করিয়ে নিবেন!
যেহেতু, বিধাতা শুদ্রকে ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছেন!

(মনুসংহিতা, ৮ম অধ্যায়, ৪১৩নং শ্লোক, পৃষ্ঠা নং ৩৭৫, মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী,কলকাতা)

আমার জিজ্ঞাসা:- শুদ্রের দায়িত্ব এমন কেনো?

প্রভু ব্রহ্মা, শুদ্রের জন্য একটি কাজই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন! কোন নিন্দা না করে এই তিন বর্ণের  অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রীয়, বৈশ্যের শুশ্রুষা করা!

(মনুসংহিতা, প্রথম অধ্যায়, শ্লোক নং ৯১, পৃষ্টা নং ১৫, মানবেন্দু বন্ধ্যোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, কলকাতা ৭০০ - ০০৬)

আমার জিজ্ঞাসা:- শুদ্রের  প্রকৃষ্ট ধর্ম কোনটি!?

ব্রাহ্মণের পরিচর্যা করাই শুদ্রের প্রকৃষ্ট ধর্ম বলে
কথিত হয়, কারণ এছাড়া আর যা কিছু কাজ সে করে তা নিষ্ফল!

(মনুসংহিতা, অধ্যায় ১০ম, শ্লোক নং ১২৩, পৃষ্টা নং ৪৮২,মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, কলকাতা)

আমার জিজ্ঞাসা:- ব্রাহ্মণ শুদ্রকে কি দিবে??

ব্রাহ্মণ উচ্ছিষ্ট অন্ন, জীর্ণ-পরিত্যাক্ত(ক্ষয়প্রাপ্ত) বস্ত্র, ধানের পুলক( নিস্তেজ বা অসার ধান),

জীর্ণ পুরাতন( ক্ষয়প্রাপ্ত) পরিচ্ছদ শয্যা- আসন প্রভৃতি আশ্রিত শুদ্রকে দিবেন

(মনুসংহিতা, ১০ম অধ্যায়, শ্লোক নং১২৫, পৃষ্ঠা ৪৮২, পণ্ডিত মানবেন্দু বন্ধ্যোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, কলকাতা)

আমার জিজ্ঞাসা:- ব্রাহ্মণের সাথে শুদ্র বসার শাস্তি এমন কেনো? এটা কি বর্বরতা নয়!?

যদি কোন শুদ্র জাতীয় ব্যাক্তি, ব্রাহ্মণের সঙ্গে
একই আসনে বসে তা হলে তার কোমরে ছেঁকা লাগিয়ে দাগ দিয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিবে,
কিংবা তার পাছা খানিকটা কেটে দিবে

(মনুসংহিতা, ৮ম অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং ৩৪২, শ্লোক নং ২৮১, পণ্ডিত মানবেন্দু বন্ধ্যোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, কলকাতা- ৭০০ ০০৬)

আমার জিজ্ঞাসা:- এ কেমন বিচার!? শুদ্ররা কি মানুষ নয়? নাকি তারা নিম্ন শ্রেণীর মানুষ!? এ কেমন বিধান?

ব্রাহ্মণের নাম হবে মঙ্গলবাচক শব্দ ইন্দ্র, বায়ু প্রভৃতি!

ক্ষত্রিয়ের নাম হবে বলসূচক শব্দ যেমন
দুর্যোধন নৃসিংহ প্রভৃতি!

বৈশ্যের নাম হবে ধনবাচক শব্দ যেমন গোমান, ধনপতি প্রভৃতি!

শুদ্রের নাম হবে জুগুষ্পিত অর্থাৎ নিন্দা বা
হিনতাবোধক যেমন কৃপনক,শবরক

(মনুসংহিতা, অধ্যায় ২য়, শ্লোক নং ৩১, পণ্ডিত মানবেন্দু বন্ধ্যেপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী, কলকাতা)

আমার জিজ্ঞাসা:- শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীগণের সতিদাহ বর্বরতা নয়!?

তীরের আঘাতে শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণ রুকমিনী, সভ্যভামা, জাম্ববতীসহ সবাই স্বামীর চিতায় সহমরণে (সতীদাহ) গেলেন৷

( বিষ্ণুপুরাণ ৯৪ পৃ: পন্ডিত চারুচন্দ্র বন্ধ্যোপাধ্যায় প্রকাশক ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস ৯৩ এ লেনিন সরনি, কলকাতা- ৭০০ ০১৩ )

আমার জিজ্ঞাসা:- এটা কি অবৈজ্ঞানিক নয়? বায়ু তো সব জায়গায় থাকে তাহলে সেটার সামনে মলমূত্র ত্যাগ আর বললাম না। বাকিটা নিজেরাই বুঝুন। ভুল নয় কি?

মানুষের বুদ্ধি নষ্ট হয় যেভাবে-
অগ্নি, সূর্য, চন্দ্র, জল, গরু ও বায়ু এগুলিকে
সামনে রেখে মলমুত্র ত্যাগ করলে সেই ব্যাক্তির বুদ্ধি নষ্ট হয়ে যায় 
  
( মনুসংহিতা, ৪র্থ অধ্যায়, শ্লোক নং ৫২, পৃ:নং. ১৩৩, মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী )

আমার জিজ্ঞাসা:- উপবাসে থাকার এ কেমন নিয়ম!?

গোমুত্র, গোবর, দুধ,দই, ঘি এবং কুশোদক এগুলো মিশিয়ে একদিন খেয়ে থাকতে হবে,
সেদিন আর অন্য কিছু খাওয়া চলবে না এবং পরের দিন উপবাস করতে হবে!

( মনুসংহিতা, অধ্যায় ১১, ৫২৮ পৃ:  মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম প্রকাশনী)

আমার জিজ্ঞাসা:- আমার সবাই জানি মদ পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু অদ্ভুত নিয়ম
আমরা দেখতে পাই হিন্দু ধর্মে,  যেখানে মদ পান নিয়েও বর্ণবৈষম্য আছে সব বর্ণের লোকদের মদ পান করার অনুমতি নেই, শুধু ক্ষত্রিয়দের জন্য মদ পানের আইন আছে শাস্ত্রে এমন কেনো?

শ্লোক :: ন মাংসভক্ষণে  দোষো ন মদ্যে  ন চ মৈথুনে প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং নিবৃত্তিস্ত্ত মহাফলা /৫৬
অর্থ:  ক্ষত্রিয়াদির পক্ষে মদ্যপানেও কোন দোষ নেই, এবং বৈধ মৈথুনেও কোন পাপ হয় না!

(মনুসংহিতা, অধ্যায় ৫ম, শ্লোক নং ৫৬, পৃষ্টা নং ১৮৩,মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, শ্রীবলরাম, প্রকাশনী,কলকাতা)

ইসলাম ধর্মে এ বিষয়ে যা বলে,,,

ইসলাম ধর্মে বর্ণপ্রথা বা জাতিবৈষম্য নেই, মদ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর

তাই আল্লাহ পাক কুরআনে সমস্ত মুমিন মুসলমানদের জন্য তা হারাম করেছেন, আল্লাহ পাক বলেন ---

সূরাঃ আল-মায়িদাহ [5:90]

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْخَمْرُ وَٱلْمَيْسِرُ وَٱلْأَنصَابُ وَٱلْأَزْلَٰمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ ٱلشَّيْطَٰنِ فَٱجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।

O ye who believe! Intoxicants and gambling, (dedication of) stones, and (divination by)
arrows, are an abomination,- of Satan´s handwork: eschew such (abomination), that ye may prosper.

এছাড়া ও বলা আছে

মদ পান করবেনা। কেননা তা সমস্ত পাপ কাজের উৎস।  [ইবনে মাযাহ ৪০৩৪]

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,

[ বিঃদ্রঃ এই আর্টিকেল পুরোপুরি তথ্য ও গবেষণার মাধ্যমে লিখা হয়েছে। তারপরেও কোন ভুলত্রুটি থাকলে আমাদেরকে জানাবেন। সত্য উন্মোচন হবে ইনশাআল্লাহ। সত্য জানুন এবং সত্যের পথে চলুন ]

আরও পড়ুন

ত্রিপিটক এবং আমার জিজ্ঞাসা - ১
ইসলাম কি বর্ণপ্রথা বা দল বিভক্তি আছে!?

Post a Comment

9 Comments

  1. Replies
    1. যাযাকআল্লাহ খায়রান। শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।

      Delete
  2. এক হিন্দু বলেছিল ওদের ধর্মীয় গুরুরা নাকি জাত, বর্ণপ্রথা তৈরি করেছে এগুলা নাকি সত্য নয় কিন্তু ওদের কিতাবেই তো এই বিষয়ে লেখা নাকি মনুসংহিতা বিশ্বস্ত কিতাব নয়

    ReplyDelete
    Replies
    1. মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। প্রথমত বলব যে হিন্দু লোক আপনাকে বলেছে তাদের ধর্মগ্রন্থে নেই বরং পন্ডিতরা বর্ণপ্রথা বানিয়েছে সেই লোকটি পুরপুরি মিথ্যা কথা বলেছে। মনুসংহিতা বেশিরভাগ হিন্দুই মানে এমন কি আর্যদের কিভাবেও মনুসংহিতার রেফারেন্স বিদ্যমান। সে যাইহোক মনুসংহিতা না মানলেও কোন কিছু আসে যায় না কারণ বর্ণপ্রথা শুধু মনুসংহিতাতেই না বরং বেদ ও গীতাতেও আছে।

      আপনি পড়তে পারেন "হিন্দুধর্ম সংক্রান্ত" ক্যাটাগরিতে আমি বেদ ও গীতা থেকে হিন্দুধর্মের বর্ণপ্রথা প্রমাণ করেছি। পড়লেই বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

      [ দেরিতে কমেন্টের উত্তর দেওয়ার জন্য দুঃখিত ]

      Delete
    2. https://uncovertrue.blogspot.com/2020/04/hinduism.html?m=1

      Delete
    3. ভাই হিন্দু ধর্মে একত্ববাদ সম্পর্কে যা আছে সব বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করুন

      Delete
    4. জ্বী ইনশাআল্লাহ। আলোচনা করব।

      Delete
  3. শ্রীমদ্ভগবত গীতার এক্সে রিপোর্ট পেশ করবেন এই আশা ব্যক্ত করলাম

    ReplyDelete