হযরত মুহাম্মাদ (স) কি জীবনে কোনো পাপ করেছেন?



লেখক:- নাবিল খান নেবুদা
_________________________________________________________________________________

খ্রিস্টান মিশনারিগণ বলে থাকেন,মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাপী (নাঊযু বিল্লাহ!) তাই তিনি শাফা‘আত করতে পারবেন না; মাসীহ নিষ্পাপ কাজেই তিনি শাফা‘আত করবেন। লক্ষ্য করুন:-

প্রথমত: এক পাপী অন্য পাপীর শাফা‘আত করতে পারবেন না- কথাটি মহা মিথ্যা। খৃস্টানগণ বিশ্বাস করেন যে, মূসা, হারূন ও অন্যান্য সকল নবী পাপী (নাঊযু বিল্লাহ); কিন্তু আল্লাহ তাদের সুপারিশ গ্রহণ করেন। ইস্রায়েলীয়গণ গোবৎস পূজা করলে আল্লাহ তাদের সকলকেই ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন মূসা (আ) তাদের জন্য সুপারিশ করেন এবং আল্লাহ সুপারিশ গ্রহণ করেন। (যাত্রাপুস্তক ৩২/৭-১৪) আরো কয়েকবার ইস্রায়েলীয়গণ মহাপাপে লিপ্ত হলে আল্লাহ সকলকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে মূসা (আ) ও হারূন (আ)-এর শাফাআতে তাদের ক্ষমা করে দেন (গণনা পুস্তক ১৬ এবং ২১ অধ্যায়: ১৬/২০-২৪ ও ৪১-৫০; ২১/৪-৯)।

দ্বিতীয়ত: ঈসা মাসীহ নিষ্পাপ কথাটিও ইঞ্জিলের আলোকে অসত্য। আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ঈসা মাসীহ ও অন্যান্য সকল নবী-রাসূল নিষ্পাপ ছিলেন। কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস বা প্রচলিত ইঞ্জিলকে আল্লাহর কালাম বলে বিশ্বাস করলে বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈসা মাসীহ মহাপাপী ছিলেন। কারণ, তিনি মানুষদেরকে গালিগালাজ করতেন (মথি ১৬/২৩, ২৩/১৩-৩৩), অন্য বংশ বা ধর্মের মানুষদেরকে শূকর ও কুকুর বলে বিশ্বাস করতেন ও এরূপ সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা দিয়েছেন (মথি ৭/৬; ১৫/২২-২৮, মার্ক ৭/২৫-২৯), পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদেরকে চোর-ডাকাত বলতেন (যোহন ১০/৭-৮), নিরপরাধ মানুষদেরকে অভিশাপ দিতেন (মথি ২৩/৩৫-৩৬), অকারণে হত্যা করতেন (মথি ২১/১৮-২১, মার্ক ৫/১০-১৪; ১১/১২-২২), অবিশ্বাসীদেরকে নির্বিচারে ধরে ধরে তাঁর সামনে জবাই করার নির্দেশ দিতেন (লূক ১৯/২৭), মিথ্যা ওয়াদা ও ভবিষ্যদ্বাণী করতেন (মথি ১৬/২৭-২৮: ১৯/২৮: মার্ক ২/২৫-২৬, ১১/২৩, ১৬/১৭-১৮: লূক ১৮/২৯-৩০, যোহন ৩/১৩), মদ পান করে মাতাল হতেন (লূক ৭/৩৪-৫০, যোহন ১৩/৪-৫), বেশ্যা মেয়েদেরকে তাঁকে স্পর্শ করতে ও চুম্বন করতে দিতেন (লূক ৭/৩৪-৫০, ৮/১-৩, যোহন ১১/১-৫)। তিনি নিজের মায়ের সাথে ভয়ঙ্কর বেয়াদবি করেছেন। একদিন তাঁর মা তাঁকে বলেন যে, তাদের দ্রাক্ষারস (মদ) নেই। তখন “যীশু তাহাকে কহিলেন, হে নারি, আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কী? (Hey woman, what have I to do with thee?) (যোহন ২/৪) এভাবে বারংবার তিনি মাকে “ওহে নারি” (Woman) বলে সম্বোধন করেছেন (যোহন ১৯/২৬); তাঁকে সাক্ষাৎ দানে অস্বীকার করেছেন ও তুচ্ছ করেছেন। (মথি ১২/৪৬-৫০; মার্ক ৩/৩১-৩৫; লূক ৮/১৯-২১)।ওল্ড টেস্টামেন্ট মতে,পিতা-মাতার সাথে সামান্যতম বেয়াদবির শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।কিন্তু ঈসা মসীহ বারংবার নিজের মায়ের সাথে বেয়াদবি করে ওল্ড টেস্টামেন্টের আইন ভেঙ্গেছেন।এগুলি পাপ না হলে পাপ কী?

তৃতীয়ত: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাপী কথাটিও কুরআন, হাদীস ও বাস্তবতার আলোকে মহা মিথ্যা কথা। খৃস্টান প্রচারকগণ কুরআন বা হাদীস থেকে একটি তথ্যও পেশ করতে পারবেন না যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুক সময়ে অমুক পাপ করেছিলেন।

চতুর্থত: কুরআনে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অতীত ও ভবিষ্যতের সকল পাপ ক্ষমা করেছেন। (সূরা ফাতহ ১-২ আয়াত) আরো বলা হয়েছে যে, হে নবী আপনি আপনার ও মুমিন নারী-পুরুষদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। (সূরা মুমিন ৫৫ আয়াত ও সূরা মুহাম্মাদ ১৯ আয়াত)। এছাড়া বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাম্মাদ(স) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন বা ইসতিগফার পড়তেন। এ থেকে তারা বলতে চান যে তিনি পাপী ছিলেন (নাঊযূ বিল্লাহ)।

আরবি ذَنْب শব্দের অর্থ ভুল,ত্রুটি,দোষ,পাপ ইত্যাদি।আরবি একটি শব্দের অনেকগুলো অর্থ হয়।
নবি রাসুলরা যে অনেক সময় ভুল-ত্রুটি করেছেন এটা আমরা অস্বীকার করি না।যেমনঃ হযরত মুহাম্মাদ(স) নামাজে ভুল করেছেন।তারপর সাহু সেজদা দিয়ে ভুল ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে মিনতি করেছেন।একমাত্র পাপের ক্ষেত্রেই নয়,বরং ভুল করার পরও ক্ষমা চাওয়া যায় এবং আমাদের সমাজে এটা প্রচলিত।

পাশাপাশি আরবি "গুফরান" অর্থ পাপে লিপ্ত হওয়ার পরে ক্ষমা করাই শুধু নয়। কাউকে পাপ থেকে রক্ষা করাকেও "গুফরান" বলা হয়।"গুফরান" শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো "পর্দা/সংরক্ষণ করা/রক্ষা করা"।
এটা অনেকটা আরবি "হেফাজত" শব্দের সমার্থক।এজন্য যুদ্ধের সময় মাথায় যে হেলমেট বা শিরস্ত্রাণ ব্যবহৃত হয়,তাকে আরবি,ফারসি ও উর্দু ভাষায় "মিগফার" বলা হয়।কারণ তা মাথাকে পর্দা করার মাধ্যমে আঘাত থেকে রক্ষা/সংরক্ষণ করে।
এছাড়া আমরা অনেক সময় বলে থাকি,নারীদের পর্দা(হিজাব) করা উচিত।এটা নারীদেরকে পুরুষের কুদৃষ্টি হতে রক্ষা (হেফাজত) করবে।অর্থাৎ পর্দা/গুফরানের কাজ হলো রক্ষা/হেফাজত করা।

কুরআন-হাদীস থেকে প্রমাণিত যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো পাপে লিপ্ত হন নি। বিরোধীরাও প্রমাণ করতে পারবেন না যে, তিনি অমুক সময়ে অমুক কর্ম করেছেন যা তাঁর জন্য পাপ বলে গণ্য। এতে প্রমাণিত হয় যে, “তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের পাপ গুফরান করেছেন” অর্থ তোমাকে অতীতে ও ভবিষ্যতে পাপের কলঙ্কে নিপতিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

পাশাপাশি মুহাম্মাদ(স) নিজের ও উম্মতের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে সংরক্ষণ (গুফরান) প্রার্থনা করতেন।অর্থাৎ আল্লাহ যেনো আমাদের পাপ থেকে সংরক্ষণ করেন।পাপে নিপতিত হতে না দেন।

(১)

হযরত মুহাম্মাদ(স) কুরায়েশদের নিয়ম অনুযায়ী হজ্জের সময় কখনো তাদের সাথে মুযদালিফায় অবস্থান করেননি শিরকি কর্মকান্ডের জন্য,বরং অন্যদের সাথে আরাফাতে অবস্থান করতেন। তাঁকে সেখানে দেখে একবার জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম আশ্চর্য হয়ে বলে উঠেছিলেন, وَاللهِ مِنَ الْحُمْسِ فَمَا شَأْنُهُ هَا هُنَا ‘আল্লাহর কসম! এ তো হুম্স-দের সন্তান। তার কি হয়েছে যে, সে এখানে অবস্থান করছে?
[বুখারী হা/১৬৬৪; মুসলিম হা/১২২০]

(২)

তিনি কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। একবার তিনি স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে কা‘বাগৃহ তাওয়াফ করছিলেন। সে সময় যায়েদ মূর্তিকে স্পর্শ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। দ্বিতীয়বার যায়েদ আরেকটি মূর্তিকে স্পর্শ করেন বিষয়টির নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করেন। এরপর থেকে নবুঅত লাভের আগ পর্যন্ত যায়েদ কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। তিনি কসম করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) কখনোই মূর্তি স্পর্শ করেননি। অবশেষে আল্লাহ তাকে অহী প্রেরণের মাধ্যমে সম্মানিত করেন। [ত্বাবারানী কাবীর হা/৪৬৬৮; হাকেম হা/৪৯৫৬, ৩/২১৬; সনদ ছহীহ]

(৩)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনোই মূর্তির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত পশুর গোশত কিংবা যার উপরে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, এমন কোন গোশত ভক্ষণ করেননি’ (বুখারী ফাতহসহ হা/৫৪৯৯)।

(৪)

কা‘বা পুনর্নির্মাণ কালে দূর থেকে পাথর বহন করে আনার সময় চাচা আববাসের প্রস্তাবক্রমে তিনি কাপড় খুলে ঘাড়ে রাখেন। ফলে তিনি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। অতঃপর হুঁশ ফিরলে তিনি পাজামা কঠিনভাবে বেঁধে দিতে বলেন’ (বুখারী, মুসলিম)। যদিও বিষয়টি সে যুগে কোনই লজ্জাকর বিষয় ছিল না। ইবনু হাজার আসক্বালানী(রঃ) উক্ত হাদীছের আলোচনায় বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ স্বীয় নবী-কে নবুঅতের পূর্বে ও পরে সকল মন্দ কর্ম থেকে হেফাযত করেন।

অর্থাৎ প্রমাণিত হলো, আল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ(স)এর অতীত ও ভবিষ্যতের পাপের গুফরান করেছেন অর্থ অতীত ও ভবিষ্যতে সকল প্রকার পাপে নিপতিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

পঞ্চমত: দো‘আর শুরুতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উল্লেখ করলে দো‘আ কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা বাড়ে। এজন্যই মহান আল্লাহ তাঁকে উম্মাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আগে তার নিজের নাম উল্লেখ করতে শিখিয়েছেন। যেন উম্মাতের সকলেই ক্ষমা লাভ করতে পারেন।

ষষ্ঠত: আল্লাহর প্রিয় মানুষেরা সাধারণ ত্রুটিবিচ্যুতিকেও পাপ বলে গণ্য করেন। আল্লাহর যিকর থেকে বিরত থাকা,মনের মধ্যে সামান্যতম মানবীয় চিন্তার উদ্রেক, কারো উপর সামান্য রাগ করা, দুটি বৈধ বিষয়ের মধ্যে উত্তমটিকে বাদ দিয়ে অনুত্তম বৈধ বিষয় গ্রহণ করা ইত্যাদি বিষয়কেও তারা পাপ বলে গণ্য করে ক্ষমা প্রার্থনায় ব্যস্ত হন। প্রকৃতপক্ষে এগুলি কোনো পাপই নয়। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ পর্যায়ের ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং উম্মাতকে এভাবে ক্ষমা প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ ক্ষমা প্রার্থনা মহান আল্লাহর অন্যতম যিকর। মুমিন যখন সামান্যতম অমনোযোগিতার জন্যও আল্লাহর কাছে বিনয়ী হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তখন তাঁর হৃদয় আল্লাহর রহমত, বরকত ও প্রশান্তিতে পরিপূর্ণ হয় এবং পবিত্র থেকে পবিত্রতর হয়।রাসুল(স) পাপ না করেও আল্লাহর দরবারে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।কারণ আল্লাহ সবসময় তাঁর নিকট আমাদের ক্ষমা প্রার্থনা পছন্দ করেন,আমরা পাপ করলেও,পাপ না করলেও।পাপ না করেও ক্ষমা চাওয়া আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটি শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
একে প্রকৃত পাপের স্বীকারোক্তি বলে দাবি করলে ঈসা মাসীহকে দ্বিতীয়বার আবার মহাপাপী বলতে হবে:-

(i) যোহন দ্যা ব্যাপ্টিস্ট [হযরত ইয়াহিয়া(আ)] লোকজনের পাপ ক্ষমার জন্য জর্ডান নদীতে তওবার বাপ্তাইজ করতেন (মার্ক ১/৪-৫,লূক ৩/৩-৪)।যীশুও যোহনের কাছে বাপ্তাইজ হন (মার্ক ১/৯-১০)।

তারমানে যীশুও একজন পাপী ছিলেন।

(ii) এক ব্যাক্তি যীশুকে সৎ বললে যীশু ধমকিয়ে উঠে প্রতিবাদ করেন,"তুমি আমাকে কেনো সৎ বলছো?ইশ্বর ছাড়া আর কেউ সৎ নয়।"(মার্ক ১০/১৭-১৮,লূক ১৮/১৮-১৯)

তারমানে যীশু অসৎ (পাপী) ছিলেন।

(iii) যীশু ক্রুশে থাকাকালীন অবস্থায় যন্ত্রণায় চিৎকার করে বলেন,"ইশ্বর,ইশ্বর!তুমি কেনো আমাকে পরিত্যাগ করছো?"(মথি ২৭/৪৬)

তারমানে যীশু ইশ্বরের পরিত্যাক্ত এক মহাপাপী ছিলেন।অপরদিকে হযরত মুহাম্মাদ(স)কে আল্লাহ কখনো পরিত্যাগ করেন নি।(কুরআন ৯৩:৩)

৭০ বার ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গ: মুনাফিকদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: “আপনি ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করুন একই কথা; আপনি সত্তর বার ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ্ ওদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। এটা এ জন্যে যে, ওরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে। আল্লাহ্ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা ৯-তাওবা: ৮০)

এ আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট বলেছেন যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস আনেনি, কুফুরি করেছে, তাদের জন্য যেন রাসূলুল্লাহ ক্ষমা না চান। ঈসায়ী প্রচারকগণ সবটুকু না বলে শুধু বলেন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৭০ বার ক্ষমা চাইলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আপনি তাঁকে নিম্নের বিষয়গুলি বলুন:

(ক) এ আয়াত থেকে জানা যায়, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেঈমানদের জন্য দো‘আ করবেন না। তবে ঈমানদার পাপীদের জন্য দো‘আ করবেন এবং সে দো‘আ তাঁদের মুক্তি দিবে (৪-নিসা: ৬৪; ৯-তাওবা: ৯৯, ১০৩) কিন্তু ইঞ্জিল থেকে জানা যায় যে, যীশু তাঁর ঈমানদার ও কারামতধারী পাদ্রী ও প্রচারকদের জন্যও শাফায়াত করতে পারবেন না। তিনি বলেন: “যারা আমাকে ‘প্রভু প্রভু’ বলে তারা প্রত্যেকে যে বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয়।কিন্তু আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু প্রভু, তোমার নামে কি আমরা নবী হিসাবে কথা বলি নি? তোমার নামে কি ভূত ছাড়াই নি? তোমার নামে কি অনেক অলৌকিক কাজ করি নি? তখন আমি সোজাসুজিই তাদের বলব ‘আমি তোমাদের চিনি না। দুষ্টের দল! আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও।’ (মথি ৭/১৫-২৩)

(খ) যীশুর দু শিষ্যের মা তাঁর কাছে দাবি করেন যে, তার দুই ছেলে যেন তাঁর রাজ্যে তাঁর দুপাশে বসার অধিকার পায়। তিনি উত্তরে বলেন যে, তাঁর পাশে কাউকে বসানোর ক্ষমতাও তাঁর নেই; বরং সকল ক্ষমতা আল্লাহর।তিনি যাকে বসাবেন সেই বসবে: “যাহাদের জন্য আমার পিতা কর্তৃক স্থান প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে ও বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই।” (মথি ২০/২০-২৩) এভাবে প্রচলিত ইঞ্জিল শরীফ প্রমাণ করে যে, কারো জন্য কোনো সুপারিশ, দো‘আ বা শাফা‘আত করার অধিকার-ই ঈসা মাসীহের নেই।

(গ) আমরা বিশ্বাস করি যে, অন্যান্য নবী-রাসূলদের মত ঈসা (আ) ইস্রায়েল বংশের পাপী ঈমানদারদের জন্য সুপারিশ করবেন; সুপারিশ কবুল করা একান্তই আল্লাহর ইচ্ছা। তবে সাধু পল প্রতিষ্ঠিত ধর্মে ঈসা মাসীহের সুপারিশ ক্ষমতা খুবই সীমিত! কোনো ব্যক্তির খাৎনা বা মুসলমানি হলে মাসীহ আর তার কোনো উপকারই করতে পারবেন না! বরং তার জন্য তখন শরীয়ত পুরোপুরি মানা জরুরী হয়ে যাবে। আর শরীয়ত পালন অর্থই পাপ, অভিশাপ ও জাহান্নাম। ফলে খাতনাকৃত ব্যক্তির জন্য যীশুর প্রতি বিশ্বাস অর্থহীন! সাধু পল বলেন (if ye be circumcised, Christ shall profit you nothing) যদি তোমাদের খাৎনা করানো হয় তবে খৃস্ট তোমাদের কোনোই উপকার করবেন না।” (গালাতীয় ৫/২)খৃস্টান প্রচারকগণ বলেন: কুরআনে কোথাও নেই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাপীদের শাফায়াত করবেন। কী ভয়ঙ্কর মিথ্যা! আল্লাহ বলেন: “যখন তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করে তখন তারা আপনার কাছে আসলে ও আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে।” (সূরা ৩-নিসা: ৬৪) কাজেই দুনিয়াতে যে কোনো পাপী যদি ক্ষমাপ্রার্থনার চেতনা-সহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআাত প্রার্থনা করে এবং তিনি শাফা‘আত করেন তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। আর আখেরাতে তার সুপারিশের বিষয়টি কুরআনের বহু আয়াত এবং বহু মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ দেখান।আমীন।

[আর্টিকেলটি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের "কিতাবুল মোকাদ্দস,ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম" বই থেকে সাহায্য নিয়ে লেখা]

Post a Comment

2 Comments