হিজাব সম্পর্কে ইসলাম,বিজ্ঞান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও মতবাদ নিয়ে তূলনামূলক আলোচনা!


লেখক:- আফিফ আলী
____________________________________________________________________________________

হিজাব কি শুধু ইসলামেই ? হিজাব সম্পর্কে বিজ্ঞান এবং অন্যান্য ধর্ম কি বলে ?

হিজাব হচ্ছে পর্দা । প্রতিটি নারীর জন্য হিজাব করা ফরয । বেপর্দা হিসেবে নিজেকে উদ্বোধন করলে গুনাহে কাবীরা হবে । এটা ফরয বিধান হবার কারণ হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর স্টেটমেন্ট কুরআনে যা বলা হয়েছে । আর একজন মুসলমান হিসেবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হলে অবশ্যই কুরআনের বিধি নিষেধ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নিজ জীবনে আয়ত্ত করতে হবে । তাহলে আজ দেখবো যে , এই হিজাব যা কিনা একটি ফরয বিধান এই সম্পর্কে কুরআন , বিজ্ঞান এবং অন্যান্য ধর্ম কি বলে ।

হিজাব সম্পর্কে ইসলাম

⦁ وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

⦁ আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [১]

অনেকের মাঝে একটা ধারণা বিরাজ করে এই যে , কুরআন নাকি শুধু নারীদের হিজাব করতে বলেছে । আসলে কি তাই ? মোটেও না । পুরুষদের হিজাব সম্পর্কে কুরআন নারীদের আগে হুকুম দিয়েছে । কুরআনে সুরা নুর এর ৩১ নাম্বার আয়াতে নারীর পর্দার বিধান থাকলেও ৩০ নাম্বার আয়াতে অর্থাৎ নারীদের বিধান আসার আগে পুরুষের বিধান আগে এসেছে । সেখানে বলা হয়েছে ,

⦁ قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

⦁ মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।[২]

মুমিন পুরুষদের পর্দার ব্যাপারে আরও কিছু জানা যাক । পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক হল নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত ঢাকা থাকতে হবে । পোশাক ঢিলে ঢালা হতে হবে । অমুসলিম দের মত হওয়া যাবেনা । স্বচ্ছ পোশাক যা দ্বারা দেহের অংশসমূহ বুঝা যায় সেগুলো পরিধান করা যাবেনা । বিপরীত লিঙ্গের মত হওয়া যাবেনা । [৩]

অর্থাৎ ইসলাম শুধু নারীকেই না পুরুষকেও তার প্রয়োজন মত পর্দা করতে বলেছে যতটুকু যার ক্ষেত্রে প্রয়োজন

হিজাব সম্পর্কে খ্রিস্টবাদ এবং কিছু বর্বরতা

শুধু মাত্র ইসলামেই নয় বরং খ্রিষ্টান ধর্মেও হিজাব কে বর্বর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিচে বাইবেলের কিছু আয়াত দিলাম দেখে নেন ,

⦁ কিন্তু য়ে স্ত্রীলোক মাথা না ঢেকে প্রার্থনা করে বা ভাববানী বলে, সে তার নিজের মাথার অপমান করে, সে মাথা মোড়ানো স্ত্রীলোকের মত হয়ে পড়ে।

এরপর থেকেই বর্বরতার সূত্রপাত আরও চলুন পর্দা না করার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে দেখে আসি ,

⦁ স্ত্রীলোক যদি তার মাথা না ঢাকে তবে তার চুল কেটে ফেলাই উচিত। কিন্তু চুল কেটে ফেলা বা। মাথা নেড়া করা যদি স্ত্রীলোকের পক্ষে লজ্জার। বিষয় হয়, তবে সে তার মাথা ঢেকে রাখুক।

অর্থাৎ মহিলা মানুষ যদি তার মাথা না ঢাকে তবে তার চুল ফেলে দেয়া উচিত কি বর্বরতা ! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে , এইসকল বিষয় নিয়ে মুক্তমনাদের কোন অভিযোগ নেই ।

⦁ আবার পুরুষ মানুষের মাথা ঢেকে রাখা উচিত নয়, কারণ সে ঈশ্বরের স্বরূপ ও মহিমা প্রতিফলন করে। কিন্তু স্ত্রীলোক হল পুরুষের মহিমা।

এখানে পুরুষের মাথা না ঢাকার কথা বলা হচ্ছে । কিন্তু কুরআনে দুজনের পর্দাই করতে বলা হয়েছে । কোনটি জীবনের জন্য ভালো আপনারাই বিবেচনা করুন ।

⦁ কারণ স্ত্রীলোক থেকে পুরুষের সৃষ্টি হয় নি; কিন্তু পুরুষ থেকেই স্ত্রীলোক এসেছে।

[বাইবেল করিন্থীয় 11 : 5-8]

কি বিজ্ঞান ! মেয়ে মানুষ থেকে নাকি পুরুষের সৃষ্টি হয়নি ।
এখানে কি নারী বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পায় না ? অর্থাৎ খ্রিষ্টান মতবাদেও পর্দার বিধান রয়েছে এখন দেখে আসি হিন্দু ধর্মের পর্দার বিধান [৪]

হিন্দু ধর্মে পর্দার বিধান

⦁ “When Brahma has made you a woman, you should lower your gaze and should not look up. Youshould put your feet together and you should not reveal what the garment and the veil conceals.”

অর্থাৎ ব্রম্মা তাঁকে মহিলা হিসেবে সৃষ্টি করেছে বিধায় তাঁকে পর্দা করে থাকতে হবে ।

⦁ “When Purshuram comes, Rama tells his wife Sita that “He is our elder, please lower your gaze, and put on the veil.

এখানে রাম সীতাকে মাথায় কাপড় দেয়া কথা বলছে ।

⦁ “Unlovely is the person is the husband who covers his thighs with the garment of his wife. “[৫]

বৌদ্ধ ধর্মে পর্দার বিধান

⦁ “যাহাতে উদর, পেট ও স্তন দেখা না যায়। সেইরূপভাবে বস্ত্র পরিধান করিবে ও গায়ে দিবে।। সর্বদা পরিষ্কার বস্ত্র ব্যবহার করিবে। পুরুষ সমাখে চুল আঁচড়াইবেনা, এবং উকুন ধরিবেনা[৬]

ইহুদি ধর্মে পর্দার বিধান

⦁ ইনসাইক্লোপিডিয়া বিবলিকার ৫২৪৭পৃষ্টায় আছে :হিব্রু নারীদের সাধারণ পোশাকের একটা অংশ ছিল 'নেকাব'।এই নেকাব মাথা থেকে কাঁধ ঢেকে কোন কোন সময় পা পর্যন্ত চলে যেত। এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ 'তালমুদ' থেকে[৭]

অর্থাৎ আমরা দেখতে পারছি যে , সকল ধর্মেই পর্দার বিধান রয়েছে । কিন্তু মুক্তমনারা শুধু ইসলাম এর পিছেই লেগে থাকে । যাই হোক এবার আসা যাক পর্দা সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে

পর্দা সম্পর্কে বিজ্ঞান যা বলে

⦁ Keep your hair pollution free when you cover your head. Hijab protects the hair from dust and direct exposure to sunlight that may damage the hair.

⦁ Keeping most of your skin shielded from the sun's harmful rays the most of the time, preserves your bodies largest organ and keeps it wrinkle free for much longer while wearing hijab and covering the face.

পর্দা মাথার চুল কে নানা ধরণের ডাস্ট থেকে দূরে রাখে । এখন অনেকে বলতে পারেন যে , তাহলে ছেলেদের ক্ষেত্রে কি হয় ? আসলে মেয়েদের চুল এর তুলনায় ছেলেদের চুল খুবই ছোট তাই ধুলোবালির সমস্যা ছেলেদের থেকে মেয়েদের বেশি ভোগায় ।

⦁ Wearing Hijab protects the heat from the body being lost. Medical tests show that 40-60% . heat is lost through the head so wearing a head covering in cold months is very important from the health perspective.

এছাড়া আরও দেখুন ,

⦁ A head covering is very important for hygienic purpose too as mentioned above all public should wear Hijab or head-covering workers serving society to ensure cleanliness and purity. Workers in a number of professions wear "veils" - nurses, fast food workers, restaurant

হিজাব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন এর জন্যও বেশ উপকারী । [৮]

আমেরিকার University Of Chicago তে একটি রিসার্চ চলে। এই রিসার্চ প্রকাশিত হয় বৈজ্ঞানিক জার্নাল Evolution & Human Behavior' এ। টপিক ছিলো- Behavioral and hormonal responses of men to brief interactions with women এই স্ট্যাডি চালিয়েছিলেন James R. Roney, Stephen V. Mahler, Dario Maestripieri...

এই স্ট্যাডিতে পুরুষ এবং মহিলাদের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সরেজমিনে এই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে উঠে এসেছে দারুন কিছু তথ্য। (এই স্ট্যাডি কীভাবে, কতোজনের উপরে চালানো হয়েছিলো তা বিস্তারিত ব্যাখার দাবি রাখে। আমি কমেন্ট বক্সে লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। আগ্রহীরা পড়ে নিবেন) স্ট্যাডি বলছে, পুরুষরা (সমীক্ষাটা চলেছিলো বেসিক্যালি ১৮-৩৬ বৎসর বয়সীদের মধ্যে) যখন মহিলাদের নিকটে থাকে, সংস্পর্শে আসে, তখন পুরুষদের মধ্যে Hormonal Response টা তীব্র হয়ে উঠে। তারা ব্যাপারটার কনক্লুশান দিতে গিয়ে লিখেছে।।

This study represents one of the first attempts to assess hormonal and behavioral reactions of men to brief interactions with women. Results were generally consistent with the possibility of a mating response in human males. Men in the female condition showed a significant increase in testosterone over baseline levels and were rated as having expressed more polite interest and display behaviors than were men in the male condition. In addition, those men who were rated as having directed more courtship-like behaviors toward their female conversation partners also showed more positive changes in T levels and rated the female confederates as more attractive romantic partners. No such relationships were significant in the male condition...

অর্থাৎ, পুরুষদের মহিলাদের প্রতি যে testosterone ( testosterone হচ্ছে পুরুষদের সেক্স হরমোন) আপিল আছে, তা স্ট্যাডি কন্ডিশনে খুবই ফলপ্রসূ এবং পজিটিভ হিসেবে দেখা গেছে।

এই স্ট্যাডি বা রিসার্চ যারা করেছে তারা কিন্তু সবাই বিবর্তনবাদী। তারা দেখিয়েছে, মহিলাদের প্রতি পুরুষদের একটা আপিল থাকে। আপিলটা hormonal. আলাদাভাবে testosterone বা পুরুষদের সেক্স হরমোনাল।

শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি মেইল বিজ্ঞানীদের রেফারেন্স দিয়ে শিরোনাম করেছে 'Pretty women make a man's mouth water'[৯]

আর হিজাব এর থেকে নারীকে রক্ষা করে । সুতরাং হিজাবের উপর অভিযোগ করার ফল ১০০ তে ০ হয়ে দাঁড়ালো ।

[ Thank's For Your Great Reference Manzoor Ibnee Ahmed ]

রেফারেন্সঃ

১. সুরা নূর আয়াত ৩১

২. সুরা নূর আয়াত ৩০


৪. বাইবেল করিন্থীয় 11:5-8

৫. [Rig Veda Book no. 8 Hymn no. 33V. no. 19] ; [Rig Veda Book no. 10 Hymn no. 85 V. no.30“] ; [Mahavir Charitra Act 2 Page 71]

৬. (গহীনীতি পর্ব :নারীদের কর্তব্য :২৫২,২৫৩,২৫৪ পৃষ্ঠা)।

৭. ইনসাইক্লোপিডিয়া বিবলিকা - ৫২৪৭ পৃষ্টা


৯. Behavioral and hormonal responses of men to brief
interactions with women
James R. Roney*, Stephen V. Mahler, Dario Maestripieri
Institute for Mind and Biology, The University of Chicago, 940 E. 57th Street, Chicago, IL 60637, US https://labs.psych.ucsb.edu/…/ot…/reserve%20readings/ehb.pdf

Post a Comment

0 Comments