স্রষ্টা কি নিষ্ঠুর ও জড় পদার্থ!?

মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২২
বিষয়:- স্রষ্টা কি নিষ্ঠুর ও জড় পদার্থ!? 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________




আমার বড় মা খুব অসুস্থ। দেখে আসার জন্য যাবো তবে আমার বড় মা থাকেন ঢাকায়। তাই ঢাকায় গিয়েই দেখা করতে হবে। 

তো আজ রাত ৯:৩০ এই ট্রেন দিয়ে গমন করবো ঢাকার দিকে। 

হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ! দরজা খুলে দেখি "মিনার,আসিফ, সুরুজ, অজয়, ডেভিড"

সুরুজ বলতে লাগলো,,, 

সুরুজ:- কিরে হাবলা তোর খবর কি!? 

মুহাম্মদ আলী:- আমার তো ভালো আলহামদুলিল্লাহ। তবে বড় মা খুব অসুস্থ। তাই আজ ঢাকায় যাবো। 

সুরুজ:- তাহলে আমাদেরও নিয়ে যা। একটু ঘুরেও আসবো নাহয়। আর আমরা নিজ নিজ ভাড়াও দিবো। কি বলিস!? 

মুহাম্মদ আলী:- তোদের ইচ্ছা হলে চল। কোন সমস্যা নেই। 

[ রাত যখন ৯:০০ ]

সুরুজ, মুহাম্মদ আলী, অজয়, ডেভিড, আসিফ সবাই রেল স্টেশনে অপেক্ষা করছে। কখন ট্রেন আসবে। আধাঘণ্টা পর ট্রেন চলে আসলো,,, 

মুহাম্মদ আলী আর মিনার 
অজয় আর ডেভিড
সুরুজ আর আসিফ

পাশাপাশি বসলো। 

অতঃপর,, সুরুজ বলতে লাগলো! 

সুরুজ:- আসলেই স্রষ্টা খুবি নির্দয়। কতই না নিষ্ঠুর। 

[ মিনার আর মুহাম্মদ আলীর বাকি রইলো এটা বুঝতে যে সুরুজ এবার তর্ক শুরু করবে। আর ট্রেনে দিয়ে এক লোক কফি নিয়ে আসলো হাতে হাতে কফি নিয়ে তর্ক শুরু হলো ]

মিনার:- তুই কি ট্রেনেও শান্তি দিবি না সুরুজ!? 

সুরুজ:- আমি আবার কি করলাম। সত্য কথাই তো বললাম। কেনো তিতা লাগছে!? 

মিনার: মানে!? 

সুরুজ:- মানে হলো সত্য একটু তিতা হা হা হা। 

[ মুহাম্মদ আলী কাপে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- তোর সমস্যা কি সুরুজ!? 

সুরুজ:- কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হলো তোদের স্রষ্টার। আর আমি তোদের স্রষ্টাকে কিছু সময়ের মধ্যেই ভেনিস করে দিতে পারি। আর এটাও হলো এর এক অংশ ব্রো! 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা দেখি তুই কতটুকু পারিস। বল তোর দাবীগুলো। 

সুরুজ:- আমার প্রথম দাবী হলো তোদের স্রষ্টা নিষ্ঠুর। সেই তোর বড় মাকে অসুস্থ করেছে। মানুষ না খেয়ে মরছে। কেউ কেউ প্রতিবন্ধী কতো দুঃখ মানুষদের আর তোর স্রষ্টা তো কোন কিছু করছে না। কতো নিষ্ঠুর হলে এমন হয়!? তাইতো বলছি স্রষ্টা একজন নিষ্ঠুর। পারলে খন্ডন কর। 

মুহাম্মদ আলী:- শুনো সুরুজ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তিনি কাউকে অসুস্থ করে কাউকে সুস্থ রেখে কাউকে প্রতিবন্ধী করে কাউকে গরিব করে দুঃখি করে পরীক্ষা নেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,,, 

[১৮:৭] আল কাহাফ


إِنّا جَعَلنا ما عَلَى الأَرضِ زينَةً لَها لِنَبلُوَهُم أَيُّهُم أَحسَنُ عَمَلًا

নিশ্চয় যমীনের উপর যা রয়েছে, তা আমি শোভা করেছি তার জন্য, যাতে তাদেরকে পরীক্ষা করি যে, কর্মে তাদের মধ্যে কে উত্তম।

[১১:৭] হুদ


وَهُوَ الَّذي خَلَقَ السَّماواتِ وَالأَرضَ في سِتَّةِ أَيّامٍ وَكانَ عَرشُهُ عَلَى الماءِ لِيَبلُوَكُم أَيُّكُم أَحسَنُ عَمَلًا وَلَئِن قُلتَ إِنَّكُم مَبعوثونَ مِن بَعدِ المَوتِ لَيَقولَنَّ الَّذينَ كَفَروا إِن هذا إِلّا سِحرٌ مُبينٌ

আর তিনিই আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম। আর তুমি যদি বল, ‘মৃত্যুর পর নিশ্চয় তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’, তবে কাফিররা অবশ্যই বলবে, ‘এতো শুধুই স্পষ্ট যাদু’।

[২:১৫৫] আল বাকারা

وَلَنَبلُوَنَّكُم بِشَيءٍ مِنَ الخَوفِ وَالجوعِ وَنَقصٍ مِنَ الأَموالِ وَالأَنفُسِ وَالثَّمَراتِ وَبَشِّرِ الصّابِرينَ

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।

[২১:৩৫] আল আম্বিয়া

كُلُّ نَفسٍ ذائِقَةُ المَوتِ وَنَبلوكُم بِالشَّرِّ وَالخَيرِ فِتنَةً وَإِلَينا تُرجَعونَ

প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।

তাই মনে রাখবে আল্লাহ মানুষকে নানান ভাবে পরীক্ষা করেন। এটা পরীক্ষা! নিষ্ঠুরতা নয়। আর পরীক্ষা কঠিন হবে এটাই স্বাভাবিক। 

সুরুজ:- তাই!? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। যেমন তুই যদি পরীক্ষায় গণিতের প্রশ্নকে কঠিন মনে করিস তখন কি তুই বলবি তোর শিক্ষক একজন নিষ্ঠুর!? 

না কখনোই না। কারণ পরীক্ষা কঠিন হবে এটাই স্বাভাবিক। এখন পরীক্ষা কঠিন হলে যেমন শিক্ষক নিষ্ঠুর হন না ঠিক একই ভাবে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নেন। ভালো ও মন্দ দিয়ে। আল্লাহ দেখতে চান কে তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। 

বুঝেছো!? 

সুরুজ:- ইয়ে মানে তোর এসব ত্যানা আমার ভালো লাগে না। তোদের স্রষ্টা তো জড় পদার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। 

মুহাম্মদ আলী:- দেখি প্রমাণ করো। 

সুরুজ:- ঈশ্বর কেউ থাকলে তাকে ডাকলেও সে সাড়া দিতে পারে না। তাকে নিয়ে মন্দ কথা বললেও সে প্রতিবাদ করতে পারে না। তাকে চ্যালেঞ্জ করলেও সে সামনে আসতে পারে না। কথা বলতে পারে না। তার মানে ঈশ্বর জড় পদার্থ অথবা নিন্ম শ্রেণীর জীব। কিন্তু জড় পদার্থ বা নিম্নশ্রেণীর জীব সবকিছুর স্রষ্টা ঈশ্বর হতে পারে না!

মুহাম্মদ আলী:- এসব কু-যুক্তি কতবার দিবি তুই!? 

তোর এই দাবী নতুন নয় বরং খুবই পুরনো। আগেকার কাফিররাও তোর মতন এসব দাবী করতো। 

কুরআনে বলা হয়েছে,,, 

[২:১১৮] আল বাকারা


وَقالَ الَّذينَ لا يَعلَمونَ لَولا يُكَلِّمُنَا اللَّهُ أَو تَأتينا آيَةٌ كَذلِكَ قالَ الَّذينَ مِن قَبلِهِم مِثلَ قَولِهِم تَشابَهَت قُلوبُهُم قَد بَيَّنَّا الآياتِ لِقَومٍ يوقِنونَ

আর যারা জানে না, তারা বলে, ‘কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না কিংবা আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে না’? এভাবেই, যারা তাদের পূর্বে ছিল তারা তাদের কথার মত কথা বলেছে। তাদের অন্তরসমূহ একই রকম হয়ে গিয়েছে। আমি তো আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট করে দিয়েছি এমন কওমের জন্য, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।

আল্লাহ এখন দেখা করবেন না বরং কিয়ামতের দিন দেখা হবে। কারণ এখন যদি আল্লাহ দেখা দেয় তাহলে সকলেই ভালো মুসলিম হয়ে যাবে যেটা আর পরীক্ষা থাকে না।

আল্লাহ বলেন,,, 

[২১:৪৯] আল আম্বিয়া

الَّذينَ يَخشَونَ رَبَّهُم بِالغَيبِ وَهُم مِنَ السّاعَةِ مُشفِقونَ

যারা না দেখেও তাদের রবকে ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত।

তাই কেউ মন্দ বললে সাথে সাথে আল্লাহ প্রতিবাদ করেন না। করণ এই পৃথিবী হলো পরীক্ষা ক্ষেত্র। একজন ছাত্র যখন পরীক্ষার খাতায় ভুলভাল লেখে তখন শিক্ষক ছাত্রকে বাঁধা দেয় না। এর মানে এই নয় শিক্ষক অক্ষম। বরং এটাই পরীক্ষার "নিয়ম" বা নীতিমালা। অবশ্য নাস্তিকদের তো নীতিমালা বলে কিছু নেই। যেটাই হোক "নো প্রবলেম ডু ফুর্তি" হা হা হা। 

সুরুজ:- (নিশ্চুপ)

[ সুরুজকে চুপচাপ দেখে আসিফ মুহাম্মদ আলীকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো ]

আসিফ:- শুনো, তোমার মায়ের সাথে তুমি যদি খারাপ ব্যবহার করো। কিংবা তোমার মায়ের কোন কথা তুমি যদি না মানো তাহলে কি তোমার মা তোমাকে আগুনে পোড়াবে!? 

মুহাম্মদ আলী:- না। 

আসিফ:- ঠিক বলেছো। কারণ তোমার মা দয়ালু। কিন্তু তোমাদের আল্লাহ এতোই নিষ্ঠুর যে তার বান্দা যদি তার কথা অমান্য করে তাহলে তাকে আগুনে পোড়ায় আইমিন জাহান্নামে পোড়ায়। এর পরে তুমিই বলো আল্লাহ নিষ্ঠুর কি না!? আর আল্লাহ দয়ালু হলে তো জাহান্নামই বানাতেন না। তাই সব দিক দিয়েই প্রমাণ হয় আল্লাহ হলেন নিষ্ঠুর! 

মুহাম্মদ আলী:- মা কে না মানলে মায়ের অবাধ্য হলে মা কিন্তু দয়া দেখান। মা শুধু জন্ম দিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে এবং মাকেও সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন তার মায়া কত রয়েছে তার সৃষ্টির প্রতি তা কি মাপা যায়??? আল্লাহ কি দয়ালু নন?? আমরা যদি পাপ করি আমরা যদি সাগর পরিমাণ পাপ করি আল্লাহ সেটাও ক্ষমা করেন দয়া করেন কারণ তিনি দয়ালু। 

আল্লাহ বলেন,,, 

[৩:৩১] আল ইমরান

قُل إِن كُنتُم تُحِبّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعوني يُحبِبكُمُ اللَّهُ وَيَغفِر لَكُم ذُنوبَكُم وَاللَّهُ غَفورٌ رَحيمٌ

বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।

আল্লাহ বলেই দিয়েছেন আল্লাহ মাফ করবেন। 

[৪:১০৬] আন নিসা

وَاستَغفِرِ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كانَ غَفورًا رَحيمًا

আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আল্লাহ সকল সৃষ্টির স্রষ্টা তার পরেও ক্ষমা করবেন। কিন্তু তাঁকে যদি সারাজীবন অস্বিকার করেণ তাহলে তিনি কখনোই ক্ষমা করবে না। 

মায়ের কথা না শুনলে তিনি আগুনে জ্বলাবেন না। আর আল্লাহর কথা না শুনলেও যদি তওবা করেন তাহলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু পাপের সীমা অতিক্রম করলে সেটা ক্ষমা হবে না। 

যেমন,,, 
একজন লোক যদি ৯০০০ টাকা চুরি করে ধরা পরে তাঁকে কিছু মারা হবে এবং হয়ত কারাগারে দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ যদি খুন করে তাহলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। তাহলে কি বিচারককে """নিষ্ঠুর""" বলবেন??? 

কিন্তু মহান আল্লাহ এতোই দয়ালু যে কেউ যদি সাগর পরিমাণ এমন কি বছরের পর বছর গুনাহ করেন এবং তওবা করে আর গুনাহ না করে তাহলে তিনি সব মাফ করে দিবেন। তুমি যদি অমুসলিম হয়েও মুসলিম হন তখন আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুর মতন হয়ে যাবেন। কিন্তু তুমি যদি বছরের পর বছর খুন করো তোমাকে কেউ মাফ করবে ?? 

উত্তর হচ্ছে না।

এবার কি আইনকে নিষ্ঠুর বলবে??? আইনের বিচারে বাঁধা দিবে??? 

আসিফ:- (নিশ্চুপ) 

[ মুহাম্মদ আলী কফির শেষ চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- আমি খুন করলে আমার মা আমায় ফাঁসি দিবে না কিন্তু সরকার ও জর্জ আমায় ফাঁসি দিবে অর্থাৎ জর্জ হলো "নিষ্ঠুর"!?তাই একটা কথা মনে রাখবেন সবক্ষেত্রে দয়া দেখালে ন্যায়বিচার করা হবে না। কারণ খুনিকে কখনো দয়া দেখাতে নেই। যে দয়ার উপযুক্ত তাকে দয়া দেখানো যায়। যেমন আপনার মায়ের অবধ্য হলেও আপনি দয়ার উপযুক্ত। আপনি আল্লাহকে না মানলেও সেটাও দয়ার উপযুক্ত। কিন্তু আপনি তওবা না করে যদি সব সময় এমন কাজ অব্যাহত রাখেন তাহলে তো শাস্তি পেতেই হবে। 

যদি শাস্তি নাই দেওয়া হতো তাহলে সকলেই পাপী হয়ে যাবে। তারা আর খারাপ কাজকে ভয় করবে না। তাই শাস্তি বিষয়টা রাখতেই হবে। বুঝতে পেরেছো নিশ্চিত। 

[ সুরুজ হালকা কণ্ঠে বলতে লাগলো ]

সুরুজ:- সবই বুঝলাম। তবে জাহান্না তৈরি করার কি দরকার ছিলো!? 

মুহাম্মদ আলী:- এটাও বুঝতে পারো না!? জাহান্নাম হলো শাস্তির স্থান। সেখানে যারা পাপ করে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। 

যদি জাহান্নাম না থাকতো তাহলে তো যে কেউ পাপ করতো। কারোরই ভয় থাকতো না। বুঝলে!? 

[ সুরুজ ও আসিফ চুপচাপ। রাত ১০:৩০ হয়ে গেছে। সবাই যার যার সিটে ঘুমিয়ে গেলো। আর ট্রেন চলছে তার নিজ গন্তব্যের দিকে ]

মুহাম্মদ আলীর একটা কবিতার কথা মনে পড়লো,,,, 

"ট্রেন চলছে ট্রেন চলছে ট্রেনের বাড়ি কই"? 

Post a Comment

0 Comments