হিন্দুধর্মের ঈশ্বর কেনো মুখাপেক্ষী এবং অক্ষম!?

মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২১
হিন্দুধর্মের ঈশ্বর কেনো মুখাপেক্ষী এবং অক্ষম!? 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________





মিথ্যার্থ প্রকাশ বইটি পড়ছি। থুক্কু সত্যার্থ প্রকাশ সে যাইহোক। বইটা পড়ছি আর হাসছি যদিও বইটির নাম "জোকস বই" নয় বা নয় কোন হাসির কমিক বুক। তারপরেও কেনো যানি হাসি আর হাসিই বের হচ্ছে। 

যাইহোক, ছোট ভাইটা ক্লাস সিক্স এ পড়ে। আর এই করোনার সময় তো পরীক্ষা হবে না। শুধু সাপ্তাহিক এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। আজ ভাইটা খুব অসুস্থ তাই আমি গিয়েই এ্যাসাইনমেন্টটা জমা দিয়ে আসি,,, 

অতঃপর, 

জমা দেওয়ার পর চায়ের স্টোলে দেখি অজয় আর সুরুজ! আমিও গিয়ে বসলাম চা নিলাম আর কথা শুরু করলাম,,, 

সুরুজ:- কিরে হাবা তোর খবর কি? বহুদিন পর দেখা হলো। 

মুহাম্মদ আলী:- ভালোই আলহামদুলিল্লাহ। তবে শীতে কনকন করছি আরকি। 

সুরুজ:- গরম গরম চা খা দেখবি শীত চলে যাবে। 

মুহাম্মদ আলী:- তা তোর কি অবস্থা? 

সুরুজ:- মেলা ভালো। 

[ অজয়ের দিকে মুহাম্মদ আলী মুখ ফিরিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- তোর খবর কি অজয়!? 

অজয়:- এইতো ভালো মোটামুটি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আশির্বাদে। 

মুহাম্মদ আলী:- সর্বশক্তিমান ঈশ্বর!!! 

অজয়:- কেনো ঈশ্বর কি সর্বশক্তিমান নয়!? 

মুহাম্মদ আলী:- অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সর্বশক্তিমান। তবে তোদের ঈশ্বর মনে হয় না! 

অজয়:- মানে কি বলতে চাচ্ছিস!? 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা আগে বলতো তুই আর্য ভক্ত নাকি বৈষ্ণব ভক্ত!? 

অজয়:- তুই কি জানোস না আমি আর্য ভক্ত আর বৈষ্ণব নই। কারণ বৈষ্ণব ভ্রান্তমত! 

মুহাম্মদ আলী:- তাই নাকি? তাহলে তো তোদের ঈশ্বর সব করতে পারেন না। 

অজয়:- কেনো? 

মুহাম্মদ আলী:- এটাই স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতী (আর্য সমাজের পণ্ডিত) স্বীকার করেছেন। তার মিথ্যার্থ প্রকাশ বইয়ে। 

অজয়:- মিথ্যর্থ প্রকাশ বইয়ে মানে? এমন কথা উনি কখনোই বলবেন না। 

মুহাম্মদ আলী:- থুক্কু সত্যার্থ প্রকাশ বইয়েই তিনি তা উল্লেখ করেছেন। 

[ সুরুজ চুপচাপ তাদের কথোপকথন অনুধাবন করছে ]

অজয়:- রেফারেন্স দে দেখি। 

মুহাম্মদ আলী:- কেনো দিবো না!? অবশ্যই দিবো। দয়ানন্দ একটি প্রশ্নের উত্তরে এ বিষয়টি বলেছেন। 

দয়ানন্দ স্বরস্বতীকে জিজ্ঞাসা করে হয়েছিল,,, 

"প্রশ্ন:- যদি পরমেশ্বর সর্বশক্তিমান হইয়া থাকেন তাহলে কারণ ও জীবকেও উৎপন্ন করিতে পারেন। যদি করিতে না পারেন তাহলে তিনি সর্বশক্তিমান হতেই পারেন না! 

উত্তর:- সর্বশক্তিমান শব্দের অর্থ পূর্বে লিখিত হইয়াছে। যিনি অসম্ভব কার্য্য করিতে পারেন, তাহাকেই কি সর্বশক্তিমান বলে! ? যদি ঈশ্বর অসম্ভব কার্য্য অর্থাৎ কারণ ব্যাতিত কার্য্য করিতে পারেন তাহা হইলে তিনি কারণ ব্যাতিত সৃষ্টি করিতে সয়ং মৃত্যুগ্রস্ত হইতে এবং জড়, দুঃখী, অন্যায়কারী, অপবিত্র ও দুষ্কর্মকারী ইত্যাদিও হইতে পারেন কি না? ঈশ্বর স্বাভাবিক নিয়মানুসারে অর্থাৎ যেমন অগ্নী উষ্ণ, জল শীতল, এই সমস্ত কে তিনি বিপরীত গুনবিশিষ্ট করিতে পারেন না। যেমন তিনি জড় হইতে পারেন না সেইরূপ জড়কে চেতনা করিতে পারেন না। ঈশ্বরের নিয়ম সত্য ও পূর্ণ বলিয়া তিনি তাহার পরিবর্তন করিতে পারেন না। সুতরাং সর্বশক্তিমান অর্থ পরমেশ্বর কাহারো সাহায্য ব্যাতিত নিজের সমস্ত কার্য্য সম্পন্ন করিতে পারেন।"

[ সত্যার্থ প্রকাশ (দয়ানন্দ স্বরস্বতী) পৃষ্ঠা:- ১৬১ ]

অজয়:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- দেখলি!? দয়ানন্দের কথা থেকে বুঝা যায় ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হলে সব কার্য্য করতে পারেন না। যেমন তিনি জড় হইতে পারেন না সেইরূপ জড়কে চেতনা করিতে পারেন না।

এই হলো দয়ানন্দ স্বরস্বতীর আক্বীদা। তিনি বিশ্বাস করেন ঈশ্বর সর্বশক্তিমান কিন্তু সব করিতে পারেন না। এটা কি Logical Fallacy হয়ে গেলো না!? 

অজয়:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- শুধু কি তাই? দয়ানন্দ স্বরস্বতী তার অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ বইয়ে দাবী করেছেন ঈশ্বর নাকি কারণের মুখাপেক্ষী! এ কেমন কথা তুমিই বলো!? 

দয়ানন্দ স্বরস্বতী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন,, 

"প্রশ্ন:- পরমেশ্বর কি কারণ ব্যাতিত কোন কার্য্য করিতে পারেন না!? 

উত্তর:- না........"

[ সত্যার্থ প্রকাশ, পৃষ্ঠা:- ১৬১-১৬২ ]

এই দলে তোদের আর্যদের আক্বীদা বা বিশ্বাস। আর আর্য সমাজ থেকে আমরা এটাই জানতে পারি যে ঈশ্বর সব কাজ করতে পারেন না আর ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন আর ঈশ্বর মুখাপেক্ষী! এবার কি বলবি? 

অজয়:- (নিশ্চুপ) 

[ সুরুজ কাপে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো ]

সুরুজ:- আচ্ছা আর্যদের আক্বীদাতো দেখলাম। বৈষ্ণবদের আক্বীদা কি তাহলে? 

মুহাম্মদ আলী:- একই রকম! 

সুরুজ:- বিস্তারিত বলতো! 

মুহাম্মদ আলী:- বৈষ্ণবদের আক্বীদাও এমন,,, 

ব্রহ্মসংহিতায় উল্লেখ করা হয়েছে,
“ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানঙ্গবিগ্রহঃ
অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্”

“অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ, যিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দময় (নিত্য, জ্ঞানময় ও আনন্দময়), তিনি হচ্ছেন সব কিছুর পরম উৎস। তার কোনো উৎস নেই, কেননা তিনি হচ্ছেন সব কারণের পরম কারণ।”
(ব্রহ্মসংহিতা ১/৫)

একই কথা স্বামী প্রভুপাদ তার গীতাভাষ্যে উল্লেখ করেছেনঃ

“…শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই; তিনি সর্ব কারণের পরম কারণ…” [শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ১০/২ শ্লোকের তাৎপর্য, মূল ভাষ্যঃ স্বামী প্রভুপাদ, বঙ্গানুবাদঃ শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী]

এখন শ্রীকৃষ্ণ যদি পরমেশ্বর হন, তবে নিশ্চয় তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবেন না। তাই তো?

কিন্তু মহাভারতে আমরা দেখি যে, শ্রীকৃষ্ণ নিজেই জরাসন্ধের কাছে পরাজিত হয়েছেন।

মহাভারতের সভাপর্বে উল্লিখিত হয়েছে,,, 

“কৃষ্ণ বললেন… দুর্মতি কংস জরাসন্ধের দুই কন্যা অস্তি ও প্রাপ্তিকে বিবাহ করে শ্বশুরের সহায়তায় নিজ জ্ঞাতিদের উপর পীড়ন করেছিল, সেজন্য বলরাম ও আমি কংসকে বধ করি। তারপর আমরা আত্মীয়দের সঙ্গে মন্ত্রণা ক’রে এই সিদ্ধান্তে এলাম যে তিন শ বৎসর নিরন্তর যুদ্ধ ক’রেও আমরা জরাসন্ধের সেনা সংহার করতে পারব না…”
[তথ্যসূত্রঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত/সভাপর্ব, সারানুবাদঃ রাজশেখর বসু, মুদ্রণঃ প্রিন্ট ও গ্রাফ (৯/সি ভবানী দত্ত লেন, কলকাতা-৭০০০৭৩), ত্রয়োদশ মুদ্রণঃ ১৪১৮, পৃষ্ঠা নং ১০৫]

এখন পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণ জরাসন্ধের নিকট কেবল পরাজিতই হলেন না, বরং জরাসন্ধের ভয়ে ভগবান নিজেই ভীত হয়ে পড়লেন!

“কৃষ্ণ বললেন… কংসের পত্নী অস্তি তাঁর পিতা জরাসন্ধের কাছে গিয়ে বার বার বললেন, আমার পতিহন্তাকে বধ করুন। তখন আমরা ভয় পেয়ে জ্ঞাতি ও বন্ধুদের সঙ্গে পশ্চিম দিকে পালিয়ে গেলাম এবং রৈবতক পর্বতের নিকট কুশস্থলীতে দুর্গসংস্কার করে সেখানেই আশ্রয় নিলাম…” 
[তথ্যসূত্রঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত/সভাপর্ব, সারানুবাদঃ রাজশেখর বসু, মুদ্রণঃ প্রিন্ট ও গ্রাফ (৯/সি ভবানী দত্ত লেন, কলকাতা-৭০০০৭৩), ত্রয়োদশ মুদ্রণঃ ১৪১৮, পৃষ্ঠা নং ১০৫-১০৬]


সুতরাং বুঝা গেলো হিন্দুধর্মের ঈশ্বর,,  

১) মুখাপেক্ষী! 
২) অক্ষম! 
৩) সর্বশক্তিমান নন! 
৪) পরাজিত! 

[ সকলের প্রস্থান ]

Post a Comment

1 Comments

  1. মহাভারতের রেফারেন্সের জন্য আহমেদ আলীকে ধন্যবাদ 😌

    ReplyDelete