পূণর্জন্ম নিয়ে আর্যদের আক্বীদা (বিশ্বাস) এবং বিভ্রান্তি!


মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২০
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________

আবারো কল আসলো। নাম্বারটা ছিলো অজয়ের। ভাবলাম কি হতে পারে কি জানি! তার পরেও আলোচনা করা তো যেতেই পারে। 

অতঃপর,,,, 

[ ফোন আলাপ ]

অজয়:- তোর সাথে কিছু কথা ছিল! 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। বলতে থাক। 

অজয়:- আমি একজন আর্য। সুতরাং কোন ভুল গ্রন্থ আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তুই পূণর্জন্ম নিয়ে সব সময় "মনুসংহিতার" রেফারেন্স আনিস। আচ্ছা তুই একটি কথা মাথায় রাখ মনুসংহিতা অনুযায়ী মানুষের কর্ম অনুসারে নানান প্রাণী-কীট হয়ে থাকে। কিন্তু আর্য হয়ে এমন কথা আমি মানবো না। 

মুহাম্মদ আলী:- কথাটা কঠিন হলেও সত্যি যে "আর্যদের" আক্বীদা বা বিশ্বাসও মনুসংহিতার অনুরূপ। 

[ অজয় পুরোপুরি ঘাবড়ে গেলো। আর সাথে খুব চিন্তাতেও পড়ে গেল। কারণ অজয় ভালো করেই জানে। মুহাম্মদ আলী কোন দাবী করলে তা ১০০% প্রমাণ করেই ছাড়ে!!! ]

অজয়:- মানে!? কি বলতে চাচ্ছিস তুই!? আর্যদের বিশ্বাস এমন!? তুই এসব কোথায় পেলি!? 

মুহাম্মদ আলী:- তোমাদের বড় আর্য পন্ডিতের বই থেকেই পেয়েছি। 

অজয়:- কে!? নাম বল। দয়ানন্দ স্বরস্বতীকে আমি নালিশ জানাবো দরকার হলে। কারণ এমন অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস আর্যদের বিশ্বাস নয়। 

মুহাম্মদ আলী:- একশতবার আর্যদের বিশ্বাস আর দুঃখের কথা হলো তোদের আর্য মহর্ষি দয়ানন্দ স্বরস্বতীই এই কথাটি বলেছে। 

[ অজয় চারশো চল্লিশ ভোল্টের কারেন্ট খেলো ]

অজয়:- কি বলছিস মিথ্যাবাদী! 

মুহাম্মদ আলী:- না না না। কোন কিছুই মিথ্যা নয়। 

অজয়:- তাহলে প্রমাণ দে। 

মুহাম্মদ আলী:- তোদের আর্য দয়ানন্দ স্বরস্বতী তার "সত্যার্থ প্রকাশ" গ্রন্থেই এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আর তোরাই এই "সত্যার্থ প্রকাশ" নিয়ে গর্ব করিস!!! 

অজয়:- কই আমি তো পাইলাম না। 

মুহাম্মদ আলী:- মনোযোগ দিয়ে না পড়লে না পওয়ার আশংকাই বেশি থাকে। যাইহোক তাহলে আমিই তোকে বলি। 

সত্যার্থ প্রকাশ বইয়ে "১৬৯" পৃষ্ঠায় একটা প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যে কথাটি দয়ানন্দ স্বরস্বতী উল্লেখ করেছেন সেটা হলো,,, 

"প্রশ্ন:- পরমেশ্বর কোন কোন জীবকে মানুষ্য জন্ম, কোন জীবকে সিংহাদি ক্রুর জন্ম, কোন কোন জীবকে হরিণ ও গবাদি পশু জন্ম, কোনা কোন জীবকে বৃক্ষ-কৃমি পতঙ্গ প্রভৃতি জন্ম দিয়াছেন। ইহাতে পরমাত্মার পক্ষপাত ঘটিতেছে। 

উত্তর:- পক্ষপাত ঘটিতেছে না। কারণ পূর্ব সৃষ্টিতে জীবের কৃত ঐ সকল কর্মানুসারে ব্যবস্থা করা হইয়াছে। কর্ম ব্যাতীত জন্ম ব্যবস্থা করিলে পক্ষপাত করা হতো।" [ সত্যার্থ প্রকাশ, স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতী ]

এবার কি বলবি!? 

অজয়:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- দেখলি স্বামী দয়ানন্দকে প্রশ্ন করা হয়েছে ঈশ্বর একজনকে একেক রকম তৈরি করেছেন বলে কি পক্ষপাত হবে না!? আর স্বামী দয়ানন্দ সেই উত্তর বললেন হবে না কারণ পশু-কীট সব কিছুই কর্ম অনুসারে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মে যারা খারাপ তাদের জন্মও তেমন! 

জন্ম ব্যবস্থা হলে পক্ষপাত হতো। 
কিন্তু যেহেতু কর্মের কারণে পরের জন্মে পশু-কীট বানানো হয়েছে তাই কোন পক্ষপাত ঘটবে না। 

তাহলে দয়ানন্দের আক্বীদাও এমন ছিলো। যে কর্মানুসারে অন্য প্রাণী-কীট ইত্যাদি হয়ে থাকে। এবার বলো দিন দিন কি মানুষ বাড়ছে না? অপরাধ বাড়ছে না? এতেই তো হিন্দুধর্ম যে ভ্রান্ত তা প্রমাণ হয়ে যায়। 

অজয়:- আচ্ছা একটা কথা বলি। পূণর্জন্ম তো অন্য গ্রহেও হতে পারে। মহাবিশ্বও যদি ধরি, তবে মহাবিশ্বের যেকোনো উপযুক্ত স্থানে ব্যক্তি পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে পারে বিশেষ দেহ ধারণ করে। সেক্ষেত্রে কেবল পৃথিবীতে মানুষ, প্রাণী, কীটপতঙ্গ, উদ্ভিদ এর হিসাব দিয়ে এই মতবাদকে খণ্ডন করা যাবে না।

মুহাম্মদ আলী:- তারপরও হবে না। পৃথিবীর মানুষ যদি অন্য জায়গায়তেও জন্ম নেয়। তাহলেও তো পৃথিবীর মানুষ কমে যাওয়ার কথা যেহেতু পৃথিবীর মানুষের কর্মানুসারে তাদের পূণর্জন্ম হয়েছে। 

তাহলে মানুষ তো একদম বিলুপ্তপ্রায় হওয়ার কথা। কিন্তু জনসংখ্যা আর অপরাধ দুইটাই বাড়ছে কই!? মানুষ তো অন্য জায়গায় জন্ম না নিয়ে ঘুরেফিরে পৃথিবীতেই জন্ম নিচ্ছে আর জনসংখ্যাও বাড়ছে। এবার কি বলবি!? 

অজয়:- (হতাশ হয়ে) আচ্ছা দয়ানন্দকে যে প্রশ্নটা করা হয়েছে সেটা যদি তোকে করা হতো তুই কি উত্তর দিতি? 

মুহাম্মদ আলী:- ইসলামের আলোকে উত্তর দিতাম। 

অজয়:- তাহলে উত্তর দে। আমার প্রশ্ন,, 

প্রশ্ন:- পরমেশ্বর কোন কোন জীবকে মানুষ্য জন্ম, কোন জীবকে সিংহাদি ক্রুর জন্ম, কোন কোন জীবকে হরিণ ও গবাদি পশু জন্ম, কোনা কোন জীবকে বৃক্ষ-কৃমি পতঙ্গ প্রভৃতি জন্ম দিয়াছেন। ইহাতে পরমাত্মার পক্ষপাত ঘটিতেছে।

এবার ইসলামের আলোকে উত্তর দেও। 

মুহাম্মদ আলী:- আলহামদুলিল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর। এই প্রশ্নের উত্তর ইসলাম আলোকে দিচ্ছি। 

উত্তর:- আল্লাহ তায়ালা মানুষ আর জীনকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছে,,, 

[৫১:৫৬] আয-যারিয়াত

وَما خَلَقتُ الجِنَّ وَالإِنسَ إِلّا لِيَعبُدونِ

আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।

আর এই পৃথিবীতে যত পশুপাখি কীটপতঙ্গ সব কিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে আমাদের জন্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,,, 

[২:২৯] আল বাকারা

هُوَ الَّذي خَلَقَ لَكُم ما فِي الأَرضِ جَميعًا ثُمَّ استَوى إِلَى السَّماءِ فَسَوّاهُنَّ سَبعَ سَماواتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيءٍ عَليمٌ

তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আসমানের প্রতি খেয়াল করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর সব কিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত।

এবং এই সবকিছুর মধ্য থেকে চতুষ্পদ জন্তুকেও আমাদের জন্য খাদ্য হিসেবে দিয়েছেন। 

[৬:১৪২] আল আনআম

وَمِنَ الأَنعامِ حَمولَةً وَفَرشًا كُلوا مِمّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ وَلا تَتَّبِعوا خُطُواتِ الشَّيطانِ إِنَّهُ لَكُم عَدُوٌّ مُبينٌ

আর চতুষ্পদ জন্তু থেকে (কিছুকে সৃষ্টি করেছেন) বোঝা বহনকারী ও ক্ষুদ্রাকৃতির। তোমরা আহার কর তা থেকে, যা আল্লাহ তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।

সুতরাং আমরা বুঝলাম ইসলামের আলোকে এইসব আমাদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে আমাদের প্রয়োজনের জন্য। ক্ষতিকর জীব আছে যা আমাদের অনেক কাজেই আসে। আবার খাদ্যশৃঙ্খলেও আছে। আর মানুষ জ্বীন ব্যাতিত এসব পশুপাখি কীটপতঙ্গের কোন ভালো মন্দ বুঝার জ্ঞান নেই। যে তাদের কাছে পক্ষপাত মনে হবে। 

বরং এই সব কিছুই আমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আশা করি বুঝেছো। 

[ কল অফ ]

Post a Comment

0 Comments