সৃষ্টিকর্তা যদি সবকিছু করতে পারেন তাহলে তিনি কেনো মানুষ হতে পারেন না!?



🖋Author:- খ্রিস্টধর্ম খণ্ডন - লেখকবৃন্দ
__________________________________________________________________________________
.
পৌত্তলিক খ্রিস্টান মিশনারির মূর্খতার জবাব
.
.
"যারা আমার সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করে না, তারা বলে, ‘...আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাই না কেন’? তারা নিজেদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে আর তারা মেতে উঠেছে গুরুতর অবাধ্যতায়।"
(আল-কুরআন, ২৫:২১)
.
.
ভূমিকা:

খ্রিস্টান মিশনারিগণ তাদের পৌত্তলিকতার উন্মাদনায় এই জাতীয় দাবি পেশ করে যে, যেহেতু আল্লাহ তাআলা হলেন সৃষ্টিকর্তা ও সর্বশক্তিমান, সেহেতু তাঁর পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব। আর যেহেতু তিনি সবকিছু করতে পারেন, সেহেতু তিনি মানুষও হতে পারেন। যদি তিনি মানুষ হওয়ার ক্ষমতা না রাখেন, তবে তিনি সর্বশক্তিমান নন!

এই ধরণের আর্গুমেন্ট আসলে পৌত্তলিকদের কমন একটি আর্গুমেন্ট। আপনি বৈষ্ণব ইস্কনদেরও দেখবেন যে, তারাও এই একই ধরণের কথা আপনার সামনে পেশ করবে যে, ভগবান সবকিছু করতে পারলে পৃথিবীতে কেন আসতে পারবেন না!
.
.
আমাদের দাবি:

এক্ষেত্রে প্রথমেই একটি বিষয় মিশনারিদের আমরা বলতে চাই যে, স্রষ্টা যখন সবকিছু করতে পারেন, তখন অবশ্যই তিনি মানুষ রূপে পৃথিবীতে আসতেও পারেন। কিন্তু আমাদের দাবি হল এই যে, তিনি মানুষ রূপে পৃথিবীতে আসবেন না!

এখন মিশনারিরা হয়ত প্রশ্ন করবেন যে, কেন তিনি পৃথিবীতে আসবেন না? কী এমন হয়েছে যার জন্য পৃথিবীতে অবতাররূপে স্রষ্টার ধারণাকে নাকোচ করতে হবে?

কারণ হল, আল্লাহ যা চান তাই করেন। যা চান না, তা করেন না! আপনাদের বোধবুদ্ধি নষ্ট হয়ে গেছে যে, স্রষ্টার মহান সত্ত্বার সর্বোচ্চ অবস্থানকে আপনারা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন!
.
.
আমাদের প্রশ্ন ও প্রাসঙ্গিক দুটি উদাহরণ:

<<এখানে আমাদের প্রথম প্রশ্ন হল এই যে, স্রষ্টা মনুষ্য রূপ ধারণ করলে তাঁর মান-সম্মান-মর্যাদা টিকে থাকে কীভাবে?>>

প্রশ্নটি মিশনারিরা প্রথমবার পড়লে পৌত্তলিকতার উন্মাদনায় বুঝবে না। তাই প্রশ্নটিকে বোধগম্য করানোর জন্য আমরা দুটি উদাহরণ নিম্নে পেশ করছি।

উদাহরণ ১:
ধরুন, এক ব্যক্তি কোনো এক অফিসের বিরাট বস। তিনি প্রতিদিন গাড়িতে করে অফিস যান কোট, প্যান্ট বা দামি পোশাক পরে। তার অনেক সম্মান, মর্যাদা। অফিসের লোকজনের মুখে মুখে তার নাম ঘোরে ফেরে! এখন মনে করুন, তিনি একদিন একটা ছেঁড়া, ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পরে অফিসে গেলেন আর ঘোষণা করলেন যে, তিনি আর বস নন, তিনি সেই দিন থেকে অফিসের সবচেয়ে নিচু মাইনে বা বেতনের কর্মচারী! এখন আমায় বলুন, এতে সেই ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা কমল না বাড়ল?? অবশ্যই তার মর্যাদা একেবারে মাটির সাথে মিশে গেল! তাহলে আমাদের মিশনারি ভাই-বোনেরা যখন প্রচার করেন যে, ঈশ্বর মানুষ রূপে যীশুর আকারে পৃথিবীতে নেমে এসেছেন অন্যের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিতে, তখন এটা দিয়ে তারা কি বোঝাচ্ছে না যে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা যিনি সমস্ত বিশ্বজগতের পরিচালক, তাঁর সর্বোচ্চ সম্মানের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে, নিম্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক মানুষরূপী সৃষ্টিতে পরিণত হয়ে পৃথিবীতে নেমে এসে নিজের সর্বোচ্চ সম্মান আর মর্যাদাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেন??? এটা সেই অফিসের হাই ফাই বসের নিম্ন পর্যায়ের পোশাকে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীর পদে নেমে আসারই মতন নয় কি????
.
.
উদাহরণ ২:
ধরুন, এক ব্যক্তি আপনাকে এসে বলল যে, তিনি একজন বড় নামকরা ব্যবসায়ী। তার বাড়িতে একটা কুকুর আছে। এবার তিনি আপনাকে বললেন, “জানো, কুকুরটা আমার নিজের ঔরসজাত সন্তান।” যেকোনো স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি এর জবাবে এভাবে বলবেন, “কুকুর কীভাবে আপনার ঔরসজাত সন্তান হয়? কুকুরটাকে হয়ত আপনি নিজের সন্তানের মত ভালোবাসতে পারেন। কিন্তু সে তো কুকুর! সে আপনার ঔরসজাত সন্তান হয় কী করে?”
ভেবে দেখুন, অনেকেই এমন আছে যারা পশুদের নামে অন্যদের গালিগালাজ করে। যদি কাউকে “কুকুরের বাচ্চা” বলা হয়, তখন আসলে তাকে নিচু পর্যায়ের প্রাণীর সাথে তুলনা করে ছোট করা হচ্ছে! একারণে এটি অপমানসূচক। উপরের উদাহরণেও তাই ওই ব্যক্তি যখন কুকুরকে নিজের ঔরসজাত সন্তান বলছেন, তখন আসলে এটা দিয়ে তিনি নিজেকেই নিজে অপমান করছেন। এখন যদি ওই ব্যক্তি মানুষ থেকে সত্যি সত্যিই কুকুর হয়ে যান, তবে তার কি মানুষ হিসেবে আর কোনো মান-সম্মান থাকবে? না!!
শুধু কুকুরের মত নীচু প্রাণীর সাথে তুলনা করলেই সেই ব্যক্তির সম্মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে; সেখানে সেই ব্যক্তি বাস্তবিকই যদি কুকুর হয়ে যান, তবে তার কি আর কোনো মর্যাদা অবশিষ্ট থাকবে না!!
তাহলে একজন ব্যক্তি যিনি কেবল একটি সামান্য সৃষ্টি; তার ক্ষেত্রেই আপনি আশা করতে পারেন না তাকে নিম্নতর জীবের সাথে তুলনা করতে; সেখানে আপনি সমস্ত সৃষ্টিরও উর্ধ্বের সেই সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে নিম্নতর জীব "মানুষ"-রূপে কল্পনা করছেন কীভাবে! এতে স্রষ্টার মান-মর্যাদা-সম্মান বলে আর কিছু আপনি অবশিষ্ট রাখলেন? স্রষ্টাকে নিম্নতর জীব "মানুষ"-এর সাথে তুলনা করে তাঁকে অপমান করতে এতটুকুও কি আপনার বাঁধল না!!

যদি আপনি এটা আশা না করতে পারেন যে, একজন মানুষ কুকুরের মত নিম্নতর জীব হয়ে নিজের সম্মান হারানোর ইচ্ছা রাখেন, তবে আপনি কীভাবে এটা আশা করতে পারেন যে, সৃষ্টিকর্তা যাঁর মর্যাদা সকল কিছুর উর্ধ্বে, তিনি নিম্নতর সৃষ্টি "মানুষ"-রূপে পৃথিবীতে নেমে এসে নিজের সর্বোচ্চ মর্যাদাকে হারাতে চাইবেন?

এক্ষেত্রে লক্ষ্য করুন! যীশু যদি মানুষরূপী ঈশ্বর হন, তবে এর অর্থ হল, ঈশ্বর মানুষে পরিণত হলেন নারীর জরায়ুতে। তারপর প্রসবদ্বার দিয়ে বেরোলেন সিক্ত, অপবিত্র অবস্থায় চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে চোখে জল নিয়ে। পবিত্র হয়ে মানুষকে শিক্ষা দিলেন; খেলেন, পান করলেন, মূত্র-মল ত্যাগ করলেন নির্জনে কাপড় তুলে; তারপর ধুলেন। আবার তার নিজের হাতে সৃষ্টি করা মানুষের কাছে অসহ্য কিল চড় হাতিয়ারের খোঁচা খেয়ে ৯৫% উলঙ্গ অবস্থায় মারা গেলেন তার নিজের শাস্তি থেকে তার সৃষ্টি করা মানুষদের পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ এই ব্যাপারটা নিরপেক্ষ-ভাবে ভাবুন। আপনার বিবেক বুদ্ধি যদি এটা ঠিক বলে, তাহলে আপনাকে ঠিক করতে পারবে এমন কোন মানসিক হাসপাতাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আছে বলে আমাদের জানা নেই!

اَمَّنۡ یَّہۡدِیۡکُمۡ فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ وَ مَنۡ یُّرۡسِلُ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِہٖ ؕ ءَ اِلٰہٌ مَّعَ اللّٰہِ ؕ تَعٰلَی اللّٰہُ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿ؕ۶۳﴾ 
"বরং তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? তারা যা কিছু শরীক করে, আল্লাহ তা হতে (বহু) উর্ধ্বে।" (আল-কুরআন, ২৭:৬৩)
.
.
একনজরে অবতারবাদ এর সীমাবদ্ধতাসমূহ:

উপরের উহাদরণগুলো যদি আপনি বুঝতে পারেন, তবে এবার আপনার জন্য আমরা কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরছি যেখানে একনজরে অবতারবাদ (স্রষ্টার মনুষ্য ও অন্যান্য রূপ ধারণ) এর সমস্যাগুলো আপনি আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
.
.
১) সৃষ্টিকর্তার সর্বোচ্চ অবস্থান ও মর্যাদার বিলুপ্তিঃ

মহান আল্লাহ বলেন, “আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”

(মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সূরা আল-ইমরান (সূরা নং ৩), আয়াত ১৮৯, অনুবাদঃ তফসীর আহসানুল বায়ান (বঙ্গানুবাদ))

যখন আল্লাহ তাআলার শান বা মর্যাদা সকল কিছুর উর্ধ্বে, তখন এটা উপযুক্ত নয় যে, তিনি (আল্লাহ) এমন কিছু করবেন যা তাঁর মর্যাদার সর্বোচ্চ অবস্থানকে নীচে নামিয়ে আনবে! যখনই তিনি অবতার-রূপ ধারণ করবেন, তখনই তাঁকে নিম্নতর পার্থিব আকার ধারণ করতে হবে, খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি – যা তাঁর সর্বোচ্চ মর্যাদার প্রতি অপমান ছাড়া আর কিছুই নয়!

“আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে, তারা আমার আহার্য যোগাবে। নিশ্চয় আল্লাহ; তিনি রুযীদাতা, প্রবল পরাক্রান্ত।” (মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সূরা যারিয়াত (সূরা নং ৫১), আয়াত ৫৭-৫৮, অনুবাদঃ তফসীর আহসানুল বায়ান (বঙ্গানুবাদ))
.
.
২) সৃষ্টিকর্তা অবতাররূপে তুলনাযোগ্যঃ

“আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ-ই নেই।”

(মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সূরা ইখলাস (সূরা নং ১১২), আয়াত ৪, অনুবাদঃ হাফেজ মুনীর উদ্দিন আহমাদ)

“…(সৃষ্টিলোকে) কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, (তিনি) সর্বদ্রষ্টা।”

(মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সূরা আশ-শুরা (সূরা নং ৪২), আয়াত ১১, অনুবাদঃ হাফেজ মুনীর উদ্দিন আহমাদ)

সৃষ্টিকর্তার ‘যাত’ বা সত্ত্বা এতই উর্ধ্বে যে, আমরা কোনো কিছুর সাথেই তাঁকে তুলনা করতে পারি না। একারণে আমাদের ক্ষুদ্র মাত্রার পরিমাপ যেমন তাঁকে মাপতে সক্ষম নয়, তেমনি আমাদের সীমিত দৃষ্টিশক্তিও তাঁকে আয়ত্ত্ব করতে অক্ষম। কিন্তু যদি তিনি কোনো পার্থিব অবয়ব ধারণ করেন, তবে তিনি আমাদের সীমাবদ্ধ মাত্রা বা ডাইমেনশন-এ তুলনাযোগ্য হয়ে পড়বেন। ফলে স্রষ্টা তাঁর ঐশ্বরিক মর্যাদা হারিয়ে বসবেন!
.
.
৩) পার্থিব অবতারে স্রষ্টা সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধঃ

আমরা মনুষ্য জাতি সীমাবদ্ধতার স্তরে বিচরণ করি। আমাদের যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি নেতিবাচকতাও আমাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। আমাদের খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, বিশ্রাম নিতে হয়। আমরা জন্মগ্রহণ করি, আবার মৃত্যবরণও করি। আমরা পবিত্র হই, আবার অপবিত্রও হই। এরূপ নানাবিধ পার্থিব সীমাবদ্ধতায় আমরা আবদ্ধ। যিনি সকল সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাঁর জন্য এটা মানানসই নয় যে, তিনিও এসকল সীমাবদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে আমাদের সমতুল্য হয়ে পড়বেন! উদাহরণস্বরূপ, যদি সৃষ্টিকর্তা অবতার রূপ ধারণ করেন, অথবা যদি আমরা বিবেচনা করি যে, অবতার – পার্থিব অবয়বে স্রষ্টার একটি অংশবিশেষ, তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, স্রষ্টা পার্থিব জগতের অপবিত্রতাসমূহের মধ্যেও নিমজ্জিত হয়েছেন (যেমন –পার্থিব দেহ নানাবিধ জীবাণুতে পরিপূর্ণ; পানাহারের ফলে বাধ্যতামূলক প্রকৃতির ডাকে সাড়া প্রদান প্রভৃতি)। অনুরূপে, যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, অবতাররূপী জীবদেহে স্রষ্টার খাদ্যগ্রহণের পাশাপাশি বিশ্রাম গ্রহণ, জন্ম-মৃত্যু প্রভৃতি নিম্নতর জৈবিক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে যা তাঁকে সর্বোচ্চ অবস্থান হতে নীচে নামিয়ে আনবে; ফলস্বরূপ স্রষ্টার সম্মান বা মর্যাদা বিনষ্ট হবে!

আমরা মুসলিমরা এই আকিদা রাখি যে, মহান আল্লাহ সকল পার্থিব সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে। আর তাই স্বাভাবিকই অবতারবাদকে সহিহ আকিদার দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা প্রত্যাখান করি।

“যদি আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে বহু উপাস্য থাকত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং ওরা যে বর্ণনা দেয় তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।”

(মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সূরা আম্বিয়া (সূরা নং ২১), আয়াত ২২, অনুবাদঃ তফসীর আহসানুল বায়ান (বঙ্গানুবাদ))
.
.
৪) অবতাররূপে স্রষ্টার অক্ষমতার প্রকাশঃ

একজন প্রকৌশলী বা ইঞ্জিনিয়ার যদি কোনো একটি যন্ত্র নির্মাণ করেন, তবে যন্ত্রটির অবস্থা অনুধাবন ও যন্ত্রটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তার সেই যন্ত্রের রূপ ধারণের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। সেখানে সৃষ্টিকর্তা যিনি ইঞ্জিনিয়ার অপেক্ষা বহু উর্ধ্বে, তাঁকে কেন সৃষ্টির অবস্থা, দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি অনুধাবন ও পথ-নির্দেশের জন্য সৃষ্টির রূপ ধারণ করে অবতাররূপে নেমে আসতে হবে? এটা নির্দেশ করে যে, অবতার-রূপ, স্রষ্টার সৃষ্টিকে অনুধাবন, পথ-নির্দেশ, নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতিতে অক্ষমতারই সূক্ষ্ম বহিঃপ্রকাশ!

“…তোমাদের অন্তরসমূহে যা রয়েছে তা যদি তোমরা গোপন কর অথবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন এবং নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন; এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।”

(মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, সূরা আল-ইমরান (সূরা নং ৩), আয়াত ২৯, অনুবাদঃ মুজীবুর রহমান)
.
.
৫) ব্যবহারিক উদাহরণের মাধ্যমে (ভারতীয় দর্শনের) অবতারবাদ এর অসারতাঃ

ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী, দুষ্টের বিনাশ সাধন ও শিষ্টের প্রতিপালনের জন্য ঈশ্বর অবতাররূপে পৃথিবীতে নেমে আসেন, “হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।”
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা যথাযথ, ৪:৭-৮; মূল ভাষ্যঃ স্বামী প্রভুপাদ, অনুবাদকঃ শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী)

আমাদের প্রশ্ন – তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঈশ্বর কোথায় ছিলেন? কেন তিনি হিরোশিমা ও নাগাসাকির লোকদের বাঁচাতে অবতার রূপে নেমে এলেন না? কেন তিনি সুদীর্ঘ ব্যাপী সময়ে পরাধীনরত ভারতকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করতে অবতরণ করলেন না? কেন তিনি বর্তমান যুগের মত অবস্থায় (যখন হত্যা, ধর্ষণ, চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি সর্বপ্রকার অন্যায় কার্য সর্বত্র ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে) অবতার রূপে অবতরণ করছেন না? এটাই কি তার ন্যায়বিচার যে, অবাধে অন্যায় কার্য সংঘটিত হবে আর তিনি অবতার রূপে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতিদের বিনাশ ও ধর্মকে পুনঃসংস্থাপন করবেন না?

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বলেন, “…যে জন্মগ্রহণ করে, সে অবশ্যই মৃত্যু মুখে পতিত হয়… যদি কেহ বলে যে, ভক্তজনের উদ্ধারের জন্য ঈশ্বর জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাহা সত্য নহে। কারণ যে সকল ভক্ত ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে চলেন, তাঁহাদিগকে উদ্ধার করিবার পূর্ণ সামর্থ্য ঈশ্বরে আছে… ঈশ্বরের গমনাগমন ও জন্মমৃত্যু কখনও সিদ্ধ হইতে পারে না।’ এতদ্দ্বারা বুঝিতে হইবে যে ‘ঈশা’ (খৃষ্ট) প্রভৃতি ঈশ্বরের অবতার নহেন। কেননা রাগ, দ্বেষ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়, শোক, দুঃখ, জন্ম এবং মৃত্যু প্রভৃতি গুণধর্মযুক্ত বলিয়া তাঁহারা মনুষ্য ছিলেন।”

[গ্রন্থঃ সত্যার্থ প্রকাশঃ (বঙ্গানুবাদ), সপ্তম সমুল্লাস, পৃষ্ঠা ১৪২, প্রথম সংস্করণ (জানুয়ারী ২০১৭), প্রকাশক – আর্য সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট, মূল লেখাঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী]
.
.
আল্লাহ তাআলার সিফাত (গুণ) এর ক্ষেত্রে চারটি প্রত্যাখাত বিষয়

অবতারবাদের অসারতা বোঝার জন্য আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে "ইলহাদ" এর বিষয়টি বোঝা প্রয়োজন।

তাওহীদুল আসমা ওয়াস-সিফাত (আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলির একত্ববাদ) এর ক্ষেত্রে চারটি বিষয় উল্লেখযোগ্য (যাকে “ইলহাদ” বলে) যেগুলো হারাম (ইসলামিক পরিভাষায় নিষিদ্ধমূলক বিষয়কে “হারাম” বলে) যা নিম্নরূপঃ

১) তা’আতীল, ২) তাম্‌-ছিল, ৩) তাকীইফ, ৪) তাহ্‌-রীফ
.
.
১) তা’আতীলঃ

প্রথম বাধা হল, আল্লাহ তাআলার সিফাতকে অস্বীকার করা। আল্লাহর নামকে অস্বীকার করা। তা’আতীল অর্থ বন্ধ, খতম ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা এঁর আসমা-সিফাতের (নাম ও গুণাবলির) ক্ষেত্রে তা’আতীল অর্থ সেগুলোকে অস্বীকার করা, না মানা ইত্যাদি। এটা হল সুস্পষ্ট কুফর (সত্য প্রত্যাখান)।
.
.
২) তাম্‌-ছিলঃ

আল্লাহ তাআলার আসমা-সিফাতে (নাম ও গুণাবলিতে) আল্লাহ তাআলার মাখলুকাতকে (সৃষ্টিকে) আল্লাহর তাআলার মত মানা অথবা, আল্লাহর সিফাতকে (গুণকে) মাখলুকাতের (সৃষ্টির) মত মানা – উভয়কে একে অপরের মিসল্‌ বা তুলনা হিসেবে মেনে নেওয়া হল তাম্‌-ছিল। মাখলুকাতকে আল্লাহর মত বা অনুরূপ মনে করা অথবা আল্লাহকে মাখলুকের মত মনে করা; উভয়ের সিফাতকে একই রকম ভাবা বা মনে করাকে তাম্‌-ছিল বলে। তাম্‌-ছিল শির্ক (আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে অংশী স্থাপন করা হল শির্ক যা ইসলাম অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাপ); কেননা আল্লাহর মত কাউকে মনে করা অথবা আল্লাহকে কারও মত মনে করা হল মাখলুককে (সৃষ্টিকে) খালিক (স্রষ্টা) এর বরাবর বা সমকক্ষ করে দেওয়া। আর এটা শির্ক।
.
.
৩) তাকীইফঃ

“তাকীইফ” শব্দের মধ্যে “কাইফা” শব্দটি লুকিয়ে আছে। “কাইফা” শব্দ দ্বারা আল্লাহ তাআলার সম্পর্কে নিজে থেকে কোনো কিছু বলে দেওয়াকে বোঝায়। যেমনঃ ‘আল্লাহ এমনভাবে শোনেন, এমনভাবে দেখেন, এমনভাবে কোনো কাজ করেন’ – এভাবে নিজে থেকে বিনা ইল্‌মে, কুরআন-সুন্নাহর দলিল ব্যতিরেকে নিজের মত করে আল্লাহ তাআলার আসমা ও সিফাতের কৈফিয়ত বয়ান করা বা প্রকৃতি/ধরণ এর বর্ণনা দেওয়া হল তাকীইফ। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ তাআলা আরশ এর উর্ধ্বে বিরাজমান – এই বিষয়টিকে কেউ যদি উপমা পেশ করে বলে যে, ‘দেখ, বাদশাহ যেভাবে সিংহাসনে বসে, আল্লাহও সেভাবে আরশে আছেন’ – এখানে ব্যক্তি নিজে থেকে আল্লাহ তাআলার সিফাতকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করছে। তাই এটা তাকীইফ। আর তাকীইফ হল হারাম।

এখানে ব্যক্তি আকাল (বুদ্ধি, বিবেক ইত্যাদি) দিয়ে আল্লাহর সাথে মাখলুক (বাদশাহ ও সিংহাসন)-কে তুলনা করেছে। তাই এটা তাম্‌-ছিল-এরও অন্তর্ভুক্ত।

এক্ষেত্রে নিজে থেকে আল্লাহর প্রতি এমন নাম বা বৈশিষ্ট্য আরোপও হতে পারে যা আল্লাহর নয়। যেমনঃ ব্রহ্মা, ফাদার ইন দ্যা হ্যাভেন, জেহোবা ইত্যাদি নাম আল্লাহর নয়। এগুলো মানুষ নিজে থেকে দিতে পারে না। এগুলো Proper Noun (নামবাচক বিশেষ্য), Common Noun নয়। তাই অর্থ সিফাতের সাথে মিললেও (যেমন ব্রহ্মা অর্থ সৃষ্টিকর্তা) সেই নাম নিজে থেকে আল্লাহকে দেওয়া যাবে না।
.
.
৪) তাহ্‌-রীফঃ

“তাহ্‌-রীফ” অর্থ বদলে দেওয়া বা পরিবর্তন করে দেওয়া। হাকীকাতে (প্রকৃতপক্ষে) যা আছে, তার পরিবর্তে অন্য কোনো অর্থ তাকে দিয়ে দেওয়া বা অন্য অর্থ সাব্যস্ত করা। যেমনঃ আল্লাহ তাআলা হলেন সামি, বাসীর, আলিম। এখন, দেখা গেল, ব্যক্তি বলল যে, “সামি” অর্থ “আলিম”; অর্থাৎ ‘আল্লাহ শ্রবণকারী’ – অর্থ হল আল্লাহ হলেন জ্ঞানী; অথবা অন্যভাবে বললে, আল্লাহ শুনতে পান অর্থ হল আল্লাহ জানতে পারেন। অনুরূপে, আল্লাহ দেখতে পান অর্থ দেখতে পান না, বরং আল্লাহ জানেন বা জানতে পারেন। অথচ “শোনা” অর্থ শোনা, “দেখা” অর্থ দেখা।

এখানে সে “শোনা” আর “দেখা” এর অর্থ পাল্টে করে দিয়েছে “জানা”। অথচ “জানা” এর জন্য তৃতীয় আরেকটি শব্দ রয়েছে যেটা ছিল “আলিম”। তাহলে সে দুটো সিফাতের অর্থ বদলে আরেকটি তৃতীয় অর্থ সাব্যস্ত করেছে। তাহলে এটা হয়ে গেল “তাহ্‌-রীফ” যার অর্থ বদলে দেওয়া।

দুটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ যা নিম্নরূপ…

আল্লাহর নুযূল (অবতরণ) এর সিফাতে ইলহাদঃ
“…আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি ক্ষমা করব।” [সহিহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), দ্বিতীয় খণ্ড, হাদিস নং ১০৭৯]

এখন, যদি কোনো ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী আসমানে অবতরণের অর্থ আল্লাহর রহমত নাযিল হয় – এরকম অর্থ পাল্টে দেওয়া হল তাহ্‌-রীফ।

এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করার সিফাতের সাথে ‘তা’আতীল’, ‘তাম্‌-ছিল’ অথবা ‘তাকীইফ’-ও জড়িত থাকতে পারেঃ-

ক) যদি কেউ এমন আকিদা রাখে যে, নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করা আল্লাহর শানের সাথে মাননসই নয়; তাই আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করতে পারেন না – এ ধরণের আকিদা থাকলে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সিফাতকে অস্বীকার করল। সুতরাং এটা তখন হয়ে যাবে ‘তা’আতীল’।

খ) যদি কেউ আল্লাহ তাআলার অবতরণকে মাখলুকের (সৃষ্টির) অবতরণের মত মনে করে, তবে সেটা হয়ে যাবে ‘তাম্‌-ছিল’।

গ) যদি ব্যক্তি নিজের মত করে আকাল বা বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবে যে, ‘আল্লাহ তাআলা এমন এমনভাবে অবতরণ করেন’, তবে সেটা হয়ে যাবে ‘তাকীইফ’।

আল্লাহর ইয়াদ (হাত)(১) এর সিফাতে তাহ্‌-রীফঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

“…আল্লাহর উভয় হস্তই মুক্ত, যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করে থাকেন…”

[আল-কুরআন, সূরাহ মায়িদাহ (সূরাহ নং ৫), আয়াত নং ৬৪, অনুবাদঃ তাফসির আহসানুল বয়ান (বঙ্গানুবাদ)]

এখন দেখা গেল, কোনো ব্যক্তি ভাবল যে, এখানে “হাত” অর্থ হাত নয়, বরং “কুদরত”। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি অর্থ পাল্টে দিয়েছে। তাই এখানে “হাত” অর্থ বদলে দিয়ে কুদরত করে দেওয়া হল “তাহ্‌-রীফ”।

এখানে “হাত” অর্থ “কুদরত” নেওয়া হলে “দুই হাত” এর মানে দাঁড়াবে “দুইটি কুদরত”। তার মানে কি আল্লাহর কুদরত দুইটি? এক্ষেত্রে তাই এভাবে অর্থ পাল্টিয়ে “কুদরত” অর্থ গ্রহণ করা বাতিল বলে বিবেচ্য।

[(১) বিঃদ্রঃ মহান আল্লাহর সিফাত (গুণ বা বৈশিষ্ট্য) যেহেতু মাখলুক (সৃষ্টি) এর ব্যতিক্রম, তাই আল্লাহর ‘হাত’, সৃষ্টির ন্যায় কোনো দৈহিক অঙ্গ নয়। এর প্রকৃতি কীরূপ – তা নির্ণয় করা মানবক্ষমতার বাইরে। তাই আল্লাহর এই সিফাতে আমরা এরূপে ঈমান আনি যে, এর প্রকৃতি আল্লাহই ভাল জানেন। তাই যখন আল্লাহর হাতকে সৃষ্টির কোনো কিছুর মত মনে করা হবে, তখন এটা ‘তাম্‌-ছিল’ ও ‘তাকীইফ’ এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।]

সুতরাং এই চারটি বিষয় (তা’আতীল, তাম্‌-ছিল, তাকীইফ, তাহ্‌-রীফ) সঠিক নয়। এগুলো গুনাহ (পাপ), হারাম, মন্দ এবং অনুমোদিত নয়। এই চারটি বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে হবে আল্লাহ তাআলার সম্পর্কে বলার ক্ষেত্রে। এই চারটি নাজায়েজ (যা অনুমোদিত নয়) বিষয়কে বলা হয় “ইলহাদ” যে সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে (ধমকির ধাঁচে) মহান আল্লাহ বলেন,

“…যারা তাঁর (আল্লাহর) নামের মধ্যের মধ্যে বিকৃতি ঘটায় তাদেরকে পরিত্যাগ কর। তারা যা করছে তার ফল তারা শীঘ্র পাবে।” [আল-কুরআন, সূরাহ আল-আরাফ (সূরাহ নং ৭), আয়াত ১৮০, অনুবাদঃ তাইসীরুল কুরআন]

আল্লাহ তাআলার সিফাত (গুণ) মাখলুক (সৃষ্টি) এর মত নয়; মাখলুকের সিফাতও আল্লাহর মত নয়। আল্লাহর সিফাত তাঁর শান (মর্যাদা) মোতাবেক। মহান আল্লাহ বলেন,

“…কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সব শোনেন, সব দেখেন।” [আল-কুরআন, সূরাহ আশ-শূরা (সূরাহ নং ৪২), আয়াত ১১; অনুবাদঃ তাইসীরুল কুরআন]

[আল্লাহ তাআলার আসমা (নামসমূহ) ও সিফাত (গুণ) এর ক্ষেত্রে চারটি হারাম বিষয় এর ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া হয়েছে শায়েখ আবু যাইদ যামীর এর বক্তব্য হতে। বক্তব্যটি সম্পূর্ণ দেখার জন্য এই লিঙ্কে ভিজিট করুন – 

আল্লাহ শায়েখকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। আমিন]
.
.
উপসংহার:

যদি আপনাকে বলা হয়, "ভাই আপনি কি চুরি করা থামিয়েছেন?" যদি আপনি "হ্যাঁ" বলেন, তাহলেও আপনি চোর, আবার (উত্তরে) "না" বললেও সেই চোরই আপনি সাব্যস্ত হবেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি কোনোদিন চুরিই না করেন অর্থাৎ, চুরি করা যদি আপনার বৈশিষ্ট্যই না নয়, তবে আপনি চুরি থামিয়েছেন কী থামাননি - এই জাতীয় প্রশ্ন তোলাই অবান্তর!

একইভাবে মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে নেমে আসা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বৈশিষ্ট্য নয়, যেহেতু এটি তাঁর শান বা মর্যাদার খেলাফ। তাই স্রষ্টা অবতার রূপে নেমে আসতে পারেন কী পারেন না –এ জাতীয় প্রশ্নও সম্পূর্ণরূপে অনর্থক!

"*ঈশ্বর কোনো মানুষ নন* যে তিনি মিথ্যা বলবেন; না তিনি কোনো মনুষ্যপুত্র যে তিনি অনুতাপ করবেন..." (বাইবেল, গণনা পুস্তক ২৩:১৯)
"*God is not a man*, that he should lie; neither the son of man, that he should repent..." (The KJV Bible, Numbers 23:19)

"হে ইসরাইলের জনগণ, এই কথাগুলো শোন; নাজারেথ শহরের *যীশু* ঈশ্বর কর্তৃক তোমাদের মধ্যে **একজন মনোনীত ব্যক্তি**, যিনি অলৌকিকতা ও নিদর্শন সম্বলিত, যেগুলো ঈশ্বর তার মাধ্যমে সেগুলো সম্পন্ন করেছিলেন বলে তোমরা জানো।" (বাইবেল, শিষ্যচরিত, ২:২২)
"Ye men of Israel, hear these words; **Jesus of Nazareth, a man** approved of God among you by miracles and wonders and signs, which God did by him in the midst of you, as ye yourselves also know" (The KJV Bible, Acts 2:22)

সুতরাং, ঈশ্বর কোনো মানুষ নন যেখানে যীশু একজন মানুষ।

অর্থাৎ ঈশ্বর যীশু নন বা, যীশু-ও ঈশ্বর নন।

مَا الۡمَسِیۡحُ ابۡنُ مَرۡیَمَ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ وَ اُمُّہٗ صِدِّیۡقَۃٌ ؕ کَانَا یَاۡکُلٰنِ الطَّعَامَ ؕ اُنۡظُرۡ کَیۡفَ نُبَیِّنُ لَہُمُ الۡاٰیٰتِ ثُمَّ انۡظُرۡ اَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۷۵﴾ 

“মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা রাসূল ছাড়া কিছুই ছিল না। তার পূর্বে আরো রাসূল অতীত হয়ে গেছে, তার মা ছিল সত্যপন্থী মহিলা, তারা উভয়েই খাবার খেত; লক্ষ্য কর তাদের কাছে (সত্যের) নিদর্শনসমূহ কেমন সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছি আর এটাও লক্ষ্য কর যে, কীভাবে তারা (সত্য হতে) বিপরীত দিকে চলে যাচ্ছে।”
(মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, ৫:৭৫)

Post a Comment

0 Comments