কাবিল কর্তৃক হাবিল এর হত্যার ঘটনা থেকে কি আদি পাপের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়?



কাবিল কর্তৃক হাবিল এর হত্যার ঘটনা থেকে কি আদি পাপের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়?
🖋Author:- Ahmed Ali
____________________________________________________________________________________
.
(খ্রিস্টান মিশনারির অপব্যাখ্যার জবাব)
.
খ্রিস্টান মিশনারিরা তাদের ধর্মীয় তত্ত্ব "আদি পাপ" বা "original sin" কে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন রেফারেন্স এর মধ্যে হাবিল ও কাবিল এর ঘটনাকে তুলে ধরে এবং ইসলামিক কিতাব থেকেও এর রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করে।

এখানে অনেকে হয়ত আদি পাপ কী জিনিস সেটা জানেন না। তাদের জন্য সংক্ষেপে প্রথমে আদি পাপ সম্পর্কে কিছুটা বলার চেষ্টা করছি।

আদম (আলাইহিস সালাম) এবং হাওয়া (আলাইহিস সালাম) যখন জান্নাতে অবস্থান করছিলেন, তখন শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে তারা নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকটবর্তী হন এবং কোনো কোনো বর্ণনায় তাঁরা নিষিদ্ধ গাছের ফল খান। এভাবে তাঁরা শয়তানের উস্কানিতে প্রভাবিত হয়ে যখন আল্লাহ তাআলার নাফরমানী করেন, তখন এই গোনাহ বা পাপ এর জন্য আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং এই পাপ আদম (আ) এর মধ্য হতে তাঁর পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে এবং তাই প্রত্যেকটা শিশু জন্ম থেকে এই পাপের প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। এই যে পাপ প্রথম আদম এবং হাওয়া (আ) এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়, এই পাপই হল আদি পাপ আর এই আদি পাপ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রত্যেক মানব শিশু পাপী হয়ে জন্মায়।
এই পাপকে নির্মূল করতে (খ্রিস্টান ধর্মীয় তত্ত্ব) অনুযায়ী আল্লাহ তাঁর একমাত্র পুত্র ঈসা (আ)-কে (নাউযুবিল্লাহ) প্রেরণ করে ক্রুশে ঝুলিয়ে প্রাণ উৎসর্গ করেন ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ, যাতে সমস্ত মানব জাতির মধ্যে প্রবেশ করা এই আদি পাপের প্রায়শ্চিত্ত সম্ভব হয়!

এখানে আমরা মুসলিমরা অনেক রকম জবাব দিয়ে থাকি, যেমন একজনের অপরাধে অন্যজন শাস্তি পাওয়া ন্যায়বিচার নয়, বাইবেলের বর্ণনায় যীশু উৎসর্গ না বরং অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিহত হয়েছেন, পিতার পাপ পুত্র বহন করবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে সে সকল পয়েন্টে আমরা যাচ্ছি না। কারণ সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়।

এখানে আমরা মূলত খ্রিস্টান মিশনারির উত্থাপিত একটি দলিলের জবাব দেব ইনশাআল্লাহ।

এখানে আমরা লেখার প্রথমেই হাবিল এবং কাবিলের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম।
এক্ষেত্রে খ্রিস্টান মিশনারির দাবি অনেকটা এরকম বলা যেতে পারে যে, ইসলামিক কিতাবে বর্ণনা করা হচ্ছে যে, কাবিল প্রথম মানব জাতির ইতিহাসে হত্যা কার্য করেছিল। আর এজন্য এখন কেউ অন্যায়ভাবে হত্যা করলে তার পাপের এক অংশ কাবিলের আমলনামায় জমা হবে। তাহলে ভবিষ্যতের কেউ পাপ করলে সেই পাপের অংশ যদি কাবিলের আমলনামায় জমা হয়, তবে এর অর্থ হল একজনের পাপের এক অংশ অন্যজনের মধ্যে সঞ্চারিত হচ্ছে। একইভাবে আদম (আ) এর পাপও তাঁর পরবর্তী বংশধরের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে যে পাপকে কেবল তওবা, আমল ইত্যাদির মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়!

আসুন প্রথমে এ সম্পর্কিত একটি হাদিস আমরা দেখে নিই।

 باب بَيَانِ إِثْمِ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ ‏‏ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ أَبِي شَيْبَةَ - قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ، اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا لأَنَّهُ كَانَ أَوَّلَ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ ‏"‏ ‏

"আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন ব্যাক্তি অত্যাচারিত হয়ে নিহত হয়, তবে সেই খুনের একাংশ (পাপ) আদম (আলাইহিস সালাম) এর প্রথম পূত্র (কাবিল) এর উপর বর্তায়। কেননা, সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল।"

(সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়ঃ ২৯, হাদিস নম্বরঃ ৪২৩২) অনলাইন সোর্স: http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=13843
.
.
উক্ত হাদিসের এই অংশটি আবার খেয়াল করুন, //...সেই খুনের একাংশ (পাপ) আদম (আলাইহিস সালাম) এর প্রথম পুত্র (কাবিল) এর উপর বর্তায়..//

পাপের একাংশ কেন বর্তাবে?

//...কেননা, সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল//

তাহলে অন্য ব্যক্তির অন্যায়ভাবে হত্যার পাপ কাবিলের ওপর বর্তানোর কারণ হল, কাবিল এই হত্যার প্রথার প্রচলন করেছে।

এখানে দুটি বিষয় উল্লেখযোগ্য:
১) কাবিল প্রথম (অন্যায়ভাবে) হত্যা করেছে;
২) কাবিল (অন্যায়) হত্যার প্রথা তথা পদ্ধতি চালু করেছে।

এখন, (১) নং পয়েন্টে কাবিল তার নিজের হত্যার জন্য গোনাহ বা পাপ অর্জন করবে।
কিন্তু (২) নং পয়েন্টে সে হত্যার পদ্ধতি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য অন্যের পাপের অংশ লাভ করবে।

এর অর্থ হল, কাবিল হত্যা করেছে, আর কেবল এই হত্যার অপরাধের জন্য সে অন্যের পাপের অংশ প্রাপ্ত হচ্ছে না।
বরং সে এই কারণে অন্যের পাপের বোঝা বহন করছে যে, সে এই পদ্ধতিকে চালু করে দিয়ে গেছে।

অর্থাৎ কাবিলের অন্যের পাপের অংশ বহনের কারণ তার ব্যক্তিগত পাপকার্য "হত্যা" নয়, বরং এই "হত্যা" এর পদ্ধতির প্রচলন ঘটানো।

অর্থাৎ যদি কেবল কাবিলের ব্যক্তিগত অপরাধ হত্যাকে বিবেচনা করা হয়, তবে এই ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য সে নিজে দায়ী; এজন্য অন্যের অপরাধ সে বহন করবে না যেমনটি আল্লাহ বলেন, "...প্রতিটি ব্যক্তি যা অর্জন করে, তা শুধু তারই উপর বর্তায় আর কোন ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না..." (আল-কুরআন, ৬:১৬৪)

কিন্তু কাবিল এখানে নিজের ব্যক্তিগত পাপ এর বাইরেও আরও একটি কর্ম সম্পাদন করেছে; আর তা হল, সে অন্যায় হত্যার পদ্ধতিকে চালু করে গেছে। আর তাই এই অন্যায় হত্যার প্রবর্তনের ফলাফলরূপে সে অন্যের পাপের অংশ প্রাপ্ত হচ্ছে। অর্থাৎ পরোক্ষভাবে অন্যের পাপের অংশ প্রাপ্ত হওয়াও কাবিলের নিজেরই কর্ম (অন্যায় হত্যার প্রচলন) এর একটি ফল।
উদাহরণস্বরূপ বিদ্যুৎ এর আবিষ্কারক প্রশংসার দাবিদার। এখন পৃথিবীতে যত মানুষ বর্তমানে আছে, তারা সবাই এই বিদ্যুৎ দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। তাহলে এখন যত মানুষ বিদ্যুতের আবিষ্কারকের প্রশংসা করবে, সকল প্রশংসা বিদ্যুতের আবিষ্কারকের পক্ষেই যাবে। এমনটা নয় যে, বিদ্যুতের আবিষ্কার পূর্বে হয়েছিল বিধায় এখন যদি কেউ সেই আবিষ্কারকের প্রশংসা করে, তবে সেই প্রশংসা তিনি পাবেন না। বরং যতদিন বিদ্যুৎ থেকে মানুষ উপকৃত হবে, ততদিন বিদ্যুতের আবিষ্কারকের প্রশংসা করলে সেই প্রশংসা তারই ওপর বর্তাবে।
(বিঃদ্রঃ যদিও আমাদের মুসলিমদের আকিদা হল, সমস্ত প্রশংসার চূড়ান্ত অধিকারী হলেন আল্লাহ যেহেতু তিনি বিদ্যুতের আবিষ্কারক সহ প্রত্যেক মানুষকে ক্ষমতা দিয়েছেন জ্ঞানার্জন ও কর্ম সম্পাদনের জন্য।)
একইভাবে যদি কেউ নেকি বা পুণ্যের কাজ পৃথিবীতে করে রেখে যায়, যা দ্বারা লোকজন উপকৃত হতে পারে, তবে এই ধরণের কর্মের প্রতিদান সে মৃত্যুর পরও পেতে থাকে কিয়ামত অবধি, যেমনটা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, "...চারটি জিনিস (এর বিনিময়) মানুষ তার মৃত্যুর পরও পেতে থাকবে। তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ (এর সাওয়াব), যদি সে তা মৃত্যুর আগে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে থাকে। নেককার সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দু’আ করতে থাকবে। কোনো উত্তম রীতি যা মানুষ প্রচলন করে থাকে আর লোকেরা তার মৃত্যুর পরেও তার উপর আমল করতে থাকে। আর যদি তার জন্য সুপারিশকারী লোকের সংখ্যা একশত জন হয়, তবে তার ব্যাপারে সুপারিশ কবুল করা হয়।" (সুনান আদ-দারেমী, অধ্যায়ঃ ভূমিকা (المقدمة), হাদিস নম্বরঃ ৫৩৪, হাদিসের মান: সহীহ) অনলাইন সোর্স - http://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=75910
.
সেক্ষেত্রে উপরিউক্ত বিষয় হতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, উত্তম বিষয়ের প্রচলনে যেমন উত্তম বিষয় কেউ প্রাপ্ত হতে পারে, তেমনি মন্দ বিষয়ের প্রচলনে মন্দ বিষয়ও তার ভাগ্যে জুটতে থাকে।
বিদ্যুৎ আবিষ্কারক তার ভবিষ্যতের লোকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে থাকবেন।
একই আঙ্গিকে আমরা বলতে পারি যে, উত্তম কোনো কাজ চালু করলে ভবিষ্যতের লোকেরা তা থেকে উপকৃত হলে উত্তম কাজটি চালু করা ব্যক্তিটি মৃত্যুর পরও নেকি পেতে পারেন (উপরের হাদিসটি দেখুন)। তেমনিভাবে অন্যায় হত্যার প্রথা চালু করার কারণেও কাবিল এই মন্দ প্রথা চালু করার প্রতিদানে ক্রমাগত এই প্রথা (অন্যায় হত্যা) এর অনুসারীদের পাপের একটি অংশ পেতে থাকবে।

এখানে তাই কাবিলের পাপ এর অংশ প্রাপ্তি কেবল তার ব্যক্তিগত পাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা তার ব্যক্তিগত বিষয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সামাজিকতার গণ্ডিতেও প্রবেশ করেছে!

এখানে খ্রিস্টান মিশনারি একটি অভিযোগ তুলতে পারে যে, কাবিল যেমন হত্যার প্রথা চালুর মাধ্যমে অন্যায় হত্যার পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছে; আদম (আ)-ও আল্লাহর নাফরমানী এর মাধ্যমে মানবজাতিকে আল্লাহর নাফরমানীর পথ দেখিয়ে গেছেন (যেহেতু তাদের কাছে যীশুই কেবল নিষ্পাপ, সকল নবী নয়)। তাহলে আদম (আ) এর পাপ কেন মানবজাতির মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে না?

প্রথমেই বলি যে, কাবিল এর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, আদম (আ) এর ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া হল বিপরীত।
কাবিল তার ভবিষ্যতের পাপীদের পাপের অংশ পাচ্ছে; অন্যদিকে আদম (আ) তাঁর ভবিষ্যতের আদম সন্তানদের পাপ প্রাপ্ত হচ্ছে না, বরং আদম সন্তানেরা তাদের পিতা আদম (আ) এর পাপ প্রাপ্ত হচ্ছে (খ্রিস্টান তত্ত্ব অনুযায়ী)।
তাহলে কাবিল এর ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, আদি পাপ এর প্রক্রিয়া যেহেতু তার বিপরীতধর্মী, তাই বিপরীতধর্মী বিষয় দিয়ে আদি পাপ সাব্যস্ত হয় না।
.
.
দ্বিতীয়ত, আদম (আ) যে নাফরমানী করেছিলেন, তা ছিল নিষিদ্ধ বৃক্ষের কাছে যাওয়া, আর কোনো কোনো রেওয়ায়েতে সেই বৃক্ষের ফল খাওয়া।
এখন সীমাযুক্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি মানুষের প্রকৃতিগত।
এক্ষেত্রে আদম (আ) এবং হাওয়া (আ) তাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে সেই বৃক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে মানুষের ফিতরাতে যেহেতু কিছু স্বাধীনতা বিদ্যমান, তাই মানুষ নিজের পথ বেছে নিতে পারে। আদম (আ) এবং হাওয়া (আ)-ও এখানে তাদের এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন মাত্র। তাঁরা নতুন কোনো প্রথা চালু করে যান নি। কারণ স্বাধীন ইচ্ছা ফিতরাতেরই অংশ। আর যা ফিতরাত বা প্রকৃতির অংশ তা মানুষ এমনি থেকেই করে থাকে। মানুষ যেহেতু নিজের পথ বেছে নিতে পারে, তাই সে আনুগত্যও করতে পারে, নাফরমানিও করতে পারে। আপনার সামনে একটা রাস্তা বাজারের দিকে গেলে, আরেকটা রাস্তা মসজিদের দিকে গেলে আপনি এর মধ্যে যে কোনো একটি রাস্তা বেছে নিতে পারেন। এই স্বাধীনতা আপনার ফিতরাতের অংশ। একইভাবে আপনি হালাল বা হারাম এর পথ পেয়ে যেকোনো একটি বাছতে পারেন। নিজের বৌদ্ধিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই বেছে নেওয়ার ক্ষমতাও আপনার প্রকৃতির অংশ, এটা আদম (আ) এর প্রচলিত কোনো প্রথা নয়, বরং আদম (আ) নিজেও এই প্রকৃতিগত স্বাধীনতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই আদম (আ) নতুন কোনো প্রথা চালু করে যান নি।
তদুপরি, নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ থেকে খাদ্যগ্রহণের ইঙ্গিত মেলে। আর খাদ্যগ্রহণও মানুষের প্রকৃতিগত। খাদ্যগ্রহণ তাই কোনো নতুন চালু করা সিস্টেম নয়; বরং একজন গণ্ড মূর্খও জানে যে, তাকে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে কারণ এটি প্রকৃতিগত। আর এই প্রকৃতিগত বিষয় দ্বারা আদম (আ) ও প্রভাবিত হয়েছিলেন।

কিন্তু একটা বাচ্চা শিশু কিন্তু জানে না যে, অন্যায় হত্যা কী জিনিস! এটা জানতে গেলে তাকে অন্যায়ভাবে হত্যার সিস্টেম সম্পর্কে শিক্ষা নিতে হবে। তাই অন্যায় হত্যা ফিতরাতের কোনো অংশ নয়। এটা একটা সিস্টেম। আর এই সিস্টেম চালু করে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কাবিল। তাই এই সিস্টেম এর সাথে আদম (আ) এর নিষিদ্ধ বৃক্ষের নিকট গমন তথা ফল ভক্ষণের বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই!
.
.
তৃতীয়ত, আদম (আলাইহিস সালাম) ও হাওয়া (আলাইহিস সালাম) তাঁদের কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান যা কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ  اَنۡفُسَنَا ٜ وَ  اِنۡ  لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾ 
"তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না করো আর দয়া না করো তাহলে আমরা অবশ্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’" (আল-কুরআন, ৭:২৩)

অতঃপর মহান আল্লাহ সেই অপরাধ ক্ষমা করে দেন যা এরূপে বর্ণিত হয়েছে:

فَتَلَقّٰۤی اٰدَمُ مِنۡ رَّبِّہٖ کَلِمٰتٍ فَتَابَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّہٗ ہُوَ  التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۳۷﴾
"তারপর আদাম (আ.) তাঁর প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হল, অতঃপর আল্লাহ তাঁর প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করলেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
(আল-কুরআন, ২:৩৭)

তাহলে যখন আল্লাহ তাআলা আদম (আ) এবং হাওয়া (আ) এর পাপ ক্ষমাই করে দিয়েছেন, তাহলে সেই পাপ তো থাকছেই না! আর যে পাপ থাকছেই না, সেই পাপ পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হবেই বা কী করে!
আপনার কাছে এক টাকাও নেই, তাহলে দশ টাকা আপনি আপনার বন্ধুকে দেবেনই বা কী করে!

সুতরাং আদি পাপ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই! আদম (আলাইহিস সালাম) ও হাওয়া (আলাইহিস সালাম) এর পাপ যখন থাকছেই না, তখন আদি পাপ বলেও কোনো কিছুর যেমন বাস্তব অস্তিত্ব নেই, তেমনিভাবে সেই পাপের জন্য যীশুকে ক্রুশে ঝুলিয়ে মারার তত্ত্বেরও কোনো যৌক্তিকতা নেই!

"...The son shall not bear the iniquity of the father, neither shall the father bear the iniquity of the son: the righteousness of the righteous shall be upon him, and the wickedness of the wicked shall be upon him."
(The KJV Bible, Ezekiel 18:20)

"...ছেলে বাবার দোষের জন্য শাস্তি পাবে না আর বাবাও ছেলের দোষের জন্য শাস্তি পাবে না। সৎ লোক তার সততার ফল পাবে এবং দুষ্ট লোক তার দুষ্টতার ফল পাবে।"
[বাংলা বাইবেল (অনুবাদ গ্রন্থের নাম: কিতাবুল মোকাদ্দস), হেজকিল ১৮:২০;
ভারতীয় প্রিন্ট, মুদ্রণ: Swapna Printing Works Pvt. Ltd, কলকাতা-৭০০০০৯]

Post a Comment

0 Comments