নারী নবী নেই কেনো?



মুহাম্মদ আলী, সিরিজ - ১৫
বিষয়:- নারী নবী নেই কেনো? 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________

হঠাৎ মোবাইল বাজতে লাগলো। মুহাম্মদ আলী কল ধরলো। বাবুল চাচা কল দিয়েছে। মুহাম্মদ আলী বলতে লাগলো। 

মুহাম্মদ আলী:- আসসালামু আলাইকুম। 

বাবুল চাচা:- ওয়ালাইকুম সালাম। শুনো তোমার চাচির অবস্থা ভালো না। খুবি অসুস্থ তাই সুরুজ আর তোর চাচি হাসপাতালে যাবে। তুইও যদি সাথে যাস তাহলে ভালো হয়। 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা আমি পৌঁছে যাচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই। ইনশাআল্লাহ

[ অতঃপর সুরুজ ও মুহাম্মদ আলী হাসপাতালে আসলো। রোগিকে একজন নার্স এসে নিয়ে গেলো। একজন মহিলা ডাক্তার চিকিৎসা করবে। ]

সুরুজ:- কিরে তুই আসলি নাকি। 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। তোর বাবা বলেছে অর্থাৎ বাবুল চাচা তাই আসলাম। 

সুরুজ:- কফি খাবি? 

মুহাম্মদ আলী:- দিতে পারিস। যা নিয়ে আয়। 

[ সুরুজ গিয়ে কফি আনলো দুজনে খেলো। একজন মহিলা ডাক্তার এসে বলল রোগির তেমন কিছু হয় নি সুস্থ হয়ে গেছেন। কিছু ঔষধ খাওয়ালে পুরপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। অতঃপর সকলে চলে গেলো বাসায় ]

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা সুরুজ, বাবুল চাচা আসলে বলিস আমি চলে গেছি। তোর মা তো সুস্থ হয়ে গেছে আমি তাহলে যাই। 

সুরুজ:- যাওয়ার আগে কিছু আলাপ তো করা যায়? 

মুহাম্মদ আলী:- এই মুহূর্তে ইচ্ছে নেই। 

সুরুজ:- আচ্ছা, মাত্র একটা কথা বলি। এই যে আমার মা অসুস্থ হলো যার কারণে মহিলা ডাক্তার চিকিৎসা করো। ঠিক না? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। তো? 

সুরুজ:- এই যে মহিলারা কোন মহিলাকেই ভালোভাবে তার সমস্যা গুলি বলতে পারে নানান জিজ্ঞাসা করতে পারে। কিন্তু! 

মুহাম্মদ আলী:- কিন্তু কি? 

সুরুজ:- এই যে কুরআন হাদিসের সব জায়গায় শুধু পুরুষ নবীর কথাই উল্লেখ আছে। কোন নারী নবী আসলে নারীরা তাদের প্রশ্ন করতে পারতো। ইসলাম কি তাহলে পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম? যে কারণে শুধুই পুরুষ নবী? 

মুহাম্মদ আলী:- হাসালে দোস্ত। নারীর জিজ্ঞাসার জন্য যে নারী নবী লাগবে তা অযৌক্তিক। নারী নবী নেই কারণ নবীদের যেসকল পরীক্ষা ছিলো সেসব নারীদের জন্য অতি কষ্টকর হয়ে যাবে। যেমন ইউসুফ, ইউনুস, মূসা এই নবীদের কাহিনী গুলি যদি পরে থাকো তাহলে বুঝবে নারীরা নবী হলে তাদের কতো সমস্যায় পড়তে হতো। 

সুরুজ:- তাই নাকি। তাহলে কি ইসলাম পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম??? 

মুহাম্মদ আলী:- না কোন ভাবেই না। নবীর স্ত্রীগণ কে কি তুমি ভুলে গেলো?? তারা কতো রকমের মাসায়েল দিয়েছেন আমাদের? আয়েশা (রাঃ) সব থেকে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন তার স্ত্রীদের মধ্যে। তাই ইসলামে নারীদের ভূমিকা নেই এমন দাবী ভুল। নবীগণের সাথে নবীগণের স্ত্রীরাও দাওয়াতের কাজ করেছেন হাদিস বর্ণনা করেছে। এখানেই তোমার দাবী নাকচ। 

[ সুরুজ হতভম্ব হয়ে গেলো ]

সুরুজ:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- এবার আমি যাই সুরুজ? 

সুরুজ:- যাও, তবে যতই ত্যনাবাজী করো ইসলাম নারীকে জীবই মনে করে না। ইসলাম নারীকে বস্তু মনে করে বস্তু! 

মুহাম্মদ আলী:- আমি জানি না তুমি যানো কিনা ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে। 

ইসলামে নারী,,, 

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ وَرَّادٍ، مَوْلَى الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَمَنَعَ وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ

মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া, কারো প্রাপ্য না দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, আর মাল বিনষ্ট করা।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪০৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : دَخَلَتْ عَلَيَّ امْرَأةٌ وَمَعَهَا ابنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُ، فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي شَيئاً غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحدَةٍ، فَأعْطَيْتُهَا إيَّاهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْها ولَمْ تَأكُلْ مِنْهَا، ثُمَّ قَامَتْ فَخَرجَتْ، فَدَخَلَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَينَا، فَأخْبَرْتُهُ فَقَالَ: «مَنِ ابْتُليَ مِنْ هذِهِ البَنَاتِ بِشَيءٍ فَأحْسَنَ إلَيْهِنَّ، كُنَّ لَهُ سِتراً مِنَ النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, এক মহিলা তার দু’টি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট ভিক্ষা চাইল। অতঃপর সে আমার নিকট একটি খুরমা ব্যতীত কিছুই পেল না। সুতরাং আমি তা তাকে দিয়ে দিলাম। মহিলাটি তার দু’মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল এবং সে নিজে তা থেকে কিছুই খেল না, অতঃপর সে উঠে বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, ‘‘যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর যদি সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল হবে।’’ (বুখারী, মুসলিম) [১]


ফুটনোটঃ
[১] সহীহুল বুখারী ১৪১৮, ৫৯৯৫, মুসলিম ২৬২৯, তিরমিযী ১৯১৫, আহমাদ ২৩৫৩৬, ২৪০৫১, ২৪০৯০, ২৪৮০৪, ২৫৫২৯ 

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং 
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ الْحَسَنِ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ فِطْرٍ، عَنْ أَبِي سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ مَا مِنْ رَجُلٍ تُدْرِكُ لَهُ ابْنَتَانِ فَيُحْسِنُ إِلَيْهِمَا مَا صَحِبَتَاهُ أَوْ صَحِبَهُمَا إِلاَّ أَدْخَلَتَاهُ الْجَنَّةَ ‏"‏ ‏.‏

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির দু’টি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করলে যত দিন তারা একত্রে বসবাস করবে, তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [৩০০২]


ফুটনোটঃ
[৩০০২] আহমাদ ২১০৫, ৩৪১৪। সহীহাহ ২৭৭৫। 

সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৬৭০
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD

وَعَنْ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْوَائِدَةُ وَالْمَوْءُودَةُ فِي النَّارِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَالتِّرْمِذِيُّ

ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত ক্ববর দেয় এবং যে মেয়েকে ক্ববর দেয়া হয়, উভয়ই জাহান্নামী। [১]


ফুটনোটঃ
[১] সহীহ : আবূ দাঊদ ৪০৯৪, সহীহুল জামি‘ ৭১৪২। হাদীসটির অনেকগুলো সানাদ রয়েছে যার কয়েকটি দুর্বল হলেও বাকীগুলো সহীহ। অতএব নিঃসন্দেহে হাদীসটি সহীহ। 

মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১১২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আর তুমি তো জানোই মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত! (নাসায়ী ৩১০৪)

আবার বলছো ইসলাম পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম!? 

সুরুজ:- ইসলামে নারী বস্তু ছাড়া কিছুই না। 

মুহাম্মদ আলী:- কন্যা সন্তানকে লালান পলনের জন্য আল্লাহ জান্নাতের কথা বলেছেন। আর তুমি বলছো শুধু বস্তু!? 

সুরুজ:- হুম। এই কারণেই ইসলাম পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম। 

মুহাম্মদ আলী:- হা হা এমনই যদি তোমার যুক্তি হয় তাহলে শুনো ইব্রাহিম আর তার পুত্রের ঘটনা কি তোমার মনে আছে? 

সুরুজ:- হুম অবশ্যই। 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা আল্লাহ ইব্রাহিমকে কি কোরবানি দেওয়ার কথা বলেছিলেন? 

সুরুজ:- তার প্রিয় বস্তু! 

মুহাম্মদ আলী:- এবার কি বলবে খোকা? এবার কি বলবে ইসলাম নারীদের ধর্ম? 

সুরুজ:- মানে? 

মুহাম্মদ আলী:- এই যে ইব্রাহিমে পুত্রকে ইব্রাহিম (আঃ) নিয়ে গিয়েছেন। তার পুত্রই তার প্রিয় বস্তু। এখন কি তুমি বলবে না "ইসলামে পুত্র হলো বস্তু" আর "কন্যা জান্নাত"?? 

সুরুজ:- ইয়ে মানে! 

মুহাম্মদ আলী:- আমাদের কাছে অনেক শব্দই বেমানান লাগে। কিন্তু এর মানে এই না যে বিষয়টাও বেমানান। যেমন যদি বলা হতো প্রিয় জিনিস তাহলে হয়তো বেমানান লাগতো না কিন্তু বস্তু বলায় বেমানান লাগছে। মূল কথা আল্লাহ নারী পুরুষ সকলকেই তার প্রাপ্য অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু তোমারা বলো যে ইসলাম পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম। তাহলে ইব্রাহিমের পুত্রকে বস্তু ভাবার কারণে তো ইসলাম নারীবাদী ধর্ম হয়ে গেলো??? তাই না? সুতরাং নিজের কাছে কোন কিছু বেমানান মনে হলে আগে দেখো কি বুঝানো হয়েছে সেখানে। আর অপপ্রচার বন্ধ করো। 

সুরুজ:- ইয়ে মানে! 

মুহাম্মদ আলী:- কন্যা সন্তানকে লালন পালনের জন্য জান্নাত। আর কন্যা সন্তানকে মেরে ফেললে জাহান্নাম। তাহলে কি ইসলাম নারীবাদী ধর্ম? অতএব শেষ কথা বলবো নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাও আর কতো থাকবে শিকল বাঁধা দূষিত চিন্তায়। মুক্ত চিন্তার নামে দূষিত চিন্তা করে কোন ফায়দা নেই। 

[ সুরুজ কিছুই বলল না। মুহাম্মদ আলীও চাচির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো...... ]


Post a Comment

0 Comments