নৈতিকতার ভিত্তি কি বিবেক? [ দ্যা গড ডিল্যুশন ]


মুহাম্মদ আলী, সিরিজ - ১৬
বিষয়:- নৈতিকতার ভিত্তি কি বিবেক? 
____________________________________________________________________________

খুব ক্লান্ত লাগছে আজ। তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছে মুহাম্মদ আলী। তখনই দরজায় কড়া নাড়ছে কে যেনো। মুহাম্মদ আলী দরজা খুলেই দেখলো অভিজিৎ রায় এবং তার সাথে একজন লোককে দেখলো। দেখে অবাক হলো, কারণ সেই লোকটা হলো ডকিন্স হুম রিচার্ড ডকিন্স। রুমে নিয়ে গেলো তিন কাপ কফি আনা হলো। তিনজন খেতে খেতে আলাপ শুরু করলো। অভিজিৎ বলতে লাগলো,,, 

অভিজিৎ:- এই হলো ডকিন্স আমার খুবি ভালো বন্ধু। তুই তার দ্যা গড ডিল্যুশন বইটা পড়েছিস? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম পড়েছি বাংলা অনুবাদকৃত টা। বইটা খোঁড়া যুক্তিতে ভরপুর। 

[ ডকিন্স চটে গিয়ে তার কফিটা টেবিলে রাখলেন। আর বললেন ]

ডকিন্স:- কি বলছো তুমি? তোমার এতো বড় সাহস? বাচ্চা ছেলে কোথাকার। 

মুহাম্মদ আলী:- চটে যাচ্ছেন কেনো মশাই। আর আপনি বাংলা শিখলেন কবে? 

ডকিন্স:- যেভাবেই শিখি। তুমি আগে বলো কোথায় পেয়েছে খোঁড়া যুক্তি? দেখাও তো একটা? 

[ অভিজিৎ রায় চুপচাপ শুনে যাচ্ছে ]

মুহাম্মদ আলী:- বহু দেখাতে পারবো। একটা দেখাই এই যেমন আপনি বিবেক কেই নৈতিকতার স্টান্ডার্ড মনে করেন। আর বঙ্গীয় নাস্তিকরাও আপনার মতন বিবেক কেই নৈতিকতার শিকড় মনে করে। 

ডকিন্স:- হা হা হা। তাহলে কি তুমি বলতে চাও নৈতিকতার জন্য ধর্মই শিকড়? তুমি আমার বইটা পড়েছো? আমি তোমাদের এই দাবী খন্ডন করেছে। (দ্যা গড ডিল্যুশন ষষ্ঠ অধ্যায় - শেষপর্ব) 

মুহাম্মদ আলী:- কি খন্ডন করেছেন জানি না। তবে খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন তা ঠিকই অবগত হয়েছি। 

ডকিন্স:- তাই নাকি? তাহলে আমার বইয়ে যা বলেছি তাই তোমাকে বলছি। তুমি বলো তো আমায় তুমি যদি মুসলিম না হতে তাহলে কি ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, খুন করতে? যদি বলো "না" তাহলে প্রমাণিত হবে যে "ধর্ম ছাড়াও একজন মানুষ নৈতিকতার দিক থেকে উত্তম হয়"। 

মুহাম্মদ আলী:- এটাই তো আপনার বস্তা পঁচা সস্তা যুক্তি!

ডকিন্স:- আমার উত্তর দেও পারলে। যদি তুমি মুসলিম না হতে তাহলে কি "চুরি, ডাকাতি, ধর্ষন" করতে? 

মুহাম্মদ আলী:- না। 

ডকিন্স:- গুড বয়। তাহলে দেখলে ধর্ম ছাড়া মানুষ নৈতিক হতে পারে? বিবেক থাকলেই যথেষ্ট। 

মুহাম্মদ আলী:- না ভুল বললেন। আমি-আপনার কাছে যদিও চুরি, ডাকাতি খারাপ কর্ম লাগবে। কিন্তু এই যে ধর্ষণ হচ্ছে এই যে চুরি-ডাকাতি এবং খুন হচ্ছে তাদের তো বিবেক আছে কিন্তু তাদের বিবেক অনুযায়ী তাদের কাছে চুরি করা ভালো। কারণ এতে তাদের লাভ। সুতরাং বিবেক দিয়ে নৈতিকতা বিচার হলো আপেক্ষিক। একজন চুরের বিবেক চুরিকেও ভালো ভাবে। যদি বিবেকই মানুষকে নৈতিক বানায় তাহলে চুরের বিবেকেও নৈতিক থাকতো। সে আর চুরি করতো না। 

[ অভিজিৎ রায় আর ডকিন্সের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ ডকিন্স চুপ রইলো তার পর বলল ]

ডকিন্স:- ইয়ে মানে! একটু আগেই তো বললে ধর্ম ছাড়া তুমি চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, খুন করবে না। 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। আমি করব না কিন্তু সবাই যে আমার মতন করবে না তার প্রমাণ কি? চুরের কাছে তো চুরি করাও বিবেকে ভালো। কিন্তু ইসলামে চুরি করা হারাম ধর্ষণ হারাম এবং ধর্ষণের শাস্তি রজম। আর এই ইসলামের বিধান সকলের মানতে হবে। সকল মানুষ বাধ্য নৈতিক হতে। যে হবে না তার জন্য শাস্তি থাকবে সে কখনো মুসলিম হবে না। সঠিকভাবে ইসলাম মাননে ওয়ালা হবে না। 

ডকিন্স:- ইয়ে মানে! 

মুহাম্মদ আলী:- আমাদের স্টান্ডার্ড ইসলাম আর ইসলাম মানলে কেউ ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি করতে পারবে না। অন্যদিকে বিবেক যদি স্টান্ডার্ড হয় তাহলে একজনের কাছে বিবেক দিয়ে ভালো কাজ করবে অন্যজন বিবেক দিয়ে খারাপ কাজ করবে। বিবেক একেকজনের একেক রকম। কিন্তু ইসলাম সবার জন্য সমান বিধান। কিন্তু বিবেক আপেক্ষিক! সুতরাং আমি ধর্ম ছাড়া নৈতিক হই কি না হই সেটা প্রমাণ হয় না সকলেই বিবেকের কারণেই ভালো হবে। বা বিবেক হলো স্টান্ডার্ড। 

[ ডকিন্স একদম চুপসে গেলো। সে কখনোই ভাবেনি একটি পুচকে ছেলে তাকে এমন ধুলাই দিবে ]

মুহাম্মদ আলী:- অভিজিৎ আর আপনি দুজনেই তো ডারউইনিজমে বিশ্বাসী? 

অভিজিৎ:- মানে? 

মুহাম্মদ আলী:- মানে ডারউনের বিবর্তনে? 

অভিজিৎ:- হুম এটাই সত্য। 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা অভিজিৎ দাদা আপনার একটা বই পড়েছিলাম। "সমকামিতা" সেই বইটা নিয়ে একটা কথা বলতে চাচ্ছি। 

অভিজিৎ:- কি বলবি বল! আমরা আবার চলে যাবো। 

মুহাম্মদ আলী:- আপনার বইতে আপনি বলেছেন,,, 

"আমরা 'সৃষ্টি সেরা জীব' বলে কথিত গর্বিত মানুষেরাও কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই প্রকৃতিরই অংশ আরো ভালোভাবে বললে প্রাইমেটদের অংশ। ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবিন ডানবার এ প্রসঙ্গে বলেন – 
সব কথার শেষ কথা হলো, অন্যান্য প্রাইমেটদের মধ্যে বিশেষতঃ এপদের মধ্যে কোন কিছু ঘটলে, এর একটা বিবর্তনীয় ধারাবাহিকতা হয়ত মানুষের মধ্যেও থাকবে বলে ভেবে নিলে হয়ত সেটা অযৌক্তিক হবে না। আমরা বনোবো শিম্পাঞ্জির কিংবা জাপানি ম্যাকাকুয়ি প্রজাতিতে সমকামিতার প্রকাশ দেখেছি। বিবর্তনের চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করলে মানুষের অবস্থানও কিন্তু হবে এদের খুব কাছে পিঠেই।" [ সমকামিতা – অভিজিৎ রায়, পৃষ্ঠাঃ- ৭১-৭২ ] 

অভিজিৎ:- তো? এখানে কি সমস্যা পেলি। 

মুহাম্মদ আলী:- তুমি স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিলে মানুষ যেহেতু প্রাইমেট থেকে বিবর্তিত সেহেতু মানুষ তাদের মতই সমাকামিতা করবে। অর্থাৎ "বনোবো শিম্পাঞ্জির কিংবা জাপানি ম্যাকাকুয়ি প্রজাতিতে সমকামিতার প্রকাশ দেখা গেছে। সুতরাং বিবর্তনের চোখ দিয়ে দেখতে শুরু করলে মানুষের অবস্থানও কিন্তু হবে এদের খুব কাছে পিঠেই।"
 
অসাধারণ,, তাহলে প্রমাণ হলো নাস্তিকরা মানুষ নয় বরং তারা সেই প্রাইমেটের মতোই শারীরিক পরিবর্তন হলেও মানুষ পশুর মতন। 

অর্থাৎ,,, 
যেহেতু পশু সমকামি রয়েছে
মানুষও বিবর্তনবাদ অনুযায়ী সমকামি হবে। 

তাহলে আমিও বলি,,, 

যেহেতু পশুরা বিবাহ ছাড়া যার তার সাথে শারীরিক মিলন করে সেহেতু নাস্তিকরাও তা করবে এটা বিবর্তনবাদ। 

অভিজিৎ:- ইয়ে মানে!!! 

মুহাম্মদ আলী:- তাহলে পশুরা অনুমতি ছাড়াই দৈহিক মিলন (যাকে ধর্ষণ বলে) করে। তোমারা নাস্তিকরাও করতে পারবে অর্থাৎ ধর্ষণ-সমকামিতা!

[ অভিজিৎ রায় আর ডকিন্সের প্রস্থান ]

বিঃদ্রঃ মুহাম্মদ আলী সিরিজের সব চরিত্রই কাল্পনিক। সুতরাং কাউকে আঘাত দেওয়া হয় নি বরং তথ্যভিত্তিক আলোচনাই আমাদের লক্ষ্য। 

Post a Comment

0 Comments