নবী ইব্রাহিম ও তার পূত্রের ঘটনা! এবং আপত্তি!


মুহাম্মদ আলী, সিরিজ - ২
বিষয়: নবী ইব্রাহিম ও তার পূত্রের ঘটনা! এবং আপত্তি! 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________

কয়েকদিন পরেই কুরবানী ঈদ। মুহাম্মদ আলী ও তার বাবা ও সুরুইজ্জা একসাথে গরু কিনতে গেছে। গরু কিনে বাসায় আসালো। মুহাম্মদ আলী ক্লান্ত হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে রইলো। এমন সময় সুরুইজ্জা এসে বলল,,, 

সুরুইজ্জা:- একটা প্রশ্নের উত্তর দেতো হাবা। 

মুহাম্মদ আলী:- কি প্রশ্ন বলতে থাকো। তোমার তো কোন কাজ নাই শুধু যাকে পাও অযথা প্রশ্ন করে থাকো। যাইহোক আমায় করতে পারো সমস্যা নেই। 

সুরুইজ্জা:- কয়েকদিন পরেই তো কুরবানী ঈদ তাইনা? 

মুহাম্মদ আলী:- কেনো তুমি কি জানো না? কথা না পেঁচিয়ে সোজাসুজি বলো কি বলতে চাচ্ছ। 

সুরুইজ্জা:- আচ্ছা আল্লাহ কি খারাপ কাজের আদেশ দেন? 

মুহাম্মদ আলী:- কখনোই না। মন্দ কাজের আদেশ আল্লাহ তায়ালা দেন না। 

وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।
(সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ১০৪)

আশা করি বুঝা গেছে আল্লাহ খারাপ কাজে নন ভালো কাজের নির্দেশ দেন এবং তারা সফলকাম যারা তা করে।

সুরুইজ্জা:- ওও তাই। যদি তাই হয়ে থাকে আল্লাহ কেনো ইব্রাহিমকে তার পুত্রকে হত্যা করতে বলল। এটা কি খারাপ নয়?

[ মুহাম্মদ আলী দুই গ্লাস পানি খেয়ে বলতে লাগলো,, ]

মুহাম্মদ আলী:- না বুঝে কথা বলো না। এটা খারাপ কিছু নয় বরং এটি সকল নবীদের উপর পরীক্ষা সকল নবীই নানান পরীক্ষা দিয়েছেন। 

১) আল্লাহ তার পূত্রকে জবাই করতে দিতে বলেন নি। বলেছেন প্রিয় বস্তু কুরবানী দিতে। আর ইব্রাহিমের সব থেকে প্রিয় ছিলো তার পুত্র। 

২) নবী রাসুল এবং প্রত্যেক মুমিনদের জন্য সব থেকে মূল কথা হলো আল্লাহর আদেশ।

৩) ইব্রাহীম নবীর সবথেকে প্রিয় বস্তু তার ছেলে। দেখো নিজের জীবনের থেকেও তার ছেলেকে তিনি ভালোবাসেন তাই তিনি তার ছেলেকে কুরবানী দিতে নিয়ে গেছেন।নবী ইব্রাহীম আল্লাহর নবী, 

তিনি জানতেন,,,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৫৫)

وَإِذِ ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ۖ قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না।
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১২৪)

একদিকে "নবীর পরীক্ষাও নেওয়া হলো" এবং নবী যে তার ছেলেকে কত বেশি ভালোবাসে তাও প্রমাণ হয়ে গেলো।

৪) সকল নবী রাসুল এবং সকল‌ মুসলিমরাই জানে আল্লাহ যুলুম করেন না আল্লাহ নিষ্ঠুর নন বরং দয়ালু।

ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ

এই হলো সে সবের বিনিময় যা তোমরা তোমাদের পূর্বে পাঠিয়েছ নিজের হাতে। বস্তুতঃ এটি এ জন্য যে, আল্লাহ বান্দার উপর যুলুম করেন না।
(সূরাঃ আল-আনফাল, আয়াতঃ ৫১)

এই ‌কারণেই নবী গিয়েছেন তার পুত্রকে নিয়ে এবং তিনি দেখলেন তার পূত্র কুরবানী হলো না।এবং তিনি বুঝলেন আসলেই "আল্লাহ কারো প্রতি যুলুম করেন না"

আল্লাহ কখনোই তার পুত্রকে কুরবানী হতে দিতেন না,,,,,

وَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ

আর তোমাদের উপাস্য একইমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই।
(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৬৩)

সুরুইজ্জা:- ইয়ে মনে, 

মুহাম্মদ আলী:- সকল নবীই জানেন আল্লাহ কারো সাথে জুলুম করেন না। তোমার মতন লোকেরা বিশ্বাস না করতে পারলেও আল্লাহর নবীগণ এ ব্যাপারে জানতেন। এ কারণেই তারা সম্মাণিত। 

[ এমন সময় সুরুজ আলীর বন্ধু আরজ আলী আসলো। আরজ আলী সুরুজ আর মুহাম্মদ আলীর থেকে বয়সে কিছুটা বড় ]

আরজ আলী:- কিরে সুরুজ আর মুহাম্মদ আলী তোদের খবর কি? 

সুরুইজ্জা:- ভালোই। হাবাটার সাথে কথা বলতেছি আরকি। 

মুহাম্মদ আলী:- আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। 

আরজ আলী:- কি নিয়ে কথা বলছিস? 

মুহাম্মদ আলী:- এইতো কুরবানী নিয়ে সুরুজের কিছু প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। 

আরজ আলী:- ও তাই নাকি আচ্ছা তোরা আলোচনা করতে থাক। আমি শ্রবণ করি। 

সুরুইজ্জা:- হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে আছে গরুর সঙ্গে।ওরা মনে কষ্ট পায় গরু কুরবানী দেখলে। বুঝেছো হাবা? 

মুহাম্মদ আলী:-হিন্দুদের ধর্মীয় প্রথা নিয়ে এতো দরদ কিসের যেহেতু তুমি নাস্তিক ? মুসলমানরা শূকর খায় না হিন্দুদের কাছে কি গিয়ে বলেছেন "শূকর খেয়ো না কারণ ইসলামে হারাম" ? যত সমস্যা গরু কুরবানীতে মুরগি,মাছ,উদ্ভিদের কি জীবন নেই ? নাকি এরা কষ্ট পায় না ?

সুরুইজ্জা:- ইয়ে,, জানি এটা কুসংস্কার। গরু কখনো মা হতে পারে না। তবুও একটা ধর্মের লোকের বিশ্বাসে আঘাত করা ঠিক না।

মুহাম্মদ আলী:- যদি কুসংস্কার হয় যা স্বীকার করলে তাহলে কুসংস্কারের প্রতি এতো দরদ কেনো ? তুমি এবং নাস্তিকরা যখন ইসলাম ও মুসলমিদের বিশ্বাসে আঘাত করে তখন সেটা কিভাবে ঠিক হয়? নাকি হিন্দুদের সময় ঠিক না আর ইসলামের সময় ঠিক ? যাকে বলে "ডাবল স্ট্যান্ডার্ড"বাজি !

[ সুরজ নিশ্চুপ। আরজ আলী একটু ভাব দেখিয়ে বলতে লাগলো ]

আরজ আলী:- শুনো মুহাম্মদ আলী। সুরুজ মনে হয় ক্লান্ত হয়ে গেছে। আমি তোমাকে প্রশ্ন করবো দেখি তুমি কতটুকু জানো। কুরবানী একটা নিষ্ঠুর কর্ম। 

মুহাম্মদ আলী:- কিভাবে? 

আরজ আলী:- প্রথমত হিন্দুদের মতন কুরবানীও তো তাহলে ভুল বিশ্বাস। এক নিষ্ঠুর পিতা বেহেস্তের লোভে তার ছেলেকে হত্যা করতে গিয়েছিল। সে নিষ্ঠুরতাকে স্মরণ করেন নিরীহ গৃহপালিত পশুর প্রতি কুরবানীর নামে নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছি।

মুহাম্মদ আলী:- দুঃখ নিবেন না। আপনি আমার সিনিয়র হলেও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার কথা পুরোপুরি হিন্দুদের। হিন্দুরা যেমন গরুর হত্যার বিরোধী আপনিও একই গোয়ালের। যাইহোক,, কুরবানী কোন বিশ্বাস নয় যে ভুল বিশ্বাস হবে।কুরবানী হলো একটি‌ ইবাদত।

নবী ইব্রাহিম নিষ্ঠুর নন বরং নবী ইব্রাহিম তার ছেলেকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে তাই তার ছেলেকেই নিয়ে গেছে কারণ সকলের‌ মনের কথা আল্লাহ জানেন। ইব্রাহীম যদি নিজের ছেলেকে বেশি ভালোবেসে নিজের জীবন নিতে বলে তাহলে সেটা আর পরীক্ষায় ভালো হবে না। নবী ইব্রাহীম এবং সকল নবী রাসুলগণ জানেন আল্লাহ কখনো কোন বান্দার উপর যুলুম করেন না। আল্লাহ দয়ালু এবং তার পুত্রও গিয়েছিল সাথে। এবং আল্লাহ পরীক্ষা নিয়ে তাকে করে ‌‌দিলেন নেতা।পরীক্ষা কঠিন হয় তাই বলে এখনে নিষ্ঠুরতার কিছু নেই।

ধরুন পরীক্ষার হল গণিত পরীক্ষা হবে প্রশ্ন আসলো প্রশ্ন দেখে একটি ছাত্র বলল "স্যার এতো নিষ্ঠুর এতো ভয়ানক সব অঙ্ক দিলো" আদৌ কি স্যার নিষ্ঠুর !?
না নিষ্ঠুর নন। পরীক্ষা কঠিন হবেই আর সেই উত্তম যে সবর করে সে পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করে।

এখানে স্যারকে নিষ্ঠুর বলা এবং নবী ইব্রাহীমকে বলা দুইটাই "কুযুক্তি" কারণ "পরীক্ষা" কঠিন হবেই। 

আরজ আলী:- (রাগী হয়ে) তুই দেখছি বড্ড ত্যানাবাজ। জান্নাতের লোভে নিজের ছেলেকেও কুরবানী দিতে পিছপা হলো না। 

মুহাম্মদ আলী:- মনে করুন একজন আফিস কর্মকর্তার বস বলল তাকে প্রমোশন দেওয়া হবৃ। তাহলে‌কি সেই লোকটি "প্রমোশনের" লোভ দেখাচ্ছে !?
চাকরির ক্ষেত্রে ভালো কাজের জন্য প্রমোশন আছে, কখনো কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

এখন কি আমরা বলব আমাদের "ভয়" এবং "লোভ" দেখিয়ে ভুল‌ করেছেন !?

আরজ আলী:- ইয়ে মানে,,, 

[ সুরুজ সব শুনছিলো সুরুজের মূখে এতক্ষণ হাসি ছিলো। কিন্তু এখন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে ]

মুহাম্মদ আলী:- আসলে আপনার উচিত লোভ কাকে বলে তার সঙ্গা জানা। কাউকে উপহার দিলেন সেই উপহার গ্রহণ করা লোভ নয়। কিন্তু না দিলে বা একবার দিয়ে দিলে বার বার চাওয়া। বার বার নেওয়া। যত পাওয়া তত চাওয়া একেই বলে লোভ। নবী গণ যদি লোভী হতেন তাহলে আর এতো বিসর্জন দিতেন না নিজেদের জীবন। জান্নাত হলো আমাদের জন্য একটি নিয়ামত। চিরকালের বাসস্থান। 

আরজ আলী:- (হতাশ হয়ে) আচ্ছা আমি এবার যাই। আমার খুবি প্রয়োজনীয় কাজ আছে। আবার আসবো কুরবানী ঈদের দিন। 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা, আসসালামু আলাইকুম। 

[ আরজ আলী চলে গেলন। সুরুজ বলল ]

সুরুইজ্জা:- কুরবানীতে মানুষের কিছু টাকা ছাড়া কি কিছু ত্যাগ করতে হয়? বরং গরুটাই নিজের জীবন উৎসর্গ করে। এখানে তো গরু মানুষের‌ থেকে মহান। মানুষ হত্যাকারী গরু আত্মত্যাগকারী! 

মুহাম্মদ আলী:- সুরুইজ্জা তুমি কি গরু কুরবানী দেওয়ার জন্য মানুষকে "হত্যাকারী" বানিয়ে ফেললে ? তাহলে তো যারা মাছ,মুরগি খায় তারাও হত্যাকারী তোমার যুক্তি অনুযায়ী ! তাহলে কি "মাছে ভাতে বাঙ্গালী" মানে সকল বাঙ্গালী হত্যাকরী !? আর মানুষ তো নিজের জন্ম ভূমি কেই ত্যাগ করে চির বিদায় নেয়। তাই শুধু টাকা ছাড়াও অনেক কিছুই ত্যাগ করে মানুষ ত্যাগ করে তার মা বাবা প্রিয়জনদের ত্যাগ করে নিজের জীবন।সব কিছুকেই একদিন উৎসর্গ করতে হয়। শুধু টাকা নয়। তোমার যুক্তি অনুযায়ী মাছ যেহেতু নিরীহ প্রাণী সেহেতু যারা মাছ খায় তারা হত্যাকারী আর মাছ হলো ‌মহান। ভুল বললাম !?

কি হত্যাকারী বলব?? 

সুরুইজ্জা:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- আসলেই তোমার ব্রেণ ওয়াস করেছে আরজ আলী। তাই এই অবস্থা। 

[ সুরুইজ্জা আর কথা না বাড়িয়ে। ফটাফট চলে গেলো ]

Post a Comment

0 Comments