নুতফা সম্পর্কে আসিফ মহিউদ্দীনের মিথ্যাচার!







লেখক:- আফিফ আলী
সহায়কঃ ইসলামী সচিত্র গাইড 


প্রথমত সবার আগে একটি কথা বলতে চাই আর সেটা হল কুরআন হচ্ছে একটি পরিষ্কার গ্রন্থ  এবং এই সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই । তবে কিছু মুক্তমনারা নিজেদের ব্লগে বা লেখনিতে একটি খবর প্রচার করতে চেষ্টা করছে । ব্যাপারটা চেষ্টা নয় অপচেশটা বলা যেতে পারে । তিনি নুতফা সম্পর্কে একটি লেখা পাব্লিশ করেছেন । আমি পুরো লেখাটা পড়লাম পড়ে কিছু পয়েন্ট শনাক্ত করলাম । সেই সমস্ত পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে  উনার একটা ভুল ধরিয়ে দিতে চাই সেটা হল উনার ভূমিকাতেই সেই ভুল হল উনি বলেছেন ,





" বাস্তবে, একটি একক শুক্রাণু গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে এবং নারীর ডিম্বাণুর সাথে একীভূত হয়। "




কিন্তু আসলে সম্পূর্ণ একটি শুক্রাণু কখনই নারীর ডিম্বাশয়ের সাথে একীভুত হয়না । বরং শুক্রাণু এবং ডিম্বানুর নিউক্লিয়াস পরস্পরের সাথে একীভুত হয় । এই তথ্য কোথা থেকে পেলাম ? উত্তর ৯ - ১০ শ্রেণির টেক্সট বই থেকে । যা নাস্তিক সমাজের জন্য একটি লজ্জার বিষয় । এবং উনি এও লিখেছেন যে , কুরআন - হাদিসে এমন কোন আয়াত - হাদিস তো দূরের কথা । কোন ইঙ্গিতও আসেনি যেখানে বলা হচ্ছে যে , পুরুষের শুক্রানু নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে । তার এই দাবি একদম ভুয়া একটি দাবি বরং স্পষ্ট একটি হাদিস রয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে শুক্রানু গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ভ্রূণ সঞ্চারিত করে যা সত্যি একটি মিরাকেল ।





‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, পূর্বের অবশিষ্ট শুক্রানু যা তার পুরুষাঙ্গে রক্ষেত ছিল তাই গর্ভাশয়ে নির্গত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে। [ দেখুনঃ (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)] 




এখন এই ছিল ভূমিকার কিছু অংশের অবস্থা । এখন কিছু মূল পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো । প্রথমে মূল পয়েন্ট গুলো উল্লেখ করা যাক ।




শুক্রানু মিলিত হবার পর কোন পর্যায় বা স্তরে সেটা জমাট বাধা রক্তের মত হয়না ।




নুতফা শব্দ দিয়ে শুধুমাত্র বীর্য বুঝানো হয় । কোন প্রখ্যাত তাফসীর কিংবা ডিকশনারীতে এর অর্থ শুক্রানু তা পাওয়া যায়না ।




কুরআনের আয়াত ৭৫:৩৭ এর ভুল ব্যাখ্যা




“সুলালাতিন” শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা




ব্যাকরণের ওপর ভিত্তি করে একটি বাজে যুক্তি




উনার সমগ্র লেখা থেকে আমি এই কয়েকটা পয়েন্ট কালেক্ট করেছি এবং প্রত্যেকের জবাব আমি মুসলিম সোর্সের পাশাপাশি অমুসলিম সোর্স থেকে দেব ইনশাআল্লাহ ।




আসলেই কি শুক্রানু মিলিত হবার পর কোন পর্যায় বা স্তরে সেটা জমাট বাধা রক্তের মত হয়না ?




এই দাবিটা একেবারে ভিত্তিহীন দাবি আমি কিছু মুসলিম অমুসলিম সোর্স থেকে সেটা প্রমাণ করছি । নিচের চিত্রটি দেখুন ।








আমরা যদি রক্তপিন্ড শব্দটি গ্রহণ করি তাহলে দেখবো উপরের চিত্রের সাথে সম্পূর্ণ তা মিলে যাচ্ছে  । এর বাহ্যিক অবস্থা একটি রক্তের পিন্ডের মত । এবং এর উপর একটি পাতলা আবরণ থাকে । যার ভিতরে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বিদ্যমান [২] । এবং তিন সপ্তাহ অবধি এই রক্ত সঞ্চালিত হয়না [৩] ।  চিত্রঃ ১ এ ভ্রুনকে একটি মাংসের বা রক্তের পিন্ডের মতই লাগছে এবং চিত্রটি (The Developing Human, ৫ম সংস্করণ, ৬৫ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে)




নুতফা শব্দ দিয়ে শুধুমাত্র বীর্য বুঝানো হয় ? কোন প্রখ্যাত তাফসীর কিংবা ডিকশনারীতে এর অর্থ শুক্রানু তা পাওয়া যায়না ?




এইটা খুব হাস্যকর আর একটি বাজে যুক্তি । নুতফা শব্দের অর্থ মূলত বীর্য , ফোটা অথবা শুক্রানু তিনটাই হয় । এবং এর রেফারেন্স আমি মুসলিম - অমুসলিম সোর্স থেকে প্রমাণ করতে পারবো । তবে তার আগে আসিফ মহিউদ্দিনের যুক্তি খন্ডন করে নেয়া যাক ।




উনি লিসান আল আরব থেকে কোট করেছেন সেটা আমি আপনাদের দেখাচ্ছি দেখুন নিচের চিত্রটি












অনুবাদ : এবং “নুতফা” এবং “নুতাফা”: সামান্য পরিমাণ পানি। এবং একে বলা হয়: ভিস্তিতে অবশিষ্ট সামান্য পানি। এবং একে বলা হয়: এটি একটি ডোজের মতো এবং “নুতফা” শব্দের কোনো ক্রিয়াপদ নেই।



আসিফ মহিউদ্দিন এটা দিয়ে প্রমাণ করতে চান যে , নুতফা শব্দের অর্থ বালতিতে অবশিষ্ট পানি । অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে , বালতিতে অবশিষ্ট পানি যতটুকু নুতফা বলতে অতটুকুই পানি বুঝানো হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুক্রানু তার চেয়ে অনেক পরিমাণে ছোট । এই সুবাদে উনি কালীল শব্দের কিছু অর্থ দিয়েছেন যেগুলোর মধ্যে রয়েছে “অল্প; ছোট; অথবা সংখ্যায়, পরিমাণে সামান্য; অত্যল্প – একটি সামান্য পরিমাণ।” এর আরও অর্থ রয়েছে যেগুলো আসিফ মহিউদ্দিন উল্লেখ করেননি সেগুলো আমি অমুসলিম ডিকশনারী থেকে উল্লেখ করছি ,




পরিমাণে খুব অল্প , সুক্ষ , অত্যন্ত ক্ষুদ্র , পরিমাণে অত্যন্ত অল্প  [৪] [৫] এবং দেখুনঃ  “Qaleel”. Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban. 1968. Vol. 8, page 2992.  । অর্থাৎ বীর্যের অত্যন্ত অল্প পরিমাণ বা বীর্যের খুবই সুক্ষ একটি অংশ আর সেটা শুক্রানু হিসেবে গণ্য হওয়া কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার না । এইসকল অর্থ অমুসলিম সোর্স থেকে নেয়া । নিচের চিত্রটি দেখুন সেখানে লেখা scanty ।







এছাড়া এই কালীল শব্দ দিয়ে বীর্য থেকে আসা পদার্থকেও বুঝায় যা আসিফ মহিউদ্দিনের দেয়া রেফারেন্সের ডিকশনারী থেকে আমি দিচ্ছি









এখানে লেখা রয়েছে as a substance কিন্তু দুঃখের বিষয় আসিফ মহিউদ্দিন এই স্ক্রিনশট টি দেখান নি । ইংরেজি Substance শব্দের অর্থ হল কোন পদার্থ ।





এবং লিসান আল আরবেও বালতির পানির সাথে তুলনা করা হয়েছে অন্য অর্থ প্রকাশ হিসেবে অর্থাৎ এক বালতি পানির তুলনায় তার অবশিষ্ট পানি যতটুকু ঠিক বীর্যের তুলনায় তার শুক্রানুর পরিমাণ অতটুকু । উনি আপেক্ষিকতা আর আক্ষরিকতাকে একত্রে গুলিয়ে ফেলেছেন ।




এবং উনি একটি হাদিস দিয়েছেন যার দ্বারা উনি প্রমাণ করতে চান যে , নুতফা বলতে বীর্য বা পাত্রে অবশিষ্ট পানির সেই পরিমাণ অংশ বুঝায় ।




باب اسْتِحْبَابِ خَلْطِ الأَزْوَادِ إِذَا قَلَّتْ وَالْمُؤَاسَاةِ فِيهَا ‏‏ حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْدِيُّ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ، – يَعْنِي ابْنَ مُحَمَّدٍ الْيَمَامِيَّ – حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، – وَهُوَ ابْنُ عَمَّارٍ – حَدَّثَنَا إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ فَأَصَابَنَا جَهْدٌ حَتَّى هَمَمْنَا أَنْ نَنْحَرَ بَعْضَ ظَهْرِنَا فَأَمَرَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَجَمَعْنَا مَزَاوِدَنَا فَبَسَطْنَا لَهُ نِطَعًا فَاجْتَمَعَ زَادُ الْقَوْمِ عَلَى النِّطَعِ قَالَ فَتَطَاوَلْتُ لأَحْزُرَهُ كَمْ هُوَ فَحَزَرْتُهُ كَرَبْضَةِ الْعَنْزِ وَنَحْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً قَالَ فَأَكَلْنَا حَتَّى شَبِعْنَا جَمِيعًا ثُمَّ حَشَوْنَا جُرُبَنَا فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَهَلْ مِنْ وَضُوءٍ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَجَاءَ رَجُلٌ بِإِدَاوَةٍ لَهُ فِيهَا نُطْفَةٌ فَأَفْرَغَهَا فِي قَدَحٍ فَتَوَضَّأْنَا كُلُّنَا نُدَغْفِقُهُ دَغْفَقَةً أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً ‏.‏ قَالَ ثُمَّ جَاءَ بَعْدَ ذَلِكَ ثَمَانِيَةٌ فَقَالُوا هَلْ مِنْ طَهُورٍ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ فَرِغَ الْوَضُوءُ ‏”‏ ‏.‏





আহমাদ ইবনু ইউসুফ আযদী (রহঃ) ….. সালামাহ্ (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক যুদ্ধে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দিল। অবশেষে আমাদের কিছু সওয়ারীর বাহন যাবাহ করার কথা ইচ্ছা করেছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে আমরা আমাদের খাদ্যদ্রব্য একত্রিত করলাম। আমরা একটি চামড়া বিছালাম এবং তাতে লোকদের খাদ্যদ্রব্য জমা করা হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সেটির প্রশস্ততা অনুমান করার জন্য দাঁড়ালাম এবং আমি আন্দাজ করলাম সেটি একটি ছাগল বসার স্থানের সমান। আর আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ’।

রাবী বলেন, আমরা সকলেই তৃপ্তির সাথে খেলাম। তারপর আমাদের নিজ নিজ খাদ্য রাখার থলে পূর্ণ করে নিলাম। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওযুর জন্য কি পানি আছে? বর্ণনাকারী বলেন, এক ব্যক্তি তার পাত্রে সামান্য পানি নিয়ে এগিয়ে এল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা একটি বড় পাত্রে ঢেলে দিলেন। এরপর আমরা চৌদ্দশ’ লোক সকলেই তার থেকে পানি ঢেলে ঢেলে ওযু করলাম। তারপর আরো আটজন লোক এসে বলল, ওযুর জন্য কি পানি আছে? তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওযুর পানি সমাপ্ত হয়ে গেছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৬৯, ইসলামিক সেন্টার ৪৩৬৯)




এবং তিনি এও লিখেছেন যে , হাদিসটিতে দেখা যায়, আরবের লোকজন নুতফা শব্দটি দ্বারা ওজু করার প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানিকে বোঝাতো। এটা একটা হাস্যকর দাবি আরবের লোকেরা তখন বুঝতো এরমানে সামান্য প্রানি । কিন্তু আরবের লোকেরা আসসামা বলতে বাড়ির ছাদকেও বুঝায় আবার আসসামা বলতে আকাশকেও বুঝায় আবার মহাকাশকেও বুঝায় । আমি প্রথমেই বলেছি যে , নুতফা শব্দের অর্থ হচ্ছে ফোটা , বীর্য , সামান্য , শুক্রানু এইসবগুলোই । আমি নিচের কিছু নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে এভিডেন্স দিচ্ছি ,




নুতফা শব্দের অর্থ হল Sperm যার অর্থ শুক্রানুও হয় আবার বীর্যও হয় দেখুনঃ [ ৬ ]




আবার ড, ফজলুল করিম রচিত আলমুজামুল ওয়াফী ১০৭২ অর্থ:: ফোটা, শুক্রানু, বীর্য [৭ ] ।




মিশরীয় প্রখ্যাত ডিকশনারী আলমানি থেকে জানা যায় এর অর্থ হল Sperm যার অর্থ শুক্রানুও হয় আবার বীর্যও হয় [৮] ।




কিছু হাদিসের প্রমাণঃ 




হাদিস -১ 




গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
 অধ্যায়ঃ ৪৭। তাকদীর (كتاب القدر)
 হাদিস নাম্বার:৬৬২৩










এখানে স্পষ্ট নুতফা দিয়ে শুক্র বলা হচ্ছে ।




হাদিসঃ ২ 




এই হাদিসে এবং তার ব্যাখ্যার মাধ্যমে এটা জানা যায় যে , মানুষের শুক্রানু গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ।




গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
 অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর (كتاب تفسير)
 হাদিস নাম্বার:৪৪৫৬ | 4456









হাদিস - ৩ 




‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, পূর্বের অবশিষ্ট শুক্রানু যা তার পুরুষাঙ্গে রক্ষেত ছিল তাই গর্ভাশয়ে নির্গত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে। [ দেখুনঃ (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)] 





নুতফা দিয়ে বীর্য এবং শুক্রানু উভয়ই বুঝানো হয় এর ভিত্তিতে প্রমাণ




প্রথম হাদিস । 




এই হাদিস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে ।









এই হাদিস দিয়ে ( নুতফা ) কে তাওহীদ প্রকাশনীর স্কলাররা বীর্য বলেছেন । পক্ষান্তরে সহীহ মুসলিম হাদিস একাডেমির স্কলার রা একে শুক্র বলেছে ।




হাদিস - ২ 









আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।




সিদ্ধান্তঃ আমরা এত বিশ্লেষণ দ্বারা বুঝতে পারি যে , নুতফা দিয়ে বীর্য , শুক্রানু , ফোটা অথবা সামান্য পরিমাণ পানি বুঝানো হয় উপরের রেফারেন্সগুলো পুনরায় দেখে আসুন দরকার হলে ।




এপলজিস্টরা কুরআনের আয়াত ৭৫:৩৭ এর ভুল ব্যাখ্যা করেন ?  




কুরানের ৭৫ নম্বর সুরার ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ।




اَلَمۡ یَکُ نُطۡفَۃً مِّنۡ مَّنِیٍّ یُّمۡنٰی




সে কি নির্গত বীর্যের এক “নুতফা” ছিল না?”




এখানে আরবি শব্দ مَّنِیٍّ মানিই ব্যাবহার করা হয়েছে । যার অর্থ অমুসলিম সোর্স থেকে জানা যায় সেটা হল শুক্র ধারক বীর্য এবং শুক্রানু অথবা শুধুমাত্র বীর্য [৯] । এবং এই আয়াতে নুতফা দিয়ে যে , শুক্রানুই বুঝানো হয়েছে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল আলী রাঃ হতে বর্ণিত সেই হাদিস




‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, পূর্বের অবশিষ্ট শুক্রানু যা তার পুরুষাঙ্গে রক্ষেত ছিল তাই গর্ভাশয়ে নির্গত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে। [ দেখুনঃ (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)] 




এছাড়া আসিফ মহিউদ্দিন লেখার শুরুতেই বলে দিয়েছেন যে , যিনি এই কুরআন রচনা করেছেন তাঁর শুক্রানু ডিম্বানু সম্পর্কে ধারণা ছিল নাকি তিনি শুক্রানু ডিম্বানু সম্পর্কে আদৌ কিছু জানতেন নাকি সেটা বলা যায়না । তার অর্থাৎ আসিফের যুক্তি যদি আমরা এই সুরার আয়াতে প্রয়োগ করি তাহলে এই আয়াতে ( মানি শব্দের অর্থ শুক্রানু নাকি নুতফা শব্দের অর্থ শুক্রানু উনি নিজেই ডিসাইড করুক ) ।


এবং উনি এও দাবি করেছে যে উক্ত আয়াতে ( মানি ) শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে । এবং তার সাথে নুতফা ব্যাবহার করা হয়েছে এবং তিনি একটি রেফারেন্স দিয়েছেন যেখানে বলা হচ্ছে ,







অনুবাদ : “… এবং হাদিসে: তিনি তার সহচরদের বলেন: ওজুর জন্য কি পানি আছে? তখন একজন ব্যাক্তি একটি বদনায় করে “নুতফা” নিয়ে আসেন; এটি দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন “সামান্য পানি”। এবং বীর্যকে (“মানি”) তার সামান্য পরিমানের জন্য “নুতফা” বলা হয়। এবং দৈববাণী: সে কি বীর্যের সামান্য পরিমাণ ছিল না? (কুরআন ৭৫:৩৭)




যদি ( মানি ) কে নুতফা বলা হয়ে তাঁর অল্প পরিমাণের জন্য সেক্ষেত্রে উপরে সেই আলী রাঃ হাদিস এবং উপরের দুই স্ক্রিনশটের ব্যাপারে যেখানে ভিন ভিন্ন প্রকাশনী ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ করেছে এবং একাধিক প্রখ্যাত ডিকশনারীর ব্যাপারে কি বলবেন ?  অর্থাৎ তিনি নিজ ফাঁদেই নিজ অজান্তে পা দিয়ে ফেলেছেন । এই আয়াতের তাফসীরে ইমামুদ্দিন ইবনে কাথির বলেন , আজ থেকে ৬৫০ - ৭০০ বছর আগে ।






অর্থাৎ রাসুল সাঃ এর কিছু জেনারেশন পরের মানুষেরা অথবা আলেমরা যখন টেকনলজি ছিলনা তখন এই আয়াত সম্পর্কে কি বুঝতো তা এখন একদম প্রকাশ হয়ে গেল ।



আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে বলা আছে 









অর্থাৎ এই থেকেও আমরা প্রমাণ পাই নুতফা শব্দের অর্থ শুক্রাণুও হয় আবার বীর্যও হয় । এখন আবার আসিফ মহিউদ্দিন নুতফা কে শুধুমাত্র বীর্য প্রমাণ করার জন্য অর্থাৎ নুতফা দিয়ে শুধুমাত্র বীর্য বুঝানো হয় শুক্রানু নয় এই পরিপ্রেক্ষিতে উনি একটি আয়াত পেশ করেছেন এবং সেই আয়াতের শুরুতে লিখেছেন “যদি “নুতফা” কেবলই বীর্য হয়ে থাকে, তাহলে কুরআন কেন “মানি” শব্দটি ছাড়াই কেবল বলে না যে “নুতফা” নির্গত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর হবে, “হ্যাঁ” কুরআন তা বলে।




53:46




مِنْ نُطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ




এক “নুতফা” থেকে যখন নির্গত করা হয়




আমরা যদি ধরেও নেই যে , নুতফা বলতে শুধুমাত্র বীর্য বুঝায় এবং কুরআনের মালিক আল্লাহ শুক্রানু সম্পর্কে জানতো না অথবা জানতো না বীর্যের মাঝে এমন কিছু পদার্থ আছে যার দ্বারা মানুষ জন্ম নেয় । তাহলেও আসিফ মহিউদ্দিনের দাবি সত্য বলে প্রমাণ করা কখনই সম্ভবপর না । আপনারা আয়াতটা আরেকবার ভালো করে পড়ুন সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে  " এক “নুতফা” থেকে যখন নির্গত করা হয় ।



 " তাহলে এখানেই কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বীর্য থেকে কি নির্গত করা হয় ? তাই নয় কি ? যেখানে হাদিসে স্পষ্ট শুক্রানুর কথা বলা হয়েছে বলা হয়েছে শুক্রানু গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ভ্রূণ তৈরি করার আল্লাহর আদেশে এবং এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে আলী রাঃ এর থেকে [ দেখুনঃ শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ  ] 





এপোলজিস্টরা সুলালাহ শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করে ? 




আসিফ মহিউদ্দিন লেলিন ডিকশনারী থেকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করতে চেয়েছেন যে , সুলালাহ শব্দের ভুল ব্যাখ্যা মুসলিমরা করে থাকে । উনার মতে সুলালাহ হল  “Extract of a thing” বা কোনোকিছুর নির্যাসকে সংজ্ঞায়িত করে “The clear or pure part…of a thing” বা কোনোকিছুর পরিষ্কার অথবা বিশুদ্ধ অংশ হিসেবে। অর্থ্যাৎ, লেনের অভিধান অনুযায়ী, “তুচ্ছ পানির নির্যাস বা বীর্যের নির্যাস” মানে “তুচ্ছ পানির বিশুদ্ধ অংশ”। আরও পরিষ্কার অর্থে বলতে গেলে বলতে হয়, “ক এর নির্যাস” মানে “ক এর বিশুদ্ধ রূপ” বা “বিশুদ্ধ রূপে ক”।




উনি সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বুঝেছেন অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটা দুইটা নয় বরং একাধিক প্রখ্যাত ডিকশনারী উনি যদি একটু দেখতেন তাহলে উনাকে আর ভেলকি খেতে হত না । প্রখ্যাত ডিকশনারী লিসান আল আরব থেকে জানা যায় সুলালাহ হল




سلالة الشيئ ما استل منه، والنطفة سلالة الانسان




সুলালাহ বলা হয় প্রত্যেক বস্তু থেকে যা নির্যাস বের হয়, মানুষের সুলালাহ হল: তার বীর্য[১০]




قال الفراء: السلالة اللذي يسل من كل تربة




ইমাম ফাররা রঃ বলেন: সুলালাহ হল যা প্রতি বস্তুর নির্যাস বের হয় তা




وقال ابوالهيثم: السلالة ما سل من صلب الرجل وترائب المرئة




আবু হায়ছাম রঃ বলেন: সুলালাহ হল যা পুরুষের সুলব ও মহিলার তারাইব থেকে বের হয়




অর্থাৎ লিসান আল আরব থেকে জানা যায় যে , সুলালাহ বলা হয় প্রত্যেক বস্তু থেকে যা নির্যাস বের হয়, মানুষের সুলালাহ হল: তার বীর্য । পক্ষান্তরে আসিফ মহিউদ্দিন যে ডিকশনারী থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন সেখানে উনি বলেছেন লেনের অভিধান অনুযায়ী, “তুচ্ছ পানির নির্যাস বা বীর্যের নির্যাস” মানে “তুচ্ছ পানির বিশুদ্ধ অংশ”। তাহলে তাকে অবশ্যই কুরআন হাদিস থেকে প্রমাণ করতে হবে যে , শুক্রাণু পবিত্র বা বিশুদ্ধ ।



আসিফ মহিউদ্দিন তার এই দাবি পোক্ত করার জন্য একটি ভয়ংকর আয়াত জালিয়াতি করেছে আর সেটা হচ্ছে ৭৭ঃ২০ - ২১ নাম্বার আয়াত । সেখানে বলা হয়েছে ,




اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ




আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি দিয়ে সৃষ্টি করিনি?




فَجَعَلۡنٰہُ فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ﴿ۙ۲۱﴾




অতঃপর তা আমি রেখেছি সুরক্ষিত আধারে




এটা দিয়ে উনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে , মানুষ বীর্য দিয়ে তৈরি । কিন্তু এখানে ( দিয়ে ) শব্দটি এক্কেবারে অনুপস্থিত । এখানে আরবি ( مِّنۡ ) শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে যার অর্থ বীর্য হতে সৃষ্টি করার কথা বলা হচ্ছে একবারে বীর্য দিয়েই তৈরির কথা এখানে উল্লেখ নাই । এবং এই আয়াত দিয়ে আল্লাহ স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন যে , আল্লাহ বীর্য থেকে শুক্রাণুরূপে মানুষকে নিরাপদ আধারে সুরক্ষিত রেখেছেন ।




 ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ




অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। [ যেহেতু নুতফা দিয়ে শুক্রানুও বুঝানো যায় যা একাধিক মুসলিম - অমুসলিম সোর্স দিয়ে প্রমাণিত ]





 ব্যাকরণের ওপর ভিত্তি করে একটি বাজে যুক্তি




আসিফ মহিউদ্দিন একটি আয়াত দিয়েছেন আর সেটা হলঃ




إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا




আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি “নুতফাতিন আমশাজিন” থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।




এবং উনার দাবি এখন আমি পুরোপুরি এখানে তুলে দিচ্ছি




ইসলাম প্রচারকরা “নুতফা” শব্দটির সাথে “একক” শব্দটি মিলিয়ে দিতে চান, যা সরাসরি “নুতফা” শব্দটির সংজ্ঞার বিরুদ্ধে যায়। তাদের যুক্তি অনুযায়ী, যেহেতু “নুতফা” একটি একবচন শব্দ, সেহেতু আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, “নুতফা” শব্দটি দ্বারা একটি “একক সত্ত্বা” বোঝায়। তাদের এই যুক্তিটি পুরোপুরি এই হাস্যকর যুক্তির অনুরূপ; “পরিমাণ” শব্দটি একবচন তাই “পরিমাণ” শব্দটি দ্বারা একটি “একক সত্ত্বা” বোঝায়। তাদের যুক্তি অনুযায়ী, “টাকার পরিমাণ” কথাটি দ্বারা কেবল “এক টাকা বা এক রুপি” বোঝায়।




আমাদের জবাবঃ




কোন সমস্যা নাই আসিফ মহিউদ্দিনের দাবি হাতে রেখেই তার দাবি মিথ্যা প্রমাণ করা খুবই সহজ । উক্ত আয়াতে আমশাজিন শব্দটির অর্থ মিলিত , মিশ্রণ , মিশ্রিত , সংমিশ্রিত ইত্যাদি [১০] । আমরা যদি পুরো আয়াত টি অনুবাদ করি তাহলে সেটা দাঁড়াবে ,




আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এজন্য তাকে করেছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী।




অর্থাৎ পুরুষের শুক্রাণু নারীর ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয়ে ভ্রূণে পরিণত হয় । যেখানে হাদিসে স্পষ্ট আছে ,




‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, পূর্বের অবশিষ্ট শুক্রানু যা তার পুরুষাঙ্গে রক্ষেত ছিল তাই গর্ভাশয়ে নির্গত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে। [ দেখুনঃ (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)] 




আশা করি সকল অভিযোগ খন্ডন করতে পেরেছি ।




উপসংহারঃ নুতফা শব্দ দিয়ে সামান্য পরিমাণ পানি , বীর্য ,শুক্রাণু তিনটিই বুঝায় যা মুসলিম - অমুসলিম সোর্স থেকে প্রমাণিত এবং ইসলামে সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে , শুক্রাণু গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ভ্রুন সঞ্চালিত করে ।




তথ্যসুত্রঃ

১ Biology Text Book class ix - x page number 243

২ মানবেদেহর প্রবৃদ্ধি, মুরও পারসাউড, ৫মসংস্করণ, পৃষ্ঠা-৬৫।

৩ মানবেদেহর প্রবৃদ্ধি , ৫মসংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮।

৪ Steingass, Francis Joseph (1884), “قليل”, in The Student's Arabic–English Dictionary, London: W.H.
Allen https://en.wiktionary.org/wiki/%D9%82%D9%84%D9%8A%D9%84

৫ “Qaleel”. Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban. 1968. Vol. 8,
page 2992

৬ Qamosona.com ; English-Pashto Dictionary - Academy of Sciences Kabul দেখুনঃ
https://en.wiktionary.org/wiki/%D9%86%D8%B7%D9%81%D9%87

৭ ড, ফজলুল করিম রচিত আলমুজামুল ওয়াফী ১০৭২

৮ https://www.almaany.com/en/dict/ar-
en/%D9%86%D9%8F%D8%B7%D9%92%D9%81%D9%8E%D8%A9%D9%8D/

৯ https://en.wiktionary.org/wiki/%D9%85%D9%86%D9%8A

১০ লিসানুল আরব 4/656-657

Post a Comment

0 Comments