কুরআনের আয়াত সংখ্যার ভিন্নতা-অমিল কি প্রমাণ করে কুরআন বিকৃত!?


মুহাম্মদ আলী, সিরিজ - ৬
বিষয়:- কুরআনের আয়াত সংখ্যার ভিন্নতা-অমিল কি প্রমাণ করে কুরআন বিকৃত!? 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________

আমাদের একটি গ্রুপ আছে যেখানে সপ্তাহে শুক্রবার বিকেলে আলোচনা করা হয়। অনেক সময় বক্তব্য দেওয়া হয়। আজও আলোচনা হবে। মুহাম্মদ আলী, মিনার, আরিফ, মাসুদ সহ আরো অনেকেই আলোচনা করে। 

এমন সময় আসিফ সকলের সামনে আসলো হঠাৎ বৃষ্টির মতন টপকে পড়লো আরকি। 

আসিফের সাথে আরো দুইজন একজন হলো অজয় আরেকজন সুরুজ। 

[ সকলেই চেয়ারে বসলো। কফি আনা হলো হাতে হাতে কফি নিলো সকলে। আসিফ বলতে লাগলো ]

আসিফ:- সুরুজের কাছ থেকে শুনলাম তোমরা নাকি এখানে আলোচনা করো সপ্তাহে সপ্তাহে? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। 

আসিফ:- তাই নাকি? একা একা তো সকলেই আলোচনা করতে পারে পারলে আমাদের সাথে আসো তর্কে দেখি কত দূর তোমাদের। আমাদের জানা আছে তোমাদের দৌড় সেই মসজিদ পর্যন্ত। হা হা হা

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা সমস্যা নেই। যেকোন সময় এসে আমাদের সাথে কথা বলতে পারবেন। 

আসিফ:- আজকের আলোচনা কোন টপিকে? 

মুহাম্মদ আলী:- আপনি যেহেতু এসেছেন আপনিই বলুন। 

আসিফ:- কুরআন বিকৃত এই টপিকে আলোচনা করবে? আমার কাছে অনেক প্রমাণ আছে যে কুরআন বিকৃত। 

মুহাম্মদ আলী:- হুম অবশ্যই। তাহলে শুরু করা যাক? আপনি প্রমাণ করুন কুরআন বিকৃত! 

[ সকলেই একদম চুপচাপ। সকলেই বুঝতে পারলো আজ তুমুল বিতর্ক হবে। ]

আসিফ:- আমি এক এক করে কুরআন যে বিকৃত তা প্রমাণ করবো। 

[ এমন সময় হিন্দু ছেলেটি (অজয়) বলতে লাগলো ]

অজয়:- কুরআন তো এমনিতেই বিকৃত। কুরআনের আয়াত দিয়েই তো মতভেদ রয়েছে, ৬০০০/ ৬২০৪/ ৬২১৪/ ৬২১৯/ ৬২২৫/ ৬২২৬/ ৬২৩৬/ ৬২১৬/ ৬২৫০/ ৬২১২/ ৬২১৮/ ৬৬৬৬/ ৬২২১/ ৬৩৪৮, কখন কোন লোক কুরআনে সংযোজন করবে বা বিয়োজন করবে কেউ টেরই পাবে না হা হা। 

[ মুহাম্মদ আলী কফির কাপে চুমুক দিয়ে। অজয় কে লক্ষ্য করে বলল ]

মুহাম্মদ আলী:- শুনো অজয়। তোমার এই দাবি আমায় খুবি হতাশ করলো। কুরআনের আয়াত কয়েক ভাবে গণনা করা হয় এবং কয়েক নিয়মে। যেমন মাদানী গণনা মক্কী গণনা এমন অনেক গণনা নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই বাদ পরে নি সংযোজন বিয়োজন হয় নি। 

[ মুহাম্মদ আলী তার ব্যাগ থেকে একটা খাতা আর কলম বের করে কি যেনো লিখলো। তার পর বলল ]

মুহাম্মদ আলী:- এই দেখো আমি খাতায় কি লিখেছি,,, 

"আমার বাড়ি চুরুলিয়া গ্রামে, আমি একজন জেলে। 

বলতো অজয় এখানে কয়টি আয়াত? 

অজয়:- এখানে একটি আয়াত। 

মুহাম্মদ আলী:- একদম ঠিক। এবার বলো তো এখানে কয়টি আয়াত? 

"আমার বাড়ি চুরুলিয়া। আমি একজন জেলে।"

অজয়:- দুটি। 

মুহাম্মদ আলী:- কিভাবে? একই লেখা আমি তো কোন কি সংযোজন করি নি। না করেছি বিয়োজন কিন্তু দুটি হলো কিভাবে? 

অজয়:- গণনা পদ্ধতি বদলে গেছে। আগেরবার কমা ব্যাবহার করা হয়েছে তাই একটা আয়াত। আর পরের বার দাঁড়ি ব্যবহার হয়েছে তাই দুটি আয়াত। 

মুহাম্মদ আলী:- একদম ঠিক। আর এই একই ভাবে কুরআনের আয়াত বিভিন্ন ভাবে গণনা করা হয় মাদানী গণনা আছে মক্কী গণনা আছে আরো কিছু কিছু ভাবেও গণনা করা হয়ে। কেউ কেউ একটা আয়াত করে কেউ আবার লম্বা ভাবে দুইটা আয়াত করে। কিন্তু কেউ আয়াতে সংযোজন বিয়োজন করে না। 

অজয়:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- আরেকটি কথা। কুরআনের আয়াত সংখ্যা কিন্তু মানুষ তৈরি করেছে। যেনো সহজে রেফারেন্স হিসেবে তথ্যসূত্র হিসেবে আরো অনেক সুবিধার জন্য। কিন্তু পুরো কুরআন মুখস্থ রাখা হয়েছে পূর্ব থেকেই। এখন আয়াত সংখ্যা যে ভাবেই গণনা করা হোক না কেনো পুরো কুরআন সুরক্ষিত। আর তুমি যদি একজন হাফিজকে কুরআন ধরাও সে আয়াত সংখ্যা ছাড়াই কুরআন গড়গড় করে বলে ফেলবে। 

[ সকলে শ্রবণ করছে আর কফি খাচ্ছে ]

মুহাম্মদ আলী:- সুতরাং, মূল কুরআন সকলেই মুখস্থ রেখেছে। যেকোন গণনাপদ্ধতি ব্যবহার করে আয়াত সংখ্যা গণনা হলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ আয়াত সংখ্যা দিয়ে কুরআন আল্লাহ দেয় নি। বরং রেফারেন্সের সুবিধার জন্য পরবর্তীতে আয়াত সংখ্যা যোগ হয়। যে যেমন গণনা করেছে সেভাবেই করেছে। কিন্তু কোন সংযোজন বা বিয়োজন হয় নি। আশা করি বুঝাছো। 

অজয়:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- আরেকটি কথা বলি? 

অজয়:- (হতাশ কণ্ঠে) বলো। 

মুহাম্মদ আলী:- তুমি তো হিন্দুধর্মাবলম্বী? 

অজয়:- হুম। 

মুহাম্মদ আলী:- তোমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো বেদ তাইতো? 

অজয়:- হুম। 

মুহাম্মদ আলী:- তাহলে কি তুমি আদৌ জানো বেদের শাখাসমূহের প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে? 

"ঋগ্বেদের‌ ২১ শাখা,যজুর্বেদের ১০৯ টি শাখা,সামবেদের ১০০০ টি শাখা এবং অথর্ববেদের ৫০ টি শাখা আছে –– সর্বসমেত চারি বেদের মোট ১১৮০ টি শাখা। বর্তমানে এই সকল শাখা-প্রশাখার অধিকাংশ বিলুপ্ত।" [ স্বামী আরুণানন্দ (পরম পবিত্র বেদ সংহার) বেদ পরিচয় পৃষ্ঠা:৭ ]

"প্রত্যেক বেদের সঙ্গে যুক্ত শাখা-সংক্রান্ত তথ্যের প্রথাগত সূত্র হল চরণব্যূহ। এর দুটি সংস্করণ পাওয়া যায়। এগুলি মোটামুটি একই রকমের। একটি হল অথর্ববেদের ৪৯তম পরিশিষ্ট (যাশৌনকের লেখা বলে কথিত) এবং শুক্ল যজুর্বেদের পঞ্চম পরিশিষ্ট (যা কাত্যায়নেরলেখা বলে পরিচিত)। এখানে বেশ কিছু শাখার উল্লেখ আছে যেগুলি অস্তিত্ব আগে ছিল এবং এই বইগুলি রচনার সময়ও ছিল। তবে বর্তমান যুগে অল্প কিছু সংখ্যক শাখারই অস্তিত্ব আছে।"- [ BN-WIKIPIDIA শাখা ]

তাহলে কি বেদ বিকৃত? 

অজয়:- ইয়ে মানে না। কারণ শাখা মানুষ দিয়েছে এটা বিলুপ্ত হলে বেদের মন্ত্রের বিলুপ্ত বুঝায় না। 

মুহাম্মদ আলী:- এই জন্যই বলি। কুরআনের আয়াত সংখ্যা আল্লাহ দেন নি। বরং রেফারেন্সের জন্য দেওয়া হয়েছে আর নানান পদ্ধতির মাধ্যমে। সুতরাং আয়াত সংখ্যার অমিল বা ভিন্নতা কুরআনকে ভুল বা বিকৃত প্রমাণ করে না। উপরেই আমি তা বুঝিয়ে দিয়েছি। কুরআন তো হাফিজদের বুকেও সংরক্ষিত। কিন্তু বেদ কেউ মুখস্থ করতে পারে না হাতে গোনা কিছু ছাড়া। 

[ অজয় চুপ হয়ে গেলো ]


ইনশাআল্লাহ চলবে........................ 

Post a Comment

0 Comments