"আমি ও পিতা এক"- কথাটার প্রকৃত তাৎপর্য কী-যীশু ঈশ্বর?


🖋Author:-  Boniamin Khan
_____________________________________________________________

বিষয়:- (যোহন ১০:৩০)-"আমি ও পিতা এক"- কথাটার প্রকৃত তাৎপর্য কী-যীশু ঈশ্বর?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

আগে কোরআনে দেখি-এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ১৭

لَّقَدْ كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا إِنْ أَرَادَ أَن يُهْلِكَ ٱلْمَسِيحَ ٱبْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُۥ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًا وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

অর্থঃ নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, মসীহ ইবনে মরিয়মই আল্লাহ। আপনি জিজ্ঞেস করুন, যদি তাই হয়, তবে বল যদি আল্লাহ মসীহ ইবনে মরিয়ম, তাঁর জননী এবং ভূমন্ডলে যারা আছে, তাদের সবাইকে ধ্বংস করতে চান, তবে এমন কারও সাধ্য আছে কি যে আল্লাহর কাছ থেকে তাদেরকে বিন্দুমাত্রও বাঁচাতে পারে? নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, সবকিছুর উপর আল্লাহ তা’আলার আধিপত্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।"

([এ ছাড়া যীশু ঈসা আঃ যে ঈশ্বর নন,এ সম্পর্কে রেফারেন্স (পবিত্র কোরআন,সূরা ৩:৫৯; ৫:১৭,১৮,৭২,৭৩,৭৫,৭৮,১১৬,১১৭)]
কোরআনে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছে,যীশু তথা ঈসা আঃ তো ঈশ্বর-ই নন বরং তাঁর দাস।আর তাকে যারাই ঈশ্বর বলবে,তারাই শিরককারী এবং কাফের।এছাড়া দাউদ আঃ ও ঈসা আঃ এর মুখ থেকে ইহুদিদের অভিশাপ দেওয়া হয়েছে (৫:৭৮)।আর আল্লাহ্ যে একমাত্র ঈশ্বর এবং তিনি ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নাই,সেটা কোরআনের অসংখ্য আয়াতে বলা হয়েছে (২০:১৪)......ইত্যাদি আয়াত দ্রষ্টব্য আছে।আল্লাহ্ এর সংজ্ঞা দেওয়া আছে (পবিত্র কোরআন ১১২:১-৪)

■খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকগণ যীশুর খোদাত্বের প্রমাণ স্বরুপ "নতুন নিয়মে"যীশুর জন্য ব্যবহৃত "Son of God"-বা "খোদার পুত্র "।তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ,যীশুকে যেহেতু "খোদার পুত্র "-বলা হয়েছে,সেহেতু তারা খোদার পুত্রকেও খোদারুপে মান্য করেন।শাস্ত্রজ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই খ্রিস্টানরা এই ভ্রমে পতিত। যদি তারা ভালোভাবে শাস্ত্র পাঠান্তে চিন্তা করতেন তবে দেখতে পেতেন,বাইবেলের "নতুন নিয়ম "ও "পুরাতন নিয়ম "-উভয় নিয়মেই খোদাপ্রাপ্ত অসংখ্য পবিত্র ব্যক্তিকে  রুপকভাবে "খোদা বা খোদার পুত্র "-বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে বা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এজন্য তারা কেউই প্রকৃত "খোদা বা খোদার পুত্র "-হয়ে যাননি।(১ম অংশ)

◇((লক্ষণীয়: প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ উক্ত বিষয়ের যথার্থ বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্রাকেটের নিচে দেওয়া হয়েছে। তবে ব্র্যাকেটের ভেতরে পুরো বিষয়টার মূল সারাংশ দেওয়া হলো {২য় অংশ}:যেমন:-ইহুদিরা যখন যীশুকে পাথর মারতে উদ্যত হলো তখন যীশু বললেন,"কেন আমাকে পাথর মারো?"তখন ইহুদিরা তাঁকে উত্তর দিল,"কারণ তুমি মানুষ,অথচ নিজেকে খোদা করে তুলেছ ,এজন্য। তখন যীশু তাদেরকে উত্তর দিলেন,"তোমাদের ব্যবস্থায় কি লেখা নেই,'আমি বললাম,তোমরা খোদা?"যাদের নিকট খোদার বাক্য উপস্থিত হয়েছিল ,তিনি যদি তাদেরকে খোদা বললেন--আর শাস্ত্রের খন্ডন তো হতেই পারে না-তবে যাকে পিতা পবিত্র করলেন ও জগতে প্রেরণ করলেন,তোমরা কি তাঁকে বল যে,তুমি খোদা নিন্দা করছ।কারণ আমি বললাম যে,আমি খোদার পুত্র? "(যোহন ১০:৩২-৩৬)।"এখানে ইহুদিদের মিথ্যা অপবাদ খন্ডন করে যীশু বললেন যে,ইহুদি শাস্ত্র গীতসংহিতার (৮২:৬) পদে যেরুপ রুপকভাবে খোদার বাক্য লাভকারী ব্যক্তিদেরকে খোদা বলা হয়েছে ঠিক তেমনই  তিনিও রুপকভাবে খোদার পুত্র। অন্যত্র যীশু বলেন,"ধন্য যারা মিলন করে দেয় ,কারণ তারা খোদার পুত্র বলে আখ্যায়িত হবে। " (মথি ৫:৯)))

■অধিকাংশ খ্রিস্টানরা বাইবেলের (যোহন ১০:৩০):-"আমি ও পিতা, আমরা এক"-এই পদ/অনুচ্ছেদ দেখিয়ে দাবি করে বলে যে,"যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন।কারণ তাঁর এই কথা বলার দ্বারা যীশু নিজেকে ঈশ্বর বলতে চেয়েছেন ,যার জন্য ইহুদিরা তাঁকে পাথর মারতে আসে।খ্রিস্টানদের দাবী অনুযায়ী, ইহুদিরা বুঝতে পেরেছিল যে যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন (বাইবেল,যোহন ১০:৩২-৩৬)।

■এখন কথা হলো-"আমি ও পিতা,আমরা এক"-কথাটি যীশু কোন প্রসঙ্গে বলেছিলেন?এটা যথার্থ ভাবে জানতে পারলেই উক্ত কথাটি বোঝা যাবে। আর আমি এখন প্রমাণ দেখাব,"আমি ও পিতা,আমরা এক"(যোহন ১০:৩২-৩৬)-উদ্ধৃতির মাধ্যমে কী সত্যিই যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন কিনা?এ ব্যপারে জানতে হলে  প্রথমে আমাদের উক্ত কথার প্রসঙ্গ জানা প্রয়োজন। আর প্রসঙ্গ মানে হলো উল্লিখিত ঘটনার আগে-পরের তথ্য।
■আমি (যোহন ১০:২৩)-অনুচ্ছেদ থেকে প্রসঙ্গ বলছি।যীশু মন্দির চত্বরে শলোমনের বারান্দাতে পায়চারি করছিলেন^২৩।যীশুর সঙ্গে তাঁর কোন শিষ্য নেই অর্থাৎ তিনি একা ছিলেন।তখন ইহুদিরা যীশুকে একা পেয়ে তাঁর চারপাশে ঘিরে দাঁড়াল^২৪।কারণ এই লোকটা বলছে সে ঈশ্বর। হতে পারে সে ঈশ্বরের দূত,ইহুদিরাও তাঁর কথা শুনে,আর যীশু তাদের অর্থাৎ ইহুদিদের সমালোচনা করে অনেক কথাই বলেছিল যে-তোমরা একটা অপরাধী জাতি,তোমরা সবাই অসৎ,তোমরা ব্যভিচারী,তোমরা লোকদের ক্ষতি কর,তোমরা পাপী।"আর ইহুদিরা কিন্তু যীশুর এসব কথা মনে রেখেছিল।যার জন্য হয়তো ইহুদিরা যীশুকে এই সময়ে বিপদে ফেলতে চাচ্ছিল।তখন যীশু একা মন্দিরে ছিল বলে ইহুদিরা একটা সুযোগ পেয়ে গেল তাঁকে উচিত শিক্ষা দিতে।তাই তারা যীশুকে ঘিরে ধরল আর বলল,"তুমি আর কতকাল আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে? তুমি যদি মশীহ হও তাহলে আমাদের স্পষ্ট করে বল?^(যোহন ১০:২৪) অর্থাৎ আর কতদিন আপনি
আমাদের অন্ধকারে নিমজ্জিত করবেন,যদি আপনি খ্রিস্ট হয়ে থাকেন তাহলে সেটা সরাসরি বলুন? অন্য কথা আপনি আমাদের সরাসরি না বলে কেন অস্পষ্ট করে বলছেন?আপনি আমাদের সরাসরি কিছুই বলছেন না।আপনি এখন সরাসরি বলেন যে সেই মসিহ আপনি কিনা?
"এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, ‘'আমি তোমাদের ইতিমধ্যেই বলেছি,"আর তোমরা তা বিশ্বাস করছ না৷ আমি আমার পিতার নামে যেসব অলৌকিক কাজ করি সেগুলিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবে^২৫।
কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করো না, কারণ তোমরা আমার পালের মেষ নও^২৬।
আমার মেষরা/অনুসারীরা আমার কথা শোনে৷ আমি তাদের জানি, আর তারা আমার অনুসরণ করে^২৭।আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই, আর তারা কখনও বিনষ্ট/ধ্বংস হয় না, আমার হাত থেকে কেউ তাদের কেড়ে নিতেও পারবে না^২৮।আমার পিতা, যিনি তাদেরকে আমায় দিয়েছেন, তিনি সবার ও সবকিছু থেকে মহান, আর কেউ পিতার হাত থেকে কিছুই কেড়ে নিতে পারবে না^২৯।

(এখানে,যীশু বলেছেন,"তিনি [সদাপ্রভু ঈশ্বর]-সবার ও সবকিছু থেকে মহান।"আর যীশু যদি ঈশ্বর হত,তাহলে তিনি এই কথা কখনোই বলতেন না। কেননা নিজের ক্ষেত্রে কখনোই "তিনি"-শব্দ ব্যবহার করা যায় না।কারণ "তিনি "-শব্দ টা নিজের ক্ষেত্রে নয় বরং অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ এখানে দ্বিতীয় আরেক জনকে বোঝানো হয়।এ ছাড়া ইংরেজি গ্রামারানুযায়ী "তিনি"-শব্দ টা হচ্ছে Plural number এর  third person।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো বাইবেলের কোথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিজ মুখে যীশুর একটাও বাণী পাওয়া যায় না যে তিনি ঈশ্বর)

এরপরেই চলে আসে, যীশুর ঈশ্বরত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য খ্রিস্টানদের সেই অনুচ্ছেদ যার ভিত্তিতে তারা দাবি করে যীশু ঈশ্বর যাতে বলা হয়েছে:-" আমি ও পিতা, আমরা এক"^৩০।আর এটাই হলো প্রসঙ্গটা।

■তার মানে যখন কোন মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে,আর ঈশ্বর তখন তার প্রতি খেয়াল রাখেন,আর আমি তোমাদের শিক্ষক ও প্রভু হিসেবে বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখব যে আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যেই এক অর্থাৎ 
এখানে যীশু খ্রিস্ট এমন কিছু বলেনি যে,"তিনি সর্বশক্তিমান,স্রষ্টা,মহান ঈশ্বর...।অর্থাৎ -"আমি ও পিতা এক"-কথাটির মানে হচ্ছে,ঈশ্বর ও যীশুর উদ্দেশ্য একই ।কারণ ঈশ্বর যীশুকে কিছু নির্দেশ অর্থাৎ উদ্দেশ্যের জন্য প্রেরণ করেছেন। আর এই উদ্দ্যেশ্য অর্থাৎ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কে যীশু বাস্তবায়িত করবেন। মানে ঈশ্বরের যেই উদ্দেশ্যের জন্য যীশু কে প্রেরণ করেছেন সেই একই উদ্দেশ্যের জন্য যীশু পৃথিবীতে এসেছেন অর্থাৎ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে হচ্ছে যীশুর উদ্দেশ্য যাকে বলা হয় একই উদ্দেশ্য।আর "ইহুদিদের মতে,যীশু ধর্ম অবমাননা করেছিল কারণ তারা যীশুর কথার মূল তাৎপর্য তখন বুঝতে পারছিল না। 

একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো ভালোভাবে বোঝা যাক:i)আমিও ডাক্তার,আমার বাবাও ডাক্তার। এখন যদি বলি:-"আমি ও পিতা/বাবা,আমরা এক।"তাহলে বোঝায় কি ,আসলে আমি ও বাবা একই ব্যক্তি অর্থাৎ দুজনে একজন ব্যক্তি ?যদি এটা হয়,তাহলে আমিই কী আমার বাবা/আব্বা হয়ে যাব নাকি অথচ এটা কুযুক্তি,পাগলের কথা। কেননা নিজে কখনোই নিজের বাবা/আব্বা হওয়া যায় না। তাহলে "আমি ও পিতা এক "-মানে কী?আসলে "আমি ও পিতা,আমরা এক"-কথাটার মানে হলো,আমি যেমন ডাক্তার,আমার বাবাও তেমন ডাক্তার অর্থাৎ আমার এবং বাবা/পিতার কাজ/উদ্দেশ্য একই ধরণের।ঠিক এমন উদ্দেশ্যে কে সামনে রেখেই যীশু বলেছেন:-"আমি ও পিতা,আমরা এক।"(যোহন ১০:৩০)।আর যীশু উক্ত কথা উপমার ন্যায় বলেছেন। 

Example no-2:ধরুন- আপনার বাবা আপনাকে অনেক আদর-যত্ন করেন এবং ভালোবাসেন। এখন আপনার বাবা কোন একজন কে বলল,"আমার ছেলেকে ভালোবাসা মানেই,আমাকে ভালোবাসা। "এখন কি এটা হয়ে যাবে নাকি আপনিই আপনার বাবা?কেননা সবাই ভালোবাসে আপনাকে কিন্তু আপনার বাবা কে নয়।আর আপনাকে ভালোবাসলে কিভাবে এটা বাবাকেও ভালোবাসা হয়ে যাবে অর্থাৎ আপনিই কী আপনার বাবা নাকি?এখন কী বলেন আপনি?আর এ ছাড়া যীশু যে ঈশ্বর ছিলেন না তারও অনেক প্রমাণ দেওয়া যাবে।এ সম্পর্কে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে নিচে। যাই হোক,

■কিন্তু ইহুদিরা এসবও বুঝেনি।তারা ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছিল।তারা যীশুকে মারতে গিয়েছিল।এমন একটা প্রচলিত বাক্য আছে:"যদি ঝামেলা পাকাতে চান,তাহলে অযুহাতের অভাব হবে না।"আর এটা বাস্তবিক সমাজেই দেখা যায় যে,কোন ঝামেলা পাকাতে চাইলে,লোকেরা বিভিন্ন অযুহাত খুঁজে।আবার স্কুল-কলেজেও দেখা যায় এসব অযুহাত। 

■আর ইহুদিরাও ঝামেলা পোহাতে চাচ্ছিল। তাই "ইহুদীরা যীশুকে মারার জন্য আবার পাথর তুলল"^৩১।
তখন "যীশু তাদের বললেন,'‘পিতার সাহায্যে আমি অনেক ভাল কাজ করেছি। তার মধ্যে কোন কাজটার জন্য তোমরা আমাকে পাথর মারতে চাইছ?"^৩২
"ইহুদীরা এর উত্তরে তাঁকে বলল, ‘তুমি য়ে সব ভাল কাজ করেছ, তার জন্য আমরা তোমায় পাথর মারতে চাইছি না৷ কিন্তু আমরা তোমাকে পাথর মারতে চাইছি এই জন্য য়ে, তুমি ঈশ্বর নিন্দা করেছ৷ তুমি একজন মানুষ, অথচ নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করছ৷’^৩৩

■হ্যাঁ এটাই ছিল প্রসঙ্গ।এখানে যীশুর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ,তাঁর কথাগুলো ইহুদিদের কাছে অস্পষ্ট ছিল।কারণ যীশু ইহুদিদের স্পষ্টভাবে কিছুই বলছিলেন না।ইহুদিরা তাঁকে বলেছিল,"আপনি সবকিছুই সরাসরি অর্থাৎ স্পষ্টভাবে বলেন?
কিন্তু যীশু তাদের কাছে স্পষ্টভাবে কিছুই বলছিলেন না যা ছিল ইহুদিদের প্রথম অভিযোগ।অর্থাৎ যীশু স্পষ্ট করে বলছিলেন এটাই ছিল প্রথম মিথ্যা অভিযোগ।২য় অভিযোগ:আপনি (যীশু) মানুষ হয়ে ধর্মের অবমাননা করেছেন,মানুষ হয়ে নিজেকে ঈশ্বর বলেছেন।উত্তর কি হবে?(এখানে কথা হলো যীশু ইহুদিদের কাছে স্পষ্টভাবে কিছুই বলছিলেন না অর্থাৎ যীশুর অস্পষ্ট কথা ইহুদিরা সঠিকভাবে বুঝে নাই কিন্তু তারা নিজেরা যেটা বুঝেছে সে অনুযায়ী যীশু কে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করেছে)

■তখন তিনি বললেন,"তোমরা যখন বলছো আমি ঈশ্বর।"ধরুন:আপনি ডাক্তার। কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করল,"আপনি কি ডাক্তার?তখন আপনি বলবেন,"হ্যাঁ,আমি ডাক্তার।"আপনি/আমি যদি ডাক্তার হই,তাহলে অস্বীকার করব কেন?সরাসরি না বলে কেন উল্টো-পাল্টা কথা বলব?যদি সত্যি হয় যে আমি/আপনি ডাক্তার,তাহলে সরাসরি না বলে কেন উল্টা-পাল্টা/অস্পষ্ট ভাবে কথা বলব?

■তখন,"যীশু তাদের বললেন,'‘তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় [তাওরাতে ঈশ্বরের যে বিধি-বিধান অর্থাৎ মোশির কিতাবে] কি একথা লেখা নেই যে,''আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর৷"^৩৪

■এখানে যীশু ইহুদিদের উপহাস করে বলেছেন।কেননা, কারণ তিনি পূর্বেই বলেছিলেন,"ভেবো না যে," আমি মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাব্বাদীদের/নবীদের শিক্ষা ধ্বংস করতে এসেছি৷ আমি তা ধ্বংস করতে আসিনি বরং তা পূর্ণ করতেইএসেছি (মথি ৫:১৭)।
আমি তোমাদের সত্যি বলছি,"যেদিন আমাদের শেষ বিচার হবে,সেদিন একটা ক্ষুদ্র কণাও আইনের ফাঁক দিয়ে বের হতে পারবে না।সবার বিচার হবে তখন আইনের ফাঁক দিয়ে ...!?যীশু তখন তাদের উপহাস করছিলেন যে এসব তো তোমাদের ধর্মগ্রন্থেই আছে।

এটা কি তোমাদের আইনে লেখা ছিল না,"আমি ঈশ্বর বলছি, “তোমরা ঈশ্বর। "(সামসংগীত ৮২:৬)

■উপরের উদ্ধৃতিতে দেখুন:ঈশ্বর নিজেই ইহুদিদের বলেছেন,"তোমরা সবাই ঈশ্বর।"একারণেই যে ইহুদিরা সম্মানিত ঈশ্বরের পুত্র।এখানে কিন্তু ঔরসজাত পুত্রের কথা বলা হচ্ছে না।যাই হোক ওল্ড টেস্টামেন্টর থেকেই উদ্ধৃতি দিলেন যে এভাবেই কথা বলি।কারণ এটা ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য। ইংরেজরা যখন কোর্টে বিচারকের সামনে কথা বলে,তখন তারা বলে ,"My lord.....my lord. "যার অনুবাদ:আমার প্রভু.....আমার প্রভু।এখন কি বলব,সে আমার/আপনার ঈশ্বর?এখানে সে "my lord "-বলে কি বোঝাতে চাচ্ছে?এভাবেই অর্থাৎ "my lord "-বলার মাধ্যমে আসলে বিচারকে সম্মান দেখানো হচ্ছে,যা ভাষার একটা বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বিচার কে "my lord "-বললেই আর বিচারক "ঈশ্বর "-হয়ে গেল/যাবে না।আর এটাই হলো তাদের ভাষা এবং  একটা ভাষার অলংকরণ। আর এজন্য যীশুও ঠিক অনুরূপ বলেছিলেন। 

■তখন যীশু তাদের বললেন,"তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে,"আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর৷’'(যোহন ১০:৩৪)।
ওল্ড টেস্টামেন্ট যদি,ঈশ্বর ইহুদিদের কে "ঈশ্বর "-বলতে পারেন,আবার তিনিই নবী-রাসূলদের বলেছেন "ঈশ্বর "। বুক অব এক্সোডাসে ঈশ্বর মোশি [মুসা আঃ]-কে বলেছেন,"শোনো,আমি তোমাকে ফারাওদের "ঈশ্বর "-বানিয়েছি এবং তোমার ভাই হারুন হবে তোমার সাহায্যকারী। "
এখন আসলে মোশি/মুসা আঃ কি ঈশ্বর?অথচ এই কথাটা বাইবেলেই বলা হয়েছে।এটা আসলে একটা ভাষায় কথা বলার ধরণ যে তারা এভাবেই কথা বলত।আর এটাই হলো ভাষার অলংকার।তাই এভাবেই যীশুও বলেছেন। তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে,"আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর৷’"স্রস্টা ইহুদিদের ঈশ্বর বলেছেন। 

■তাই যীশুও তাদের বলেছেন। যীশু তাদের বললেন, ‘তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে ‘আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর৷শাস্ত্রে তাদেরই ঈশ্বর বলেছিল যাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী এসেছিল; আর শাস্ত্র সব সময়ই সত্য৷"(যোহন ১০:৩৪-৩৫)।
যীশুও ঠিক ঈশ্বরের কথানুযায়ী বলেছিল।
আমিই সেই ব্যক্তি, পিতা যাঁকে মনোনীত করে জগতে পাঠালেন৷ আমি বলেছি যে,"আমি ঈশ্বরের পুত্র৷’"তবে তোমরা কেন বলছ যে আমি ঈশ্বর নিন্দা করছি?^৩৬
অর্থাৎ আমি ধর্ম অবমাননা কারী?কারণ কী,আমি নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলেছি অথচ তোমাদের এসব কথা অযৌক্তিক।যখন কেউ তোমাদের ঈশ্বর বলছে,তোমরা সেটা মেনে নিচ্ছ!তাহলে আমার কথা মানছো না কেন যে ,আমি বলেছি,"আমি ঈশ্বরের পুত্র?"আর যীশুর ন্যায় ঈশ্বরের পুত্র অনেকগুলো আছে বাইবেলের মধ্যে। 

●((([নোট:বাইবেলে আরো বহু লোককে রুপকভাবে খোদার পুত্র বলা হয়েছে। যেমন:-"সদাপ্রভু এই কথা বলেন,ইস্রাইল আমার পুত্র,আমার প্রথম জাত।"(যাত্রাপুস্তক ৪:২২)।
"তুমি আমার পুত্র "(গীতসংহিতা ২:৭)।শলোমন খোদার পুত্র "(১বংশাবলী, ২২:১০;  ২৮:৬)।"যতলোক খোদার হুকুম দ্বারা চালিত হয়,তারাই খোদার পুত্র "(রোমীয় ৮:১৪)।"আমরা খোদার সন্তান "(রোমীয় ৮:১৬)।"তোমরা তোমাদের/আপনাদের খোদা সদাপ্রভুর সন্তান "(দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:১)।"আমাদের একমাত্র পিতা আছেন,তিনি খোদা "(যোহন ৮:৪১)।"খোদা আপন পবিত্র বাসস্থানে পিতৃহীনদের পিতা "(গীতসংহিতা ৬৮:৫)।"পৃথিবীতে কাউকে "পিতা "বলে সম্বোধন কর না,কারণ তোমাদের পিতা একজন,তিনি সেই স্বর্গীয়"(মথি ২৩:৯)।অতএব যীশু খোদা বা খোদার পুত্র নন বরং তিনি খোদার বাক্য লাভকারী এক পবিত্র ভাববাদী ,নবী। বাইবেলে অন্যান্য লোককে যেমন খোদার পুত্র বলা হয়েছে,তেমনই যীশুকেও খোদার পুত্র বলা হয়েছে অনুরুপ ভাবে। 
যীশুকে বাইবেলে খোদার পুত্র কেন বলা হয়েছে সে বিষয়ে একটি উদ্ধৃতি প্রসঙ্গিক।হিব্রুতে "খোদার পুত্র "স্থলে "বেনে এলোহীম "-বলা হয়েছে যার অর্থ অত্যন্ত প্রিয়,রাজা,স্বর্গীয় দূত,খোদার সেবক।"(দেখুন Gesenius কৃত Hebrew & English Lexican ,English Translation -J.W .Gibbs ,Page:-34).এছাড়া "খোদার পুত্র " বা "ঈশ্বরপুত্র "-শব্দটি একটি সম্মানসূচক রাজকীয় পদবী।রোমান সম্রাট এই উপাধিটি (ডিভি/ফিলিউস) ধারণ করতেন। কিন্তু,যীশু এসবে খুবই বিরক্ত হতেন এবং বার বার লোকদেরকে এ বিষয়ে সাবধান করতেন যদিও নিবৃত্ত করতে পারতেন না।
He [God] gave His only begotten son.(son.(Ak .James Version ,John 3:16)..।অর্থঃখোদা তাঁর একমাত্র পুত্র [যীশু] কে দান করলেন। "খ্রিস্টান দের অনেকেই পুত্র শব্দের রুপক অর্থ বললেও প্রকৃতপক্ষে রুপক অর্থের আড়ালে প্রকৃত অর্থই ব্যবহার করে,যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলে   begotten , not made. অথচ only begotten son of God বাক্যের begotten ঔরসজাত/জন্ম দেয়া সন্তান বলতে স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনের অন্তর্নিহিত অর্থই প্রকাশ করে। "জন্ম দেয়া " স্রস্টার নয় বরং সৃষ্ট জীবের একটি স্বভাব; তা জীব-জগতের,জীবের নিন্ম শ্রেণীর যৌন কাজের অন্তর্ভুক্ত।এটা মানুষের জৈব-স্বভাবের চাহিদার উপর নির্ভরশীল দৈহিক কার্য।স্ত্রী-পুরুষের যৌন মিলনে উভয়ের দেহ হতে কোন তরল পদার্থ নির্গত হয়ে সন্তান জন্মের সূচনা হয়।তাই কাজেই "খোদা সন্তান জন্ম দিয়েছেন "(নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক) বললে স্বভাবগতই ধারণা হয় যে-খোদা বুঝি দেহ ধারী কোন বস্তুগত সত্ত্বা,তাঁর বুঝি স্বজাতির কোন স্ত্রীও আছে এবং তাঁর দেহ হতে বুঝি কোন তরল পদার্থও নির্গত হয়। (নাঊযুবিল্লাহ মিনযালিক)।
Son of God "-প্রসঙ্গে সুসমাচার লেখক "বার্ণবার "উত্তরঃ বার্ণবা যিনি পৌলের সহপ্রচারক ও বন্দিজীবনের সঙ্গী।তিনি তার সুসমাচারে যীশুর একত্ববাদ প্রচারের কথা উল্লেখ করে লিখেন," যারা যীশুকে খোদার পুত্ররুপে পূজা/উপাসনা করে তাদের উপর মহাত্মা যীশু অভিশাপ বর্ষণ করেছেন।যেমনঃ Crused be every One who shall insert into my saying that I am the son of the God"(Chapter-53).বার্ণবা তার সুসমাচারের শেষ -২২২ অধ্যায়ে লিখেন Certain evil men,....preached ,and yet preach,that Jesus is the son of God,among whom is Poul decived.অর্থাৎ কয়েকজন অপবিত্র লোক,.....প্রচার করে থাকে যে,যীশু খোদার পুত্র,আর এসব প্রচারকদের মধ্যে প্রতারিত পৌলও একজন]))

■যাইহোক মূল আলোচনায় আসি:বাইবেলের মধ্যেই দেখা গেছে ঈশ্বরের অনেকগুলো পুত্র রয়েছে। আসলে এটা ভাষার অলংকার ।তারা এভাবেই কথা বলত বলে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে। আসলে :-"আমি ও পিতা এক"-কথাটির দ্বারা যীশু বোঝাতে চেয়েছেন তাঁর এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্য এক কিন্তু নিজেকে তিনি ঈশ্বর দাবী করছেন না। 

যীশু যে নিজেকে কখনোই ঈশ্বর দাবী করেননি এবং কি তিনি যে ঈশ্বর নন,এর আরেকটি প্রমাণ হলো যা কিনা খ্রিস্টানরা বলে,যীশু তাঁর মৃত্যুর সময় চিৎকার করে বলেছিলেন:-"এল্লাই,এল্লাই,লামা শবাক্তানী। "যার অনুবাদ :প্রভু ...প্রভু!আবার আমায় কেন ত্যাগ করছো?"(মার্ক ১৫:৩৪; মথি ২৭:৪৬)

খ্রিস্টানদের দাবী অনুযায়ী যীশু নাকি ঈশ্বর,যদি ঈশ্বর হয়ে থাকে,তাহলে এই কথা যীশু কাকে বলেছিলেন "- প্রভু ...প্রভু!আবার আমায় কেন ত্যাগ করছো?"এই কথা কি কখনো নিজেকে বলা যায়?কেন আমি নিজেকে ত্যাগ করলাম?নিজেকে কখনো ত্যাগ করা যায়?ত্যাগ করলে তো শরীর ত্যাগ করতে হবে। কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করলে?তিনি সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহর কাছে কেদেছেন,তাঁকে বলেছেন।আর এটা হলো সেই ঈশ্বর,যীশু যাঁর উপাসনা করেছেন।"আর এ থেকেই বোঝা যায় যে যীশু ঈশ্বর নন বরং সদাপ্রভু মহান আল্লাহ্-ই একমাত্র তাঁর সহ সবার ঈশ্বর। 

তাছাড়া  তাঁর অর্থাৎ যীশুর আগমনের পূর্বে সদাপ্রভু ঈশ্বর ওল্ড টেস্টামেন্টে দাবি করেছেন,তিনিই একমাত্র ঈশ্বর, যাঁর আগে এবং পরে আর কেউই/কোন-ঈশ্বর-ই ছিল না এবং কি নাজাতদাতা,পরিত্রাণ দাতাও ছিল না। (যীশাইয়/ইসাইয়া ৪০:১৮,২৮; ৪৩:১০-১১; ৪৪:৬-৭,২৪; ৪৫:১৮; ৬৪:৪; হোসেয়া ১৩:৪; দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩৫,৩৯; ৬:৪; ১৩:৪;  ৩২:৩৯; গীতসংহিতা/সামসংগীত ৮৩:১৮; ৮৬:৮,১০; যাত্রাপুস্তক ৮:১০; বংশাবলী-১, ১৭:২০; ২ শ্যামুয়েল ৭:২২;

এছাড়া বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে যীশু বলেছেন :"আমাদের ঈশ্বর একজন "(মার্ক ১২:২৯-৩০; দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৫),এফিশীয় ৪:৬),১ করিন্থীয় ৪:৬),(প্রকাশিত বাক্য/প্রত্যাদেশ ১:৮)

তাহলে দেখা যায় যে,সদাপ্রভু ঈশ্বর-ই একমাত্র ঈশ্বর। কেননা তিনি যে ঈশ্বর,সেটা স্বয়ং নিজেই দাবি করেছেন। কিন্তু যীশু কোনভাবেই ঈশ্বর নন।এবং কী কখনো ঈশ্বর বলেও দাবি করেন নাই।কারণ যীশু ঈশ্বর ছিলেন না বরং ঈশ্বরের দাস।আর এসব প্রমাণ-ই যথেষ্ট যে যীশু কোনভাবেই ঈশ্বর দাবী করেননি এবং কি তিনি ঈশ্বর নন।"[(যোহন ৬:৬৯; ৭:১৬; ১২:৪৭-৫০; ১৪:১; ১৭:৩,১১,২১; ২০:২৩),(আদিপুস্তক ১:১৭),(মথি ৯:৮; ১০:৪০; ১২:৮; ১৩:৩৭,৫৭; ২১:১১; ২৭:৪৬),(প্রেরিত ৩:১৩; ৪:২৭),(মার্ক ১৪:৩৬)]

Post a Comment

4 Comments