বিশ্বাসের বৈপরীত্য!



🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________
.
আসসালামু আলাইকুম,,,
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার।
নাস্তিকদের গুরু আরজ আলী তার বইয়ে বলেছেন,,,
"বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আমাদের সন্দেহ নাই। বিজ্ঞান যাহা বলে, তা আমরা অকুন্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করি।" [১]
◾আরজ আলীর কথাটা খুবি হাস্যকর এবং Logical Fallacy কারণটা হলো তিনি নিজেই একদিকে বলছেন বিজ্ঞান অনুমানের উপরেও প্রতিষ্ঠিত। এখন আমরা সকলেই জানি অনুমান কখনো প্রমাণিত নাকি অপ্রমাণিত তা নির্ধারণ করতে পারে না। অনুমান মানেই হলো হতেও পরে বা নাও হতে পারে। তাহলে যে বিষয়টার মধ্যে সন্দেহ রয়েছে হতেও পারে নাও হতে পারে এমন বিষয় রয়েছে সেটা কি চোখ বুঝেই অর্থাৎ অকুন্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করা যায়!? আরজ আলী নিজেই বললেন "বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আমাদের সন্দেহ নাই" আবার বলছেন বিজ্ঞান অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর অনুমান মানেই তো হলো হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আর সেই অনুমানকেও আরজ আলী অন্ধের মতন বিশ্বাস করেন। 
বিজ্ঞানের সঙ্গা নিয়ে জাফর ইকবাল সুন্দর ভাবে বলেছেন। বিজ্ঞান কখনো বলে না হবে বরং বলবে হতে পারে। [২]
আরজ আলী অনুমান কেও নাকি অন্ধের মতন বিশ্বাস করবে। 
.
◾আরেকটি মজার ব্যাপার আছে সেটা হলো আরজ আলী বলেছেন,,,
.
"বিজ্ঞান যাহা বলে, তা আমরা অকুন্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করি।"
আরজ আলী বিজ্ঞানকে অকুন্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করে। বলুন তো এই বিশ্বাস কি!?
আরজ আলী বিজ্ঞান কে বিশ্বাস করেন। এখন আমরা দেখি "বিশ্বাসের" সঙ্গা কি। হুমায়ুন আজাদ তো নাস্তিকদের আরেক গুরু তার সঙ্গাটাই দেখি। হুমায়ুন আজাদ বলেছেন,,, 
"অসত্য, অপ্রমাণিত, কল্পিত ব্যাপারে আস্থা পোষণই হচ্ছে বিশ্বাস" [৩]
.
শুধু তাই নয় তিনি আরো বলেছেন,,, 
"'বিশ্বাস করো' ক্রিয়াটি নিশ্চয়তা বুঝায় না, বুঝায় সন্দেহ" [ ৩ নং তথ্যসূত্র ]
◾সুতরাং,,, আমরা বুঝতে পারলাম আরজ আলী বলেছে যে "বিজ্ঞান যা বলে তা অকুন্ঠিত চিত্তে বিশ্বাস করি" তা ভুল। কারণ বিজ্ঞানকে বিশ্বাস অর্থাৎ অসত্য, অপ্রমাণিত, কল্পিত ব্যাপারে আস্থা পোষণ। আরজ আলী প্রমাণ করলো বিজ্ঞান "অসত্য, অপ্রমাণিত, কল্পিত" ধন্যবাদ। 
এই হলো অবস্থা। হুমায়ুন আজাদের বিশ্বাসের সঙ্গা দেখে বুঝা যায় তিনি কতটুকু জ্ঞানের লেভেল ধারী। খুবি দুঃখজনক। শুধু হুমায়ুন আজাদ নয় সাথে অভিজিৎ রায়ও এমন কথা বলছেন। অভিজিৎ রায় তা "বিশ্বাসের ভাইরাস" গ্রন্থে হুমায়ুন আজাদের দেওয়া সঙ্গা দিয়ে বলেছেন,,,
.
"বিশ্বাস বিষয়টিই দাঁড়িয়ে আছে একটি অপ-বিশ্বাসমূলক প্রক্রিয়ার উপর" [৪]
.
তার পর অভিজিৎ রায় হুমায়ুন আজাদের কথাকে কোড করলেন এবং বললেন,,,
.
"বিশ্বাস অপ্রয়োজনীয় তো বটেই উপরন্তু এটা ক্ষতিকর, এমন কি তা তৈরি করতে পারে ভাইরাসের এবং মহামারীর" [৫]
হুমায়ুন আজাদ বিশ্বাসের সঙ্গা দিতে গিয়ে আরো বলেছেন,,,
.
"বিশ্বাস আলো নয় অন্ধকার। বিশ্বাসের জগতটি পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন।" [৬] 
এই হলো তাদের দেওয়া "বিশ্বাসের" সঙ্গা। যা শুনলে.....  
আরজ আলী তার পরেই বলেছেন,,, 
"অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মের অধিকাংশ তথ্য অন্ধবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত" [৭]
◾আমি বলব নাস্তিকরাও অন্ধবিশ্বাসী। নাস্তিকরাও অনেক বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসী। আর ধর্মের অনেক বিষয় অন্ধের মতন মানতে হয়। কারণ এটাই পরীক্ষা। আর নাস্তিকরাও অনেক অনেক বহু অন্ধবিশ্বাসে বিশ্বাসী। নাস্তিকরাও অনেক কিছু অন্ধের মতন বিশ্বাস করে।
যেমন ধরুন,,, নাস্তিকরা কোন প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করে তার পিতা মাতা তার (Biological Parents) এবং প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করে তার ভাই-বোন তার আপন মাতা-পিতা থেকে এসেছে। 
এমন বহু বিষয় আছে যা নাস্তিকরা প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করতে থাকে। আরজ আলীও করেছেন তিনি বয়স্ক হলেও কখনো এই প্রশ্ন তার পিতা মাতা কে করে নি আর এই প্রশ্ন কেউ করবেও না।
◾কারণ মানুষ সকল বিষয়কে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে না বরং কিছু কিছু বিষয়ে। আর নাস্তিকরাও এমন বহু বিষয়ে অন্ধবিশ্বাস করে। শুধু তাই নয় আমরা মুসলিমরাও ইসলামের সকল বিষয় অন্ধভাবে বিশ্বাস করি না। করার প্রয়োজন নেই কারণ ইসলাম নিজেই যৌক্তিক-প্রমাণিত বিষয় দাড় করায়। কিছু বিষয় রয়েছে যা ভবিষ্যতে হবে প্রমাণিত কিন্তু সেটা বিশ্বাস করা অন্ধবিশ্বাস নয়। কুরআনের অনেক কথাই আজ প্রমাণিত তাহলে পরবর্তীতে আরো প্রমাণ হবে। যারা "অনুমান" কে অকুন্ঠিত ভাবে বিশ্বাস করে তারা আর কি বুঝবে। সুতরাং আমরা বুঝলাম সকল কিছুই যে প্রমাণিত হতেই হবে আর সকল মানুষ যে প্রমাণ ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করে না তা ভুল। বরং কিছু বিষয়ে নাস্তিকরাও অন্ধবিশ্বাস করে। 
তাই নাস্তিকদের বলব নিজেরা অন্ধবিশ্বাসী নয় এমন কথা বলে মূখে ফেনা না তুলতে। অন্যদিকে নাস্তিকরাও অনেক কিছুই বিশ্বাস করে। তা কি অন্ধকার? অসত্য? অপ্রমাণিত? তাহলে কেনো এই বিশ্বাস!? যাদের নিজের মতবাদের মধ্যেই রয়েছে বৈপরীত্য তারা আবার কুরআনে বৈপরীত্য খূঁজে। 
VERY FUNNY
আসলে নাস্তিকরা বিশ্বাসের সঙ্গা দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেই বৈপরীত্য তৈরি করেছে। এই সমান্য বিষয়টিও তারা জানে না। বিশ্বাস মানে কখনোই অসত্য কিংবা ভুল নয় বরং "বিশ্বাস" বিষয়টি প্রমাণিতও হতে পারে আবার অপ্রমাণিতও হতে পারে। বিশ্বাস সঠিক কিংবা ভুল দুইটাই হয়।
فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿٪۵۰﴾ 

💕অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয় তাহলে জানবে যে, তারা শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহর পথ-নির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে সে অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেননা। [৮]
তথ্যসূত্রঃ
[১] আরজ আলী রচনাসমগ্র - ১, পৃষ্ঠা:- ৫৪
[২] কোয়ান্টাম মেকানিক্স — মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, পৃষ্ঠা: ১০
[৩] আমার অবিশ্বাস — হুমায়ুন আজাদ, পৃষ্ঠা:- ২২
[৪] বিশ্বাসের ভাইরাস — অভিজিৎ রায়, পৃষ্ঠা:- ১৯৪
[৫] বিশ্বাসের ভাইরাস — অভিজিৎ রায়, পৃষ্ঠা:- ১৯৫
[৬] আমার অবিশ্বাস — হুমায়ুন আজাদ, পৃষ্ঠা:- ৬২
[৭] আরজ আলী রচনাসমগ্র - ১, পৃষ্ঠা:- ৫৫
[৮] সূরা কাসাস ২৮:৫০

Post a Comment

0 Comments