ইসলামে মুতআহ কিংবা হিল্লা বিবাহের অস্তিত্ব আছে!?

মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ২২
বিষয়:- ইসলামে কি আদৌ হিল্লা বিবাহ ও মুতআহ বিবাহ জায়েজ!? 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________





কলেজ থেকে বাসায় এসে দেখি আমাদের বাসায় আসিফ বসে আছে। অতঃপর,, 

আসিফ:- কিরে তুই আসছিস নাকি হাবা। তোর সাথে কিছু কথা ছিলো তাই চলে আসলাম। 

মুহাম্মদ আলী:- কি কথা বলতে থাকেন। 

আসিফ:- তা তো বলবো বটেই। তবে তার আগে চা নিয়ে আয় একটু তৃপ্তি মিটিয়ে নেই। 

[ দু কাপ চা রেডি চায়ে চুমুক আর কথা একসাথে শুরু ]

আসিফ:- এই যে ইসলামে বৈবাহিক বিষয়ে নানান কুসংস্কার অমানবিক প্রথা বিদ্যমান এই প্রথাগুলি কি তোর কাছে কখনো ভালো মনে হয়? 

মুহাম্মদ আলী:- যেমন? 

আসিফ:- এই যে ইসলামে হিল্লা আর মুতআহ বিবাহ প্রথা। 

মুহাম্মদ আলী:- ইসলামে এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। 

আসিফ:- মামার বাড়ির আবদার করছিস নাকি? 

মুহাম্মদ আলী:- মামার বাড়ি আর নানান বাড়ি কোন বাড়ির আবদার নয়। বরং যেটা সত্য সেটাই বলছি ইসলামে মুতআহ বা হিল্লা বিবাহের তো অস্তিত্ব নেই বরং এসব হারাম ও এসব যারা করে তাদের উপর আল্লাহর লানত! 

আসিফ:- হা হা হা। 

মুহাম্মদ আলী:- এই যে হিল্লা বিবাহ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট সহিহ হাদিস আছে। যা থেকে প্রমাণিত হয় হিল্লা বিবাহ কখনোই ইসলামে জায়েজ নয়। 

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ - رضي الله عنه - قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - الْمُحَلِّلَ (1) وَالْمُحَلَّلَ لَهُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ، وَالتِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ (2).
________________________________________
(1) في (ت) أثبت «المحلَّ»، وكتب في الحاشية: المحفوظ: «المحلل».
(2) إسناده حسن؛ لأجل عبد الرحمن بن ثروان، فهو صدوق حسن الحديث.
أخرجه: أحمد 1/ 448، والترمذي (1120)، والنسائي 6/ 149، وأبو يعلى (5350)، والطبراني في «الكبير» (9878)، والبيهقي 7/ 208.
انظر: «المحرر» (1024).

ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তিন তালাক প্রাপ্তা) স্ত্রীকে হালালাকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের উপর লানত করেছেন। -তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [১০১২]

বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৯৯৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا أَشْعَثُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زُبَيْدٍ الأَيَامِيُّ، حَدَّثَنَا مُجَالِدٌ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، وَعَنِ الْحَارِثِ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالاَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَعَنَ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابِنْ مَسْعُودٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَعُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَلِيٍّ وَجَابِرٍ حَدِيثٌ مَعْلُولٌ ‏.‏ هَكَذَا رَوَى أَشْعَثُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ مُجَالِدٍ عَنْ عَامِرٍ هُوَ الشَّعْبِيُّ عَنِ الْحَارِثِ عَنْ عَلِيٍّ وَعَامِرٌ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِالْقَائِمِ لأَنَّ مُجَالِدَ بْنَ سَعِيدٍ قَدْ ضَعَّفَهُ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْهُمْ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ ‏.‏ وَرَوَى عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ مُجَالِدٍ عَنْ عَامِرٍ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا قَدْ وَهِمَ فِيهِ ابْنُ نُمَيْرٍ وَالْحَدِيثُ الأَوَّلُ أَصَحُّ ‏.‏ وَقَدْ رَوَاهُ مُغِيرَةُ وَابْنُ أَبِي خَالِدٍ وَغَيْرُ وَاحِدٍ عَنِ الشَّعْبِيِّ عَنِ الْحَارِثِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏

আলী (রাঃ) ও জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তারা উভয়ে বলেছেন, যে লোক হিল্লা করে এবং যে লোকের জন্য হিল্লা করা হয় তাদের উভয়ের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৫৩৫)

জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১১১৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com

এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস রয়েছে তুমি চাইলে দেখে নিতে পারো। 

[ নাসায়ী ৩৪১৬, তিরমিযী ১১১৯, ১১২০, আবু দাউদ ২০৭৬, ইবনু মাজাহ ১৯৩৫, আহমাদ ৪২৭১, ৪২৯৬, দারেমী ২২৫৮ ]

আসিফ:- কই? ইসলামিক পন্ডিতরা তো তা মানে না। হা হা

মুহাম্মদ আলী:- এটাই ইসলামের কথা। তুমি অস্বীকার করছো কিভাবে? 

ইসলামিক স্কলাররাও এটাই বলেছেন। যদিও সেগুলো দেওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ হাদিসেই সুস্পষ্ট তার পরেও বলছি।  

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ) বলেছেন,,,

হালালা নামক অভিশপ্ত বিবাহ দ্বারা ঐ স্ত্রী, হালালাকারী ও পূর্বস্বামী কারো জন্য হালাল হবে না। (মিশরীয় তীকা) 

তাফসীর আহসানুল বয়ান,,, 

[২:২৩০] আল বাকারা

فَإِن طَلَّقَها فَلا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعدُ حَتّى تَنكِحَ زَوجًا غَيرَهُ فَإِن طَلَّقَها فَلا جُناحَ عَلَيهِما أَن يَتَراجَعا إِن ظَنّا أَن يُقيما حُدودَ اللَّهِ وَتِلكَ حُدودُ اللَّهِ يُبَيِّنُها لِقَومٍ يَعلَمونَ

অতএব যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে। অতঃপর সে (স্বামী) যদি তাকে তালাক দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যে, তারা একে অপরের নিকট ফিরে আসবে, যদি দৃঢ় ধারণা রাখে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা কায়েম রাখতে পারবে। আর এটা আল্লাহর সীমারেখা, তিনি তা এমন সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট করে দেন, যারা জানে।

[১] এই তালাক থেকে তৃতীয় তালাক বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, তৃতীয় তালাক দেওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে না ফিরিয়ে নিতে পারবে, আর না পুনর্বিবাহ করতে পারবে। তবে হ্যাঁ, এই মহিলার যদি অন্যত্র বিবাহ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামী যদি স্বেচ্ছায় তাকে তালাক দেয় অথবা সে (স্বামী) যদি মারা যায়, তাহলে প্রথম স্বামীর জন্য তাকে পুনর্বিবাহ করা জায়েয হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের দেশে যে হালালা (হীলা) প্রথা চালু আছে, তা একটি অভিশপ্ত কর্মকান্ড। নবী করীম (সাঃ) যে হালালা করে এবং যে করায় তাদের উভয়কেই অভিশাপ করেছেন। হালালা করানোর উদ্দেশ্যে কৃত বিবাহ, প্রকৃতপক্ষে বিবাহ নয়, বরং তা ব্যভিচার। এই (অবৈধ পরিকল্পিত) বিবাহের মাধ্যমে মহিলা প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হবে না। 

সুতরাং ইসলামে হিল্লা বিবাহ কোনরূপ ভাবে হালাল নয়। হিল্লা বিবাহ একটি প্রচলিত কুসংস্কার যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। 

আসিফ:- ওও তাহলে মুতআহ বিবাহের সাথে সম্পর্ক বুঝি? 

মুহাম্মদ আলী:- মুতআহ বিবাহ শিয়ারা মানে।যা নাজায়েজ। ইসলামের প্রথমিক যুগে জায়েজ ছিলো প্রেক্ষাপটের আলোকে। আর তা বেশিদিন টিকে নি বরং হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ক্ষেত্র বিশেষে যেমন যুদ্ধ চলাকালীন সময় ও সফরে বৈধ ছিল। কিন্তু তখনও সাধারণতঃ এভাবে বিবাহ বৈধ ছিল না। পরে খায়বারের যুদ্ধে এ ধরনের বিবাহকে হারাম ঘোষণা করা হয়। অতঃপর অষ্টম হিজরীতে মাক্কাহ বিজয়ের সময় মাত্র তিন দিনের জন্য তা বৈধ করা হয়েছিল। এরপর তা চিরতরে হারাম করা হয়। এবং রহিত হয়ে যায়। 

يَحْيَى بْنُ قَزَعَةَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ وَالْحَسَنِ ابْنَيْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ أَبِيْهِمَا عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ مُتْعَةِ النِّسَاءِ يَوْمَ خَيْبَرَ وَعَنْ أَكْلِ لُحُوْمِ الْحُمُرِ الإِنْسِيَّةِ

'আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবার যুদ্ধের দিন মহিলাদের মুত'আহ [৫১] করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। [৫১১৫, ৫৫২৩, ৬৯৬১; মুসলিম ১৬/২, হাঃ ১৪০৭] (আ.প্র. ৩৮৯৫, ই.ফা. ৩৮৯৮)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪২১৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com

মুতআহ বিবাহ শিয়ারা মানে যেখানে কিনা আলী (রাঃ) কে তারা ভক্ত করে সেই আলী (রাঃ) মুতআহ ব্যাপারে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তারপরও শিয়ারা মুতআহ বিবাহের পক্ষে। (নাঊজুবিল্লাহ) 

[ শামসুল হক ফরিদপুরী/ সহিহ বুখারী ৬ষ্ঠ খণ্ড/ হাদিস নং:- ২০২২/ হামদিয়া লাইব্রেরি লিমিটেড ]

আশা করি বুঝতে পেরেছো।

আসিফ:- (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আচ্ছা তাহলে আমি আসি। 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা।

[ আসিফের প্রস্থান ] 

Post a Comment

0 Comments