ধর্মই যুদ্ধের কারণ!? [ নাস্তিকতা ও নৈতিকতা ]


মুহাম্মদ আলী, সিরিজ:- ১৭
বিষয়:- ধর্মই যুদ্ধের কারণ!? নাস্তিক্যবাদ ও নৈতিকতা! 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________

ঘুম থেকে উঠলো মুহাম্মদ আলী তার পর নাস্তা খেতে গেলো। যেই খাবারের টেবিলে বসলো দেখতে পেলো টেবিলের নিচে একটা বই। আর বইটা সেই ডকিন্সের "The God Delusion" ডকিন্স মনে হয় ভুল করে মুহাম্মদ আলীর বাসায় বইটা রেখে এসেছে। মুহাম্মদ আলী নাস্তা করেই বইটা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অভিজিৎ রায়ের বাসায় রওনা দিলো। 

অভিজিৎ এর বাসার দরজায় আসার সাথে সাথেই তার বাসা থেকে শুনা যাচ্ছে ডকিন্স বলেছে "ধর্ম মানেই হিংস্রতা আর মারামারি"। এর পর মুহাম্মদ আলী দরজায় নক করলো। কিছুক্ষণ পর অভিজিৎ এসে দরজা খুলল।

অভিজিৎ:- কিরে এখানে আসলি কি বুঝে? 

মুহাম্মদ আলী:- ডকিন্স কাকুকে একটা জিনিস দেওয়ার জন্য। 

অভিজিৎ:- তাই? তাহলে ভিতরে আয়

[ মুহাম্মদ আলী ভিতরে ঢুকেই দেখলো ডকিন্স, সুরুজ, জান্নাত, অজয়, ডেভিড, দয়ানন্দ সব কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে ]

মুহাম্মদ আলী:- কিরে তোমরা সকলে দেখছি এখানে। এখানে কি মিটিং চলছে নাকি? 

ডকিন্স:- তুই এখানে আসলি কেন? মাথামোটা? 

[ সকলে ডকিন্সের কথা শুনে হাসতে লাগলো ]

মুহাম্মদ আলী:- আমার বাসায় আপনি ভুল করে আপনার বস্তা পঁচা সস্তা বই The God Delusion ফেলে দিয়ে এসেছেন তাই সেটা ফিরত দিতে আসলাম। 

ডকিন্স:- এটা তো তোকেই দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছিলাম। 

মুহাম্মদ আলী:- এসব খোঁড়া যুক্তিতে ভরপুর বই আমি আমার বাসায় রাখি না। ভালো কোন বই থাকলে দিয়েন। 

[ এই বলে বইটি ডকিন্সের হাতে ধরিয়ে দিলো। আর চলে যেতে লাগলো। সুরুজ মুহাম্মদ আলীকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো ]

সুরুজ:- কিরে হাবা যাসনে? ডকিন্সের সাথে কথা বলে যা?

[ মুহাম্মদ আলী ফিরে এসে ডকিন্সের সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো। সবাই বুঝে গেলো আজ ডকিন্সের সাথে তর্কবিতর্ক শুরু হবে। সকলেই চুপচাপ শ্রবণ করছে ]

মুহাম্মদ আলী:- ডকিন্স সাহেব। আমি শুনলাম আপনি বলেছেন "ধর্ম মানেই হিংস্রতা আর মারামারি"। 

ডকিন্স:- Hmm এটা সত্য Any Problem? 

মুহাম্মদ আলী:- অবশ্যই ধর্ম কখনো লড়তে বলে না। যারা ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ এবং যারা ধর্মকে মানে না তারাই এসব করে। 

ডকিন্স:- হা হা হা। 

মুহাম্মদ আলী:- নাহলে ইসলামে হত্যা করার কোন আদেশ নেই। 

ডকিন্স:- তাই নাকি? যারা খুনখারাপি করে তারা যে ধর্মের কারণে তা করে না তার প্রমাণ কি? 

মুহাম্মদ আলী:- প্রমাণ হলো আমাদের ধর্মগ্রন্থ। ইসলাম আমাদের কখনোই নিরপরাধ কাউকে হত্যা করার অনুমতি দেয় না। তবে নাস্তিকতা দেয়। 

ডকিন্স:- কি বললে? নাস্তিকতা অনুমতি দেয়?? 

মুহাম্মদ আলী:- হুম। 

ডকিন্স:- কিভাবে? 

মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা আপনি তো অনেক আগে থেকেই বলে আসছে ধর্ম ছাড়াই মানুষ ভালো হতে পারে বিবেকই যথেষ্ট। তাই না? 

ডকিন্স:- হুম। 

মুহাম্মদ আলী:- তাহলে বলুন তো নাস্তিক স্ট্যালিন কে চিনেন? তিনি কি ধার্মিক ছিলেন? যে কারণে বার বার বলছেন ধর্মই মারামারি সৃষ্টি করে? 

ডকিন্স:- তাকে চিনি সে খুবি খারাপ কাজ করেছে যেমনটা হিটলার করেছিল। আমি এদের ব্যাপারেও বলেছি। ( দ্যা গড ডিল্যুশন, সপ্তম অধ্যায়-শেষপর্ব ) 

মুহাম্মদ আলী:- আমি পড়েছি আপনি বলেছেন,,, 

"স্টালিন এর কাজকর্মের জন্য যে নাস্তিক্যবাদ দায়ী তার কোন প্রমাণ নেই"

কিন্তু আমার কাছে প্রমাণ আছে। 

ডকিন্স:- কি প্রমাণ? 

মুহাম্মদ আলী:- প্রথমে আপনি দাবী করলেন ধর্ম মানেই হত্যা খুনখারাপি। আমি সেটা ভুল প্রমাণ করছি,,, 

যে কোন মানুষকে হত্যা করা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা। এত বড় পাপ ইসলামে হত্যা করা,,,, 

[৫:৩২] আল মায়িদাহ

مِن أَجلِ ذلِكَ كَتَبنا عَلى بَني إِسرائيلَ أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفسًا بِغَيرِ نَفسٍ أَو فَسادٍ فِي الأَرضِ فَكَأَنَّما قَتَلَ النّاسَ جَميعًا وَمَن أَحياها فَكَأَنَّما أَحيَا النّاسَ جَميعًا وَلَقَد جاءَتهُم رُسُلُنا بِالبَيِّناتِ ثُمَّ إِنَّ كَثيرًا مِنهُم بَعدَ ذلِكَ فِي الأَرضِ لَمُسرِفونَ

এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের উপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর যমীনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।

২) ইসলামিক রাষ্ট্রেও অমুসলিম-যিম্মিকে হত্যা করা নিষিদ্ধ! 

أَخْبَرَنَا إِسْمَعِيلُ بْنُ مَسْعُودٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، عَنْ عُيَيْنَةَ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي قَالَ: قَالَ أَبُو بَكْرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا فِي غَيْرِ كُنْهِهِ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ»

আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৭৪৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

এবার আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। 

ডকিন্স:- করো। 

মুহাম্মদ আলী:- আপনি বলছেন যে স্ট্যালিন নাস্তিক ছিলো। আর হিটলার নাস্তিক হলেও তাদের অপকর্মের জন্য নাস্তিক্যবাদ দায়ী নয়। আচ্ছা নাস্তিক্যবাদের কোথায় লেখা আছে এসব অপকর্ম করা নিষেধ? যদি দেখাতে পারেন তাহলে আমিও মেনে নিব যে নাস্তিক্যবাদ দায়ী নয়। 

[ ডকিন্স অনেক কিছু ভেবেও কিছু বলতে পারছে না। ]

ডকিন্স:- ইয়ে মানে! নাস্তিক্যবাদের তো কোন বিধান নেই যে হত্যা, খুনখারাপি করা যাবে না। বরং বিবেকই যথেষ্ট। 

মুহাম্মদ আলী:- যদি বিবেকই যথেষ্ট হয় তাহলে স্টালিনের বিবেক কোথায় গেলো?? কোথায়?? 

ডকিন্স:- (নিশ্চুপ) 

মুহাম্মদ আলী:- সুতরাং আর কখনো বলবেন না যে বিবেকই যথেষ্ট। 

ডকিন্স:- (নিশ্চুপ) 

[ সকলেই ডকিন্সের দিকে হা করে রয়েছে সকলেই অবাক এই পুচকে ছেলের কাছে ডকিন্স চুপসে গেছে! ]

মুহাম্মদ আলী:- ডকিন্স সাহেব কিছু বলুন!? 

ডকিন্স:- ইয়ে মানে, ধার্মিকরা তো নিজ ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করে অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে কিন্তু স্টালিন তো আর নাস্তিক্যবাদ স্থাপনের জন্য যুদ্ধ করে নি। 

মুহাম্মদ আলী:- নাস্তিক্যবাদের জন্য যুদ্ধ করবেই বা কেনো? নাস্তিক্যবাদের কি কোন অস্তিত্ব আছে? নাস্তিক্যবাদের তো কোন বিধান নেই যে বিধান স্থাপন করবে। আর ধর্মের অনুসারী দেখে ধর্ম বিচার করছেন কেনো?

ইসলামে অন্য ধর্মের লোককে জোড় করে ইসলাম কবুল করতে বাধ্য করে না,,,, 

[২:২৫৬] আল বাকারা

لا إِكراهَ فِي الدّينِ قَد تَبَيَّنَ الرُّشدُ مِنَ الغَيِّ فَمَن يَكفُر بِالطّاغوتِ وَيُؤمِن بِاللَّهِ فَقَدِ استَمسَكَ بِالعُروَةِ الوُثقى لَا انفِصامَ لَها وَاللَّهُ سَميعٌ عَليمٌ

দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

বরং সকল অমুসলিমদের সাথে ইনসাফের ঘোষণা দেয় ইসলাম। 

[৬০:৮] আল মুম্‌তাহিনাহ্‌

لا يَنهاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذينَ لَم يُقاتِلوكُم فِي الدّينِ وَلَم يُخرِجوكُم مِن دِيارِكُم أَن تَبَرّوهُم وَتُقسِطوا إِلَيهِم إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ المُقسِطينَ

দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।

আপনাদের নাস্তিক্যবাদ বলা আছে খুনখারাপি নিষিদ্ধ? 

[ ডকিন্স একদম চুপসে গেছে। জান্নাত, সুরুজ, অভিজিৎ, অর্ক স্যার, অজয়, দয়ানন্দ, আরজ আলী, ডেভিড সকলেই চুপচাপ। মুহাম্মদ আলী এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে চলে গেলো ]

Post a Comment

0 Comments