বাইবেলে নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভবিষ্যণবাণী নিয়ে খ্রিস্টান মিশনারির অযুহাতের জবাব…

বাইবেলে নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভবিষ্যণবাণী নিয়ে খ্রিস্টান মিশনারির অযুহাতের জবাব…
🖋Author:- Ahmed Ali

.
প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল যে, আমরা যত পয়েন্টই দেখাই না কেন, আশা করা যায়, খ্রিস্টান মিশনারি আর তাদের অনুসারীরা সেগুলো কখনই মেনে নেবে না। কারণ তারা জীবনে কোনো দিন ইসলামের ভাল কিছু দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে। আর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মেনে নিলে তাদের ইসলাম মানতে হবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে, হিজাব করতে হবে, মদ খাওয়া যাবে না, যিনা করা যাবে না, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড নিয়ে মস্তি করা যাবে না, মর্ডাণিজমের নামে অশ্লীল পোশাক পরা যাবে না আরও কত ঝামেলা! অথচ যদি শুধু এটুকু তারা বিশ্বাস করে যে, যীশু তাদের সমস্ত পাপের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছে, তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই!তারা সারাজীবন যত পাপই করুক না কেন, যীশু সব পাপ নিয়ে চলে যাবে!
.
একারণে প্রবৃত্তির সন্তষ্টির আশায় আশাবাদী মিশনারিদের সাথে অযথা বিতর্ক করার জন্য আমাদের এই লেখা নয়। বরং তারা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে যে অভিযোগগুলো তোলে, তারই কিছু অভিযোগের বিপরীতে আমাদের মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা জানানোটাই এই লেখার আসল উদ্দেশ্য।
.
.
বাইবেলের যোহন (Gospel of John) এর ১৬ অধ্যায়ে বলা হচ্ছে,
.
“‘তোমাদের বলবার মতো আমার এখনও অনেক কথা আছে; কিন্তু সেগুলো তোমাদের গ্রহণ করার পক্ষে এখন অতিরিক্ত হয়ে যাবে।
সত্যের আত্মা যখন আসবেন, তখন তিনি সকল সত্যের মধ্যে তোমাদের পরিচালিত করবেন। তিনি নিজে থেকে কিছু বলেন না, কিন্তু তিনি যা শোনেন তাই বলেন, আর আগামী দিনে কী ঘটতে চলেছে তা তিনি তোমাদের কাছে বলবেন।”[১]
.
আমাদের মুসলিমদের দাবি হল, এখানে “সত্যের আত্মা” বলতে নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বোঝানো হয়েছে।
.
খ্রিস্টান মিশনারিদের কয়েকটি অভিযোগ এখানে আমরা দেখব।
.
তারা এই উদ্ধৃতির কিছু পূর্বের একটি উদ্ধৃতি দেয়, যেটি হল যোহন (Gospel of John) এর ১৬ অধ্যায়ের ৭ নং অনুচ্ছেদ, যেখানে বলা হচ্ছে,
.
“কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি; আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি যদি না যাই তাহলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের কাছে আসবেন না। কিন্তু আমি যদি যাই তাহলে আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।”[২]
.
খ্রিস্টান মিশনারির বক্তব্য হল, //আমি যদি যাই তাহলে আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব// – এই অংশ থেকে প্রমাণিত হয় যে, এখানে যীশু, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু কোরআন বলছে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করেছেন আল্লাহ। এর অর্থ হল যীশুই আল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
.
এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যীশু প্রেরণ করবেন বলা হচ্ছে, কিন্তু কীভাবে প্রেরণ করবেন, সেটা বলা হয় নি। ব্যাপারটা বুঝতে একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন একটা ক্লাসে একদল ছাত্র আছে। এখন ক্লাসে শিক্ষক এলেন এবং ক্লাসের মাঝ সময়েই কিছু ছাত্র শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে স্কুলে আয়োজিত হবে এমন এক বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সালের জন্য চলে গেল। কিন্তু যিনি রিহার্সাল করাবেন, তিনি বললেন যে, একবারে সবার রিহার্সাল হবে না। একদল আসবে, তাদের রিহার্সাল হবে। তারপর তাদের হয়ে গেলে অন্য দল আসবে। সেইভাবে একদল ছাত্র গেল, তাদের রিহার্সাল শেষ হল। আর তাদের ফিরে যাওয়ার সময় রিহার্সাল এর স্যার বললেন, “এবার তোমরা তোমাদের অন্য দলটিকে পাঠিয়ে দিও।” এবার তারা ক্লাসে গেল এবং অন্য দলটিকে যাওয়ার কথা বলল। তখনও ক্লাস চলছে। শিক্ষক ক্লাসে আছেন। এখন অন্য দল যখন যাবে, তখন শিক্ষক বললেন যে, “জাস্ট দুই মিনিট অপেক্ষা করো। তোমাদের এই টপিকটা বুঝিয়ে দিলেই তোমরা রিহার্সাল করতে চলে যেও।” তারপর দুই মিনিট পর অন্য দল রিহার্সালে চলে গেল।
.
এখানে শিক্ষক ক্লাসে থাকার অর্থ হল, শিক্ষকের অনুমতি ক্রমেই ক্লাস থেকে বের হতে হবে। এটাই কমন সেন্স! পূর্বের ছাত্রের দল যতই পরের দলটিকে রিহার্সালে পাঠাক না কেন, শিক্ষক যতক্ষণ অনুমতি না দিচ্ছেন, ততক্ষণ তারা যেতে পারবে না!
.
কিন্তু কিছু মানুষ এই কমন সেন্সটুকুও মনে হচ্ছে আজকাল হারিয়ে ফেলেছেন যে, যতই যীশু সত্যের আত্মাকে পাঠাক না কেন, একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আছেন, যাঁর অনুমতি আর হুকুম ছাড়া এই প্রেরণ সম্ভব নয়, কেননা তিনিই নির্ধারণ করে রেখেছেন কোন নবীর পর কোন নবী আসবেন!
.
قُلْ مَن كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُۥ نَزَّلَهُۥ عَلَىٰ قَلْبِكَ بِإِذْنِ ٱللَّهِ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
.
“(হে মুহাম্মাদ) তুমি বলে দাওঃ যে ব্যক্তি জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা রাখে এ জন্য যে, সে আল্লাহর হুকুমে এই কুরআনকে তোমার অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে, যা পূর্ববতী কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণ করছে এবং মু’মিনদের সুসংবাদ দিচ্ছে।”[৩]
.
বাইবেল নিজেই বলছে যে, যীশুকে ঈশ্বর প্রেরণ করেছেন, সেখানে সত্যের আত্মাকে কেন ঈশ্বর প্রেরণ করবেন না?
.
“‘হে ইহুদী ভাইয়েরা, একথা শুনুন; নাসরতীয় যীশুর দ্বারা ঈশ্বর বহু অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ করে আপনাদের কাছে প্রমাণ দিয়েছেন যে **তিনি সেই ব্যক্তি যাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন;** আর আপনারা এই ঘটনাগুলি জানেন।”[৪]
.
এখন যোহন (Gospel of John) এর ১৬ অধ্যায়ের ৭ নং ভার্স এ //কিন্তু আমি যদি যাই তাহলে আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব// এই অংশ থেকে আমরা যখনই সত্যের আত্মার আগমনের শর্ত হিসেবে যীশুর প্রস্থানকে ইঙ্গিত করে বলি যে, যীশুর প্রস্থান না হলে সত্যের আত্মা আসবে না এবং যীশু পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়ও পবিত্র আত্মা পৃথিবীতে ছিল, তাই পবিত্র আত্মা, সত্যের আত্মা হতে পারে না; তখন খ্রিস্টান মিশনারিরা তাদের আরেকটি অযুহাত উত্থাপন করে, বাইবেলের এই রেফারেন্সের মাধ্যমে:
.
“আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের আর একজন সাহায্যকারী দেবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন।
তিনি সত্যের আত্মা, যাঁকে এই জগত সংসার মেনে নিতে পারে না, কারণ জগত তাঁকে দেখে না বা তাঁকে জানে না। তোমরা তাঁকে জান, কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গেই থাকেন, আর তিনি তোমাদের মধ্যেই থাকবেন।”[৫]
.
এখানে মিশনারির অভিযোগ হল, সত্যের আত্মা চিরকাল যীশুর শিষ্যদের সাথে থাকবেন, কিন্তু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা গেছেন। সত্যের আত্মাকে জগতের লোকেরা চোখে দেখবে না, কিন্তু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চোখে দেখা গেছে। সুতরাং সত্যের আত্মা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয়।
.
সুতরাং, আমরা এখন এই রেফারেন্সটিকে ধাপে ধাপে দেখব।
.
//আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের আর একজন সাহায্যকারী দেবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন।//
.
চিরকাল সঙ্গে থাকা বলতে মিশনারিরা ধরেই নিয়েছে যে, পবিত্র আত্মা চিরকাল তাদের সাথে আক্ষিরকভাবে থাকবে। লক্ষ্যণীয় যে, এখানে “পবিত্র আত্মা” কথাটাই যেমন নেই, তেমনি এই সত্যের আত্মা কীভাবে চিরকাল থাকবে, সেই বৈশিষ্ট্যও বলা নেই। তাই এখানে “চিরকাল থাকা” কথাটা যে, আক্ষিরকভাবে কেবল একটা অর্থেই সীমাবদ্ধ থাকবে, অন্য কোনো অর্থ এ থেকে গ্রহণ করা যাবে না, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
.
এক্ষেত্রে বাইবেলের এই উদ্ধৃতিগুলো দেখুন:
.
“আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই, আর তারা কখনও বিনষ্ট হয় না, আমার হাত থেকে কেউ তাদের কেড়ে নিতেও পারবে না।”[৬]
.
এখানে যীশু শিষ্যদের অনন্ত জীবন দানের সুসংবাদ দিচ্ছেন। এর অর্থ কী এই যে, তার শিষ্যরা পৃথিবীতে কোনোদিন মরবে না? না, বরং এখানে পরকালে জান্নাতের কথা বলা হচ্ছে যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর শিষ্যগণ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর মাধ্যমে পরকালে আল্লাহর অনুমতিতে অনন্তকালীন জান্নাতের জীবন লাভ করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু উক্ত রেফারেন্সে কেবল //আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই// এতটুকুই বলা আছে; “কোথায় অনন্ত জীবন পাবে” তা এখানে বলা হয়নি। সাধারণ অর্থে তাই এই বাক্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে, পৃথিবীতে তারা অনন্ত জীবন লাভ করবে, আর মরবে না। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আপাতভাবে পাওয়া অর্থ সঠিক নয়। এর অর্থ এটাই যে, একটা রেফারেন্স থেকে আপাতভাবে একটি বিষয় বোঝা গেলেই সেই অর্থেই যে সবকিছুকে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, এর কোনো মানে নেই।
.
এছাড়া বাইবেলের এই রেফারেন্সটিও খেয়াল করুন:
.
“তারা তাদের ভ্রান্ত দেবদেবী, ভয়ঙ্কর মূর্তিগুলি ও অপরাধ দ্বারা নিজেদের অবমাননা করবে না। কিন্তু আমি তাদের সেই সমস্ত স্থান থেকে রক্ষা করব যেখানে তারা পাপ করত। আমি তাদের ধুয়ে শুচি শুদ্ধ করব। তারা আমার লোক হবে এবং আমি তাদের ঈশ্বর হব।
আমার দাস দাযূদ তাদের রাজা হবে। তাদের সকলের একটি মাত্র মেষপালক আছে। তারা আমার নিয়ম মেনে চলবে ও বিধি পালন করবে এবং আমার কথা অনুসারে কাজ করবে।
আমি আমার দাস যাকোবকে যে দেশ দিয়েছিলাম সেই দেশে তারা বাস করবে। তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে দেশে বাস করতেন, আমার লোকরা সেখানেই বাস করবে। সেখানে তারা, তাদের সন্তানরা ও তাদের পৌত্র-পৌত্রীরা এবং তাদের ভবিষ্যতের সমস্ত প্রজন্ম বাস করবে আর আমার দাস দাযূদ হবে তাদের চিরকালের নেতা।”[৭]
.
এখানে //আমার দাস দাযূদ হবে তাদের চিরকালের নেতা// এই অংশটি থেকে এবার যদি আমরা বলি যে, দাযূদ চিরকাল নেতা থাকবেন, এর মানে হল, দাযূদের আর মৃত্যু হবে না। তাহলে এটা সঠিক হবে না। কারণ দাযূদের মৃত্যু হয়ে গেছে, আর যদি কেউ দাবিও করে যে, তিনি জীবিত, তবুও একদিন না একদিন তার মৃত্যু হবেই। তাই এখানে বিষয়বস্তু কেবল একটি অর্থেই সীমাবদ্ধ হতে পারে না। মূলত এখানে “দাযূদ হবে তাদের চিরকালের নেতা” কথাটি দিয়ে দাযূদের নেতৃত্বের শিক্ষা তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হবে, এটাই বোঝানো হচ্ছে এবং এভাবে তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও চিরকালীন নেতা হয়ে বিরাজ করবেন, এই অর্থেরই ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে।
.
ঠিক একইভাবে //আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের আর একজন সাহায্যকারী দেবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন// – এই অংশটি দিয়েও এটা বোঝানো হচ্ছে যে, সেই সাহায্যকারী যে শিক্ষা তাদেরকে দেবেন, তার মাধ্যমে তিনি চিরকাল জীবিত থাকবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা প্রত্যেক প্রকৃত সত্য বিশ্বাসীর হৃদয়ে বিরাজ করে এবং এর মাধ্যমেই তিনি চিরকাল আমাদের মাঝে তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন, যেন তিনি আমাদের সাথেই আছেন সব সময়। এখানে আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রকৃত অনুসারী আর একজন মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য করি না, কারণ ইসলাম ঘোষণা করছে যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং সকল নবী-রাসূল ছিলেন মুসলিম। বাইবেলেও যীশু বা ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলছেন,
.
“আমি নিজের থেকে কিছুই করতে পারি না। আমি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) যেমন শুনি তেমনি বিচার করি; আর আমি যা বিচার করি তা ন্যায়, কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং **যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি।**”[৮]
.
যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় কাজ না করে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় কাজ করে, আরবিতে তাঁকে বলা হয় “মুসলিম”। অর্থাৎ বাইবেল অনুযায়ীও ঈসা (আলাইহিস সালাম) একজন মুসলিম এবং আমাদের নিকট তাঁর প্রকৃত অনুসারী আর মুসলিমদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একারণে সেই সকল মুসলিম যারা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অনুসারীদের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন এবং বিস্তৃত হয়েছেন, সত্যের আত্মা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সঙ্গে সর্বদাই রয়েছেন তাদের অন্তরে তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে।
.
ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلْمُؤْمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُوا۟ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَاۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ ٱلْمَصِيرُ
.
“রাসূল তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং মু’মিনগণও। তারা সবাই আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর এবং রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, (তারা বলে), ‘আমরা রাসূলগণের মধ্যে কারও ব্যাপারে তারতম্য করি না’ এবং তারা এ কথাও বলে যে, ‘আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করো আর প্রত্যাবর্তন তোমারই দিকে’।”[৯]
.
যোহন, ১৪:১৬-১৭ এর শেষ অংশটি ছিল:
//তিনি সত্যের আত্মা, যাঁকে এই জগত সংসার মেনে নিতে পারে না, কারণ জগত তাঁকে দেখে না বা তাঁকে জানে না। তোমরা তাঁকে জান, কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গেই থাকেন, আর তিনি তোমাদের মধ্যেই থাকবেন।//
.
প্রথম কথা হল //তোমরা তাঁকে জান//, এই অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, সত্যের আত্মাকে জানার কথা বলা হচ্ছে, দেখার কথা সরাসরি বলা হচ্ছে না। অর্থাৎ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অনুসারীরা সত্যের আত্মাকে জানবে, এই কথা বলা হচ্ছে, দেখবে, কী দেখবে না, এই কথা উহ্য আছে। আর তাই //তিনি তোমাদের মধ্যেই থাকবেন// – এই অংশটুকু দিয়েও “সঙ্গে থাকার” অর্থ সর্বদা যে আক্ষরিকভাবে কোনো স্থানে উপস্থিত থাকাই সব সময় বোঝাবে, আর কিছুই কখনও বোঝাবে না, এমনটা ভাবা অযৌক্তিক। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এখানে “পবিত্র আত্মা” কথাটি কোথাও বলা হয় নি। আবার এই রেফারেন্সের প্রথম দিকেই ছিল //আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের আর একজন সাহায্যকারী দেবেন..// – অর্থাৎ এখানে পবিত্র আত্মা আগে থেকেই উপস্থিত ছিল বিধায়, আরেকটি নতুন পবিত্র আত্মার প্রসঙ্গ আসা এখানে অযৌক্তিক।
.
আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, একটা রেফারেন্সকে দেখে সেই বাক্য থেকে এক ধরণের অর্থ মনে হলেও কেবল সেই অর্থই যে সঠিক আর সেই অর্থের বাইরে আর কিছু যে থাকতে পারে না, এমনটা ভাবা সঠিক নয়। এখানেও আমরা একই প্রক্রিয়ার পুনারাবৃত্তি দেখতে পাব।
.
এই ব্যাপারটিকে আরও একটু বুঝতে Kings James Version এর অনুবাদটি চলুন দেখি।
.
“And I will pray the Father, and he shall give you another Comforter, that he may abide with you for ever; Even the Spirit of truth; whom the world cannot receive, because it seeth him not, neither knoweth him: but ye know him; for he dwelleth with you, and shall be in you.”[১০]
.
//..the Spirit of truth; whom the world cannot receive// এর অর্থ সঠিকভাবে করলে দাঁড়াবে, “..সত্যের আত্মা যাকে এই পার্থিব জগৎ গ্রহণ করতে পারবে না”। কিন্তু কেন তাঁকে গ্রহণ করতে পারবে না? কারণটা বলা হচ্ছে – //because it seeth him not, neither knoweth him// – “কারণ তারা তাঁকে দেখবেও না, জানবেও না”।
আমরা জানি, নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই পার্থিব জগতের অধিকাংশ লোকেরা মেনে নিতে পারে নি। তিনি যখন ইসলামিক আকিদা প্রচার করা শুরু করলেন, তখন লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করতে পারে নি। তাঁর কথা শুনেছে, কিন্তু সেই কথা হজম করতে পারে নি; যেন সেই কথা শুনেও না শোনার মত। এমনকি পরবর্তী যুগেও এবং বর্তমানকালেও তাঁর বিরুদ্ধে অনেক বই লেখা হয়েছে, অনেক অপবাদ দেওয়া হয়েছে এবং এখনও তা হচ্ছে। এই যে খ্রিস্টান মিশনারিরাও যে, তাঁকে মেনে নিতে পারছে না, এটাও প্রমাণ করছে যে, নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এই দুনিয়ার অনেক লোকই গ্রহণ করতে পারে নি। আর একারণেই, “তারা তাঁকে দেখবেও না, জানবেও না” এর অর্থ হল, তারা তাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারবে না এবং এর জন্য তাঁর প্রকৃত শিক্ষার ওপর তারা দৃষ্টিপাত করবে না, বরং বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে পথভ্রষ্ট হবে। ফলে সেই সকল অবিশ্বাসীর দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রকৃত শিক্ষা কী, ঈমান এর অনুভূতি কী, হারাম থেকে দূরে থাকার আনন্দ কী – তার কিছুই জানতে পারবে না, তার কিছুই উপলব্ধি করতে পারবে না!
আল্লাহ তাআলা কোরআনে তাদের সম্পর্কে বলেন,
.
وَمَثَلُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ كَمَثَلِ ٱلَّذِى يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَآءً وَنِدَآءًۚ صُمٌّۢ بُكْمٌ عُمْىٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
.
“যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের দৃষ্টান্ত ওদের ন্যায় – যেমন কেহ আহবান করলে শুধু চিৎকার ও ধ্বনি ব্যতীত আর কিছুই শোনে না, তারা বধির, মূক, অন্ধ; কাজেই তারা বুঝতে পারে না।”[১১]
.
//but ye know him//, অর্থাৎ “কিন্তু তোমরা তাঁকে জানো”, অর্থাৎ এখানে ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অনুসারীরা সেই সত্যের আত্মার বৈশিষ্ট্য কেমন হবে সেটা জানে; এর অর্থ হল, ঈসা (আলাইহি সালাম) ও তাঁর অনুসারীরা ছিলেন মুসলিম, অর্থাৎ আল্লাহ বা এক সত্য সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজের ইচ্ছাশক্তি সমর্পণকারী, যার ইঙ্গিত আমরা পাই ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর কথা থেকেই যখন তিনি বলছেন যে, “..আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং **যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি।**”[১২]
.
এখানে তাই, ঈসা (আলাইহিস সালাম) যেমন আল্লাহর নিকট নিজের ইচ্ছা সমর্পণকারী, অর্থাৎ মুসলিম, ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর পর যে সত্যের আত্মা আসবেন, তিনিও হবেন মুসলিম। আর এই ইসলামের অনুভূতি এবং ইসলামিক আকিদা যেহেতু ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অনুসারীরা বুঝতে পেরেছিলেন, তাই পরবর্তীতে আগত সত্যের আত্মা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মুসলিমই হবেন আর ইসলামিক বৈশিষ্ট্যেই তিনি সমুজ্জ্বল হবেন, এটা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর শিষ্যদের অজানা থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
.
আর //for he dwelleth with you, and shall be in you// – অর্থাৎ, “কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন এবং তোমাদের মধ্যেই থাকবেন”, এটার ব্যাখ্যায় আমরা আগেই বলেছি যে, এখানে সঙ্গে থাকার অর্থ হল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর মুমিন ভাই-বোনদের হৃদয়ে গেঁথে আছেন আর আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রকৃত অনুসারীদেরও এই একই ইসলামের আওতাভুক্তই মনে করি।
.
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلنَّصَٰرَىٰ وَٱلصَّٰبِـِٔينَ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَعَمِلَ صَٰلِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
.
“নিঃসন্দেহে যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের মধ্য থেকে) যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের পালনকর্তার কাছে। আর তাদের কোনই ভয়-ভীতি নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।”[১৩]
.
.
বাইবেলের অনেক জায়গাতেই যীশুকে নিয়ে অনেক রকম আপত্তিকর বক্তব্য আছে, কিন্তু আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে ভালবাসি, সম্মান করি, তাই সেগুলো আর অপ্রয়োজনীয়ভাবে এখানে উদ্ধৃত করতে চাই না। কিন্তু খ্রিস্টান মিশনারিরা তাদের অনেক রকম অযুহাত আমাদের দেখায়। তাই এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কেবল একটি বিষয় নিয়েই তাদেরকে ভাবতে বলব। এর জন্য বাইবেলের যোহন (Gospel of John) এর ১৬ অধ্যায়ের অনুচ্ছেদটি আরেকবার দেখা যাক।
.
“‘তোমাদের বলবার মতো আমার এখনও অনেক কথা আছে; কিন্তু সেগুলো তোমাদের গ্রহণ করার পক্ষে এখন অতিরিক্ত হয়ে যাবে।
সত্যের আত্মা যখন আসবেন, তখন তিনি সকল সত্যের মধ্যে তোমাদের পরিচালিত করবেন। তিনি নিজে থেকে কিছু বলেন না, কিন্তু তিনি যা শোনেন তাই বলেন, আর আগামী দিনে কি ঘটতে চলেছে তা তিনি তোমাদের কাছে বলবেন। তিনি আমাকে মহিমান্বিত করবেন…”[১৪]
.
আমরা এই অংশটির ওপর জোর দিচ্ছি – //তিনি আমাকে মহিমান্বিত করবেন//; এখানে খ্রিস্টান মিশনারির দাবি অনুযায়ী তর্কের খাতিরে যদি সত্যের আত্মা বলতে পবিত্র আত্মাও ধরে নিই এবং এটা ধরে নিই যে, মিশনারিরাই হল ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রকৃত অনুসারী যাদের সঙ্গে পবিত্র আত্মা সর্বদা অবস্থান করছে, সেক্ষেত্রে পবিত্র আত্মা সহযোগে তারা তাদের যীশুকে কতটুকু মহিমান্বিত করেছে?
.
আমরা ব্যাপারটা তুলে ধরতে আরেকবার একটা উদাহরণের সাহায্য নেব। ধরুন, এক ব্যক্তি আপনাকে এসে বলল যে, তিনি একজন বড় নামকরা ব্যবসায়ী। তার বাড়িতে একটা কুকুর আছে। এবার তিনি আপনাকে বললেন, “জানো, কুকুরটা আমার নিজের ঔরসজাত সন্তান।” যেকোনো স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি এর জবাবে এভাবে বলবেন, “কুকুর কীভাবে আপনার ঔরসজাত সন্তান হয়? কুকুরটাকে হয়ত আপনি নিজের সন্তানের মত ভালোবাসতে পারেন। কিন্তু সে তো কুকুর! সে আপনার ঔরসজাত সন্তান হয় কী করে?”
ভেবে দেখুন, অনেকেই এমন আছে যারা পশুদের নামে অন্যদের গালিগালাজ করে। যদি কাউকে “কুকুরের বাচ্চা” বলা হয়, তখন আসলে তাকে নিচু পর্যায়ের প্রাণীর সাথে তুলনা করে ছোট করা হচ্ছে! তাই এটা অপমানস্বরূপ। উপরের উদাহরণেও তাই ওই ব্যক্তি যখন কুকুরকে নিজের ঔরসজাত সন্তান বলেছেন, তখন আসলে এটা দিয়ে তিনি নিজেকেই নিজে অপমান করছেন। তাহলে আমাদের মিশনারির ত্রিত্ববাদী (Trinitian) খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা যখন এই আকিদা প্রচার করে বেড়ান যে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) ঈশ্বরের “only begotten son” বা “একমাত্র ঔরসজাত পুত্র”, তখন কি তারা ঈশ্বর আর যীশু উভয়কেই অপমান করেন না? ঈশ্বর কেন তাঁর থেকে নিম্ন পর্যায়ের মানুষরূপী সৃষ্টিকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহণ করবেন? বরং তাঁর এরূপ করার তো কোনো প্রয়োজনই নেই! আবার ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে ঔরসজাত পুত্র হিসেবে দাবি করে পরোক্ষভাবে নিম্ন পর্যায়ের সৃষ্টি হিসেবে ইঙ্গিত দেওয়ার অর্থ কখনই মর্যাদাপূর্ণ কোনো বিষয় হতে পারে না! ব্যাপারটা সেই উপরের উদাহরণে থাকা লোকের মত হয়ে যাচ্ছে, যে কুকুরের মত নিম্ন পর্যায়ের প্রাণীকে নিজের ঔরসজাত সন্তান বলে দাবি করেছিল!!
.
.
আবার আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক। ধরুন এক ব্যক্তি এক অফিসের বিরাট বস। তিনি প্রতিদিন গাড়িতে করে অফিস যান কোট, প্যান্ট বা দামি পোশাক পরে। তার অনেক সম্মান, মর্যাদা। অফিসের লোকজনের মুখে মুখে তার নাম ঘোরে ফেরে! এখন মনে করুন, তিনি একদিন একটা ছেঁড়া, ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পরে অফিসে গেলেন আর ঘোষণা করলেন যে, তিনি আর বস নন, তিনি সেই দিন থেকে অফিসের সবচেয়ে নিচু মাইনে বা বেতনের কর্মচারী! এখন আমায় বলুন, এতে সেই ব্যক্তির সম্মান, মর্যাদা কমল না বাড়ল?? অবশ্যই তার মর্যাদা একেবারে মাটির সাথে মিশে গেল! তাহলে আমাদের মিশনারি ভাই-বোনেরা যখন প্রচার করেন যে, ঈশ্বর মানুষ রূপে যীশুর আকারে পৃথিবীতে নেমে এসেছেন অন্যের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিতে, তখন এটা দিয়ে তারা কি বোঝাচ্ছে না যে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা যিনি সমস্ত বিশ্বজগতের পরিচালক, তাঁর সর্বোচ্চ সম্মানের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে, নিম্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক মানুষরূপী সৃষ্টিতে পরিণত হয়ে পৃথিবীতে নেমে এসে নিজের সর্বোচ্চ সম্মান আর মর্যাদাকে মাটির সাথেই মিশিয়ে দিচ্ছেন??? এটা সেই অফিসের হাই ফাই বসের নিম্ন পর্যায়ের পোশাকে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীর পদে নেমে আসারই মতন নয় কি????
.
.
বরং ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছেন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রচারিত ইসলামিক আকিদায় আল্লাহ এবং ঈসা (আলাইহিস সালাম) পৃথক অস্তিত্ব। আল্লাহ হলেন সৃষ্টিকর্তা, ঈসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর সৃষ্টি।
.
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
.
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন, অতঃপর বললেন হও, ফলতঃ তাতেই হয়ে গেল।”[১৫]
.
ইসলামিক আকিদায় কোনো মুসলিমই মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে না, যদি না সে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে নবী হিসেবে বিশ্বাস করে। আর তাইতো আমরা ঈসা নবীর নাম বললে তারপর “আলাইহিস সালাম” যোগ করে এটা বোঝাই যে, আমরা তাঁকে আল্লাহর নবী হিসেবে বিশ্বাস করি। আমরা ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি, ইসলামিক আকিদা অনুযায়ী তাঁর শিক্ষাকে মেনে চলি। কিন্তু আমরা তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র, ঈশ্বরের অবতার বলে দাবি করে অপমান করি না। আর তাই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে প্রকৃত অর্থে মহিমান্বিত করেছেন।
.
إِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ ٱسْمُهُ ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِ وَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ
.
“যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বাণীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত।”[১৬]
.
শুধু তাই নয়, বাইবেলের বর্ণনায় যেখানে যীশু নিজের মা-কে “মা” বলে পর্যন্ত ডাকে নি, সেখানে কোরআন, ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর মা-কে সমস্ত দুনিয়ার নারীদের মধ্যে উঁচু মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে!
.
وَإِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰكِ وَطَهَّرَكِ وَٱصْطَفَىٰكِ عَلَىٰ نِسَآءِ ٱلْعَٰلَمِينَ
.
“আর যখন ফেরেশতা বলল, “হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন।””[১৭]
.
কিন্তু এত কিছুর পরও আমরা ভাল করেই জানি যে, মিশনারিরা এরপরও সত্যের আত্মা বলতে সেই পবিত্র আত্মারই গান গেয়ে যাবে!
.
مَّا ٱلْمَسِيحُ ٱبْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ وَأُمُّهُۥ صِدِّيقَةٌۖ كَانَا يَأْكُلَانِ ٱلطَّعَامَۗ ٱنظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ ٱلْءَايَٰتِ ثُمَّ ٱنظُرْ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
.
“মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা রাসূল ছাড়া কিছুই ছিল না। তার পূর্বে আরো রাসূল অতীত হয়ে গেছে, তার মা ছিল সত্যপন্থী মহিলা, তারা উভয়েই খাবার খেত; লক্ষ্য কর তাদের কাছে (সত্যের) নিদর্শনসমূহ কেমন সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছি আর এটাও লক্ষ্য কর যে, কীভাবে তারা (সত্য হতে) বিপরীত দিকে চলে যাচ্ছে।”[১৮]
.
.
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] বাংলা বাইবেল, যোহন, ১৬:১২-১৩;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-১৬/
[২] বাংলা বাইবেল, যোহন, ১৬:৭;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-১৬/
[৩] আল-কোরআন, ২:৯৭
[৪] বাংলা বাইবেল, শিষ্যচরিত, ২:২২;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/শিষ্যচরিত-০২/
[৫] বাংলা বাইবেল, যোহন, ১৪:১৬-১৭;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-১৪/
[৬] বাংলা বাইবেল, যোহন, ১০:২৮;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-১০/
[৭] বাংলা বাইবেল, এজেকিয়েল, ৩৭:২৫;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/এজেকিয়েল-৩৭/
[৮] বাংলা বাইবেল, যোহন, ৫:৩০;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-০৫/
[৯] আল-কোরআন, ২:২৮৫
[১০] The KJV Bible, John, 14:16-17;
source – https://biblehub.com/kjv/john/14.htm
[১১] আল-কোরআন, ২:১৭১
[১২] বাংলা বাইবেল, যোহন, ৫:৩০;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-০৫/
[১৩] আল-কোরআন, ২:৬২
[১৪] বাংলা বাইবেল, যোহন, ১৬:১২-১৪;
source – https://www.ebanglalibrary.com/banglabible/যোহন-১৬/
[১৫] আল-কোরআন, ৩:৫৯
[১৬] আল-কোরআন, ৩:৪৫
[১৭] আল-কোরআন, ৩:৪২
[১৮] আল-কোরআন, ৫:৭৫

Post a Comment

0 Comments