প্রশ্নঃ কোরবানির জন্য কাকে নেওয়া হয়েছিল ইসাহাক আঃ না ইসমাইল আঃ


প্রশ্নঃ কোরবানির জন্য কাকে নেওয়া হয়েছিল ইসাহাক আঃ না ইসমাইল আঃ 
🖋Author:- Nazmul Hasan

উত্তরঃ

ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে ঘটনাটি যেভাবে আছে

[ঈশ্বর বললেন] “আমি দাসীর ছেলেটিকেও এক মহা জাতিতে পরিণত করব কারণ সে তোমার বংশধর।” পরদিন সকালে আব্রাহাম[ইব্রাহিম(আ:)] কিছু খাবার এবং চামড়ার থলেতে পানি নিলেন এবং হাগারকে(বিবি হাযেরা) দিলেন। তিনি বাচ্চাটিসহ সেগুলো তার কাঁধে তুলে দিলেন এবং তাকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি[হাগার/বিবি হাযেরা] চলে গেলেন এবং বেরশেবার মরুভূমিতে ঘুরতে লাগলেন। চামড়ার থলের পানি যখন শেষ হয়ে গেল, তিনি বাচ্চাটিকে ঝোঁপের নিচে রাখলেন। তিনি উঠে গেলেন এবং কাছেই তীর ছোড়ার দূরত্বে গিয়ে বসে পড়লেন। কারণ তিনি ভাবছিলেন, “আমি বাচ্চাটার মরণ দেখতে পারব না।” তিনি কাছে বসে ছিলেন এবং বাচ্চাটি কাঁদতে শুরু করল। ঈশ্বর ছেলেটির কান্না শুনলেন। ঈশ্বরের স্বর্গদূত স্বর্গ থেকে হাগারকে আহ্বান করলেন, “কী হয়েছে হাগার? ভয় পেয়ো না। ছেলেটি যে স্থানে শুয়ে আছে ঈশ্বর সেখান থেকে ওর কান্না শুনেছেন। ছেলেটিকে তুলে নাও এবং ধরে রাখো, কারণ আমি তাকে এক মহান জাতিতে পরিনত করব।”

অতঃপর ঈশ্বর তাঁর চোখ খুলে দিলেন এবং তিনি পানির এক কূপ [জমজম কূপ] দেখতে পেলেন। তিনি সেদিকে গেলেন, চামড়ার থলে পানি দিয়ে ভর্তি করলেন এবং ছেলেটিকে পানি খাওয়ালেন।
আদিপুস্তক 21:13.19

কিন্তু এখানে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আদিপুস্তক গ্রন্থের বর্ণনায় একটা বড়সড় সমস্যা আছে। আদিপুস্তকের 21 নং অধ্যায়ে পরিষ্কার বলা হচ্ছে যে ইসমাঈল (আ.) কে মরুভূমিতে রেখে আসার সময়ে তিনি এক ছোট শিশু ছিলেন। 

কিন্ত আদিপুস্তক 21:5-11] বলা হচ্ছে ইসমাঈল (আ:) কে নির্বাসন দেবার কারণ ছিল তিনি ইসহাক (আ.) কে ব্যাঙ্গ করছিলেন! এ কী করে সম্ভব, যে ছেলে একটা কাউকে ব্যাঙ্গ করার মত বড়, এক অধ্যায় পরেই সেই ছেলেটি একটি দুধের শিশুতে পরিনত হয় যে পানির জন্য কাঁদে?? যাকে তাঁর মা তুলতে পারেন?

“ইসহাকের যখন জন্ম হয়, তখন আব্রাহামের[ইব্রাহিম (আ:)] বয়স 100 বছর। সারা বললেন, “ঈশ্বর আমার মুখে হাসি ফিরিয়ে দিলেন। আর যে এ খবর শুনবে, সেও হাসবে।” তিনি আরো বললেন, “আব্রাহামকে কেই বা বলতে পেরেছিল যে সারা একসময় বাচ্চা লালনপালন করবে? তারপরেও আমি বৃদ্ধা বয়সে তাঁকে একটা সন্তান এনে দিলাম।” বাচ্চাটি বড় হল এবং দুধ খাওয়া ছাড়ল। আর যেদিন ইসহাক দুধ খাওয়া ছাড়ল, সেদিন আব্রাহাম এক বিশাল ভোজের আয়োজন করলেন। কিন্তু সারা লক্ষ্য করলেন যে, আব্রাহামের মিশরীয় দাসীর ছেলেটি[ইসমাঈল (আ.)] ব্যাঙ্গ করছিলো। সারা আব্রাহামকে বললেন, “ঐ দাসী আর তার ছেলেটাকে বের করে দাও। কারণ দাসীর ছেলে আমার ছেলে ইসহাকের উত্তরাধিকারের অংশীদার হতে পারে না। 
আদিপুস্তক 21.5-10

বাইবেলের বর্ণনামতে ইসমাঈল (আ.) ছিলেন ছোট ভাই ইসহাক (আ.) এর চেয়ে ১৪ বছরের বড়। 

আদিপুস্তক 16:16 এবং 21.5

ইসহাক (আ.)এর দুধ ছাড়াতে ২ বছর লাগার কথা। সেই হিসাবে ইসহাক(আ.) এর দুধ ছাড়ানোর ভোজসভার সময়ে ইসমাঈল(আ:) এর বয়স ছিল 14+2=16 বছর। বাইবেলের বর্ণনামতে, ১৬ বছরের ছেলেটিকে ব্যাঙ্গ করার জন্য তার মা-সহ ইব্রাহিম(আ.) বের করে দিয়েছিলেন। অথচ বের করে দেবার পরেই আদিপুস্তক(Genesis) 21:13-21 এর বর্ণনায় ইসমাঈল(আ.) দুধের শিশু হয়ে গেলেন!!! ওয়াটে বাইবেল 

বাইবেলের এই বর্ণনা থেকে কি বোঝতে পারলেন প্রিয় পাঠক?
এর অর্থ হচ্ছে—ইসমাঈল(আ:) কর্তৃক ব্যাঙ্গ করার ঘটনাটি একটি বানোয়াট ও মিথ্যা ঘটনা যা বাইবেলের লেখকরা নিজেদের অজান্তেই করেছে

রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর হাদিস এবং আদিপুস্তক(Genesis) ২১:১৩-২১ উভয়ের বর্ণনা অনুযায়ী বের করে দেবার সময়ে ইসমাঈল(আ.) ছিলেন শিশু। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী—ইসহাক(আ.) এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়ারও আগে ইসমাঈল(আ:)কে কুরবানী দিতে নিয়ে যাবার ঘটনা ঘটেছিল। 
কুরআন 37: 99-112

এর মানে ইসমাঈল (আ.)কে মরুভূমিতে রেখে আসার ঘটনাটাও ঘটেছিল ইসহাক (আ:) এর জন্মেরও বহু আগে। কাজেই ইসমাঈল (আ:) কর্তৃক ইসহাক (আ:) এর ভোজসভায় ব্যাঙ্গ করার ঘটনা ঘটবার প্রশ্নই আসে না। অতএব কুরবানীর জন্য একমাত্র বড় ছেলে ইসমাঈল (আ:) কেই বাছাই করা সম্ভব।

বাইবেলের বর্ণনায়ও দেখা যায় যে ইব্রাহিম(আ:)কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাঁর একমাত্র পুত্রকে কুরবানী দিতে নিয়ে যাবার জন্য, অথচ নামের জায়গায় ইসহাক(আ.) এর নাম 

“এই সমস্ত কিছুর পরে ঈশ্বর ঠিক করলেন য়ে তিনি অব্রাহামের বিশ্বাস পরীক্ষা করবেন। তাই ঈশ্বর ডাকলেন, “অব্রাহাম [ইব্রাহিম(আ:)]!” এবং অব্রাহাম সাড়া দিলেন, “বলুন!” তখন ঈশ্বর বললেন, “তোমার একমাত্র পুত্র ইসহাক যাকে তুমি ভালবাসো, তাকে মোরিয়া অঞ্চলে নিয়ে যাও। সেখানে পর্বতগুলির মধ্যে একটির ওপরে তাকে আমার উদ্দেশ্যে বলি দাও। আমি তোমাকে বলব কোন পর্বতের ওপর তুমি তাকে বলি দেবে।

দূত বললেন, “তোমার পুত্রকে হত্যা কোরো না, তাকে কোন রকম আঘাত দিও না। এখন আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি ঈশ্বরকে ভক্তি করো এবং তাঁর আজ্ঞা পালন করো। প্রভুর জন্যে তুমি তোমার একমাত্র পুত্রকে পর্যন্ত বলি দিতে প্রস্তুত।”

 “আমার জন্যে তুমি তোমার একমাত্র পুত্রকেও বলি দিতে প্রস্তুত ছিলে। আমার জন্যে তুমি এত বড় কাজ করেছ বলে আমি তোমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি; আমি, প্রভু নিজেরই দিব্য করে প্রতিশ্রুতি করছি ,””

আদিপুস্তক 22:1-2, 12,16

ইসহাক(আ:) কখনোই ইব্রাহিম(আ:) এর একমাত্র পুত্র ছিলেন না কারণ তিনি ছিলেন তাঁর ২য় ছেলে। কেবলমাত্র বড় ছেলে ইসমাঈল(আ.) এরই ইব্রাহিম(আ.) এর “একমাত্র পুত্র” হওয়া সম্ভব। ইসহাক(আ:) এর জন্মের আগ পর্যন্ত ১৪ বছর ধরে তিনিই ছিলেন ইব্রাহিম(আ.) এর “একমাত্র পুত্র”।

প্রকৃতপক্ষে ঝামেলাটা আছে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের গ্রন্থে। বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament) অংশের লেখক হচ্ছে ইহুদিরা। তারা একে (Tanakh) বলে। ইহুদিরা এই ঘটনায় ইসমাঈল(আ:) ও ইসহাক(আ:) এর নাম অদলবদল করতে গিয়ে জামেলাটা বাঁধিয়েছে। যা ট্যাবলেট আকারে এখন কার মডারেটর খ্রিস্টানরাও সেবন করতেছে ইহুদিরা চেয়েছিল কুরবানীর ঘটনায় ইসমাঈল(আ:) এর নাম বদলে ইসহাক(আ:) এর নাম বসাতে, কারণ ইসহাক(আ:) তাদের পূর্বপুরুষ। 

এই কুকাজ এবং গোঁজামিল দিতে  গিয়ে তাদের কিতাবে এই হাস্যকর বৈপরিত্য বা স্ববিরোধিতা দেখা দিয়েছে।

Post a Comment

0 Comments