মুহাম্মদ আলী সিরিজ - ১
বিষয়:- আল্লাহ কেনো অভিশাপ দিলেন আবু লাহাবকে? সূরা লাহাব কি অনর্থক সূরা নয়?
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________
শান্তশিষ্ট ছেলেটি হলো মুহাম্মদ আলী। সে অযথা কথা বলে না। আর এই জন্যই তার পরিবারের সকলেই তাকে হাসির ছলে হাবা বলে ডাকে। তবে মুহাম্মদ আলীর চাচাত ভাই হলো সুরুজ মিয়া যার আরেক নাম সুরুইজ্জা আর সুরুইজ্জা খুবি বাচাল সে মনে করে বার বার প্রশ্ন করলেই তাকে সকলে জ্ঞানী মনে করবে। কিন্তু ফলাফল এর বিপরীত!
সে যাইহোক, আগামীকাল মুহাম্মদ আলীর পরিক্ষা আছে। সুতরাং মুহাম্মদ আলী খেয়ে না খেয়ে পড়তে শুরু করেছে।
এমন সময় মুহাম্মদ আলীর ছোট ভাইকে হুজুর কুরআন পড়াতে এসেছে। অন্য একটি রুমে তার ছোট ভাই হুজুরের সাথে কুরআন শিখছে।
এমন সময় দরজার মধ্যে কে যেনো কড়া নাড়ছে। দরজা খুলতেই দেখলো সুরুজ। সুরুজ সোজা মুহাম্মদ আলীর রুমে গেলো গিয়ে কফি খেতে খেতে বলা শুরু করলো,,,
সুরুইজ্জা:- কিরে আলী তোর খবর কি?
মুহাম্মদ আলী:- আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর?
[ সুরজ আর মুহাম্মদ আলী দুজনেই সমান বয়সী ]
সুরুইজ্জা:- এই তো ভালোই।
[ এভাবে অনেকসময় কথাবার্তা হলো সুরুজ আর মুহাম্মদ আলীর মধ্যে, এমন সময় সূরা লাহাব পড়ার আওয়াজ আসলো ]
সুরুইজ্জা:- কে রে কুরআন পড়ছে?
মুহাম্মদ আলী:- এই তো আমার ছোট ভাই।
সুরুইজ্জা:- আচ্ছা বল তো সে কোন সূরা পড়ছে?
[ এর জন্যই সকলে সুরুজরে বাচাল বলে। কারণ সে জানা সত্ত্বেও বার বার অযথা প্রশ্ন করে ]
মুহাম্মদ আলী:- এটি সূরা লাহাব।
সুরুইজ্জা:- প্রথম আয়াতটা একটু অর্থ সহ বল তো। তুই তো ধর্মগ্রন্থ নিয়ে ডিগ্রিধারী হা হা হা।
মুহাম্মদ আলী:- আল্লাহ বলেন,,
[১১১:১] আল লাহাব
تَبَّت يَدا أَبي لَهَبٍ وَتَبَّ
◾ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক।
সুরুইজ্জা:- আচ্ছা, তুই আমাকে বল তোদের আল্লাহ তো শুনেছি ভালো। খুবি দয়ালু পরম করুণাময়। তাহলে সে কেনো অভিশাপ দিবে?
মুহাম্মদ আলী:- হুম, আল্লাহ দয়ালু। এর মানে এই নয় সকল অপরাধকেই তিনি মাফ করে দিবেন। আবু লাহাবের অতিরিক্ত খারাপ কর্মের জন্যই আল্লাহ তার উপর লানত দিয়েছেন।
সুরুইজ্জা:- কুকুর কামড়ে দিলে তুইও কি কুকুরকে কামড় দিবি?
মুহাম্মদ আলী:- না কখনোই নয়। তবে লাথি দিয়ে দূরে সরিয়ে দিব।
সুরুইজ্জা:- মানে?
মুহাম্মদ আলী:- তোর কথা কি আমি শুধু কামড় খেয়েই যাবো?
সুরুইজ্জা:- ইয়ে মানে না। আটকাতে তো হবে।
মুহাম্মদ আলী:- ঠিক বলেছিস। সব জায়গায় এই যুক্তি খাটে না।
সুরুইজ্জা:- কিভাবে?
মুহাম্মদ আলী:- যেমন মনে করো তুমি একজন লোককে হত্যা করেছো এবার তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে মৃত্যুদণ্ড। এমন সময় যদি তোমার বাবা এসে বলে "জর্জ সাহেব, কুকুর কামড় দিলে কি আপনিও কুকুরকে কামড় দিবেন? হত্যা করেছে বলে কি তাকেও হত্যা করবেন!"
এবার বলো এই বাবার যুক্তিটা কতটুকু যৌক্তিক!!
সুরুইজ্জা:- ইয়ে মানে, বাবার যুক্তিটা পুরোপুরি কু-যুক্তি।
মুহাম্মদ আলী:- Right, ঠিক ধরেছো। ঠিক একই ভাবে কুকুরের দেওয়া যে যুক্তিটা তুমি দিলে সেটা আবু লাহাবের প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি একটি আষাঢ়ে গল্প।
সুরুইজ্জা:- আচ্ছা তাহলে আমায় বল। আবু লাহাব ও তার স্ত্রী কি এমন অপরাধ করেছে!?
মুহাম্মদ আলী:- মুহাম্মদ (সাঃ) শুধু কুরাইসদের দাওয়াত দিয়েছে যার জন্য অভিশাপ দিতেই থাকতো আবু লাহাব।
সুরুইজ্জা:- হুম।
মুহাম্মদ আলী:- সে ছিল মুহাম্মদ (সাঃ) এর সবথেকে বড় নিকৃষ্টতম শত্রু।সব সময় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে আবু লাহাব কষ্ট দিত ও ক্ষতি করার জন্য সচেষ্ট থাকতো।যখন নবী মুহাম্মদ (স:) মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতো তখন অনেকেই জড়ো হতো।তখন আবু লাহাব নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলত বে-দ্বীন - মিথ্যাবদী। [১]
এবার তুমি আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দেও।
সুরুইজ্জা:- কি প্রশ্ন।
মুহাম্মদ আলী:- মনে করো, তুমি সকলকে সত্য কথার দিকে ডাকছো। আর আমি তোমায় মিথ্যাবাদী বলে পুরো জায়গায় প্রচার করেছি। তোমায় যথাসম্ভব কষ্ট দিয়েছি। তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করি লেজে গুবরে হয়ে। তখন তুমি কি করবে?
সুরুইজ্জা:- তাকে ধরে পুলিশে দিবো। বা ধরে ধুলাই দিব।
মুহাম্মদ আলী:- তোমার মানবতা কি খতম? তোমার মনে দয়া নেই? তুমি তাকে পুলিশে দিবে আবার বলছো ধুলাই দিবে। দয়া নেই?
সুরুইজ্জা:- যে সব সময় আমার নামে মিথ্যা রটাবে। আবার আমার ক্ষতি করবে তাকে তো আর মাফ করা যায় না।
মুহাম্মদ আলী:- তাহলে বুঝে নেও কেনো আল্লাহ লানত দিয়েছেন। শুধু এতেই শেষ নয় তার স্ত্রীও আবু লাহাবকে এসব করতে সাহায্য করতো। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে ব্যাঙ্গ করতো এবং দ্বীন প্রচারে বাঁধা দিতো মানুষকে ভাগিয়ে দিতো।নবীকে বলত লেজ কাঁটা নির্বংশ। [২] (নাঊজুবিল্লাহ)
সুরুইজ্জা:- (নিশ্চুপ)
মুহাম্মদ আলী:- আচ্ছা বলো তো কোন হিন্দু যদি তার ধর্ম প্রচার করে তখন আমি যদি ধর্ম প্রচারে বাঁধা দেই। তাহলে সেটা কি ভালো হবে নাকি খারাপ হবে??
সুরুইজ্জা:- চরম খারাপ হবে। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে সে নিজ ধর্ম প্রচার করবে। এতে বাঁধা দেওয়া একটা অপরাধ।
মুহাম্মদ আলী:- হুম ঠিক বলেছো। আর এই অপরাধটিও করেছে আবু লাহাব। সে নবীকে ইসলাম প্রচারে বাঁধা প্রধান করতো। তাহলে কি এটাও আবু লাহাবের অপরাধ নয়?
সুরুইজ্জা:- (নিশ্চুপ)
মুহাম্মদ আলী:- তার স্ত্রী কি করতো জানিস? তার স্ত্রী নবীর যাতায়াতের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো যেনো নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কষ্ট পান। এমন কোন সূরা লাহাব নাজিল করার পরে আবু লাহাবের স্ত্রী নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। [৩]
সুরুইজ্জা:- (হতাশ ও নিশ্চুপ)
মুহাম্মদ আলী:- এবার আমায় বলো সুরুজ। কেউ যদি,,,
১) ধর্ম প্রচারে বাঁধা দেয়।
২) গালাগালি করে মিথ্যা অপবাদ দেয়।
৩) চলাচলের রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে দেয়।
৪) শত্রুতা করে এবং কষ্ট দেয়।
৫) হত্যা করারো চেষ্টা করে।
তখন তুমি তাকে অপরাধী বলবে না? শাস্তির ব্যবস্থা করবে না?
সুরুইজ্জা:- ইয়ে মানে..
[ এমন সময় সুরুজে কানে কে জেনো ধরেছে। তাকিয়ে দেখি সুরুজে বাবা বাবুল অর্থাৎ আমার চাচা। চাচা সুরুজের কান ধরে বলল ]
বাবুল চাচা:- কিরে সুরুজ সেদিন না আমার সাথে অনেক যুক্তি দিয়েছিলি। এখন তোর মূখে তালা কেনো?
মুহাম্মদ আলী:- চাচা সুরুজকে ছেড়ে দিন। বেচারা এখনো এতো জানে না তাই এমন কথাবার্তা বলে। আমি তাকে শুধরে দিব কোন চিন্তা করবেন না।
বাবুল চাচা:- আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি শুনি এবার।
মুহাম্মদ আলী:- যাইহোক,, এবার বলো সুরুজ এসব কি অপরাধ করে নি আবু লাহাব ও তার স্ত্রী?
সুরুইজ্জা:- (হতাশ হয়ে) ইয়ে মানে হ্যাঁ।
মুহাম্মদ আলী:- এবার আরেকটি কথা বলি। ধরো অর্ক নামের একটা ব্যাবসায়ী ছিলো। আর সে সব সময় ওজনে কম দিতো। তখন আরেকজন লোক বলল "তুমি মানুষদের ওজনে কম দিয়ে ঠকাচ্ছো কেনো? তোমার ধ্বংস নিশ্চিত। তুমি কখনোই সফলতা পাবে না। আখিরাতেও তোমার শাস্তি হবে"
সুরুইজ্জা:- তো?
মুহাম্মদ আলী:- এবার তুমি বলোতো যে লোকটি অসাধু ব্যবসায়ীকে এমন কথা বলেছে তা ভুল নাকি সঠিক?
সুরুইজ্জা:- একদম সঠিক। ওজনে কম দেয় তার তো ধ্বংসই উচিত। তার ধ্বংস হোক সেটাই সকলে বলবে।
মুহাম্মদ আলী:- ঠিক একই কথা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর লাগামহীন অপকর্মের জন্যই আল্লাহ তাদের ধ্বংসের কথা বলেছে। এবং তারা ধ্বংস হয়েছে তাদের ধন সম্পদও তাদের কাজে আসে নি।
তাহলে কি এটা বলা ভুল হয়েছে? লানত দেওয়া ভুল হয়েছে? সামান্য ওজনে কম দিলে লানত দেওয়া শাস্তি দেওয়া যায় তাহলে আবু লাহাব ও তার স্ত্রী তো বড় বড় অপকর্ম করেছে। তাহলে সূরা লাহাব কি আদৌ কোন খারাপ কথা বলছে???
সুরুইজ্জা:- (একদম নিশ্চুপ)
[ বাবুল চাচা সব শুনছিলো। বাবুল চাচা বলতে লাগলো ]
বাবুল চাচা:- আসলেই মুহাম্মদ আলী। তোমার প্রশংসা না করে পারলাম না। আমার অজ্ঞ ছেলেটাকে তুমি একটু হলেও বুঝাতে পেরেছো। সে নাস্তিকদের ব্লগ পড়ে আর কথায় কথায় প্রশ্ন করে নিজেকে জ্ঞানী বানানোর অপচেষ্টা করে। আজ তা বুঝলাম।
[ বাবুল চাচা কথাবার্তা বলে চলে গেলেন ]
সুরুইজ্জা:- আচ্ছা একটা কথা বলি মুহাম্মদ আলী?
মুহাম্মদ আলী:- হুম বলো।
সুরুইজ্জা:- সবই বুঝলাম। তবে একটা কথা বলতে চাই এই সূরা তো সেই বিষয়ের উপরে কথা তাহলে কেনো এত বছর বাদেও আমরা এটি নামাজে পড়ি। এই সূরা তো অপ্রয়োজনীয়। কি কাজে দেয় এই সূরা?
মুহাম্মদ আলী:- সূরা লাহাব কখনোই অযথা নয় বরং আমরা এই সূরা থেকে অনেক অনেক কিছু শিখি।
এই সূরা থেকে আমরা যা শিখি!
১) সতর্কবানী,,,
মৃত্যু আমাদের সকলের সাথে রয়েছে একদিন আমরা চলে যাবো সেদিন আমাদের আমল ছাড়া কিছুই কাজে আসবে না। সন্তান কাজে আসবে না স্ত্রী কাজে আসবে না ধন দৌলত কাজে আসবে না। তাই সাবধান, সময় থাকতে আল্লাহর পথে আসো।
২) যেমন কর্ম তেমন ফল,,,
আপনি খারাপ কাজ করছেন ভাবছেন কোন বিচার হবে না তাহলে যেনে রাখো আল্লাহর বিচার খুবি কঠিন। যা করবে তার ফল পাবে।
৩) যে খারাপ করবে এবং যে খারাপ কাজে সাহায্য করবে সকলেই শাস্তি পাবে,,,
আপনি কারো খারাপ কাজে সাহায্য করছেন তাহলে যেনে রাখুন আপনিও শাস্তি ভোগ করবেন।
তাই এই সূরা অযথা নয় বরং সর্ব সময়ের জন্য সতর্ক বার্তা। কারণ কুরআন হলো,,
বিশ্বাসীদের জন্য সঠিক পথ
অবিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শন
মিথ্যাবাদীদের জন্য সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী
অসহায়দের জন্য আশার আলো
অন্ধকারের জন্য আলোর মশাল
পাপীদের জন্য সতর্কবাণী
মুমিন দের জন্য সফলতার বাণী
আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো সুরুইজ্জা থুক্কু সুরুজ।
সুরুইজ্জা:- আবু লাহাবের শেষ পরিণতি তাহলে কি হয়েছে?
মুহাম্মদ আলী:- আবু লাহাবের মৃত্যু হয় (Small Pox) রোগে। তার পরে তারা ছেলেরা পাথর মেরে মেরে গর্তে ঢুকিয়েছে সংক্রামণের ভয়ে। যে লাহাব নবীকে পাথর ছুঁড়ে মারতে উদ্যত হয়েছিল। সেই সন্তানরাই তাকে পাথর মেরে গর্তে নিক্ষেপ করে সকলেই ছেড়ে চলে যায়। [৩]
সুরুইজ্জা:- আচ্ছা আমি আসি তাহলে। আসলে তুই খুবি মূর্খ। আমার বন্ধু আরজ আলীর কাছে যদি যাস তাহলে তোর মূখ বন্ধ করে দিবে।
মুহাম্মদ আলী:- তাই নাকি? আচ্ছা তোমার আরজ আলীকে নিয়ে আইসো।
[ সুরুজ চলে গেলো। মুহাম্মদ আলী তার পড়া চালিয়ে যেতো থাকলো ]
_________________
তথ্যসূত্র
[১]সংক্ষিপ্তভাবে তাফসীর ইবনে কাসীর - সূরা লাহাব
[২] সীরাত (সাঃ) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব পৃষ্ঠা:- ১০১-১০৩
[৩] সীরাত (সাঃ) আসাদুল্লাহ আল-গালিব পৃষ্ঠা:- ১০৩

0 Comments