শরিয়ত কি পালন করা যাবে? না vs হ্যাঁ? পৌল বনাম যীশু? কাকে মানবেন?


🖋Author:- Boniamin Khan
_____________________________________________________________

সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ মুসার শরিয়তপালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। "
(কোরআন ২:৮৩; ৭:১৬৯; এ ছাড়া বিদায় হজের ভাষণ দেখতে পারেন)

নবীগণ বলেছেন: মুসার শরিয়ত [আজ্ঞা বিধান] পালন কর।"(যাত্রাপুস্তক ২০:১২-১৭; এবং দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১; ১৬-২১)

যীশু তথা ঈসা আঃ বলেছেন: মুসার শরিয়ত [ আজ্ঞা সকল ] পূর্ণ করতে এসেছি,তোমরা পালন কর ( মথি ৫:১৭-১৮; ১৯:১৬-১৯ এবং লুক ১৮:২০)।

পৌল বলেছেন: মুসার শরিয়ত বাতিল (ইব্রাণী ৮:৭,১৩)



অনুসারীদের সংখ্যা বাড়াতে ও মানুষদেরকে জাহান্নামী করতে পৌল  ও তাঁর অনুসারীরা শিক্ষা দিয়েছে যে সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও শরিয়ত পালনের কোন মূল্য নেই বরং শুধু যীশু তথা ঈসা আঃ এর ক্রুশবিদ্ধতে মৃত্যু ও পুনরুত্থানে বিশ্বাস করলেই মুক্তি মিলবে (রোমীয় ১০:৯)।যদি কেউ শরিয়ত পালন করে তবে তার জন্য মুক্তির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। "ব্যবস্থা "বা" শরিয়তের " বিরুদ্ধে পৌলের দার্শনিক ও "মারফতি" বক্তব্য অনেক। মন শুদ্ধ হলেই হলো। শরিয়ত তো বিশ্বাস ঠিক করার জন্য;বিশ্বাস ঠিক হলে আর কিছুই লাগে না। শরিয়তই পাপ কর না বলে পাপের কথা মনে করিয়ে দেয়। শরিয়ত তুলে দিলে আর পাপ থাকবে না!!! ইত্যাদি । সাধু পৌলের কয়েকটা বচন শুনুন। 

১)"মুসার শরিয়ত পালন করার জন্য খোদা মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন না বরং ঈসা মসিহের উপর ইমান আনবার জন্যই তা করেন "(গালাতীয় ২/১৬)।
২)খোদা ইমান আনবার জন্যই মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন,শরিয়ত পালন করবার জন্য নয়  "(ইঞ্জিল শরিফ,রোমীয় ৩/২৮),পুনশ্চ রোমীয় ১০/১০)।(অথচ যীশু শরিয়ত পালন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন)
৩)"মসিহের নিকটে পৌছিয়ে দিবার জন্য এই শরিয়তই আমাদের স্কুল মাস্টার (Our Schoolmaster) ,যেন ইমান আনবার মধ্য দিয়ে  আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় (ইঞ্জিল শরিফ,গালাতীয় ৩/২৪)
৪)"কিন্তু পাক-কিতাব সমস্ত মানুষকেই পাপের জন্য  দোষী বলে স্থীর করেছে" ........(ইঞ্জিল শরীফ,গালাতীয় ৩/২২)।
৫)"যারা শরিয়ত পালন করবার উপর নির্ভর করে ,তাদের সকলের উপর এই অভিশাপ রয়েছে।..........ইমানের সাথে শরিয়তের কোন সম্বন্ধ নেই। "শরিয়ত অমান্য করবার দরুন যে অভিশাপ আমাদের উপর ছিল,মসীহ্ সেই অভিশাপ নিজের উপর নিয়ে আমাদের মুক্ত করেছেন।  (ইঞ্জিল শরিফ,গালাতীয় ৩/১১-১৩) ।
৫)শরিয়ত খোদার গজব ডেকে আনে ।(ইঞ্জিল শরীফ,রোমীয় ৪:১৫)
৭)অনন্ত জীবন পাবার জন্য .....আজ্ঞা সকল [মুসা আঃ এর শরিয়ত] পালন করার  কোন প্রয়োজন নেই। ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন লাভ (ইঞ্জিল শরিফ,রোমীয় ৫:২১)
৮)"তোমরা যারা মুসার শরিয়ত পালন করে খোদার গ্রহণযোগ্য হতে চাও  ,তোমরা তো মসিহের নিকট হতে আলাদা হয়ে গিয়েছ,খোদার রহমত থেকে সরে গিয়েছ" (গালাতীয় ৫:৪)
৯)তিনি দাবি করেন যে ,শরিয়তই সকল শত্রুতা ও হানাহানির কারণ এবং যীশু শরিয়ত বিলুপ্ত করতে এসেছিলেন:..."  তিনি তাঁর ক্রুশের উপর মেরে ফেলা দেহের মধ্যে দিয়ে সমস্ত হুকুম নিয়ম শুদ্ধ মুসার শরিয়তের শক্তি বাতিল করেছেন। " তাহলে পৌলের মতে:শুধু মনের বিশ্বাস ও মুখে স্বীকারোক্তি   মুক্তির জন্য যথেষ্ট ,শরিয়ত পালন শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়;উপরোক্ত তা মুক্তির পথে প্রতিবন্ধক "কেননা ব্যবস্থা [শরিয়ত ] দ্বারা পাপের জ্ঞান জন্মে (পবিত্র বাইবেল,রোমীয় ৩/২০)



শরিয়ত সকলকেই পাপের মধ্যে আবদ্ধ করে,শরিয়তই পাপের উৎস,শরিয়ত পালন করে কেউই ধার্মিক হতে পারে না;বরং পাপী ও অভিশপ্ত হয় ।শরিয়ত পালনকারী ঈসা আঃ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত। অর্থাৎ ঈসাসহ সকল নবী ও তাদের অনুসারীরা পাপী,অভিশপ্ত ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত!পাঠক আপনি কি জানেন সাধু পৌল যাকে অভিশাপ,শত্রুতা,গজব,পাপ বলে আখ্যায়িত করলেন সেই শরিয়ত বা বিধিবদ্ধ আজ্ঞাগুলো কি?? মুসা আঃ এর দশ আজ্ঞা (Ten Commandments) নিন্মরুপ:মুসা আঃ বললেন ঈশ্বর এই সকল কথা বললেন:

১)আমার ব্যতিরেকে তোমার অন্য কোন দেবতা না থাকুক [অর্থাৎ আমার সঙ্গে কাউকে শরিক কর না]
২)তুমি কোন মূর্তি নির্মাণ কর না।
৩) তুমি তাদের কাছে প্রণিপাত কর না 
৪)তুমি বিশ্রামদিন স্বরণ করে পবিত্র করো 
৫)তোমার পিতা ও তোমার মাথাকে সমাদর করো 
৬)নর হত্যা কর না 
৭)ব্যভিচার করো না 
৮)চুরি কর না 
৯)তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না ১০)তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীতে কিংবা দাসে কিংবা দাসীতে তার কোন বস্তুতেই লোভ কর না
( বাইবেল,পুরাতন ও নূতন নিয়ম ,১৯৭৩ সাল,যাত্রাপুস্তক  ২০:৩-১৭, দ্বিতীয় বিবরণ  ৫:১,১৬-২১)। পৌলীয় খ্রিস্টধর্মে এগুলো মান্য করা পাপ,গজব,অভিশাপ ও আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত  হওয়ার মূল কারণ!তাহলে অভিশাপ হতে মুক্ত হতে এবং সদাপ্রভু ঈশ্বর মহান আল্লাহর রহমত বেশি বেশি পেতে অবশ্যই শিরক করতে হবে,ব্যভিচার করতে হবে,নর হত্যা করতে হবে,চুরি করতে হবে,পিতা মাথাকে সমাদর করা যাবে না,প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে হবে,প্রতিবেশীর স্ত্রী ও তাঁর সম্পদের উপরে লোভ থাকতেই হবে ।এসকল পাপ যে যত বেশি করবে সে তত বেশি আল্লাহর রহমত বেশি বেশি পাবে।

মুক্তির এ পথের ব্যাখ্যা করে প্রোটেস্ট্যান খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠাতা  মার্টিন লুথার (Martin Luther ,১৪৮২-১৫২৯ খ্রিঃ) বলেন "তোমরা শুধু বিশ্বাস কর।আর সুনিশ্চিতরুপে জেনে রাখো যে ,এতেই তোমাদের মুক্তি লাভ হবে।মুক্তির জন্য কোন উপবাসের কষ্ট করতে হবে না,কোনরুপ সৎকর্ম পালনের চেষ্টা করতে হবে না,সৎ থাকার কষ্ট করতে হবে না,পাপের স্বীকারোক্তি কষ্ট করতে হবে না ।খ্রিস্টের জন্য যেমন সুনিশ্চিত মুক্তি,তোমাদের জন্যও ঠিক তেমনি মুক্তি,যাতে কোনরুপ সন্দেহ নেই। তোমরা পাপ কর।পরিপূর্ণ সাহসিকতার সাথে পাপ কর এবং শুধু বিশ্বাস কর ।শুধু বিশ্বাসই তোমাদেরকে মুক্তি প্রদান করবে যদিও প্রতিদিন তোমরা এক হাজারবার ব্যভিচার  বা হত্যার মতো পাপে লিপ্ত হও ।তোমরা শুধু বিশ্বাস কর। আমি তোমাদেরকে বলছি,শুধু বিশ্বাসই তোমাদের মুক্তি দিবে। "(ক্যাথলিক হেরাল্ড ,ভলিউম ৯,পৃষ্ঠা ২৭৭)।এ জন্যই আমরা দেখি যে মিথ্যা,দুর্নীতি,সুদ,ঘুষ,মদপান,ধর্ষণ,ব্যভিচার ইত্যাদি পাপ খ্রিস্টান চার্চ ও পাদ্রিদের নিয়মিত কর্ম। এমনকি হিটলারের মতো ঠান্ডা মাথায় গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করলেও কোন সমস্যা নেই। হিটলার ও তার সমর্থক সকল পোপ পাদ্রির জন্য যীশু জান্নাতের দরজা খুলে বসে রয়েছেন!(১ যোহন ,২:১-২ দ্রষ্টব্য)


প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ এখন দেখুন ঈসা মসিহের বক্তব্য কেমন হতে পারে?
।ইঞ্জিলের মধ্যে বিদ্যমান ঈসা মসীহের বক্তব্য পৌলের বচনের সাথে সাংঘর্ষিক। শুধু বিশ্বাসেই মুক্তি মিলবে মসীহ্ এটা বলেন নাই।শত বিশ্বাস থাকলেও সামান্যতম শরিয়ত লঙ্ঘন করলেও তার জান্নাত মিলবে না বলে প্রচার করেছেন ।যীশু বলেছেন:-

"মনে করো না আমি তৌরাত ও নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি।আমি সেগুলো বাতিল করতে আসিনি বরং পূর্ণ করতে এসেছি।...মুসার শরিয়তের মধ্যে ছোট একটা হুকুমও  যে কেউ অমান্য করে এবং লোকদের তা অমান্য করতে শিক্ষা দেয় ,তাকে বেহেশতী রাজ্যে সবচেয়ে ছোট বলা হবে কিন্তু যে কেউ শরিয়তের হুকুমগুলো পালন করে ও শিক্ষা দেয় তাকে বেহেশতী রাজ্যে সবচেয়ে বড় বলা হবে।  আমি তোমাদের বলছি,আলেম ও ফরিশীদের মধ্যে ধার্মিকতার চেয়ে তোমাদের যদি বেশি কিছু না থাকে  তবে তোমরা কোনমতেই বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে না। "(ইঞ্জিল শরিফ,মথি ৫:১৭-২০)।
(উপরে দেখা যায়,পৌল মহাশয় মুসার শরিয়ত বাতিল করেছে।কিন্তু যীশু বরং মুসার শরিয়ত বাতিল না করে পালন করতে বলেছে)



এভাবেই ঈসা আঃ বারংবার বলেছেন যে,আজ্ঞা,বিধান বা শরিয়ত পালনই জান্নাতের একমাত্র পথ।ঈসা আঃ বলেছেন-"মুসার শরিয়তের সবচেয়ে বড় হুকুম -প্রভু,যিনি আমাদের খোদা ,তিনি এক, আর তোমার সমস্ত অন্তর প্রাণ,তোমার সমস্ত মন দিয়ে,তোমার প্রভুকে মহব্বত করবে।আর তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত করে মহব্বত করবে।মুসার গোটা শরিয়ত ও এবং নবীদের সমস্ত শিক্ষা [ অর্থাৎ হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদত ] এই দুইটি হুকুমের উপরে নির্ভর করে আছে। (ইঞ্জিল শরিফ,মথি ২২:৩৬-৪০,  মার্ক ১২:২৯-৩১, লুক ১০:২৫-২৮)।
যীশু তথা ঈসা আঃ বলেছেন-"যে কেউ আমার এ সমস্ত কথা শুনে পালন করে ,সে একজন বুদ্ধিমান...।আর যে কেউ আমার এ সমস্ত কথা শুনে পালন করে না সে মূর্খ। (ইঞ্জিল শরিফ,,মথি ৭/২৪,২৬)।
(এখানে দেখা যায় খ্রিস্টানরা সবচেয়ে মূর্খ।কারণ তারা যীশুর সমস্ত কথা শুনলেও পালন করে না। কিন্তু মুখে যীশু যীশু বলে ফ্যানা তুলে ফেলে।)।
 এক ব্যক্তি এসে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলো, -"...অনন্ত  [আখেরী জীবন] জীবন পাইবার জন্য আমি কিরূপ সৎকর্ম করব? তিনি তাকে বললেন:...আপনি যদি অনন্ত [আখেরী জীবন] জীবন পাইতে চান,তবে তাঁর সমস্ত হুকুম পালন করুন। (মথি ১৯/১৬-১৭; লুক  ১৮/১৮-১৯)।

পৌল বললেন:-"কারণ, তুমি যদি 'মুখে' যীশুকে প্রভু বলে স্বীকার কর  এবং 'অন্তরে ' বিশ্বাস কর যে,খোদা তাঁকে মৃতগণের মধ্যে থেকে জীবিত করেছেন ,তবে তুমি পাপ থেকে উদ্ধার পাবে। (রোমীয় ১০:৯)।

এর বিপরীতে ঈসা আঃ এর বক্তব্য শুনুন-"যারা আমাকে 'প্রভু ' প্রভু " বলে ,তারা প্রত্যেকে যে বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে,তা নয়। কিন্তু আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা যে-পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, 'প্রভু ' প্রভু " তোমার নামে আমরা কি ভবিষ্যতের কথা বলিনি?তোমার নামে কি ভূত ছড়ায়নি?তোমার নামে কি অনেক আশ্চর্য কাজ করিনি?তখন আমি তাদের বলব,''আমি তোমাদের চিনি না।দুষ্টের দল। আমার নিকট হতে তোমরা দূর হও (মথি ৭/২১-২৩)।

উপরোল্লিখিত আলোচনা হতে দেখা যায় যে,খ্রিস্টানরা যীশু তথা ঈসা আঃ এর শরিয়ত এর কিছুই পালন করে না,মানে না।যীশু যা বলেছেন তার কিছুই মানে না। যা মানে পৌল কে।

খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা কাকে মানবেন? যীশুকে নাকি পৌলকে?
আমি আপনাদের খারাপ কিছু বলছি না। শুধু প্রমাণ করতে চাইছি যীশুকে আপনারা কেনো অমান্য করে পৌলকে মানছেন? আর বাইবেলে পৌলের অবস্থান রাখছেন?? 



Post a Comment

2 Comments

  1. মাশাল্লাহ 💚
    হে আল্লাহ্ লেখকের জ্ঞান আরও বাড়িয়ে দিন

    ReplyDelete