হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কি দাসী ছিলেন নাকি রাসুল (সা) এর স্ত্রী ছিলেন ?


প্রশ্নঃ হযরত মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কি দাসী ছিলেন নাকি রাসুল (সা) এর স্ত্রী দিলেন ?
লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ এখানে প্রশ্নকর্তা ভুল প্রশ্ন করেছেন । সঠিক প্রশ্ন হবে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কি রাসুলের বাদীপত্নী নাকি স্ত্রী ছিলেন ? - যাইহোক আমরা দুই দিক থেকেই ব্যাখ্যা করব যেহেতু এই বিষয়ে ইখতেলাফ অথবা দুই মত রয়েছে । দুই দিক থেকেই নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা করলেও কোন সমস্যা হবে না কেননা ইসলামের আইন অসনুসারে স্বামী স্ত্রী যেমন বৈধ হালাল সম্পর্ক একইভাবে মুনিব এবং তাঁর অধিকারভুক্ত বাদীপত্নী একই হালাল সম্পর্ক ।
বাদীপত্নীঃ
* দাসী শব্দটি শুনলে অনেকেই চমকে যায় আর ভাবে এটা অমানবিক কারন আমাদের চেহারায় যা ভেসে আসে তা হল অত্যাচার , ধর্ষণ , নিচু স্তরের যাদের কোন অধিকার নাই ইত্যাদি ইত্যাদি । মজার কথা হল এর সাথে ইসলামের বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নাই বরং দাসীদেরকে নিজের স্ত্রীর মত অদিকার দেয়া হয়েছে! হ্যাঁ এটাই ইসলাম । এর জন্য আমরা বলি বাদীপত্নী তাহলে আর বিকৃত অর্থ খেয়ালে আসে না ।
* সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ২০৪৮ = নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ বিবাহের আগে তালাক নাই এবং মালিকানা লাভের আগে দাসমুক্তি নাই । এখানে বিবাহের সাথে তালাক পক্ষান্তরে মালিকানা লাভের সাথে দাসমুক্তি তুলনা করে বুঝানো হয়েছে ইসলামে স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক যেমন বৈধ একই ভাবে মুনিব বাদিপত্নি সম্পর্ক একই ভাবে হালাল, বৈধ , জায়েজ , পবিত্র সম্পর্ক ।
* হাফেজ ইবনে কাসির তাঁর বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে, পৃষ্ঠা ৪৮১ তে পরিষ্কার বলেছেন দাসী বা বাদী বলতে বাদীপত্নী বলা হয় আর আনাস (রা) এর এক হাদিস রয়েছে বুখারিতে সেখানে তিনি বলেছেনঃ রাসুল (সা) এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন । এখানে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) ও রায়হানা (রা) কে স্ত্রীর মধ্যে রেখেছেন । মুলত ইসলামে বিবাহের নিয়ম দুইভাবে স্ত্রী হওয়া যায় । স্বাধীন মহিলার জন্যে মহোরানা ও যুদ্ধবন্দী নারীদের ক্ষেত্রে বাদীপত্নী রুপে । তবে অবশ্যই তাঁর সম্মতি নিতে হবে । উভই বৈধ পবিত্র সম্পর্ক । বিস্তারিত দেখুনঃ কিতাবুল উম্ম , ইমাম শাফিই (রহ) । তাই যেহেতু মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) রাসুলের দায়িত্তে এসেছিলেন তাই ইসলামের আইন অনুযায়ী মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) বাদীপত্নী হয়েছেন তাই এটা বৈধ সম্পর্ক এখানে নাস্তিক ধর্মের আপত্তি অযৌক্তিক ।
* ই,ফাঃ বুখারি শরীফ ৯/৫১ পৃষ্ঠায় , ২০২৩ নং পরিচ্ছেদের নাম দিয়েছেন ইমাম বুখারি (রহ) "বিক্রয়ের কারনে দাসী তালাক হয় না" আবার ২০৫৪ নং পরিচ্ছেদ নাম "দাসীস্ত্রী আজাদ হওয়ার পরে গোলাম স্বামীর সাথে থাকা বা না থাকার ইখতেয়ার" - সাধারণত আমরা জানি "তালাক" এর মাসালা স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার ব্যাপার অথবা সম্পর্ক কিন্তু ইমাম বুখারি (রহ) কউল দ্বারা প্রমাণিত যে "দাসীকেও তালাক দেয়া" আবার ২০৫৪ পরিচ্ছেদ থেকেপ প্রমানিত যে দাসীস্ত্রী বা বাদীপত্নী ।
* আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৪৮৫ পৃষ্ঠাঃ নবী মুহাম্মদ (সা) এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন যাদের সাথে তাঁর দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল ।
* আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৫০২ পৃষ্ঠাঃ রাসুল (সা) বনু কুরাইজার রায়হানাকে বাদীপত্নী রুপে গ্রহণ করলেন । পরে তাঁকে মুক্তি দিয়ে দিলে তিনি তাঁর পরিবার পরিজনের সাথে মিলিত হলেন । এখানে আরও বলা হয়েছে রাসুল (সা) এর দুই জন বাদীপত্নী ছিলেনঃ এদের নাম হল মারিয়া আল কিবতিয়া এবং রায়হানা বিনতে শামউন ।
* যাদুল মায়াদ ১/১৪১ পৃষ্ঠায়ঃ মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) রাসুল (সা) এর বিবাহ করা স্ত্রী ছিলেন না । তিনি ছিলেন নবিজির বাদী যাকে মিশরের বাদশা উপহার হিসেবে প্রেরণ করেন । তিনি খৃষ্টান ছিলেন পরে মুসলিম হন । তাঁর থেকে নবিজি (সা) এর একজন ছেলে সন্তান ইব্রাহীম জন্ম গ্রহণ করেন । তিনি হযরত উমর (রা) এর শাসনামলে ইন্তেকাল করেন ।
= এছাড়া অল্প কিছু কউল আছে যেখানে মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কে দাসী বলে সম্বোধন করা হয়েছে । এতেও আপত্তি নাই কারন আগেই প্রমান করেছি ইসলামের আইনে এটি বৈধ সম্পর্ক ।
স্ত্রী ছিলেনঃ
* সহিহ আল মুস্তাদরাকে হাকিম, হায়দারাবাদ প্রকাশনী, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৬ এখানে আছেঃ ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি রাসুল (সা) মারিয়াকে বিয়ে করেন, আব্দুল্লাহ আল জুহাইরিয়া (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা) শামুন এর কন্যা মারিয়াকে বিয়ে করেন , এই হল সেই মারিয়া যাকে মুকাওকিস গোত্র থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার রাজা রাসুল (সা) কে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল ।
* The Search For Beauty In Islam: A Conference Of The book, (copy right {সংস্করন}) 2006 - BY Rowman And Little Field Publishers, Inc, - BY Khaled Abou Al Fadi, Page: 384 = হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত যে মারিয়া আল কিবতিয়া যিনি ইব্রাহীমের মাতা হিসেবে পরিচিত । মারিয়া (রা) রাসুল (রা) এর অনেক প্রিয় ছিলেন । আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক রাসুল (সা)কে মারিয়াকে উপহার দেন যিনি ছিলেন মুকাওকিস গোত্রের । ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ রাসুল (সা) তাঁকে মুক্ত করে বিয়ে করেছিলেন , তিনি ইব্রাহীম নামক সন্তান জন্ম দেন । নবী (সা) এর ওফাতের কিছু দিন আগেই ইব্রাহীম মারা যান । হাতিব ইবনে আবু বালটা (রা) বলেনঃ এই ঘটনা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ । রাসুল (সা) ওফাতের পরে মারিয়া (রা) মদিনাতে অবস্থান করেন । হযরত ওমর (রা) খেলাফতের সময় তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই থাকেন ।
* Al Tabaqat Al Kubra, Volume = 1 , Page = 260 এখানে আছেঃ ডঃ সাউকি আবু খালিনের গবেষণায় নবী (সা) মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কে বিয়ে করেন যিনি ছিলেন ইব্রাহীমের মাতা এবং হাসান বিন সাবিত (রা) এর শিরিনকে বিয়ে করেছিলেন ।
* Al Fawz Al Kabir Fi Usul Al Tafsir (Islamic books Trust, 2013) - BY Shah waliyullahs, Page - 31, footnote 11 : মারিয়া আল কিবতিয়া একজন কপট মেয়ে ছিলেন । যিনি মিশরের রোমান সরকার আল মুকাউকিসের দ্বারা নবী (সা) কে উপহার পেশ করেছিলেন । রাসুল (সা) তাঁকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের সন্তান ইব্রাহীম জন্ম হয় যে শৈশবে মারা যান ।
* Sirat Un Nabi (The Life Of The Prophet) - Rendered Into English BY M.Tayyib Bakhsh Budayuni, Idarah I Adabiyat I Delli, 2009 Qasimjan St. Delli (India) BY Shaykh Allama Shibli Numani , Valume 2, Page 153 : শায়েখ আল্লামা শিবলি নোমানি (রহ) এর গবেষণায় নবী মুহাম্মদ (সা) কাছে দুজন মেয়েকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয় । একজন ছিলেন মারিয়া আল কিবতিয়া যার সাথে রাসুল (সা) এর বিয়ে হয়েছিল এবং অন্যজন হল শিরিন যার বিয়ে হয়েছিল হাসান বিন সাবেত এর সাথে । ইমাম তাবারি (রহ) বলেন মারিয়া আল কিবতিয়া এবং শিরিন প্রকিত বোন ছিলেন পক্ষান্তরে হাতিব ইবনে আবি বালটার থেকে জানা যায় নবী (সা) এর কাছে যাওয়ার আগেই তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল । এখানে উল্লেখ্য যে তাঁরা কৃতদাস মেয়ে ছিলেন না এবং তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল । অতএব আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত করা উচিৎ যে মারিয়া আল কিবতিয়া নবিজির পরিবারের সাথে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবেই প্রবেশ করেছিলেন বরং কৃতদাসী হিসেবে নয় ।
* R.H.Charles, "Vitae Adac Et Evae" The Apocrypha And Pseudepigrapha C Oxford , 1963 , Volume 2, Page 294 : একজন আইরিশ বাইবেলের পণ্ডিত ও ধর্মতত্তবিদ, রবার্ট হেনরি চার্লস তার গবেষণায় তিনি লিখেছেনঃ মুহাম্মদ এই কপটদের সাথে যোগাযোগ করতে এসেছিলেন এবং তাঁদের কাহিনী শুনেছেন । তিনি মারিয়া নামে এক কপট মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর অনুসারীদের বিবেচনা করে মিশরের কপটদের প্রতি বিশেষভাবে সদয় হতে পরামর্শ দিয়েছেন ।
একটি সিদ্ধান্তঃ
যদিও ইসলামের আইন অনুযায়ী বাদীপত্নীর সাথে সম্পর্ক বৈধ , হালাল , পবিত্র সম্পর্ক পক্ষান্তরে আমরা উপরের তথ্য প্রমান সামনে রেখে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে নবী মুহাম্মদ (সা) মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কে পরে বিয়ে করেছিলেন কারনঃ
সুনানে আন নাসায়ি, হাদিস নং: ৩৫৯৪ এবং ৩৫৯৫ আছেঃ আমর ইবনে হারিস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুল (সা) দিনার দিরহাম, (স্বর্ণ মুদ্রা টাকা পয়সা), দাসদাসি কিছুই রেখে যান নি , একটি সাদা খচ্চর ছাড়া, যাতে তিনি আহরন করতেন আর তাঁর হাতিয়ার রেখে যান । আর তাঁর জমিন যা তিনি আল্লাহ্‌র রাস্তায় দান করে যান ।
এই হাদিসে পরিষ্কার বলা হয়েছে তিনি তাঁর কোন দাস অথবা দাসী রেখে যাননি এর মানে তাঁর সব দাসীদের তিনি মুক্ত করে দেন অথবা মুক্ত করে বিয়ে করে নেন এটাই পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে হাদিস থেকে । আরও প্রমানিত হয় যে তিনি তাঁর বাদীপত্নীকে তথা মারিয়া আল কিবতিয়া (রা) কে মুক্ত করে বিয়ে করেছিলেন ।

Post a Comment

3 Comments

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. __ভাই রাগ করবেন না প্লিজ।একটা কথা বলি।ইসলাম দাসপ্রথার বিরোধীতা কেন করে নি?কেন সেই প্রথা মেনে নেওয়া হয়েছিল? এমন কি রাসুল (স:) কেন এগুলি সমর্থন করেছিলেন।
    হয়ত এখন অনেক ইতিহাস আমাকে বলবেন দাস দের অধিকার সম্পর্কে। সেটা আমি জানি ভাই।এগুলি সম্পর্কে আমি জানি আর অধিকার নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।

    আমার অভিযোগ এটাই যে কেন এগুলি বন্ধ করা হয় নি।
    হয়ত বলবেন ইসলামে দাসমুক্তি দিলে কি হয় আপনি জানেন? আমি জানি ভাই ইসলামে দাসমুক্ত করা ভালো একটা ব্যাপার। কিন্তু কেন এই প্রথায় কোন আপওি পড়ে নি?বা এগুলি বন্ধ বা হারাম করা হয় নি?

    যুদ্ধে জয়ী হলে গনীমতসহ একজন নারীদের কে বানানো হয় দাসী, আর তাদের স্বামীদের বানানো হবে গোলাম।হা ভাই এটাও মেনে নেওয়া যায়,যে একজন নারী কে আপনি দাসী হিসেবে পেয়েছেন তাকে দিয়ে আপনার যাবতীয় কাজ কর্ম করাতে পারবেন। হুম এটাতে আমি অভিযোগ করছি না।কিন্তু সেই নারী কে তার স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে তো আনলেনই এনে(গনীমতস্বরুপ) তাকে দাসী বানিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি কি ব্যাভিচার না?কোন নারী কি চাইবে/রাজি হবে? তার স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে এগুলি করতে।কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই যে শরিয়ত বলছে যে একজন দাস বা দাসী যেই হোক সে যেন তার মালিকের কথা অমান্য না করে।দেখুন এখানে আমি কোন ব্যাক্তির উপর অভিযোগ তুলছি না।তুলছি শরিয়তের উপর।এটাকি জোর জবরদস্তি না?হয়ত বলবেন দাসপ্রথা পূর্বে ছিল। এটা ইসলামের কোন অংশ নয়।হুম ভাই আমিও সেটা জানি। কিন্তু সমস্যা হলো এখানেই এই বর্বর প্রথা কে ইসলাম সেই সময় সমর্থন করেছিল কেন?
    আবার এগুলি মানে দাসপ্রথা কোরান সমর্থন করছে।কেন?ভাই
    যৌক্তিক উওর আশা করছি।আশাকরি আপনি আমার মনের সংশয় দূর করবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার ইমেইল চেক করুন উত্তর দেওয়া হয়েছে।

      Delete