পবিত্র কোরআন কী প্রচলিত বাইবেলের সত্যায়ণকারী ?


🖋Author:- Boniamin Khan
[ ঈষৎ পরিমার্জিত ]
___________________________________________________

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 
সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহর এবং তাঁর প্রিয় হাবিব রাসূল সাঃ ও তাঁর বংশধর এবং সঙ্গী-সাথীদের উপরে দরুদ পাঠ করি।

অনেক খ্রিস্টান দাদা/দিদিরা দাবি করে বলে,পবিত্র কোরআনে পূর্বের কিতাব অর্থাৎ তাওরাত ,যাবুর ও ইঞ্জিল বলতে বাইবেল কে সত্যায়ণকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।কেননা তাওরাত ও ইঞ্জিলের সমন্বয়ে বাইবেল রচিত।যদি কোরআন বাইবেলের সত্যায়ণকারী হয় তাহলে এখন তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন করতে চাই?

■সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলা মহিমান্বিত ঐশীগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে এরশাদ করেছেন সূরা আল ইমরান (آل عمران), আয়াত: ৮১-৮২

وَإِذْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلنَّبِيِّۦنَ لَمَآ ءَاتَيْتُكُم مِّن كِتَٰبٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِۦ وَلَتَنصُرُنَّهُۥ قَالَ ءَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِى قَالُوٓا۟ أَقْرَرْنَا قَالَ فَٱشْهَدُوا۟ وَأَنَا۠ مَعَكُم مِّنَ ٱلشَّٰهِدِينَفَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَٰسِقُونَ

●অর্থঃ আর (স্মরণ কর) আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করলেন যে," আমি কিতাব ও জ্ঞান যা কিছু তোমাদেরকে দান করেছি,অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রাসূল (মুহাম্মদ সাঃ) আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেয়ার জন্য, তখন সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁর সাহায্য করবে। তিনি বললেন, '‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি। তিনি বললেন, "তাহলে এবার সাক্ষী থাক।" আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।অতঃপর যে লোক এই ওয়াদা থেকে ফিরে দাঁড়াবে, সেই হবে সত্যত্যাগী নাফরমান।"

○তাহলে উপরোল্লিখিত আয়াতে বোঝা যাচ্ছে যে, পূর্ববর্তী সকল নবীদের কাছে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল যে,তাঁর আগমন হলে তাঁর প্রতি ইমান আনতে হবে এবং তাঁকে সাহায্য করতে হবে।আর নবী মুহাম্মদ সাঃ ই একমাত্র রাসূল যিনি তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের কিতাবের সত্যায়ণকারী।

■আর এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ অন্যত্রে বলেছেন:সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৪৮

وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
●অর্থঃ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ (কোরআন), যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী.........।"

○এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, কোরআন পূর্ববর্তী কিতাব অর্থাৎ তাওরাত যাবুর ইঞ্জিল কিতাব সমূহের সত্যায়ণকারী এবং ঐসব কিতাবের বিষয়-বস্তুর সত্যায়ণকারী হলো কোরআন। অর্থাৎ ঐ সব কিতাবের মূল বিষয়বস্তু কোরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

■আবার অন্য আরেক জায়গায় মহান আল্লাহ্ সুবহান ওয়া তাআলা এরশাদ করেছেন সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৪৭

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ ءَامِنُوا۟ بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَىٰٓ أَدْبَارِهَآ أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّآ أَصْحَٰبَ ٱلسَّبْتِ وَكَانَ أَمْرُ ٱللَّهِ مَفْعُولًا

●অর্থঃ হে কিতাবীগণ!তোমাদের নিকট যা আছে তাঁর সমর্থন রুপে আমি যা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি,তাতে বিশ্বাস স্থাপন কর ........।"

○এই আয়াতে কোরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ণকারী হলো কোরআন যাতে ঐসব কিতাবের মূল বিষয়বস্তু সংরক্ষণ করা আছে।আর এসব কারণে কোরআন কে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী অর্থাৎ আল-ফুরকান বলা হয়েছে। 

■আল্লাহ্ আবার বলেছেন,সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ১৫৭

ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ

●অর্থঃ সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রাসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।

○এ আয়াতে বলা হয়েছে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে তাওরাত ইঞ্জিলে সরাসরি লেখা দেখতে পায় অর্থাৎ তাওরাত ইঞ্জিলে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে লেখা আছে ।

■আল্লাহ্ ঘোষণা করে সত্য জানিয়ে দিয়েছেন, সূরা আস-সাফ (الصّفّ), আয়াত: ৬

وَإِذْ قَالَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ يَٰبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَمُبَشِّرًۢا بِرَسُولٍ يَأْتِى مِنۢ بَعْدِى ٱسْمُهُۥٓ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَآءَهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ قَالُوا۟ هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ

●অর্থঃ স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ.........।

○এখানে বলা হয়েছে,ঈসা আঃ নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছিলেন যিনি তাঁর পরে আগমন করবেন।আর নবী মুহাম্মদ সাঃ এর আরেক নাম "আহমদ"।

■●পুরো বিষয়টির মূল ব্যাখ্যা:○এই নিরক্ষর নবীর উপর যারা ঈমান আনবে এবং যারা তাঁকে সাহায্য করবে তারাই কৃতকার্য হবে। পবিত্র আল কোরআন (৩:৮১-৮২)-আয়াতে বলা হয়েছে যে,মহান আল্লাহ্ সকল নবী ও রাসূলদের কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নেন যে,যখন -"সেই নবী"-আগমন করেন,তখন পূর্ববর্তী নবীরা তাঁর নবুয়তের প্রতি নিজে বিশ্বাস স্থাপন করবেন এবং অন্যকেও বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়ে যাবেন।সর্বশ্রেষ্ঠ ও চূড়ান্ত সত্য নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে এমন ধরণের অঙ্গীকার পূর্ববর্তী নবীগণের নিকট থেকে নিয়েছিলেন। আল্লামা সুরকী বলেন,"এ আয়াতে-"রাসূল"-বলার মাধ্যমে নবী মুহাম্মদ সাঃ কে নির্দেশ করা হয়েছে।আরেক ভাবেও বোঝা যায় পূর্ববর্তী সকল নবীগণের উপরে নাযিলকৃত কিতাবের সত্যায়ণকারী হলো পবিত্র আল কোরআন।আর এখানে "সত্যায়ণকারী "-মানে হলো পূর্ববর্তী কিতাবে যেসব মূল বাণী ছিল অর্থাৎ আল্লাহ্ এর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা সহ যে সমস্ত মৌলিক বিষয়ক সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যা কিনা পূর্ববর্তী কিতাবেও ছিল।আর পূর্ববর্তী কিতাবের সেসব বিষয়ের সত্যায়ণকারী হলো পবিত্র কোরআন।আর এসব কারণেই কোরআন কে আবার -"সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী অর্থাৎ আল-ফুরকান "-বলা হয়েছে। যাই হোক,এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি,যাঁর থেকে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে অঙ্গীকার নেওয়া হয়নি।আর এমন কোন নবী অতিবাহিত হননি,যিনি নিজের অনুসারীদেরকে মুহাম্মদ সাঃ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে ও সাহায্য-সমর্থন করার নির্দেশ দেননি।সকল নবীগণ-ই মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছিলেন এবং তাঁদের অনুসারীদের নিকট তা বলে গেছেন।

◇◇আর খ্রিস্টানরা বাইবেলের পরিভাষা পরিবর্তন করে দাবি করে বলে যে ,বাইবেল-ই কোরআনে বর্ণিত তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিল অর্থাৎ কোরআন বাইবেলের সত্যায়ণকারী হিসেবে দাবি করে।এখন কথা হলো,কোরআনে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাত,যাবুর,ইঞ্জিলে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে সরাসরি লেখা রয়েছে অর্থাৎ সবাই নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে বলে গেছেন।এখন আমাদের কথা হলো,
আমরা মুসলিমরা আপনাদের বাইবেল মেনে নিতে পারি তবে একটা শর্ত রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে,বাইবেল থেকেই এমন একটা অনুচ্ছেদ দেখান যেখানে সরাসরি নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে বলা হয়েছে অর্থাৎ ভবিষ্যতে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ/আহমদ সাঃ,আল্লাহর নবী/ভাববাদী হয়ে আসবে,যাঁকে দেওয়া হবে সর্বশেষ আসমানী কিতাব অর্থাৎ পবিত্র আল-কোরআন। "যদি এমন কোন কথা প্রমাণ দেখাতে না পারেন তাহলে আপনাদের দাবি মিথ্যা ছাড়া সত্য প্রমাণিত হবে না।আর প্রমাণ করতে না পারলে বোঝা যাবে যে,বাইবেল উক্ত কিতাবগুলোর বিকৃত রুপ।কেননা উক্ত কিতাবগুলোতে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পর্কে সরাসরি লেখা থাকলেও বাইবেলে সরাসরি লেখা নেই।

◇তারা অনুসরণ করে নিরক্ষর নবীর [ মুহাম্মদ সাঃ] ,যাঁর সম্পর্কে তাওরাত ইঞ্জিলে লেখা রয়েছে "কোরআন ৭:১৫৭)

[ 🔖 এবার খ্রিস্টানরা যদি বলে তাদের বাইবেলই তাওরাত-ইঞ্জিল তাহলে তাদেরকে বাইবেল থেকে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে দেখাতে হবে যদি নবী মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ ভাববাদী হয় তাহলে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে মানতে হবে কুরআন মানতে হবে ইসলাম কবুল করতে হবে। আর যদি বাইবেলে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম পায় না তাহলে বাইবেল তাওরাত-ইঞ্জিল নয়। আর মুসলিমদের আর কখনো বলতে পারবে না যে বাইবেল হলো "কিতাবুল মুকাদ্দাস" এবং তাওরাত-ইঞ্জিল। বা ঈসা (আঃ) এর উপর প্রেরিত গ্রন্থ। আর বলতে পারবে না কুরআন বাইবেল মানতে বলে। দিকেই ফেঁসে যাবেন। আল্লাহ সঠিক বুঝ দান করুক আমীন। ]

Post a Comment

2 Comments