লাওহে মাহফুজ নিয়ে ইসলাম বিরোধীদের অভিযোগের জবাব!


🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________

কি আর করব। সারাবিশ্বে মহামারী ছড়িয়েছে। বাহিরে যাওয়া যাবে না। আসলে এটি মানতেই হবে। নাহলে আরো তাড়াতাড়ি মহামারী ছড়িয়ে পড়বে। তবে মন ভালো না। ঘরে বসে কি আর করার। তাই একটি চেয়ার হাতে নিয়ে সুজা ছাদে গেলাম আর বসে রইলাম। এমন সময় দেখলাম "নিলয়" আর "অভিজিৎ" আমাদের বাসার দিকেই আসছে।

নিলয় ছেলেটি হলো হিন্দু আর অভিজিৎ হলো নাস্তিক। তো তারা দুজন আমাদের বাসা থেকে চেয়ার দুটি নিয়ে ছাদে আসলো। আমার সাথে ভালো-মন্দ কথা বার্তা করলো। হঠাৎ নিলয় বলল......

নিলয়:- কিরে সাজিদ তোর ব্লগে একটা পোষ্ট পড়লাম। তুই বলেছিস হিন্দুধর্ম নাকি সর্বপ্রথম ধর্ম নয়।

সাজিদ:- হুম, আমি এটা বলেছিলাম। এবং ঠিক বলেছি। কোন আপত্তি আছে?

[ অভিজিৎ চুপচাপ সব শুনছে ]

নিলয়:- হ্যাঁ আছে আপত্তি। কিসের ভিত্তিতে তুই দাবী করলি হিন্দু ধর্ম সর্বপ্রথম ধর্ম নয়?

সাজিদ:- আচ্ছা বলোতো নিলয় বেদের ভাষা কি?

নিলয়:- সংস্কৃত ভাষা।

সাজিদ:- সংস্কৃত ভাষা ৫০০০ বছরের মতন পুরণো।

নিলয়:- তো?

সাজিদ:- বেদ যদি ৫০০০ বছর পুরণো হয় তাহলে ৫০০০ বছর আগে বেদ কে প্রচার করতো???

নিলয়:- ইয়ে মানে,,,, তুমি কি জানো না বেদ হলো শ্রুতি।

সাজিদ:- হ্যাঁ জানি। কেনো জানবো না। তুমি আমায় বলো যে বেদ ৫০০০ বছর আগে কে প্রচার করতো?? আর কোন ভাষায় করতো?? যেহেতু সংস্কৃত ভাষার বয়সই ৫০০০ বছর তাহলে তো বেদ মাত্র ৫০০০ বছর পুরণো। যদি অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করা হয় তাহলেও সমস্যা কারণ মূল ভাষা থেকে অনুবাদ করলে সেটা সঠিক থাকে না পুরাপুরি।

নিলয়:- ইয়ে মানে.....

সাজিদ:- আর ইসলাম অনুযায়ী যুগে যুগে কিতাব এসেছে। মানুষের পথনির্দেশ দেওয়ার জন্য, আলহামদুলিল্লাহ।

[ নিলয় চুপচাপ। অভিজিৎ চোখ বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ]

অভিজিৎ:- সাজিদ তুই দেখছি ভালোই তর্ক করতে পারিস।

সাজিদ:- তাই নাকি? হা হা

অভিজিৎ:- তবে আমি যদি তোকে কুরআন নিয়ে প্রশ্ন করি তুই এখনি নিলয়ের মতন চুপসে যাবি।

সাজিদ:- ভালোই হবে আমায় চুপ করাতে পারলে খুবি ভালো হবে। এমনিতেই পরিবারের সকলে আমায় বাচাল বলে।

অভিজিৎ:- আচ্ছা,, বেদ নিয়ে যে বললি বেদ পূর্বে অন্য ভাষা থেকে হলে সংস্কৃত অনুবাদে ভুল থাকবেই। এটা আমিও মানি কারণ কোন ভাষার গ্রন্থ থেকে সেটি অন্য ভাষায় অনুবাদ করলে সেটা একশ পারসেন্ট সঠিক হবে না। কিছু গরমিল থাকবেই।

সাজিদ:- হুম। তো?

অভিজিৎ:- আমি একই যুক্তি দিয়ে কুরআন বিকৃত প্রমাণ করতে পারবো।

সাজিদ:- কিভাবে?

অভিজিৎ:- লাওহে মাহফুজ কি বলো আগে।

সাজিদ:- লাওহে মাহফুজ সম্পর্কে,,

ইবনে কাছির বলেনঃ-

লাওহে মাহফুযে তথা সুরক্ষিত ফলকে রয়েছেঃ  অর্থাৎ এটি উচ্চ পরিষদ কর্তৃক সংযোজন, বিয়োজন, বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত। [তাফসিরে ইবনে কাছির ৪/৪৯৭, ৪৯৮]

ইবনুল কাইয়্যেম বলেনঃ-

এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, শয়তানদের পক্ষে কুরআন নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কুরআন যে স্থানে রয়েছে সে স্থানটি শয়তান সেখানে পৌঁছা থেকে সংরক্ষিত। এবং কুরআন নিজেও সংরক্ষিত; কোন শয়তান এতে সংযোজন-বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখে না।  
আল্লাহ্‌ তাআলা কুরআন যে আধারে রয়েছে সে আধার সংরক্ষণ করেছেন এবং কুরআনকেও যাবতীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের শব্দাবলি যেভাবে হেফাযত করেছেন অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থকেও বিকৃতি থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের কল্যাণে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেছেন যারা কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি ছাড়া কুরআনের হরফগুলো মুখস্ত রাখে এবং এমন কিছু ব্যক্তি নিয়োজিত করেছেন যারা কুরআনের অর্থকে বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করে।”
[দেখুন: আত-তিবইয়ান ফি আকসামিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৬২]

কিছু কিছু তাফসিরে এসেছে যে, ‘লাওহে মাহফুয’ হচ্ছে- ইস্রাফিলের কপালে; অথবা সবুজ রঙের মণি দিয়ে তৈরী এক প্রকার সৃষ্টি; কিংবা এ জাতীয় অন্যান্য ব্যাখ্যা।

অভিজিৎ:- লাওহে মাহফুজে কুরআন তো সৃষ্টির পূর্বেই লিপিবদ্ধ ছিলো?? যা ২৩ বছর যাবৎ ধরে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাজিল হয়েছে??

সাজিদ:- হুম..

আল্লাহ বলেন,,,

بَلۡ ہُوَ  قُرۡاٰنٌ  مَّجِیۡدٌ ﴿ۙ۲۱﴾
বরং তা সম্মানিত কুরআন।

فِیۡ  لَوۡحٍ مَّحۡفُوۡظٍ ﴿٪۲۲﴾
সুরক্ষিত ফলকে (লিপিবদ্ধ)।

[ কুরআন ৮৫:২১-২২ ]

হাদিস শরীফে এসেছে,,,

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا مُغِيرَةُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْقُرَشِيُّ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لَمَّا قَضَى اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِي كِتَابِهِ، فَهْوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِي غَلَبَتْ غَضَبِي ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ যখন সৃষ্টির কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাব লাওহে মাহ্‌ফুজে লিখেন, যা আরশের উপর তাঁর নিকট আছে। নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল।
 
[ সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৯৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com ]

অভিজিৎ:- এইতো, খুব ভালো। এবার বলতো সাজিদ আরবী ভাষার বয়স ১৫০০ এর মতন তাই তো?

সাজিদ:- হুম এমনি।

অভিজিৎ:- আরবী ভাষাই যেখানে ১৫০০ বছর আগে তাহলে সেই আরবী ভাষার কুরআন কিভাবে সৃষ্টির শুরুতে লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ছিল। লাওহে মাহফুজের ভাষা কি?? যদি অন্য ভাষা থাকে তাহলে সেই ভাষা থেকে অনুবাদ করা হলে সেটা তো ভুল যুক্ত থাকবে। কোন অনুবাদ মূল টেক্সেটের সাথে একদম মিল থাকে না। এর ব্যাখ্যা কি সাজিদ মশাই???

[ অভিজিৎ এর কথা শুনে নিলয় এর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নিলয় বলল ]

নিলয়:- নেয় ঠেলা সাজিদ। এবার পালানোর পথ বন্ধ।

[ নিলয় অবাক হলো যে সাজিদের চেহারায় এখনো হাসিমুখ রয়েছে ]

সাজিদ:- ওওও তাই নাকি, এই ব্যাপার।

অভিজিৎ:- হুম এই ব্যাপার। এবার জবাব দেও।

সাজিদ:- শুনো অভিজিৎ,, লাওহে মাহফুজের ভাষা কি তা আমরা জানি না এসব আল্লাহই ভালো জানেন। সব কিছুই যে মানুষের জানতে হবে তা আবশ্যক নয়। লাওহে মাহফুজের ভাষা আরবী ছিলো নাকি অন্য ভাষায় তা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। সুতরাং না বুঝে লাওহে মাহফুজকে "আরবী" ভাষা বলাটা অযৌক্তিক।

[ অভিজিৎ চেহারা থেকে হাসিমূখ চলে গেলো ]

অভিজিৎ:- তাই নাকি??? তর কথা মানলেও সমস্যা। আরবী ভাষার জন্মের আগে লাওহে মাহফুজ নিশ্চিত আরবী ভাষা ছিলো না। আর সেটা থাকাও সম্ভব নয় কারণ আরবী ভাষা জন্মই মাত্র কিছু বছর আগে। তাহলে কুরআন যেহেতু লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ছিলো তাহলে কুরআন যদি অন্য ভাষায় থাকে তাহলে সেই ভাষা থেকে অনুবাদ হলে নিশ্চিত গরমিল থাকবে। তাহলে আরবী ভাষা মূল টেক্সট নয়। তাই গরমিল থাকবে।

সাজিদ:- না, এটা তোমার ভুল ধারণা। আমি আগেই বলেছি লাওহে মাহফুজের ভাষা আল্লাহ মালুম। এসব জ্ঞান আমাদের জানা সম্ভব নয় এসব গোপন। এসব আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। আর যদি আমি তর্কের খাতির বলি তাহলেও তুই হেরে যাবি।

অভিজিৎ:- কিভাবে??

সাজিদ:- আমি আবারো বলছি লাওহে মাহফুজের ভাষা কি তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এবার যদি তর্কের খাতিরে মেনে নেই লাওহে মাহফুজের ভাষা অন্য ভাষায় ছিলো তাহলেও কুরআন বিকৃত প্রমাণ হয় না।

অভিজিৎ:- এটা আবার কিভাবে?

সাজিদ:- কারণ হলো লাওহে মাহফুজের যে কোন ভাষা থেকে বা যে কোন গায়েবি ভাষা থেকে যদি কুরআন আরবীতে অনুবাদ হয় তাহলে আরবী ভাষা আর সেই ভাষায় গরমিল থাকবে না। কারণ কি জানিস?

অভিজিৎ:- কি?

সাজিদ:- কারণ হলো লাওহে মাহফুজের থেকে যদি কুরআন আরবীতেই হয়ে থাকে তাহলে সেটার অনুবাদ করেছেন সয়ং আল্লাহ তায়ালা। কোন মানুষ করে নি নবীও করে নি। তাই যেহেতু আল্লাহ নিজেই করেছেন সেহেতু তর্কের খাতিরে সেই অনুবাদে কোন গরমিল থাকবে না। কারণ অনুবাদটি কোন মানুষ করে নি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। তাই তর্কের খাতিরেও তোমার দাবী "ধুপে টিকবেনা"।

[ অভিজিৎ এর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। অভিজিৎ বলল ]

অভিজিৎ:- আসলেই তো আমি তো এটা ভেবে দেখি নি।

সাজিদ:- মনে রাখবি। লাওহে মাহফুজের ভাষা আমরা জানি না। আর তর্কের খাতিরে যুক্তি দিলেও তুমি কখনোই প্রমাণ করতে পারবে না কুরআন বিকৃত বা মূল ভাষার থেকে সঠিক অনুবাদ নয়। যেমন আমি যদি কোন ইংরেজি বই লেখি সেটার অনুবাদ যদি আমি নিজেই করি তাহলে সেই বইয়ে গরমিল থাকবে না কিন্তু যদি অন্যকেউ করে তাহলে থাকবে। অন্যদিকে যদি তর্কের খাতিরে অন্য ভাষা থেকেই আরবীতে অনুবাদ করা হয় তাহলে সেখানে কোন ভুল থাকবে না কারণ আল্লাহর বানী আল্লাহ অনুবাদ করেছে। আর এতে কোন ভুল থাকবে না।

অভিজিৎ:- ইয়ে মানে... তাহলে আমি আসি। পরে কথা হবে। কাজ আছে। Bye....

[ অভিজিৎ এর প্রস্থান ]

সাজিদ:- কিরে নিলয়। কথা বলছিস না যে?? অভিজিৎ তো চলে গেলো তুইও চলে যাবি???

নিলয়:- হুম চলে যাবো তবে একটা কথা ছিলো।

সাজিদ:- কি?

নিলয়:- আমি যদি বলি বেদের ভাষা দেবভাষা যা প্রচলিত সেই ভাষা থেকে সংস্কৃতিতে সয়ং ভগবান অনুবাদ করেছে তাহলে তো প্রমাণ হয় বেদে গরমিল নেই। আর বেদ সর্বপ্রথম ধর্ম।

সাজিদ:- হা হা হা। ভাই সব যুক্তি সব জায়গায় খাটে না। আবার সব যুক্তি ধুপেও টিকে না। বেশিরভাগ মত অনুসারে বিশ্বাস করা হয় বেদের প্রথম ভাষা ছিলো দেবভাষা। অন্যদিকে লাওহে মাহফুজ কি ভাষায় তা আমরা জানি না আমাদের থেকে গোপন করা হয়েছে। এসব আল্লাহ ভালো জানেন। আর যদি তর্কের খাতিরে মানি যে ভগবান সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেছে তাহলেও লাভ হবে না।

নিলয়:- কেনো??

সাজিদ:- কারণ হলো। বেদের ভাষা সঠিক হলেই প্রমাণ হয় না হিন্দুধর্ম সর্বপ্রথম। কারণ বেদের আগে বেদ কেউ প্রচার করে নি। বেদের আগে মানবসভ্যতা কোন ধর্মগ্রন্থ মানতো তার উত্তর আছে???

নিলয়:- ইয়ে মানে,,, না।

সাজিদ:- অন্য দিকে কুরআন লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ থাকলেও। যুগে যুগে কিতাব পাঠানো হয়েছে সহিফা পাঠানো হয়েছে যা পূর্বের মানবসভ্যতা মেনেছে পালন করেছে। নবীরা মেনেছেন। কিন্তু হিন্দুধর্মের বেলায় তা নেই।
বেদের আগে কেউ প্রচার করে নি বেদ। ৫০০০ বছর আগে বেদ কেউ প্রচার করে নি আর করবেই কিভাবে? সংস্কৃত ভাষায় মানবজাতি পেলো মাত্র ৫০০০ বছর আগে। তার পূর্বের মানবসভ্যতা কিভাবে ধর্ম পালন করেছে??? তারা কি পাপ করলো??? নাকি মানবসভ্যতার বয়স মাত্র ৫০০০ বছর????

নিলয়:- আসলে তোর সাথে তর্ক করা আর বাচালের সাথে তর্ক করা এক। তুই আসলেই একটা বাচাল। আমি যাই এবার।

[ নিলয় এর প্রস্থান ]

সাজিদ চেয়ে রইলো আকাশের দিকে..... 


Post a Comment

0 Comments