ইসলামের দাসপ্রথা বনাম নাস্তিকীয় অফেন্স


ইসলামের দাসপ্রথা বনাম নাস্তিকীয় অফেন্স
লিখেছেনঃ আফিফ আলী সাদাফ
------------------------------------------------------------
ধন্যবাদান্তেঃ সদালাপ
মূলত নাস্তিক সমাজে ক্রীতদাসি নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা দেখা যায় এবং শুধু তা নয় বরং এই সম্পর্কে নাস্তিকদের সাথে মুসলিমদের বাদানুবাদ টাও কম হয়না।
ক্রীতদাসি নিয়ে যেসকল পয়েন্ট উপস্থাপন করা হলঃ
1. একজন যুদ্ধবন্দী নারী/কিনে নেয়া দাসির সাথে যৌন মিলন করা কতইনা অমানবিক
2. দাসির অধিকার অনিশ্চিত ইসলামে / ইসলাম দাসিকে কত মর্যাদা দিয়েছে?
3.দাসির গর্ভ হতে জন্ম নেয়া বাচ্চা যদি মনিবের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চা কার উত্তরসূরী?
4. ইসলামের দাসপ্রথা, পশ্চিমাদের Live Together কোনটা উত্তম?
একজন যুদ্ধবন্দী নারী/কিনে নেয়া দাসির সাথে যৌন মিলন করা কতইনা অমানবিক
------------------------------------------------------------
পয়েন্ট - ১
------------------
ইসলামে কিনে নেয়া দাসি বা যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌন মিলনের শর্তাবলী
----------------------------------------------------------------
মূলত ইসলাম কে অফেন্স করার জন্য তারা শুধুমাত্র একটি কিংবা দুটি হাদিস দিয়ে ইসলামে অমানবিক দাসপ্রথা আছে তা সাব্যস্ত করে। কিন্তু এর নিয়মরীতি সম্পর্কে অনেকের অজানা।
১ম পয়েন্ট - বিবাহিত দাসির সাথে সঙ্গম করা একদম হারাম।
---------------------------------------------------------------
কোন দাসি।যদি তার মুনিবের অনুমতি নিয়ে কাউকে বিয়ে করে তাহলে সেই মুনিবের জন্য সেই দাসি হারাম এমনকি সেই মুনিব সেই দাসির যৌনাঙ্গের দিকেও তাকাতে পারবেনা। [১]
২য় পয়েন্ট - দাসির অনুমতি ছাড়া তার সাথে সঙ্গম সরাসরি অবৈধ।
---------------------------------------------------------------
দলিল - ১
------------
ইমাম মালিক বলেন,
কোন পুরুষ যদি কোন মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া জবরদস্তি তার সাথে সঙ্গম করে হোক সে মহিলা কুমারী বা অকুমারী সেটা দেখার বিষয় না। যদি সে মহিলা আযাদ হয়ে থাকে তাহলে সেই পুরুষ অবশ্যই জরিমানা দেবে আর সেই মহিলা যদি দাসি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেই দাসি যা জরিমানা চাইবে সেই পুরুষ সেটা দিতে বাধ্য থাকবে এবং সেই পুরুষকে ধর্ষণের শাস্তিও পোহাতে হবে। এবং সেই মহিলার কোন শাস্তি হবেনা। [২]
দলিল - ২
------------
ইমাম শাফেই বলেন,
কোন পুরুষ যদি জবরদস্তি সংঘটিত করে দাসির সাথে এবং তার সাথে যদি তার অনুমতি ছাড়া সঙ্গমে লিপ্ত হয়। এবং এটা যদি সে অজান্তে করে ফেলে ( যৌন সঙ্গমের বিধান না জেনে থাকলে) সেক্ষেত্রে সেই দাসিকে সে জরিমানা দেবে এবং জবরদস্তি করে যৌনসঙ্গমের শাস্তিও সে পাবে। [৩]
৩য় পয়েন্ট
------------------
বন্টনের আগে কেউ যদি দাসির সাথে সহবাস করে ফেলে তার অনুমতি ছাড়া সেক্ষেত্রে সেই লোক যদি সাহাবিও হয় তাও তাকে রজম বা মাটিতে পুতে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে।
হাদিস
-------------
হারুন ইবনুল আসিম বর্ণনা করেন: উমর ইবনুল খাত্তাব(রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদ(রা.)-কে সৈন্যবাহিনীসহ প্রেরণ করেন এবং খালিদ (রা.) সৈন্যদলসহ জিরার ইবনুল আযওয়ারকে প্রেরণ করেন, আর তারা আসাদ গোত্রের একটি এলাকা দখল করেন। তারা একটি সুন্দরী নারীকে বন্দি করেন এবং জিরার তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার সঙ্গীদের থেকে তাকে (নারীটিকে) চাইলেন, তারা দিয়ে দিল এবং তিনি তার সাথে সঙ্গম করলেন। উদ্দেশ্য পূর্ণ হবার পর কৃতকর্মের জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং খালিদ(রা.)এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে বললেন। খালিদ(রা.) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার জন্য এর অনুমোদন ও বৈধতা প্রদান করছি। জিরার বললেন, “না, উমরকে চিঠি না পাঠানো পর্যন্ত নয়।” উমর উত্তরে লিখলেন, তাকে রজম (প্রস্তারাঘাতে হত্যা) করতে হবে। কিন্তু চিঠি পৌঁছবার আগেই জিরার ইন্তেকাল করলেন। খালিদ(রা.) বললেন, “আল্লাহ জিরারকে অপমানিত করতে চাননি। [৪]
স্ত্রী যদি তার স্বামীকে দাসির সাথে সঙ্গম করতে অনুমতি না দেয় স্বামী দাসির সাথে সঙ্গম করতে পারবেনা।
------------------------------------------------------------
নুমান ইবনে বশির হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন যে তার স্ত্রীর ক্রীতদাসির সাথে সহবাস করেছিল: যদি সে (অর্থাৎ স্ত্রী) তাকে (অর্থাৎ ক্রীতদাসিকে) তার (অর্থাৎ তার স্বামীর) জন্য হালাল করে থাকে, তাকে (পুরুষটিকে) একশ বেত্রাঘাত করা হবে; আর যদি সে তাকে তার জন্য হালাল না করে থাকে, আমি তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব।[৫]
আরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাসির সাথে সঙ্গম অবৈধঃ
------------------------------------------------------------
1. বন্টন হবার আগে দাসির অনুমতি ছাড়া জবরদস্তি তার সাথে সঙ্গম অবৈধ এবং এর শাস্তি জরিমানা + ধর্ষনের শাস্তি [সূত্রঃ ২,৩,৪]
2. যদি যুদ্ধক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েই একসাথে অথবা একজনকে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধির বাইরে নিয়ে যাবার আগেই অন্যজন যুদ্ধবন্দি/বন্দিনী হিসেবে ধৃত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিবাহ-বন্ধন অক্ষুন্ন থাকবে, ফলে উক্ত যুদ্ধবন্দিনীর সাথে স্বামী ভিন্ন অন্য কারো দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন অবৈধ হবে [৫]
3. অপরের দাসিকে তার (দাসির) অনুমতি বা অনুমতি ছাড়াও তার সাথে সঙ্গম সরাসরি অবৈধ[৬]
এবং সবচেয়ে বড় কথা যে, দাসির সাথে তার অনুমতি ছাড়া জবরদস্তি তার সাথে রেপ করা হচ্ছে দন্ডনীয় অপরাধ। এবং এর শাস্তি সেই দাসি যা চাবে জরিমানা হিসেবে সেটাই তাকে দিতে হবে এবং এর পাশাপাশি তাকে ধর্ষনের শাস্তিও দিতে হবে। [দেখুনঃ একাধিক রেফারেন্স ২,৩,৪]
এবং ইমাম নববী বলেন, কোন দাসের সাথে তখনই সঙ্গম বৈধ যখন সে মুসলমান হবে এবং শুধু তাই নয় মুসলিম হবার পরেও সেই দাসির সাথে সঙ্গম করতে তার অনুমতি লাগবে।এবং শুধু তাই না তার পাশাপাশি উক্ত ব্যাক্তির স্ত্রীরও অনুমতি লাগবে।
এরপরেও এটি কিভাবে অমানবিক হয় আমার মাথায় তা আসেনা।
দাসির অধিকার অনিশ্চিত ইসলামে / বা ইসলাম দাসিকে কত মর্যাদা দিয়েছে?
------------------------------------------------------------
মূলত একটা প্রশ্ন সকলের মনেই জাগে যে, ইসলাম দাস দাসির সাথে তাদের অনুমতি সহ সঙ্গম করতে বলে কিন্তু ইসলামে তাদের অধিকার কি? তাদের মৌলিক অধিকার বা তাদের সাথে আচার আচরণের ক্ষেত্রে ইসলামঅ।কি বলে? মূলত এটা নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে এই সম্পর্কে একটা বই লিখে ফেলা সম্ভব তাই পয়েন্ট আকারে খুব ছোট আকারে তাদের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
1. দাস - দাসি প্রতিটি মুমিনের ভাই / বোন [৭]
2. কেউ যদি কোন দাস তার অধিনে রাখে তাকে অবশ্যই সেই দাসের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং শুধু তাই না সে নিজে যা খাবে নিজে যা পড়বে তার দাস/দসিকেও তা খাওয়াবে এবং পরিধান করাবে এবং তাদের উপর রমন কোন কাজ চাপানো যাবেনা যাতে করে তা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক [৮]
3. দাস দাসিকে ( দাস কিংবা দাসি) বলে ডাকা যাবেনা বরং তাদের বলতে হবে বালক - বালিকা অথবা আমার সেবক [৯]
4. ক্রীতদাসের নায্য মূল্য নিরুপণ করতেই হবে [১০]
5. ওয়ালা (আযাদ করা দাসের স্বত্বাধিকার) বিক্রি কিংবা হেবা করা নিষিদ্ধ [১১]
6. যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ক্রীতদাসকে আযাদ করবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বদলে আযাদকারীর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে বাঁচাবেন [১২]
7. যে লোক তার অধিনস্ত কোন মানুষের প্রতি যত্নশীল হতে অপারগ থাকে তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণ টাও পাবেনা [১৩]
8. সূর্যগ্রহণ ও (আল্লাহর কুদরতের) বিভিন্ন নিদর্শন প্রকাশের সময় ক্রীতদাস আযাদ করা পছন্দনীয় [১৪]
9. ক্রীতদাস মুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে ইয়াতীম আত্মীয়কে অন্নদান।’’ [১৫]
10. কোন দাসি।যদি তার মুনিবের অনুমতি নিয়ে কাউকে বিয়ে করে তাহলে সেই মুনিবের জন্য সেই দাসি হারাম এমনকি সেই মুনিব সেই দাসির যৌনাঙ্গের দিকেও তাকাতে পারবেনা। [১৬]
দাসির গর্ভ হতে জন্ম নেয়া বাচ্চা যদি মনিবের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চা কার উত্তরসূরী?
------------------------------------------------------------
প্রশ্ন হল যে, দাসুর অনুমতি সহকারে যদি তার সাথে সঙ্গম করাই যায় তাহলে সেই সঙ্গমে যদি সন্তান জন্ম নেয় সন্তান কি জারজ বলে গন্য হবে? বা সন্তান কার পিতৃ পরিচয় বহন করবে?
এর জবাব হল দাস এর ক্ষেত্রে আজলের কথা বলা হয়েছে আজল হলঃ এমন একটা প্রক্রিয়া যা দাস এর সাথে মনিবের যখন সঙ্গম হয় তখন মনিব তার স্থলিত বীর্য দাসির গর্ভাশয়ে নির্গত করেনা। এক্ষেত্রে তাদের সন্তানও হয়না তবে ইদলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। এইক্ষেত্রেও নারীর সাধীনতা ইসলামে রয়েছে। আজল তখনই করা যাবে যখন ব্যাক্তির স্ত্রী অথবা উপপত্নী এতে রাজি থাকবে অন্যথায় করা যাবেনা [১৭]
এবং যদি স্ত্রী বা উপপত্নী রাজি থাকে এবং তাদের সন্তান জন্ম নিলে সেক্ষেত্রে সেই দাসি মুক্তি লাভ করবে [১৮]
ক্রীতাদাসি মুনিবের সন্তান গর্ভে ধারণ করার সাথে সাথে মুনিবের জন্য উক্ত ক্রীতদাসিকে বিক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে উক্ত ক্রীতদাসি মুনিবের পরিবারের স্থায়ী সদস্যে পরিণত হয়। [১৯]
ক্রীতদাসি মুনিবের সন্তান প্রসব করলে (জীবিত অথবা মৃত) উক্ত ক্রীতদাসি ‘উম ওয়ালাদ’ বা ‘সন্তানের মা’ হিসেবে অভিহিত হয়। সেই সন্তান মুনিবের বৈধ, স্বাধীন সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং পিতার সম্পত্তির ঠিক সেরকম উত্তরাধিকার পায় যেরকম স্ত্রী’র সন্তানরা পেয়ে থাকে।[১৯]
মুনিবের মুত্যুর পর ‘উম ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসি মুক্ত হয়ে যায়।[১৯]
ইসলামের দাসপ্রথা, পশ্চিমাদের Live Together কোনটা উত্তম?
------------------------------------------------------------
উপোরক্ত আলোচনা থেকে নিম্নক্ত ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত বলতে পারি যে,
1. দাসির সাথে সঙ্গম করতে হলে দাসির অনুমতি লাগবে এবং তার পাশাপাশি স্ত্রীর অনুমতিও লাগবে।
2. নিজে যা খাবে, পরিধান করবে আ দাসিকেও দিতে হবে এবং দাস - দাসিকে নাম ধরে ডাকা যাবেনা
3.সন্তান জন্ম দেয়া হবে কি হবেনা সেটা নির্ভর করে উপপত্নীর উপর এবং দাসির গর্ভ হতে সন্তান জন্ম নিলে তার ভরনপোষণ সেই লোক করবে।
বিবাহ বন্ধন ব্যতীত জন্ম নেয়া শিশুদের অধিকার কতটুকু সেকুলার দেশসমূহ নিশ্চিত করে?
------------------------------------------------------------
পক্ষান্তরে সেকুলার দেশ হিসেবে ইংলিশ "ল" অনুযায়ী বিবাহ বন্ধন ব্যতীত যে সন্তান জন্ম নেয় সে তার পিতা হতে কোন সম্পদ পাবেনা এবং সে তার উত্তরসূরীও হতে পারবেনা [২১]
এছাড়া ব্রিটেনের মাত্র ২০% শতাংশ বাবা তার অবৈধ সন্তান কে ভরনপোষণ করে [২২]
এরপরেও কারা সন্তান আর নারীর অধিকার নিশ্চিত করছে তার বিবেচনা করা আপনাদের মনের ব্যাপার।
তথ্যসূত্রঃ
1. সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১১৩
2. (Imam Maalik, Al-Muwatta', Volume 2, page 734)
3. (Imam Al Shaafi'i, Kitaabul Umm, Volume 3, page 253)
4. সূত্র: বায়হাকি’র সুনান আল কুবরা, হাদিস নং ১৮৬৮৫
5. সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৫৯
6. সূত্র:Chapter II :The Army’s Treatment of the Disbelievers, passage 45, The Shorter Book on Muslim International Law, translated by Mahmood Ahmad Ghazi, মূল: কিতাবুস সিয়ার আস সাগির, লেখক: মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ শায়বানী ]
7. সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৫৯
8. ২৫৪৫, ৬০৫০; মুসলিম ২৭/১০ হাঃ ১৬৬১, আহমাদ ২১৪৮৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০)
9. সূত্রঃ 7 দেখুন।
10. সহিহ বুখারি ২৫৫২
11. সহীহ মুসলিম ৩৬৬৭
12. সহীহ মুসলিম ৩৬৮০
13. সহীহ মুসলিম ৩৬৮৭
14. সহিহ বুখারি ৬৭৩১
15. বুখারি ২৫১৯
16. সূরা বালাদ আয়াত ১৩
17. আবু দাউদ ৪১১৩
18. Islamqa Fatwaa 11885
19. তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪]
20. মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং ২১৮৯৪, তিরমিযি, হাদিস নং- ৩৩৯৪, তাবারানি’র মু’যাম আল কাবির, হাদিস নং-৪১৪৭]
21. William Blackstone (1753), Commentaries on the Laws of England, Book II, Chapter XV "Of Title by Purchase and I. Escheat", Section 5.
22. https://www.cam.ac.uk/unmarried_mothers

Post a Comment

0 Comments