🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________
____________________________________________________________________________
রমজান মাস চলছে। আজ এক বন্ধুর বাড়ি দাওয়াত। এই কারণে সেখানে গেলাম দাওয়াতে। তো যাওয়ার পরে বসলাম। এখনো আসরের সময় শেষ হলো মাত্র তিন ঘণ্টার মতন রয়েছে ইফতারের। কিছুক্ষণ পরে পাশের বাড়ির এক ছেলে আসলো। সে করোনা ভাইরাস নিয়ে নানান তথ্য দিলো আর বলল কয়েকদিন লাগবে হয়তো বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন আবিস্কার করে ফেলবে। আমি বললাম হ্যাঁ বাকিটা আল্লাহ ভরসা। এমন সময় সেই ছেলেটি বলল,,,
— আল্লাহর ভরসা? খুবি হাস্যকর।
— কেনো ভাই। আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
— তুমি কি একটি কবিতা পড়েছো?
— কোন কবিতা?
— যদি বেঁচে যাও এবারের মত যদি কেঁটে যায় মৃত্যুর ভয় তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান মন্দির মসজিদ নয়।
— ওও তাই নাকি পড়েছি। বিজ্ঞান তো বিশেষ জ্ঞান। আর মন্দির আর মসজিদ তো জড় পদার্থ। সেসব আবার ভ্যাকসিন তৈরি করে নাকি?
— না আমি বলতে চাইলাম যে আল্লাহ বা ভগবান আমাদের রক্ষা করে নি করেছে বিজ্ঞান।
— আরে বিজ্ঞান যদি ধরো তাহলে অনেক কিছুই কিন্তু বাদ পড়ে যায় সংস্কৃতি, বৈশাখ, অর্থনিতী সব বাদ হয়ে যায়।
— আরে তোমরা তো ইসলামকে নিজের জীবনব্যবস্থা দাবী করো। আমরা তো আর অর্থনিতী, সংস্কৃত কে একটি পার্ট ভাবি কিন্তু কখনোই আমরা ভাবি না যে সংস্কৃত-শিল্প কিংবা বৈশাখ আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে কিংবা আমাদের পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। কিন্তু কুরআন তো বলে ইসলাম হলো জীবনব্যবস্থা। তাহলে সেই ব্যাবস্থা আমাদের বাঁচালো নাকি বিজ্ঞান?
— মুসলিমরাও তো চিকিৎসা করেছে।
— করলে কি হবে সেটার সাথে ইসলামের কি সম্পর্ক। ইসলাম জীবনব্যবস্থা হয়েও আমাদের বাঁচাবে বিজ্ঞান। মন্দির বা মসজিদ নয়।
— আচ্ছা অনেক তো বললে এবার আমার কথা শুনো। ইসলাম জীবনব্যবস্থা ঠিক কিন্তু ইসলাম নিজেও চিকিৎসা গ্রহণ করতে বলেছে। ইসলাম চিকিৎসা গ্রহণ করতে বাঁধা দেয় নি।
আল্লাহ বলেছেন ইসলামই হলো গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা,,,
اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ ۟ وَ مَا اخۡتَلَفَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡیًۢا بَیۡنَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ فَاِنَّ اللّٰہَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ ﴿۱۹﴾
নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম। এবং যাদেরকে গ্রন্থ প্রদত্ত হয়েছে তাদের জ্ঞান আসার পরও তারা মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছে শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষ বশতঃ; এবং যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্ত্বর হিসাব গ্রহণকারী।
[ কুরআন ৩:১৯ ]
[ কুরআন ৩:১৯ ]
আর ইসলাম আমাদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে বলে। ইসলাম চিকিৎসা বিরোধী নয়।
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ النَّمَرِيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيكٍ، قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ فَسَلَّمْتُ ثُمَّ قَعَدْتُ فَجَاءَ الأَعْرَابُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَتَدَاوَى فَقَالَ " تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلاَّ وَضَعَ لَهُ دَوَاءً غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ " .
উসামাহ ইবনু শরীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে দেখলাম তাঁর সাহাবীদের মাথার উপর যেন পাখী বসে আছে, অর্থাৎ শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি সালাম দিয়ে বসলাম। অতঃপর এদিক-সেদিক হতে কিছু বেদুঈন এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো? তিনি বলেন, তোমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করো; কেননা মহান আল্লাহ একমাত্র বার্ধক্য ছাড়া সকল রোগেরই ঔষধ সৃষ্টি করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫৫) [ ihadis.com ]
— ইয়ে মানে....
— শুধু তাই নয়। ইসলাম আমাদের মহামারী সম্পর্কেও অনেক কিছু শিক্ষা দেয়।
— কিভাবে?
— আচ্ছা বলো তো বিজ্ঞান আমদের সর্বপ্রথম যে বিষয়টি উপর জোর দেয় সেটা কি?
— এই যেমন কোন এলাকায় যদি মহামারী ছড়ায় সেই স্থান থেকে না যাওয়া। আর যে স্থানে মহামারী ছড়া আর সেখানে যারা থাকে তারা যেনো পলায়ন না করে। এই নিয়ম না মানলে করোনা ভাইরাস খুবি তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে গিয়ে মানবসভ্যতা প্রায় বিনষ্ট করে দিতো।
— এই তো , অন্য ধর্ম বলেছে কিনা জানি না নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যা বলে গেছেন তাই আজকের বিশ্ব মানছে।
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَامِرٍ أَنَّ عُمَرَ خَرَجَ إِلَى الشَّأْمِ فَلَمَّا كَانَ بِسَرْغَ بَلَغَه“ أَنَّ الْوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّأْمِ فَأَخْبَرَه“ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ عَوْفٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا سَمِعْتُمْ بِه„ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ.
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
‘উমার (রাঃ) সিরিয়া যাবার জন্য বের হলেন। এরপর তিনি ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌছলে তাঁর কাছে খবর এল যে সিরিয়া এলাকায় মহামারী দেখা দিয়েছে। তখন ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা কোন স্থানে এর বিস্তারের কথা শোন, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করো না; আর যখন এর বিস্তার ঘটে, আর তোমরা সেখানে অবস্থান কর, তাহলে তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার নিয়তে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৬)
.
[ সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com ]
.
[ সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com ]
দেখো ইসলাম একই সাথে আমাদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে বলে আবার একই সাথে মহামারী সম্পর্কে এমন তথ্য দিয়েছে যা সারা বিশ্ব মানতে বাধ্য। তাই না?
— (কিছুক্ষণ চুপ হয়ে) হুম।
— তাহলে মনে রেখো ইসলাম আর চিকিৎসা কখনো বিরোধী নয়। আরো জানতে আমার ব্লগের একটা লেখা পড়তে পারো। মহামারী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বার্তা। শুধু নাস্তিকদের লেখা পড়লে যাহয় আরকি।
— (চুপ করে আছে)
— আর শুনো জীবন দান আর মৃত্যু দুইটাই আল্লাহর হাতে। বাঁচালে আল্লাহই বাঁচাবে।বিজ্ঞান আল্লাহর সৃষ্টি দিয়েই তৈরি করে ভ্যাকসিন। শূন্য থেকে সৃষ্টি করতে পারে না। বিজ্ঞান খুবি অসহায় যার কারণে কত হাজার মানুষ মারা গেলো। কিন্তু আল্লাহ চাইলে জীবন বাঁচাতে পারে আবার মৃত্যুও দিতে পারেন। তাই এসব আলতু ফালতু কবিতা বানিয়ে কোন লাভ নেই শুধু হাসির খোরাক হওয়া ছাড়া। আর ইসলাম ভ্যাকসিন আবিস্কারের আসে নি তবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে সাবধানে থাকতে বলেছে। আর সেই বিধান মানছে সারা বিশ্ব।
◾ইফতারের সময় হলো ইফতার খাওয়া শেষ এবার আমরা চলে গেলাম।
নাস্তিক ছেলেটি সবশেষে বলল তোমার নাম কি?
আমি বললাম,
সাজিদ.........
আমি বললাম,
সাজিদ.........

0 Comments