মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা!


ফজরের নামাজ পড়ে প্রতিদিনের মতো আজও বসলাম কোর'আনের অনুবাদ নিয়ে।
সূরা বাকারার অনুবাদ পড়তে লাগলাম।যদিও এর আগে অনেকবার পড়া হয়েছে কিন্তু একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে,প্রতিবারই পড়ার সময় নতুন কিছু জিনিষ চোখে পড়ে যা আগেরবার তেমন খেয়াল হয় না।
.
এই ধারার ব্যতিক্রম হয়নি আজও।সূরা বাকারার ঠিক ছাব্বিশ নম্বর আয়াতে এসে আমি চমকে গেলাম।
চমকে যাওয়ারই কথা,মশার মতো একটা ক্ষুদ্র প্রাণির কথা উল্লেখ আছে কোর'আনে।তাও আবার একেবারে প্রথম দিকের সূরায়।

জ্বি, সত্যি বলছি।

বিশ্বাস না হলে নিজেই পড়ে দেখেন-

"আল্লাহ পাক নিঃসন্দেহে মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। বস্তুতঃ যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক। (২:২৬)"
.
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।আল্লাহ এমনি এমনি মশার উপমা টানেননি নিশ্চয়ই কোনো প্রজ্ঞা আছে এর মাঝে।কি হতে পারে সেই কারণ? তার উপর আল্লাহ বলছেন তিনি এ উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেননা।অবশ্যই মশার মধ্যে এমন কিছু আছে যার কারণে আল্লাহ এ উপমা টেনেছেন।
.
আমি আর দেরি না করে খোজাখুজি শুরু করলাম।আজ আমাকে জানতেই হবে কি এমন আছে সামান্য এক মশার মধ্যে!
আর তারপর যা পেলাম তাতে আমি রীতিমত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছি।আল্লাহু আকবার!

.....

প্রথমে যে বিষয়টি সবচেয়ে বিস্ময়কর সেটা হলো-কুরআনে ব্যবহৃত শব্দ ‘বাউদাহ’।এই বাউদাহ মূলত একটি স্ত্রীবাচক শব্দ। যা নারী মশাকে বোঝায় এবং আধুনিক বিজ্ঞান ইতোমধ্যে এটি প্রমাণ করেছে যে, শুধু স্ত্রী মশাই মানুষের রক্ত খায়। তারা রক্ত খায় তাদের ডিমে নিউট্রিশনের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য।
কি অবাক হলেনতো!সামনে আরো কিছু রয়েছে পড়তে থাকেন।
.
কত ক্ষুদ্র একটি প্রাণি মশা।অথচ কি বিস্ময়কর তার দৈহিক গঠন এবং তার বৈশিষ্ট্য।
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এটাই যে, মশা হলো সেই প্রাণি যার কারণে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়।প্রতি বছর প্রায় ১০০০০০০ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র এই ক্ষুদ্র প্রাণি মশার কারণে! [1]
এতো ক্ষুদ্র একটা প্রাণির কাছে পরাজিত আমরা মানুষ।মশার উদাহরণ দিয়ে আল্লাহ কি বুঝাতে চেয়েছেন তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।
.
মশার আরেকটা বিস্ময়কর দিক হচ্ছে রক্ত খাওয়ার জন্যে হোস্ট খুঁজা। প্রাণির শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নির্গত CO2 ও ল্যাকটিক অ্যাসিড এর দ্বারা প্রায় ৫০ মিটার দূরে থেকেও মশা তার হোস্ট শনাক্ত করতে পারে।তাছাড়া মশা সময়ের ব্যাপারে খুবই পাঞ্চুয়াল।তারা ভুল হোস্ট শনাক্ত করে সময় অপচয় করেনা।

এটা ছাড়াও আরেকটি উপায়ে মশা হোস্ট শনাক্ত করতে পারে আর তা হলো হোস্টের দেহের তাপমাত্রা দ্বারা।[2]
কিভাবে এতো দূরে থেকে মশা তাপমাত্রা মাপতে পারে তা আজও বিজ্ঞানিদের কাছে বিস্ময়।
বিস্ময় হওয়ার কথাইতো কারণ এটা যে আল্লাহর সৃষ্টি।
.
এ সম্পর্কে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাইকেল ডিকিনসন এর উক্তিটি লক্ষ্য করুন-

Michael Dickinson, professor of bioengineering at the California Institute of Technology.Dickinson said:
Our experiments suggest that female mosquitoes do this in a rather elegant way when searching for food. They only pay attention to visual features after they detect an odor that indicates the presence of a host nearby. This helps ensure that they don’t waste their time investigating false targets like rocks and vegetation. Our next challenge is to uncover the circuits in the brain that allow an odor to so profoundly change the way they respond to a visual image.[3]
.
আরেকটি কথা না বললেই নয় তা হলো,প্রত্যেক মশার নিজস্বভাবে এনেস্থেশিয়া দেয়ার জন্য এক ধরনের ভ্যাকসিন আছে, যা মানুষের শরীরে তাদের হুল ফোটানোর মাধ্যমে রক্ত নেয়ার সময় ব্যবহার করে সেই জায়গাটাকে অবশ করে নেয় যাতে রক্ত নিলেও কোনো ব্যথা পাই না আমরা।
এছাড়াও মশার দুটি চোখে রয়েছে মোট ১০০ টি লেন্স যার সাহায্যে মশা সবদিকেই দেখতে পায়।মশা সেকেন্ডে ৫০০ বার ডানা ঝাপটায় যা এক বিস্ময় বটে।
.
মশা সম্পর্কে আরো কিছু বিস্ময়কর তত্ত্ব হলো-
১. প্রায় দুই হাজার ৭০০ প্রজাতির মশা রয়েছে; 
২.মশার মুখে ৪৮টা দাঁত রয়েছে; 
৩. একটি মশার তিনটি পূর্ণ হার্ট (হৃদযন্ত্র) রয়েছে(এই ক্ষুদ্র দেহে!); 
৪. মশার নাকে ছয়টি পৃথক ছুরি রয়েছে এবং প্রত্যেকটি ছুরির পৃথক ব্যবহার তারা করে থাকে; 
৫. মশার শরীরে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন আছে! যা রাতের আঁধারে মানুষের চামড়াকে শনাক্ত করার কাজে লাগায়; 
৬. রক্ত পরীক্ষা করার বিশেষ ব্যবস্থা এদের আছে। কারণ, এরা সব ধরনের রক্ত পছন্দ করে না! 
৭. পুরুষের চেয়ে নারী মশারা বেশি দিন বাঁচে।
.
আল্লাহু আকবার,কি অসাধারণ সৃষ্টিশৈলী মহান রাব্বুল আলামিনের।আল্লাহ আমাদেরকে বারবার বলেছেন চিন্তা করার জন্য কিন্তু আমরা তার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তার সময়ই পাইনা।আফসুস!
তবে তার চেয়েও অবাক করার বিষয় এটা যে, কিছু মূর্খ দাবি করে এসব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি!
.
[1] https://www.cnet.com/pictures/the-24-deadliest-animals-on-earth-ranked/24/
.
[2] https://www.tinymosquito.com/body.html
 .
[3] https://earthsky.org/earth/how-mosquitoes-find-you-to-bite-you

— নাবিল হাসান

Post a Comment

0 Comments