হযরত মুহাম্মাদের আগমনের পূর্বে ইসলাম বা মুসলিম শব্দটা কোথাও ব্যবহার হয়েছে, তার কোন প্রমাণ দিতে পারবেন!?



হযরত মুহাম্মাদের আগমনের পূর্বে ইসলাম বা মুসলিম শব্দটা কোথাও ব্যবহার হয়েছে, তার কোন প্রমাণ দিতে পারবেন!?
🖋Author:- Ishak Shikder Farabi

____________________________________________________________________________
.
[ বিঃদ্রঃ দুই ভাবে উত্তর দেওয়া হয়েছে ]
.
জবাব...
ভূমিকাঃ
সকল প্রশংসা মহিমান্বিত এক, অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্য, যিনি মানুষকে বিভিন্ন ভাষা দান করে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। এবং বিভিন্ন জাতির কাছে
তাদের স্ব জাতির ভাষায় নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হউক মুহাম্মদ সাঃ এর উপর।‘
আসলে এই প্রশ্ন থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারছি,
ইসলাম সম্পর্কে ইসলাম বিরোধীদের ধারণা একেবারেই নগণ্য । আর এই প্রশ্নটি তারই ফল।
যাই হোক এই প্রশ্নটি জাগ্রত হয়েছে একটি কারণে।
আর সেটি হল,,,
ইসলাম ও মুসলিম শব্দ দু'টির সংজ্ঞা না জানার কারণে।
আসলে তাদের অবস্থা হয়েছে এমন যে,
বাংলা ভাষার একটা শব্দ "ডিম" । হুবহু এই শব্দেই যদি ইংরেজিতে, ভাঙ্গা হারিকেন দিয়ে, সারা জীবন খুঁজেন, তাহলে কি পাবেন? 
আর ইংরেজিতে যদি "ডিম" শব্দ না পান?
তাহলে কি আমেরিকা, ব্রিটেনে ডিমের অস্তিত্ব নাই?
নিশ্চই আপনি মুচকি হেসে বলবেন?  ডিমের বৈশিষ্ট্য কি? এটা জানতে হবে, তাহলেই খুঁজে পাওয়া যাবে ।
যেমনঃ ডিমের  বৈশিষ্ট্য হল
ডিমের ভিতর সাধারণত দুই ধরণের উপাদান থাকে।
১. বিজল সাদা অংশ ।
২. কুসুম।
৩. ইত্যাদি
(উল্লেখ্য: এটা সাধারণ পরিচয়)
তাই এই গুন যার মধ্যেই পাওয়া যাবে? সেটাই ডিম।
সুতরাং এই রূপ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জিনিষ আমেরিকাতেও আছে, ব্রিটেনেও আছে।
তাহলে সেগুলোও ডিম।
লক্ষ করুন এখানে মূল পরিচয় কিন্তু শব্দে নয় বরং বৈশিষ্ট্যে।
ঠিক একই রকম যুক্তিও ইসলামের ক্ষেত্রে
ইসলাম শব্দটি যদি খুঁজেন? তাহলে সারা জীবনও পাবেন না।  বরং ইসলামের বৈশিষ্ট্য খুঁজলে পেয়ে যাবেন। 
যেমন: একজন মুসলিমের সাধারণত বৈশিষ্ট্য হল সে একনিষ্ঠ ভাবে এক স্রষ্টার ইচ্ছার উপর নিজেকে সমর্পণ করবে। এবং এক আল্লাহতে স্রষ্টাতে বিশ্বাসী হবে।
এই গুন যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সেই মুসলিম ।
আসুন একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝে নেই ।
আমরা উপরে মুসলিমের যে সংজ্ঞাটা দিয়েছি? দেখুন সেটার সাথে নিচের বাইবেলের যীশুর বক্তব্যের সাথে পরিপূর্ণ মিলে যায়।
(যোহন 5:30)
30. ‘আমি নিজের থেকে কিছুই করতে পারি না৷ আমি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) য়েমন শুনি তেমনি বিচার করি; আর আমি যা বিচার করি তা ন্যায়, কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি৷
অতএব যীশুও মুসলিম আর এ অর্থেই কুরআনে যীশু সহ সকল পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলদের মুসলিম বলা হয়েছে।
এই ধরনের বক্তব্য মূসা আঃ ও সমস্ত নবী ও রাসূলই বলেছেন। তাই তারাও মুসলিম ছিলেন।
এই উত্তরটি অন্যভাবেও দেওয়া যায়,,,
ইসলাম (আরবি ভাষায়: الإسلام আল্‌-ইসলাম্‌) একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। "ইসলাম" শব্দের অর্থ "আত্মসমর্পণ", পরিভাষায় একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পণ করা[১]
মুসলিম (المسلم): হল যিনি নিজের সকল ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগকে বাদ দিয়ে স্রষ্টার ইচ্ছার কাছে নিজে কে সমর্পণ করেন। এবং স্রষ্টার সকল বিধান মেনে নেওয়া।
আপনি ইসলাম (الاسلام) এবং মুসলিম)(المسلم) শব্দ দু'টিকে মুখ্য বিষয় ধরে ফেলেছেন । আর সেউ হিসাবেই প্রশ্ন করেছেন।
অবশ্যই মনে রাখবেন
ইসলাম এবং মুসলিম হওয়া এটা শব্দের সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয় নয়।  বরং ইসলাম ও মুসলিম হল নির্দিষ্ট কিছু গুন অর্জন করার বিষয় । আর তা হল স্রষ্টার সকল বিধানের সামনে নিজেকে সমর্পণ করা
অর্থাৎ কোন ব্যক্তির নাম ইসলাম হলেই সে আল্লাহর কাছে মুক্তি পাবে না বরং নির্দিষ্ট কিছু  কর্ম সম্পাদন করলেই কেবল মুক্তি পেতে পারেন।
যেমনঃ এক ব্যক্তির নাম ইসলাম but তাঁর
ব্যক্তি জীবনে ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিফলিত হয়নি। এই লোকটির নাম ইসলাম হওয়ার কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না ।
অন্য দিকে আরেক জনের নাম দুখু মিয়া
তো তার এই নামের কারণেই চির দুঃখের স্থান জাহান্নাম দেওয়া হবে না বরং সে যদি
নির্দিষ্ট কিছু গুন অর্জন করে তাহলে সে চির সুখের, জান্নাত পাবে।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে,
ইসলাম কোন  শাব্দিক বিষয় নয় বরং কিছু
গুন, যা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ মুসলিম হয়।
তাই এই সকল গুন গুলো যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে? তারাই মুসলিম ।
নামটা ইসলামিক হওয়া আবশ্যক নয়।
আর কুরআন ও হাদিসের মধ্যে এমনটাই রয়েছে
দেখুন কুরআনে বিভিন্ন নবীর কথা উল্লেখ হয়েছে এবং তাদের কে মুসলিম বলা হয়েছে যারা মুহাম্মাদ সাঃ এর হাজার হাজার বছর পূর্বের তাহলে ইসলাম শব্দতে আপনি সুধু মুহাম্মাদ সাঃ এর আদর্শ বুঝেন কেন?
যেমনঃ 
আদম আঃ ( কুরআন ২/৩১,২/৩৩,২/৩৪,)
নূহ আঃ (কুরআন ৩/৩৩, ৪/১৬৩)
ইব্রাহিম আঃ (কুরআন ২/১২৪,২/১২৫)
দাউদ আঃ (কুরআন ২/২৫১)
মূসা আঃ (কুরআন ৫/২৪,৬/৮৪,৭/১০৩)
ঈসা আঃ (কুরআন ২/৮৭,২/১৩৬)
বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের কথা বলা হয়েছে যা বিভিন্ন ভাষায় রচিত। যা মুহাম্মাদ সাঃ এর হাজার হাজার বছর পূর্বের।
যেমন:
তাওরাত ( কুরআন ৩/৩, ৩/৪৮ )
ইনজিল (কুরআন ৩/৩, ৩/৬৫)
যবুর ( কুরআন ১৭/৫৫, ২১/১০৫)

তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম মহান আল্লাহ যুগে যুগে বিভিন্ন জাতিতে, বিভিন্ন ভাষাতে নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন আর এই সকল বর্ণনা কুরআন ও হাদিসে প্রচুর বিদ্যমান, যা উপরে কয়েকটি উল্লেখ করেছি।
অতএব ইসলাম কোন ভাষাতে সীমাবদ্ধ নয়, নয় কোন স্থানে। বরং মুসলিম হওয়ার গুনগুলো যাদের মধ্যে পাওয়া যাবে? তারাই মুসলিম। যদিও শাব্দিক ভাবে তার নামটি মুসলিম নয়।
কেননা সকল ভাষাই আল্লাহর দেওয়া
(30:22)
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ خَلۡقُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافُ اَلۡسِنَتِکُمۡ وَ اَلۡوَانِکُمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ  لَاٰیٰتٍ  لِّلۡعٰلِمِیۡنَ ﴿۲۲﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য
তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম,
ইসলাম ও মুসলিম এই শব্দ দু'টি আরবি ভাষা, আর ভাষা কোন ম্যাটার নয়। আসল হল কতিপয় গুন অর্জন। যা যে কোন ভাষাতেই হোক।
তবে মনে রাখতে হবে,
মুহাম্মাদ সাঃ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে মুক্তি পেতে হলে, মুহাম্মাদ সাঃ এর অনুস্বর সহ  কুরআন ও হাদিসকেই মানতে হবে
আশাকরি কিছুটা হলেও বুঝাতে পেরেছি।
-----------------------------------------------------------------
সূত্রঃ

Post a Comment

0 Comments