আদম (আ:) এর মতন কি পাপীরাও তাকদীরের দাবী করতে পারবে!?


আদম (আ:) এর মতন কি পাপীরাও তাকদীরের দাবী করতে পারবে!?
🖋Author:- Aminur Rashid
___________________________________________________________________________
.
আসসালামু আলাইকুম,,,
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। একটি হাদিস নিয়ে নাস্তিক-অমুসলিমরা একটি অভিযোগ করে। হাদিসটি নিয়ে অনেক মুসলিমও বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। তাই আজকের লেখা সেই হাদিস বিষয়ে।

.
◾হাদিসটি হলো,,,
.
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ احْتَجَّ آدَمُ وَمُوسَى فَقَالَ لَهُ مُوسَى أَنْتَ آدَمُ الَّذِي أَخْرَجَتْكَ خَطِيئَتُكَ مِنَ الْجَنَّةِ‏.‏ فَقَالَ لَهُ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى الَّذِي اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِرِسَالاَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ، ثُمَّ تَلُومُنِي عَلَى أَمْرٍ قُدِّرَ عَلَىَّ قَبْلَ أَنْ أُخْلَقَ ‏"‏‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ فَحَجَّ آدَمُ مُوسَى ‏"‏ مَرَّتَيْنِ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
.
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আদম (‘আঃ) ও মূসা (‘আঃ) তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। তখন মূসা (‘আঃ) তাঁকে বলছিলেন, আপনি সেই আদম যে আপনার ভুল আপনাকে বেহেশত হতে বের করে দিয়েছিল। আদম (‘আঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কি সেই মূসা যে, আপনাকে আল্লাহ্‌ তাঁর রিসালাত দান এবং বাক্যালাপ দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন। অতঃপরও আপনি আমাকে এমন বিষয়ে দোষী করছেন, যা আমার সৃষ্টির আগেই আমার জন্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’বার বলেছেন, এ বিতর্কে আদম (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)–এর ওপর বিজয়ী হন। [১]
.
.
◾এই হাদিস দেখিয়ে অভিযোগ করা হয়। কারণ মূসা (আ:) আদমকে দোষ দিয়ে বলেছে যে আদম (আ:) এর দোষের কারণে আদম (আ:) কে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।যদিও বিষয়টি ভুল ধারণা। [২]
.
তার পরে আদম (আ:) দাবী করলো,,
.
"আপনি আমাকে এমন বিষয়ে দোষী করছেন, যা আমার সৃষ্টির আগেই আমার জন্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। "
.
👁‍🗨 এই অংশ দেখিয়ে ইসলাম বিরোধীরা বলতে চায় আদম (আ:) এর মতন তিনি সকলেই এমন দাবী করতে পারে তাহলে মানুষের কি দোষ মানুষের সৃষ্টির আগেই তা নির্ধারিত।
.
📝 আসুন দেখি আসলেই কি তাই!?
.
যে হাদিসটি পেশ করা হয় সেই হাদিসটির সনদ কতটুকু সহীহ তা আমাদের লক্ষ করতে হবে।
এই হাদিসকে কিন্তু সনদ সহীহ দেওয়া আছে কারণ হচ্ছে আদম (আ:) ও মূসা (আ:) আসলেই তাদের মধ্যে তর্ক হয়েছে তবে উপরে যেভাবে হাদিসটি উল্লেখ সেভাবে নয়।
.
.
◾ হাদিসটিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। [৩]
.
১) হাদিসটিতে মূসা (আ:) নবী আদম (আ:) কে কখনোই এমন বিষয়ে দোষ দিবেন না যে বিষয়ে তিনি তওবা করেছেন এবং তা কবুল করা হয়েছে।
.
২) মূসা (আ:)ও অনেক সময় ভুল কাজ করে আল্লাহর কাছে তওবা করেছে। তাহলে আদম (আ:) কে দোষারোপ করার প্রশ্নই আসে না।
.
৩) আদম (আ:) যদি পূর্ব লিখিত তাকদীর দ্বারা অপরাধের দোষারোপের জবাব দিয়ে থাকে তাহলে তো সকল গুনাহগার মানুষ এমন ভাবে তাকদীরের দোহাই দিবে।
.
.
◾সুতরাং, সঠিক কথা হলো এ হাদিসটি বহুপাঠে বর্ণিত হয়েছে। তার কোন কোনটি বর্ণিত হয়েছে অর্থগত রূপে, কিন্তু তা সন্দেহ মুক্ত নয়। বোখারী, মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবের বেশির ভাগ বক্তব্যের সারকথা হলো,,
.
"মূসা (আ:) যখন আদম (আ:) কে বলল যে আদম (আ:) এর জন্য জান্নাত থেকে বের করার জন্যই সকলে বের হয়েছে তাই এটি আদম (আ:) এর দোষ। তখন আদম (আ:) বলেছেন, আপনাদের আমি বের করি নি বরং সে সত্ত্বা যিনি আমার ফল খাওয়ার সাথে বহিস্কার সংশ্লিষ্ট করে রেখেছিলেন আমার সৃষ্টির পূর্বেই। বড়জোর বলা যায় আমি ফল খেয়ে ফেলেছিলাম যে নিষেধ করা হয়েছিলো। কিন্তু বহিস্কার হওয়া আমার নয় আল্লাহরই পূর্ব নির্ধারিত। অতএব আমি আপনাদের জান্নাত থেকে বহিস্কার করি নি।" [৪]
.
.
.
👁‍🗨 অতএব,, আমরা বুঝলাম হাদিসটির মতন অন্য কেউ তাকদীরের দোহাই দিতে পারবে না সকলের ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ দিয়েছেন। কিন্তু নবী আদম (আ:) কে পৃথিবীতে পাঠানো হবে সেটা ছিলো পূর্ব নির্ধারিত যার মধ্যে আদমের হাত নেই। কারণ আল্লাহই আগে থেকেই আদম কে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য পূর্ব থেকে নির্ধারিত করেছে। আল্লাহ প্রথমেই বলেছিলেন,,,
.
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। [৫]
.
.
দেখুন আয়াত থেকেও সুস্পষ্ট যে "আদম (আ:) কে বহিস্কার করা হবে এবং পৃথিবীতে পাঠানো হবে তা পূর্ব নির্ধারিত" কিন্তু আদম (আ:) যে নিষিদ্ধ ফল খেয়েছেন সেটা আদম (আ:) এর নিজের দোষ তার নিজ ইচ্ছা শক্তি থাকা সত্ত্বেও ফল খেয়েছে।
.
এই কারণেই আদম (আ:) বলেছেন তাকে ফল খাওয়া নিয়ে দোষারোপ করতে পারবে কিন্তু পৃথিবীতে পাঠানো আল্লাহর নির্ধারিত। আল্লাহ জান্নাতে একটি ছোট পরীক্ষা করলেন আর আদম (আ:) সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় নি।আ পরে তওবা করলেন আদম (আ:) আর আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আসলে ফল খাওয়ার জন্য নয় বরং আগে থেকেই আল্লাহ তাকে পৃথিবীতে পাঠাবেন তার পরিকল্পনা করেছেন। আর যেহেতু ফল খেয়ে তওবা করেছে আদম (আ:) তাই আল্লাহ খুশি হয়ে আদম (আ:) কে একজন প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং হাদিসটি নিয়ে অভিযোগটি একদম ভুল।
.
.
◾শেষ কথা,,
আদম (আ:) নিজের ফল খাওয়ার অপরাধের জন্য তাকদীরের দোহাই দেন নি বরং তাকে যে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে সেটার দোহাই দিয়েছে। আর মূসা (আ:) এর দাবী ছিল আদমের (আ:) এর দোষের জন্য সকলে পৃথিবীতে কিন্তু সেটা ভুল আসলে আদম (আ:) কে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠানো হবে সেটাই ছিলো "" পূর্ব নির্ধারিত "" কিন্তু ফল যে খেয়েছে সেটা আদম (আ:) এর নিজ কর্ম। তাই, কেউ খুন-ধর্ষণ করে এমন দোহাই দিতে পারবে না। আদম (আ:) ও দোহাই দিতে পারেন নি তিনি স্বীকার করেছেন ফল খাওয়াটা তার নিজের দোষ। শুধু পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায় ও পূর্ব নির্ধারিত করার জন্য।
.
আশা করি সকলে বুঝেছেন।
.
.
তথ্যসূত্রঃ
[১] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪০৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
[২] https://uncovertrue.blogspot.com/2020/04/blog-post.html
[৩] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা:- ২০৪ এবং কাসাসুল আম্বিয়া (বাংলা) পৃষ্ঠা:- ৬১-৬২৪
[৪] কাসাসুল আম্বিয়া (বাংলা) পৃষ্ঠা:- ৬১ এবং আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা:- ২০৩-২০৪
[৫] সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ৩০

Post a Comment

0 Comments