যদি মানুষের সাক্ষ্যই ভালো-খারাপ নির্ণয় করে তাহলে কেনো আমলনামা!?

যদি মানুষের সাক্ষ্যই ভালো-খারাপ নির্ণয় করে তাহলে কেনো আমলনামা!? 
🖋Author:- Aminur Rashid
____________________________________________________________________________

.
আসসালামু আলাইকুম,,,
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। যিনি সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা এবং যিনি বিচার দিনের মালিক। আর যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন সেই মানুষের আমলনামা থেকে দেখা যাবে সে দুনিয়াতে কি কর্ম করেছিলো।
.
আল্লাহ বলেন,,
.
هَٰذَا كِتَابُنَا يَنْطِقُ عَلَيْكُمْ بِالْحَقِّ ۚ إِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
💕 আমার কাছে রক্ষিত এই আমলনামা তোমাদের সম্পর্কে সত্য কথা বলবে। তোমরা যা করতে আমি তা লিপিবদ্ধ করতাম। [১]
.
.
◾একজন মুসলিম ভাই আমাকে একটি হাদিস বুঝিয়ে দিতে বলেছেন।
.
হাদিসটি হলো,,,
.
حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي الْفُرَاتِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِي الأَسْوَدِ، قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ وَقَدْ وَقَعَ بِهَا مَرَضٌ، فَجَلَسْتُ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ فَمَرَّتْ بِهِمْ جَنَازَةٌ فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْرًا فَقَالَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ وَجَبَتْ‏.‏ ثُمَّ مُرَّ بِأُخْرَى فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْرًا، فَقَالَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ وَجَبَتْ‏.‏ ثُمَّ مُرَّ بِالثَّالِثَةِ، فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا شَرًّا فَقَالَ وَجَبَتْ‏.‏ فَقَالَ أَبُو الأَسْوَدِ فَقُلْتُ وَمَا وَجَبَتْ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ قَالَ قُلْتُ كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَيُّمَا مُسْلِمٍ شَهِدَ لَهُ أَرْبَعَةٌ بِخَيْرٍ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ ‏"‏‏.‏ فَقُلْنَا وَثَلاَثَةٌ قَالَ ‏"‏ وَثَلاَثَةٌ ‏"‏‏.‏ فَقُلْنَا وَاثْنَانِ قَالَ ‏"‏ وَاثْنَانِ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ لَمْ نَسْأَلْهُ عَنِ الْوَاحِدِ‏.‏

আবুল আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি মদীনায় আসলাম, তখন সেখানে একটি রোগ (মহামারী আকারে) ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি ‘উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা অতিক্রম করল। তখন জানাযার লোকটি সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। ‘উমর (রাঃ) বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। অতঃপর অপর একটি (জানাযা) অতিক্রম করল। তখন সে লোকটি সম্পর্কেও প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হল। (এবারও) তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় একটি (জানাযা) অতিক্রম করল, লোকটি সম্বন্ধে নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হল। তিনি বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। আবুল আসওয়াদ (রাঃ) বললেনঃ আমি বললাম, হে আমীরুল মু'মিনীন! কি ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেন, আমি তেমনই বলেছি, যেমন নবী  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল বলে সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। ‘উমর (রাঃ) বলেনঃ তখন আমরা বলেছিলাম, তিনজন হলে? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দু’জন হলে? তিনি বললেন, দু’জন হলেও। অতঃপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি। [২]
.
◾এই হাদিসটি আরো অনেক জায়গায় এসেছে। [৩] হাদিসটির সনদ একদম সহীহ। তো এই হাদিসে এক পর্যায়ে বলা হয়েছে,,,
.
"নবী  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, যে কোন মুসলমান সম্পর্কে চার ব্যক্তি ভাল বলে সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ্‌ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। ‘উমর (রাঃ) বলেনঃ তখন আমরা বলেছিলাম, তিনজন হলে? তিনি বললেন, তিনজন হলেও। আমরা বললাম, দু’জন হলে? তিনি বললেন, দু’জন হলেও। অতঃপর আমরা একজন সম্পর্কে আর তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি।"
.
.
◾এখন এই স্থানে বলা হয়েছে যে কোন মৃত ব্যক্তির উপর প্রশংসা কিংবা নিন্দাসূচক মন্তব্য করা হলে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির উপর বর্তাবে। এই হাদিস থেকে ভাই প্রশ্ন করেছেন যে আমলনামা যার যার তাহলে সেখানে অন্যের সাক্ষ্য কেনো যোগ হবে!? যেখানে দুই কাঁধের ফেরেস্তা আমাদের কর্ম লিখে রাখছেন।
.
.
👁‍🗨 প্রথমতঃ এই হাদিসটিতে যারা সাক্ষ্য দিবে তারা সর্বপ্রকার ব্যাক্তিগত আক্রোশ বা স্বার্থ বিবর্জিত সাধারণ সৎ লোক হতে হবে। আর যারা সত্য বলেছে মৃত ব্যক্তির উপর তা তো সত্যিই তাহলে সেটা তো ফয়সালা হবেই। যদি সত্যিই সে জান্নাতের কাজকরে থাকে তাহলে সে নিশ্চিত জান্নাত পাবে। কিন্তু যদি সৎ ব্যক্তি মৃত লোকটির উপর নিন্দাসূচক কথা বলে তাও ফয়সলা হবে কার নিন্দাসূচক হলেও তা কিন্তু "মৃত" লোকটি করেছিলো। তাই সেটাও ওয়াজিব হবে। তবে গালি দেওয়া নিষেধ নিন্দাসূচক কথা না বলা উত্তম। [৪]
.
অর্থাৎ,, কেউ যদি সত্যিই ভাল কর্ম করে থাকে তা তো আমলনামায় এমনিতেই আছে। কেউ ভালো সাক্ষ্য দিলে তা কবুল হবে কিন্তু সাক্ষ্য টা সত্য হতে হবে।
.
ধরুন,,
আপনি কাউকে সাহায্য করেছেন। এখন আপনি মারা যাওয়ার পরে সেই লোকটি আপনার প্রশংসা করলো তা কবুল হবে কারণ আপনি তো "সত্যিই তাকে সাহায্য করেছেন যা আমলনামায়" ছিলোই।
.
সুতরাং,, কেউ আমলনামায় কিছু যুক্ত করে না বরং যা করেছে তারই প্রশংসা করেছে বা যা করেছে তাই নিন্দাসূচক বলেছে।
[ তবে গালি দেওয়া ঠিক নয় ]
.
.
📝 এই হাদিসের ব্যাখ্যায় তাই বলা হয়েছে,,,
.
.
"সর্বপ্রকার ব্যাক্তিগত আক্রোশ বা স্বার্থ বিবর্জিত সাধারণ সৎ লোকগণ, এমনকি ঐরূপ দুই, চারজনও মৃত ব্যক্তির স্বভাব-চরিত্র ও গুনাগুনের ভিত্তিতে ভালো সাক্ষ্য দিলে আল্লাহ তায়ালা তাহাদের সাক্ষ্য অনুযায়ী তাহার জন্য জান্নাতে ফয়সলা করবেন। তাহার দোষ-ত্রুটি থাকলে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমতে উহা ক্ষমা করিয়া দিবেন। আর যে (মৃতব্যাক্তি) অসৎ  অন্যের থেকেও নিন্দা পায় সে অসৎ সাব্যস্ত হয় সে আল্লাহ প্রিয় হতে পারে না। অর্থাৎ ইসলামে সচ্চরিত্র, সৎস্বভাব, সদ্ব্যবহার ও পরোপকারীতার মূল্য ইসলামে অনেক বেশি। মানুষের উচিত তার উপর যত্ন হওয়া। এই সুখ্যাতি ও নেকনামীর সাক্ষ্য মানুষের জন্য নাজাতের অাছিলাসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি অছিলায়।" [৫]
.
.
◾অতএব,, যা সত্যি তার প্রশংসা আল্লাহ পছন্দ করেন। আল্লাহ তায়ালা তাহাদের সাক্ষ্য অনুযায়ী তাহার জন্য জান্নাতে ফয়সলা করবেন। তাহার দোষ-ত্রুটি থাকলে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় রহমতে উহা ক্ষমা করে দিবেন। তাই হাদিস আর আমলনামা বৈপরীত্য নয় বরং সত্যের প্রশংসা আল্লাহর কাছে প্রিয়।  আলহামদুলিল্লাহ....
.
.
তথ্যসূত্রঃ
[১] সূরাঃ আল জাসিয়া, আয়াতঃ ২৯
[২] সহীহ বুখারী null, হাদিস নং ১৩৬৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
[৩] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৭০৬/৭০৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
প্রকাশনী:- হামদিয়া লাইব্রেরি লিমিটেড
[৪] সহীহ বুখারী null, হাদিস নং ১৩৯৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: ihadis.com
[৫] সহিহ বুখারী প্রথম খন্ড হাদিস নং ৭০৬ ও ৭০৭ এর ব্যাখ্যা। প্রকাশক:- হামদিয়া লাইব্রেরি লিমিটেড

Post a Comment

0 Comments