অমুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা

অমুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
🖋Author:- Irfan Hossain Santo
===============================
মানুষ স্বভাবতই ধর্ম প্রবণ এবং ধর্ম পরায়ণ। ধর্ম হলাে মানুষের

ফিতরাত বা প্রকৃতি। সকল প্রাণীরই নিজস্ব প্রকৃতি এবং ধর্ম আছে। পরম স্রষ্টা আল্লাহ তা'য়ালার সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি (আশরাফুল মাখলুকাত)
হলাে মানুষ। অনেকের মতে প্রাচীনতম ধর্ম হলাে হিন্দু ধর্ম। হিন্দু ধর্মে পরম স্রষ্টাকে
বলা হয় ঈশ্বর। ইয়াহুদী ধর্মে জেহােভা এবং খৃষ্টান ধর্মে বলা হয় গড।
ইসলাম ধর্মে বলা হয় আল্লাহ তা'য়ালা। বৌদ্ধ ধর্মে স্রষ্টা আছেন কি নেই- তা
স্পষ্ট নয়। অনুসারীদের জনসংখ্যার দিক দিয়ে চারটি প্রধান ধর্ম হলাে- খৃষ্টান ধর্ম,
বৌদ্ধ ধর্ম, ইসলাম ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম। কোনাে বস্তু যত পুরাতন হয়, ততই অবক্ষয় বেশি হয়।
ব্যতিক্রমও আছে অবশ্যই। ধর্মের ক্ষেত্রেও হয়েছে অনেকটা তাই। এক হিসেবে হিন্দু ধর্ম প্রাচীনতম ধর্ম। তাদের দৃষ্টিতেই এ
ধর্মে মানব কল্পিত পরিবর্তন বা অবক্ষয় হয়েছে ব্যাপক।
ইয়াহুদী ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব যে
মূলতঃ ছিল এক উৎস থেকে তা সুনিশ্চিত বলা যায়। ইয়াহুদী, খৃষ্টান এবং
ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল আরব মুলুকে এবং এ ধর্মগুলাের মধ্যে
সাদৃশ্যও ব্যাপক।হিন্দু ধর্ম এবং বৌদ্ধ ধর্মের উৎস ভারতে। ইসলাম এবং বৌদ্ধ ধর্মের
সাদৃশ্য হতে। হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের
সাদৃশ্য অধিকতর, যেহেতু হিন্দু ও মুসলিমগণ উপমহাদেশে প্রতিবেশী
হিসেবে বাস করছেন।তাই মুসলিমদের উচিত হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে জানা এবং হিন্দুদের জন্যও ইসলাম সম্বন্ধে অবহিত হওয়া তাদের জন্য কল্যাণকর হতেপারে।হিন্দু ধর্ম অপেক্ষা ইসলাম ধর্ম উপমহাদেশে নবতর এবং উপমহাদেশের বর্তমান মুসলমানদের অধিকাংশেরই আদি পূর্ব পুরুষ ছিলেন হিন্দু।
তাই, মুসলিমদের কর্তব্য হলাে- তাদের (সুদূর হিন্দু পূর্ব পুরুষদের) ধর্ম সম্বন্ধে
অবহিত হওয়া। এটা তাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অংশ।
পশু-পাখি প্রকৃতিগতভাবে জৈবিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে। আদম (আ.)-এর আওলাদের
ঐতিহ্যও জ্ঞান গবেষণাভিত্তিক। ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রত্যয়, ঈমান, ইয়াকিন এর দৃষ্টিতে মুসলিমদের জন্য
একটি অত্যাবশ্যকীয় ফরজ কর্তব্য হলাে হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম সম্বন্ধে অবহিত হওয়া এবং আল্লাহ তা'য়ালা প্রদত্ত দ্বীনের বাণী ভিন্ন
ধর্মাবলম্বীদেরকে অবহিত করানাে। ইসলামের দিকে আহ্বানের আরবী শব্দ হলাে দাওয়াতুল ইসলাম, সংক্ষেপে দাওয়াহু। ইসলামের বাণী পৌছানাের কাজটির আরবী প্রতিশব্দ হলাে তাবলীগ (বাণী পৌঁছানাে)। তার পরের কাজ হলাে ইসলামের বাণী গ্রহণ করার আহ্বান বা দাওয়াত প্রদান। যারা আল্লাহর বাণী গ্রহণ করেছেন তাদের নিকট ইসলামের কথা পেছানাে হলাে তাবলীগ। যারা আল্লাহ তা'য়ালার বাণী গ্রহণ বা ইসলাম গ্রহণ করেনি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বানকে বলা হয় দাওয়াত বা দাওয়াহ। ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়েছে নবী-রসূলদের মাধ্যমে। আদম (আ.)-এর আওলাদদের সংখ্যা শতশত কোটি হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে নবী-রসূলদের দায়িত্ব-নবুওয়াত এবং রেসালাতের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে প্রত্যেক মুসলিমের
ওপর। নবুওয়াত এবং রেসালাতের উত্তরাধিকারের দায়িত্ব পাওয়ার পর যদি এ
দায়িত্ব পালন না করা হয়, তাহলে মুসলিমের আখিরাতে নাজাত কিভাবে হবে- তা ভেবে দেখতে হয়।মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শিশু মায়ের কোলে থাকাকালেই আল্লাহ বলতে শিক্ষা শুরু করে। সারাটি জীবন মুসলিম পরিবেশেই থেকে ইন্তেকাল করে। অন্যদিকে অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী আদম সন্তান সারা জীবনে কোনাে জন্মগত মুসলিম থেকে আল্লাহ সম্বন্ধে ধারণা, দ্বীনের শিক্ষা, এমনকি খবর বা দাওয়াত পেলাে না, ঐ হিন্দু জাহান্নামে যাবে- তা কেমন বিচার হয় ! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলিমুল গায়েব। তিনি তাঁর বান্দা ইনসানকে
অন্য প্রাণী অপেক্ষা অনেক বেশি ভালাে জানেন। তাই সকল মানুষকে আখেরী নবীর প্রচারিত দ্বীনে বিশ্বাস এবং আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালার এ নির্দেশ শুধু নাযিলকৃত কুরআনে থাকলে চলবে না। এটা পৌছাতে হবে জন্মগতভাবে অন্য ধর্মাবলম্বী সকল মানুষের কাছে। নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ দায়িত্ব পড়েছে মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রত্যেকটি অনুসারীর ওপর। অমুসলিমদের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছিয়ে দেয়ার নবুওয়াতী দায়িত্ব পালন না করে আমরা সালাত (নামায), সিয়াম (রােযা), হজ্ব, যাকাত দিয়ে এবং অমুসলিমদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত না দিয়ে হাশর এবং পুলসিরাত পার হওয়ার যে আশা করে বসে আছি- তা এক মস্তবড় ভ্রান্তি। এ ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্তিরপথ অন্বেষণ করা কি আমাদের জন্য ফরজ (কর্তব্য) নয় ? অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিকট আমাদের জ্ঞাত এবং অনুসৃত ইসলামের বাণী পৌঁছাতে হলে অন্যদের অনুসৃত বর্তমান ধর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের মৌলিক এবং প্রকৃত পার্থক্য কোথায় আছে এবং কি কারণে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং বিশ্বাস ভুল- তা আমরা নিজেরা বুঝতে হবে এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদেরকে বুঝতে হবে। তা না করে শুধুমাত্র নামায, রােযা,হজ্ব করে কিভাবে নাজাত পাবাে- তা কি ভেবে দেখা আমাদের জন্য ফরজ নয় ? আসুন আমরা সকল মুসলিম আমাদের প্রতিবেশী এবং বিশ্ববাসীর ধর্ম সম্বন্ধে অবহিত হই এবং আল্লাহ তা'য়ালার নাযিলকৃত দ্বীনের বাণী তাদেরকে অবহিত করার সুযােগ গ্রহণ করি। নিজেদের নাজাতের পথ সুগম করি।
মহান করুণাময় আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সঠিক ইসলাম-এর দিক নির্দেশনা দিন, আমাদের নাজাতের পথ সুগম করে দিন। আমীন,,,,


Post a Comment

0 Comments