মহাবিশ্ব ও পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে কুরআন-হাদিস কি ভুল তথ্য দেয়!?


মহাবিশ্ব ও পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে কুরআন-হাদিস কি ভুল তথ্য দেয়!?
🖋Author:- Aminur Rashid

================================
.
আলহামদুলিল্লাহ,,,
সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি সকল সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা।যিনি আমাদের সকলকে অনিস্তত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন।যিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন,,,
خَلَقَ الْإِنْسَانَ
সৃষ্টি করেছেন মানুষ
(সূরাঃ আর রহমান, আয়াতঃ ৩)
.
📖 কুরআন বলে,,,
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ
⦁ নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব।[১]
.
ইসলাম বিরোধীদের দাবী হলো মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে কিন্তু কুরআন বলে মাত্র ছয় দিন। আসলে কুরআনে যে আরবী শব্দ ব্যাবহার হয়েছে সেটা হলো (أَيَّامٍ) আইয়াম যার একবচন হল (يَوْمٍ) ইয়াওম।[২] আর যার অর্থ দিন/যুগ/ এমন কি সময়কাল।[৩]
.
অতএব এখানে ছয়টি সময়কালের কথা বলা হয়েছে দিনের কথা নয়।দদিন-রাত তখন হবে যখন সূর্য-পৃথিবী সৃষ্টি হবে।তাই এখানে সময়কাল হবে।
আশা করি বুঝেছেন।
.
☑ এবার একটি হাদিস নিয়ে কথা বলব যা দিয়ে ইসলাম বিরোধীরা প্রমাণ করতে চায় হাদিস অনুযায়ী মহাবিশ্ব সৃষ্টি ৭ দিনে ২৪ ঘন্টার হিসেবে,,,,
.
وَعَنْه، قَالَ: أَخَذَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي فَقَالَ: «خَلَقَ اللهُ التُّرْبَةَ يَومَ السَّبْتِ، وَخَلَقَ فِيهَا الجِبَالَ يَومَ الأَحَدِ، وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَومَ الاِثْنَينِ، وَخَلَقَ المَكْرُوهَ يَومَ الثُّلاَثَاءِ، وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَربِعَاءِ، وَبَثَّ فِيهَا الدَّوابَّ يَومَ الخَمِيسِ، وَخَلَقَ آدَمَ عليه السلام، بَعْدَ العَصْرِ مِنْ يَومِ الجُمُعَةِ في آخِرِ الخَلْقِ فِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنَ النَّهَارِ فِيمَا بَيْنَ العَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ». رواه مسلم
উক্ত রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [একদা] আমার হাত ধরে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা শনিবার জমিন সৃষ্টি করেছেন, রবিবার তার মধ্যে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন। সোমবার সৃষ্টি করেছেন গাছ-পালা। মঙ্গলবার মন্দ বস্তু সৃষ্টি করেছেন। বুধবার আলো সৃষ্টি করেছেন। তাতে [জমিনে] জীবজন্তু ছড়িয়েছেন বৃহস্পতিবার। আর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করার পর পরিশেষে জুমার দিন আসরের পর দিনের শেষভাগে আসর ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে [আদি পিতা] আদম (আঃ)--কে সৃষ্টি করেছেন।"[৪]
.
📌 এই হাদিস থেকে ইসলাম বিরোধীরা কিছু অভিযোগ করে থাকে আসুন তার জবাব দেওয়া যাক।
.
১) অভিযোগ:- মহাবিশ্ব কিভাবে মাত্র ৭ দিনে সৃষ্টি শনিবার-রবিবার যাকে ২৪ ঘন্টার দিনে সৃষ্টি কিন্তু বিজ্ঞান বলছে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর লেগেছে।
.
জবাব:- পুরো হাদিসে কোথাও বলা হয় নি মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা এমন কি পুরা হাদিসে কোথাও বলা নয় নি পৃথিবী সৃষ্টির কথা।বরং পৃথিবীর কিছু বস্তু সৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে।হাদিসে বলা হয়েছে "মাটি/আলো/মন্দ বস্তু/গাছপালা/আদম (আ:)" ইত্যাদি মহাবিশ্ব বা পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয় নি।যেহেতু নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি সেহেতু এটা মাটি যে কোন কিছুর তবে পৃথিবী নয়।
.
২) অভিযোগ:- শনিবারে জমিন সৃষ্টি হয়েছে বা মাটি সৃষ্টি হয়েছে এটা দিয়ে কি প্রমাণ হয় না শনিবার বা ২৪ ঘন্টার এক দিনে পৃথিবী সৃষ্টি?
.
জবাব:- শনিবার হয় একদিন পর পৃথিবী কখনোই একদিনে সৃষ্টি নয় বরং দুইটি সময়কালে সৃষ্টি কুরআনে আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন,,,
.
قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ
বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।[৫]
.
অতএব,, হাদিসে মাটি দিয়ে কোনভাবেই পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয় নি।হতে পারে এখানে মাটির কোন স্তর এর কথা বলা হয়েছে নাহয় কোন স্থানের মাটির কথা বলা হয়েছে কিংবা আদম (আ:) কে তৈরি করার মাটিকে বলা হয়েছে। কিন্তু কখনোই তা পৃথিবী নয় কারণ পৃথিবী ১ দিনে (শনিবারে) নয় বরং দুই দিনে বা দুই আইয়াম (সময়কালে) সৃষ্টি।অতএব যেহেতু নিদির্ষ্ট করে বলে হয় নি কোন মাটি সেহেতু এটা করা পৃথিবী বলা ভুল হবে, কুরআনই তার সাক্ষী।
.
৩) অভিযোগ:- সোমবার সৃষ্টি গাছ-পালা আর বুধবারে আলো সৃষ্টি। এটা কি অবৈজ্ঞানিক নয়?
.
জবাব:- বাইবেল অনুযায়ী সূর্য গাছপালা পরে চতুর্থ দিনে সৃষ্টি।[৬] আর হাদিসে ব্যাবহার করা হয়েছে নূর বা আলো।পর তার আগে আইমিন মঙ্গলবারে "মন্দ বস্তু" আর সেহেতু বুধবারে নূর দিয়ে কখনোই সূর্য বুঝানো হয় নি কারণ সূর্যের ক্ষেত্রে সিরাজ হতে পারতো কিন্তু বলা হয়েছে নূর আর নূর শব্দটির শাব্দিক অর্থ যদিও আলো, প্রতিফলিত আলো তার ভাবঅর্থ হলো কল্যাণ। নূরকে অনেক জায়গায় কল্যাণ বলা হয়েছে।
.
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ الر ۚ كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَىٰ صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।[৭]
.
আশা করি সকলে হাদিসটি বুঝতে পেরেছেন।
.
তথ্যসূত্র
[১]সুরা আরাফ ৭:৫৪
[২] https://en.wiktionary.org/wiki/%D8%A3%D9%8A%D8%A7%D9%85
[৩] https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/%D8%A3%D9%8E%D9%8A%D9%91%D9%8E%D8%A7%D9%85%D9%8D/?page=5
[৪] রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৮৬৩ ihadis.com
[৫] সূরাঃ হা-মীম সেজদাহ, আয়াতঃ ৯
[৬] আদিপুস্তক ১:১৬
[৭] সূরাঃ ইব্রাহীম, আয়াতঃ ১

Post a Comment

0 Comments